#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(০৫)
________________________________
নবী করীম (সা.) আরো বলেন,“আমি যদি আল্লাহর পরে কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদেরকে তাদের স্বামীকে সিজদা করতে আদেশ দিতাম।” তিনি আরো বলেন,“যদি নির্দেশ দিতাম,তাহলে।” কিন্তু তিনি এই ধরনের কোন নির্দেশ দেননি। অতএব এইসব সামাজিকতার দোহাই দিয়ে কারো সম্মানার্থে মাথা বা ঘাড় ঝুঁকানোর অনুমতি ইসলাম ধর্মে জায়েজ নেই। এটাই হচ্ছে আমাদের ইসলামের শিষ্টাচার।”
“মাতা-পিতা,শশুর-শাশুড়ি তাদের কাউকে সম্মানার্থে কদমবুচি করা জায়েজ?”
“এ সম্বন্ধে নবীজি (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিস এবং উলামায়ে কেরামগণের নিম্নোক্ত মতামতগুলো পড়লেই আপনার প্রশ্নোক্ত বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ.
هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,জনৈক ব্যক্তি বলল,হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো যদি তার ভাই বা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়,তবে কি সে তার অভিবাদন এর জন্য মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন,না। লোকটি বলল,তাহলে কি তাকে লেপ্টে ধরবে এবং চুমু খাবে? তিনি বললেন,না। তাহলে কি তার হাত ধরবে এবং তার সাথে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন,হ্যাঁ।
ইমাম তিরমিজী (রহঃ) বলেন,হাদীসটি হাসান।(সুনানে তিরমিযীঃ হা/২৭২৮,বাংলাঃ হা/২৭২৯,মুসনাদে আহমাদঃ হা/১৩০৪৪)
এ হাদীসে রাসূল (সা.) মাথা নুয়াতে এবং চুমু খাওয়াতে নিষেধ করেছেন। এ মাসআলাটি নিয়ে বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। একদল উলামায়ে কেরামগণ বলেছেন সম্মানার্থে জায়েজ আছে পদচুম্বন করা। কিন্তু তারা সাথে সাথে এ শর্তারোপ করেছেন যে,যেন চুমু খেতে গিয়ে রুকুর সূরত বা সেজদার সূরত না হয়ে যায়। যদি রুকু বা সেজদার সূরত হয়ে যায়,তাহলে তা জায়েজ হবে না।(আলমুজতাবাঃ হা/৪/২০৫,আলমুহীতুল বুরহানীঃ হা/৮/১১৮,ফাতাওয়া আলমগীরীঃ হা/৫/৩৬৯)
আরেক দল ফক্বীহ ও মুহাক্কিকীনদের মতে তা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুচিতে রুকুর হালাত এবং সেজদার হালাত হওয়া স্পষ্ট। সেই সাথে এটি বিধর্মীদের প্রতীক। তাই তা হারাম। আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছি। কারণ কদমবুচি করা এ উপমহাদেশে মৌলিকভাবে হিন্দুদের রুসুম-রেওয়াজ। আর কদমবুচি করতে গিয়ে রুকু বা সেজদার হালাত তৈরী হয়েই যায়। আর যারাও কদমবুচিকে জায়েজ বলেছেন তাদের মতেও রুকু সেজদার হালাত হয়ে গেলে কদমবুচি করা জায়েজ নয়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে বিষয়টি বুঝে এর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।
আজকের জন্য আপনাকে মাফ করে দিলাম। নেক্সট টাইম আর কখনো এমন ভুল দ্বিতীয়বার করার সাহস করবেন না কিংবা অন্য কাউকেও এটা করতে দিবেন না। মাথায় রাখবেন কথাগুলো। নয়তো কঠোর পানিশমেন্ট পাবেন।”
মাথা দুলিয়ে সায় দিলো শশীপ্রভা।
“ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে অযু করে আসুন। একসাথে নামাজ আদায় করবেন।”
নীরবে সায় জানিয়ে শশীপ্রভা তাই-ই করলো। আরমান নিজেও ফ্রেশ হয়ে অযু করে নিলো। জায়নামাজ বিছিয়ে বলল,”আমার পেছনে দাঁড়ান।”
“এখন কিসের নামাজ পড়বো?”
