অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–২৩

0
70

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২৩

বাড়িতে আসার পর থেকে মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করেনি তনয়া। থম মেরে বসার ঘরের সোফাতেই বসে রয়েছে। তোফায়েল হাজার বার হাজার রকম কথা তুললেও তনয়া উত্তরে একটা বাক্যও বলেনি। অবশেষে বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারলোনা তোফায়েল,,,বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলো,

— কি শুরু করেছিস টা কি তুই? আমি কথা বলছি তোর সাথে গায়ে লাগছেনা আমায়? আবরারের জন্যে এখন শোক পালন করছিস? অথচ দ্যাখ সে গিয়ে সে বউয়ের আঁচলের তলায় গিয়ে মুখ লুকিয়েছে!

এতক্ষনে চোখ তুললো তনয়া,,,তোফায়েল কে একবার দেখে নিয়ে মুখ কালো করে বলল,

— কথাটা আমাকে রাগাতে বললেও,, আমি রেগে যাইনি বাবা! কষ্ট পেয়েছি, ভালোবাসায় ব্যার্থ হওয়ার কষ্ট!

তীব্র বিরক্তিতে তেতো হয়ে এলো তোফায়েলের মুখটা।গুটিকয়েক ভাঁজ পরলো কপালে,

— সেই এক মন্ত্র আওড়ে যাচ্ছিস,আবরার আবরার আবরার! আরে বাবা একটা বাচ্চা মেয়েকেও এর থেকে অনেক কম বোঝালে চকলেটের বায়না ছেড়ে দেবে সে।অথচ তুই? তোর তো জ্ঞান বুদ্ধি সব হাটুতে নেমে এসেছে,আরে ও একটা বিবাহিত ছেলে,বউ আছে ওর,,আগে যেমন তেমন হলেও এখন অন্তত ছাড় দে ব্যাপারটা। আর সব থেকে বড় কথা ও তোকে ভালোবাসাতো দূর, পছন্দই করেনা।তাহলে তুই কেন নির্লজ্জের মত ওর পেছনে পরে আছিস? কোন অংশে কম আছে তোর?

পুরো এক দমে কথা গুলো বলে থামলো তোফায়েল। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। পাশ থেকে তনয়া থমথমে গলায় জবাব দিলো,

— আমি সব জানি বাবা! তোমার আমাকে নতুন করে কিছু বলতে হবেনা।আবরার বিবাহিত হওয়ার আগে থেকে আমি ওকে চাই,চেয়ে এসেছি।
ওই মেয়েটা কতদিন হলো ওর জীবনে আছে? খুব জোর আট মাসের এর মতো? ওর অনেক আগে আমি আবরারের লাইফে এসেছি তাই আবরারের ওপর অধিকার ওর থেকে আমার বেশি,,
না কম,বেশি নয়তো, আবরার শুধু মাত্র আমার।

মেয়েকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে তোফায়েল। ভেতর থেকে অবসাদ ছাড়া কিছুই আসছেনা এখন,,,তবুও শান্ত স্বরে বলল,

— দ্যাখ মা,আবরারের চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল,,আমি ওর থেকেও অনেক ভালো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবো।

— আমার আবরার কেই চাই বাবা!

তনয়াকে বুঝিয়ে লাভ নেই! কথাটা বেশ ভালো ভাবে বোধগম্য হলো তোফায়েলের। অহেতুক নিজের মস্তিষ্কের চাপ বাড়াতে চাইলো না সে।প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠলো,

— এসব ছাড় এখন,দুপুরে কি খাবি? বাড়িতে খাবি নাকি বাইরে থেকে অর্ডার করবো?

তনয়া ঠান্ডা গলায় বলল,
— কিছুইনা,,আমি আবরারদের বাসায় যাবো।

তোফায়েল চমকে উঠে বললো,

— আবার? আবার সেই আবরারের কথা? বারবার বোঝাচ্ছি তাও শুনছিস না আমার কথা?

তনয়া মৃদূ তেঁতে উঠে বলল,
— শুনছিনা যখন আমাকে বোঝাতে আসছো কেন তুমি? আমি কিছুতেই হার মেনে নেবোনা বাবা! বিশেষ করে ওই গাইয়া মেয়ে স্নিগ্ধার কাছেতো নই-ই।কখনোই নয়।

তনয়া ক্রুদ্ধ গলায় বিড়বিড় করলো খানিকক্ষণ। তোফায়েল সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।এতোটা অসহ্য লাগছে তার, যেটা প্রকাশ করলেও কম হবে।ছোট বেলা থেকে ছেলে মেয়ের সব জেদ পূরন করলে যা হয় আর কি!
তার ওপরে এক মাত্র মেয়ে,কঠোর কিছু বলতে চাইলেও মুখের দিকে তাকালে আর বলা হয়ে ওঠেনা। সব বাবাদের এই একটাই জ্বালা হয়তো!

