#আমার_চন্দ্রাবতী পর্ব ১৫
লেখিকা- সালসাবিল সারা
ইয়াদ ঢাকায় ফিরবে বলে সিদ্ধান্তে অটল।যদিও ইয়াদের পরিকল্পনা ছিলো আরো একদিন থাকবে সে।কিন্তু, ইয়াসিরের বাবার শরীর খারাপ হলে ইয়াদ দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিলো সেও বন্ধুর সাথে ঢাকায় ফিরবে।বন্ধুর বিপদের দিনে তাকে একা ছাড়াটা ইয়াদের রুচিতে পড়ে না।ইয়াসিরের জন্যে সকালেই প্লেনের টিকিট বুক করেছিল সে। ইয়াসিরকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছেড়ে আসার উদ্দেশ্য বেরুলো ফারসিভ।রত্নাপুর থেকে এয়ারপোর্টের দুরত্ব বেশ ভালোই।গত তিনদিন ইয়াদ তার বন্ধুদের সহিত রত্নাপুর সহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি জায়গায় নিজেদের সময় কাটিয়েছে।চট্টগ্রামে ইয়াদের অন্যতম পছন্দের জায়গা এই রত্নাপুর।এইখানে উপস্থিত পাহাড়,নদী ইয়াদের বেশ প্রিয়।তাছাড়া চট্টগ্রামে বিদ্যমান নেভাল এবং সেখানকার বিখ্যাত কাঁকড়া ভাজা ইয়াদ চট্টগ্রামে এলে কখনোই মিস দেয় না।প্যাকিং শেষ করে ইয়াদ স্থির দৃষ্টিতে কটেজের জানালার দিকে চেয়ে রইলো।বাহিরের সবুজ গাছপালা নড়েচড়ে উঠছে পবনের ধাক্কায়।ইয়াদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকায় ফেরার দিনেই সে দুআর সাথে শেষ একবার দেখা করে যাবে।কিন্তু, পরিকল্পনার ব্যাঘাত ঘটলো ইয়াসিরের বাবার হঠাৎ অসুস্থতায়।ইয়াদের আঁখিতে ছলছল করছে প্রেয়সীর অবয়ব।তবে সেটা শুধু কল্পনা।না পারছে প্রেয়সীর কণ্ঠস্বর কর্ণপাত করতে,না পারছে প্রেয়সীর এক ঝলক হাসিযুক্ত মুখশ্রী উপভোগ করতে!এই অবেলায় রামিসাকেও কিছু বলতে ইচ্ছে পোষণ করছে না তার।এমনিও মেয়েটা তার ভাইয়ের জন্যে নিজের বান্ধবীর কাছে মিথ্যা বলেছে বহুতবার।ইয়াদের শ্বাস দ্রুত হয়। হৃদপিন্ডের বেগ চলছে ধপাধপ।ইচ্ছে একটাই বিদায়বেলায় প্রেয়সীর স্নেহমাখা মুখশ্রী একটিবার দেখার।হাত ঘড়ির দিকে নজর বুলিয়ে ইয়াদ বিরক্ত হলো।আজ সময় যেনো অতিদ্রুত বহমান।বিদায়বেলায় পরিধানের জন্যে বিছানার উপর বিদ্যমান খয়েরী রঙের শার্ট রেখে,শুধুই শুভ্র জিন্স হাতে তুলে নিলো সে।গোসল সেরে কটেজের কর্মচারীকে ডেকে নিলো ইয়াদ।ভেজা ট্রাউজারটা নিবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো।গোছানো লাগেজের দিকে পুনরায় নজর দিয়ে আয়নার সামনে উপস্থিত করলো সে নিজেকে।অনায়াসে নিজের ক্ষিপ্ত মুখশ্রীর দর্শন পেলো।দুআ নামক মেয়েটাকে না দেখলে ঢাকায়ও তার মুখশ্রী ঠিক এমনই থাকবে,একেবারে বেজার।ভেজা চুল বেয়ে ঘাড়ে পানির রাশি বহমান।উদোম শরীরে জমানো বিন্দু বিন্দু জলরাশি ইয়াদ তাওয়ালের সাহায্যে মুছে নিচ্ছে নিভৃতে।চুলটা আজ মুছতে ইচ্ছে করলো না তার। যার দরুণ ঘাড়ে পুনরায় হানা করছে বহমান অবাধ্য চুলের পানি।বিরক্তিতে ইয়াদ ঘাড়ের উপর তাওয়াল ঝুলিয়ে দিলো। এতে অবাধ্য পানি তাওয়ালেই শুষে যাচ্ছে।কিছু একটায় স্বস্তি পাবে ভেবে ইয়াদ দ্রুত বিছানার উচুঁ অংশে রাখা মোবাইলটা মুঠোয় নিল।গ্যালারির দ্বিতীয় অ্যালবাম খুলতেই চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো তার।এই তো সেই হাস্যোজ্বল মানবী।যার ছবি সে চন্দ্রাবতী নামে সেভ করেছে অ্যালবামে।বুকের গতিটা এখনো অস্বাভাবিক।এই কেমন অস্থিরতা!ভালোবাসার অস্থিরতা কেনো এতো দহনের?প্রেয়সীকে ছুঁতে না পারা,একটু দেখতে না পারা,এই যেনো ভালোবাসার সবচেয়ে কষ্টদায়ক অনুভূতি!অর্ধ মাথায় ঘোমটা,মুখশ্রীর একদিক নিবদ্ধ আছে পবনে উড়ন্ত এলোমেলো কেশ।মাথাটা হালকা উঁচুতে তুলে হাসছে মানবীটা।এই ছবিটা রামিসা গতকাল পাঠিয়েছে ইয়াদকে। অদ্ভুত সুন্দরী এই দুআ মেয়েটা।তার চাহনীতেই যেনো ইয়াদের হার!ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে তাকে।এই কেমন মাদকতা মেয়েটার মাঝে?নিভৃতে অধর ছোঁয়ালো সে দুআর হাস্যোজ্বল ছবিখানায়।তার মনটা হলো একটু শান্ত।এরমাঝে তার দৃষ্টিতে দৃশ্যমান হলো,ইনকামিং কলে তার ফুফুর নাম এবং নাম্বার।
কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ করলো সে,
–“আসসালামুআলাইকুম ফুফু।”
–“আব্বা,তুই কবে আসবি আমার বাসায়?”
চিন্তিত কণ্ঠ মীরার।
–“আমি আজকেই ঢাকায় চলে যাচ্ছি।”
–“কি?কিসব বলছিস?পাগল নাকি তুই?এতো কাছে এসে আমাকে না দেখেই চলে যাবি?রওনা দিবি কখন?”
–“এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি ফিরলেই।”
ইয়াদের শান্ত কণ্ঠ।
–“এয়ারপোর্ট তো ঢের দূরে।এসে অন্তত দেখা করে যা।গাড়ি আসা পর্যন্ত আমার বাসায় থাকবি।লাগেজ নিয়ে চলে আয়।আমি, তোর মা দুইজনই আশা করেছি তুই আসবি।বাবা,তুই কি নিজেকে অনেক বড় ভাবছিস?আমার কি মন কাঁদে না তোর জন্যে?”
