তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________69

0
580

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________69

দেখতে দেখতে প্রায় তিন’টা মাস পেরিয়ে গেছে । এই তিন মাসে নিদ্রকে অনেক খুজেছে সবাই । কিন্তু কোথাও পায়-নি । পুলিশের কাছে মিসিং রিপোর্ট প্রর্যন্ত করেছে ফরহাদ । কোনো লাভ হয়-নি ৷ আমেনা অনেক ভেঙে পড়েছেন । ফরহাদ নিজেকে যথা সম্ভব শক্ত রেখেছেন । এই মূহুর্তে উনার ভেঙে পরা ঠিক হবে না । নিদ্রর সব বন্ধুরা এখনো খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে নিদ্রর ।” মানুষ হাড়িয়ে গেলে খুজে পাওয়া যায় । কিন্তু কেও যদি নিজে থেকে চলে যায়, তাহলে তাকে খুজে বের করা অনেক মুশকিল “।এদিকে তৃপ্তি আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে । কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলে না । একে বারে চুপচাপ হয়ে গেছে । পড়া লেখা আপাতত অফ আছে । সালমা মেয়ের এমন দশা দেখতে পারছেন না । তার পরিপূর্ণ হাসি খুশি মেয়ে’টা এখন কেমন রোগা টাইপের হয়ে গেছে । চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে । আগের থেকে কেমন যেন আরো শুকিয়ে গেছে । আজ সামিয়া অনেক কষ্টে তৃপ্তিকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে একটা পার্কে । তৃপ্তি তো বাড়ি থেকে বেরতেই চাচ্ছিল না । সালমা জোর করে পাঠিয়েছেন সামিয়ার সাথে । পার্কে পাসা পাসি দু’জন বেঞ্জের উপর বসে আছে । সামিয়া তৃপ্তির ডান পাসে বসা । বেলা ১১টা বাজে । সামিয়া তৃপ্তির ডান হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ।

:+তুই তো ভাইয়াকে ছেরে চলে আসছিস । তাহলে এখন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন ?(সামিয়া)

সামিয়ার কথার জবাবে তৃপ্তি কিছু বললো না । সে চুপ করে সামনে তাকিয়ে পাথরের নেয় বসে রইলো । সামিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললো ।

:+তুই কি এটা ঠিক করছিস । নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস । ভাইয়া,,,,,,,,,,।(সামিয়া)

সামিয়া পুরো কথা শেষ করতে পারলো না । তার আগেই তৃপ্তি চিৎকার করে উঠলো ।

:+আমার এসব আর শুনতে ভালো লাগছে না সামিয়া । সে কেমন মানুষ বল তো । একটা বারো আমার খোঁজ নিলো না । তার নিজের মধ্যে কি বিন্দু মাত্র অপরাধ বোধ কাজ করে না । আমি নাহয় তাকে ছেরে চলে আসছি । কিন্তু সে যদি আমাকে ঠিকই ভালোবাসতো, তাহলে একবার হলেও আমার পিছু আসতো । কৈ এক বারো তো এসে দেখেনি আমি বেচে আছি, নাকি মরে গেছি । আজ তিন মাস পেরিয়ে গেছে সামিয়া । একটা দুই’টা দিন নয় । তিন মাস, মানে ৯০টা দিন । কৈ এক বারের জন্যও তো কল করে একটু খোঁজ নিলো না ।(তৃপ্তি)

কথা গুলে বলে আবার ধপ করে বেঞ্জে বসে পড়লো তৃপ্তি । সামিয়া নিজের বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে দু’বার নিশ্বাস ছারলো । আচমকা এই মেয়ে চিৎকার করে উঠায় ভয় পেয়ে গেছে সামিয়া । আসে পাসে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো সামিয়া । পার্কে থাকা বেশ কয়েক জন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । সামিয়া মাথা সামনে ঘুরিয়ে রিনরিনিয়ে বললো ।

:+এতো জোরে চিৎকার করার কি আছে । একটু ধিরে কথা বলতে পারতি না । আমি তো অল্পের জন্য হার্টেটাক করতাম ।(সামিয়া)

