প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১১

0
69

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১১

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

– হ্যা ঠিক বলেছেন, এসিস্ট্যান্ট। আসলেই আমার একজন এসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন। তাহলে সেই কাজটা আপনাকেই দিয়ে দেই কি বলেন?

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট হতে যাব কেন?

– যে কেবিন আপনি এলোমেলো করেছেন সেই কেবিন গুছানোর দায়িত্ব তো আপনাকেই নিতে হবে মিস মেঘা।

– নেব না আমি। কি আপনি করবেন?

– ফেল করিয়ে দেব।

চোখ বড় বড় করে তাকালো মেঘা, বলল – ফেল করিয়ে দিবেন মানে কি?

– মানে খুব সহজ। আমার কথা না শুনলে আমার সাবজেক্টে আপনি ফেল করবেন।

– মগের মুল্লুক নাকি? খাতায় লিখলে আপনি ফেল কিভাবে করাবেন?

তাহসিন ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল – জোর করে।

– ছিঃ ছিঃ স্যার এত বড় কলেজের শিক্ষক হয়ে আপনি এমন দূর্নীতিমূলক কথা বলছেন? লজ্জা করছে না আপনার?

– আপনার যদি এত বড় একটা কলেজে দাঁড়িয়ে সেই কলেজের স্যারের সাথে বেয়াদবি করতে না বাঁধে তাহলে আমারও লজ্জা করছে না।

– এটা কেমন কথা হলো?

– যেমনটা আপনি শুনেছেন তেমনটাই।

– আমি সবাইকে বলে দেব।

– কেউ আপনার কথা বিশ্বাস করবে না।

– কেন?

– কারন আমি আর কাউকে ফেল করাবো না। আর তাছাড়া এখানকার সবাই জানে ডাক্তার তাহসিন তালুকদার কখনও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয় না। তাই আপনার একার কথায় কেউ বিশ্বাস করবে না।

– কিন্তু আপনি তো মাত্রই দুর্নীতিমূলক কথা বললেন।

– সেটা আমি আর আপনি জানেন আর কেউ কিন্তু জানে না।

মেঘা ধপ করে বসে পড়লো তাহসিনের সামনের চেয়ারে। মাথায় হাত তার। এখন কি করা উচিৎ? তাহসিন মেঘাকে বসে থাকতে দেখে বলল – সময় নষ্ট না করে কাঁজে লেগে পড়ুন, আমার সময়ের দাম আছে। আর হ্যা অবশ্যই আমার এসিস্ট্যান্ট হওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের বেতন পাবেন আপনি। শুধু শুধু খাটাবো না আপনাকে।

মেঘা ভেবে দেখলো তার জন্য তাহসিনের এসিস্ট্যান্ট হওয়াটাই শ্রেয়। সে মুখস্থ বিদ্যার পারদর্শী হলেও প্রাক্টিক্যালে বড্ড কাঁচা। র’ক্ত, কাঁটা ছেড়া একদম দেখতে পারে না। তাও মা বাবা তাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে মেডিকেল কলেজে। কিন্তু পড়াশোনার দায়িত্ব তো তাকেই নিতে হবে সেটা তো আর বাবা মা নিবে না। তাও সারাদিন তাহসিনের এসিস্ট্যান্ট হয়ে তার সাথে থাকলে কিছুটা অন্তত স্বাভাবিক হতে পারবে। কিন্তু মেডিকেলের পড়াশোনা তো আর সাধারণ কলেজের মতো না, অনেক পড়া। এত পড়াশোনা সামলে আবার তাহসিনের এসিস্ট্যান্ট হওয়ার কাজ সামলাতে পারবে তো? তাছাড়া এই লোককে তো আবার ভরসা নেই সে মেঘাকে শায়েস্তা করার জন্য হাজারটা কাজ বানিয়ে আনতে পারবে। মেঘার ছোট মাথায় হাজার প্রশ্ন কিলবিল করছে। মেঘাকে চুপ করে ভাবুক ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে তাহসিন বলল – কি ভাবছেন? কলেজ সামলে আবার আমার এসিস্ট্যান্টের চাকরি সামলাবেন কিভাবে?

