অবৈধ_বিয়ে #Sabriha_Sadi পর্ব : ২৫+২৬

0
519

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২৫+২৬

রাজ তারাতরি করে ঘরে ডুকল।

রানি দৌড়ে রাজের কাছে এলো। সে যেন কি হারানো মহা মূল্যবান জিনিস টা পেয়ে গেল।

– আপনি কোথায় গিয়ে ছিলেন?
-….
– বলুন।

রাজ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে ব্যাগে কাপড় গুছাতে লাগল। রানি তার দিকে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন ছুড়তে লাগল। রাজ একটা টু টা শব্দও করল। চুপচাপ ব্যাগে তার আর রানির কাপড় রাখতে লাগল।

রানি এবার আর সহ্য করতে না পেরে রাগে রাজের হাতটা ধরে নিজের দিকে ফিরাল।

– কি বলছি আমি? কথা কি কানে না ডুকে কানের পাশ দিয়ে যায়? কোথায় চলে গিয়ে ছিলেন না জানিয়ে?
– আমি যেখানেই যাই তাতে তো তোমার কিছুই না। আমি তো তোমার কিছু হই না। আমার সাথে এত দিন কি অভিনয় করলে তুমি?
– না। অভিনয় না। আমি দুটানায় ছিলাম। মুখ বুজে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমি জিততে পারি নি। হেরে গেছি। নিজের কাছে নিজে হেরে গেছি আমি। আমি আর এই দুটানায় থাকতে পারছি না। ভেবে ছিলাম মুখ বুজেই সহ্য করব। আর যে পারছি না আমি।
– রেডি হয়ে নাও। আশা করি আর দুটানায় থাকতে হবে না তোমার।

রাজ আর রানি পাশাপাশি সিটে বসে আছে। একটু পর বাস ছেড়ে দিবে। রাজ মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।

রানি একটু পর পর রাজের দিকে তাকাচ্ছে। আবার জানালার দিকে মুখ ঘুরাচ্ছে। রাজের এমন ব্যবহার টা যেন তার সহ্য হচ্ছে না। কি যেন এক অভাব অনুভব করছে সে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে রানির।

বাস তার নিজের আপন গতিতে চলছে। পাশাপাশি দুটি মানুষ বসে আছে, তবুও যেন অনেকটা দূরত্বে আছে।

একটু পর রানির চোখ মুখ কেমন যেন হয়ে গেল। নিশ্বাস টাও ঘন হয়ে আসছে।

– রানি? খারাপ লাগছে বেশি? কি হয়েছে বলো?
-…..
– রানি। রানি, ঠিক আছো তুমি? কষ্ট লাগছে বেশি? বমি পাচ্ছে কি?

কথাটা শেষ হতে না হতেই রানি জানালার দিকে মুখ দিয়ে বমি করতে লাগল।

রাজ ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলল। রাজ তাকে ধরে গাড়ি থেকে নামাল। পানির বোতলের মুখ টা খুলে নিজেই রানি কে বসিয়ে তার মুখে পানির ছিটে দিল।

রানির চোখ গুলি যেন ফোলে উঠেছে। দেখতেও স্বাভাবিক লাগছে না।

পানির বোতল টা রানির মুখের সামনে ধরল। রানি বোতল টা নিয়ে মুখ পরিষ্কার করে পানি খেয়ে নিল।

রাজ দোকান থেকে একটা বমির টেবলেট নিয়ে এসে রানি কে খায়িয়ে দিল।

– এখন ঠিক লাগছে? বেশি খারাপ লাগলে চলো চলে যাই। কাল না হয়,,,
– না আমি ঠিক আছি। বাসে উঠুন।
– তুমি পারবে তো?
– হুম।
– তাহলে চলো।

রানি রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে কিসের যেন এক চিলতে হাসি। কোন কারণে? রানির মুখে মিষ্টি হাসি। রাজ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

রানি বাসের সাথে ঢুলছে। ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা। রাজ অপলক তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। বাসের সাথে ধেয়ে চলা ল্যাম্পপোস্টের আলো মাঝপ মাঝে তার মুখে চিলিক দিয়ে উঠছে। বেস লাগছে মেয়েটাকে।
আরেকটু হলেই মাথাটা ফাটত মেয়েটার। রাজের কাঁধে মাথা রেখে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে রানি। রাজ রানির মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। মায়াবী লাগছে তার মায়াপরী টা কে। খুব মায়া হয় রাজে এই মায়াবী মুখেটার দিকে তাকালে। রাজ তার মায়াপরীর দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ এক অদ্ভুত মায়াটানা।

