#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৮
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
দরজা বন্ধ দেখে চিন্তিত হলেন সাজিয়া বেগম। সায়েম আর রোজাকে সবটা বলতেই ওরা দুজনেই দরজা ধাক্কালো। সায়েম বলল
আপা দরজা খোল। এই আপা! আম্মা ডাকছে তো।
আমি ঘুমাচ্ছি। ডাকিস না।
খাবি না?
নাহ।
সায়েমকে দরজার কাছ থেকে সরতে বললেন সাজিয়া বেগম। সায়েম সরে গেল। উনি দরজায় টোকা দিয়ে বললেন
আমি বলে দিয়েছি উনাদের এখন কোনো বিয়েশাদি হবে না। মেয়েদের অনেক ধৈর্যশালী হতে হয়। এত অধৈর্য্য হলে তাদের কপালে দুঃখ থাকে সুজানা।
ভেতর থেকে কান্নামিশ্রিত গলার আওয়াজ ভেসে এল।
তুমি তো অনেক ধৈর্যশালী আম্মা। তাহলে তোমার কপালে কেন এত দুঃখ?
সুজানা আমি মা হই। মায়ের সাথে এভাবে কথা বলেনা কেউ।
তুমি আমার সাথে সব কথা শেয়ার করো এটা করলেনা কেন?
আমি তোকে না জানিয়ে কি এমন করেছি?
কথা বলেছ এটাও পাপ করেছ। আমি তোমার অবাধ্য কখনো হয়নি আম্মা। আমাকে আমার মতো করে থাকতে দাও। আব্বা থাকলে আমার সব অনুরোধ শুনতো।
তোর আব্বা নেই তাই তোকে আমার কথা অনুযায়ী চলতে হবে। তুই কি জানিস ওদের সম্পর্কে? না জেনে এতটা অস্থির হওয়া ঠিক নয়। তোর সবসময় খেয়াল রাখা উচিত আমি ছাড়া আর কেউ তোর অভিভাবক নয়। না তোর বাবা আছে না একজন বড় ভাই আছে। মাথার উপর ছাদ বলতে আমি আছি সুজানা। আমি বেঁচে থাকতে একটা ভালো ছেলের হাতে তোকে তুলে দিতে চাই। এটা আমার দোষ?
আমি কি বিয়ে করব না বলেছি আম্মা?
করবি সেটা কখন বলেছিস শুনি?
বলেছি তো আমাকে পড়াশোনা শেষ করতে দাও।
পড়াশোনা শেষ হলেই বিয়ে নামবে।
আমি চাইনা তারা অপেক্ষায় থাকুক।
সেটা তাদের ইচ্ছা। আমি শুধু আমার মতামত জানাবো।
তুমি এখনো আমার সাথে আপোস করছ না আম্মা।
আপোস আমি করবও না। কোনো মা মেয়ের জন্য এমন ভালো সম্বন্ধ পেলে কখনোই উপেক্ষা করবে না। আমিও পারব না। আমার মেয়ে বিশ্বসুন্দরীও না, বাবার আদরের রাজকন্যাও না। আমার তাকে নিয়ে অত ভাব নেয়ার দরকারও নেই।
ঠিক আছে। হ্যা বলে দাও। কসম পড়াশোনা করতে আমাকে বলবেনা।
সাজিয়া বেগম এবার বেশ রেগে গিয়ে বললেন,,
সুজানা এক চড়ে দাঁত ফেলে দেব। অনেক্ক্ষণ ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়েছি। দরজা খোল। প্রশয় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছি তোকে। আমার কথার কোনো দাম নেই না? বাপ মরার পর দুটোকে ফেলে অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত ছিল।
সুজানা বালিশ থেকে মুখ তুললো। নাক টেনে বলল
আমাকে আর কথা শুনিওনা আম্মা। তুমি যা বলবে তাই করব। এখন অন্তত আমার মতো করে থাকতে দাও।
আমার কথা বুঝার চেষ্টা করেছিস এখন পর্যন্ত তুই? আমি বলেছি তোকে এখনি বিয়ে দেব?