কথাটা ভেবে টেবিলের ওপর থেকে সংবাদপত্রের কাগজ টা হাতে তুলে নিলো তোফায়েল। তনয়াকে বোঝানোর থেকে কিছুক্ষন পেপার পড়াও ভালো!

তবে পেপার টা পুরোপুরি চোখের সামনে মেলে ধরার আগেই ডোরবেলের উৎকট শব্দ টা বেজে উঠলো।

তনয়া বাবার দিকে তাকালো। তোফায়েল হাত থেকে নিউজপেপার রেখে দিয়ে উঠে দাড়ালো। তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

— মনে হয় আমিনুল এসছে….

দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো তোফায়েল।তনয়া চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে রইলো চুপচাপ। আপাতত আবরারের ব্যাপারে অনেক কিছু ভাবার আছে তার।
তোফায়েল লক টেনে খুললো,ওপাশে আবরার কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো প্রথমে। তাৎক্ষণিক ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,,

— তুমি??

কৌতুহল নিয়ে দরজার দিকে তাকালো তনয়া।আবরার কে দেখতেই বিস্ময় নিয়ে উঠে দাড়ালো। পরমুহূর্তে মনে মনে ভাবলো হয়তো আবরার ফিরে এসছে তার টানে,,ভাবতেই আপনা আপনি ঠোঁট দুটো বিস্তৃত হয়ে এলো তার।

তোফায়েলের কথায় আবরার কোনও উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ভেতরে এলো। তোফায়েলের ভ্রু কুঞ্চন গাঢ় হয়ে এলো আরো।
আবরার কয়েক কদম এগিয়ে এসে তনয়ার সামনে দাড়ালো। তনয়ার মুখে স্ফীত খুশি লুটোপুটি খাচ্ছে।আবরার নিষ্প্রান চোখে তাকিয়ে রইলো তনয়ার দিকে,,তনয়া আলোড়িত ধ্বনি নিয়ে বলে ওঠে,

— আমি ঠিক জানতাম আবরার,আপনি….

পুরো কথা শেষ করতে দিলোনা আবরার,,গায়ের সব টুকু শক্তি দিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসালো তনয়ার গালে। মুহুর্তেই সোফার হাতলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পরলো তনয়া।

ঘটনাক্রমে ভড়কে গেলো তোফায়েল।চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো তার। কোনও কিছু ভালো ভাবে বুঝে ওঠার আগেই আবরার পুনরায় এগিয়ে গেলো তনয়ার দিকে।

তনয়া ঠোঁটের এক পাশ কেটে রক্ত বেরিয়েছে। আবরারের এমন আচরনের মানে বুঝে উঠতে পারলো না সেও। ততক্ষনে আবরার এগিয়ে এসেই তনয়ার এক বাহু শক্ত হাতে চেপে ধরে দাড় করালো ওকে।তনয়ার হাত পা কাপছে।কাপা গলায় হা করে কিছু বলতে ধরলে আবারো ঠাটিয়ে এক চড় মারলো আবরার।

তনয়া ছিটকে পরলো মেঝেতে। তোফায়েল
ধড়ফড় করে এসে মেয়েকে ধরলো। আবরারের দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,

— তোমার এত বড় সাহস? তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছো?

তনয়া বাবার সাথে ভয়ে গুটিয়ে গেলো একেবারে।হকচকিয়ে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আবরার দাঁতে দাঁত চেপে তোফায়েল কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

— আপনি আজ আমাদের মাঝে আসবেন না।নাহলে আমি ভুলে যাবো কখনও আপনি আমার বাবার বন্ধু ছিলেন।

তোফায়েল বিস্মিত হয়ে বলল,
— মানে কি? এখন তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? আমার গায়ে হাত তুলবে তুমি? বেয়াদব ছেলে… বাবার এই শিক্ষা পেয়েছো?

