#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_৪৪ (বোনাস)
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রণালী সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক নতুন নাটকের সাক্ষী হয়। আর এই নতুন নাটকের নাম বৌভাত। প্রণালীর বৌভাতের জন্য বড় করে উৎসব করতে চাইছেন সজল চৌধুরী। কিন্তু সজল চৌধুরীর সাথে ক্রমান্বয়ে তর্ক করে চলেছেন পুষ্পা চৌধুরী। তিনি যেহেতু এই বিয়েটা মেনে নেন নি তাই কোন রিসেপসনও তিনি মেনে নেবেন না। এই নিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় উঠেছে। সায়মা চৌধুরী প্রণালীর কাছে এসে বলে,”দেখেছ তোমার শাশুড়ীকে? কিরকম ডাইনি মহিলা দেখেছ। এনার সামনে একদম ভেজা বিড়াল হয়ে থাকবে না। নাহলে কামড়ে শেষ করে দেবে। এনার সাথে সমানে সমানে লড়াই করতে হবে। সেইজন্য তোমায় প্রতিবাদ করতে হবে। বুঝলে?”
প্রণালী কিছু বলে না। সে এসব কিছুতে একদমই আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছে না। তার এই সময় একটু শান্তির দরকার যাতে করে নিজেকে সামলাতে পারে। বদলে ভাগ্যে জুটছে অশান্তি আর অপবাদ। যা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। প্রণালী যখন এসব ভাবছিল তখনই সমুদ্র পুষ্পা চৌধুরীকে পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলে। যা শুনে আগ্নেয়গিরির মতো লাফানো পুষ্পা চৌধুরী একেবারে শীতল হয়ে যান। ঝগড়া বিবাদ থামিয়ে তিনি আসেন নিজের স্বামীর সামনে। অতঃপর বলেন,”তুমি যদি বৌভাত-টৌভাত করতে চাও, তো করতে পারো। এতে আমার কোন আপত্তি আর নেই।”
এই বলেই তিনি চলে যান। সজল চৌধুরী হঠাৎ নিজের স্ত্রীর এমন ৩৬০° বদলে যাওয়া দেখে ভীষণ অবাক হন। তবে স্বস্তিও খুঁজে পান। যাক, তাহলে একবার যখন রাজি হয়েছে তখন আর ঝামেলা করবে না। এই ভেবেই তিনি সব আয়োজন শুরু করতে হাকডাক শুরু করেন। সায়মা চৌধুরীকেও বলেন,”তুই আমার হাতে-হাতে একটু সাহায্য কর। পুষ্পা রাজি হলেও ও আমায় কোন সাহায্য করবে না। তাই তুই এখন আমার একমাত্র ভরসা।”
“তুমি এক দম চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি তো আছি তোমার সাহায্য করাত জন্য। আমি হাতে হাতে তোমার সব কাজে সাহায্য করব।”
এরপর তিনি প্রণালীর কাছে গিয়ে বলেন,”তুমিও তৈরি হয়ে নাও। আমি এখন মেকআপের লোক ডেকে দেব। চৌধুরী বাড়ির বউ বলে কথা। বৌভাতে তো সেরকম ই সাজতে হবে। আর সমুদ্র তুইও তৈরি হয়ে থাকিস।”
বলেই তিনি চলে যান। সবাই চলে যাবার পর সমুদ্র চৌধুরী প্রণালীর দিকে তাকিয়ে শয়তানী হেসে বলে,”আজ আমি এমন চাল দেব যে দেখি তুমি আর কতক্ষণ এমন চুপ করে সব সহ্য করো। আজ তোমার সহ্যক্ষমতারই পরীক্ষা হবে আমার অপ্রিয় স্ত্রী।”
~~~~~~““
বৌভাতের আয়োজনে আজ অবশ্য তেমন কেউ আসে নি৷ যাদেরকে একদম না বললেই নয় তেমন কজনকেই ডেকেছেন সজল চৌধুরী। রায়ান সাহেব প্রত্যুষকে সাথে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও এসেছেন সৌভিক রায় তার পুরো পরিবারকে নিয়ে। রায়ান সাহেব এসেই নিজের মেয়ে প্রণালীর সাথে দেখা করে নেন। মেয়েকে দেখেই জড়িয়ে ধরেন অতি আদরে। মেয়েটার প্রতি ভীষণ মায়া হচ্ছে। মেয়েটার উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তারপর না জানি এখানে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তার কষ্ট হবে। তাই রায়ান সাহেব মেয়েকে প্রশ্ন করেন,”তুমি ঠিক আছো তো মা?”
প্রণালী স্বাভাবিক ভাবেই বলে,”হুম।”
আর বেশি কিছু বলে না। মেয়েটা ধীরে ধীরে কেমন যেন অনুভূতি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুতেই কোন রিয়্যাক্ট করছে না। এমন অবস্থায় মেয়েটাকে দেখে তার একদমই ভালো লাগছে না। তিনি চান মেয়েটা আবার আগের মতো হাসিখুশি আর প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠুক। তাই তিনি ঠিক করেছেন আজ সমুদ্রর সাথে কথা বলবেন। সমুদ্রকে সব ঘটনা খুলে বলবেন। কারণ তিনি মনে করেন এখন সমুদ্রই পারবে তার মেয়েকে আবার সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে। প্রণালীর সব দুঃখের স্মৃতি মুছে দিয়ে তার মনে নতুন সুখের স্মৃতি তৈরি করতে।
তার এই ভাবনার মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন সজল চৌধুরী এগিয়ে আসছেন তার দিকে। সজল চৌধুরীকে একা দেখে রায়ান সাহেব বলেন,”আপনি একা যে, বেয়ান সাহেবা কোথায়? বিয়ের অনুষ্ঠানেও ওনাকে দেখলাম না। আজও কি উনি আসবেন না?”