“বাসর রাতে স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুলাকাতের পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া জায়েজ। সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়।”
“শুনলাম এটা নাকি বিদআত।”
“এটাকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। বিদআত যিনি বলেছেন তিনি অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।
عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ مِنْ بَجِيلَةَ إِلَى عَبْدِ اللهِ، فَقَالَ: إِنِّي تَزَوَّجْتُ جَارِيَةً بِكْرًا، وَإِنِّي قَدْ خَشِيتُ أَنْ تَفْرِكَنِي، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: «إِنَّ الْإِلْفَ مِنَ اللهِ، وَإِنَّ الْفَرْكَ مِنَ الشَّيْطَانِ، لِيُكَرِّهَ إِلَيْهِ مَا أَحَلَّ اللهُ لَهُ، فَإِذَا دَخَلْتَ عَلَيْهَا فَمُرْهَا فَلْتُصَلِّ خَلْفَكَ رَكْعَتَيْنِ (المعجم الكبير للطبرانى، رقم-8993، مصنف عبد الرزاق، رقم-10461)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ مَوْلَى بَنِي أُسَيْدٍ قَالَ: تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً، وَأَنَا مَمْلُوكٌ، فَدَعَوْتُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِيهِمْ أَبُو ذَرٍّ، وَابْنُ مَسْعُودٍ، وَحُذَيْفَةُ، فَتَقَدَّمَ حُذَيْفَةُ لِيُصَلِّيَ بِهِمْ، فَقَالَ أَبُو ذَرٍّ، أَوْ رَجُلٌ: لَيْسَ لَكَ ذَلِكَ، فَقَدَّمُونِي، وَأَنَا مَمْلُوكٌ، فَأَمَمْتُهُمْ فَعَلَّمُونِي قَالُوا: «إِذَا أُدْخِلَ عَلَيْكَ أَهْلُكَ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَمُرْهَا فَلْتُصَلِّ خَلْفَكَ، وَخُذْ بِنَاصِيتِهَا، وَسَلِ اللَّهَ خَيْرًا، وَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّهَ (مصنف عبد الرزاق، رقم-10462، مصنف ابن أبى شيبة، رقم-17153)
এছাড়াও। ইবনে আবি শাইবা শাকীক থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (র.) এর কাছে এক লোক এসে বলল,আমি এক যুবতী মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি আশংকা করছি,সে আমাকে অপছন্দ করবে। বর্ণনাকারী বলেন,আব্দুল্লাহ বললেন,মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পিছনে দুই রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবাঃ হা/১৭১৫৬)
অতঃপর দু’জনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করলো। আয়েশা মির্জা এলেন তিনজন সার্ভেন্ট নিয়ে। ওদের হাতে দুধ,ফলমূল এবং হরেকরকমের মিষ্টান্ন। মুচকি হেঁসে বললেন,”তোমাদেরকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। সারপ্রাইজ হয়েছো দাদুভাই?”
“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। দারুণ সারপ্রাইজ!”
তিনি ওদের দু’জনের সাথে টুকটাক কিছু কথা বলে যাওয়ার সময় দোয়া করে চলে গেলেন।
“বেডের উপর গিয়ে বসুন।”
আরমান খুব স্বাভাবিক। আলমারি থেকে একটি লেদারের ব্যাগ নিয়ে এলো। শশীপ্রভার হাতে তুলে দিয়ে বলল,”আপনার সম্পূর্ণ দেনমোহরানা।”
“এটা কি কাবিনের টাকা?”
“না। দেনমোহরের টাকা।”
“কাবিন আর দেনমোহর কি এক নয়?”
“বিশেষ করে অনেকে কাবিন ও দেনমোহরকে এক মনে করেন। আসলে কাবিন বলতে বিয়ের চুক্তি বা কাগজপত্রকে বোঝায় আর দেনমোহর বলতে চুক্তিকৃত টাকাকে বোঝায়।
“কিন্তু আমার এই টাকা লাগবে না।”
“এটা আপনার হক এবং অধিকার।”
“আমি এটা দিয়ে কি করবো? আমার লাগবে না। অনেকেই তো তার স্ত্রীকে দেয় না। তো কি হয়?”