তাহলে যখন দেবে তখন কথা বলবে। এখন সব যোগাযোগ বন্ধ করো।
মেয়ের এমন কথায় ধাতে লাগলো উনার। চেঁচিয়ে বললেন
নিমক*হারাম। বাপের গুষ্ঠির মতো হয়েছিস না? ওই মানুষগুলো যেচেপড়ে সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে সেটা উনাদের ভুল হয়েছে? এজন্যই বলে কুকুরের পেটে ঘি সহ্য হয়না। তোরও সেই দশা হয়েছে।
তোর জন্য মদ-গাজাখোরের সম্বন্ধ আসার দরকার ছিল। তুই কি একবারও ছেলেটার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিস?
যখন বিয়ে করব তখন জেনে নেব। কারো সাথে কেন আমাকে চুক্তিতে জড়াতে হবে যে ফাইনালের পরেই বিয়েতে বসবো? আমার অনেক স্বপ্ন। তুমি এভাবে বিয়ে বিয়ে করে সব নষ্ট করে দিওনা। নিজের মতো করে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার থাকতে পারেনা?
দরজা খোল। আমার কথা আছে তোর সাথে। রোজা তোকে আপা ডাকছে বোধহয়।
রোজা মাথা দুলালো।
হ্যা আন্টি যাচ্ছি। আপাকে বকোনা। আপা রাগ করোনা। ভাত খেয়ে নাও।
রোজা চলে যেতেই সায়েমও চলে গেল মায়ের ইশারায়। ওরা যেতেই সাজিয়া বেগম প্রশ্ন করলেন
নাকি কোথাও কারো সাথে কিছু আছে কিন্তু আমি জানিনা।
সুজানা এবার চাদর আঁকড়ে ধরলো। বিছানা থেকে উঠে বসলো। চোখ মুছে বলল
আমার উপর তোমার এই বিশ্বাস? তুমি আমাকে এইটুকু চিনলে আম্মা?
আমাকে বলতে বাধ্য করছিস। আমি কখনো এসব প্রশ্ন তোকে করতাম না। কেন অবাধ্য হচ্ছিস বলতো? আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর মা আমার।
আমাকে পর করে দেয়ার এত তাড়া কেন তোমার আম্মা? তুমি আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা না করলে আমি দরজা খুলব না।
কতক্ষণ? কতক্ষণ দরজা না খুলে থাকবি? পাঁচঘন্টা, দশঘন্টা, বিশঘন্টা, একদিন, দুদিন। কতদিন থাকবি? আমাকে এখনো চিনিসনি। কোনো আগপাশতলা না ভেবে দু বাচ্চাকে নিয়ে এই শহরে উঠেছি আমি। তোদের দুবেলা আহার জুটিয়েছি। ভালো স্কুল কলেজে পড়াশোনা করিয়েছি। কারো কোনো সাহায্য নিইনি আমি। নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে গেছি, করছি। আমিও তোকে দরজা খুলতে বলব না। তুই ত্যাড়া হলে আমি তোর চাইতেও বেশি ত্যাড়া।
সুজানা মাকে বুঝাতে না পেরে হতাশ হয়ে আবারও ঢলে পড়লো বিছানায়। সাজিয়া বেগম চলে গেলেন। বহুদিন পর নিজেকে একটু হতাশ দেখালো। মেয়েটা কেন যে নিজের ভালোটা বুঝেনা।
ফোনে মেসেজের অসংখ্য রিংটোনের আওয়াজে যখন ধ্যান ভাঙলো তখন ফোন হাতে নিল সে।
বন্ধুমহলের আড্ডাগ্রুপে অসংখ্য মেসেজ আসছে আর যাচ্ছে। দুর্দান্ত চ্যাটিং চলছে। মাত্রই গ্রুপের নাম পাল্টেছে আহির।
ফানি এক্সপ্রেস থেকে টেলেন্টেড বেয়াদবের মজলিশ।
এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। আর না পেরে নিখিল চেঞ্জ করে লিখলো
পিংপাংপুং চিংচাংচুং
সুজানার হাসি পেল। তাকে মেসেজ সিন করতে দেখে মেহুল বলল
সুজু আজ চুপচাপ কেন?
আহির বলল
পড়তাছে মনোযোগ দিয়া।
জায়িন বলল
গাইস আমি কিছু বলি?
আহির বলল
আগে মুতে আয়। তারপর বল।
লজ্জা পাওয়া ইমুজি দিল জায়িন। বাকিসবাই হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বসলো। শান্তা বলল
টেলেন্টেড বেয়াদবদের জায়গা পিংপাংপুং চিংচাংচুংয়ে হবেনা। সুজানা কিছু বল বইন।
আহির বলল
তোর মতো আদব এই গ্রুপে কি করে? যাহ জামাই লইয়্যা ভাগ।
তুই বউ লইয়্যা ভাগ। ও তোর বউ তো পোয়াতি।
আহির নাক সিটকানো ইমুজি দিয়ে বলল
ষিঃ
শান্তা লিখলো
ষুহহহঃ
সুজানা লিখলো
ঝগড়া থামা। কলে আসবি তোরা?
সবাই ইয়েস লিখলো। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই সবাই ভিডিও কলে যোগ দিল। সুজানা চোখমুখ স্বাভাবিক করে বলল
আজ একটা ঘটনা ঘটেছে। আজ শান্ত কি করলো জানিস? অভিক স্যারের পেজে আমার আইডি দিয়ে কমেন্ট করে দিল। আমি কি লজ্জাটাই না পড়লাম। মানে এরকম কেউ করে? আমি তো প্রচুর বকেছি তোকে শান্ত।
মেহুল প্রশ্ন করলো।
কি বলিস? কিভাবে পড়লি?
বাকিরা সমস্বরে বলল
হ্যা হ্যা বল বল।
শান্তা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে রইলো।
সুজানা ধীরেসুস্থে বলল
ওদের পড়াচ্ছিলাম হঠাৎ করে দেখি কমেন্টের উত্তর এল। স্যারও তখনি এল। মানে ইজ্জতসম্মান সব শেষ।
সবাই এবার ভুরু কুঁচকে তাকালো।
কি বলিস এসব? স্যার ওখানে কি করে?
নিখিল নড়েচড়ে বসে বলল
আচ্ছা। তুই স্যারের বাড়িতে পড়াতে যাস। ও মাই আল্লাহ!
সবাই হৈচৈ বাঁধিয়ে ফেলল। সুজানা মাথায় হাত দিল। কি বলে ফেলল সে। থাক গে আজ বলে দেবে।
তুই আমাদের কাছ থেকে এতদিন লুকোলি? ২ নম্বর গেইটে নাকি স্যারের বাড়ি। ওরে বাবারে সুজানা তুই এতদিন বলবি না?
জায়িন বলল
নো নো সুজানা এটা ঠিক হয়নি।
সুজানা মুখ ঢেকে নিল। তারপর হাত সরিয়ে বলল সরি দোস্ত।
তারা খেয়াল করলো বোধহয়। সবাই সমস্বরে বলে উঠলো
কিরে তুই কেঁদেছিলি নাকি?
সবার প্রশ্ন শুনে নিজেই চুপ মেরে গেল সুজানা। বলল
আরেহ না না। শুয়ে ছিলাম তাই চোখ ফুলেছে। যেটা বলছিলাম আসলে আমি..
নিশ্চয়ই কেঁদেছিলি তুই।
আহির হেসে বলল
জামাইর লগে কাঁদতাছোস? একদম চাপলেস থাক বইন । তোর জামাই ধইরা আনার দায়িত্ব আমার। হালারে একসেকেন্ড সময়ও দিতাম না। ধইরা লইয়্যা আসুম।
সুজানা হেসে ফেলল। বলল
ধুরর।
মেহুল বলল
স্যারের বাড়িতে যাস আর লুকোলি?
আরেহ তোদের বলব বলব করে বলা হয়নি। ওসব ক্লাসে বলাবলি করিস না দোস্ত। স্যারের ভাইপো ভাইঝি দুটোকে পড়াই বুঝলি। আগামী মাস থেকে আর পড়াবো না।
কেন পড়াবি না কেন?
বললাম না একটা চাকরি পাইছি।
সবার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো এবার। জায়িন বলল
চাকরি করবি? আর পড়াবি কখন? আমাদের তো প্রাইভেটও নিতে হবে। কখন হবে এসব?
তোরা হেল্প করবি। তোরাই তো আমার ভরসা।
শান্তা বলল
হ্যা সে তো করবই কিন্তু চাকরি কোন টাইমে।
দিনের পাঁচঘন্টা। অনেকগুলো ডিজাইন করতে হবে। সাথে নাকি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে। টিউশনি থেকে ভালো হবে না?
হুমমম।
আহির বলল
দিনে তো পারবি না। তারমানে রাতে? আন্টির আপত্তি নেই?
আপত্তি করে কি হবে? আমার চাকরিটা লাগবেই।
নিখিল বলল
ওকে অল দ্য বেস্ট। আর কোনো সমস্যা হলে আমরা তো আছি। সব নোট আমাদের কাছ থেকে পাবি। এখন বল কেঁদেছিস কেন? কোনো সমস্যা? কাল বিয়েতে আসবি না? আন্টিকে রাজী করিয়েছিস?
বলা হয়নি। বলব।
মেহু আর শান্ত?
মেহুল বলল
হুমম বাবা যেতে দেবে সুজু আর শান্ত গেলে।
শান্তা বলল
আমারও। দাদীর জন্য সমস্যা নেই। বাবাকে রাজী করাতে পারলে হয়ে যাবে।
জায়িনের ফোনের সামনে হঠাৎ নিহাতকে দেখা গেল তারপরেই ঠুস করে কেটে গেল। সবাই বোকা চোখে একে অপরের দিকে চাইলো । মেহুল বলল
নিহাত ফোনটা কেটে দিল নাকি?
নিখিল বলল
হিংসুটে মহিলা। আমাদের গ্রুপে উনি নেই তাই হিংসে হয়।
জায়িন কিছুপর আবারও জয়ন করলো। বলল
ভাই নিহার জন্য একটা ছেলের খোঁজ লাগা। শ্বশুরবাড়ি পাঠাই দেই। ওর জ্বালায় আমি অতিষ্ঠ। পড়া আর পড়া। ফোনটা কেটে দিল এক্ষুণি দেখলি।
নিখিল বলল
বনবাসে পাঠিয়ে দে। সন্ন্যাসীর বউ হয়ে ফিরে আসুক।
সবাই হেসে উঠলো একসাথে। সুজানার মন খারাপটা কমে এল। মন খারাপের সময় বন্ধুগুলো ভালো উপশম। এখন মায়ের মান ভাঙাবে কি করে? মা টা তার বড্ড জেদী।
________________________
সেই রাতে মা মেয়ের ভাত খাওয়া হলো না। মান অভিমানের পাল্লায় পড়ে দুজনেই কেউ কারো সাথে যেচে কথা বললো না। মায়ের মন পুড়লো মেয়ের জন্য মেয়ের মায়ের জন্য। তাদের লড়াই তো একে অপরকে ভালো রাখার। সকাল সকাল নামাজ কালাম পড়ে চা বসিয়ে দিয়েছে সুজানা। মায়ের মুড ভালো দেখলে নিখিলের ভাইয়ের বিয়ের কথারা পেড়ে দেখবে। গিফটের টাকার চিন্তা নেই। সব বন্ধুরা মিলে ডিনার সেট দেবে ভেবে নিয়েছে। মেহুল, জায়িন আর আহির দিয়ে দিয়েছে সব টাকা। শান্তা আর সে পরে দিলেই চলবে। আপাতত মাকে রাজী করানোটা বড় বিষয়। মেয়েকে চা বসাতে দেখে সাজিয়া বেগম কোরআনে তেলওয়াতে বসেছে। সায়েমের রোজ ঘুম ভাঙে মা বোনের তেলওয়াতের মধুর সুরে। আজ মায়ের তেলওয়াত শুনে উঠে পড়লো সে। মা কতবার করে বলেছে নামাজটা কন্টিনিউ করতে সে সকালের নামাজটা কভু পড়তে পারেনা।
ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল সে। মা মেয়ে তো কাল রাতে মান অভিমান করে না খেয়ে ঘুমালো। আজ কি খবর?
