#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-১১|
ধারা একেবারে রেডি হয়ে নিজের ঘর থেকে বের হয়। বাড়ির উঠানে ধারার বড় ভাইয়া আর ছোট ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আজ থেকে ধারার জেএসসি পরীক্ষা শুরু। দুই ভাই একসাথে ধারা কে এগিয়ে গিয়ে আসবে বলে মনস্থির করেছে। ধারাও খুশি মনে তার দুই ভাইয়ের সাথে যেতে রাজি হয়েছে। ওদিকে জান্নাতকে ও ওর বাবা পরিক্ষার হলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। ধারা একে একে সবাইকে কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় দুই ভাইকে সাথে নিয়ে। যাওয়ার পথে হাজারো উপদেশ দুই ভাইয়ের। এটা করবি না, ওটা করবি না। ধারা হাসি মুখে দুই ভাইয়ের সব উপদেশমূলক কথাবার্তা মন দিয়ে শুনছে। ধারা পরিক্ষার হলের এসে দুই ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আর কোনো উপদেশ বাকি আছে তোমাদের? না হলে আমি এবার যাই।’
অভি চিন্তিত গলায় বলল,
‘ দেখ বোন আমার আমি বারবার বলছি লেখা শেষ করেই পেপার জমা দিয়ে দিবি না। অনন্ত দুই বার পুরো পেপার টা ভালো করে পড়বি। প্রথম বার পড়ার সময় ভুলত্রুটি করলেও তেমন একটা চোখে তখন পড়বে না, দ্বিতীয় বার পড়ার সময় একটু মন দিয়ে পড়বি। আর…
অভির কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ধারা মৃদু হেসে বলল,
‘ আর পেপারে লেখার পড়ে ভুল হলে বেশি কাটাছেঁড়া করবো না। হাতের লেখা সুন্দর করে লেখার চেষ্টা করবো। আর আমি অযথা চিন্তা করবো না তাই তো!
ধারার কথা শুনে অভি আর সম্রাট মৃদু হেসে দেয়। সম্রাট হালকা হেসে বলল,
‘ অভি তোকে আর কথা খরচ করে ওকে জ্ঞান দিতে হবে না। এ হলো আমাদের সবার মুরব্বি, বুঝলি অভি।’
অভি সম্রাটের তালে তাল মিলিয়ে বলল,
‘ তা যা বলেছো ভাইয়া। শোনেন দাদি আম্মা আমি আর ভাইয়া আসার পথে যা যা বলেছি সেই অনুযায়ী পারলে পরিক্ষা টা দিয়েন। আর পরিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই আমি গেটের কাছের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো। আপনি এখন দয়া করে পরিক্ষার হলে যান আর কিছুক্ষণ পরেই ঘন্টা পরে যাবে।’
ধারা ভেংচি দিয়ে পরিক্ষার হল রুমের দিকে চলে যায়। অভি আর সম্রাট ধারার কান্ড দেখে হেসে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।
ধারা আর জান্নাত একসাথে পরিক্ষার হল থেকে বেরিয়ে স্কুল গেটের দিকে আসে। ভাগ্যক্রমে ধারা আর জান্নাত দু’জনে এক হলে পড়েছিলো। স্কুলে গেটের কাছে এসে ধারা রাস্তার ওপারে দেখে অভি দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে হাত নাড়িয়ে ইশারা করছে। ধারা জান্নাতকে কাঁধ থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘ এই দেখ ছোট ভাইয়া রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে আমাদের ডাকছে। চল।’
জান্নাত ঢোক গিলে বলল,
‘ আমি যাবো না তুই যা। আমি রিক্সা করে বাড়ি চলে যেতে পারবো।’
ধারা জান্নাতের কথা না শুনে ওর হাত ধরে বলল,
‘ আরে চল তো। ওদিকে আমার ভাইয়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কালো হয়ে গেলো আর উনি এখানে দাঁড়িয়ে ঢং করছেন।’
এইটুকু বলে ধারা জান্নাতের হাত ধরে টেনে রাস্তার ওপাশে নিয়ে যায়। অভি জান্নাতের দিকে এক নজর তাকায়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। চোখ সরিয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ পরিক্ষা কেমন হয়েছে তোর? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো লিখেছিস তো?’
ধারা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে পরিক্ষা। আর সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে এসেছি।’
অভি ধারার হাতের কাগজগুলো নিজের হাতে নিয়ে বলল,
‘ দেখি একবার প্রশ্ন টা।’
অভি প্রশ্ন পেপার দেখে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কিছু খাবি তোরা না কী বাড়িতে যাবি এখন?’
ধারা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ খাবি কিছু না কী বাড়িতে ফিরবি?’
জান্নাত উত্তর দেওয়া আগে ওদের ক্লাসের অন্য একটা মেয়ে ধারা কে ডাক দিলে ধারা তার কাছে চলে যায়। অভি এক পলক জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ পরিক্ষা কেমন হয়েছে?’