তৃপ্তি দাত কটমট করে তাকালো সামিয়ার দিকে । বিরক্ত লাগছে তার খুব । মাথাটাও কেমন ঝিম ঝিম করছে । অনেক দিন পড় চিৎকার করেছে সে । এজন্য হয়তো ৷ সামিয়া শুকনো ঢোক গিলে তৃপ্তির থেকে চোখ নামিয়ে নিলো । কিছু সময় আবারো চুপচাপ । হঠাৎ তৃপ্তি ডান হাত দিয়ে সামিয়ের বাম হাত থাবা দিয়ে খামছি মেরে ধরলো । সামিয়া চমকে উঠে তাকালো তৃপ্তির দিকে । তৃপ্তি বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে । মুখে তৃপ্তি কোনে মতে বললো ।

:+সামিয়া ব বমি আসছে ।(তৃপ্তি)

:+হোয়াট । এই সময় বমি আসবে কেন । শরীর খারাপ লাগছে । দেখি ওদিকে চল ।(সামিয়া)

এই বলে তৃপ্তিকে বসা থেকে তুলে পার্কের এক পাসে খোলা যায়গায় নিয়ে আসলো সামিয়া । তৃপ্তি মুখের উপর থেকে নিকাব সরিয়ে হড়বড় করে বমি করতে লাগলো । সামিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না । সে দু’হাত দিয়ে তৃপ্তির মাথা চেপে ধরলো । কিছু সময় পর তৃপ্তির বমি বন্ধ হলো । সামিয়া তৃপ্তিকে বসিয়ে রেখে একটা পানির বোতল কিনে আনলো । এরপর তৃপ্তিকে ফ্রেশ হতে বললো । তৃপ্তি মুখ কুলি করে, মুখে একটু পানি দিলো । সামিয়া পাস থেকে বলে উঠলো ।

:+চল আমার সাথে ।(সামিয়া)

তৃপ্তি অবাক দৃষ্টিতে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+এখন কোথায় যাবো । এখন আর কোথাও যাবো না । আমি এখন বাড়িতে যাবো । শরীর’টা কেমন যেন করছে ।(তৃপ্তি)

:+তুই চুপচাপ আমার সাথে চল । একটা কথাও বলবি না । আমার কেন যেন কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছে ।(সামিয়া)

এই বলে সামিয়া তৃপ্তির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো । তৃপ্তিও আর কোনো কথা বললো না । সামিয়ার কথার উপরে এখন সে কিছুই বলতে পারবে না ভালো করেই যানা । পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিলো সামিয়া । সেই রিকশা করে ১০ মিনিট পর একটা হসপিটালের সামনে এসে দাড়ালো তারা । তৃপ্তি অবাক দৃষ্টিতে হসপিটালের দিকে একবার আবার সামিয়ার দিকে একবার তাকালো । সামিয়া তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+রিকশা থেকে নাম । এখানে আমার মামাতো ভাইয়ের বউ আছে । মানে আমার ভাবি । তার সাথে দেখা করতে আসছি ।(সামিয়া)

কথা’টা বলে সামিয়া রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলো । তৃপ্তি রিকশা থেকে নেমে সামিয়ার সাথে হাটা ধরলো । সামিয়া তৃপ্তির হাত ধরে হসপিটালের ভিতরে একটা কেবিনের সামনে এসে দাড়ালো । দরজায় নক করতে, ভিতর থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে এলো ।

:+কামিং ৷(মেয়ে)

সামিয়া তৃপ্তিকে নিয়ে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করলো । মেয়েটি সামিয়াকে দেখে বলে উঠলো ৷

:+আরে সামিয়া কেমন আছো । হঠাৎ এখানে ।(মেয়ে)

:+এই তো রুপা ভাবি ভালো । তুমি কেমন আছো ।(সামিয়া)

:+আমিও ভালে আছি । বসো, দাড়িয়ে আছো কেন ।(রুপা)

রুপার কথা মতো সামিয়া আর তৃপ্তি দু’টো চেয়ার টেনে বসলো । রুপা তৃপ্তির দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । সামিয়া তা দেখে বলে উঠলো ।

:+আরে ভাবি এ আমার বেস্টু তৃপ্তি । আমি যার কথা তোমাকে বলেছিলাম ।(সামিয়া)

:+ওওও । আমি চিনতে পাড়িনি । হ্যালো তৃপ্তি । কেমন আছো ।(রুপা)

তৃপ্তি সামিয়ার দিকে এক পলক তাকালো এরপর রুপার দিকে আবার তাকিয়ে বললো ।

:+ভালো ।(তৃপ্তি)

