সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁 #পর্ব~২ #লেখনীতেঃsuraiya rafa

0
51

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্ব~২
#লেখনীতেঃsuraiya rafa
[প্রাপ্ত মনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

বসন্তের সকাল,চারিদিকে মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাসন্তিক হাওয়া বইছে, কতইবা বেজেছে দশটা কি এগারোটা তবুও মাথার উপর চলছে সূর্য্যের তান্ডব নৃত্য। শীত যাবে যাবে করে এখনো যায়নি, তার আগেই সূয্যি মামা তার প্রখরতা দিয়ে ধরনী উত্তপ্ত করে দিয়েছে।
সূর্য্যের তীর্যক রশ্মিকে পিঠে পিছলে দিয়ে একপ্রকার ছুটে বটতলার ছায়ার নিচে এসে দাঁড়ালো তিথি।
ওখানে অরু আর নীলিমা ওও ছিল।

–কিরে এভাবে ছুটে এলি কেন? কিছু হয়েছে?
তারস্বরে জিজ্ঞেস করে নিলীমা।

অরু ও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অরুর ভার্সিটি জয়েন করার পরে পুরো বাংলা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে এই দুটোই বন্ধু জুটেছে ওর, তার মধ্যে ওই ইন্ট্রোভার্ট, নীলিমা যাও মোটামুটি একটু চুপচাপ থাকে, কিন্তু তিথী মোটেই চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে নয়, ভার্সিটির সব থেকে গড়ম খবরটা ওর কাছ থেকেই পায় অরুরা,হোক সেটা গসিপ কিংবা কোনো ইম্পর্টেন্ট নিউজ। এছাড়া ডিপার্টমেন্টের অন্য ব্যাচমেটদের সাথে অরুর মুখ চেনাচিনি আছে কিনা সন্দেহ,কিভাবেই বা থাকবে ভার্সিটি জীবন নড়বড়ে ওর,এটেনডেন্স এর জন্যও পর্যন্ত ভার্সিটি আসতে দেয়না অনু, তবুও আপার বকুনি ঝকুনি খেয়ে মাসের মধ্যে দু’একটাবার পা রাখে ভার্সিটির চত্বরে। যদিও সেটা পড়াশোনার জন্য নয়,বরং পছন্দের শ্যাম পুরুষকে একটা নজর দেখার আশায়, সবার আড়ালে তার মুখখানা হৃদমাঝারে স্ক্যান করে নিলেই শান্তি ওর।

নীলিমার কথার প্রতিউত্তরে
তিথি হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

— পানি দে দোস্ত, তারপর সব বলছি।

নীলিমা ব্যাগ থেকে পানি এগিয়ে দিলে ঢকঢক করে পানি পান করে দম নেয় তিথি,

–আহ এতোক্ষণে প্রানটা ঠান্ডা হলো।

— কি হয়েছে বললি নাতো? আবারও জিজ্ঞেস করে অরু।

তিথি এগিয়ে গিয়ে অরুর হাত ধরে বলে,
— ওহ,হ্যা তোর কাছেই আসছিলাম অরু, কাল ভার্সিটিতে কেন এলিনা বলতো??তাহলেই তো তো সব জানতে পারতি।

— কি হয়েছে একটু খুলে বল? তাছাড়া কেন আসিনি সেটাতো তুই জানিসই,তাহলে নতুন করে কেন প্রশ্ন করছিস তিথি?

— কাল নিখিল ভাইদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল নিখিল ভাই সেরা ছাত্রত্বের পুরষ্কার পেয়েছে।

নীলিমা সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
— ওহ এটাতো ভালো কথা।

–তারপর আরও একটা ঘোষণা হয়, আমি পরে সিনিয়রদের থেকে জেনেছি,

অরু সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
–কি?

–নিখিল ভাই মাস্টার্স করবে না, উনি হায়ার স্টাডিসের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছে, খুব শীঘ্রই ইউ এস এ চলে যাবে।

অরু চমকায় না, কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও করেনা, অসস্থির লেস মাত্র নেই ওর মুখশ্রীতে। খুশি থাকার একমাত্র কারনটা হারিয়ে যাচ্ছে ও কি আদোও ঠিক আছে?? ওর ভেতরে যে অস্থির ঝড়োহাওয়া শুরু হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে হৃদয়টা শক্ত করে খাঁ’মচে ধরেছে কেউ, গলাটা শুকনো কাঠে পরিনত হয়েছে,তবুও থমথমে মুখে ছোট্ট করে অরু জবাব দেয়,
–ওহ