হকচকিয়ে উঠলো মেঘা। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তাহসিনের দিকে। এই বদ লোক ওর মনের কথা জানালো কিভাবে? ডাক্তারি করার সাথে সাথে এ কি মানুষের মনও পড়তেও শিখেছে নাকি? কি আশ্চর্য! তাহসিন গলা খাঁকারি দিল, বলল – না আমি কারো মন পড়তে পারি না তবে মুখ পড়তে পারি ঠিকই। আপনার মুখ দেখেই আমি বুঝেছি আপনি কি ভাবতে পারেন। তবে আমার এসিস্ট্যান্ট হওয়ায় পড়াশোনায় কোনো সমস্যা হবে না আপনার। সকালে এসে কাজ করবেন তারপরে কলেজে ক্লাস শুরু হলে ক্লাস করবেন। কলেজ তো এখানেই। তখন আমারও তেমন কাজ থাকে না আপনাদের ক্লাস নেই। তবে হ্যা মাঝে মাঝে ইমারজেন্সি থাকে সেটা আমি সামলে নেব। আপনি কলেজ ছুটির পর আবার কাজে আসবেন। সন্ধ্যায় বাড়ি চলে যাবেন।

মেঘা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো তাহসিনের দিকে। এ ব্যাটা হঠাৎ ওকে এত ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেন? অন্য কাউকেও তো তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিতে পারতো সেখানে তাকে ধরে বেঁধে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে রাখছে, এত সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে আবার বেতনও দিবে বলছে। ডাল মে কুছ কালা হে। নিশ্চই এই ব্যাটা মনে মনে কোনো ফন্দি আটছে। তার কি এই কাজে থাকা ঠিক হবে নাকি ভুল? মেঘা ভাবলো বেশ অনেক্ষণ বসে, শেষে সিদ্ধান্ত নিল সে তাহসিনের এই এসিস্ট্যান্ট এর কাজটা করবে। পরে যা হবে দেখা যাবে। আপাতত তাহসিনের সাথে থাকাটাই ভালো হবে তার এবং তার পড়াশোনার জন্য। মেঘা বেশ ভদ্র কন্ঠেই বলল – আমাকে কি কি করতে হবে কাজ বুঝিয়ে দিন। আমি করবো এই কাজটা।

– কাল থেকে কাজে আসবেন। আপাতত আমার কেবিন পরিষ্কার করা, গুছিয়ে রাখাই আপনার কাজ।

তেতে উঠল মেঘা, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে চাইছি কাজের লোক হিসাবে নয়।

– আমার এসিস্ট্যান্ট যদি আমার কেবিন এলোমেলো করে দিতে পারে তাহলে কেবিন গুছানোর দায়িত্বও তো আবার তাকেই নিতে হবে।

ফোঁস করে উঠলো মেঘা। সে বেশ ভালো বুঝতে পারছে তখন তাহসিনের ডেস্ক এলোমেলো করার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে তাহসিন। তাই এভাবে চাপে ফেলছে। মেঘা দাঁত কিড়মিড় করে বলল – করবো না আমি এ চাকরি।

– আপনি এক মুখে কত কথা বলতে পারেন? একটু আগে বললেন আমার এসিস্ট্যান্ট হতে রাজি এখন বলছেন চাকরিটা করবেন না। আপনি তো দেখছি মানুষ সুবিধার নয়।

মেঘা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তাহসিনের দিকে, তাহসিন হাসলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল – প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি অভদ্র তারপরে দেখলাম আপনি শুধু অভদ্র নয় মিথ্যাবাদীও বটে। এখন দেখছি আপনি দুমুখো, এক মুখে হাজার কথা বলেন।