তোফায়েলের কথায় আবরার এবারো ভ্রুক্ষেপ করেনি। এগিয়ে এসে তনয়াকে টেনে ওঠালো মেঝে থেকে।
ভড়কে গেলো তোফায়েল। মুখে এত কথা বললেও আবরারের লাল চোখ দেখে এগোনোর আর সাহস পেলোনা।তবে মেয়ের অবস্থায় মনে মনে কিছু একটা পদক্ষেপ নেয়ার কথা আওড়াতে থাকে তোফায়েল।পরমুহূর্তে দিশেহারা গলায় বলে ওঠে,

— ওকে মেরোনা আবরার, আমার মেয়েটা অসুস্থ!

এতেও থামলোনা আবরার। পুনরায় তনয়াকে মারতে হাত ওঠালে ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো তনয়া,,কেঁদে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

—না, আ..মাকে আ..র মারবেন না,মারবেন না আমাকে..প্লিজ…

কথাটায় থমকে থেমে গেলো আবরার। হাত টা নামিয়ে নিলো। সাড়াশব্দ না পেয়ে কাপা চোখ মেললো তনয়া। গালে স্পষ্ট পাঁচ আঙুলের দাগ তো পরেছেই সাথে ঠোঁট কেটে বের হওয়া রক্ত টা এখনও গড়াচ্ছে লাইন দিয়ে।

আবরার দু চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস নিলো।ক্রোধ প্রশমনের আপ্রান চেষ্টা চালালো কয়েক মুহুর্ত। তনয়ার হেচকি উঠে গিয়েছে। তোফায়েল সুযোগ বুঝে পকেট থেকে ফোন বার করে ডায়াল করলো আমিনুলের নম্বরে।

আবরার তনয়ার এক বাহু এখনও চেপে ধরে রেখেছে শক্ত করে। তনয়া ঈষৎ কাঁপছে। আবরার শক্ত গলায় বলে উঠলো,

— কেন করলেন?

তনয়া হেচকি তুলে ভাঙা গলা নিয়ে বলল,

— ককি..ক..রে..ছি আ..মি..??

আবরার আরো শক্ত করে চেপে ধরলো তনয়ার হাতটা।ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো তনয়া। আবরার দাঁত চেপে বলে ওঠে,

— আপনার যা রাগ আমার প্রতি।যা লড়াই আমার সাথে! তবে মাঝখানে কেন স্নিগ্ধাকে মারতে চাইলেন?কেন? বলুন?

শেষের কথাটা উত্তেজিত ভাবে চিল্লিয়ে বলল আবরার। রীতিমতো কেপে ওঠে তনয়া।আবরার সব জানতে পেরে গিয়েছে বুঝতে পেরে শুকনো ঢোক গিলে তোফায়েলের দিকে তাকায়।

তোফায়েলের মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ দেখে চোখ সরিয়ে এনে আবারো আবরারের দিকে ফেরে তনয়া। ভীত গলায় বলে ওঠে,

— আমি..আমিতো কিছু করিনি..আমিতো…

এটুকু বলতেই আবরার আগুন চোখে তাকায়। আবরারের চোখ দেখে বাকি কথা আর বলে উঠতে পারলোনা তনয়া।চুপ করে মাথা নিচে করে নেয়,,,

আবরার ঝাড়া মেরে হাতটা ছেড়ে দেয় তনয়ার। এক কদম পিছিয়ে যায় তনয়া। ভয়ে এখনও হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে তার।

পরমুহূর্তে আবরার বিদ্রুপাত্মক হেসে উঠলো। তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ভাবতেও অবাক লাগছে! স্নিগ্ধাও একটা মেয়ে আর আপনিও একটা মেয়ে…. মেয়েদের মন তো অনেক নরম মমতাময়ী হয় শুনেছি,তাহলে আপনি এরকম কেন? বেহায়াপনার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেও ক্ষান্ত হলেন না? শেষ মেষ স্নিগ্ধাকে মারার প্ল্যান করলেন? কি ভেবেছিলেন ওকে মারলেই আমি আপনার কাছে চলে আসতাম? হাহ!( হেসে)

(একটু থেমে)
আপনার মত মেয়েকে দয়া করা যায়, ভালোবাসা যায়না। আপনি বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করতেন না? কেন আমি আপনাকে ভালোবাসিনি?
এটাই তার কারন! কারন আপনার অবস মস্তিষ্ক। যেখানে কোনও ভালো নেই,আছে শুধু হিংসে,জেদ,,,অহংবোধ।
আমি কেন? আপনার মত একটা নির্লজ্জ মেয়েকে কোনও ছেলেই তার লাইফে অন্তত ভালোবেসে চাইবেনা। আপনার মত কুচক্রি মেয়েকে ভালোবাসার থেকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করাও টু মাচ বেটার।