সকালে,,
বাস চিটাগাং এসে পৌঁছেছে। রানি সেই যে রাতে ঘুমাল। একটু নড়লও না। রাজের কাঁধে মাথা রেখে দিব্বি ঘুমাল মেয়েটা। আর বেচারা রাজের বেহাল অবস্থা। পাগলের মতো লাগছে। সারাটা রাত রানির জন্যে ঘুমায়নি। রানির যদি কিছু লাগে। তার যদি আবার শরীর খারাপ করে সেই ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাল সে।

– রানি। রানি।
-……
– রানি উঠো। আমরা চলে এসেছি।
– কি?
– রানি উঠো ঘুম থেকে। দেখো আমরা চিটাগাং। উঠো।

রানি চোখ ডলতে ডলতে রাজের দিকে তাকাল।

– এ কি আপনার চুলের এ অবস্থা কেন? চুলে তো আপনি সব সময় জেল দেন। তাহলে এখন এতো রুক্ষ কেন? পাগলের মতো লাগছে কিন্তু আপনাকে।

কথাটা বলেই রানি ফিক করে হেসে দিল। রাজ আশপাশ এক বার তাকিয়ে বলল,
– মজা নিচ্ছো? তোমার কারণেই ঘুমাই নি। এখন তুমিই আমাকে….
বাদ দাও চলো এখন।
– কোথায়?
– তুমি কি বাসে থাকবে নাকি বাসায় যাবে?
– ওও। হ্যাঁ চলুন।
– হুম চলো।

রাজ রানির হাত ধরে বাস থেকে নামল। একটা গাড়ি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

গাড়ির টাকা মিটিয়ে দিয়ে বাসার গেইট দিয়ে ভিতরে ডুকে গেল।

রানি হা করে আছে। এত বড় বাড়ি? সব টা বাড়ি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখতে হলে মাথাটা মনে হয় আকাশে তুলতে হবে। রানি মনে মনে বলছে, “এত বড় বাড়ি বানানোর কি দরকার? আজব। থাকার মতো একটা ভালো জায়গা হলেই তো হয়। শুধু এত বড় বাড়ি বানিয়ে বেমালুম টাকা খরচ।”

– চলো। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– আচ্ছা বাবা এত বড় বাড়ি কেন বানাল?
– শখে।
– শখের বসে এত বড় বাড়ি বানাতে হয়? এমন শখ না হয় নাই করলাম।
– দেখো বাবা ছোট থেকে অনেক কষ্টে বড় হয়েছে। অনেক কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সব করেছে। টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি সব আছে এখন উনার। শহরের বড়লোকের খাতায় উনার নাম টাই হয়তো আগে পাবে।
হয়েছে। ভিতরে গিয়ে কথা হবে চুপ করে চলো।

কলিংবেল বাজিয়ে দুজন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটা বেল বাজাতেই রাজের মা মিসেস মততা চৌধুরী দরজা খুলে দিলেন।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলির দিকে তাকিয়ে উনার চোখ যেন আসমান উঠে গেল।

রাজ কে বুকে জড়িয়ে নিয়েই উনি কেঁদে দিল। রাজ তার মা কে কান্না করতে মানা করছে। কিন্তু মায়ের মন কি আর বাঁধা মানে? উনি কেঁদেই যাচ্ছে।

রাজ কে ছেড়ে উনি রানির দিকে ফিরল। রানি মা কে পায়ে ধরে সালাম করল।

– আলহামদুলিল্লাহ। আমার মেয়ে কে দেখতে তো মাশাল্লা। আল্লাহর দান।

বলেই রানির কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে।

– কই গো? তুমি কোথায় গেলে? দেখো না আমার দুই মানিক এসেছে। দেখে যাও। কোথায় গেলে?

সাদমান চৌধুরী চোখে চশমা দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে মানতে বলল,
– কি এসেছে এত সকালে?

রাজ দৌড়ে গিয়ে নিজের বাবা কে জড়িয়ে ধরল। তার বাবাও হকচকিয়ে গেল। ছেলে যে এটা বুঝার বাকি নেই। রাজ কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।

– কেমন আছো বাবা?
– আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আচ….. আগে বলো বউ মা কোথায়?

