অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৫৬।

0
58

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫৬।

‘খবর শুনেছেন, স্যার?’

‘না তো। কী হয়েছে?’

‘আমাদের বসের মেয়ে জারা আছে না, উনি তো কাল রাতে সুই’সাইড করতে চেয়েছেন। বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়েছেন। সকালে বাড়ির মানুষ দেখেছেন সেটা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানিয়েছেন, প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছেন না-কী। কবে নাগাদ সুস্থ হবেন সেটাও অনিশ্চিত।’

ফারজাদ চমকাল। মেয়েটা সুই’সাইড করে বসল! তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। সে বলল,

‘কী বলছেন? সুই’সাইড কেন করতে গেলেন?’

‘সেটা তো জানি না, স্যার। তবে আমরা কয়জন হাসপাতালে গিয়েছিলাম। বসকে দেখে খারাপ লাগল খুব। মেয়ের শোকে স্যারের নাজেহাল অবস্থা।’

‘আচ্ছা রাখুন। আমি বসকে বরং কল করে দেখছি।’

‘আচ্ছা, স্যার।’

তার সহকর্মী কল কাটার পর ফারজাদ তার বসের নাম্বারে কল লাগাল। রিসিভ হলো বেশ কয়বার বাজার পর। ওপাশ থেকে শোনা গেল রাশভারী গলার স্বর,

‘কেন কল দিয়েছ? আমার মেয়েটা ম’রেছে কি-না জানার জন্য?’

‘এসব কী বলছেন, স্যার? আমি আমার শত্রুরও মৃত্যু কামনা করি না। ম্যাডাম কেমন আছেন এখন?’

এক বুক ক্লেশ নিয়ে জবাব এল,

‘বেঁচে আছে কোনোরকমে।’

‘স্যার, এটা করা কি আদৌ উচিত হয়েছে উনার? এত পড়াশোনা জানা একজন মানুষ এতটা মূর্খের মতো একটা কাজ কী করে করতে পারলেন? আপনার উচিত ছিল প্রথম থেকেই উনাকে সঙ্গ না দিয়ে বোঝানো। তা না করে আপনিও আপনার মেয়ের কথাই শুনে গিয়েছেন। সবসময় আদর আর ভালোবাসা দিয়েই সব হয় না, স্যার; মাঝে মাঝে সন্তানদের একটু শাসনও করতে হয়।’

রওফিক সাহেব হতাশ গলায় বললেন,

‘আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবাসলে কী হতো, ফারজাদ?’

‘স্যার, মনকে কি আর জোর করে বোঝানো যায়?’

‘আমার মেয়ের এত ভালোবাসার পরও যখন তুমি তোমার মনকে বোঝাতে পারোনি, তবে এই মনকে তুমি আর কখনোই বুঝিয়ে উঠতে পারবে না। রাখছি, আমার মেয়ের খোঁজ তোমাকে আর নিতে হবে না।’

কল কেটে দিল লোকটা। ফারজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সত্যিই কি কখনো সে তার মনকে বুঝিয়ে উঠতে পারবে না? সে কি এতটাই অপারক?

ফারজাদ অতশত নিয়ে মাথা ঘামাল না আর। আজকে তার একটা ইন্টারভিউ আছে। তার জন্যই আপাতত তৈরি হচ্ছে সে।

_______

রান্নাঘরে সবজি কাটছেন লুৎফা বেগম। প্রিয়তা পাশে এসে বসল। লুৎফা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

‘ভার্সিটিতে যাবি কবে থেকে? একটা সেমিস্টার তো শেষ করলি।’

‘কাল থেকে যাব, মা। ফ্যাকাল্টির সাথে আমার কথা হয়েছে। উনারা বলেছেন একটা দরখাস্ত দিয়ে আমি এই সেমিস্টার আবার কন্টিনিউ করতে পারব।’

‘তাহলে তো ভালোই।’

‘হ্যাঁ, মা। আ-আম আসলে একটা কথা বলতে চাইছিলাম।’

লুৎফা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘এত আমতা আমতা না করে যা বলার সরাসরি বলে ফেলো।’

‘মা, দিলরুবা আন্টির মেয়েটা না ভারী মিষ্টি। এত্ত ভালো আর ভদ্র! মেয়েটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ওকে যদি আমি আমার ভাইয়ের বউ বানাতে পারতাম, না মানে ভাইয়ের সাথে ওকে একদম পারফেক্ট মানাবে।’

লুৎফা বেগমের ভ্রু যুগলের ভাঁজ আরো দৃঢ় হলো। তিনি বললেন,

‘বাহ, পাকিস্তানে গিয়ে ভাইয়ের জন্য বউও খুঁজে ফেলেছ।’

প্রিয়তা মাথা চুলকাল। হাসল মিটিমিটি। বলল,

‘মেয়েটা ভালো খুব। তোমারও দেখলে পছন্দ হয়ে যাবে।’

‘কিন্তু তোমার ভাইয়ের সাথে তো তার দেখলাম সাপে নেউলে সম্পর্ক। এই সম্পর্কে আদৌ ভালোবাসা আসবে?’

