দিন_বদলের_হাওয়ায় [১১] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
563

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১১]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

আমি নিউজ চ্যানেলে দিলাম। সন্ধ্যা আটটার খবর দিচ্ছে। খবর দেখে আমি ভীষণ আশ্চর্য হলাম। আমার চোখ দুটো দিয়ে আপনা আপনিই অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকলো। তবে এই অশ্রু দুঃখের নয় এই অশ্রু আমার আনন্দের। নিউজে বলা হয়েছে রেদোয়ানের কোম্পানি খুলে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে সরকার কোম্পানি বন্ধ করেছিলো তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আগামী মাস থেকে কোম্পানি তাদের কাজ যথাযথ ভাবে পরিচালনা করতে পারবে। খুশিতে আমি কেঁদেই দিলাম। টিভির খবর শুনে আমার ছোট জা তার রুম থেকে বের হয়ে এলো। স্বর্ণা ভাবি আমাকে বললো, ভাবি আপনার কপাল খুলে গেলো। দেখেছেন ভাইয়ার কোম্পানি খুলে দিয়েছে। মিষ্টি কবে খাওয়াবেন ভাবি?

আমি কোন কথা বলতে পারছি না। আমার ছোট জা বললো, ও মা এ কি সত্যি নাকি? ভাইয়ার কোম্পানি দেখি খুলে দিয়েছে। কত্ত ভালো হয়েছে ভাবি।

ছোট জা আমার কাছে এসে হাসি মুখে দাঁড়ালো। আমার শাশুড়ি সবার কথার স্বরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। শাশুড়ি এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি হইছে? বাড়িতে এতো গোলমাল কিসের?

আমার ছোট জা তৎক্ষণাৎ বললো, আম্মা বড় ভাইয়ার কোম্পানি খুলে গেছে। বড় ভাইয়ার কোম্পানি সরকার খুলে দিয়েছে। আগামী মাস থেকে কোম্পানির সব কাজ চলবে।

আমার শাশুড়ির ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হলো। শাশুড়ি মুহূর্তেই খুশি হয়ে গেলেন। হাসতে হাসতে আমার কাছে এসে বললেন, আমি জানতাম খুইলা দিবোই। আমি জানতাম সব ঠিক হইয়া যাইবো। পোলার জন্য যে কত দোয়া করি আমি। আল্লাহ আমার ডাক শুনছে।

শাশুড়ির কথায় আমি আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না। শাশুড়ির মুহূর্তের রং বদলে আকাশ সম বিস্মিত হলাম। কেন জানি এসব আর বিশ্বাস হচ্ছে না। শাশুড়ির এই ব্যবহারে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে আমার শাশুড়ি আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি তো স্বপ্ন দেখছি মনে হচ্ছে! আমার শাশুড়ি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, আহারে আমার মাডার সুখের দিন আইছে। আমি তো এটাই চাইছিলাম।

আমার জা আমায় বললো, আরে এই খুশির মুহুর্তটাকে সেলিব্রেট করতে হয় তো। মেজ ভাবি তো বাহিরে যাই ফোন করে তাকে বাজারের সবচেয়ে ভালো মিষ্টি আর একটা দামি কেক নিয়ে আসতে বলি।

আমি ওর কথায় আরো বেশি অবাক! সবগুলো মানুষ কেমন করে বদলে যাচ্ছে। স্বর্ণা ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন বড় বড় চোখ করে। তিনিও হয়তো অবাক হয়েছেন। তিনি আমাকে বললেন, তাহলে আমি যাই ভাবি। পরে কথা হবে।

ভাবি চলে গেলেন। আমার ছোট জা আমার মেজ জা কে ফোন করার জন্য মোবাইলটা হাতে নিতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো। ছোট জা দাঁত কেলিয়ে বললো, ওই দেখো মেজ ভাবিকে ফোন করবো বলে মোবাইল নিলাম আর সেই ফোন করে বসলো।

এই বলে ও ফোনটা তুললো। আমার মেজ জা কিছু একটা বলতেই ও আমার কাছে ফোনটা দিয়ে বললো, ভাবি মেজ ভাবি তোমার সাথে কথা বলবে।

আমি ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনটা কানে নিতেই মেজ জা উৎসুক কণ্ঠে বললো, ভাবি দেখেছো খবর? আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। উফ্ আমার যে খুশি লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। ভাইয়া এখন কোথায় ভাবি?

আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, ও বাসায় নেই।

মেজ জা বললো, ওহ্। আচ্ছা তুমি টেনশন করো না। আমি এখনই আপুর বাসা থেকে আসছি। আজকের এই খুশিতে বাসায় একটা রমরমা আয়োজন করা দরকার। ফোনটা ছোটকে দাও তো।

আমি ছোট জায়ের কাছে ফোনটা দিয়ে দিলাম। ও জুলিকে কি কি যেন বললো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেই গেলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। মানুষগুলোর মুহূর্তের পরিবর্তনে আশ্চর্য হওয়াটা স্বাভাবিক। এইতো আজ সকালেও জুলি বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলো আমায়। শাশুড়ি বিকেলেই আমাকে নানান কথা শোনালো। আর এখন তারা! কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। কিছু না বলেই ঘরে গিয়ে চুপটি করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ।

আমার মেজ যা ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। তার সাথে তার বোনের বড় ছেলেটাও এসেছে। ব্যাগ ভর্তি বাজার সদাই নিয়ে এসেছে ও। ছোট জা নিজের ছোট বোনকে বললো, কিরে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? জলদি বাজার গুলো রান্নাঘরে নিয়ে রাখ।

মেয়েটার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ছোট জায়ের চোখ রাঙানি দেখে বাজার গুলো নিয়ে রান্নাঘরে গেলো। আমি ভীষণ অবাক। যে মেয়েকে আমার ছোট জা সারাক্ষণ পালঙ্কে তুলে রাখে তাকে দিয়ে আজ কাজ করাচ্ছে!
আমার মেজ জা এতোক্ষণে আমার কাছে চলে এসেছে। আমার কাছে এসে বললো, ভাবি তুমি টেনশন করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি যেয়ে এখন একটু বিশ্রাম নাও তো। ভাইয়া কোথায় এসেছে?

আমি শান্ত ভাবেই বললাম, না আসে নি।

ও সুর বদলে বললো, কি বলছো তুমি? নয়টা বাজে এখনো আসে নি? ফোন করেছো?

না।

এই নাও আমার ফোনটা নাও জলদি ভাইয়াকে ফোন করো। এতো রাতে ভাইয়া কোথায় আছে এখনো?

আমি বললাম, এসে পড়বে। রুশা আপাকে তার বাড়িতে দিয়ে আসতে গিয়েছে। এক্ষুনি চলে আসবে।

তুমি যাও ফোন করো। জলদি আসতে বলো।

আমি না চাওয়া সত্ত্বেও আমার মেজ জা আমাকে ফোন করার জন্য জোর করলো। আমি বাধ্য হয়ে রেদোয়ানকে ফোন করলাম। একবার দুবার রিং হওয়ার পরই ও ফোন তুললো। আমি সালাম দিলাম। ও সালামের জবাব নিয়ে বললো, তুমি ফোন করলে? কোন সমস্যা হয়েছে ?

না।

তাহলে ফোন করলে কেন?

নিউজ দেখেছো?

হ্যাঁ দেখেছি। কেন কি হয়েছে?

বাসায় আসবে না? বের হয়েছো?

হুম রিক্সায়।

বাড়িতে তো বেশ রমরমা আয়োজন লেগে গেছে।

কেন?

তোমার কোম্পানি খোলার খুশিতে।

এই জন্য আবার কিসের আয়োজন?

বাড়ির অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে গেছে রেদোয়ান।

রেদোয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। এরপর বললো, ভালো তো। আচ্ছা রাখো আমি বাড়ি আসছি।

আমি ফোনটা রেখে দিলাম। কারো কোন সারা শব্দ পাচ্ছি না। ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। আমার চক্ষু এখন চড়কগাছ। আমার জায়েরা সহ আমার শাশুড়ি রান্নাঘরে! সবাই হাতে হাতে সব কাজ করে নিচ্ছে। আমি অবাক হচ্ছি বার বার! আমাকে রান্নাঘরে দেখে শাশুড়ি বললো, তুমি ঘরে রেস্ট করো মা। আমি আছি এনে সব সামলানোর লেইগা। আজকে তুমি রেস্ট নাও।

মেজ জা বললো, হ্যাঁ ভাবি যাও। সব সামলে নিচ্ছি তো আমরা। এ কয়টা দিন কষ্ট হবে। সামনের মাস থেকে একটা বুয়া রেখে দিবো।

ছোট জা বললো, ঠিক বলেছে ভাবি। তুমি যাও না বড় ভাবি। মাইশা যা তো ভাবির ঘরটা একটু গুছিয়ে দিয়ে আয় তো।

আমার চোখ অক্ষিকুটুরি থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিন্তু কিছু বললাম না। ঘরে এসে চুপটি করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ।

কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আসলো। রেদোয়ান আসতেই আমার মেজ জা বললো, ভাইয়া আপনার কোম্পানি তো খুলে গেছে। কি যে খুশি হচ্ছে ভাইয়া।

রেদোয়ান ওর সামনে সৌজন্য মূলক হাসি নিয়ে মাথা নাড়ালো। আমার ছোট জা কেক হাতে আসতে আসতে বললো, ভাইয়া দেখুন আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করার জন্য সব কিছু হাজির। নিন কেকটা কাটুন।