– ঔ যে মায়ের কাছে।

রানি সাদমান চৌধুরীর কাছে এসে উনাকে সালাম করল।

– থাক মা। থাক। বেঁচে থাকো। আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো মা?
– বাবা আমাকে কিন্তু তুমি একবারও জিজ্ঞেস করলে না। অথচ ওকে জিজ্ঞেস করছো। ও তো বেশ আমার কাঁধেই ঘুমিয়ে এসেছে।
– চুপ কর। কেন তোর মাও তো কত জার্নি আমার কাঁধে মাথা রেখেই করল।

সাদমান চৌধুরীর এমন কথা শুনে মমতা চৌধুরী বেশ খানিকটা লজ্জা পেলো। ছেলে ছেলের বউের সামনে এমন কথা। লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।

– চুপ করবে তুমি? কতটা রাস্তা এসেছে ওরা।
যাও মা তুমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
– ঠিক আছে মা।

রাজ রানি উপরে উঠতে লাগল। সিঁড়ির মাঝ পথে এসে তারা শুনতে পেল,

– তোমার কি বয়স বাড়ছে না কমছে? বয়স তো কম হয়নি। ছেলে বউয়ের সামনে এসব বলতে লজ্জা করে না?
– যা ব্বাবা। আমি আবার মিথ্যে বললাম কোথায়? ওদেরও তো জানতে হবে, আমরা কেমন ছিলাম। তাহলে তো তারাও আমাদের মতো সুখে থাকতে পারবে। কি বলো মমতা? হাহাহা।

কথাটা শেষ করেই সাদমান চৌধুরী তার অর্ধাঙ্গিনী কে বুকে জড়িয়ে নিল।

রানি এই সব শুনে সিঁড়ির মাঝ পথেই থেমে গেল। কি ভালোবাসা দুজন মানুষের মাঝে। কি বুঝাপড়া। এই বয়সে এসেও যেন তাদের ভালোবাসার কমতি নেই। কিভাবে সুখে জীবন কাটাচ্ছে।

রানির থেমে যাওয়া দেখে রাজ বলল,,

– এমন কাহিনী আরো অনেক শুনবে।
হ্যাঁ। আমার মা বাবা এমনই। আমার বন্ধু। ওদের জন্যে স্কুল কলেজে থাকা কালীন আমার অন্য কোনো বন্ধুর প্রয়োজন পড়ে নি। ওরাই সে অভাব মিটিয়েছে।
ওরা খুব সুখে আছে। ওদের মাঝে ভালোবাসার কোনো কমতি তেই। শুধু উনাদের ছেলে হয়ে আমার কপাল টাই অন্য রকম হলো।

কথাটা বলেই রাজ একটা তাচ্ছিল্য হাসি হাসল। এই হাসিটা যেন রানির বুকে কাঁটার মতো বিঁধলো।

– বাই দ্যা ওয়ে, চলো রুমে যাই।

রুমে ডুকে রানি যেন অবাক। এত বড় ঘর আর থাকে মাত্র একটা লোক?

– এই রুম টা আপনার?
– হ্যাঁ। কেন?
– গুহার মতো লাগছে। এতো বড় কেন?

রাজ এমন অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে। ব্লেজার টা খুলে ওয়াশরুমে ডুকল।

রাজ ভাবতে লাগল, মেয়েটা অদ্ভুত। যেমন অদ্ভুত সে, তেমনই অদ্ভুত তার প্রশ্ন। বাড়ি টা এত বড় কেন? রুম নাকি গুহার মতো, রুম টা এত বড় কেন? এই সব প্রশ্নেরও উত্তর হয়?

রানি আস্তে আস্তে করে রুম টা দেখছে। হাটছে আর দেখছে। একটু এগিয়ে দেখল, বেলকুনি। বেলকুনি টাও মনে হয় একটা ঘর। অনেক বড়। দেখতেও বেশ।

বেলকুনির পাশে একটা ডিভান।

সব কিছুই অনেক সুন্দর। রানি রুমে ডুকল। ব্যাগের কিছু কাপড় নিয়ে আলমারির সামনে গেল।

আলমারি টা খুলতেই যেন রাজের কাপড় এসে মুখে পড়ল।

– আল্লাহ। এই সব কি? আলমারির ভিতরে এ কি অবস্থা করে রেখেছে। মনে হচ্ছে তো কাপড়ের দোকান। একটু ঠিক করেও রাখতে পারল না। কি বুদ্ধিহীন মানুষ। আজব। জঙ্গলি কোথাকার একটা। বাড়িতে না থেকলেও তো পারে। আফ্রিকার জঙ্গলে চলে গেলেই তো পারে। শুধু শুধু শহরে থেকে বিড় জমানো। আজাইরা। গন্ডার লোক একটা।

