প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১০

0
341

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১০

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

– স্যরি স্যার আর হবে না।

– আর হবে না কেন? আর একটু হাসুন, কি মিষ্টি আপনার হাসি। দেখলেই আমাদের সকলের প্রান জুড়িয়ে যায়।

মেঘা লজ্জাবোধ করলো। এতগুলো মানুষের সামনে ফারুক স্যার কিভাবে বলছে কথাগুলো। আসলে ঐ তাহসিনই হলো সব নষ্টের গোড়া। আগে তো ঐ ব্যাটার সামনে গেলেই ঝগড়া আর ঝগড়া, সব শান্তির বিনাস। এখন দেখা যাচ্ছে ঐ ব্যাটার নাম মনে করলেও বিপদ। ঐ ব্যাটার নাম মনে করেই তো এখন এত অপমানিত হতে হচ্ছে। ফারুক স্যার মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বললেন – বসুন। আমার ক্লাসে আর কখনও যেন এমন বেয়াদবি না দেখি।

মেঘা নিঃশব্দে বসলো। সে বসতেই পাশ থেকে আবার খোঁচা দিল তনু। মেঘা চোখ গরম করে তাকালো তনুর দিকে, চুপসে গেল তনু। মিনমিনিয়ে বলল – একটা কথা ছিল।

মেঘা দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলল – তোর সাথে এখন কোনো কথা নেই আমার। তোর জন্য এতগুলো মানুষের সামনে কতটা অপমান সইতে হলো দেখলি?

– তোর ভালোর জন্যই ঝাক্কাস একটা অফার আছে।

ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘা, বলল – কি?

মেকি হাসলো তনু, কন্ঠ একটু খাদে নামিয়ে বলল – তুই তো তাহসিন স্যারকে পছন্দ করিস না।

– হ্যা তো!

– তার দলেও থাকতে চাইছিস না।

– হ্যা

জ্বীহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল তনু অতঃপর বলল – তাহলে একটা কাজ করলে হয় না, তুই আমার জায়গায় চলে আয় আর আমি তোর জায়গায়।

– কিভাবে?

– না মানে তুই রাশেদ স্যার মানে আমি যার দলে পড়েছি তার দলে চলে আয় আর আমি তাহসিন স্যারের দলে চলে যাই‌। তোর জায়গায় আমি আমার জায়গায় তুই।

– বুদ্ধিটা খারাপ না কিন্তু করবো কিভাবে?

– চল তাহসিন স্যারের সাথে কথা বলি এ বিষয়ে। দুদিন আগে তাকে বাঁচিয়েছি আমরা এর জন্যও অন্তত তার আমাদের উপরে এই টুকু দয়া করা উচিৎ।

– ঠিক।

ফারুক স্যারের ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে পড়লো তনু আর মেঘা, গিয়ে দাঁড়ালো তাহসিনের কেবিনের সামনে। সেদিনের অসুস্থতার ঘটনায় পিয়ন তাদের চিনে নিয়েছে ভালোভাবে তাই আজ আর তাদের আটকায়নি সে। তাহসিনের কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা দুজন, ভিতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। মেঘা তনুকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো – তুই আগে যা।

তনু ঢুকলো না ভিতরে। সে ঘুরে এসে দাঁড়ালো মেঘার পিছনে , বলল – তুই যা।

মেঘা তনুর হাত টেনে সামনে আনলো, বলল – এই বুদ্ধি বের করেছে কে? তুই, তার মানে তুই যাবি।

তনু মেঘার থেকে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল – আমার ভয় করছে, তুই যা কি হবে তাতে?

মেঘা ছাড়ার পাত্রী নয় সে আরও শক্ত করে ধরলো তনুর হাত। তনুও মৃদু ধস্তাধস্তি শুরু করলো নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। দুজনের ধস্তাধস্তিতে তারা হঠাৎই হুমড়ি খেয়ে পড়লো তাহসিনের কেবিনের ভিতরে। দরজাটা খোলাই ছিল তাই ভিতরে পড়তে সমস্যা হয়নি বেশি। তাহসিন তার ডেস্কে বসা ছিল হঠাৎ দরজায় শব্দ পেয়ে হকচকিয়ে উঠলো সে। সামনে তাকাতেই নজরে পড়লো এই দুই রমনীকে। তাহসিনকে তাকাতে দেখেই সটান হয়ে দাঁড়ালো মেঘা আর তনু। ভ্রু কুঁচকালো তাহসিন, বলল – আপনারা হঠাৎ?

তনু খোঁচা মারলো মেঘাকে, মেঘা একবার চোখ গরম করে তাকালো তনুর দিকে অতঃপর আমতা আমতা করে বলল – আসলে আপনার কাছে একটা সাহায্য চাইতে এসেছিলাম।

ঠোঁট বাঁকালো তাহসিন, বলল – আপনি তাও সাহায্য চাইতে এসেছেন আমার কাছে? তা কি সাহায্য বলে ফেলুন শুনি।

তাহসিন কি অপমান করলো মেঘাকে? নাহ এখন অপমান গায়ে মাখলে চলবে না তাহলে কোনো দিনই তাহসিন সাহায্য করবে না তাকে। এই লোকের কাছ থেকে মুক্তি পেতে হলে এই লোকের সাহায্যই লাগবে তার। ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো মেঘা, বলল – বলছিলাম কি স্যার, আমাদের ক্লাসে তো দল ভাগ করা হয়েছে আর এক এক দলকে এক এক প্রফেসরের আন্ডারে দেওয়া হয়েছে।

– জানি তারপর বলুন।

– আমি আপনার দলে পড়েছি।

– কে দিয়েছে আপনাকে আমার দলে? আপনার মতো অভদ্র একটা মেয়েকে কিনা শেষমেশ আমার সহ্য করতে হবে?

মেঘা খুশি হলো। এগিয়ে গেল তাহসিনের দিকে, হাসি মুখে বলল – এটাই তো স্যার, না আপনি আমাকে পছন্দ করেন আর না আমি আপনাকে পছন্দ করি। আমরা এক দলে না থাকলেই তো হয়, কেউ কাউকে সহ্য করতে হবে না।

তাহসিন শীতল দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে, শান্ত কন্ঠে বলল – আমি আপনার পছন্দ না?

মেঘা ডানে বামে মাথা নাড়ালো আবার মুখেও বলল – পছন্দ না তো।

ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো তাহসিন অতঃপর বলল- তা কি করতে হবে আমাকে?

– আমাকে অন্য দলে অর্থাৎ তনু যে দলে আছে ঐ দলে ওর জায়গা পাঠিয়ে দিন আর তনুকে আমার জায়গায় আপনার দলে নিয়ে আসুন।

তাহসিন তাকালো মেঘার দিকে, বলল – আপনার নামটা যেন কি?

অপমান বোধ করলো মেঘা। এত দিন ধরে এই অভদ্র লোকের সাথে পরিচয় তার, হোক শত্রুতা। কিন্তু শত্রু হয়েও তো শত্রুর নামটা জানা দরকার, মনে রাখা দরকার। আর এই লোক কিনা ওর নামই জানে না? মেঘা থমথমে কন্ঠে বলল – মেঘা।

– তা মিস মেঘা আপনি এখন আসুন। কাজ আছে আমার রোগী দেখতে হবে।

– কিন্তু স্যার!

তাহসিন উঠে দাঁড়ালো, শান্ত কন্ঠে বলল – আপনি আমার দলেই থাকছেন। কোনো দল পরিবর্তন হচ্ছে না আপনার।

মেঘাকে কিছু বলতে না দিয়েই কেবিন থেকে বেরিয়েই যেতে নিল তাহসিন।‌ হঠাৎ কিছু একটা ভেবে কেবিনের দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালো সে। মেঘা আর তনুর দিকে ফিরে তাকালো, বলল – আর একটা কথা।

মেঘা ভ্রু কুঁচকালো, বলল – কি?

– প্রথমদিন আপনাদের ক্লাসে একটা মেয়ে দেখেছিলাম হলুদ ড্রেসে মাস্ক পড়া ছিল। মেয়েটাকে আর দেখছি না, আসে না কলেজে?

তাহসিনের প্রশ্নে চমকে উঠলো মেঘা তনু দুজনেই। তাহসিন যে মেঘার কথা জিজ্ঞেস করছে বুঝতে বাকি নেই কারো। প্রথম দিন তো হলুদ ড্রেসে মেঘাই এসেছিল মুখে মাস্কও পড়েছিল। তনু মুখ খুললো, বলল – ওটা তো…

আর কিছু বলতে পারলো না, তার হাত চেপে ধরলো মেঘা। নিজে গলা উঁচিয়ে বলল – কেন?

– না প্রথম কয়েকদিনের পর আর দেখিনি মেয়েটাকে তাই জিজ্ঞেস করলাম। এত দিন কলেজ বন্ধ দিচ্ছে তাই আর কি?