জান্নাত অভির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ ভালো হয়েছে।’
অভি জান্নাতের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ শরীরের এই অবস্থা কেনো? খাওয়া-দাওয়া করো না, না কী?’
জান্নাত ছোট করে বলল,
‘ করি তো।’
অভি শান্ত গলায় বলল,
‘ করি তো, কী করো? আমার তো চোখে কিছু পড়ছে না। কিছুদিন পর মনে হয় তো বাতাসের আগে উরে যাবে। না কী নিজের খেয়াল না রেখে সারাদিন ঐ মিউজিক্যাল ভিডিও নিয়ে পরে থাকো। কোনটা বলো!’
শেষের কথাগুলো অভি ধমকের সুরে বলে। জান্নাত ভয়ে ভয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ পরিক্ষার জন্য বাবা আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিয়েছে। শুধু পরিক্ষার চাপে ব্যস্ত থাকার জন্য নিজের খেয়াল রাখতে পারি না।’
এইটুকু বলে জান্নাত আবার মাথা নিচু করে নেয়। অভি জান্নাতের দিকে তাকায়। ইশ! শুধু শুধু মেয়েটার সাথে রাগারাগী করেছে। পরিক্ষার সময় তো ও নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে পারে না। সেখানে জান্নাতের মত বাচ্চা মেয়ে কীভাবে পারবে? অভি মৃদু স্বরে বলল,
‘ পরিক্ষা বলে কী নিজের খেয়াল রাখা যাবে না! কান খুলে শুনে রাখো এখন থেকে নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করবে, নিজের খেয়াল রাখবে। আর যদি আমার কথার অন্যথা হয়েছে, তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।’
জান্নাত শুধু মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে। অভি ধারার দিকে তাকায়। এখনো ঐ মেয়েগুলোর সাথে কথা বলছে। জান্নাতের দিকে আবারো তাকিয়ে বলল,
‘ কিছু খাবে?’
জান্নাত মাথা তুলে অভির দিকে তাকায়। এই মানুষটাকে জান্নাত কখনো বুঝতে পারে না, এই রাগ করবে তো এই গলে জল হয়ে যাবে। একটু আগে কত রাগারাগী করে এখন আবার জিজ্ঞেস করছে সে কিছু খাবে কী না। জান্নাতকে চুপ থাকতে দেখে অভি আবার বলল,
‘ কিছু কী খাবে?’
জান্নাত ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আগের মত মাথা দুলিয়ে না বলে। অভি কিছুক্ষণ জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশ্বাস ফেলে ধারার দিকে তাকিয়ে একটু উঁচু গলায় বলল,
‘ ধারা আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? বাড়ি ফিরতে হবে তো।’
ধারা এক নজর অভির দিকে তাকিয়ে পরে মেয়েগুলো কে কিছু বলে অভির পাশে এসে বলল,
‘ সরি ভাইয়া দেরি হয়ে গেছে। আসলে ওরা কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারছিলো না তাই আমাকে ডেকেছিলো।’
অভি ছোট করে বলল,
‘ আচ্ছা চল এবার চটপটির দোকানে!’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ আচ্ছা চল, তুই সামনে হাঁটতে থাক। আমি আর জান্নাত আসছি।’
অভি কিছু না বলে সামনে হাঁটতে শুরু করে। ধারা আবার জান্নাতের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘ কী রে কথা বললি ভাইয়ার সাথে?’
জান্নাত মুখ গোমড়া করে বলল,
‘ তুই তখন আমাকে ফেলে ওখান থেকে চলে গেলি কেনো?’
ধারা মৃদু হেসে বলল,
‘ কেনো আবার তোর আর ভাইয়ার কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি প্রথম থেকেই একটা সুযোগ খুঁজছিলাম কখন তোদের একা ফেলে আমি কেটে পড়তে পারি। আমি জানি ভাইয়া কখনো আমার সামনে তোর সাথে মন খুলে কথা বলবে না। তাই এমন করেছি। তা কী কী বলছে ভাইয়া তোকে? তখন তো দেখছিলাম আমি ভাইয়ার মুখের দিকে মাথা তুলে তাকাতেই পারছিস না। কী এমন বলেছিলো রে ভাইয়া।’
জান্নাত রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল,
‘ হারামজাদা তুই ইচ্ছে করে এমন করেছিস? তুই আমাকে বলবি তুই আমার কোন জন্মের শত্রু? সব সময় আমার সাথে এমন করিস তুই। তোর ভাইয়ের কাছে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যাস। তুই দেখে নিস তোর কপালে আমার টার থেকেও একটা হারে বজ্জাত জুটবে।’
জান্নাতের কথা শুনে ধারা ভেংচি কেটে সামনে হাঁটতে শুরু করে।
চলবে….