প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-৪ #Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

0
272

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘এইযে সুন্দরী,একা নাকি ? সমস্যা নেই আমরা কিন্তু চাইলে সঙ্গ দিতে পারি। ‘কথাগুলো বলেই কুৎসিতভাবে হেসে উঠলো চায়ের টং এ থাকা কিছু বখাটে ছেলেরা। মেহরুন চশমাটা ভালোভাবে ঠিক করে নিয়ে, ভয়ে ঢুগ গিললো। বাস স্টান থেকে অটো নিয়ে যাচ্ছিলো, হঠাৎ অটো নষ্ট হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে কাওরান বাজার নেমে পরতে হয়। গ্রাম থেকে প্রথমবার শহরে একা একা এসেছে, গন্তব্য মায়ের বান্ধুবির বাড়ি। ঢাকা শহরের ইডেন কলেজে চান্স পেয়েছে সে। ঢাকা শহরে মায়ের বান্ধুবি ছাড়া তেমন কেউ পরিচিত নেই। মেহরুন ভাবতেও পারেনি, ঢাকায় এসে প্রথমদিনই এতো বাজে পরিস্হিতির স্বীকার হয়ে যাবে। সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে আশে-পাশের মানুষগুলো অসভ্য ছেলেগুলোকে কিছু বলছেও না। সত্যিই দিনের পর দিন মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহরুন।

মেহরুন অনেক্ষন ধরে একটা অটো বা রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছিলো কিন্তু সে বুঝেছে তার পক্ষে আর দাঁড়ানো সম্ভব নয়, বখাটে গুলো বেশ বাজে ভাবে তার দিকে তাকাচ্ছে। মেহরুন পা চালানো শুরু করে তড়িৎগতিতে। ছেলেগুলো আবারো গাইতে শুরু করলো,
‘ সুন্দরী চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে?’

গানগুলো শুনে মেহরুনের গাঁ ভয়ে শিউরে উঠলো। সে দ্রুত পা এগিয়ে সামনের দিকে যেতে লাগলো তখনি হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলে, কেউ তাকে আকড়ে ধরে। মেহরুন সামনে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আহরার ভাই!’

আহরার মেহরুনকে দাঁড় করিয়ে বললো, ‘ মেহরুন তুমি এখানে? তোমার তো বাস্ট স্টান থেকে সোজা আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা!’

‘ আসলে..’ কথাটি বলতে গিয়ে তোতলিয়ে যায় মেহরুন। আহরার ভ্রু কুচকে বলে, ‘ এইভাবে তোতালাচ্ছো কেন?’

‘ আসলে কয়েকটা বখাটে ছেলে আমাকে দেখে বাজে ভাবে গান ধরছিলো।’

‘ কি বলছো? টং এর দোকানে থাকা ছেলেগুলো?’

‘ জ্বী,হ্যা। ‘

‘ আচ্ছা আমি দেখে আসছি। বড্ড সাহস বেড়েছে তাদের।’

আহরার যেতে চাইলে , মেহরুন তাকে বাঁধা দিয়ে বলে,
‘ আপনি দয়া করে যাবেন না। ছেলেগুলো বখাটে, বাজে, শুধু শুধু ঝামেলা করে কি হবে?’

‘ আহ, মেহরুন! এইভাবে যদি আমরা ঝামেলার ভয়ে ছেলেগুলোকে ছেড়ে দেই, তাহলে তারা পেয়ে বসবে। আজকে তোমাকে বিরক্ত করেছে, কাল অন্য মেয়েদের করবে। ‘

আহরার টং এর দোকানের ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে যায়। মেহরুন ফ্যালফ্যালে নয়নে চেয়ে থাকে।

__________

ইরা ক্লাসে ঢুকতেই, তার দুজন ক্লাসমেট মিরা ও তুর ইরার কাছে আসে। তুর বলে, ‘ কিরে তোর সাথে ওই লিটেল হিরোটা কে রে?’

