#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৩৫|
কারো ফিসফিসানি আওয়াজ শুনে চোখ খুলে তাকায় ধারা। কথায় আছে না শয়তানের নাম নিলে শয়তান হাজির হয়ে যায়। আজ দেখি কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। ধারা চোখ পিটপিট করে তাকায় তার দিকে। ইভান আমি চোখে তার দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে কেমন এক অদ্ভুত বাঁকা হাসি। তার ভেজা চুলের কয়েক ফোটা পানি ইতিমধ্যে তার চুল বেয়ে ধারার গালে পড়েছে। ধারা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। ইভানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পায় ধারা তার উদাম পেটে। অন্য হাত পিঠে ছড়িয়ে তাদের স্পর্শ করেছে। ধারা অস্থির গলায় বলল,
‘ ছাড়ুন আমায়। কী করছেন কী, কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
ইভান ধারার কথায় কোন ভাবান্তর দেখালো না। উল্টে ধারার দিকে আরেকটু ঝুঁকে ওর মুখে ফু দিয়ে বলল,
‘ কী গো ফুলটুসি উত্তর দিলে না যে আমার কথার? কোথায় যাচ্ছিলে পাখির মত এমন উড়ে উড়ে?’
ধারা সচেতন চোখে একবার আশেপাশে তাকায়, চোখ সরিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলল,
‘ আগে ছাড়ুন আমায় তারপরে বলছি।’
ইভান ধারা কে সোজা করিয়ে দাঁড় করায়। ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এবার বল কোথায় যাচ্ছিলে তুমি?’
ধারা ছোট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ কোথায় আমার আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম। আম্মা বলল আপনার কিছু লাগে কি না তা গিয়ে একবার দেখে আসতে। তাইতো যাচ্ছিলাম আপনার কাছে। আপনার কিছু লাগবে কিনা তা জানতে। কিন্তু মাঝপথে আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে তো পড়ে যাচ্ছিলাম। কী শক্ত আপনার শরীর, একদম কারেন্টের খাম্বার মত।’
ইভান ধারার দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ কী বললে তুমি আমার শরীর কারেন্টের খাম্বার মত? কোন এঙ্গেল দিয়ে আমাকে কারেন্টের খাম্বার মত লাগে? তুমি জানো আমার এই বডি দেখার জন্য কত মেয়ে ফিদা হয়ে আছে। আর তুমি কিনা আমার সেই বডি কে কারেন্টের খাম্বার সাথে তুলনা করছ?’
ধারা বিড়বিড় করে বলল,
‘ যেই না চেহারা নাম রেখেছে আবার পেয়ারা।’
ইভান চোখ ছোট ছোট করে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বিড়বিড় করে কী বলছো? বাই এনি চান্স তুমি কী আমার নামে গালমন্দ করছো?’
ধারা হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ আরে না না কী বলছেন আপনি এসব? আমার কী আর সে সাধ্য আছে আপনার নামে কিছু বলার।’
ইভান চোখ গোল গোল করে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কিন্তু আমার তো কেমন সন্দেহ সন্দেহ লাগছে।’
ধারা এবার নিজেকে শক্ত করে বলল,
‘ আপনার সন্দেহ লাগুক আর যাই লাগুক এসব নিয়ে আপনি পড়ে গবেষণা করবেন। আপনাকে আমি সেই সকাল থেকে বলছি একটু তাড়াতাড়ি করুন আব্বাজান, চাচা জান, ভাইয়ারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে একসাথে নাস্তা করবে বলে। আর আপনি তো একের পর এক দেরী করেই যাচ্ছেন। চলুন এবার।’
এটুকু বলেন ধারা দুই কদমে এগিয়ে গেলে, পিছন থেকে ইভান ডাক দিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
‘ লিটিল এঞ্জেল।’
ধারা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। এক ফালি রোদের আলো এসে পড়েছে তার মুখে। ঝলমল করে উঠেছে চেহারা। ধারা তাদের দৃষ্টি সংযত করে মৃদু স্বরে বলল,
‘ আমাকে বলছেন? কিন্তু আমার নাম তো লিটিল এঞ্জেল না। আমার নাম তো ধারা।’
ইভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আমি তোমাকে এখন থেকে এই নামেই ডাকবো অভ্যাস করে নাও। ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই যেন অ্যানসার পাই। যাইহোক যার জন্য তোমাকে ডেকেছি, তোমাদের গোসলখানায় আমার পরনের জামা কাপড় আমি ধুয়ে রেখে এসেছি। কোথায় শুকাতে দেবো বুঝতে না পেরে ওখানেই রেখে এসেছি। তুমি ওগুলো রোদে মেলে দিতে পারবে?’
ধারা ধীর গলায় বলল,
‘ আপনি যান। আমি ওগুলো রোদে মেলাতে আসছি।’
ইভান একনজরে ধারার দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চলে যায়। ধারা গিয়ে ইভানে ধুয়ে রাখা জামা কাপড় নিয়ে রোদে মেলে দেয়।
অনেক গল্পগুজবের মাঝ দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই। বাড়ির সবাই তো ইভান কে নিয়ে আহ্লাদে আটখানা। ইভান কি খাবে ইভানের কি ভালো লাগবে। একে একে বাড়িতে মেহমান আসতে শুরু করেছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ইভান ধারার আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বাবা আপনারা কী এখনই আপনাদের দোকান এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবেন?’