সুজানাকে চা বানাতে দেখে বলল
আম্মার সাথে কথা বলেছিস?
সুজানা ছোট্ট করে আওয়াজ করলো।
না।
আম্মা কাল রাতে খুব কেঁদেছে।
কি বলিস? খুব কেঁদেছে?
সায়েম মাথা দুলালো।
খুবববব।
আমি বিয়ে করে চলে গেলে তুইও খুশি হবি?
ওরা অনেক বড়লোক । তুই ওখানে থাকলে আম্মা নিশ্চিত হবে আর এটাই আমার খুশি।
বড়লোকদের খুব সুখ?
আমি অতশত বুঝিনা। আম্মা তোকে বলছে জাস্ট মত দিতে।
আচ্ছা? ওরা আমার মত মানবে? মানলে সমস্যা নেই।
সত্যি? আম্মাকে বলব?
কোনো লাভ নেই। কেউ এসব উদ্ভট শর্ত মানবে না। আমি এমন কে যার কথায় তারা উঠবস করবে। উনাদের মেয়ের অভাব হবেনা।
অতকিছু জানিনা। আমি আম্মাকে বলে আসি।
সায়েম চলে গেল। সুজানা চা বানানো শেষ করতেই মা এল রান্নাঘরে। গম্ভীরভাবটা কেটে গেছে। স্বাভাবিক ভাবে চায়ের কাপে চা ঢেলে নিতে নিতে বললেন
তাহলে সায়েম যেটা বললো সেটাই হবে।
সুজানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিয়া বেগম বললেন
কথার নড়চড় পছন্দ করিনা আমি।
সুজানা চুপ করে রইলো। মায়ের সাথে এ কেমন দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে তার।
আমি কি নিখিলের ভাইয়ের বিয়েতে যেতে পারব? আজ মেহেদী সন্ধ্যা। ওরা বোধহয় আসবে সন্ধ্যায়। একসাথে যাচ্ছি।
কে কে যাচ্ছে?
মেহুল আর শান্তাও যাচ্ছে।
যাওয়া যায় তবে সাবধান। আর কোনো সম্বন্ধ আসলে তখন দোষ না জানি আমার হয়।
আম্মা তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো?
উনি কথাটা শোনার আগেই বেরিয়ে গেলেন।
________________
বিয়ের এইসেই প্ল্যানের জন্য কেউ ক্যাম্পাসে গেল না। বৃহস্পতিবার দিনটা। বেশ সুন্দর ভাবে কেটে গেল। সুজানা টিউশনির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। তাড়াতাড়ি ফিরবে সে আজ। তারপর বন্ধুরা আসলে রেডি হয়ে বিয়ে বাড়িতে চলে যাবে। যদিও আজ টিউশনিতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। ওই বাড়ির মানুষগুলোকে সে আপন করে নিয়েছিল অল্পদিনে তাই বলে সম্বন্ধ নিয়ে যেতে হবে?
ভেতরে ভেতরে একটা ক্ষোভ ফুঁসে ফুঁসে উঠছে। না সে উগ্র নয় কভু। একদম চুপচাপ থাকবে।
বাড়িটার গেইটের সাথে লাগোয়া ফুল গাছটার প্রাচীর টপকে বেরিয়ে গেছে। এপাশ ওপাশ দুপাশে গোলাপি রঙা ফুলগুলো বিছিয়ে থাকে। দূর থেকে দেখতেও সুন্দর লাগে। অবশ্য লাগবেনা কেন তাদের প্রতি যা যত্নশীল বাড়িটির ছোটকর্তা।
সুজানা যখনি বাড়িটার আশপাশে থাকে মনে হয় কোনো স্বর্গ। কেমন এক অদ্ভুত সুখানুভব হয় বুকের ভেতর। ঢিপঢিপ করতে থাকে অনবরত। দূরদর্শী মন কতকিছু ইঙ্গিত ইশারা করে। লজ্জায় আড়ষ্টতায় ভেতরে ভেতরে ঘৃণা হয় নিজের উপর। লোভী মনে হয় নিজেকে। মনে মনে প্রার্থনা করে যা তার হওয়ার নয় সেসবের প্রতি তার যেন লোভ না জন্মে।
পা টিপে টিপে যেতে যেতে সে থমকালো তাকে দেখে যার কথা ভাবতে গেলেও দ্বিধায় পড়ে যায়। অবশ্য এই বাড়িতে আসা বন্ধ হলে সব দ্বিধা কেটে যাবে। আর মাত্র একটা দিন। তারপর থেকে সে আসবেনা।
ঘাড় ঘুরাতেই সুজানাকে দেখে কৌতূহলী চোখে চাইলো অভিক। হাতে কাঁদা লেগে আছে। কাঁদা মিশ্রিত হাতের উল্টো পিঠে কপাল মুছে এগিয়ে এল।
জারটা সুজানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
পানি ঢেলে দিন।
সুজানা বিনা দ্বিধায় জারটা নিয়ে পানি ঢেলে দিল। অভিক হাত ধুঁতে ধুঁতে বলল
চোখের সমস্যা বাড়ছে মনে হচ্ছে।
কেন?
আপনাকে আজকাল ক্যাম্পাসে দেখছিনা।
আমি যাইনি।
যাননি কেন?
ওই এমনি।
আপনি সব এমনিই করেন। এবার কিছু অন্তত কারণ দেখানোর জন্য হলেও করুন।
আচ্ছা।
হাত ধোঁয়া শেষ হতেই হাতঝাড়া দিল অভিক। মুখে পানির ছিঁটে পড়তেই সুজানা চোখ খিঁচে বন্ধ করতেই অভিক হেসে উঠলো।
তার পুরো সাঁঝের বেলা এলোমেলো, এলেবেলে, অগোছালো করে দেয়া মেয়েটাকে জ্বালাতে তার বড্ড ভালো লাগে।
এই গোছালো, পরিপাটি, নিয়মশৃঙ্খলার শিকল ছেড়ে সময়টুকুতে একটু অগোছালো হতে ইচ্ছে করে। দোষ তার নয়। দোষ মেয়েটার। ভারী দোষ। সেই বৃষ্টি ভেঁজা দিনটার দোষ। সেগুনবাগিচার লাল দিঘীটার দোষ। নীল শাড়ি, নীল চুড়ির দোষ। চুলে গুঁজা বকুল ফুলের দোষ। ভয়, লজ্জামিশ্রিত বোকা বোকা মোটা কাজল কালো চোখদুটোর দোষ। মোটকথা সুজানা মেয়েটাই একটা দোষ।
আর দোষটা তার।
চলবে………