‘আরে মা, এটা হলো টক ঝাল মিষ্টি সম্পর্ক। প্রথমে ঝগড়া দিয়ে শুরু হবে আর পরে শেষটা হবে মধুর মতো মিষ্টি, তুমি দেখে নিও।’

লুৎফা বেগম খানিক ভেবে বললেন,

‘ঠিক আছে, রুবা আসলে কথা বলব।’

প্রিয়তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। বলল,

‘ঠিক আছে।’

____________

রাস্তার পাশ ঘেঁষে আনমনে হাঁটছে ফারজাদ। মাথার উপর জ্বলজ্বল করছে তপ্ত মার্তন্ড। গরমে ভেজা শার্ট তার। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ঠোঁটের কোণে তাও দেখা যাচ্ছে খানিক তৃপ্তির রেশ। চাকরিটা কনফার্ম। সত্যিই, ভালো মানুষদের জন্য আল্লাহ’ই যথেষ্ঠ।

বাসায় ফিরেছে ফারজাদ। বসার ঘরে পরিচিত সেই হুজুর। সে সালাম দিল। সালামের জবাব দিলেন হুজুর। দিলরুবা বেগম বললেন,

‘তোমার অবস্থাটা একবার দেখতে এসেছেন, ফারজাদ।’

ফারজাদ বলল,

‘আচ্ছা বসুন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে এসে বসল ফারজাদ। হুজুর পাশেই তার। তিনি চোখ বোজে কী যেন পর্যবেক্ষণ করছেন। বেশ অনেকক্ষণ তিনি একই ভাবে চোখ বোজে বসে ছিলেন। চিন্তিত চোখে চেয়ে আছেন দিলরুবা বেগম। ফারজাদের চোখে মুখেও চিন্তার ছাপ। হুজুর চোখ মেলে তাকালেন। মৃদু হেসে বললেন,

‘আলহামদুলিল্লাহ, মনে হচ্ছে আল্লাহ ডাক কবুল করেছেন। উনি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। বরং আমার দূত খবর দিয়েছে, জাদু এখন উল্টো চাল চেলেছে। যে জাদু করেছে তার উপরেই পড়েছে সেই প্রভাব। ফারজাদ এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত।’

দিলরুবা বেগম বুকে হাত রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ফারজাদ দুই-এ দুই-এ চার মিলিয়ে চমকাল খুব। বলল,

‘আপনি কি নিশ্চিত হুজুর, জাদু যে করেছে জাদুর প্রভাব তার উপরেই পড়েছে?’

‘জি, আমার দূত তো তাই’ই বলছে।’

ফারজাদের অবাকের মাত্রা তীব্র হলো। বলল,

‘আম্মি জানেন, বসের মেয়ে কাল রাতে না-কী আত্মহ’ত্যার চেষ্টা করেছেন। উনার অবস্থা ভালো নেই এখন, প্যারালাইজড। কবে ঠিক হবে সেটাও ঠিক নেই।’

দিলরুবা বেগম অবাক হলেন খুব। বললেন,

‘তার মানে কি এসব জারা’ই করেছে?’

‘আম্মি, আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। জারা মেয়েটা যে কী করতে চাইছে কে জানে। এভাবে আত্মহ’ত্যার করে বসল!’

