তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৭১

0
663

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭১

🍁
—” ওরা কি আমাদের সম্পর্কে জেনে এসেছে?
.
—-” হুমমমমম……
.
রিদের এমন বাক্যে মায়া আবাক হয়ে, হা করে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে। আবাক হওয়ার দাপটি এতোটিই যে দরজাটি সমান তালে বাজতে থাকলেও মায়া সেদিকে ভ্রুঁ ক্ষেপ না করে রিদকে কৌতুহল কন্ঠে বললো……

.
—” আপনি তো এখানে তাহলে ওদের কে বললো আমাদের সম্পর্কে….?

.
মায়ার কৌতুহলী ফেস দেখে মূহুর্তে স্মিথ হাসে রিদ। মায়ার দুগাল নিজের দু’হাতে আঁকড়ে ধরে চোখে চোখ রেখে রিদ কোনো রকম বনিতা ছাড়াই আস্তে করে বললো….

—” তুমি নিজে…?

রিদের কথায় এবার কৌতূহলী ভাবটা আরও বেড়ে যায় মায়ার। তাই খানিকটা কপাল কুঁচকে ভাব নিয়ে বললো…..

—” আমিহ?

.
মায়ার কথার সাথে সাথে রিদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো….

—” হুমমম তুমি।

মায়া আরও কিছু প্রশ্ন করতে যাবে কিন্তু দরজার কড়া শব্দের বাধ্য হয়ে থামতে হয়। কিন্তু তারপরও একটা কিন্তু কিন্তু ভাব থেকেই যাচ্ছে রিদের ওপর মায়ার। রিদ মায়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মায়াকে রেখে এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজাটি খুলে দেয়। রুমের দরজা খুলার সাথে সাথে হামলে পড়ে তিন চার চারটি পরিবারের সদস্য বিন্দরা। প্রত্যেকের চোখে মুখে রাগ আর ক্ষেপ্ত ফেস দেখে মূহুর্তে সিটিয়ে যায় মায়া। নিজের পরিবার থেকে ধরে রুদ্রের পরিবার, রিদের পরিবার, নিধি সহ পরিবার, সকলেই উপস্থিত এই মূহুর্তে মায়ার রুমে। প্রত্যেকে রাগান্বিত ফেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা রিদও মায়া সম্পর্কের বিষয়টি জানে। সবাই রুমে ভিতরে প্রবেশ করতেই রিদ দরজায় দাঁড়িয়ে আসিফকে কিছু একটা ইশারা করে আবারও রুমের দরজাটি বন্ধ করে দেয়। পিছন ঘুরে সবাইকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এক পলক দেখে নিয়ে মায়ার পাশে এসে দাড়িয়ে পড়ে স্বাভাবিক ভাবে। রিদের দৃষ্টিটা তীক্ষ্ণ থাকলেও মায়া দৃষ্টিতে ছিল ভয়াৎ। মায়া ভয়াৎ দৃষ্টিতে এক পলক সবাইকে দেখে নিয়ে শুকনো একটা ঢুক গিলে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রিদের দিকে। থমথমে পরিবেশ কারও মুখে কোনো রুপি কথা না থাকলেও তাদের ফেসে রাগটা ছিল স্পষ্ট ভাষ্যমান। প্রতিটা মানুষ ক্ষেপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রিদ ও মায়ার দিকে আর তার কারণটা ছিল সুস্পষ্ট সবার কাছে।

.
সবার এমন থমথমে পরিবেশ হঠাৎ করে পিছন থেকে রুদ্র মায়ার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মায়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আপেক্ষিক কন্ঠে বলে উঠে……..

.
—” মায়া একটু আগে তোমার মুখে আমরা যা শুনেছি মাইকে সেটা কি সত্যি?