রানি রাগে কটকট করতে করতে কাপড় গুলি বিছানার উপর রাখল।

চলবে….
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২৬

রাজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল তার প্রাণোসী, বিছানার উপর কাপড় ভাঁজ কারছে। আর বিড়বিড় করছে।

– ঢং দেখলে শরীর জ্বলে। আজাইরা একটা লোক। মানুষ এত নোংরা হয় কি করে। ছিঃ। এমন মানুষ আবার এই বাড়ি তে থাকে? আরে উনাকে তো হা পা ধরে আফ্রিকার জঙ্গলে ফেলে আসা উচিৎ। সেখানেও কি উনার জায়গা হবে? মানে জঙ্গলের জীবজন্তু গুলিও হয়তো পরিষ্কার আছে। উনার মতো হয়তো অপরিষ্কার নয়।
উনি তো গন্ডার একটা। বদমাইশ।

– আমি গন্ডার? বদমাইশ? আমি নোংরা? আমাকে তো আফ্রিকার জঙ্গলে ফেলে আসা উচিৎ তাই না?
– বাহ্। শুনেও ফেললেন? ভালোই হলো। না হয় আপনি নিজেই চলে যান ওখানে। তাহলে হয়তো অন্য কাউকে কষ্ট করে হাতিটা কে ওখানে রেখে দিয়ে আসতে হবে না।
– কে হাতি? আমাকে হাতি বললে তুমি?
-….. (মুখ ভেংচি দিল)

রাজ টাওয়াল টা বিছানার উপর রেখে রানির কাছে গেল।

রানির হাতটা ধরে বসা থেকে দাঁড়া করাল। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই এক হাতে রানির কোমর পেঁচিয়ে ধরল।

রানির শরীর টা যেন ঠান্ডা হাতের স্পর্শে শীতল হয়ে উঠছে। রাজ নিজের মুখটা আস্তে করেই ওর দিকে এগিয়ে নিল।

এভাবেই ছিল অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে। রানি চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে ছিল।

হঠাৎ রাজ রানির নাক টা কে একটু টেনে দিল। রাজের এমন কাজে রানি চোখ মেলে তাকাল।

– কি হলো এটা?
– শুধু নাকটা টান দিলাম। আর কিছু না।
– কেন দিলেন?
– মন চাইল তাই।
– হাতি কোথা কার।
– আরো কিছু করব?
– মা মানে কি?
– হাতি বললে কেন?

রানি ধাক্কা দিয়ে রাজ কে দূরে টেলে দিল।

– আপনি আসলেই একটা হাতি। লাল পিঁপড়া চিনেন? তার থেকেও বাজে লোক আপনি। আপনি তো একটা গন্ডার। রাক্ষস একটা রাক্ষস। আপনি,, আপনি একটা যা তা।

– সকাল সকাল সব কিছু নিয়ে মুড টা ফ্রেশ আছে। তাই ছেড়ে দিলাম। প্লিজজ এই গুলি এখান থেকে নামাও। আমি ঘুমাব।
– ঠিক করবে কে? আপনি? তাহলে আসুন করে ফেলুন।
– পরে করো। আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।
– থাক। আমি করে নিতে পারব। এতো ঢং দেখানোর দরকারই নেই।

রাজ সোফার উপর বসে বসে তার অর্ধাঙ্গিনী কে দেখছে। কি ভাবে সুন্দর করে কাজ করছে। আলমারির কাপড় গুলি যেন নতুন নতুন লাগছে। ঘরটাও বেশ লাগছে। রাজ মুচকি মুচকি হাসছে আর দেখছে।

রাজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা রানির চোখ এড়ায় নি। রানি বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেল।

রাজ মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বিছানার উপর শুয়ে পড়ল।

এদিকে রানি বিজে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলি কে হাত দিয়ে ঝাড়ছে।

ওদিকে রাজের সদ্য ঘুম টা পানির ছিটেয় ভেঙ্গে গেল। চোখ মুখে রানির বিজের চুলের পানি পড়তেই তার কাঁচা ঘুমটা আর পাকা হতে পাড়ল না।

