#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহরুনকে হেচকা টান দিয়ে কেউ নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে, মেহরুন নিজেকে ছাডানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু সাব্বির কিছুতেই তাকে ছাড়ছে না, এক পর্যায়ে মেহরুন চিৎকার করে উঠে কিন্তু কেউ তাকে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে। বাকিটুকু দেখতে পেলো না মেহরুন, ধরফরিয়ে উঠে বসলো। ভার্সিটি থেকে এসে সে ঘুমিয়ে পরেছিলো কিন্তু ঘুমের মাঝে এমন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবে ভাবেনি। সাব্বির তাদের গ্রামের চেয়ারম্যান এর ছেলে। বেশ প্রভাবশালী একজন মাস্তান টাইপ বখাটে ছেলে। মেয়েদের ইভটিজিং করাই যেন তার পেশা।,বেশ কয়েকবার মেহরুনকে কু-প্রস্তাব দিয়েছে, শেষমেষ তার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে শহরের ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয় মেহরুন। মেহরুন এর ভাবনার মাঝেই, আহরার মা এসে বললেন, ‘ মেহরুন, আহরারকে ফোনে পাচ্ছি না, কি যে হয়েছে ছেলেটার ঠিক বুঝতে পারছি না। ‘
‘ সে কি খালা? অফিসের নাম্বারে ফোন দিয়েছিলেন?’
‘ তা, তো দিয়েছিলাম মা, কিন্তু টেলিফোনও ধরছে না। ‘
‘ আচ্ছা ইরা আপুকে ফোন দিলে কেমন হয়? হয়তো ইরা আপুর সাথে আছেন। ‘
‘ আমি ইরাকেও ফোন করেছিলাম কিন্তু ইরা বললো যে ইরার ফোনও নাকি আহরার ধরছে না। আমার কিন্তু বড্ড টেনশন হচ্ছে!’
‘ আহ, খালা! এইভাবে টেনশন করিও না। ‘
তাদের কথোপকথনের মাঝে আহরারের বাবা এসে বললেন, ‘ আহরারের মা আমি দাঁড়োয়ানকে ফোন করেছি, তার মতে আজকে সবার আগেই ছুটি হয়ে গেছে, অফিসে শুধু আহরার ছিলো, তাই আমি ভেবেছি একবার অফিস থেকে ঘুড়ে আসবো, দেখি আহরারের খোজ পাওয়া যায় কিনা। ‘
আহরারের বাবা রফিক উদ্দিন এর কথায় তাল দিয়ে, মেহরুন তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ খালু, আমিও বরং আপনার সাথে যাই?’
‘ তুমি যাবে কেন মা? তুমি বাসায় থাকো, তোমার খালার সাথে। ‘
‘ খালু, আমারোও প্রচুর চিন্তা হচ্ছে, বাসায় থাকলে অস্হিরতা আরো বাড়বে, তার থেকে বরং আপনার সাথে যাই। ‘
‘ আচ্ছা, মা চলো।’
__________
মাহির গাড়িতে জোড়ে ব্রেক কষে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। মাহিরের সাথে সাথে ইরাও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে, কোমড়ে হাত রেখে বললো, ‘ এই! তুই আমাকে বাসায় না নিয়ে কোথায় নিয়ে আসলি বল তো? কখন ধরে তোকে জিজ্ঞেস করছি অথচ তুই কিচ্ছু বলছিস ও না। তোর সমস্যা টা কি?’
মাহির মাথা নিচু করে লাজুক সুরে বললো, ‘ সামনে তাকিয়ে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন। ‘
ইরা সামনে তাকাতেই, স্তব্ধ হয়ে গেলো। ছোট্ট একটা দিঘির পাড়ে মাহির তাকে নিয়ে এসেছে। দিঘির মাঝখানে একটি কাঠের নৌকা ভেসে আছে। আশে-পাশে পদ্মফুল ফুটে আছে, ইরা এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারলো না। সে দৌড়ে দিঘির পাড়ে ছুটে গেলো। মাহির ও হেসে, ইরার পিছনে পিছনে দৌড়ে গেলো। মাহির মাঝিকে ইশারা করতেই, মাঝি নৌকাটা পাড়ে এসে ভেড়ালো। ইরা বিস্ময়ের সাথে মাহিরকে প্রশ্ন করে, ‘ এইসব কি মাহির?’
মাহির পকেটে হাত রেখে, চোখ পিটপিট করে জবাব দেয়, ‘ আহ আসলে, গাড়িতে লক্ষ্য করেছিলাম ঘুড়তে না যাওয়ার জন্যে, আপনার মুডটা খারাপ হয়ে আছে, তাই ভাবলাম আপনাকে ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ দেই, যতই হোক ছোটবেলার ফ্রেন্ড বলে কথা!’
ইরা দুই হাত ভাজ করে, গম্ভীর গলায় বলে,
‘ ওহো! তুই তাহলে এখনো আমাকে ফ্রেন্ড মনে করিস? ‘
‘ তা খানিকটা মনে করি। ‘
‘ আচ্ছা আমি যে নৌকায় ঘুরতে পছন্দ করি, তা তুই এখনো মনে রেখেছিস? আমি ভেবেছিলাম হয়তো ভুলে গিয়েছিস। ‘
‘ মনে রাখবো না আবার? ছোটবেলায় নৌকায় চড়ার জন্যে কি বায়না ধরেছিলেন আপনি, মামা আপনাকে কিছুতেই চড়তে দিবে না, শেষে জেদ করে আপনি নৌকায় চরলেন কিন্তু চড়তে গিয়ে হঠাৎ..’
‘ হঠাৎ বেখায়ালিতে আমার প্রায় নৌকা থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম ঠিক তখনি তুই ছোট্ট হয়েও আমার হাত শক্ত করে আকড়ে ধরেছিলি, মাঝে মাঝে সত্যিই মনে হয় আমি না তুই আমার থেকে বয়সে বড়। ‘
কথাগুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ইরা। আজ তার সবকিছু ভালো লাগছে, এতোক্ষন যাবৎ তার মনের দু:খ- বিষন্নতা সকল কিছু এক নিমিষেই উড়ে গেলো, মাহিরের এমন সুন্দর সারপ্রাইজ পেয়ে। মাহির মুগ্ধনয়নে তার ইরাবতীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মাঝি হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে। মাহির ইরাকে নিয়ে নৌকায় উঠে বসে।
_________
অপরদিকে অফিসের রুম থেকে আহরারকে উদ্ধার করে রফিক উদ্দিন এবং দাড়োয়ান। আহরার সোফায় বসে ছিলো। মেহরুন আহরারকে এক গ্লাস পানি দেয়। আহরার ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে। মেহরুন চিন্তিত গলায় শুধায়, ‘ আপনাকে এইভাবে কে আটকে রেখেছিলো?’
দাড়োয়ান মেহরুনের প্রশ্নের মাঝে, ফোড়ন কেটে বলে, ‘ শুধু আটকে রেখেছে তাই নয় বরং টেলিফোন এর লাইন ও কেটে রেখেছে সেই বজ্জাত টা কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোন বজ্জাত এই কাজ করলো স্যার?’
‘ আহ, ওইসব ছাড়ো। আচ্ছা আহরার বাবা তুই এখন ঠিক আছিস তো?’
আহরার তার টাই এর নাট ঢিল করতে করতে বলে, ‘ হ্যা, আমি ঠিক আছি, আচ্ছা আমার ফোনটা কোথায়? আমার ফোনটা আমি গাড়িতে ফেলে এসেছিলাম। ‘
মেহরুন আহরারের ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ এইযে আপনার ফোন, আমি আপনার গাড়িতেই পেয়েছি। ‘
আহরার দ্রুত ফোনটা পেয়ে দেখে প্রায় ৩০ প্লাস এর অধিক মিসডকল ঝুলছে ইরার। হয়তো সে এখনো অপেক্ষা করছে। দেরী না করে, আহরার দ্রুত ইরার নাম্বারে ফোন করে। অপরদিকে, ইরা পদ্মফুল উঠিয়ে, মুগ্ধতার সাথে পদ্মুফুলগুলো ছুয়ে দেখছে। নৌকাটি ছোট্ট দিঘিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাহির গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে, বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ আপনার মুগ্ধতার মাঝে একরাশ স্নিগ্ধতা রয়েছে, তা কি আপনি লক্ষ্য করেছেন ইরাবতী?’
মাহিরের হাতে ইরার ফোন ছিলো, সাইলেন্ট থাকায় ফোনের টুংটাং শব্দ ইরার কানে যায়নি। মাহির ফোনের স্ক্রিনে আহরার নামটি দেখে রাগে একপ্রকার তেতিয়ে উঠে। ইচ্ছে করছে পানিতে ফোনটা ফেলে দিতে কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে, ইরার আড়ালে ফোনটা সুইচঅফ করে রেখে দিলো। ইরার ফোন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিন্তাগ্রস্হ হয়ে পরে আহরার। সে সময় নষ্ট না করে, ইরার বাড়ির পথে রওনা দেয়।
______
ইরা মাহিরকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি হয়েছে’ মাহির মাথা নাড়িয়ে বললো ‘কিচ্ছু না। ‘ ইরা মুচকি হাসলো। ইরাকে অবাক করে দিয়ে, মাহির গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
মেঘের নৌকা তুমি
তোমায় ভাসাব আকাশে
সাগরের শঙ্খ তুমি
তোমায় বাজাব বাতাসে
মাহির থেমে গেলো। তার নেত্রপল্লব হঠাৎ ছলছল করছে, তার মনে হচ্ছে মুহুর্ত টা সাময়িক, এই মুহুর্ত সে আর কখনো ফিরে পাবেনা। কয়েকদিন পরেই তার ইরাবতীর বিয়ে,তখন সে আজীবনের জন্যে হারিয়ে ফেলবে তার প্রানের থেকে প্রিয় ইরাবতী। আহ সে কি বেদনাদায়ক যন্ত্রনা! ইরার আখিজোড়া বড় হয়ে গেলো, সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
‘ তুই এতো ভালো গান গাইতে পারিস, জানতাম না তো। ‘
‘ আপনি অনেক কিছুই জানেন না ,হয়তো জানতেও পারবেন না। ‘
‘ মানে? আমি ঠিক বুঝলাম না। ‘
মাহির তার নেত্রকোনার অশ্রু বৃদ্ধাআঙ্গুল দিয়ে মুছে ধীর গলায় শুধায়, ‘ আমি আপনার অভাব বোধ করছি ইরাবতী। ‘
ইরা কিছুই শুনলো না। সে মাহিরের দিকে ফ্যালফ্যালে নয়নে চেয়ে থাকে। মাহির অন্যদিকে ঘুড়ে তাকায়।
__________
ইরা এবং মাহির বাড়ি ফিরতেই দেখতে পায় আহরার সোফায় বসে আছে। আহরারকে দেখেই ভ্রু কুচকে তাকায় মাহির তখনি……
চলবে…
(আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝে উঠতে পারছি না, আমি কার সাথে মিল দিবো, এইটা একান্ত আমার ব্যাপার, লেখিকা হিসেবে এটুকু স্বাধীনতা আমার থাকা উচিৎ! আশা করি এই বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ করবেন না। মিল কার সাথে হবে আমি এখনো বলেনি, হয়তো মাহির বা আহরার। আপনারা ধৈর্য্য সহকারে গল্প পড়ুন, আশা করি আশাহত হবেন না।)