মেঘার রাগ এখন আকাশসম। এত বড় অপমান তাকে? সে নাকি দুমুখো? কিন্তু এখন রেগে যাওয়া যাবে না কিছুতেই না। এর শোধ অন্যভাবে তুলতে হবে। এখন এখানে রেগে চিল্লাচিল্লি করলে ঝামেলা হয়ে যাবে। হাজার হলেও তাহসিন তার শিক্ষক। তবে একটা কথা কি তাহসিনের চোখের দিকে তাকিয়ে কখনও ভয় করেনি মেঘার। এখন পর্যন্ত যত ঝগড়া হয়েছে বা তাহসিন যতই রেগে কথা বলুক না কেন তার চোখ দুটো ছিল শান্ত, মায়াময় যে চোখের দিকে তাকিয়ে মেঘার কখনও ভয় লাগেনি। তাহসিন অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেও মনে হয়েছে এ দৃষ্টিতে কোনো রাগ নেই। অন্য অন্য স্যারদের দেখলেই ভয় লাগে কিন্তু তাহসিনের সাথে তার ঝগড়াটা কেমন যেন বন্ধুত্বপূর্ণ। এত ঝগড়ার মাঝেও তাহসিন কখনও তাকে কোনো হুমকি দেয়নি। সে এত বড় একটা কলেজের স্যার, সে চাইলেই পারতো মেঘার বেয়াদবির জন্য তাকে কলেজ থেকে বের করে দিতে বা শাস্তি দিতে কিন্তু সে তেমন কিছুই করেনি। উল্টো বাচ্চাদের মতো লোকচক্ষুর আড়ালে ছোট খাটো প্রতিশোধ নিয়েছে এই যেমন আজ নিচ্ছে। এই সব বিষয়গুলোর জন্যই তাহসিনের সাথে এত কিছু করার সাহস পেয়েছে মেঘা। নিজের অজান্তেই তাহসিনের প্রতি তার তৈরি হয়েছে এক অজানা অধিকারবোধ। এই যেমন ধরুন বাবাকে আমরা অনেক ভয় পেলেও মাকে মোটেও ভয় পাই না। আমাদের সকল জাড়ি জুড়ি থাকে মায়ের কাছেই। বাবার চোখের দিকে তাকালেই আমরা ভয়ে চুপসে যাই কিন্তু মায়ের হাজার গালমন্দ হেসে উড়িয়ে দেই, ওসব যেন আমাদের গায়েই লাগে না। মেঘার ক্ষেত্রেও হয়েছে তেমনটাই নিজের অজান্তেই সে তাহসিনকে নিজের কাছের কেউ হিসেবে ভেবে নিয়েছে যদিও এখানে তাহসিনই বেশি দায়ী। সে তার ব্যক্তিত্ব হারিয়েছে মেঘার সামনে। নিজের শক্তপোক্ত খোলস ছেড়ে বারবার বাচ্চাদের মতো ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছে মেঘার সাথে। নিজেই লাই দিয়েছে মেঘাকে। মেঘা ঝগড়া না করতে চাইলেও সে তার কথার মাধ্যমে উস্কে দিয়েছে মেঘাকে। যখনই দেখা হয়েছে তখনই ঝগড়া করেছে সে। এত বড় একটা হাসপাতাল এবং কলেজের ডাক্তারকে কি এভাবে ছাত্রীর সাথে পায়ে পা মিলিয়ে ঝগড়া মানায়? উঁহু একদম মানায় না। কিন্তু সে বারংবার মেঘার সাথে ঝগড়া করেছে। এই ঝগড়ার মাঝেই যেন সে অজানা এক প্রশান্তি পেয়েছে। একদিন যদি মেঘাকে কঠিন ভাবে অপমান করতো তবে হয়তো মেঘা তাহসিনের পিছনে এভাবে আর লাগতে সাহস পেত না। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো মেঘা, বলল – ঠিক আছে কাল থেকে কাজে আসছি আমি। কেবিন তো গুছাবোই সাথে সাথে আপনাকেও গুছিয়ে দেব একদম।

আর এক দন্ডও দাঁড়ালো না মেঘা, গটগট করে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। তাহসিন তাকালো মেঘার যাওয়ার পানে মুচকি হেসে ডাক দিল পিয়নকে , বলল – হাশেম চাচা! হাশেম চাচা!

