আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৩২ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
77

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩২
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সকাল সকাল বাড়িতে বাচ্চাদের হৈহৈ রব, চেঁচামেচি, দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি। সুজানা ওদেরকে অনেকবার বারণ করেছে ছোটাছুটি করতে। হোঁচট খেয়ে পড়লে অবস্থা বারোটা বেজে যাবে। তার গায়ে নিজের থ্রিপিছটা। ক্লথ ডায়ার থাকায় সুজানার কাপড় শুকাতে সহজ হয়েছে আনিকার। রান্নাঘরে সালমা বেগম থাকায় সুজানা ভয়ে ওদিকে যায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই চলে এল ব্রেকফাস্ট সাড়তে। বাড়ির সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এটা খুব ভালো লেগেছে সুজানার। বাচ্চারা তো তারও আগে।
মমতাজ বেগম অজীফা পড়া শেষে এলেন ধীরপায়ে হেঁটে। আজীম সাহেব, আজাদ সাহেব আর আহনাফ টেবিল দখল করে বসলো। সুজানাকে দেখে বলল

ঘুম ভালো হয়েছে তো সুজানা? টিচারকে পেয়ে স্টুডেন্টদের তো খুশির শেষ নেই।

সুজানা অনা আবিদের দিকে আবারও তাকালো। বলল

হ্যা। সকাল সকাল বিছানায় শুরু করে দিয়েছে।

আনিকা এসে টেবিলে পানির জগ রেখে বলল

এর আর নতুন কি? নিজেদের ঘুম ভাঙলে এরা আর কাউকে ঘুমাতে দেবে?

তারমানে সুজানার ঘুমেই ব্যাঘাত ঘটলো।

সুজানা বলল

না এমন কিছু না আঙ্কেল।

আনিকা বলল,

চাচ্চু আর বলো না অভি কাল অর্ধেক রাত সুজানাকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। ঘুমালো কখন?

সালমা বেগম টেবিলে নাশতার প্লেট সাজাতে সাজাতে সুজানার দিকে চাইলেন।

আজীম সাহেব বললেন

তাই নাকি? না এটা তো ভারী অন্যায়।

সুজানা বলল

না, তেমন কিছু না।

না, অভি এটা ভালো করেনি মোটেও। অত রাত জাগিয়ে কাজ করতে হবে কেন?

আনিকা বলল

হুম, কাল আমি কোথায় ভেবেছি সুজানার সাথে গল্প করে রাত কাটাবো অভি সব বরবাদ করে দিল। হুহ স্টুডেন্টও পেয়েছে চুপচাপ তাই যেমন ইচ্ছা তেমন করছে।

সুজানা মৃদু হাসলো তবে কিছু বললো না। বৃদ্ধা বললেন

ছোট বৌমা আমার দাদুভাইকে ডাক দাও। আমরা একা একা খাব কেন?

অভিকে ডাকতে হলো না। সে শপিং ব্যাগ হাতে নিজেই হাজির হলো।

মাথায় কাপড় টানা সবুজ রঙা সেলোয়ার-কামিজ পরিহিত মেয়েটাকে পেছন থেকে দেখে চিনতে ভুল হলো না। মেয়েটার সামনে ব্যাগটা রেখে বলল

ওটা নিয়ে যাবেন। এবার কুঁচকে গেলে খবর আছে।

তারপরেই বিপরীতমুখী চেয়ারটা টেনে বসলো। সুজানা চোখ তুলে দেখলো আকাশীরঙা টি শার্টে তাকে আজকে অন্যরকম স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে।

সুজানার চোখাচোখি হওয়ায় ভুরু নাঁচালো অভিক। সুজানা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিল।

আজীম সাহেব বলে উঠলেন,

তুমি নাকি কাল সারারাত সুজানাকে দিয়ে কাজ করিয়েছ?

অভিক মুখের কাছে পানির গ্লাস থামিয়ে বলল

কি কাজ?

আনিকা বলল

ওই ডিজাইনের কাজগুলো।

এগুলো সুজানার ডিউটি। করতে তো হবেই। তাই নয় কি সুজানা?

সুজানা মাথা নাড়লো।

বাবা বললেন,

একটু ছাড় তো দেয়া যায় অভি।

ইতোমধ্যে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে।

সালমা বেগম ছেলের প্লেটে সকালের নাশতা দিলেন। বললেন

খাওয়ার সময় কোনো কথা চাই না অভি।

হুম।

অনা আবিদ তাদের বাবার পাশের চেয়ারেই দাঁড়ানো। খেতে খেতে আবিদ সুজানাকে বলল

সুজান আছকে আবার ঘুম যাবে?

সুজানা ওর কথা শুনে মিষ্টি হাসলো। অভিক বলল

মোটেও না। সুজানা আর কখনোই এই বাড়িতে আসবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করেছে।

সালমা বেগম খেতে গিয়ে ভুরু কুঁচকে তাকালেন। সুজানা সবার কৌতূহলী দৃষ্টি পরখ করতে গিয়ে সালমা বেগমকে দেখে থমকে গেল।

আনিকা হেসে বলল

বললেই হলো নাকি? মামীরা যখন আসবে তখন আমি সুজানাকে টেনে নিয়ে আসব এখানে। নইলে সবাই মিলে আপনাদের বাসায় চলে যাব। আসবেন তো আপনি?