রেদোয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকিয়ে আছি। আমার শাশুড়ি দ্রুত গতিতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। রেদোয়ানের কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বললেন, আমি জানতাম আমার পোলাডার কপাল ভালা। আল্লাহর কাছে পোলাডার লেইগ্গা কত দোয়া করছি। আমার দোয়া এখন কবুল হইছে।

রেদোয়ানও তার মাকে জড়িয়ে ধরলো। ক্ষণিকের মধ্যে বাড়ির এরূপ পরিবর্তন হজম হচ্ছে না। রেদোয়ানকে দিয়ে শান্তি কেকটা কাটালো। আমাকেও টেনে নিয়ে গেলো সেখানে‌। এসব পর্ব শেষ হলে জুলি আমাকে বললো, ভাবি যাও ঘরে যাও। বিশ্রাম করো। রান্না শেষ হলে আমি ডেকে দিবো।

আমি রেদোয়ানের মুখের দিকে একবার তাকালাম। রেদোয়ান আগে থেকেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কথা না বলে আমরা দুজনেই ঘরে চলে আসলাম। এই মুহূর্তে মামার কথা গুলো খুব মনে পড়ছে আমার। আচ্ছা এদেরকে তো আমি কিছুই বলতে পারছি না। তবে কি এদের মন থেকে ক্ষমা করে দিলাম? না এরা যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। কখনোই ক্ষমা করবো না আমি। ঘরে আসতেই আমি রেদোয়ানকে বললাম, কেমন লাগলো এতো আপ্যায়ন? পারলে তো এখন সোনার পালঙ্কে ঘুমাতে দিবে তোমায়।

রেদোয়ান হাসলো। বললো, সবই টাকার খেলা বুঝেছো।

এতো দিনের ঝিঁ কে দেখি আজ রেহাই দিলো।

রেহাই না বলো রিটায়ার্ড দিয়েছে। দেখো এখন থেকে তোমায় রান্নাঘরে ঢুকতেই দিবে না।

হুম। আমার তো ভাবতেই অবাক লাগে। মানুষ কত রূপ বদলাতে পারে!

আয়ু এ জগৎ টাকার খেলা খেলে বুঝেছো। এতো দিন তোমার স্বামীর টাকা ছিল না তাই সব বদলে গেছে। এখন হবে তাই আবার সব বদলাচ্ছে। তবে আগের বারের থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে রেখো। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

আমি আর কিছু বললাম না। সাড়ে দশটা নাগাদ আমার জাদের রান্নাবান্না শেষ হলো। আমাদের এসে খেতে ডেকে গেলো। আজ সবাই একসাথে খেতে বসেছে। সেই আগের মতো একসাথে সবাই খাবো। টেবিলে সাজানো মেনু দেখেই বিষম খেলাম আমি। মাছ, মুরগি, গোশত, ডিম, পোলাও সহ আরো বিভিন্ন আইটেম। আমি একটা চেয়ার টেনে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লাম। রেদোয়ান আমার পাশে বসে পড়লো। আমার মেজ জা আমাদের প্লেটে খাবার বেড়ে দিলো। বড় মাছের মুড়োটা রেদোয়ানের প্লেটে দিয়ে বললো, ভাইয়া খান। আমি সারা বাজার খুঁজে এই মাছটা এনেছি। এর থেকে বড় মাছ বাজারে আর ছিলো না।

আমি আর রেদোয়ান একে অপরের মুখ দেখাদেখি করছি। এভাবেই খাওয়ার পর্ব শেষ হলো। আয়োজন ভরপুর থাকলেও বেশি খেলাম না। আমার গলা দিয়ে এ খাবার যাচ্ছে না। চারপাশের মানুষের পরিবর্তন দেখেই আমার পেট ভরে গেছে। খেয়ে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। আমাকে কিছু করতে বলা হয় নি। রান্নাঘরে বাসনপত্র নড়ার শব্দ এখনো পাচ্ছি। হয়তো ওরা এখন সব পরিষ্কার করছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম রেদোয়ানের ফোনের ঘ্যান ঘ্যান শব্দে। ফোনটা অবিরাম ধারায় বেজে চলেছে। কিন্তু ঘুমে রেদোয়ানের কোন হুশ নেই। আমি উঠে ঘুমুঘুমু চোখেই ফোনটা হাতে নিলাম। স্ক্রিনে ভেসে উঠা নাম্বারটা দেখে হকচকিয়ে গেলাম। ভালো করে চোখ মুছে আবার দেখলাম। নাহ ঠিকই দেখেছি। নাম্বারটা দেখে বুকের মাঝে কেমন যেন চাপা কষ্ট অনুভব করছি। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে দিতেই…………..

চলবে……..

(রিচেক করি নি। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। আপনাদের জন্য দ্রুত লিখেছি। বড় পর্বও দিলাম। এবার খুশি তো? এবার সবাই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করুন তো।)

যারা পেজ ফলো না করে গল্প পড়ছেন তারা এক্ষুনি পেজটা ফলো করে Favorites করে দিন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।

পেজ ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন
👉 গল্পপোকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here