“বিয়ের জন্য দেনমোহর অপরিহার্য। এটি নিছক কোনো দান নয়,স্ত্রীর পাকাপোক্ত অধিকার। এ অধিকার আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী নিজেকে স্বামী থেকে দূরে রাখতে পারে। বস্তুত মোহরানা সতীত্বের বিনিময়,পবিত্র বন্ধনের বাহ্যিক দায়বদ্ধতা আর নারীর ভবিষ্যৎ জীবনের গ্যারান্টি। মোহর কোনো অর্থ-বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়,এটি স্বামীর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে কোনো ধরনের এসপার-ওসপার করার অবকাশ নেই।
ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরয করে দিয়েছে। আর মোহর পরিশোধ করা ছাড়া বিয়েই হতে পারে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে যে স্বাদ গ্রহণ করো তার বিনিময়ে অপরিহার্য ফরয হিসেবে তাদের মোহর পরিশোধ করো।”(সূরা নিসাঃ ২৪)
দেখা যায়,অনেকের মোহর পরিশোধের নিয়তই থাকে না। প্রচারের উদ্দেশ্যে এটাকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মনে করা হয়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি কোনো একটা পরিমাণ মোহরানা ধার্য্য করে কোনো নারীকে বিয়ে করলো,অথচ আল্লাহ জানেন তা পরিশোধ করার ইচ্ছে তার নেই,এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে তার স্ত্রীকে প্রতারিত করলো এবং নাহকভাবে তার সতীত্ব নিজের জন্য হালাল মনে করে ভোগ করল এমন ব্যক্তি কিয়ামতে “জিনাকারী ব্যভিচারী হিসেবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।”(মুসনাদে আহমদ)
“এখন আপনার সম্পূর্ণ দেনমোহর বুঝে নিন।”
শশীপ্রভার হাতে ব্যাগটি ধরিয়ে দিলো।
“এখানে তো অনেক টাকা। আমার কাছে সেভে থাকবে না। আপনার কাছে রেখে দিন।”
আরমান কথা বাড়ালো না। নতুন বউয়ের জন্য আলমারির যেই অংশ খালি রেখেছিল,সেখানেই রেখে দিলো। আরমান তিনটি বক্স এনে বলল,”আপনার জন্য গিফট। খুলে দেখুন।”
শশীপ্রভা খুলে দেখলো তাতে সোনা এবং ডায়মন্ডের বেশকিছু গয়না।
“আপনার কাছে রেখে দিন। প্রয়োজন হলে চেয়ে নিবো।”
বিনাবাক্য ব্যয়ে আরমান রেখে দিলো। লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো দু’জনে। বেশ রাত গড়ালেও দু’জনের ঘুম এলো না। শশীপ্রভার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। ভাবতেই পারেনি তার স্বপ্নের মানুষটা এইভাবে তার হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষটা তার থেকেও কেমন দূরে দূরে রয়েছে। শশীপ্রভার মনে সংকোচ দেখা দিলো। তাকে পছন্দ হয়েছে কি-না মানুষটার?এবার ভয় ভয় হতে শুরু করলো। এপাশ হতেই আরমানও হঠাৎ এপাশ হলো। ভড়কে গিয়ে শশীপ্রভা চোখ বন্ধ করে রইলো। আরমান তাকিয়ে রইলো মুখের দিকে। ড্রীম লাইটের নীলচে তারার আলোয় শশীপ্রভাকে মায়াবী লাগছে! চোখের পাপড়িগুলো এবং মেদুর গালজোড়া সিক্ত। সম্পূর্ণ মুখশ্রী ফোলা। আকস্মিক চোখ পড়লো তিলটার উপর। তির তির করছে। অনেকক্ষণ যাবৎ একইভাবে তাকিয়ে রইলো। কি এক নেশা! চোখ খুলতেই শশীপ্রভা দেখলো আরমান তাকিয়ে রয়েছে। ঘাবড়ে গেলো শশীপ্রভা। আরমান মৃদু হেঁসে অধিকারের সহিত শশীপ্রভাকে কাছে টেনে আনলো। ফের শশীপ্রভা ঘাবড়ে গেলো। শশীপ্রভার চোখে চোখ রেখে বলল,”আপনার তিলটা একটু ছুঁই?”