–“ঝামেলা হয়ে যাবে ফুফু।”
–“আজ না এলে ফুফুকে হারাবি।আমি মরে গেলেও তোর বাসায় যাবো না।আমি এক কথার মানুষ তুই জানিস।”
–“ফু…”
–“মুরগি ভাজা করছি।জলদি আয়।আমি অপেক্ষায় আছি।”
মীরা বুলেটের গতিতে নিজের বুলি শেষ করলো।ভাইয়ের ছেলেকে সে ভালই চিনে।ইয়াদ রেগে যাওয়ার পূর্বে ফোন কেটে দেওয়া উত্তম মনে করলো মীরা।সে ইয়াদের আগমনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
মীরার পেছন থেকে একটা ছায়া সরে গেলো একেবারেই শব্দহীন।
ইয়াদ পরপর দুইবার ফোন দিলো সেই নাম্বারে কিন্তু ফোন বন্ধ।ইয়াদ বুঝলো তার ফুফু নিজ সিদ্ধান্তে অনড়।তাছাড়া সে এতদিন আশা দেখিয়ে রেখেছিল তাদের।আর আশা ভাঙলে প্রচুর কষ্ট হয়,এই ব্যাপারটা ইয়াদের অজানা নয়।বিছানায় বিদ্যমান শার্ট গায়ে চড়ালো সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিয়ে সব জিনিসপত্র ঠিক করে নিলো।ফেরার জন্যে একেবারে প্রস্তুত সে।বন্ধু স্পন্দনকে ইয়াদের সাথে যেতে বললে সে সাফ মানা করে দিলো।অতঃপর ফারসিভ প্রথমে ইয়াদকে পিক করে পরবর্তীতে স্পন্দনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।অগত্য ইয়াদ কটেজের গাড়ির সাহায্যে নিজের সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রামিসার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছালো ইয়াদ।তার উপস্থিতি একেবারে গোপন।ফুফুর একা বাড়ীতে ইয়াদ নির্দ্বিধায় স্বাধীনতার সহিত গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি বিদায় করলো। মীরা যেনো ইয়াদের জন্যে দুয়ারেই ছিলো দাঁড়িয়ে।ভাইয়ের ছেলেকে আলিঙ্গন করে আপ্যায়ন করলো সে।ইয়াদের মুখে মৃদু হাসি।কিন্তু তার ভেতরকার কোথাও শান্তি নেই। দুআকে দেখাবিহীন এই গ্রাম ত্যাগ করতে বাঁধ সাধছে তার মনে।
–“আমি জানতাম তুই আসবি।”
মীরা একগাল হাসলো।
–“না এসে উপায়?না আসলে তুমি শান্তি দিতে না,আর মায়ের কথা না ই বা বললাম।”
ইয়াদের মলিন কণ্ঠ।
–“ইস,কি যে বলে আমার বাবা। বস,আমি বেশি দেরী করবো না।”
ইয়াদ ঘাড় কাত করলো। দশ মিনিটের মাঝে ডাইনিং এ নাস্তা সাজিয়ে ফেললো মীরা,সাহায্য করেছে স্বয়ং তাসনিম।
টেবিলে বসে ফুফুর বানানো মুরগি ভাজা মুখে পুরলো সে। মীরা সাদরে এটা ওটা নিয়ে দিচ্ছে তাকে।
–“জানিস,তোর বড় ফুফু আসবে বলেছে মাইশার বিয়েতে।আমি অনেক খুশি।”
–“দেখবে,সময় এলে বলবে টাকার অভাবে আসতে পারছে না।এরপর কি আর?বাবা আর তোমাকে টাকা পাঠাতে হবে।একটা মানুষ এত ধূর্ত হয় কিভাবে?”
ইয়াদের কণ্ঠ কঠিন হয়ে এলো।
–“কি করবো বল?বোনের বাঁধন তো ছিন্ন করতে পারিনা।টাকা দিতে হলে দিবো।”
–“আমার মনে হয়,উনি যে পরিমাণ টাকা নিয়েছে তোমাদের থেকে, এতদিনে উনার রাজমহল বানিয়ে সেখানে উনি রাজ করছেন।আমি তো উনার বাড়িতে এই জনমে যাবো না।তুমি ভালো তাই তোমার কাছে আমি আসি।বড্ড ধূর্ত মহিলা উনি।ছোট বেলায় মায়ের উপর করা উনার অত্যাচার আমি একটুও ভুলিনি।”
–“যেতে হবে না ওর কাছে।তুই আমার কাছে আসবি।বুদ্ধি হয়েছে পর্যন্ত তুই তো তার বাসায় যাসনি।আমার ইয়াদ আমাকে ভালোবাসে,এটা আমি বেশ জানি।”
–“অবশ্যই ফুফু।”
ইয়াদ হেসে বললো।
কথোপকথনের মাঝে উপস্থিত হলো রামিসা।তাকে দেখে ভড়কালো মীরা,
–“কোন দিকে এসেছিস তুই?পেছনের গেইট দিয়ে বুঝি?”