.
রুদ্র কথায় মায়া চোখ তুলে তাকাই রুদ্র দিকে। রুদ্রের পরনে সাদা সেওরানীতে কিছুক্ষণ আগেও রাজকুমার চেয়ে কম মনে হচ্ছি না। কিন্তু এখন কেমন একটা অগোছালো ভাব চলে এসেছে সেই রাজকুমারের। মাথা চুল এলোমেলো হয়ে আছে। সেওরানীর কয়েকটা বোতাম খুলে রাখা। চোখে মুখে স্পষ্ট চিন্তা চিন্তা ভাব ফুটে উঠেছে। সবমিলিয়ে অসম্পূর্ণ বিলোপ বর বর মনে হচ্ছে রুদ্রকে। মায়া এক পলক রুদ্রকে দেখে নিয়ে নিজের মাথাটা নিচু করে আস্তে করে। রুদ্রকে অগোছালো ভাব দেখে মূহুর্তেই নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে থাকে মায়ার। রুদ্রের কথার মানে বুঝতে পেরে সাথে সবকিছু জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে অপরাধী কন্ঠে আস্তে করে সুমতি জানিয়ে বলে উঠে……
.

—” হুমমম…

.
মায়ার হুমতে থমকে যায় রুদ্রের পা। বাহিরে এতক্ষণ যাবত মাইকে মধ্যে মায়া আর রিদের প্রতিটা কথা শুনলেও কোনো ভাবে বিশ্বাস করতে পারছিল না। কোনো ভাবে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না যে তার ভালোবাসার মানুষটি তার নয় সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। সে অন্য কারওর। তাই নিজেকে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে মায়া তার। তার মায়া শুধু তাঁকেই ভালোবাসে বাকি সবটা মিথ্যা সাজানো নাটক। সেই আশা নিয়েই এখন রুদ্র মায়াকে প্রশ্নটা করেছিল কিন্তু মায়ার সুমতি মূলক একবাক্যের হুমতে সবকিছু সত্যিতে পরিণত হয় রুদ্রের। থমকে যায় রুদ্রের পুরো পৃথিবীটা। ধংশটা হয়ে যায় রুদ্রের সাজানো স্বপ্ন গুলো মূহুর্তেই। মায়ার কথায় রুদ্র জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে মায়া দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কান্নায় আটকে আসা গলায় আবারও বলে উঠে…..
.

—” তুমি কি সত্যি রিদের বউ মায়ু?

.
মায়া রুদ্রের কষ্টটা বুঝতে পেরেও চোখ তুলে আর তাকাইনি রুদ্রের দিকে নিজের অপরাধী বোধের জন্য। নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে আগের নেই আস্তে করে বললো……

—” হুমমম।

.
মায়ার এমন সুমতি মূলক উক্তিতে সাথে সাথে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে রুদ্র ভাবলেন্স ভাবে। আর পাশ থেকে মিসেস আয়েশা (মায়া মা) মায়ার কথা এগিয়ে এসে সাথে সাথে মায়ার একহাতে বাহু টেনে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সাথে সাথে মায়া গালের সজোরে ঠাসসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। মায়া থাপ্পড় খেয়ে সাথে সাথে ছিটকে গিয়ে পড়ে রিদের বুকের ওপর………

.
বর্তমান

মিসেস আয়েশা রাগে রি রি করতে করতে আবারও মায়াকে টেনে ধরে মারতে যাবে তার আগেই রফিক সাহেব নিজের স্ত্রীকে বাঁধা প্রধান করে থামিয়ে দেয়। তিনিও কোনো অংশে কষ্ট কম পাননি স্ত্রী থেকে মেয়ে এমন কান্ডে। বরংচ একটু বেশিই পেয়েছেন কারণ তিনি তো সবসময় মেয়ে সাপোর্ট করতো সবকিছু। মেয়ের মন বুঝতে চাইতেন তাহলে আজ মেয়ে কি করে পারলো এতো বড় একটা কথা লুকাতে?সব সময় তো মেয়েকে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে সাপোর্ট করতো সবকিছুতে। এই বিষয়টা শেয়ার করলে এবারও করতো যদি মায়া এই বিষয়টা উনার সাথে শেয়ার করতো। সবকিছুর বাহিরে গিয়ে হলেও করতো। তাহলে এতো বড় একটা বিষয় নিয়ে লুকোচুরি কি দরকার ছিল। অন্তত তাকে বলতে পারতো রিদের সাথে বিয়ে বিষয়টা। যেখানে বড় ভাইয়ে সাথে বিয়ে হয়ে গেছে সেখানে কি আমরা জোর করে ছোট ভাইয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দিতাম? বিয়েটা কি ছেলে খেলা আমাদের কাছে? আজ যদি আমাদের অজান্তে রুদ্র সাথে বিয়েটা হয়ে যেতো তো কতটা পাপের ভাগিদার হতে হতো তাদের সাথে চার চারটি জীবনও নষ্ট হয়ে যেতো৷ মেয়েটা কি তার বাবাকে একটাবারের জন্য বিশ্বাস করতে পারেনি। কখনোই কি রফিক সাহেব তার মেয়ের বিশ্বাস অজন করতে পারেনি? এতটাই অবিশ্বাসের পাত্র তিনি? রফিক সাহেব বুক ভরা কষ্ট নিয়ে স্ত্রীকে থামিয়ে দেয় মারতে। রফিক সাহেব এগিয়ে আসতে দেখে মূহুর্তে আরও তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আয়েশা বেগম পরে রাগান্বিত ফেসে রফিক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো……..

—” মেয়ে বিয়ের আগ মূহুর্তে এমন কান্ড ঘটাবে এটা কোনো অসামান্য বিষয় নয়ময় কি? তুমি কি আজও চুপ থাকবে মেয়ের এমন কাজে। ওহ কি বলছে সেই ধারণা আছে তোমার? ওহ আমাদের না জানিয়ে কিভাবে পারলো বিয়ে করতে। ওকে সেই সাহস কে দিলো? ওর কি আমাদের কথা একটা বারও মাথায় আসেনি?

.
স্ত্রীর কথায় চাপা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রফিক সাহেব। স্ত্রীকে বলার মতো কোনো ভাষায় নেই আজ রফিক সাহেবের। তাই তিনি অথযা অন্য কোনো রকম বাক্য না টেনে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো…..

.
—” ওকে বলতে দাও? ওহ কি বলতে চাই সেটা শুনো!
.

স্বামীর নরম সুরের কথায় মূহুর্তে চুপ করে যায় আয়েশা বেগম। তিনি বুঝতে পারেন উনার স্বামী খুব বেশি কষ্ট পেয়েছেন মেয়ে কান্ডে। তাই স্বামীর কথা মতো মায়ার দিকে তাকাই রাগি চোখে। স্ত্রীকে চুপ করতে দেখে রফিক সাহেব ঘুরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠে…….

.
—” কখন করলে তোমরা একে অপরকে বিয়ে?

.
মায়ার হিচকি তুলে কান্নার কারণে কোনো রকম উত্তর দিতে পারছে না বাবার। তবে মায়া বাবার গম্ভীর কণ্ঠে পিছনে চাপা কষ্টটা বুঝতে পেরে আরও ডুকরে কেঁদে ওঠে সবার সামনে। রিদ মায়ার কান্না দেখে পাশে থেকে একহাতে মায়াকে নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে রফিক সাহেব কথার উত্তর দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো…….