ধারার আব্বাজান ইভানের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
‘ কেন বাবা? কোন কিছু প্রয়োজন তোমার?’
ইভান ডান বাম মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ না বাবা, আমার কিছু প্রয়োজন নেই। আসলে আমি এখানে বোর ফিল করছি। তাই বলছি আপনাদের যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমি আপনাদের সাথে দোকানে যেতে পারি?’
ধারার আব্বাজান কিছু বলবে তার আগে ধারার চাচা জান বলল,
‘ আরে না না জামাই, সমস্যা কেনো হবে? তুমি আমাদের সাথে যাবে তা তো খুশির কথা।’
ধারার চাচা জানের কথায় সুর মিলিয়ে সম্রাট মৃদু স্বরে বলল,
‘ হ্যাঁ ইভান তুমি আমাদের সাথে দোকানে চলো, না হয়ে বাড়িতে একা একা তুমি কী করবে। একটু পরে অভি আর হাবিব বাড়ির কাজে লেগে পড়বে। আর আজ আমরা দোকানে বেশিক্ষণ থাকবো না। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো বাড়িতে। তুমি আমাদের সাথে দোকানে যেতে চাইলে রেডি হয়ে নেও।’
ইভান খাবার টেবিল থেকে উঠে সম্রাটের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে ভাইয়া, আমি রেডি হয়ে আসছি।’
ইভান আর দাঁড়ায় না বড় বড় পা ফেলে ধারার ঘরের দিকে যায়। ঘরে এসে সবার আগে নিজের ফোনটা খুঁজে ইভান। ঐ তো ধারার পড়ার টেবিলের উপর আছে। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বাঁকা হাসে ইভান। পরিচিত মানুষ এবং বন্ধুদের অগণিত বার মিসকল আর হাজারো মেসেজ। ইভান সে জানতো এমন কিছু হবে। কাল রাত এমন একটা ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়েছে। আজকে এমন হবে তার ইভান মনে মনে বুঝতে পেরেছিল। ইভান কাউকে কল ব্যাক না করে কারো মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ফোনটা আবার ধারার পড়ার টেবিলের উপর রেখে দেয়। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে গলা পরিষ্কার করে ইভান ধারা কে ডাক দেয়।
ধারা সে তার দাদি আম্মার ঘরে ছিল। সবাই তার সঙ্গে মজা করছে। তার হাতের অনামিকা আঙ্গুলে কালো রঙের পাথরের একটা আংটি। কিন্তু এই আংটি ধারার হাতে কোথা থেকে এসেছে তা ধারা জানে না। অনেকবার মনে করার চেষ্টা করেও কিছুই মনে করতে পারেনি। ধারার এমন কথা শুনে ঘরভর্তি মানুষ হাসাহাসি করছে। পাশের বাড়ির কয়েকজন ভাবি, জোনাকি ভাবি, রুমি ভাবি আরো অনেকে আছে তাদের সঙ্গে। ধারা মুখ গোমরা করে তাদের হাজার বলেও লাভ হয়নি তারা তাদের মত ধারার সঙ্গে মজা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাজখাঁই গলায় ইভান ধারা কে ডাকে। তা শুনে হাসির শব্দ আরো জোরালো হয় তাদের। ধারা কিছু না বুঝে তাদের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকায়। এরমধ্যে ধারার দাদি আম্মা ওদের সবাইকে ধমকের সুরে বলল,
‘ আহ! কী শুরু করলি তোরা? তোদের হেঁয়ালির কথা ও বোঝে না কী?’
এইটুকু বলে ধারার দাদি আম্মা ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তুই যা গিয়ে দেখ নাত জামাই ডাকছে কেনো?’
ধারা মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বিছানা পুরো লন্ডভন্ড হয়েছে। ইভান সে হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে আবার বাজখাঁই গলায় ধারা কে ডাকে। ধারা মিনমিন করে বলল,
‘ ডাকছিলেন আমাকে!’
ইভান ধারার দিকে তাকায়। মুখটা কেমন কাঁচুমাচু হয়ে আছে ধারার। ইভান বড় বড় পা ফেলে ধারার সামনে এসে দাঁড়ায়। পরপরই ধারার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলল,
‘ আমি বাবা আর ভাইয়া সাথে তোমাদের দোকানে যাচ্ছি। দ্রুত ফিরে আসবো। নিজের খেয়াল রেখো।’
কথা শেষ করে ইভান ধারা কে কয়েক সেকেন্ড জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু দিয়ে উঠে বলল,
‘ সাবধানে থেকো।’
ইভান সেটুকু বলে ব্যস্ত পায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর ধারা সে চুমু খাওয়া গালে হাত দিয়ে হা করে ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে….