#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_9
রুহিঃ আমি সবার মত বোকামি করবো না মুগ্ধ! আমি তোমার উপর রাগ করে নিজেকে তোমার থেকে দুরে সরিয়ে রাখবো না!আমি মনে করেছিলাম তোমাকে আর বিরক্ত করবো না কিন্তু না! এখন এই মহূত থেকে আমি তোমাকে আরো বেশি করে জালাবো।আমি বোকাদের মত অভিমান করে তোমাকে হারাতে পারবো না!তবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার মজা তোমাকে বোঝাবো!সেটা রাগ বা অভিমান করে না।কারন আমি একটা কথা বিলিভ করি আর সেটা হলো…
রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন….
–
রুহি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে! কারন মুগ্ধকে আর একবার দেখার সুযোগ মিস করতে চায়না।মুগ্ধ নামাজ শেষ রুহির বাবা আর মুগ্ধর বাবার সাথে কথা বলতে বলতে আসছিলো!মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে দেখে রুহি বারান্দায় দাড়িয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে এমন একটা ভাব করে যেন রুহিকে দেখতেই পায়নি!আর রুহি ওর ফোনে জুম করে এমন ভাবে মুগ্ধর পিক তুলতে থাকে!আর এমন ভাব করে যেন রুহি ফোনে কিছু একটা দেখতে খুব বিজি!মুগ্ধ রুহির চালাকি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ওর মুখের সামনে ওর হাত দেয়!আর এমন ভাব করে যেন ওর মুখে খুব রোদ লাগছে।
–
রুহি চোখ মুখ খিচে মুগ্ধকে গালি দিতে শুরু করলো!আর এত গালি দিলো যে! মুগ্ধ শুনলে এতক্ষণে মুগ্ধর কান বয়রা হয়ে যেত।রুহির এতক্ষণ কষ্ট করে দাড়িয়ে থাকার প্ল্যানটাতে মুগ্ধ এক বালতি পানি ঢেলে মুখে দুষ্ট হাসির রেখা টেনে বাসায় ঢুকে পড়লো।রুহি তাও বেশ কয়রকটা পিক তুলছে! বাট মুগ্ধর মুখ টা ওর হাত দিয়ে ডাকা!রুহি একটা পিক জুম করে মুগ্ধর বুকে একটা আদর দিয়ে লাজুক হাসি দিলো।
–
মুগ্ধ ধূসর কালার শার্ট আর কালো জিন্স পড়ছে!হাতে একটা ওয়াচ চুল গুলোতে জেল দেওয়া।মুগ্ধ রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু রুহির আসার নামই নেই!মুগ্ধ রুহির বাসায় গেল রুহির রুমে ঢুকে দেখে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে! মুগ্ধ রুহির কাছে গিয়ে রুহির হাত থেকে লিপস্টিক নিয়ে ছুঁড়ে মারলো।তারপর টাওয়াল এনে জোর করে রুহির ঠোঁট মুছে দিলো!
রুহিঃআহহ্ লাগছে তো ভাইয়া!এমন খাটাশের মত করছো কেন???লিপস্টিক টা দিতে দাও…
মুগ্ধঃনা লিপস্টিক দিতে হবে না!আমি নিষেধ করছি যেহেতু তাই তুই এসব হাজবিবাজি দিবি না ব্যস!যাওয়ার আগে মার খেতে না চাইলে যা বলছি তাই শোন।
তারপর মুগ্ধ রুহির ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটা চুলের কাটা নিয়ে বললো…
–
মুগ্ধঃচুল ছেড়ে রাখতে হবে না!তারাতারি চুল বেঁধে ফেল!ঝটঝট কর তা না হলে তোকে রেখে আমি চলে যাবো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃকেন আমাকে তো চুল ছাড়াতে ভাল লাগছে ?আমি চুল ছাড়াই রাখবো। চুল বাধবো না…
মুগ্ধঃ ঠাস্! যাওয়ার আগে মারতে চাইছিলাম না তাও না মার তো তুই কথা শুনবি না।ফাজিল মেয়ে একটা (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ আচ্ছা চুল না বাধলে কি হবে??সব কত সুন্দর করে সেজে যাবে শুধু আমি বাদে। (গালে হাত দিয়ে)
মুগ্ধঃআমি যখন তোকে বলছি চুল বাধবি তো চুল বাধবি।আমি যখন বলছি লিপস্টিক দিতে হবে না!তো দিবি না। তবে চাইলে লিপ বাম দিতে পারিস।
–
রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চুল গুলোকে কাটা দিয়ে বাধলো!আর ঠোঁটে লিপবাম দিলো আর চোখে কাজল।তারপর দুজন রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো!মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে কলেজের সামনে এসে দেখে একটা বাস দাঁড়ানো!মুগ্ধকে দেখে সবাই হামলে পড়লো।তারপর সবাই বাসে উঠে বসলো আর বাস ছেড়ে দিলো।রাতে জার্নি টা রুহির খুব পছন্দের আজকে আবার মুগ্ধ আছে সাথে আর কি লাগে??