:+আচ্ছা ভাবি । আমি এখানে যে জন্য আসলাম । আসলে আমার বেস্টু কয়দিন ধরে ঠিক মতো কিছু খেতে পারছে না । আসলে রুচি হচ্ছে না ওর খাওয়ার । আর দিন দিন ও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে । একটু দেখুন না ভাবি ।(সামিয়া)

সামিয়ার কথা শুনে তৃপ্তি চোখ গোল গোল করে সামিয়ার দিকে তাকালো । সে তো ভেবেছিল সামিয়া সুধু রুপার সাথে এমনি দেখা করতে আসছে । কিন্তু এখন দেখছে তাকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে আসছে । তৃপ্তি সামিয়ার থেকে চোখ নামিয়ে বললো ।

:+আমি ঠিক আছি সামিয়া । আমার কিছু হয়নি ।(তৃপ্তি)

:+তুই চুপ থাক, কথা বলবি না একদম ।(সামিয়া)

তৃপ্তির কথা শুনে ধমকে উঠে সামিয়া । তৃপ্তি চুপ মেরে যায় । সামিয়া রুপার দিকে আবার তাকিয়ে বললো ।

:+ভাবি একটু দেখুন প্লিজ । আমাদের আবার তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।(সামিয়া)

:+ঠিক আছে । তুমি বসো আমি দেখছি ।(রুপা)

এই বলে রুপা তৃপ্তির দিকে তাকালো এরপর বললো ।

:+তোমার কেমন লাগে । মানে এখন তুমি কেমন ফিল করছো । সত্যি’টা বলবে । কারন এখানে মিথ্যা বললে তোমার সমস্যা হতে পারে ।(রুপা)

রুপার কথা শুনে, তৃপ্তি এক পলক রুপার দিকে তাকালো । এরপর আবার মাথা নিচু করে বললো ।

:+ঠিক মতো কিছু খেতে পারছি না । যা খেতে যাই, তাই বিরক্তি লাগছে । ভিতর থেকে কেমন বমি আসে খাবার দেখলে । তার উপর কয়েক বার বমিও করেছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা গুলো শুনে । রুপা কেমন করে যেন তাকালো তৃপ্তির দিকে । এরপর আবার সামিয়া দিকে তাকিয়ে রুপা চোখে তৃপ্তিকে ইসারা করে বললো ।

:+ও কি মেরেড । মানে বিবাহিত ।(রুপা)

রুপার কথা শুনে, সামিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না । রুপা সেদিক পাত্তা না দিয়ে, বসা থেকে উঠে তৃপ্তিকে বললো ।

:+তুমি আমার সাথে আসো । আর সামিয়া তুই এখানে বসে থাক ।(রুপা)

এই বলে রুপা হাটা ধরলো । তৃপ্তি কি করবে বুঝতে পারছে না । সামিয়া চোখ গরম করে তৃপ্তির দিকে তাকাতেই তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+আরে ভাই, যাচ্ছি তো ৷ এভাবে তাকানোর কি আছে । আজব ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি বসা থেকে উঠে রুপার পিছু পিছু চলে গেল । সামিয়া বসে বসে তৃপ্তির ফোন চালাতে লাগলো । যেহেতু এখনো তার নিজের ফোন হয়নি । সেহেতু এখন তৃপ্তির ফোনই সে চালাচ্ছে । কিছুখন পর রুপা তৃপ্তিকে নিয়ে আবার কেবিনে আসলো । রুপার মুখ’টা চিন্তিত লাগছে । সামিয়া তা দেখে বললো ।

:+কি হয়েছে ভাবি ।(সামিয়া)

রুপা চেয়ারে বসতেই প্রশ্ন করলো সামিয়া । তৃপ্তি সামিয়ার পাসের চেয়ার টেনে বসলো । রুপা সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+বললি না তো । ওর কি বিয়ে হয়ে গেছে ।(রুপা)

সামিয়া দীীধার মধ্যে পরে গেল কি বলবে । তৃপ্তি সামিয়ার দিকে একবার তাকাচ্ছে । আবার রুপার দিকে তাকাচ্ছে । রুপা দু’হাত টেবিলের উপর তুলে বললো ।

:+ও প্রেগন্যান্ট সামিয়া । প্রায় ২মাসের উপরে হয়েছে ৷(রুপা)