‘ওর কথা তুমি আর ভেবো না। যা হবার হয়েছে। তুমি তোমার জায়গায় সৎ, তাই তোমাকে এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না আর।’

ফারজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হুজুরের দিকে চেয়ে বলল,

‘ধন্যবাদ হুজুর, আপনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।’

হুজুর হেসে বললেন,

‘এটা আমার দায়িত্ব। আল্লাহ আপনার সহায় হোক, দোয়া রইল।’

ফারজাদ হাদিয়া দিয়ে হুজুরকে বিদায় জানাল। বাড়ি জুড়ে এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস। দিলরুবা বেগম দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সাথে জারার জন্যও দোয়া করলেন। এই বয়সে মেয়েটার কিছু হোক, তিনি সেটা চান না। তার সুস্থ শরীর আর সুন্দর মনের কামনা করলেন তিনি।

_____________

খেতে বসেছে সবাই। সব প্রিয়তার পছন্দের খাবার। প্রিয়তা একদম কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছে। কতদিন পর মায়ের হাতের রান্না পেয়েছে। নীহাল খেতে খেতে বলল,

‘মা, ফারজাদের সাথে আমার কথা হয়েছিল। উনি বলেছেন, ভিসা পেয়ে যাবেন কিছুদিনের মধ্যেই, তারপর’ই বাংলাদেশে আসবেন।’

লুৎফা বেগম খুশি হলেন। বললেন,

‘তাই। আমার তো খুশি ধরছেই না। কতদিন পর আবার রুবার সাথে দেখা হবে।’

প্রিয়তাও খুশি বেশ। আবার সে দিলরুবা বেগম, মৌমিকে দেখবে। আর ফারজাদকেও। আচমকা মন মস্তিষ্কে ফারজাদ উঁকি দিতেই এক অদ্ভুত অনুভূতির দেখা মিলল যেন। খেয়াল করেছে, বাংলাদেশে আসার পর থেকেই মানুষটার কথা তার একটু বেশিই মনে পড়ছে। অযথা কোনো কারণ ছাড়া একটা মানুষকে নিয়ে ভাবা মোটেও ঠিক না। এটা অনুচিত। একবার মনকে সায় দিতে গিয়ে এত বেগ পোহাতে হয়েছে তার, তাই ঠিক করেছে, আর এই মনের জালে পা দিবে না সে।

চলবে….

(আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত, পাঠকমহল। আমি এখনো বাড়িতে। কাল’ই ফিরব। ইনশাল্লাহ পরশু থেকে আবার রেগুলার হব। এতদিন এত এত অপেক্ষা করানোর জন্য আপনাদের কাছে এত এত স্যরি। ক্ষমা করবেন প্লিজ🙂)

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫৭।

অনেকগুলো দিন পর সেই চিরচেনা প্রাঙ্গণে পা রেখে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠল প্রিয়তার। মাঠের বা পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটা লালের মহিমায় আরক্ত। কী চমৎকার দেখাচ্ছে গাছটাকে! একটা মেয়ে ছুটে এল আচানক। জড়িয়ে ধরল প্রিয়তাকে। অভিমানের সুরে বলল,

‘একটু ঝগড়া হয়েছে বলে কি বাড়িতে গিয়ে একেবারে সব যোগাযোগ’ই বন্ধ করে দিবি?’

প্রিয়তা মলিন হাসল। বান্ধবী তো আর তার পরিস্থিতি জানে না। সে বলল,

‘এই ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত জীবন থেকে খানিকটা ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম, তাই ফোনটাও ধরা হয়নি খুব একটা। তবে তোর উপর আমার একটুও রাগ নেই।’

মেয়েটা ছাড়ল তাকে। বলল,

‘সত্যি বলছিস?’

‘একদম।’

‘এতদিন আমাকে একটুও মিস করিসনি, না?’

‘অনেক মিস করেছি। তাই তো সব ছেড়ে আবার চলে এসেছি তোর কাছে।’

মেয়েটা মুখ ভেংচাল। বলল,

‘হয়েছে হয়েছে, আর মিথ্যে বলতে হবে না।’

প্রিয়তা মেয়েটার গাল টেনে হেসে বলল,

‘বাহ, গালে মাংস বেড়েছে দেখছি। দুলাভাই বুঝি খুব আদরে রাখছে।’

মেয়েটা এবার লজ্জা পেল বোধ হয়। নাকটা কেমন যেন লাল লাল দেখাল তার। মাথা নুইয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

‘দুলাভাইয়ের আদরের কথা আর বলিস না। তার আদরের গর্বে এখন আমি গর্ভবতী।’

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘আরে ঐটা গর্ভবতী না, গর্বিত।’

মেয়েটাও হাসল। বলল,

‘কিন্তু আমি তো সত্যিই গর্ভবতী’ই।’

চমকে তাকাল প্রিয়তা। চোখ আপনা আপনি মেয়েটার উদরের দিকে গেল। বিস্ময়াবিষ্ট সুরে বলল,

‘আমি খালামনি হতে যাচ্ছি?’