এটুকু শব্দ উচ্চারণে অরুর অ’গ্নিস্ফুলিংঙ্গ উগরে দেওয়ার মতো কষ্ট হলো। তবুও বান্ধবীদের সামনে মুখের মিথ্যে হাসিটা ঠিকই ধরে রাখলো,কারণ আর যাই হোক একপাক্ষিক ভালোবাসা কিংবা আধুনিক শব্দে বলতে গেলে ক্রাশ কে হারানোর জন্য কা’ন্নাকা’টি করে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা সবাইকে বলে বলে সিমপ্যাথী কুড়ানোর মতো আত্মসম্মানহীন মেয়ে অরু নয়।

এমনিতেই ওর মায়ের অসুস্থতা নিয়ে অনেকেই করুনা দেখাতে আসে, যা ওর শরীরে জ্ব’লন ধরিয়ে দেয়, অরুর করুনা মোটেই পছন্দ নয়, তবে নিজ অধিকারের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক ও। যা ওর সেটা ওরই।
কিন্তু নিখিল ভাই? সেতো তো ওর নয়, কোনো কালে ছিলোও না। ওই কেবল একতরফা ভালোবেসে গিয়েছে,নিখিল ভাইতো ওকে ছোট বোন ছাড়া কিছুই ভাবেনা, শুধু ওকে কেন ছাত্র নেতা হিসেবে সব জুনিয়র মেয়েরাই তার ছোটো বোনের সমতুল্য, অরু আলাদা করে তো কিছুই নয়।

— ক্যাম্পাসের দিকে দেখ নিখল ভাই আসছে।

তিথির কথায় অরুর দিবাস্বপ্নে ভাটি পরে, তরিৎ গতিতে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে বেরিয়ে দেখতে পায় ক্যাম্পাস থেকে গেইটের দিকেই এগিয়ে আসছে নিখিল ভাই, কালো ডেনিমের সাথে নীল পাঞ্জাবীতে কি সুন্দর লাগছে তাকে, কাধে ঝুলে আছে ল্যাপটপের ব্যাগ,কানে হেটফোন।

সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে তিথি বলে,
–কি এতো গান শোনেন উনি??

কাঠফাটা রোদে উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারাটা জলজল করছে তার, মুখে লেগে আছে সেই সুন্দর হাসিটা। অরু চোখ বন্ধ করে বলতে পারে এই ইনোসেন্ট দেখতে ছেলেটার প্রেমে পরে যাওয়া কোন মেয়ের জন্য চুটকির ব্যাপার মাত্র।
********************************

নিখিল ভাই ওদের সামনে আসতেই সবাই একযোগে সালাম দিলো তাকে, সিনিয়র বলে কথা। সালামের জবাব দিতে নিখিল ও একটু থামলো, সামনে না গিয়ে ওদের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।

নিখিল ভাই ওদের দিকে আসছে দেখে অরু নীলিমার পেছনে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়ালো।
কেঁ’টে ফেলা ডগার ন্যায় কেমন নেতিয়ে পরেছে ওর শরীরটা।

–আরে অরোরা না??

নিখিল ভাইয়ের আকষ্মিক সম্মোধনে ধরা পরে যাওয়া চোরের ন্যায় হুরমুর করে সামনে তাকায় অরু। হ্যা সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
–জজি ভাইয়া।

–ভালো আছো তো? এখন আর রাস্তা পার হতে ভয় নেই তো??

কি সুন্দর অমায়িক কথার ধরন, আরও একবার হোঁচট খায় অরু।

— নিখিল ভাই কিছু জিজ্ঞেস করছে অরু, উত্তর দে.. তিথির ধা’ক্কায় সম্মতি ফিরে পেলো অরু।

তারপর হ্যা না দুদিকেই মাথা নাড়াতে থাকে, আসলে কি করবে কি বলবে ও কিছুই ঠাহর করতে পারছে না,

ওর অবস্থা দেখে নীলিমা তিথি দুজনই অবাক যে মেয়ে কাঠকাঠ কথার জবাব দিতে ছাড়েনা সে কিনা ভেজা বিড়ালের মতো আচরণ করছে।

জুনিয়ররা সঙ্কোচ বোধ করছে দেখে নিখিল আর দাড়ায় না, সকল কে বিদায় জানিয়ে তারাহুরো করে যায়গা ত্যাগ করে।

নিখিল চলে যেতেই নীলিমা তেঁতিয়ে ওঠে,
— স্টুপিড একটা, এটাই শেষ সুযোগ ছিল, নিখিল ভাই নিজে এসেছিল, আর তুই কি করলি?? হাবলার মতো উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম মাথা ঝাঁকিয়ে গেলি?