এই লোককে একদম বিশ্বাস করে না মেঘা। নিশ্চই মাথায় কোনো কু মতলব আছে তাই এই কথা জিজ্ঞেস করছে। সে তো কিছুতেই এই বদ লোকের ফাঁদে পা দিবে না। তারপর আবার কোথা থেকে কোথায় ফাঁসিয়ে দিবে, মেঘা বলল – কোনো মেয়েকে চিনি না আমরা। ক্লাসে কত মেয়ে আছে সবাইকে চিনে রেখেছি নাকি?

তাহসিন সরু দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে। মেঘা পাত্তা দিল না। তনুর হাত ধরে সে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – এত বড় একটা দেহ নিয়ে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে না থেকে দেহটা নিয়ে সাইডে সরুন।

তাহসিন চোখ বড় বড় করে তাকালো মেঘার দিকে, বলল – কি বললেন?

– যা বলেছি ঠিক বলেছি। যে কাজের জন্য এসেছি সেই কাজই যদি না হয় এখানে থেকে কি করবো? সরুন ক্লাসে যাব।

– সরবো না, কি করবেন আপনি?

এদিক ওদিক তাকিয়ে বাঁকা হাসলো মেঘা, বলল – কি করবো দেখতে চান?

– হুম।

মেঘা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে এলো তাহসিনের ডেস্কের কাছে, একে একে এলোমেলো করতে লাগলো পুরো ডেস্ক। তাহসিনের চোখ কপালে, সে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো কেবিনে, চকিত কন্ঠে বলল – এই মেয়ে কি করছেন? আমার টেবিল এলোমেলো করছেন কেন?

এই সুযোগে মেঘা তনুর হাত টেনে দৌড় লাগালো। দরজার কাছে গিয়ে এক দন্ড দাঁড়ালো, পিছন ঘুরে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল – দেখলেন তো আমি কি করতে পারি?

তাহসিন অগ্নী দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে। মেঘাকে আর পায় কে? সে আর এক দন্ডও দাঁড়ালো না ওখানে। তনুর হাত টেনে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে এলো। দাঁতে দাঁত চাপলো তাহসিন, বলল – এর শোধ তো আমি তুলবোই।

______________________________________

গ্রীষ্মের তপ্ত রৌদ্র। খা খা করে জ্বলে যাচ্ছে সূর্যটা। প্রাকৃতিও যেন আজ চুপসে যাচ্ছে গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে। তার মধ্যে আরও তাপদাহ সৃষ্টি করতে মেঘাকে তার কেবিনে ডেকেছে তাহসিন, অবশ্য শুধু মেঘাকে নয় তার দলে যে যে পড়েছে সবাইকে ডেকেছে নিজেদের কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে। মেঘার ছোট মাথায় এটাই ঢুকছে না যে হঠাৎ এই ডকুমেন্টসগুলো কেন প্রয়োজন পড়লো তাহসিনের। এইগুলো তো ভর্তির সময়ই জমা দিয়েছিল ওরা। তাছাড়া ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থী যারা অন্য দলে পড়েছে তাদের কাছে তো ঐ দলের দায়িত্বরত স্যাররা এই ডকুমেন্টসগুলো চায়নি তাহলে? কে জানে কোন ভুতে ধরেছে তাহসিনকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার সাথে তাহসিনের কেবিনে আসতে হলো মেঘাকে। একে একে সবাই সবার ডকুমেন্টস জমা দিয়ে চলেও গেল, শুধু যায়নি মেঘা। তাকে বলা হয়েছে তার ডকুমেন্টসে নাকি কি যেন সমস্যা আছে। সবার ডকুমেন্টস জমা নেওয়ার পর ওর ডকুমেন্টসের ভুল দেখানো হবে। অগত্যা দাঁড়িয়ে থাকতে হলো মেঘাকে। সবাই বেরিয়ে যেতেই মেঘা তাহসিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল – কি ভুল আছে আমার ডকুমেন্টসে?

চেয়ারে আয়েশ করে বসলো তাহসিন, বলল – এখানে এসে আমার টেবিলে রাখা সব ডকুমেন্টসগুলো চেক করবেন তারপরে প্রত্যেকের ডকুমেন্ট আলাদা করে সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখবেন।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – আমি এসব করবো কেন? আমি কি আপনার এসিস্ট্যান্ট নাকি?

– হ্যা ঠিক বলেছেন, এসিস্ট্যান্ট। আসলেই আমার একজন এসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন। তাহলে সেই কাজটা আপনাকেই দিয়ে দেই কি বলেন?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here