তবে কি জানেন? আমি একটু বেশিই বোকামি করে ফেললাম। আপনার মিথ্যে পাগলামি গুলোকে সত্যি ভেবে আমি সেগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে গেলাম। মাঝরাতে আপনার হুমকিতে ভয় পেয়ে নিজের স্ত্রীকে একা ফেলে রেখে হাসপাতালে চলে এলাম! অথচ সেই মেয়েটা কিন্তু একটা বারও আমায় আটকায়নি। ধরে রাখেনি স্ত্রীর অধিকার বোধ দেখিয়ে,কারন ওর মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ আছে,ও আপনার মত নয়।
ভেবেছিলাম আপনি একদিন শুধরে যাবেন।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আপনি তো তোফায়েল পাঠানেরই সুযোগ্য কন্যা।ওনার মত লোক ঠকানোই আশা করা যায় আপনার থেকে।
আমিই বোকা যে কিনা বারবার এত কিছুর পরেও আপনাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন না নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে ছিলাম।

তোফায়েল বারবার মুঠোফোনের দিকে চোখ বোলাচ্ছে। আমিনুলের কোনও রেস্পন্স নেই দেখে প্রতিবারের মত এবারো হতাশ হয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। তনয়া নিশ্চুপ চোখে নীচের দিকে তাকানো। চোখ গুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েছে এতক্ষনে।

” ইশ! মেয়েটাকে কি মারটাই না মারলো। আর আমি বাবা হয়েও কিছু করতে পারলাম নাহ?
কথাটা ভেবে মুখটা কালো করে নিলো তোফায়েল,

আচমকা তোফায়েলের মাথায় এলো – – –
আবরার সবটা জানলো কি করে? আমি ওকে মারতে চেয়েছি সেটা না হয় আমি নিজেই ওকে বলেছি,কিন্তু তনয়া যে ওর বউকে মারতে চেয়েছিলো সেটাতো ওর জানার কথা নয়। তবে কি ভাবে জেনেছে ও? যাইহোক!
আবরার যা জেনেছে জেনেছে। এভাবে সবটা স্বীকার করে নিলে আমাদেরই বিপদ।যে কোনও একভাবে কথাগুলো ঘোরাতে হবে।কিংবা আবরারের কাছে কোনও প্রমান আছে কিনা পরোখ করতে হবে।

তোফায়েল এবার আবরার কে উদ্দেশ্য করে গলা বাড়িয়ে বলে উঠলো,

— এই, তখন থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছো।সব শুনেছি,,তাই বলে ভেবোনা আমরা ভয় পেয়ে গেছি।আমার মেয়ে তোমার বউকে মারতে চাইবে কেন হ্যা? ওতো নিজেই তোমায় বাঁচাতে ছুটলো।সব জেনেও তুমি আমার মেয়ের গায়ে মিথ্যে দ্বায় দিতে চাইছো?

জবাবে আবরার চোখ গুলো সরু করে নিয়ে বলল,

— আপনি ঠিক কি জানতে চান? আমি সত্যি বলছি কিনা এটাই? নাকি আমার কাছে আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমান আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছেন?

তোফায়েল হতবাক হয়ে ফাকা ঢোক গিলে ভাবলো, — এই ছেলের মাথায় কি বুদ্ধিরে!

আবরার তনয়ার সামনে থেকে এগিয়ে এসে মুখোমুখি দাড়ালো তোফায়েলের। ডান ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

— তা আপনাদের গৃহপালিত পুলিশ অফিসারকে তো দেখছিনা। ফোন করে ডাকুন ওনাকে।

তোফায়েল গম্ভীরমুখে জবাব দিলো,

— ও ফোন ধরছেনা।

কথাটায় বাকা হাসলো আবরার।বলল,
— ধরবে কি করে? বেচারা তো নিজেকে বাঁচাতে ব্যাস্ত।

তোফায়েল ভ্রু কুঁচকে বলল,
— মানে?

আবরার চোখ ছোট করে বলল,
— আচ্ছা আপনার কি মনে হয়? প্রত্যেকবার আবরার ফাহাদ চৌধুরীর পেছনে লাগবেন আপনারা আর আমি আপনাদের ছেড়ে দেবো? উহু। না! এবার সেটা হচ্ছেনা।

তোফায়েল বুঝতে না পেরে বলল,

— কি বলতে চাও তুমি?ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে ঝেড়ে কাশো!