মেয়েটা মাথা ঝাকাল। প্রিয়তা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। বলল,

‘উফফ নীতু, আমি যে কী খুশি হয়েছি না। এই, ট্রিট দিবি কবে বল?’

‘আজ’ই দিব। ক্লাসের শেষে।’

প্রিয়তার খুশ মেজাজে বলল,

‘ঠিক আছে, চল তাহলে আগে ক্লাসে যাই।’
______________

ক্লাস শেষ করে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে প্রিয়তা আর নীতু। নীতু একটা স্যুপ আর প্রিয়তা অর্ডার দিয়েছে একটা পাস্তা। এরই ফাঁকে গল্পে মজেছে দুজন। নীতু প্রিয়তার কাছে তার গ্রামে কাটানো মুহুর্তগুলোর কথা জানতে চাইছে। কিন্তু মিথ্যা বলা যায় আর কতক্ষণ। তার উপর প্রিয়তা অভিনয়েও খুব একটা পারদর্শী নয়। কিন্তু সে নীতুকে এই সময় আর এতকিছু জানিয়ে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাইছে না। তাই আপাতত নিখুঁত মিথ্যে’ই সাজিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার আগ মুহুর্ত। পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যটার ডুবু ডুবু ভাব। বাড়ির দিকের এই রাস্তাটা নীরব থাকে এই সময়টাতে। প্রিয়তা পা চালাচ্ছে দ্রুত। সন্ধ্যা নামার আগেই বাড়ি ফেরা তার উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটাল কিছু ছেলে এসে। বয়স তাদের বেশি না, কলেজ পড়ুয়া হয়তো। কিন্তু ভাব এমন ধরছে যেন, এলাকার বড়ো বড়ো মাস্তানরাও তাদের চামচা। ছেলেগুলো পথ আটকাল প্রিয়তার। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকাল। চার থেকে পাঁচটা ছেলে। সে দেখল সবাইকে। জিজ্ঞেস করল,

‘কী চাই?’

তন্মধ্যে একজন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

‘আপা, আপনার ব্যাগটা।’

প্রিয়তা গম্ভীর স্বরে বলল,

‘ব্যাগ দিয়ে কী করবে?’

‘গার্লফ্রেন্ডরে গিফ্ট করমু।’

আরেকজন হেসে জবাব দিল এবার। প্রিয়তা হাসল। বলল,

‘ছি, কেমন ছোটলোক প্রেমিক তুমি। একজনের ব্যবহার করা জিনিস গার্লফ্রেন্ডকে গিফ্ট করবে? শোনো, মেয়েদের কিন্তু একটা হিডেন পাওয়া থাকে, তোমার গার্লফ্রেন্ড খুব সহজেই ধরে ফেলবে এটা যে আগে ইউজ করা। তখন কিন্তু ব্রেকআপ নিশ্চিত। তার চেয়ে বরং আমি তোমাকে পাঁচশ টাকা দেই, সুন্দর একটা পার্স কিনে গার্লফ্রেন্ডকে গিফ্ট করে দিও।’

তার পাশের ছেলেগুলা হাসল সব। বলল,

‘খালি ওরেই দিবেন, আমাদের দিবেন না, আপা?’

‘দিব, আজকে ওকে দেই। কালকে অন্য একজনকে দিব নাহয়।’

একটা ছেলে বলল,

‘আমাদের বোকা পাইছে। এইসব বইলা কাইটা পড়ার ধান্ধা সব। এই বেশি কথা না বলে চুপচাপ ব্যাগটা দিয়া দাও। নাইলে ক্যাচ কইরা ছুড়িডা পেটে ঢুকাই দিমু।’

ছেলেটার হাতে ছুড়ি দেখে প্রিয়তা এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল,

‘এই ছুড়ি দিয়ে তো ফল কাটে, ভাই। এটা আমার পেটে ঢুকবে না তো, একটা ভালো ছুড়ি আনতে পারলে না।’

তার কথা শুনে ছেলেগুলো বোকার মতো একে অন্যকে দেখল। প্রিয়তা হাসি থামাল। বলল,

‘সবার নিশ্চয় মা বাবা আছেন?’

‘আরে মাইয়াডা কথা কইতাছে বেশি। ব্যাগটা নিয়া দৌড় দে তো।’

‘আহা, দৌড় তো একটু পরেও দিতে পারবে, এত অধৈর্য হচ্ছো কেন? আগে আমার সাথে একটু গল্প তো করো। তো বলো, কে কোন ক্লাসে পড়ছো?’