–“অবশ্যই।কেনো?”
রামিসা দাঁত কেলালো।
–“কেনো সদর দরজায় কি সমস্যা হয়েছে?”
ইয়াদের পানে চেয়ে রামিসা উত্তর দিলো,
–“সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যেতো।”
–“কিসের সারপ্রাইজ,রামু?”
ইয়াদের প্রশ্নে রামিসার হাসির প্রতিফলন হলো আরো গভীর,
–“হবে আরকি।তুমি জলদি খেয়ে নাও।একটা জিনিস দেখাবো ভাই তোমাকে।আমার বারান্দায় তোমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল আছে।”
–“আমার কোনো ফুল প্রিয় নেই।”
ইয়াদ খাবারে মত্ত।
–“সেই ফুল দেখলে তোমার মাথা আউট হবে।”
রামিসা হিহি করে হাসতেই ইয়াদের মনে সন্দেহ তৈরি হলো।
–“কি বলছিস আমি বুঝছি না বাপু।আমি মাইশাকে ডেকে তুলি ঘুম থেকে।”
মীরা উঠে পড়লো চেয়ার থেকে।
.
–“দুআ এসেছে?”
ইয়াদের সোজা প্রশ্ন।
রামিসার মুখে ভিড় করলো গগণ ছোঁয়া বিস্ময়।
–“মাই গড!তুমি কীভাবে জানলে?”
–“আমার প্রিয় ফুল বলতে তুই তাকেই বুঝিয়েছিস।
কারণ, আমি ফুল পছন্দ করি না।সে হিসেবে আমার একমাত্র মানবী ফুল আমার দুআ।”
ইয়াদ নাস্তা শেষ করলো।
–“জানো,আমি মায়ের সাথে তোমার কথা আড়ালে শুনেই দৌড় দিয়েছি তার বাসায়।টেনে হিচঁড়ে এনেছি তাকে।আসতেই চাচ্ছিলো না দুআ।শেষ পর্যন্ত বলেছি,আমার এক মহা সমস্যা হয়েছে,এটা দুআ ছাড়া কেউ সমাধান করতে পারবে না।এরপর মহারাণী রাজি হয়েছে।”
–“আজকে বুঝলাম তুই কেনো আমার প্রিয় কাজিন।রামু,তোকে অনেক থ্যাংকস।ওকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো অনেক।বুকটা এখনোও অশান্ত।”
ইয়াদ উঠলো বসা থেকে।
–“চলেন,দুআর খেলোয়াড়।”
ইয়াদ হাসলো কেবল। কিছু বললো না।
…………………..
দুআ রামিসার রুমের বারান্দায় বিদ্যমান ফুলের বাগান দেখছিল।রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রুমের ভেতরে আসলে তার নজরে এলো তাসনিম।মহিলাটা তাকে একা পেয়ে কাঁধ চেপে ধরলো তার,
–“ঘন ঘন এইখানে কেনো আসিস?জানিস না তোকে দেখলে আমার ভালো লাগে না?”
ব্যথায় জর্জরিত দুআ বিরক্ত হলো,
–“ছাড়ুন আমাকে।অদ্ভুত তো?আমি আমার সইয়ের বাসায় এসেছি।আপনার কি তাতে?”
মুহূর্তেই দুআর মুখ চেপে ধরলো মহিলাটা,
–“কি?মুখে মুখে তর্ক?আজ তোর সুন্দর মুখ আমি খামচি দিয়েই…”
–“কি করছেন কি?”
এক পুরুষালি কণ্ঠ।
অশ্রুজল আঁখিতে দুআ সবটা ঝাপসা দেখছে।কিন্তু রুমে আগত মানবের লম্বা অবয়ব দেখতে পেয়ে দুআ ঠিক বুঝলো এটা সেই খেলোয়াড়। গালে পানি গড়িয়ে পড়তেই দুআর বোধগম্য হলো তাসনিম তার থেকে বেশ দুরত্বে অবস্থান করছে।
–“ফের যদি আপনি দুআকে কিছু করেছেন তো!”
ইয়াদের কথা পুরোটা শুনলো না তাসনিম।লজ্জায় মাথা কাটা গেলো তার।এতো বড় মাপের মানুষের সামনে নিজের ইজ্জত খোয়াতে হবে এটা সে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। ধপধপ পা ফেলে প্রস্থান করলো সে।
–“এতো বড় সাহস উনার!আমি মাকে বলে আসছি।আজ এই মহিলাকে উচিত শিক্ষা দিবো।”
রামিসা দুআর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেও প্রস্থান করলো কামরা থেকে।
ইয়াদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দুআর পানে।মাথায় আজ কাপড় নেই মানবীর।ঝলমলে কেশ সামনে কিছুটা ছড়িয়ে আছে। মুখশ্রীতে অল্প অপমানবোধ বিদ্যমান তার।এই দেখে ইয়াদ বিরক্ত হলো।ধীর পায়ে দুআর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে ওড়নার লম্বা অংশটা দুআর মাথায় বেশ সাবধানে রাখলো সে।দুআ যৎসামান্য কাঁপলো।
–“মহিলাটা কেনো এমন করছিলো?”
–“জানিনা।”
দুআর ধীর স্বর।
–“উনার সামনে তুমি আর যাবে না।ভবিষ্যতে আমি উনাকে তোমার আশে পাশে দেখলেই অবস্থা খারাপ করে ফেলবো উনার।ইয়াদকে উনি চিনে না।অ্যান্ড তুমি,এতো কান্না করো কেনো?মুখ ফুটে কিছু বলতে পারো না?এইযে উনি তোমাকে মুখ চেপে ধরেছিল,
কান্না না করে একটু চেঁচাতে পারতে।”
ইয়াদ বেশ নরম সুরে বললো।
–“আমার এইসব ভালো লাগে না।”
দুআ ভীত হলো যেনো।
–“কী ভালো লাগে তোমার? অন্যের দাম্ভিকতা?তোমার বাবা জমিদার,ভাইও বেশ সম্মানিত মানুষ।তাদের ঘরের মেয়েকে অন্য মহিলা এইভাবে হেনস্তা করে এটা উনারা জানে?না জানলে আমি বলছি উনাদের।”
ইয়াদ চলে যেতে নিলে দুআ নিজের দ্বিধা কেটে ইয়াদের হাতের বাহু ধরলো।ইয়াদের গতি থেমেছে।কিন্তু, হৃদপিন্ডের গতি থামলো না।ইয়াদের পেশীবহুল বাহুতে দুআর আঙ্গুল কূল পেলো না।ইয়াদের সম্পূর্ণ পেশীবহুল বাহু দুআর আঙ্গুল ছুঁতে পারলো না,আরো অর্ধেক অংশ বাকি রইলো।ইয়াদ সেদিকে চেয়ে আবারও দৃষ্টি দিলো চন্দ্রাবতীর পানে।
–“আপনি যাবেন না,প্লিজ।বাবা,ভাই এইসব জানলে উনাকে বাঁচিয়ে রাখবে না।এই ভয়ে আমি গুমোট থাকি।আমি বাবা অনেক হিংস্র।”
–“তাই বলে?”
–“উনি তো আমাকে মেরে ফেলবেন না!কিন্তু আমার বাবা,সে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে না এইসব জানলে।”
–“চুপ থাকো দুআ!”
ইয়াদ দুআর বাহু চেপে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
দুআর মনের সুপ্ত অনুভূতি জাগ্রত হলো নিভৃতে।দুইজনের দৃষ্টি মিলতেই অস্থির মনদ্বয়ের ধুকধুক শব্দ হওয়া আরম্ভ হলো যেনো।খেলোয়াড়ের চোখের অন্যরকম আসক্তির উপস্থিতি দেখছে সে।তার প্রতি ইয়াদের এই দৃষ্টি সে বহুকাল থেকে দেখে আসছে। রামিসা বা অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর সময় ইয়াদের দৃষ্টি এমন থাকে না।থাকে একেবারে স্বাভাবিক।কিন্তু দুআর বেলায় ভিন্ন।কেমন যেনো মাদকতার উপস্থিতি ভিড় করে খেলোয়াড়ের আঁখিতে, যখন সে দুআতে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে।দুআ সবটা খেয়াল করে খেলোয়াড়ের এমন চাহনি।এই চাহনি দুআর মনটাকে বিদ্ধস্ত করার জন্যে যথেষ্ট।এই কয়েকদিনে ইয়াদের এমন চাহনিতে ডুবেছে সে।তার এই চাহনি দুআর কাছে বড্ড ভালো বোধ হয়।দুআর দৃষ্টি ঝুঁকলো।ইয়াদের এই মাদকতার দৃষ্টি দুআর সহ্য হয়না।তার প্রতি ইয়াদের এই নজর দুআকে ইয়াদের কথা ভাবতে বাধ্য করে।দুআর মনের সুপ্ত অনুভূতি আবারও হানা দিলো।এই মানবের উপস্থিতিতে দুআকে ঘাবড়িয়ে তুলে না বরং শরীরে ছড়িয়ে দেয় এক রাশ ভালোলাগা।
–“ভাই,কবে এসেছো?”
দুইজনের দূরত্ব বাড়লো মাইশার আগমনে।মাইশা একটু অবাক হলেও প্রশ্ন করলো না।তার কাকীর কথা শুনে এসেছে সে।হয়তো ইয়াদ দুআকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো!
–“এসেছি অনেকক্ষণ হলো।চলে যাবো গাড়ি আসলেই।”
দুআ এবং মাইশা দুইজনই চমকালো।মাইশা পুনরায় প্রশ্ন করতে চাইলো,কিন্তু ইয়াদের ফোনের শব্দে তার প্রশ্ন করা হলো না। অপর পাশের কথা শুনে ইয়াদ জবাব দিলো,
–“চলে আয়।”
–“আজই কি ঢাকায় ফিরছো?”
–“ইয়াহ।আজ চলে যাচ্ছি।ইয়াসিরের বাবা অসুস্থ।ওকে ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছি।সে প্লেনে অলরেডি। আমি আর বাকি সবাই ফিরবো বাই রোডে।”
দুআ অবাক দৃষ্টিতে ইয়াদের পানে তাকালো।লোকটা এইভাবে হুট করে চলে যাবে?আর দেখা হবে না এই মানবের সাথে!মনটা অনায়াসে খারাপ হলো দুআর।তনুটা ছমছম করছে।
–“ওহ।আমার অনুষ্ঠানে আসবে না?”
মাইশার প্রশ্ন।
–“আসবো অবশ্যই।বোনের বিয়ে, সাথে একজনকে অনেক কিছু বোঝানো বাকি আছে আমার।”
ইয়াদ পুনরায় দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো দুআর পানে।মেয়েটা ছলছল আঁখিতে তার পানে চেয়ে আছে। বুকটায় একটু যন্ত্রণা হলো ইয়াদের।
–“আপু,আম্মু ডাকছে।”
রামিসা কথাটা বলে মাইশার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে।ইয়াদের পানে চেয়ে কিছু ইশারা করলো সে।ইয়াদ সেটা বুঝতে পেরে অধর প্রশস্থ করলো।
–“আপনি চলে যাবেন?”
দুআ কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ইয়াদকে।
–“হুম।অবাক হলে?”
ইয়াদ পকেটে হাত গুঁজলো।
–“অবাক!নাহ।এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।”
দুআ তটস্থ।
–“দেখা হবে আবারও শীঘ্রই।তৈরি রাখো নিজেকে।অনেক কিছু পরিবর্তন হবে তোমার জীবনে।অনেক সম্পর্কের নাম বদল হবে।সবচেয়ে বড় কথা দুইটা মনের মিলন ঘটবে।আমার অপেক্ষা করবে কিন্তু তুমি।একমাত্র তোমার জন্যেই আমার চট্টগ্রামে ছুটে আসা।আবারও দেখা হবে।আর সেই মহিলা থেকে দূরে থাকবে।রামিসা থেকে তোমার নাম্বার নিয়ে নিবো।তোমাকে ফোন দিলে তুমি কি আমায় খারাপ ছেলে ভাববে?বিশ্বাস করো আমি পারবো না এতদিন তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে।”
দুআ স্তব্দ।লোকটার কথাগুলো তার কাছে সাধছে মধুর বুলির লাহান।দুআ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি এই লোক তার জন্যেই চট্টগ্রামে এসেছিল!
গাড়ির হর্ন বাজতেই ইয়াদ দুআর সম্মুখে আসলো পুনরায়।আলগোছে হাত রাখলো দুআর মাথায়,
–“চলে যাচ্ছি।কিছু বলবে না?তোমাকে ফোন দিলে তোমার সমস্যা হবে?”
দুআ গভীর ঘোরে।দুদিকে মাথা নাড়ালো শুধু।মুঠোফোন অনবরত শব্দ করছে ইয়াদের।সেদিকে নজর দিয়ে দুআর গালে অনায়াসে হাত রাখলো ইয়াদ। মনোবীর গালটা গরম হচ্ছে লজ্জায়,
–“এইভাবে লজ্জা পাবে না।আমি বেশামাল হয় যাচ্ছি।পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্ক যেনো আরো গাঢ় হয়।মানসিক প্রস্তুতি নাও,চন্দ্রাবতী।অনেককিছু ঘটাবে তোমার জীবনে,এই ইয়াদ বিন তেহরান।তুমি শুধুই তার জন্যে তৈরী।”
ইয়াদ হাত নামালো দুআর গাল থেকে। থরথর করছে দুআর তনু।ইয়াদের বলা প্রত্যেক বুলি থেকে দুআ বুঝলো, এই খেলোয়াড় তাকে পছন্দ করে?
একে একে সবাই এলে ইয়াদ রুম ত্যাগ করলো।রয়ে গেলো শুধু দুআ।সামলাতে পারছে না সে নিজেকে।আবেশে অশ্রু ভিড় করলো তার আঁখিতে।এইসব কি অন্য ছেলেদের মতো ইয়াদেরও শুধু মোহ তার প্রতি!নাকি সত্যিকারের পছন্দ?জানেনা দুআ।জানতে চাইছে নাও যেনো!গাড়ির হর্ন শব্দ করছে অনবরত।একটু পরে বিকট শব্দে গাড়ির প্রস্থান বুঝতে পারলো দুআ।ইয়াদের চলে যাওয়াটা কোনো এক কারণে দুআ মেনে নিতে পারছে না।এছাড়া ইয়াদের বলা কথাগুলো দুআর মনকে নাড়িয়ে তুলেছে।দুআর ভেতরকার এক সত্তা বলছে,ইয়াদের বলা সকল কথা একেবারে চিরন্তন সত্য।তবে কোথাও,দুআর মনে একটা “কিন্তু” রয়ে যায়।
চলবে…..
কপি করা বারণ।কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।পেজের রিচ কম তাই হয়তো গল্প সবার কাছে যায় না।সাইলেন্ট রিডার্স আপনারা গল্প পড়ে রিয়েক্ট দিবেন এবং কমেন্ট করবেন।গতবার সেরা কমেন্টের বিজয়ী হয়েছিলো “Arju Moni”. আজকের পর্বের বিজয়ীর সংখ্যা বাড়ার আশায় রইলাম।