‘ আমার মামাতো ভাই। ‘

‘ কি বলিস? তোর এমন চকলেট বয় টাইপ মামাতো ভাই আছে জানতাম না তো। দে না তার নাম্বার টা। আজ ক্যাম্পাসে তাকে দেখলাম!’

‘ হ্যা, দে না। একদম মাখনের মতো দেখতে তোর মামাতো ভাই টা। ‘

কথাগুলো বলেই তুর এবং মিরা হেসে উঠে। ইরা যেনো রাগে-ক্ষোভো ফেটে পরছে। ইরা বাজখাই গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘ তোদের কি সেন্স নেই? মাহির তোদেএ থেকে কম হলেও তিন- চার বছরের ছোট। ওর দিকেও তোদের বদনজর দিতে হয়? ‘

‘ তাতে কি? আজকাল বুঝি জুনিয়র ছেলেরা, সিনিয়র মেয়েদের সাথে প্রেম করছে না? করছেই না শুধু বিয়েও করছে। সো, আমরা তোর কাজিন ভাইয়ের দিকে নজর দিলে, তোর কিসের এতো সমস্যা?’

ইরা মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ মাহির তোদের মতো শাকচুন্নিদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। আমি মাহিরের জন্যে ছোট্ট পুতুলের মতো বউ আনবো বুঝলি?’

মিরা এবং তুর একসাথে বলে উঠে, ‘, কি আমরা শাকচুন্নি?’

‘ অবশ্যই। ‘

তারা আরো কিছু বলার আগেই, ইরা তার বান্ধুবি আনিকার কাছে গিয়ে, মাথায় চাটা মেরে বললো,

‘ কিরে একা একা বসে আছিস কেন?’

আনিকা তপ্ত নি:শ্বাস ফেলে বলে, ‘ সামনে এক্সাম রে, কিন্তু কিছুই পারিনা। কি হবে, কে জানে? ফ্যামেলি যা স্ট্রিক, ভালো রেজাল্ট না করতে পারলে, নিশ্চিত বিয়ে দিয়ে দিবে। ‘

‘ আচ্ছা বিয়ে দিলে কি হবে এমন? বিয়েকে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?’

‘ ভয় পাবো না? ছেলে মানুষ মানেই বিশ্বাসঘাতক, এরা বুঝি সম্পর্কের মান রাখতে জানে? আমার পাস্ট রিলেশনশিপ থেকে আমার যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে, ভাই। আমি অন্তত আর প্রেম- ভালোবাসা, বিয়ের মতো বিষয়ে জড়াচ্ছি না। ‘

ইরা স্মিত হেসে বলে, ‘ তোর ধারণা একদমই ভুল। একজন মানুষের জন্যে তুই গোটা পুরুষজাতকে প্রতারকের তকমা দিতে পারিস না। ‘

‘ হাহ, পুরুষ জাত বড্ড বিচক্ষন জাত ইরা! তারা নারীদের মতো আবেগপ্রবণ নয়। তারা দীর্ঘদিন ভালোবাসার ছল করে, একজন নারীকে মানুষিক ভারসাম্যহীন করে তুলার অপূর্ব ক্ষমতা রাখে। ‘

________

শার্টের হাতা ফ্লড করে মেহরুনের দিকে এগিয়ে এলো আহরার। মেহরুন ভয়ার্থ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

‘ ওরা কি বললো?’

‘ আরে কি বলবে আমার? ছোকড়ে বখাটে টাইপ ছেলে। বয়সই বা কি তাদের? আমার জিম করা বডি দেখেই তো ভয়ে শেষ! আমার ধমকেই কাজ হয়েছে আর কি, মারপিট করতে হলো না। ‘

‘ সে কি? আপনি মারপিট করতেন আহরার ভাই?’