বড় বড় চোখ করে তাকালো শশীপ্রভা। আরমান মুগ্ধ হলো। সবরকমই মেয়েটাকে কেন যেন ভালো লাগছে! শশীপ্রভার প্রতিত্তোরের অপেক্ষা না করে আরমান তর্জনী দিয়ে স্পর্শ করলো। শশীপ্রভা দু-চোখ বুজে ফেললো। এবার তির তির করে ঠোঁট দুটো কাঁপতে লাগলো। আরমানের নেশা ধরে গেলো। নেশারঘোরে নিজের ঠোঁটদুটো এগুলো শশীপ্রভার ঠোঁটের দিকে। শশীপ্রভা এবার দাঁত-মুখ-চোখ খিঁচে রইলো। আরমান তাকিয়ে রইলো। তির তির করে কাঁপছে চোখের পাপড়িগুলো। শশীপ্রভার নিঃশ্বাস গাঢ় হয়ে এলো। টের পেতেই আরমান সরে এলো। এখুনি ইনভলভ হতে চায় না সে। সময় চায় দু’জন দু’জনকে জানার জন্য।
“ঘুমান। ভয় পেতে হবে না। কিছু করবো না আপনাকে।”
শ্বাস আঁটকে রইলো শশীপ্রভা।
“শ্বাস ফেলুন বোকা মেয়ে।”
শ্বাস ছেড়ে তাকালো। আরমান হঠাৎ উঠে বসলো। লাইট অন করে বলল,”আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিলো।”
“বলুন।”
“উঠে বসুন।”
উঠে বসলো শশীপ্রভা।
“আমার কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তা আমি শিউর ছিলাম না। দাদীমার কথায় রাজী হয়ে যাই। এরপর একটি শর্তনামা পাঠাই। আপনি কি সেটা পেয়েছেন?”
“শর্তনামা!”
“হ্যাঁ।”
“আমি তো এমন কিছু সম্পর্কে জানি না।”
“তাহলে আপনার সাইন কিভাবে এলো?”
শশীপ্রভার মনে পড়লো একটা কাগজে সাইন করতে বলেছিলো সে না দেখেই করে দিলো। তাহলে কি সেটাই ছিলো? আর তাতে কিসের শর্ত দেওয়া ছিলো? বিচলিত হলো শশীপ্রভা।
“না দেখেই সাইন করেছি। আমাকে তো পড়তে বলা হয়নি।”
আরমান বুঝতে পারলো এইসব তার দাদীমার চালাকি! চালাকি করলেও লাভ নেই। সে বড়ই কঠোরমনস্ক! তার সিদ্ধান্তে সে সর্বদা অনড়। উঠে গিয়ে আরমান শর্তনামাটি আনলো। শশীপ্রভার হাতে দিয়ে পড়তে বললো। সবটা পড়তেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আরমান পেপারটি হাতে নিয়ে বলল,”আমার সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে হলে আপনাকে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর তা এখুনি এবং এই মুহূর্তে।”
মলিন মুখে তাকালো শশীপ্রভা।
“প্রশ্নের উত্তর দিবেন না কি দিবেন না? নাকি আমাদের সম্পর্কের ইতি এখানেই টানবো? আমি আবার খুব কঠোর মানুষ।”
শশীপ্রভার কলিজা ছ্যাঁত করে উঠলো। মানুষটা এতো কঠোর কেন? আজকের রাতেই কিসব শুরু করেছে!
“দিবো। আপনি বলুন।”
“আপনি কি এই বিয়ে মানেন?একদম সত্য বলবেন? কারণ ফাস্ট আপনার মত ছিলো না। যতটুকু আপনি আমায় ফোনে জানিয়েছিলেন।”
“মানি।”
“যেকোনো পরিস্থিতিতে আমার হাতে হাত রেখে আপনি কি আমার সাথে সংসার করতে ইচ্ছুক?”
“বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে সেহেতু ইচ্ছুক। আর বাঙালি নারীর জীবনে বিয়ে একবারই।”
“আমাকে নিয়ে আপনার কোন অভিযোগ-অনুযোগ রয়েছে? থাকলে বলুন। এরপর সময় পাবেন না।”
“নেই।”
“আমার হাতে হাত রেখে আপনার জীবনটা পাড়ি দিতে পারবেন?”
“পারবো ইনশাআল্লাহ। আমি সর্বদা চেষ্টা করবো।”
“ঠিক আছে। আমি বেপর্দা এবং উশৃংখল নারী পছন্দ করি না। আমার সংসার করতে হলে আজ থেকে ২৪ ঘন্টা আপনাকে পর্দা মেইনটেইন করে চলতে হবে পারবেন?”
“পারবো।”
“ভেবেচিন্তে বলুন।”
“পারবো।”
“২৪ ঘন্টা ঈমানও আমলের সাথে জড়িত থাকতে হবে যতই বাঁধা বিপত্তি আসুক না কেন পারবেন?”
“পারবো।”
“আজকের পর থেকে আমার পারমিশন ব্যতীত বাসার বাইরে এক কদমও ফেলতে পারবেন না। এখন আপনি যদি মনে করেন আপনার সকল ব্যক্তি স্বাধীনতা আমি কেঁড়ে নিচ্ছি ; তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারেন। আমার কোন আপত্তি নেই। এখন কি করবেন বলুন? আমি কিন্তু অপশন দিয়ে দিয়েছি। বাকিটা আপনার সিদ্ধান্তের উপর ডিপেন্ড করবে।”
ডিভোর্সের কথা শুনতেই শশীপ্রভার কলিজা কেঁপে উঠলো। ভয়ার্ত গলায় বলল,”আপনার সিদ্ধান্তে একমত।”
“বেশ! ইসলামের দৃষ্টিতে কেবলমাত্র যার সাথে আপনার দেখা করার জায়েজ আছে এবং আমি যাদের সাথে আপনার দেখা করা পছন্দ করবো,আপনি শুধুমাত্র তাদের সাথেই আজ থেকে দেখা করতে পারবেন। আজ থেকে আপনি তাদের সাথে দেখা করতে পারবেন না যাদের সাথে আমি আপনার দেখা করা পছন্দ করবো না। আমার এই সিদ্ধান্তে আপনি রাজি কি-না ভেবেচিন্তে উত্তর দিন।”
কিছু না ভেবেই প্রভা রাজি হয়ে গেলো।
“রাজি।”
“ইট’স ওকে। একজন বিবাহিত নারীর জন্য তার স্বামী ছাড়া উত্তম বন্ধু আর কেউই হতে পারে না। আপনার কোন বিধর্মী বন্ধু থাকলে একান্তই আমার জন্য ত্যাগ করতে হবে পারবেন?”
প্রভা কাচুমাচু করলো।
“এটা কিভাবে সম্ভব?একটা বিষয়ে অন্তত ছাড় দিন।”
“আমি ছাড় দিতে পারবো না। আমার সংসার করতে হলে আপনাকে সকল শর্ত মানতে হবে এবং পালন করতে হবে। এর অন্যথা আমি গ্রাহ্য করবো না। এবার বলুন কি করবেন?”
আমতা আমতা করলো শশীপ্রভা। কি করবে এবার? আরমান ওয়েট করতে পারলো না। তার সময়ের মূল্য অনেক।
“ইট’স ওকে। মানতে না পারলে সোজা ডিভোর্স দিন। এটাই বেটার।”
শশীপ্রভা তাকিয়ে রইলো। মানুষটা এতো কঠোর কেন?একটা বিষয়ে তো ছাড় দেওয়া যায়। আর বিয়ের রাতেই কি সব শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এমন মানুষ সে কখনো দেখেনি। সেই আবার কখন থেকেই ডিভোর্স ডিভোর্স করছে। পাষাণ,হৃদয়হীন একটা মানুষ! মানুষটা যতোটা সুন্দর ঠিক ততোটাই নির্দয়।
“বলুন কি করবেন? বন্ধু বেশি নাকি স্বামী?
“স্বামী।”
“ওকে। বিয়ের পূর্বে আপনার কারো সাথে রিলেশন থাকলে সেটা এখুনি বলুন। না থাকলেও বলুন। কেউ বিরক্ত করলেও বলুন। এছাড়াও আপনার যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে এখনো সময় আছে তার কাছে চলে যান।”
“নেই।”
“অতীত ভুলতে না পারলে অন্য কাউকে বিয়ে করে তার জীবনটা বিষিয়ে তুলবেন না প্লিজ।”
“কেউ নেই।”
আরাদের কথাটা চেপে গেলো শশীপ্রভা। মানুষটা যদি সত্যি সত্যি ডিভোর্স দেয় তাহলে?
“পরে জানতে পারলে কঠোর থেকে কঠোরতম পানিশমেন্ট পাবেন আপনি। মনে রাখবেন। আমি মির্জা আরমান শাহরিয়ার চৌধুরী অন্যায় প্রসঙ্গে কারো সাথে আপোষ করি না।”
কম্পিত গলায় বলল,”সত্যিই নেই।”
“দেখবেন কিন্তু! আবারও বলছি।”
“সত্যিই নেই।”
“আজ আপনাকে লাস্টবারের মতো সুযোগ দিয়েছি ; আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। আপনার সকল সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে আমাদের সম্পর্কটি এগুবে। নয়তো এর অন্যথা। অর্থাৎ ডিভোর্স।”
শশীপ্রভা কেঁপে উঠলো আবারও। কি ভয়ংকর একটা মানুষ। কি ভয়ংকর একটা শব্দ বার-বার উচ্চারণ করছে!
“আমি আবারও বলছি,পরে জানতে পারলে আপনি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন।”
ভয়ার্ত মুখে শশীপ্রভা তাকিয়ে রইলো। আরাদের ব্যপারটা চেপে গিয়ে তবেই কি সে ভুল করলো?
“এইসবই ছিলো শর্তনামায়। এবার বলুন,স্বামী হিসেবে আমাকে মানতে পারবেন?”
“জ্বী।”
“আমি যদি আমার অধিকার চাই এই মুহূর্তে আপনি দিতে ইচ্ছুক?”
“জ্বী।”
“ভেবেচিন্তে জবাব দিন।”
“দিলাম।”
“ঠিক আছে। তাহলে আপনি এই পেপারে সাইন করে লিখুন আমার সকল শর্ত আপনি মেনে নিয়েছেন। আপনার কোন শর্ত থাকলেও বলুন কিংবা লিখে দিন।”
বিনাবাক্য ব্যয়ে সাইন করে দিলো। আরমান বাঁকা হাসলো।
“এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।”
দু’জনে শুয়ে পড়লো। শশীপ্রভার মন ভার। প্রথম রাতেই মানুষটা নিজের সকল শর্ত আদায় করে পেপারে সাইন করিয়ে নিয়েছে। ভবিষ্যতে কি হবে তার? হঠাৎ শশীপ্রভাকে বুকে টেনে নিলো আরমান। শশীপ্রভা ঘাবড়ে গেলো। জড়িয়ে ধরতেই সারা শরীর শিউরে উঠলো।
“আজ থেকে প্রতিদিন আপনাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে চাই। আপনার কোনো সমস্যা হবে?”
মাথা নাড়ালো শশীপ্রভা। সে-তো এমনটাই চায়। শশীপ্রভার গলায় মুখ গুঁজে বলল,”আপনি আমার সকল শর্তে রাজি! তাহলে আমাদের মধ্যে আর কিসের বাঁধা! কিসের অপেক্ষা! চলুন শুরু করি আল্লাহর নাম নিয়ে আমাদের দাম্পত্য জীবনের সূচনা!”
বলেই থুতনিতে থাকা তিলটায় গাঢ় চুমু খেয়ে বুকের উপরিভাগের দুটো তিলে চুমু খেলো। শশীপ্রভা কেঁপে উঠে আরমানকে খামচে ধরলো। গলায় মুখ গুঁজতেই শশীপ্রভা শ্বাস আঁটকে রইলো। শরীর থেকে কাপড় সরাতেই হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেট করে উঠলো। আরমান খেয়াল করলো না। বার-বার ফোন ভাইব্রেট হতেই আরমান হঠাৎ থেমে গেলো। শশীপ্রভা ভয়ার্ত চোখে তাকালো। আরমান বাসায় তার ফোন সবসময় জেনারেল মোডে রাখে। অফিস কিংবা বাইরে গেলে ভাইব্রেট করে রাখে। ফোনের উৎস খুঁজতেই দেখলো একটি ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে শশীপ্রভার বালিশের পাশে। আরমান হাত বাড়িয়ে নিতেই শশীপ্রভা ঘাবড়ে গেলো। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে,“শেহজাদ আনবীর আরাদ” নামটি। শশীপ্রভা শ্বাস আঁটকে রইলো। এখন কি হবে? শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,”ফোনটা কার?”
ভড়কে গিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলল,”আ..আমার।”
“শেহজাদ আনবীর আরাদ কে?”
“আ..আসলেই..”
সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে তাকালো আরমান।
“বলুন।”
“আসলেই..”
আরমান তাকিয়ে রইলো।
“পরিচিত।”
“এতোরাতে কল দিলো কেন? ম্যানার্স নেই?”
“আমিও বুঝতে পারছি না।”
আরমানের বিশ্বাস হলো না। শশীপ্রভা কিছু লুকাচ্ছে! বিয়ের রাতেই মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক শুরু করতে চাইছে! এই সম্পর্কের শেষ কোথায়?ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,”কথা বলুন।”
“আ..আমার এখন ইচ্ছে করছে না।”
ফোনটা নিয়ে সুইচড অফ করে দিলো। আরমানের মুড নষ্ট হয়ে গেলো। এমনিতেই আজ সে বাসর করতো না। জাস্ট মেয়েটাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলো মেয়েটা কতটুকু প্রস্তুত তার জন্য। তবে এমন কিছু হবে আশা করেনি। শশীপ্রভা বসে রইলো। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। আরাদ বোধহয় তার বিয়ের খবর পেয়ে গেছে। নয়তো এতোরাতে ফোন করবে কেন?টেনশনে অস্থির লাগছে।
“মিথ্যা দিয়ে কোন সম্পর্কের সূচনা করতে নেই।”
“আ..আপনি ভুল বুঝছেন।”
“ঘুমান। সেটা পরে দেখা যাবে।”
তার দাদীমা হাজার বার বলেছে মেয়ের নাকি কোন হারাম সম্পর্ক নেই। কিন্তু এখন এইসব কি হচ্ছে! এতোরাতে একটা ছেলে তার স্ত্রীকে ফোন করছে! আরমান উঠে গেলো। অযু করে তাহাজ্জুদ আদায়ে মন দিলো। বিছানায় বসে শশীপ্রভা তাকিয়ে রইলো। আরমান নামাজ শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ফজরের আযানের জন্য। ভয়ে ভয়ে কদম ফেলে এগিয়ে গেলো শশীপ্রভা। পেছন থেকে বলল,”আপনি আমার উপর রাগ করেছেন?”
“কেন?”
“আসলেই..”
আরমান পিছু ঘুরে তাকালো। শশীপ্রভা ভাবলো আরাদের কথাটা বলে দিবে। আবার ভয় পাচ্ছে যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয় তাহলে? মানুষটা যেই পরিমাণ রাগ দেখাচ্ছে চোখ-মুখ দিয়ে। তাকাতেই তো ভয়ংকর লাগছে! শশীপ্রভার কলিজা শুকিয়ে ওইটুকুন হয়ে আছে। এতো রাগ কেন মানুষটার? মস্ত বড়ো মানুষটা কখন আবার কি করে বসে তার ঠিক নেই। মানুষটার হাতের দাবাং মার্কা একটা থাপ্পড় খেলে ছয়মাস কোমায় থাকবে সে।
“ভণিতা না করে গিয়ে ঘুমান।”
হতাশ হলো শশীপ্রভা। কিছুতেই আরাদের কথাটা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। বুকটা কাঁপছে! ধড়ফড় করছে! কি হবে ফিউচারে?
_________
চলবে।