:+হোয়াট ।(সামিয়া)

রুপার কথা শুনে বসা থেকে দাড়িয়ে গেল সামিয়া । তৃপ্তি চোখ বড় বড় করে রুপার দিকে তাকালো । ডান হাত’টা আপনা আপনি পেটে চলে গেছে তার । চোখ দু’টো চিক চিক করছে তৃপ্তির । হয়তো এখনি অশ্রু কনা বেরিয়ে আসবে । ঠিক তাই হলো । চোখ দু’টো দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । তৃপ্তি নিজেও বুঝতে পারছে না তার মধ্যে কি চলছে । সে কি খুশিতে কাদছে, নাকি দুঃখে । সে মাতৃত্বের সাদ নিতে যাচ্ছে । এটা ভেবে তার ভিতর কি চলছে সে বুঝতে পারছে না । অনুভূতি কি ভাবে প্রকাশ করবে সে বুঝতে পারছে না । সামিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল । তৃপ্তি টান দিয়ে সামিয়াকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো । এরপর রুপার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আমার বিয়ের তিন মাস হয়েছে ভাবি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে রুপার মুখে হাসি ফুটলো । এতোখন মেয়ে’টার জন্য টেনশন হচ্ছিল রুপার । আর সামিয়া যেভাবে হোয়াট বলে চিৎকার দিয়ে উঠেছে ।

:+কংগ্রেস তৃপ্তি ৷ আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি । এগুলো নিয়ম করে খাবে । আর এখন থেকে একটু দেখে শুনে চলবে । খাবার খেতে এই সময় মন চাইবে না । কিন্তু তোমাকে জোর করে হলেও খেতে হবে ।(রুপা)

:+ভাবি একটা কথা বলতাম । দুই বার শারিরীক সম্পর্ক হবার পর । কোনো মেয়ে কি প্রেগন্যান্ট হয়ে যেতে পারে ?(সামিয়া)

:+হঠাৎ এমন প্রশ্ন ।(রুপা)

রুপা সামিয়ার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে বললো । সামিয়া থতমত খেয়ে বললো ।

:+আরে ভাবি এমনি বললাম ৷(সামিয়া)

:+হয়েছে । আমি বুঝতে পারছি । ঠিক মতো একবার সম্পর্ক হলেই হয় । এখনো তো বিয়ে করিস-নি, আগে বিয়ে কর । তারপর হাড়ে হাড়ে সব বুঝিয়ে দেবো ননদিনী ।(রুপা)

রুপা সামিয়াকে চোখ মেরে বললো । সামিয়া মাথা নিচু করে নিলো । রুপা মুচকি হেসে উঠলো । এরপর তৃপ্তিকে অনেক ধরনের ট্রিপস দিলো রুপা । একজন গর্ভবতী মায়ের কি কি করনিয়, বেশ কয়েক’টা নিয়ম তৃপ্তিকে বলে দিলো রুপা । তৃপ্তি সুধু চুপচাপ শুনছিল । সামিয়া অবাক দৃষ্টিতে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজিতে উঠে বসলো তৃপ্তি আর সামিয়া । সিএনজি আপন গতিতে চলতে লাগলো ।

:+আমার সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হলো । কিন্তু তুই এখন কি করবি তৃপ্তি । নিদ্র ভাইয়া কি এখন তোকে মেনে নিবে । যদি তোকে ভুল বুঝে ।(সামিয়া)

তৃপ্তি উদাস নয়নে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল । সামিয়ার কথা শুনে বুক কেপে উঠলো তার । পরক্ষণে তৃপ্তি চোখ দু’টো বুজে বললো ।

:+তার মেনে নেওয়াতে আমার আর কিছু আসে যায় না সামিয়া । আমার সন্তানকে, আমি সামলাতে পারবো ।(তৃপ্তি)

:+কি বলছিস এসব তুই । জীবন যত’টা সহজ ভাবছিস ৷ ততটা সহজ না । এই সমাজ একটা অবিবাহিত মেয়ে প্রেগন্যান্ট শুনলে ৷ কি ভাবে তাকাবে বুঝতে পারছিস তুই । আমার কথা শুন তৃপ্তি । চল সামনের সোমবার তোর এবয়েশন করিয়ে ফেলি । আর,,,,,,৷৷৷(সামিয়া)

সামিয়া আর কিছু বলার আগে ঠাসসস করে তৃপ্তি চড় মেরে দিলো সামিয়ার গালে । সামিয়া থমথমি খেয়ে গেল । চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে তৃপ্তির । সামিয়া কিছু বুঝার আগে তৃপ্তি গলা চেপে ধরে বললো ।

:+আমার আর আমার সন্তানের মধ্যে কেও আসবে না । এবয়েশন তো দুরের কথা । যে আমার সন্তানের দিকে নজর দিবে । তাকে আমি খুন করবো । ভুলেও আর এই যঘন্ন জিনিসটার নাম মুখে আনবি না । সে যেভাবেই আমার পেটে আসুক না কেন । আমি কেন তাকে দুনিয়ায় আসতে দেবো না । সে দুনিয়াতে আসবে । হ্যাঁ আমার সন্তান আসবে সামিয়া ৷(তৃপ্তি)

বলতে বলতে সামিয়ার গলা ছেরে দিয়ে, জরিয়ে ধরে কেদে উঠলো তৃপ্তি । মেয়ে’টার ব্যবহার সামিয়া কিছু বুঝতে পারছে না । এই রাগছে তো এই আবার কাদছে । সারা রাস্তা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাটিয়ে দিলো তৃপ্তি । সামিয়া সুধু দু’হাতে জরিয়ে ধরে ছিল তৃপ্তিকে । চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের সামনে এসে সিএনজি দার করালো ড্রাইভার । তৃপ্তি আর সামিয়া সিএনজি থেকে নেমে দারালো । সামিয়া পার্স থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটিয়ে দিলো । বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে করতে তৃপ্তি সামিয়াকে বললো ।

:+আম্মুকে ভুলেও এই বিষয়ে কিছু বলিস না সামিয়া । আমি যানি আম্মু তোকে জিজ্ঞেস করবে । যানার চেষ্টা করবে আমি এমন হয়ে গেছি কেন । বিশাস কর, আজকের পর থেকে আমি ঠিক মতো চলবো । তুই প্লিজ আম্মুকে কিছু বলিস না । তোর আল্লাহ দোহায় লাগে ।(তৃপ্তি)

সামিয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো তৃপ্তি । সামিয়া তৃপ্তিকে সাই দিলো, যে সে কিছু বলবে না । তৃপ্তি মুচকি হেসে সামিয়াকে জরিয়ে ধরলো । এরপর সামিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ।

:+সরি বেস্টু তখনকার জন্য । আর এখন বল আম্মুর থেকে কত টাকা নিয়েছিস ৷(তৃপ্তি)

:+মানে ।(সামিয়া)

থতমত খেয়ে বললো সামিয়া । তৃপ্তি আমারো মুচকি হেসে বলে উঠলো ।

:+মানে, আমরা বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে । তুই আমার আম্মুর থেকে কতো টাকা নিয়েছিস ।(তৃপ্তি)

:+ওওও ৷ তার মানে শালী তুই লুকিয়ে দেখেছিস ।(সামিয়া)

:+লুকিয়ে দেখার কি আছে । আমি নিচে নামছিলাম তখন দেখেছি ।(তৃপ্তি)

:+২হাজার দিয়েছেন ।(সামিয়া)

:+এখন আছে কতো ।(তৃপ্তি)

:+সব যায়গায় ভাড়া মিটিয়ে । আর খাওয়া দাওয়ায় মোট ১হাজার গেছে । ডক্টরি বিল দেই-নি । ওটা ফ্রী ছিল ।(সামিয়া)

:+দে বাকি এক হাজার আমাকে ফেরত দে ।(তৃপ্তি)

:+এমন কিপ্টামি করছিস কেন । তুই তো এমন ছিলি না । কোথায় আমি খালা হতে যাচ্ছি । আমাকে মিষ্টি খাওয়াবি । তা না করে উলটো টাকা ফেরত চাচ্ছিস । আমি বাবা এই এক হাজার ফেরত দিচ্ছি না । এই ফাস্ট খালা হতে যাচ্ছি । ফিল’টা অন্য রকম হচ্ছে ।(সামিয়া)

:+তোকে তো,,,,,,।(তৃপ্তি)

তৃপ্তি কিছু বুঝে উঠার আগে । সামিয়া তৃপ্তিকে নিজে থেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিলো । তৃপ্তির শরীর’টা ভালো লাগছে না । হাত পা ভেঙে আসছে । নাহলে এই মেয়ের পিছনে এখনি সে দৌড় দিতো ।