কেবিনের দরজা গলিয়ে ভিতরে গেল হাশেম চাচা, বলল – জ্বী বলেন স্যার।

– রোগী আছে এখন কোনো?

হাশেম চাচা মাথা নাড়ালো, বলল – না এখন নাই।

– আচ্ছা আমি একটু আসছি কাজ আছে। প্রয়োজন পড়লে খবর দিবেন আমাকে।

– আচ্ছা।

_______________________________________

সূর্যের আলো ফুটেছে শহরের বুকে। মিষ্টি রোদ যেন পাখা মেলে বেড়িয়ে আসছে আকাশের বুক চিরে। কোলাহল পূর্ণ শহরটাও বেশ শান্ত এখন। মেঘা আজ খুব ভোরেই উঠেছে ঘুম থেকে। এলার্ম দিয়ে রেখেছিল মোবাইলে। এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙতেই সে ছুটলো বাড়ির পিছনের দিকটায়। ওড়ানার আঁচলে করে বেঁধে নিয়ে এলো কিছু একটা। অতঃপর বাসায় গিয়ে সকাল সকাল রেডি হয়ে চলে গেল কলেজের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে এখনও বলা হয়নি সে চাকরি নিয়েছে। চাকরির কথা জানতে পারলে বাবা ঠিক কিভাবে রিয়েক্ট করবে সেট নিয়ে বেশ চিন্তিত মেঘা।

তাহসিন হাসপাতালে এসেছে। বেশ সকালেই এসেছে, সে বরাবরই সকাল সকাল হাসপাতালে আসে, রোগীদের খোজ খবর নেয়। হাত ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে কেবিনে ঢুকলো সে। কেবিনে ঢুকতেই চমকে উঠলো তাহসিন। তার সামনেই হাস্যজ্জ্বৌল মুখে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা। তাহসিন চোখ ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল কেবিনের চারপাশ, সব সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখা। অবাক হলো তাহসিন। এই মেয়ের আবার কি হলো? এই মেয়ে তো তার কথা শোনার মতো মেয়ে নয় তাহলে আজ কিভাবে শুনলো? এক রাতে এত পরিবর্তন? ভুতে টুতে ধরেছে নাকি? তবে মুখে বলল না কিছুই। তাহসিনকে দেখে মেঘা হাসি মুখে বলল – আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

_

[ Note : অনেকের বলেছেন শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্ক এমন হতে পারে না। আসলেই কথা সত্যি শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্ক এমন হতে পারে না। তবে এই গল্পে মেঘা এবং তাহসিনের যখন প্রথম দেখা হয়েছিল বা যখন থেকে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তখন তারা শিক্ষক ছাত্রী ছিল না। পরবর্তীতে হয়েছে। এই যেমন ধরুন আমরা কাউকে দেখতে পারি না, সে যদি পরবর্তীতে সম্মানীয় কোনো আসনে চলেও যায় তবুও আমাদের ক্ষোভটা থেকেই যায়। ভিতর থেকে সম্মান আসে না, আর সুযোগ পেলে তাকে অপমান করতেও ভাবি না। আর আমি এখন পর্যন্ত যতটুকু মেঘা আর তাহসিনের ঝগড়া দেখিয়েছি সেখানে তারা কিন্তু কখনওই জনসম্মুখে ঝগড়া করেনি। অতিরিক্ত হলে তাদের ঝগড়ার সাক্ষী হয়েছে শুধুমাত্র গৌরব আর তনু। এছাড়া কারো সামনেই তারা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়নি। তারপরও কোনো পর্বে যদি আমি ভুলবশত জনসম্মুক্ষে তাদের ঝগড়াটা ফুটিয়ে তুলে থাকি তাহলে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন আমি ঠিক করে দেব। এরপরও যদি এই বিষয়টা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকে আশা করছি এই পর্বে পেয়ে গেছেন আর না পেলে কমেন্টে জানাবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here