—” রুদ্রের সাথে আপনাদের পরিচয় হওয়ার আগেই আমার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে ।

.
রিদের কথায় উপস্থিত সবাই চমকে উঠে। কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রফিক সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.
—” তাহলে আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন এই বিষয়ে? আর তাছাড়া যেখানে আগেই বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়ে গেছিল, সেখানে ছোট ভাইয়ের বিয়ে জন্য একই মেয়েকে ঠিক করার কি প্রয়োজন ছিল? জাইলে তো আরও আগেই আমাদের সবাইকে সবটা জানিয়ে ঠিক করে ফেলতে পারতেন? অথযা আমাদের এতোটা ভুক্তভোগী হতে হতো না! সমাজ কাছে, পরিবারের কাছে ছোট হতে হতো না। সাথে রুদ্র ও নিধি নামের মেয়েটিও সাজানো স্বপ্ন গুলো ভাঙ্গতো না। আপনার কি মনে হয়না আপনারা দু’জনই এখানে খুব বেশি স্বার্থপরতা উৎপীড়ন দেখিয়ে ফেলেছেন?
.

রফিক সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে প্রতিটা কথা ছিল মন ছুঁয়া টাইপের। রিদ নিরব দর্শকের মতো প্রতিটা কথা শ্রবন করে এক পলক দেখে নেই রফিক সাহেবকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। রফিক সাহেবকে যথটা সহজ সরল বোকা টাইপের লোক ভেবে ছিল রিদ তিনি তার থেকে ততটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। রফিক সাহেবের কথায় রিদ নিজ বাক্য প্রকাশ করতে সোজাসাপ্টা উত্তরের বললো……..

.
—” আপনাদের আগে জানানো পরিস্থিতি ছিল না তাই জানাতে পারেনি। আমি রিতকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করি। তাই এই বিয়েতে তখন রিতের সুমতি ছিল না বলে আমিও পরিবারের কাউকে জানাতে পারিনি। আর বাকি রইলো রুদ্র তো আমি ওর বিয়ে বিষয়টা প্রথমে জানতাম না। পরে যখন শুনেছি তখন কিছু বলার প্রয়োজন বোধ মনে করিনি। আমার চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে হয়েছিল কারণ তখনো রিত আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেনি তাই। বাকি রইলো সমাজ আর পরিবারের কাছে ছোট হওয়ার বিষয় তো কে কি বললো তাতে আমার কিছুই জায় আসে না। কারণ আমি না খেয়ে থাকলে এই সমাজ আমাকে ভাত দিতে আসবে না। তাই সমাজের চিন্তা দায় ভারটাও আমার না অবশ্যই। আর নিধিকে আমি কখনোই স্বপ্ন সাজাতে বলিনি। সে নিজ থেকেই আমাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছে এটা ওর দোষ। এখানে আমার কিছুই করার নেই। এমনকি ওকে আমি কখনোই বলেনি যে আমি ওকে বিয়ে করবো। এখানে নিধি যখন নিজ থেকে স্বপ্ন দেখেছে তো ওর স্বপ্ন ভাঙ্গার দায় ভারটাও ওর ব্যাক্তিগত সমস্যা হবে। সেটা আমার দেখার বিষয় না আ……

.
ঠাসসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রিদের গালে হেনা খান। এতক্ষণ যাবত রিদের প্রতিটা কথায় সুইচ এর মতো বিঁধছিল হেনা খানের গায়ে। কিন্তু নিধিকে নিয়ে লাস্ট কথা গুলো সয্য হয়নি উনার। একটা ছেলে কতটা নিদয় হলে এতটা পাষান্ড কথা গুলো বলতে পারে এই মূহুর্তে জানা নেই হেনা খানে। তিনি রাগে ফেটে পড়া ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থাকে রিদের সামনে। হঠাৎ হেনা খানের রিদকে থাপ্পড় মারাতে উপস্থিত সবাই চমকে উঠে আবাক হয়ে যায় মূহুর্তে। সাথে ভয় পেতে থাকে না জানি রিদ এবার কি কান্ড ঘটিয়ে বসে সবার সাথে। হঠাৎ করে রিদের গালে থাপ্পড় পড়ায় তাল সামলাতে না পেরে হালকা ঝুকে যায় মায়ার দিকে। হেনা খানের হঠাৎই এই থাপ্পড়ে জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না রিদ।

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here