“এই তো আমি এসে গেছি।”
বলেই হাসি মুখে সেখানে উপস্থিত হন পুষ্পা চৌধুরী। এসে রায়ান সাহেবের সাথে বেশ ভালো ভাবেই কথা বলতে থাকেন। হাজার হোক সবার সামনে তো তাকে নিজের ভালোমানুষির অভিনয় করতেই হবে। কারণ এখানে যে তাদের বিজনেসের অনেক পার্টনারও আছে। তাদের সামনে নিজের ইমেজ খারাপ করলে চলবে না। তাতে যে লস।
প্রণালী পুষ্পা চৌধুরীর এমন নিখুঁত অভিনয় দেখে অবাক হয়। সবার সামনে কত সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। রায়ান সাহেবকে তো এমন ভাবে বলছেন যেন সব কিছু স্বাভাবিক। অথচ এই মহিলার কাল যে রূপ সে দেখেছে! কত বড় স্পর্ধা হলে কেউ নিজের স্বামীর গায়ে হাত তোলে। প্রণালী অবশ্য এসবে বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করল না। শান্তর এতদিনের আসল রূপ সে ধরতে পারে নি৷ সেখানে অন্যরাও যে মুখোশের আড়ালে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। যার যা ইচ্ছা করুক, প্রণালীর তাতে কিছু যায় আসে না। সে তো এখন পুরো মরা মানুষের মতোই আছে। যার শুধু দেহটাই জীবিত , মন একদম মরে গেছে। তাই কোন কিছুই তার উপর বিন্দুমাত্র প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
~~~~~~~
বৌভাত উপলক্ষে আজ একটা পার্টি হোস্ট করা হয়েছে। যেখানে সব কাপলরা ডান্স করছে। এরমধ্যে হঠাৎ করে পুষ্পা চৌধুরী হাতে মাইক নিয়ে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”আজ আমাদের এখানে একজন স্পেশাল গেস্ট আসবে। সে আর কেউ নয়। আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী টিনার মেয়ে টায়রা। টায়রাকে তো আপনাদের সাথে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। সে একজন বৃটিশ-বাংলাদেশী। যে বৃটিনেই বড় হয়েছে এবং সেখানকার একজন বড় ডান্সার। তো সবাই ওয়েলকাম করুন টায়রাকে।”
সবার সামনে এসে উপস্থিত হয় টায়রা৷ তাকে দেখেই সবাই করতালি দেয়। টায়রাকে দেখেই তার দিকে এগিয়ে যায় সমুদ্র। তারপর বলে,”চলো আমার সাথে ডান্স করো।”
এদিকে সজল চৌধুরী ও সায়মা চৌধুরী দুজনেই অবাক টায়রাকে দেখে। সায়মা চৌধুরী নিজের ভাইকে বলেন,”এই টায়রা পায়রা হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল ভাইয়া? এই টা সেই মেয়েটা না, যার সাথে ভাবি সমুদ্রর বিয়ে দিতে চেয়েছিল?”
“হুম, এটাই তো সেই মেয়ে। কিন্তু এ এখানে কি করছে সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।”
টায়রা সমুদ্রকে বলে,”হাই, সমুদ্র বেইব। কেমন আছ? আমাকে না বলে এভাবে বিয়ে করে নিলে। আর আমি তোমার আশায় কত সুদর্শন যুবককে রিজেক্ট করলাম। এখন আমার কি হবে?”
“চিন্তা করো না টায়রা সুইটহার্ট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তুমি অবশ্যই আমাকে পাবে। আগে আমাকে নিজের রিভেঞ্জটা পুরো করতে দাও।”
এরপর দুজনেই কাপল ডান্স করে। যা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে৷ রায়ান সাহেব, প্রত্যুষ, সৌভিক রায় সবাই হতবাক। দুজন ভীষণ ঘনিষ্ঠ ভাবে ডান্স করছিল। পুষ্পা চৌধুরী ভীষণ খুশি। এইজন্যই তো তিনি বৌভাতের জন্য রাজি হয়েছিলেন। এখন তার আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছে। সবই তো সমুদ্রের বুদ্ধি।
সমুদ্র টায়রার সাথে ডান্স করতে করতে আড়চোখে প্রণালীকে দেখে। সমুদ্র চৌধুরী ভেবেছিল সবার সামনে এভাবে অন্য রমণীর হাত ধরে ডান্স করলে মেয়েটা নিশ্চয়ই রিয়্যাক্ট করবে। কিন্তু এতো এখনো একদম চুপ। দেখে মনে হচ্ছে কোন কিছুতে ওর বিন্দুমাত্র কোন প্রভাব পড়ছে না।
আর আসলেও প্রণালী সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছে। সমুদ্রের প্রতি তার আলাদা কোন টানই নেই। তাই সে কার সাথে নাচল এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়৷ এই জিনিসটা সমুদ্রকে রাগিয়ে দিলো। এই মেয়েটাকে সে কোনভাবেই জব্দ করতে পারছে না। রেগে ডান্স থামিয়ে টায়রাকে একা রেখে নিজের রুমে চলে গেল সমুদ্র।
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)