ছেলেগুলোর চোখে মুখে বিরক্তির ছটা। একজন বলল,

‘ফাউ ফাউ সময় নষ্ট করতেছি এহানে। মাইয়াডারে বারি মাইরা বেহুঁশ করে দিলেই হয়।’

প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘তারপর কী করবে? আমার ব্যাগ নিয়ে পালাবে? ব্যাগে তেমন কিছুই নেই। খালি আমার কম দামী একটা ফোন আর এক হাজার টাকা। এইটা দিয়ে তোমাদের কিছুই হবে না। তার চেয়ে বরং একটা আইডিয়া দেই শোনো, ঐ পেছনের গলিতে একটা বিল্ডিং হচ্ছে, তার জন্য শ্রমিক নিচ্ছে দেখলাম। খুব অল্প পরিশ্রমে বেশ ভালোই টাকা দেয়। তোমাদের যদি এতই টাকা প্রয়োজন, তবে সেখানে কাজ করে দেখতে পারো। কম পরিশ্রমে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবে।’

ছেলেগুলো কিছু বুঝতে না পেরে একজন অন্যজনকে দেখছে। প্রিয়তা হেসে বলল,

‘যদি আর কিছু করার’ই না থাকে, তবে আমার এই বুদ্ধিটাকে কাজে লাগাও। অন্তত কোনো মানুষের ক্ষতি করো না।’

ছেলেগুলো বুঝল কী বুঝল না কী জানি, তবে তারা তার পথ ছেড়ে দাঁড়াল। প্রিয়তা হেসে চলে আসল সেখান থেকে।

পরদিনই ভার্সিটি যাওয়ার পথে পেছনের গলির নতুন বিল্ডিং এ কাজরত দেখতে পেল ছেলেগুলোকে। ভীষণ রকম খুশি হলো প্রিয়তা। তার কথা যে ছেলেগুলো এভাবে শুনবে সেটা সে কখনো কল্পনাও করিনি। কিছু মানুষকে সৎ পথে আনতে পেরে মনে বিস্তর আনন্দ অনুভব হয়েছে তার।

বেশ কয়টা দিন কাটে সুন্দর ভাবে। এরই মাঝে দিনগুলোকে আরো সুন্দরোতর করার জন্য একটা চমৎকার খবর চলে আসে। ফারজাদদের ভিসা রেডি। সোমবারের ফ্লাইটেই তারা দেশে আসছে। এই খবর যেন প্রিয়তার পুরো বাড়িতে খুশির বাতাস ছড়িয়ে দেয়। লুৎফা বেগমের খুশিও ধরে না আর। কত বছর পর বান্ধবীকে দেখবেন, এটা ভাবতেই বারবার চোখ ভিজে উঠছে উনার।

______________________

‘কিছু খুঁজছেন, আম্মি?’

দিলরুবা বেগম চমকে তাকালেন। ছেলে অফিস থেকে ফেরার আগেই কাজ সারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা আর না পেরে আপাতত মুচকি হেসে বললেন,

‘না আসলে, কিছু কাগজপত্র খুঁজছিলাম।’

ফারজাদ কাঁধ থেকে ব্যাগটা রাখতে রাখতে বলল,

‘কী কাগজপত্র, আম্মি? আমাকে বলুন, আমি বের করে দিচ্ছি।’

খানিকটা ইতস্তত সুরে দিলরুবা বেগম বললেন,

‘তোমার জন্ম নিবন্ধন আর আইডি কার্ড’টা।’

ফারজাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘এগুলো দিয়ে কী করবেন, আম্মি?’

‘আসলে একটু কাজ ছিল। কোথায় রেখেছ বলো, আমি বের করে নিচ্ছি।’

এত বছর পর তার জন্ম নিবন্ধন আর আইডি কার্ড দিয়ে মা’র কী কাজ। প্রশ্নটা মাথায় এলেও আর মুখে আওড়াল না সে। বলল,

‘আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে সব বের করে আপনার রুমে গিয়ে দিয়ে আসব।’

দিলরুবা বেগম সম্মতি জানিয়ে সেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। অতঃপর ফারজাদ গেল ফ্রেশ হতে।

চলবে…

(বাসায় ফিরেছি, পাঠকমহল। এবার থেকে ইনশাল্লাহ রেগুলার হব। এতদিন এত অপেক্ষা করানোর জন্য আমি অনেক দুঃখিত।)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here