অরু জবাব দেয়না, এই মূহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে, গলাটা নিম পাতার মতো তেঁতো হয়ে এসেছে। চারিদিক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হয়তো প্রেশার ফল করেছে। কয়েকবার চোখের পলক ফেলে, অস্ফুটেই অরু বলে,

— ভাল্লাগছে না বাসায় যাবো, আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দে’না তিথি।

— চলে যাবি মানে এটেনডেন্সটা এটলিস্ট দিয়ে যা।

নীলিমার কথায় অরুর ভেতরের তেঁতো ভাবটা বেরিয়ে এলো, মাথাটা ঝাঁঝিয়ে উঠলো, অরু চটে গিয়ে বললো,

— বলেছি তো বাসায় যাবো।

***************************************
শরীর আর মনের একরাশ অসুখ নিয়ে টলতে টলতে ক্রীতিক কুঞ্জে এসে পৌঁছেছে অরু।

বিশাল সদরদরজা ঝনঝন আওয়াজ করে খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরও বিরক্ত হয়ে যায় ও।

মামা, মামি আর একমাত্র মামাতো ভাই রেজওয়ান ওরফে রেজা এসেছে।

অরু আর অনুর জীবনের এতো এতো ঝামেলার মধ্যে উটকো ঝামেলা এই পরিবারটা। কথা নেই বার্তা নেই যখন তখন এসে হাজির।আসবে তো আসবে একটা না একটা ঝামেলা পাঁকিয়ে তারপর বিদেয় হবে।

আজমেরী শেখ যখন সুস্থ সবল ছিলেন তখন দিন রাত আগমন ঘটতো এদের, তিন বেলা ফ্রিতে রাজকীয় খাবার আর মহলের নরম গদিতে আরাম আয়েশ করে একটানা দশদিনও কাটিয়ে দিতো। বাড়ি যাওয়ার নাম গন্ধ পর্যন্ত নিতো না।
অরুর মামাতো ভাই রেজা এলাকার পাতি মা’স্তান, যার দরুন তার ছেলে পেলেদের ও নিয়ে আসতো একমাত্র ফুফুর আলীসান বাড়িতে।

অরু আর অনু এসবে বেশ লজ্জিত হতো যত যাই হোক তাদের তো এভাবে আরেকজনার অন্ন ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই। একমাত্র ভাই, ভাবী বলে আজমেরী শেখ তেমন কিছুই বলতেন না।
অনু,অরু একটু গাইগুই করলে ওদের কেও চোখ পাঁ’কাতেন আড়ালে।

সবকিছু এভাবেই চলছিল, কিন্তু আজমেরী হক একেবারে বিছানা সজ্জায় চলে গেলে মামা মামির আসল রূপ দেখতে পায় অরুরা।

আপন বোনকে দেখা তো দুরে থাক গত একবছরে হাসপাতালের গন্ডি অবধি মারায়নি ওদের মামা,
বরং দু’দিন পরপর বউ ছেলেকে নিয়ে এবাড়িতে এসে অনুকে মানসিক অশা’ন্তিতে ভুগিয়েছে দিনরাত। তাদের কথা একটাই,
— বাবা নেই, মায়েরও ও গ্যারান্টি নেই, আজবাদে কাল মায়ের কিছু হয়ে গেলে ওদের দু বোনের কি হবে? আজ বা কাল এ বাড়ির ছোট সাহেব ঠিকই ফিরবে, তখন তো দুই বোনের কোনো গতি থাকবে না, তাই এখনই যদি তার একমাত্র সুযোগ্যপুত্র রেজার সাথে অনুর বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে একটা কুল তো হবে,আর যাই হোক নদীতে তো আর ভেসে যেতে হবে না।

অরু বুঝে পায়না এতোবড় দুনিয়া থাকতে ওরা নদীতে কেন ভেসে যাবে, কি অপ’রাধ ওদের?

অনুর রাগের ঘট এমনিই পরিপূর্ণ, এসব শুনলে আরও বেশি মাথা খারাপ হয়ে যায়, চে’চামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে সে, বিপরীতে মামির গা জালানো কথাতো আছেই। এককথায় এরা বাড়িতে পা রাখা মানেই ঝামেলা আর অশা’ন্তি।
**************************************
অরু হলরুমের চারদিকে চোখ বুলায়, অনু কোথাও নেই,
— তারমানে আপা এখনো হসপিটালে যাক ভালোই হলো।

ওর মামি ডাইনিং এ বসে আঙুর চিবুচ্ছে, রেজা কাঁউচে বসে পায়ে পা তুলে টিভি দেখছে।মামা আপাতত আসেপাশে নেই।

অরু সবটাই দেখলো, তারপর না দেখার ভান করে দোতলায় পা বাড়ালো।
দুটো সিঁড়ি মারাতেই পেছন থেকে ডাক পরলো মামির,

— কিরে দেখলি আমরা এখানে বসে আছি তাও ঢ্যাং ঢ্যাং করে উপরে চলে যাচ্ছিস।মামিকে চোখে পরেনা নাকি? আর আমার বউমা কোথায়?

অরু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, এটারই ভয় পাচ্ছিলো ও। অনেক প্রশ্ন করেছে মামি, এক কথায় উত্তর দিতে হবে কি বলা যায়??

— অরু পেছনে ফিরে বললো,মাথা ব্যাথা করছে মামি, একটু ঘুমাবো, আর আপা হসপিটালে মায়ের কাছে।

— করে’নে, করে’নে, আরাম আয়েশ যা পারিস করে’নে, আজ বাদে কাল বাড়ির মালিক ফিরলে তোদের তো ঘা’র ধরে বের করে দেবে, অনুটাকে কতোবার বুঝিয়েছি এ কথা,কতোবার বলেছি আমার রেজার সাথে বিয়েটা দিয়ে দেই,কিন্তু মেয়েটা বড্ড বে’য়াদব হয়েছে,বড়দের মুখে মুখে ত’র্ক করে। বাবা মায়ের শাসন না থাকলে এই হয়।

মামির কথায় অরুর নেতিয়ে পরা রাগটা আবারও তরতর করে ঝাঁঝিয়ে উঠলো। তীক্ষ্ণ সু’চেঁর মতো কথা গুলো গিয়ে শরীরে বিধ’লো, ও পেছনে না ঘুরেই বললো, –তুমি যে নরম চেয়ারে বসে আঙুর চিবুচ্ছো, ওটাও কিন্তু এবাড়ির ছোট সাহেবের টাকা দিয়েই কেনা মামি।

তাছাড়া জামশেদ জায়ান চৌধুরীর অবর্তমানে আমার মা’ই কিন্তু জেকে গ্রুপের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।

ওর কথায় একটা তাছ্যিল্যের হাসি খেলে গেলো অরুর মামির মুখে,মনে মনে বললেন, এইটুকুনি মেয়ে ভালোই খই ফুটেছে মুখে।তারপর শ’ত্রুকে পাল্টা তী’র নি’ক্ষেপ করার মতো করে বললেন,

— হতে পারে তোর মায়ের অধিকার আছে,কিন্তু তোদের দু’বোনের তো কোনো অধিকার নেই, তোরা হলি কচুরিপানা।তাছারা তোদের মায়ের আর কদিন, বড় জোর হলে ছয়মাস।

— মামি, অনেক বেশি বেশি বলে ফেলছো এবার, আমাদের মায়ের কিচ্ছু হবেনা।মাকে আমরা বিদেশে নিয়ে যাবো।

আবারও সেই গা জালানো হাসি ছুড়লেন অরুর মামি, বললেন,
–তোর কি মনে হয়?? জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী বা তার কোম্পানি তোদের নেওয়ার জন্য বসে আছে? শুনেছি তোর জন্যই নাকি বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে।

মামির সাথে আর ত’র্কে পেরে উঠলো না অরু, দুশ্চি’ন্তাগ্রস্থ জটলা পাকানো মস্তিস্কটা আর চাপ নিচে পারছে না, হাত পা থরথর করে কাঁপছে। এই মূহুর্তে গলা থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না, মামি যে এতো নোং’রা ভাবে ওকে আ’ক্র’মন করবে ভাবতে পারেনি অরু।
ও সামনের দিকে আরও একবার চোখ বোলালো কয়েকজোড়া আ’ক্রমণা”ত্নক চোখ। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ওকে ভ’স্ম করে দেবে এরা। ওও আর এক মূহুর্তেওও হল রুমে দাড়ালো না সিরি ডিঙিয়ে দোতলায় নিজের রুমে গিয়ে সপাটে দরজা আটকে দিলো।
*****************************
ভেতরটা ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে, অসহায়ত্ব চারিদিক জংলা আবরণের মতো ঘীরে ধরেছে। মামির তর্কের আ’ঘাতে নিখিল ভাই চলে যাওয়ার কষ্টটা যেন নুন ম’রিচের ছিঁ’টা।
আর ভালো লাগছে না, নীলিমা আর তিথির মতো জীবনটা সাভাবিক কেন হলো না ভাবছে অরু। কেন ওর জীবনে এতো দায়বদ্ধতা? কেন নিখিল ভাইয়ের প্রতি ভালো লাগাটা নিজের মাঝে খুব সহজে তুলে ধরতে পারলো না ও।?এটা কি শুধুই অন্তর্মুখী হওয়ার দরুন, নাকি পরিবারের টানাপোড়েন আর দায়বদ্ধতা।

নিখিলের চলে যাওয়া ভাবতে ভাবতে অরুর মনে পরে যায় নিখিলের সাথে প্রথম দিনের সাক্ষাৎের কথা,
এইতো কয়েকমাস আগের কথা,

ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য এসেছে অরু, মায়ের অসুস্থতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অতোবড় বিদ্যাপিঠে পড়ার সুযোগ হয়নি অরুর। মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে যতটুকু পেরেছে তাতেই গুচ্ছতে সুযোগ হয়েছে।
আজ কাগজ পত্র নিয়ে এসেছে সবটা জমা দিতে হবে তাই,
শীতের সকাল, ঠান্ডাটা পুরোপুরি জেঁকে না বসলেও মিষ্টি রোদের মৃদু আলোতে ভালোই আরাম লাগছে। সকাল হতেই অফিসগামী সারিসারি গাড়ির বহর ছুটেছে রাস্তা জুড়ে, ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা হলেও একাএকা রাস্তাঘাট পার হওয়ার অভ্যাস নেই অরুর। সেই দরুন তখন থেকে ভার্সিটির রাস্তার বিপরীতে অসহায়ের মতো দাড়িয়ে আছে সে। কখন রাস্তাটা একটু ফাঁকা হবে আর ও দৌড়ে রাস্তা পার হবে। অনেকে তো গাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়েই চলে যাচ্ছে কিন্তু অরুর সাহস হচ্ছে না। এক পা এগোচ্ছে তো দু পা পিছাচ্ছে।

এভাবেই লেফ্ট রাইট চলতে থাকলো প্রায় আধঘন্টা, অরু বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। এরকম হলে প্রতিদিন ভার্সিটিতে আসবে কি করে সে??

–ভয় লাগছে??

পেছন থেকে তী’রের ফলার মতো ছুটে আসা পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে পেছনে ঘুরলো অরু। দেখলো মুখে টোল পরা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে ওকেই প্রশ্ন করেছে লোকটা।

অরু থ মেরে আছে, হা না কিছুই বলছে না, কি করে বলবে ও তো হাসিতেই কুপোকাত।

লোকটা পাশ থেকে কাউকে ডেকে উঠল,

–এই অন্তু ওকে রাস্তাটা পার করে দে’তো।

পেছন থেকে ছেলেটা বললো,

— জ্বি ভাই দিচ্ছি।

ব্যাস তখনই ছিল ভালোলাগার শুরু।অরু বুঝেছিল এই লোকের ভার্সিটিতে বিশাল জনপ্রিয়তা।
তারপর থেকে শুরু হয় অরুর লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষন, উদাসীন দুপুরে, কিংবা ম’রচে যাওয়া বিকালে ক্যাম্পাসের এথায় সেথায় তাকেই খুজে বেড়াতো চোখ দুটো। এক নজর দেখা হয়ে গেলে খুশিতে পুলকিত হতো মনটা, ঝিলিক দিয়ে উঠলো মুখের কোনে মিষ্টি হাসি।যা এখনো চলমান……

কখনো সামনে দাড়িয়ে কথা বলা হয়নি,অরু এও জানেনা নিখিল তার নামটা জানলো কি করে? তবে নিখিলের বায়োডাটা সবই অরুর জানা বলতে গেলে মুখস্থ।
কিন্তু আপসোস এখন এসব কোনো কাজেই আসবে না, নিখিল ভাই চলে যাবে, হাজার কিলোমিটার দুরে হবে তার ঠাঁই, সাইন্সল্যাবের ক্যা’মিক্যাল আর এক্সপেরিমেন্টের মাঝে অরোরা নামটাই হয়তো ভুলে যাবে ওর সবচেয়ে প্রিয় নিখিল ভাই আর কখনো দেখা হবে কিনা তারও গ্যারান্টি নেই। ভাবতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে তপ্ত নোনা জল গড়িয়ে পরে অরুর।

“তুমি যদি আমার না হও, তবে সুখের অসুখ তোমাকে জ্বা’লিয়ে পু:ড়িয়ে ছা’রখার করে দিক”

বোকা অরু তখনও জানতো না ওর জন্য কেউ এর থেকেও বি’ষা’ক্ত ভালোবাসা নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
*******************************
চলবে…….

প্রথম দিকে তাই বর্ননা একটু বেশি।
ভালো লাগলে কমেন্ট করবে, নয়তো উৎসাহ হারাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here