প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১২

0
66

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১২

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তাহসিনকে দেখে মেঘা হাসি মুখে বলল – আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।

তাহসিন সরু দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে, বলল – ওয়ালাইকুমুস সালাম।

– ভালো আছেন স্যার? রাতে আপনার ঘুম ভালো হয়েছে তো?

তাহসিনের সন্দেহ আরও গাঢ় হলো। এই মেয়ে তো এত ভালো ব্যবহার করার মেয়ে না তাও আবার তার সাথে। নির্ঘাত মনে মনে কোনো ফন্দি আটছে। না না এই মেয়েকে একদম বিশ্বাস করা যাবে না। তাহসিন মেঘার কথার কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ গিয়ে বসলো নিজের চেয়ারে। মেঘা এক কাপ কফি সামনে ধরলো তাহসিনের, বলল – স্যার আপনার কফি।

গোল গোল চোখে তাহসিন তাকালো মেঘার দিকে, বলল – কফি কোথায় পেলে?

মেঘা কফির কাপটা ধরিয়ে দিল তাহসিনের হাতে, হাসি মুখে বলল – আগেই এনে রেখেছি। কিন্তু চিন্তা করবেন না কফিটা এখনও ঠান্ডা হয়নি। একটু আগেই আনিয়েছি। হাশেম চাচার কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম আপনি কয়টায় আসেন সেই অনুপাতে কফি আনিয়েছি।

তাহসিন ছোট ছোট চোখে তাকালো মেঘার দিকে। এই মেয়ের তো আবার মাথা ভর্তি কুটবুদ্ধি। আবার কি মতলব করছে কে জানে? না না এই কফি কিছুতেই খাওয়া যাবে না। পরে দেখা যাবে কফিতে বিষ মেশানো ছিল। খেয়ে ডিরেক্ট উপরে। এত তাড়াতাড়ি তাহসিন মরতে চায়না। তার এখনও সেই মাস্ক পরিহিত রমনীকে খুজে পাওয়া বাকি। সেই রমনী আর মেঘার মধ্যকার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া বাকি। তাহসিন কফির কাপটা রাখলো টেবিলের উপর, বলল – আমি কফি খাই…

কথাটা শেষ করার আগেই তাহসিনের সামনে চায়ের ফ্লাস্ক ধরলো মেঘা, বলল – আপনি কফি খান না তাই তো। কফি না খেলে এই যে চা আছে। আপনার জন্য দুই রকম ব্যবস্থাই করে রেখেছি আমি।

অবাক হলো তাহসিন। এই মেয়ে চাইছেটা কি? ব্যাপারটা সুবিধের তো মনে হচ্ছে না আবার এর ফন্দিও ধরতে পারছে না। তাহসিনের অবাকতার মাঝেই কাপে এক কাপ চা ঢেলে ধরিয়ে দিল তাহসিনের হাতে, বলল – খেয়ে নিন স্যার। চিন্তা করবেন না, চায়ে একদম বিষ মিশাইনি আমি। আমারও তো জেলের ভয় আছে তাই না?

তাহসিন মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ভুলবশত চায়ের কাপে মুখ দিল। অমনি চা ছিটকে বেরিয়ে এলো মুখ থেকে। মেঘা হন্তদন্ত হয়ে গেল তাহসিনের কাছে, বলল – কি হয়েছে স্যার? চা ভালো হয়নি?

তাহসিন নাক মুখ কুঁচকে বলল – এটা চা, এত তিতা কেন?

অবাক হওয়ার ভান ধরলো মেঘা, বলল – চা তিতা হবে না তো কি হবে?

– চা হবে মিষ্টি।

মেঘা অপরাধীর মতো মুখ করে তাকালো তাহসিনের দিকে, বলল – কিন্তু স্যার আমি তো ভেবেছিলাম আপনি তিতা চা খান নয়তো আপনার মুখের ভাষা এত তিতা কিভাবে হলো? মিষ্টি চা খেলে তো মুখের ভাষাও মিষ্টি হতো। তাই তো চায়ে চিনির বদলে নিম পাতার রস দিয়েছি।

তাহসিন কটমট করে তাকালো মেঘার দিকে। মেঘা পাত্তা দিল না, বলল – জানেন স্যার আপনার জন্য কত কষ্ট করেছি আমি? সেই সকালে উঠে বাড়ির পিছনে নিম গাছটা থেকে নিমপাতা এনেছি। গাছটা কি বড়, কত কষ্ট হয়েছে আমার ঐ পাতাগুলো আনতে।

তাহসিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল – হু আমাকে জব্ধ করতে হবে না?