–
রুহি জানালার পাশে বসে আছে আর রুহির পাশে মুগ্ধ। বাস যাচ্ছে তার আপন গতিতে।বাইরে কত গাড়ি চলাচল কত মানুষ জন রাস্তায়!মাথার উপরে ওই দুর আকাশে বড় একটা থালার মত চাঁদ উঠেছে!জানালার পাশে চাঁদকে দেখে রুহি মুগ্ধ হাত টেনে হাত ধরে টেনে ইশারা করলে চাঁদটাকে দেখতে!মুগ্ধ দেখলো বাট কিছু বললো না।রুহি বললো…
রুহিঃ ভাইয়া চাঁদটা কত সুন্দর তাই না!
মুগ্ধঃ হুমমম।
রুহিঃ চাঁদটাও আমাদের সাথে যাচ্ছে! কত লোভী চাঁদ টা (খিলখিল করে হেসে)
–
রুহি বাসে থাকা সবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছে!তারপর রুহি আবার মুগ্ধকে ডেকে বললো…
–
রুহিঃভাইয়া শোন না..আর একটা কথা
মুগ্ধঃহুমম বল!কোন সমস্যা??
রুহিঃ বাসে যারা আছে তাদের কাউকে দেখে কেন মনে হচ্ছে না তারা ভাই-বোন।
মুগ্ধঃহুমম এখানে কেউ কারো ভাইবোন না! সবাই বফ-গফ!
রুহিঃতাহলে কি আমরাও??? (অনেক খুশি হয়ে)
মুগ্ধঃ বেশি বকবক না করে চুপচাপ বসে থাক!আর আমি তো প্রেম করি না যে আমার কেউ থাকবে!আর পিকনিকে যাওয়ার জন্য সবাইকে দুটো করে টিকিট দেওয়া হয়েছে!তাই তোকে নিয়ে এসেছি! শুধু শুধু টাকা নষ্ট হতো এজন্য…
রুহিঃ ওহহ! (মুখ ভেংচি দিয়ে)
–
মুগ্ধ ওর সিটের হাতল তুলে দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আর রুহি খুব সাবধানে মুগ্ধর পকেটে থেকে ফোন বের করলো! মুগ্ধর ফোন ঘেটে ঘুটে দেখবে তাই! বাট লক দেওয়া!রুহি বেশ কয়েক বার ট্রাই করলো বাট পারলো না লক খুলতে।তাই রেগে মুগ্ধ শার্ট টেনে ধরে বললো।
–
রুহিঃ কি কমা দামের ফোন ইউজ করো তুমি!আমি লক খুলতেই পারছি না।
মুগ্ধঃআমার ফোন কেন তোর হাতে??(ভ্রু কুচকে)
রুহিঃ গেম খেলবো তাই
মুগ্ধঃতোর ফোন কই??তোর ফোন থাকতে আমার ফোন তোকে দিবো কেন??
রুহিঃদাও না ভাইয়া প্লিজ! ফোনে কি এমন জিনিস রাখছো যে আমাকে দিতে চাচ্ছো না।সত্যি করে বলো.. (সন্দেহের চোখে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃথাটিয়ে এক থাপ্পড় দিবো ফালতু কথা বললে।আমি লেইম কিছু ফোনে রাখি না।যে তোকে ফোন দিতে আমার ভয় লাগবে। (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃওহহ! ফোনে রাখো নি বাট অন্য কোথাও তো রাখছো???
মুগ্ধঃআমার রুচি এত লেইম না। এবার বেশি বকলে কিন্ত সত্যি সত্যি সবার সামনে মার খাবি। (রেগে গিয়ে)
রুহিঃ হুমম পারোই তো শুধু বকতে আর মারতে!একটু ভালবাসলে কোন দেশ অশুদ্ধ হয়ে কে জানে(মন খারাপ করে বিরবির করে)
–
মুগ্ধ রুহির থেকে ফোনটা একটু আড়াল করে লক খুলে দিলো! রুহির অনেক চেষ্টা করে বাট দেখতে পারে নি। মুগ্ধ ওর ফোনে লক খুলে রুহির হাতে দিলো!তারপর মুগ্ধ আবার আড্ডা দিতে শুরু করলো।আর রুহি খুব মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মুগ্ধর ফোন চেক করছে!মেসেজ অপশনে গিয়ে শুধু রবি আর গ্রামীন কোম্পানি মেসেজ পেলো!আর গ্যালারিতে গিয়ে মুগ্ধর চোখ বাধানো কিছু পিক পেল!এক ফাইল ঢুকতে গিয়ে দেখলো সেখানেও লক করা।রুহি মুগ্ধর আরেক দফা গালি দিয়ে আবার ফোন দেখার কাজে মনোযোগ দিলো।
–
মুগ্ধ খেয়াল করলো রুহি ওর কাঁধে মাথা দিয়ে আছে!মুগ্ধ রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো রুহি ঘুমিয়ে আছে!মুগ্ধ রুহির হাত থেকে ওর ফোনটা নিয়ে দেখলো রুহি ওর পিক দেখছিলো!মুগ্ধ মুচকি হেসে ওর ফোনটা হাতে নিয়ে পকেটে রাখলো।রুহি ঘুমের মাঝেই মুগ্ধর একটা হাত জড়িয়ে ধরিয়ে ধরলো আর মুগ্ধর কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে! আর মুগ্ধ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে!পাশের সিট থেকে আবির বলে উঠলো…
–
আবিরঃএত ভালবাসিস মুখে বলিস না কেন??