‘ অবশ্যই, এইসব ছেলেদের শিক্ষে দেয়ার জন্যে মাঝেমাঝে মারপিট জরুরী। আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও, আমার গাড়িতে উঠো, আমি নিজে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই। তারপর আবার অফিসে যাবো। ‘

‘ আচ্ছা, চলুন। ‘

__________

মাহির গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। সকালে আসার সময় মেয়েরা তাকে যেভাবে ঘিড়ে ধরেছিলো, তাতে ক্যাম্পাসে ঢুকার সাহস পেলো না সে। ইরা বাইরে বেড়িয়ে এসেই, মাহিরকে না দেখার ভান করে, উল্টো পথে হাটা ধরলো। মাহির অবাক হয়ে, দ্রুত পায়ে ইরার পিছনে গিয়ে, ইরার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আরে, আপনি গাড়ি রেখে, হেটে কোথায় যাচ্ছেন?’

‘ আমি তোর সাথে যাবো না, তাই রিক্সা করে বাসায় ফিরবো। ‘

‘ কেন? আমি আবার কি করলাম?’

‘ কি করলাম মানে? এইভাবে ফিটফাট হয়ে কলেজে ঢুকার মানে কি? তুই জানিস তোর দিকে মেয়েগুলো কীভাবে নজর দিচ্ছিলো? এমনকি আমার ডিপার্টমেন্টের দামড়ি মেয়েগুলোও নাকি তোর সাথে প্রেম করতে চায়, আমার কাছে তোর নাম্বার চায়! ভাবতে পারছিস কত বড় বেহায়া এরা?’

ইরার রাগ দেখে বেশ মজা লাগছে মাহিরের। তাই সে ঠোট টিপে হেসে বলে, ‘ এমন হ্যান্ডসাম চকলেট বয় দেখলে বুঝি মেয়েরা নিজেদের সামলাতে পারে? তখন বয়স ও মেটার করে না। বুঝলেন?’

‘ হ্যা, খুব বুঝেছি। তুই তাহলে শো-পিস হিসাবে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাক, দামড়ি মেসেগুলো তোকে চোখ দিয়ে গিলে খাক!’

কথাগুলো বলেই ইরা সামনের দিকে চলে গেলো। মাহির মাথা চুলকে বলে, ‘ ইস ক্ষেপে গেলো!’

মাহির তখন দেখতে পেলো একজন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতাকে। সে চট করে দুটো হাওয়াই মিঠাই কিনে, ইরার সামনে গিয়ে বললো, ‘ এইযে আপনার পছন্দের হাওয়াই মিঠাই, এখুনি কি রাগ করে আমার সাথে যাবেন না?’

নিজের পছন্দের হাওয়াই মিঠাই দেখে ইরার রাগ নিমিষেই গলে জলে হয়ে গেলো। ছোটবেলা থেকে হাওয়াই মিঠাই তার বড্ড পছন্দের। ছেলেবেলায় খেলার ফাকে ইরার রাগ হলে,নিজের জমানো টাকা থেকে, ইরার জন্যে রাস্তার ওপাশ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে আনতো ছোট্ট মাহির। ছোটবেলার মতো এখনো ইরার পছন্দ মনে রেখেছে মাহির। ইরা আনন্দে প্রফুল্লিত হয়ে, হাওয়াই মিঠাই খেতে থাকে। মাহির মুচকি হেসে বিড়বিরিয়ে বলে,’ এখনো আপনি বাচ্চা রয়ে গেলেন। ‘

মাহির মুগ্ধ নয়নে ইরার পানে চেয়ে আছে। ইরা হঠাৎ খাওয়া বাদ দিয়ে হেসে প্রশ্ন করে, ‘ কিরে কি দেখছিস এতো?’

‘ চোখের শান্তি খুজে পাওয়ার চেষ্টা করছি। ‘

‘ চোখের শান্তি খুজে পাওয়া যায় কীভাবে?’

‘ পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্য উপভোগ করার মাধ্যমে, চোখের শান্তি অনুভব করা যায়?’

‘ তা তোর দৃষ্টিকোণে, পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্য কোনটি?’

‘ আপনার প্রাণবন্ত খিলখিলানো হাসি, আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরমত দৃশ্য ইরাবতী। ‘

মাহির বিড়বিড়য়ে কথাটি বললো, যা শুনতে পেলো না ইরা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here