– ছিঃ ছিঃ স্যার এসব কি কথা বলছেন? আমি আপনাকে জব্দ করতে পারি? কত সম্মান করি আপনাকে আমি।

তাহসিন দাঁত কিড়মিড় করে বলল – আপনাকে আমি পরে দেখে নেব।

– ওমা স্যার! আপনার যে চোখে সমস্যা আছে জানা ছিল না তো। আপনি বললে আমি আজই চক্ষু বিভাগে যোগাযোগ করছি, হাজার হলেও আমি আপনার ছাত্রী আবার এসিস্ট্যান্টও।

– মানে! আমার চোখে সমস্যা হবে কেন?

– এই যে আমি আপনার সামনে জলজ্যান্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন না বলছেন পরে দেখে নেবেন।

তাহসিন রেগে মেগে কিছু বলার জন্য উদ্ধত হলো কিন্তু বলতে পারলো না তার আগেই দরজায় টোকা পড়লো। মেঘার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল সে। জোরে জোরে দুটো নিঃশ্বাস নিয়ে শান্ত করলো নিজেকে। শান্ত কন্ঠে বলল – আসুন।

দরজাটা একটু ফাঁকা করে ভিতরে উঁকি দিল হাশেম চাচা, বলল – স্যার রোগী আছে পাঠিয়ে দেব?

– দিন।

______________________________________

চারদিকে আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। মুসল্লিরা দলে দলে ছুটছে মসজিদে নামাজে। ব্যস্ত শহর ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে উঠছে কৃত্রিম আলোয়। মেঘা বাড়ি ফিরেছে মাত্রই । সারাদিন কাজ, ক্লাস সামলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেরী হয়ে গেছে তার । ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকলো মেঘা, মা নিশ্চই ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাবা? সে কি বাড়িতে চলে এসেছে নাকি? কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো আজ তাকে কেউই কিছু বলেনি। মা চুপচাপ, বাবাও ফিরেনি এখনও। মনে মনে একটু স্বস্থি পেল মেঘা। কিন্তু তার এই স্বস্থিটা বুঝি টিকলো না। তার বাড়িতে ফেরা নিয়ে তৎক্ষনাৎ কেউ কিছু না বললেও এ নিয়ে কথা উঠলো রাতে খাবার টেবিলে। নিশ্চই তার মা এই কথা তার বাবার কানে তুলে দিয়েছে। এমনি সে বাবাকে ভীষণ ভয় পায়। সুফিয়া বেগম জানেন সে সারাদিন বললেও মেঘা তার কথা শুনবে না আর বাবার এক ধমকেই সোজা হয়ে যাবে তাই আজ সে আর নিজে থেকে কিছু না বলে মামুন সাহেবকে কাজে লাগিয়েছে। মেঘা মায়ের দিকে তাকালো, সুফিয়া বেগম মুখ ঝামটা দিয়ে তাকালো মামুন সাহেবের দিকে, বলল – তোমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কি করবে করো। রোজ রোজ দেরিতে ফিরে কলেজ থেকে। এদিকে আমি যে বাড়িতে বসে চিন্তা করি সে খেয়ালও থাকে না তার। বড় হয়ে গেছে তোমার মেয়ে, এখন আর মা বাবা লাগে না।

মেঘা কপাল কুঁচকালো, বলল – রোজ রোজ কই মা, আজ একদিনই তো…..

আর কিছু বলতে পারলো না মেঘা। বাবার গম্ভীর কন্ঠে থামতে হলো তাকে। মামুন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন – আজ তোমার ফিরতে দেরী হয়েছে কেন?

মেঘা ঢোক গিলল। সত্যিটা বলে দিবে বাবাকে? হ্যা বলে দেওয়াটাই ঠিক হবে‌‌। আজ হোক বা কাল হোক তার বাবা তো সবটা জানবেই তাহলে এখন জানলে দোষ কিসের? মেঘা আমতা আমতা করে বলল – বাবা আসলে, আসলে

– কি আসলে?

– আআআমি একটা চাকরি নিয়েছি।

কথাটা শেষ হতেই মামুন সাহেব শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন মেঘনার দিকে। এই দৃষ্টিতেই কেঁপে উঠলো মেঘা। মামুন সাহেব শান্ত অথচ গম্ভীর কন্ঠে শুধালেন – কবে নিয়েছো?

– আজ সকালেই। তোমাদের বলতে চাইছিলাম কিন্তু চাকরিটা নিয়ে শিওর ছিলাম না তাই বলিনি।

তেতে উঠলেন সুফিয়া বেগম, ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন – হ্যা তা বলবি কেন? আমরা তোদের কে হই? মা বলে মানিস আমাকে? যদি মানতি তাহলে এত বড় কথা না বলে থাকতে পারতি না।

সুফিয়া বেগমকে থামিয়ে দিলেন মামুন সাহেব, বললেন – এখনও তুমি অনেক বড় হয়ে যাওনি মেঘ। আমি চাই তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও সাবলম্বী হও কিন্তু বিষয়টা তোমার আমাদের আগে জানানো উচিৎ ছিল। তুমি চাকরি করবে জানালে কখনওই আমি বারন করতাম না তোমাকে।

মামুন সাহেবের কথার মাঝে ফোড়ং কাটলেন সুফিয়া বেগম, বললেন – কেন ওর চাকরি করতে হবে কেন? মানছি আমাদের কাড়ি কাড়ি টাকা নেই কিন্তু যতটুকু আছে তাতে মেয়েকে ঠিক পড়াতে পারতাম।

মামুন সাহেব তাকালেন সুফিয়া বেগমের দিকে, বললেন – আমি জানি আমার কি আছে বা কি নেই। তবুও আমি সব সময়ই চেয়েছি আমার মেয়ে সাবলম্বী হবে। সে কখনও অন্যের উপরে নির্ভরশীল হবে না।

– এই করে করে তুমিই মেয়েটাকে লাই দিয়েছো। লাই দিতে দিতে মাথায় তুলেছো।

সুফিয়া বেগমের কথায় পাত্তা দিলেন না মামুন সাহেব। এটা সুফিয়া বেগমের রোজগার সংলাপ। মামুন সাহেব চোখ ঘুরিয়ে তাকালেন মেঘনার দিকে, বললেন – আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি মেঘ। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তোমার অবশ্যই আমাকে জানানোর দরকার ছিল।

মাথা নুইয়ে ফেলল মেঘা। ভীষন অপরাধবোধ ঘিরে ধরেছে তাকে। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে এই চাকরিটা সে নিয়েছে তা তো কেউ জানে না। অবশ্য সে নিজে থেকে চাকরিটা নেয়নি তাকে বাধ্য করে নেওয়ানো হয়েছে। এই চাকরিটা যে সে করবে সে তো নিজেই আগে থেকে জানতো না তাহলে বাড়িতে জানাবে কিভাবে? মেঘা মাথা নুইয়ে মিনমিনে কন্ঠে বলল – স্যরি বাবা।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল মামুন সাহেব। মেয়েটা অকারনেই তাকে খুব বেশি ভয় পায়। মেয়েটাকে সে ভালোবাসে ভীষণ, ছোটবেলা থেকে স্বাধীনতাও দিয়েছে বেশ, কোনো কাজে বাঁধা দেয়নি তবুও কেন মেয়েটা তাকে এত ভয় পায়। অনেকবার ভেবেছে মেয়ের সাথে এ বিষয় কথা বলবে সে। কিন্তু নিজের শক্তপোক্ত খোলস ছেড়ে মেয়ের সাথে এমন ছোট বিষয়ে কথা আর বলে উঠতে পারেনি সে। তাদের এত কথাপকথনের মধ্যেই প্রত্যেকের প্লেটে খাবার দিয়ে দিয়েছে সুফিয়া বেগম। মামুন সাহেব খাবার খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করল – কি চাকরি নিয়েছো তুমি?

– আমাদের কলেজেরই এক স্যারের এসিস্ট্যান্ট। ভাবলাম আমি তো কাঁটা ছেড়া দেখতে পারি না উনার সাথে থাকতে থাকতে ওটার অভ্যাস হয়ে যাবে। তাছাড়া উনার তত্ত্বাবধায়নে পড়াশোনাটাও ভালো হবে।

– তোমার ভাবনাটা যুক্তিযুক্ত। তবে মন দিয়ে কাজ করবে আবার দেখবে কাজ করতে করতে যাতে তোমার পড়াশোনার ক্ষতি না হয়।

মেঘা খুশি হলো। তার মানে তার বাবা তাকে চাকরির অনুমতি দিয়ে দিয়েছে আর রাগও করেনি বেশি। রাগ করলে এত সহজে এই কথাগুলো বলতে পারতো না। হাসি ফুটে উঠল মেঘার দুই ঠোঁটে , বলল – আচ্ছা বাবা।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here