মুগ্ধঃমুখে বললেই কি ভালবাসা হয়। (মুচকি হেসে)
আবিরঃরুহি কিন্তু তুই ছাড়া কিছু বুঝে না।মেয়েটা তোকে খুব ভালবাসে…।
মুগ্ধঃহুমমম! জানিস আমি যদি ওকে বাসায় রেখে আসতাম তো বাসার সবার অবস্থা খারাপ করে দিতো। আমি ছাড়া ওকে কেউ থামাতে পারে না।আর রেগে গেলে তো কোন সেন্সই থাকে না।আমি না থাকলে ও পাগলামি শুরু করতো।আর সত্যি বলতে ওকে সাথে নিয়েছি কারন আমিও ওকে ছাড়া একদম থাকতে পারি না। (রুহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
–
বাসের মধ্যে সব লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!সবাই ঘুমাচ্ছে!মুগ্ধ রুহির কপালে একটা আদর দিয়ে ওদের সিটের মাঝখানে যে হাতলটা ছিলো সেটা তুলে দিলো।মুগ্ধ রুহির থেকে ওর হাতটা সরিয়ে নিলো! তারপর রুহির দিকে চেপে বসে রুহিকে জড়িয়ে ধরলো!আর রুহি এখন মুগ্ধর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে!মুগ্ধ রুহির মাথা বুকে সাথে জড়িয়ে নিয়ে মনে মনে বলছে…
–
মুগ্ধঃপৃথিবীর এর থেকে সুখ আর কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না!তোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলে যে এত শান্তি লাগে আগে জানতাম না তো!এ কোন নতুন অনূভূতির সাথে পরিচয় করে দিলি এখন।আমি দুষ্টু বউটাকে খুব তারাতারি আমার কাছে নিয়ে আসবো। দিন দিন আমি মারাত্মক একটা নেশার মধ্যে ডুবে যাচ্ছি! মুখে যতই বকা দেয় রুড বিহেব করি! আমার মন তে জানে আমি তোকে ঠিক কতটা ভালবাসি। (মনে মনে)
–
মুগ্ধ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো!হুট করে বাসের ঝাকুনিতে রুহির ঘুম ভেঙে যায়!চোখ টিপটিপ করে খুলে যখন দেখলো ও মুগ্ধ বাহুডোরে তখন সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে মুগ্ধকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো!মুগ্ধও মনে করছে রুহি ঘুমের মাঝে ওকে জড়িয়ে ধরছে এজন্য মুগ্ধও ওকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
–
রুহি মনে মনে শুধু একটা কথায় ভাবছে!এখন এই সময় টা যেন এখানেই থেমে যাক!রুহি মুগ্ধের বুকে মাথা রেখে হৃদস্পন্দনের টিপ টিপ আওয়াজ শুনছে।এই প্রথম রুহি মুগ্ধর এত কাছে! রুহি সাবধানতার সাথে মুগ্ধর বুকে আদর দিয়ে দেয়।তারপর মুগ্ধ হৃদস্পন্দন শব্দ শুনতে শুনতে আবার একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
–
সকাল বেলা রুহির ঘুম ভেঙে দেখে ও সিটের হাতল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই বাসে!রুহি হুড়োমুড়িয়ে উঠে বলতে শুরু করলো।
রুহিঃওহ আল্লাহ! সবাই আমাকে রেখে কোথায় চলে গেছে রে!আমি এখন যাবো কি করে?আমি সারাজীবন বাসে থাকতে পারবো না রে! আমি বিয়ে করবো,আমার হালি হালি বাচ্চার শখ। আমারে কেউ বাসায় দিয়ে এসো রে!…..
কথাগুলো বলে রুহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।মুগ্ধ পেছন থেকে এসে কিছু বলার আগেই রুহি ফট করে পেছন ঘুরলো আর মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বললো…
রুহিঃ আমাকে একা রেখে তুমি কোথায় গিয়েছিলে! আমাকে যদি কেউ কিডন্যাপ করতো তখন কি হতো?? (জড়িয়ে ধরে কেঁদে) )
(ভাইয়া তোমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য বাহানা করলাম!কিছু মনে করো না। মন চাচ্ছিলো খুব জড়িয়ে ধরতে তাই তোমাকে আসতে দেখেই কাঁদছিলাম।আমি কিন্তু ইনোসেন্ট কিছু করিনি!শুধু একটু জড়িয়ে ধরছি! কেউ দেখেনি আর কেউ জানবেও না আর যারা দেখছে তারা কিছু বলতেও পারবে না।দুষ্টু হেসে মনে মনে)
To be continue….
(আপনারা কিছু বলবেন না কিন্তু! আর একটা মনে রাখবেন রুহি কিন্তু ইনোসেন্ট… 😂😂😂)