———————————————

রাত প্রায় ১১টা ছুই ছুই…………..
তৃপ্তি বেডের উপর শুয়ে এপাস ওপাস করছে । ঘুম আসছে না তার । কি করে ঘুম আসবে । বিকেলে সামিয়া যেই কথা গুলো বলে গেছে । তাই ভেবে ঘুম হারাম হয়ে গেছে তৃপ্তির ।

:+শুন তৃপ্তি । আমি সব মানলাম । কিন্তু একবার তুই ভাব । তোর সন্তান যদি এই দুনিয়াতে আসে । তাহলে ওকে কার পরিচয়ে মানুষ করবি । ওর আব্বু কে হবে । কে নিবে তোর সন্তানের ভার । এটাও মানলাম তুই নিজে তোর সন্তানকে চালাতে পারবি । কিন্তু বুঝার চেষ্টা কর । বাবা ছাড়া একটা সন্তানের জীবন অচল ৷ স্কুলে যখন ওর বাবার পরিচয় চাইবে তখন কি করবি । পাড়া প্রতিবেশীরা যখন ওকে ওর বাবার পরিচয় চাইবে, তখন কি করবি । ও তোকে প্রশ্ন করবে । বলবে আম্মু আমার আব্বু কে ? তখন কি করবি তুই । তোর সন্তান অসহায় হয়ে যাবে তৃপ্তি ।(সামিয়া)

সামিয়ার এই কথা গুলোই ভাবতে ভাবতে মাথা ফেটে যাচ্ছে তৃপ্তির । চট করে শোয়া থেকে উঠে বসলো তৃপ্তি । এরপর নিজের মনের ভিতর নিজে যুদ্ধ করতে লাগলো । একবার ভাবছে নিদ্রকে কল করবে । আরেক বার ভাবছে, না আমি কেন কল করবো । ও নিজে কল করবে । কিন্তু শেষে তৃপ্তি নিজেই হার মানলো ।

:+না,,,,আমার সন্তান অসহায় হবে না ৷ তারও আব্বু থাকবে । আমার ফোন ।(তৃপ্তি)

“আমার ফোন” আমার ফোন” করতে করতে ফোন খুজতে লাগলো তৃপ্তি । এরপর ফোন’টা খুজে হাতে নিয়ে পুরোনো সিম লাগালো । অতঃপর নিদ্রর নাম্বারে কল দিলো । কিন্তু কল যাচ্ছে না । কারন দীর্ঘ তিন মাস ফোন থেকে সিম খুলে রেখে দেওয়ায় সিমটা বন্ধ হয়ে গেছে । তৃপ্তি জোরে নিশ্বাস ছেরে নতুন সিমে নাম্বার তুলে ফোন দিলো । সাথে সাথে ভেসে এলো একটা মেয়ের কন্ঠ ।;”আপনার ডায়াল কিত নাম্বারটি এই মূহুর্তে বন্ধ আছে ।” পুরো’টা শুনার আগেই খট করে কল কেটে দিলো তৃপ্তি । সিরিয়াস মুহুর্তে এই রকম কথা শুনে গা জ্বলে উঠলো তার । আবার কল করলো । আবারো একই কথা । এভাবে বেশ কয়েক বার ফোন দিলো তৃপ্তি । কিন্তু প্রতি বারই সিম কোম্পানির মেয়ে’টা ফোন বন্ধ বলছে । তৃপ্তির এবার কান্না পেয়ে গেল । চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কল করছে তৃপ্তি । কিন্তু কল যাচ্ছেই না । বার বার বন্ধ বলছে । শেষ ফোন’টা ছুরে বেডের এক পাসে ফেলে দিলো তৃপ্তি । এরপর নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো ।

:+তোর আব্বুর কি একটুও ভালোবাসা ছিল না আমার জন্য । সুধুই কি তার দেহের চাহিদা ছিলাম । কেন আমার সাথে এমন হলো । কিন্তু তার ফোন তো কখনো অফ থাকে না । তাহলে এখন অফ কেন । আমার বুক’টা ফেটে যাচ্ছে বাবা । এখন আমি কি করবো ।(তৃপ্তি)

কথা গুলো বলে হু হু করে কেদে উঠলো তৃপ্তি ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here