রাজ তাকাতেই চোখে যেন তার ধাঁদিয়ে উঠল। চোখের সামনের মানুষ টা কি আদৌও মানুষ নাকি হুরপরী?
রানি আজ সাদা একটা জামা পড়েছে। সাথে হালকা অরেঞ্জ কালারের মিশ্রণ। জামাটা সব টা সাদা ধপধপে। ওড়নার মাঝে সাদা কালো অরেঞ্জ কালার মিশ্র। বিজের চুল গুলি দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সব মিলিয়ে রানি কে সেই লাগছে। ঠিক তার প্রাণোসী।

সাদা রঙ্গ টা তো এমনিতেই তার পছন্দের। তার উপর নিজের ভালেবাসার মানুষটাকে ওই রূপে দেখলে মন তো যাবেই তার পানে।

রাজ বিছানা ছেড়ে উঠে এলো। রানি কে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। আচমকা টানে রানি হকচকিয়ে গেল। খানিকটা ভয় পেয়েছে বললেই চলে।
রাজ রানির বিজে চুল গুলির পানি নিজের আঙ্গুলের ডঁগায় নিয়ে যেন খেলা করছে। এ এক অন্য রকম খেলা। অদ্ভুত এক খেলা। কানের পাশে চুল গুলি গুঁজে দিল রানির। রাজের মাতাল করা স্পর্শে রানি চোখ গুলি বন্ধ করে নিল। রাজ তার হাতটা রানির গালের পাশ দিয়ে আস্তে করে এগিয়ে দিল।

রানির কাঁপা কাঁপা ঠোঁট গুলির দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে। নেশা হয়ে যাচ্ছে। রাজ তার নিজের ঠোঁট গুলিয়ে রানির ঠোঁটে মিশেয়ে দিল।

ঠোঁটযোগল যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে। পরশ আদরে ঠোঁট দুটি এক সাথে জোড়ে আছে।

একটু পর রানি তাকে ছেড়ে দিল। বেলকুনির দিকে পা বাড়াতেই। রাজ পিচন থেকে তার হাতটা ধরে নিল। এক টানে রানির পিট টা তার বুকে মিশিয়ে নিল। ঘাড়ের চুল গুলি এক পাশে নিয়ে সাদা ঘাড়ে রাজ তার ঠোঁট স্পর্শ করল।

রাজের বিজে ঠোঁটের স্পর্শ রানির নিশ্বাস ঘন করে দিচ্ছে। রাজের মাতাল করা স্পর্শে রানি নিজেই এক অজানা অনুভূতির নেশায় ডুবে যাচ্ছে।
রানি আর পারছে না। পিছন ফিরেই রাজ কে জড়িয়ে ধরল। রাজ মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে তার প্রাণোসী কে যত্ন করে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করল।

বেশ খানিকটা পর রানি নিজের রাজের আবদ্ধ থেকে সরিয়ে নিয়ে এলো। বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার আর সহ্য হচ্ছে না। কিছু ভালো লাগছে না তার। রাজও রানির কাছে গেল। কাঁধে হাত দিকে নিজের দিকে ফিরাল।

– আমার প্রশ্নের উত্তর তবে অজানার পথেই রয়ে যাবে?

রাজ রানির এক গালে হাত দিয়ে বলল,
– না। তোমার প্রশ্ন গুলি অজানার ভিড়ে হারিয়ে যাবে না। উত্তর পাবে তুমি। সময় হোক। আমি নিজেই বলে দিব তোমাকে। এত দিন সহ্য করছো আর না হয় একটু সহ্য করো। আর বেশি সময় নিবো না। ব্যাস শুধু কয়েকটা দিন।

রাজ রানির কপালে একটা চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেল।

রানি চুপটি করে সেই দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল। কি উনার জীবনের রহস্য? কিই বা হয়েছে? যার জন্যে উনি এমন? কবে হবে সেই সময়? যেদিন সে সব উত্তর পাবে?

পিছন থেকে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে রানি পিছন ঘুরে তাকাল।
তার শাশুড়ি এসেছে।
– এই পাগলি কত বেলা হলো? খাবে কে শুনি?
– না আসলে মা,,
– থাক বুঝেছি। আর বলতে হবে না। আমি ডাকতে আসিনি, ভাবলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে নিজেই নিচে আসবে। তা না করে একা এখানে দাঁড়িয়ে আছো? রাজ বসে আছে চলো খেতে যাবে।
– মা আমি..
– কোনো কথা না। চুপটি করে আমার সাথে যাবে। খেয়ে তারপর এসে ঘুমাবে।
– ঠিক আছে।

