আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৪৪ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
417

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৪
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

অভিক আর সুজানা ছাদ থেকে নেমে আসার পরেই সবার একসাথে খাওয়া দাওয়া হলো। খেতে খেতে অনেক গল্প গুজব হলো।

ডেজার্ট খাওয়ার সময় সাজিয়া বেগম সবার অলক্ষ্যে অভিকের কাছে এসে জানতে চাইলেন

মাস্টারমহাশয় ভালো করে খেতে পেরেছে?

অভিক নির্মল হাসলো এত সুন্দর সম্বোধন শুনে। বলল

ঝাল কম কি করে হয়েছে?

বাবুদের মা বলেছে তার দেবর নাকি ঝাল কম খায়।

আচ্ছা, এই ব্যাপার। ঝাল কম মানে মজা। আর করিমের আন্টির হাতের সবকিছুই বেস্ট যতটুকু আমি জানি।

আমি মাস্টারমশাইয়ের কাছে জানতে চাই।

অভিক জবাব দিল।

রান্নাগুলো তাহার কথার মতোই মিষ্টি।

সাজিয়া বেগম প্রশংসা শুনে হাসলেন। বললেন

থেকে যাওয়ার কথা হয়েছিল বোধহয়।

যদি আবার আসার সুযোগ হয় আজকের রাতসহ দুটো রাত থেকে যাব। কিন্তু নবকুঠিরেও তো যাওয়া যায়। আজকে রান্না খেয়েছি সেদিন না হয় রান্না করে খাওয়াবো।

মাস্টার রান্না পারে?

খুব পারে।

তাহলে তো অমৃতটুকু খেতেই হবে।

অভিক মাথার পেছনে চুলকে হাসলো।

সুজানা এসে বলল

আপনাকে আরেকটু পায়েস দেব?

অভিক প্লেটের শেষেরটুকু খেতে খেতে বলল,

যদি শুনতে চান ” আপনার বরের ডায়াবেটিস “।

সুজানা বলল

সবসময় বাজে কথা।

************

আজীম সাহেব আর সালমা বেগমের সাথে সাজিয়া বেগমের খোলামেলা কথা হয়েছে । যদি কোনো সমস্যা না থাকে সেই চার হাত এক হতে সমস্যা কোথায়?
কিন্তু সাজিয়া বেগমের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর কথা কি উনারা বুঝবেন? মেয়ের বিয়ের খরচ বলতে একটা ব্যাপার স্যাপার তো আছে। তাছাড়া হুট করে বিয়ে নামানো যায় না । এখনো সুজানার নানার বাড়ি, দাদার বাড়িতে কাউকে কিচ্ছুটি বলা হয়নি। হুট করে হয়ে গেল সব। উনি টাকা পয়সার বন্দোবস্ত করে মেয়ে তুলে দেবেন লোকজন খাইয়ে। অতবড় বনেদী পরিবারের সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে বেশ নামীদামী মানুষ আসবে বিয়েতে। ভালো একটা কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে লোকজন খাওয়াদাওয়ার খরচ বেশ। বড় ভাইকে জমি বেচার চূড়ান্ত কথা বলে দিতে হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সময় চেয়ে নিলেন তবে সমস্যাটা উনার নয় সুজানার বলে চালিয়ে দিলেন। সুজানা কখন চায় তার উপর নির্ভর করে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলেছেন।

সালমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। সুজানাকে উনি ফোন করে ভালো করে বুঝিয়ে বললে হয়ে যাবে। উনি জানেন সুজানা উনাকে বেশ ভয়ের চোখে দেখে। তাছাড়া উনি আর দেরী করতে চান না। রমজান চলে এসেছে। ঈদের পর ছাড়া আর কথা নেই।
সুজানার মতামত এবং সাজিয়া বেগম উনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ জানাতে জানাতে রমজান চলেই এল।

এই পুরো রমজানে সুজানার আর তার মাস্টারমশাইয়ের দেখা হয়েছিল ক্যাম্পাসে ভর্তির সময়। সেই দূর থেকে দেখে একটুখানি মৃদু হাসা। আর সুজানার বন্ধুদের সাহায্য পাঠানো আরও একটি টিস্যুর প্যাকেট। সুজানার তার ভেতরে আবিষ্কার করলো একটি নীল চিরকুট। তাতে লেখা ছিল,

রমজান মোবারক সুজানা আফরিদা । আগামী রমজানে সেহেরিতে ডেকে দেয়ার জন্য হলেও আপনি আমার হোন।

সুজানা চিরকুটটা কতবার পড়েছে হিসেব নেই। মায়ের বারণে তারা দু’জনের অনেকদিন একসাথে হাঁটা হয়নি । কথা হয়নি সামনাসামনি দাঁড়িয়ে। ফোনে সেই কয়েকয়েক মিনিটের কুশল বিনিময়। অল্প সময়ে কি অতশত কথা বলা যায়? তাদের তো কথা গুলিয়ে যায় দুজন দুজনের গলার আওয়াজ শুনলে।

রমজানের প্রায় শেষের দিকে আজীম সাহেব ছেলের বউয়ের জন্য ঈদের কাপড়চোপড় নিয়ে এলেন। সাথে বউয়ের মা ভাইয়ের জন্যও। উনি চুপিসারে সুজানাকে বলেছেন সবগুলো অভিক ফারদিনের পছন্দে কেনা। কাপড়ের ভাঁজে নাকি কিছু সিক্রেট আছে। সুজানা ছাড়া তা অন্য কারো দেখা মানা।

সুজানা তার কাপড়ের ভাঁজে পেল আরও একটি চিরকুট। তাতে লেখা,

ঈদ মোবারক মাই মিসেস।

সুজানার অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হলো। এত নতুন অনুভূতিগুলো! সে নাম জানেনা তাদের।

চলবে….
রিচেক করা হয়নি পাঠক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here