— মার্ডার করতে চাইলেন আর জেলের ঘানি টানবেন না?

আবরারের উদ্বেগ হীন জবাবে তোফায়েল তনয়া বিস্ময় নিয়ে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।পরমুহূর্তে তোফায়েল বিদ্রুপ করে হেসে বলল,
— তোফায়েল পাঠান কে জেলের ঘানি টানাবে কার বাপের সাধ্যি?

আবরার দৃঢ়তা নিয়ে বলল,
— প্রমান পেলে একটা মামুলি আসামি ঠিক যেরকম? তোফায়েল পাঠানও ঠিক সেরকম।

তোফায়েল গা দুলিয়ে বলল, — তা তুমি কি প্রমান দেবে শুনি? এই রকম ফ্যাচ ফ্যাচ করলেই তো কেউ আর বিশ্বাস করবেনা তোমার কথা। উপযুক্ত প্রমান দেখাতে হবে। বুঝলে!

আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— আচ্ছা এটার থেকে বড় প্রুফ আর কি হতে পারে?

কথাটা বলে হাতের ফোনের স্ক্রিনে কিছু একটা প্লে করে তোফায়েলের সামনে ঘুরিয়ে ধরলো আবরার
।সেখানে মকবুল কে দেখতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে এলো তোফায়েলের। মকবুল সব কিছু স্বীকার করে নিয়েছে তার একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ। যেখানে মকবুল স্পষ্ট নাম উল্লেখ করেছে তার আর তনয়ার।

চিন্তিত ভাবে জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়েই হাত বাড়িয়ে ফোন টা কেড়ে নিতে উদ্যত হলো তোফায়েল। ওমনি ফোন টা শূন্যে ছুড়ে অন্যহাত দিয়ে খপ করে ধরে নিলো আবরার।
বাকা হেসে বলল,

— এসব চালাকি আমার সাথে নয় মিস্টার তোফায়েল।

চিন্তায় তনয়ার ঠোঁট গুলো শুকিয়ে এলো,,অধৈর্য হয়ে এগিয়ে এসে বলে উঠলো,
— আবরার প্লিজ আমার ভুল হয়ে…

মাঝপথে কথা কেড়ে নিলো আবরার। আঙুল উঁচিয়ে বলল,
— আপনার থেকে আমি কোনও কিছু শুনতে চাইনা তনয়া।নো মোর ওয়ার্ডস!

তনয়া হতাশ হয়ে দমে গেলো।আবরার পুনরায় তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে হেসে বলে উঠলো,

— তাহলে নিস্টার তোফায়েল? রেডি তো? মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্যে?
এবার কে বাঁচাবে আপনাদের? আমিনুল? সেতো নিজ হাতে আপনাদের নামে কেস লিখলো।মার্ডার কেস! ভাগ্যিস বেচারার নামটা বলেনি মকবুল।নাহলে চাকরিতো গোল্লায় যেতো!

এনি ওয়ে! আমি কি করেছি বলুন তো? আসার আগে পুলিশের হাতে মকবুল কে তুলে দিয়ে এসছি।এবার পালা আপনার আর আপনার মেয়ের। কারণ আপনাদের মত কীট দের তো আর বাইরে রাখা যায়না।দেখা গেলো কাউকে আবার হুল ফুটিয়ে দিলেন।
এখন আপনাদের পালানোরও তো কোনও উপায় নেই আর।কারন মিনিট পাঁচকের মধ্যেই পুলিশ আসছে আপনার বাসায়।
আমি বরং ততক্ষণ এখানে বসে রেস্ট নেই।
আপনাদের সার্ভেন্ট কে বলুন তো আমায় এক কাপ কফি দিতে! আর হ্যা ব্ল্যাক কফি ওকে?

কথাটা বলে সোফার ওপর আয়েশি ভঙ্গিতে বসে পরলো আবরার। তোফায়েল মেয়ের মুখের দিকে আহত চোখে তাকিয়ে চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো আবরারের সামনের সোফায়। তনয়াও কপালের ঘাম মুছে বাঁচার উপায় ভাবতে লাগলো। সেদিকে একবার চোখ বুলিয়ে আবরার মুচকি হেসে ফোন স্ক্রলিংয়ে মনোযোগ দিলো।

আচমকা কোনও একটা ছবি স্কিপ করতে গিয়েও থেমে গেলো আবরার।
People You May Know – এর প্রথম সারির একটি ছবিতে চোখজোড়া আঠার মত আটকে এলো তার।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here