রাজ আর তার বাবা টেবিলে বসে আছে।
– কিরে মা এত দেরি হলো কেন? কখন থেকে বসে আছি মেয়ের সাথে খাবো বলে।
– সরি বাবা। এবার খেতে শুরু করুন।
– হুম। মা বসো। কিরে এখনো কি বসে থাকবি? বউ তো এলো এবার খাওয়া শুরু কর।

– বাবা তুমি না।
– মমতা আমি কি ভুল কিছু বললাম?
– চুপ করে খাবে তুমি?
– আপনি যা বলবেন মমতা ম্যাডাম।
– কি হচ্ছে কি?
– আচ্ছা আচ্ছা। তুমিও খেতে বসো। সবাই খাওয়া শুরু করো।

সবাই মানে রাজ তার মা তার বাবা খাবার খাচ্ছে আর কথা বলছে। হাসাহাসি করছে। রানি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে ওদের। কতটা শান্তি তাদের। দেখলে মনে হয় একটা শান্তির নদী। শান্তি যেন প্রবল বেগে ধেয়ে চলে ওদের মাঝে। রানি হা করে দেখছো ওদের। কতটা ভাগ্য হলে কোনো মেয়ে এমন সংসায় পায়। আর সে কি না নিজে এই সব দূরে টেলে দিচ্ছে?

– কিরে মা খাচ্ছিস না কেনো?

মায়ের কথায় ভাবনায় ছেদ ধরল তার।

– কিরে কি হয়েছে?
– কই কিছু না তো।
– তাহলে খেয়ে নে।
– হুম।

রানি বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে। সে কি করছে এ সব? যা করছে সব ঠিক তো? রাজ কে ছেড়ে দিয়ে সে নিজে সুখি থাকতে পারবে তো? রাজ কেই কি একটা গুন্ডা হিসেবে মেনে নিবে? নাকি ছেড়ে চলে যাবে? রাজ তো তাকে অনেক ভালোবাসে, কতই না যত্নে রাখে তাকে। এই গুলি কে টেলে দিয়ে সে সুখি হতে পারবে তো? রাজের এই গুলি বিহীন সে ভালো থাকবে? এই ভালোবাসা ছেড়ে দিলে তার অভাব অনুভব করে না তো কখনো? নিজেই যেন নিজে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। তবে উত্তর তো অজানা। তার মাথা যেন কাজ করছে না।

দূর পানে দৃষ্টি রাখল। এই বেলকুনি টা সেই বাড়ির বেলকুনির মতো না। সেই বাড়ির বেলকুনি টাই তার মনে ধরেছে। গাছপালা, হাওয়া বাতাস সবটা তার মন নিয়েছে। তবে এটাও কম না। ওটার মতো না হলেও বেশ ভালোই লাগে তার জায়গাটা।

হঠাৎ যেন মুখে তার মেঘ জমলো। মনটাও খারাপ লাগছে। এ কয়েকদিন বেলকুনি টাকে ছেড়ে থাকতে তার ভালো লাগছে না। কেমন যেন মিস করছে।

সেখানে সে রাজ কে ছেড়ে দিয়ে থাকবে কি করে? রাজ তো একটা মানুষ। তাকে কতটা ভালোবেসে যত্নে রাখে। রাজ কে ছাড়া সত্যিই কি রানি থাকতে পারবে? রাজের প্রতি যে তার মায়া পড়েছে। রাজের জন্যে যে তার মায়াটান কাজ করে।
এই কয়েক দিনে রাজের রাগ, রাজের ভালোবাসা, রাজের যত্ন, এমন কি রাজের স্পর্শ গুলির প্রতিও তার মায়া জমেছে। এই সবের মাঝে মায়াটান রয়েছে।

রানির মাথাটা ভিতর যেন সুঁই ফুটাচ্ছে কেউ। মাথাটা খুব ধরেছে। ব্যথা লাগছে অনেক।

ঘরে ডুকতেই রাজের ঘুমন্ত মুখের দিকে নজর গেল তার। কি মায়া। কতটা স্নিগ্ধতা রয়েছে। রানি রাজের কাছে গেল।

খাওয়ার পর সেই যে ঘরে এসেছে বেচারা এখনো ঘুমেই রয়েছে। সারা রাত হয়তো ঘুমাইনি। তার জন্যে পাহারা দিয়েই রাত পাড়ি দিয়েছে।

ভেবেই রানির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল।

রানির একা আর ভালো লাগছিল না। তাই নিচে গেল।

চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here