সুজানা মহাবিপাকে পড়ে গেল। চোখতুলে দেখলো অভিক ফারদিন ভুরু কুঁচকে চেয়ে আছে। সুজানা ওই ভাষা বুঝতে সক্ষম হলো। না বলতে বলছে?
কিন্তু পাশের চেয়ারে বসা উনার মা কেমন করে তাকিয়ে আছে সুজানার দিকে। সুজানা শুকনো ঢোক গিললো। মাথা দুলিয়ে বলল

হুমম।

এই তো ভালো মেয়ের মতো কথা। অভি দেখলি সুজানা আবারও আসবে।

আর কারো দিকে চাইলো না সুজানা। ছেলের আগে মায়ের কথাই বেশি শুনতে হবে তাকে। কি ভয়ানক মহিলা!

ভুলক্রমে একবার চোখ তুলেছিল বৈকি! মায়ের চাহনি দেখে সুজানার জান যায় যায় অবস্থা। সে তো সঠিক কথাই বলেছে। তাহলে এমন করে তাকানোর কারণ কি?

খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হতেই সুজানা তৈরি হয়ে নিল। ব্যাগপত্র নিয়ে নীচে এসে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষ করে বেরোতে যাবে তখনি অভিকের ডাক এল। সুজানা অনাকে সাথে নিয়ে পা বাড়ালো অভিকের ঘরের উদ্দেশ্যে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো

স্যার……কিছু বলবেন?

ভেতর থেকে আওয়াজ এল।

না।

আচ্ছা। আমি আসি তাহলে।

আমি আপনাকে যেতে বলেছি?

না।

তাহলে?

তাহলে কি দাঁড়িয়ে থাকব?

দাঁড়িয়ে থাকতে কখন বলেছি?

তাহলে কি করব?

আমি না বলা অব্ধি কিছু করবেন না।

সুজানা ছোট্ট করে জবাব দিল।

আচ্ছা।

আজব! আপনার জিজ্ঞেস করা দরকার কেন আমি এভাবে অধিকার কাটিয়ে কথা বলছি।

হুম জানি।

ধপ করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল মুখের উপর।

আপনি কচুও জানেন না।

সুজানা ফিক করে হাসলো।

ক্যাম্পাসে যাতে দেখা যায়। আপনার জানার দরকার ফাঁকা ক্লাসরুম দেখতে কস্মিনকালেও কোনো টিচারের ভালো লাগেনা।

সুজানা আবারও হাসলো।

হুম।

কোনো হুম টুম না সুজানা। উফ!

তাহলে কি?

আপনি আর কখনোই এই বাড়িতে আসবেন না।

আচ্ছা।

সত্যি?

তিনটা।

ওকে। গুড গার্ল।

অভিক এবার নিশ্চিন্ত হলো। সুজানার এবাড়িতে শুধু তার জন্য আসা দরকার। অন্য কারো জন্য কভু নয়, কস্মিনকালেও নয়। এত দেখাদেখির অধিকার শুধু সেই রাখে। তার একটা ব্যক্তিগত স্টুডেন্ট কি থাকতে পারেনা? আজব!

____________________

ওই বাড়ি থেকে ফিরে সুজানা সরাসরি বটতলা স্টেশনে চলে গেল। বন্ধুদের সাথে শাটলে তার ফের দেখা। সবাই জানতে চাইলো ও-ই দিনের কথা।

স্যার কেন তার কথা জিজ্ঞেস করছিল? এবং স্যারকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছিল।

সুজানার সেদিকে হুশ নেই। সে তখন জানালার কাছে মাথা এলিয়ে দেখতে লাগলো ঝকঝক করে চলতে থাকা শাটলের দু’পাশের সবুজ ক্ষেত,বনজঙ্গল। হাতের উপর খোলা বইয়ের পাতা হাওয়ায় উল্টে যাচ্ছে একের পর এক। উড়েচুল তখন ছুঁয়ে যাচ্ছে নাকমুখ।

বন্ধুরা ফিসফিস করে বলে উঠলো,

ডাল মে কুচ কালা হ্যা?

সুজানা কপাল ভাঁজ করে তাকালো তাদের দিকে। মেহুল বলল

সেগুন বাগিচা?

সুজানা মৃদু হাসলো। সবাই হৈহল্লায় মেতে উঠলো সাথে সাথে।

সুজানা কপাল চেপে ধরলো। বলল

সেরকম কিছু না।

মেহুল বলল

আমাকে এটলিস্ট শেখাতে এসো না। আমি না চোখ দেখেই বুঝি সব। বুঝেছ জানু?

আচ্ছা? তাহলে সবাই মিলে খুশিতে শাটল থেকে লাফ দে।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

শান্তা গাল টেনে দিয়ে বলল

স্যার থেকে এখন দুলাভাই ডাকব নাকি?

সুজানা বলল

ধুরর কি বলছিস এসব? লোকে শুনলে কি বলবে?

আরেহ পুরো দুনিয়া শুনে যাক ।

সুজানা ওদের থেকে বাঁচতে বইয়ে মুখ গুঁজলো। সে দুই নম্বর প্রশ্নের উত্তরটাও খুঁজে পেয়েছে।

প্রথম প্রশ্নটা ছিল, যা আমার আছে তা আমি শুধু আপনাকেই দিতে পারি। অন্য কাউকে নয়।

দ্বিতীয় প্রশ্ন : আমার একটা লাইব্রেরি চাই।

প্রথম প্রশ্নের উপর মন আর দ্বিতীয়টা বন্ধুত্ব। এবার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরটা জানার অপেক্ষায়।

সুজানা ভেবে পেল না সে কিভাবে বলবে উত্তরগুলো? সে তো সামনে পড়লেই লজ্জায় মরে।

না, উত্তর জানতে চাইলেই সে বলে দেবে, উত্তর হচ্ছে, কচু কচু।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here