#ঘায়েল
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz
.
.
.
নুসাইবার সাথে রানবী প্রেম করেনি কখনো। তবে তার বোন নাতাশার সাথে সে ২৩দিন প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো। এই ২৩দিনেই নাতাশা তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসতে শুরু করলে, রানবী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
রানবী কখনো কারো সত্যিকারের ভালোবাসা পেতে চায়নি। সে যেমন সম্পর্ক করে মজা নেই তেমনি কাউকে সে চেয়েছে। কিন্তু নাতাশা ছিলো সবার চেয়ে আলাদা। দেখলে তাকে বোঝায় যায়না, কতোটা সরল সে!
রানবী তার সরলতা নিয়ে খেলা করতে চায়নি। তাই তার সাথে সম্পর্ক শেষ করে নিজ থেকেই। কিন্তু নাতাশা এটা সহজে মেনে নিতে পারেনি। রাগের বশে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে নেয় সে। রানবীর জন্য অনেক কষ্ট অনুভব করেছে সে। আর এসব কিছুর সাক্ষী হলো নুসাইবা।
সে চায়না তার বোনের সাথে যেটা হয়েছে অন্য কোনো মেয়ের সাথে তা হোক।
মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা একই সমান!
.
নুসাইবার উদ্দেশ্যে রানবী বললো-
এমন কিছু তুমি করবেনা, আমি ভালোবাসি পুনম কে।
.
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে নুসাইবা বললো-
সে তো তুমি আমার আপুকেও বলতে।
-তোমার আপুই কিন্তু আমাকে প্রপোজ করেছে।
-প্রপোজ করেছে কি হয়েছে! তুমিই তো তাকে তোমার প্রেমে ফেলতে বাধ্য করেছো। আর কেউ যদি তার মনের কথা কাউকে জানায় এতে দোষের কি আছে!
-দেখো নুসাইবা, আমি ওকে ভালোবাসতাম না। তাই মিথ্যে অভিনয় না করে ছেড়ে দিয়েছি। আমি চাইলে অন্য মেয়েদের মতো ওকেও অতিষ্ঠ করে বাধ্য করতে পারতাম, আমায় ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তা করিনি। কেনো জানো? সে অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা।
-আলাদা হলে কেনো আমার আপুকে কষ্ট দিয়েছো তুমি?
-আমি তো ওকে দেখে ঘায়েল হইনি! প্রেম করা দরকার তাই করেছি। আমার মনে কোনো ফিলিংস জন্ম নেইনি ওর জন্য।
-এসব কথা বলে লাভ নেই ৪২০ রানবী। তুমি যে কেমন ছেলে সবটাই পুনমের কাছে ফাঁস করবো এখন।
.
কথাটি বলেই নুসাইবা এগিয়ে গেলো।
রানবী তার পিছু নিলো।
.
.
.
ক্লাসে বসে আছে পুনম। তার পাশে একটি মেয়ে এসে বসলো।
মেয়েটি পুনমের উদ্দেশ্যে বললো-
হ্যালো আমি সুইটি।
-সুন্দর নাম।
-তোমার নাম কি?
-পুনম।
-পুনন?
-নাহ, পুনম।
-বেশ আনকমন নাম তো!
-আমার তো ভালো লাগেনা।
-কি যে বলোনা! আমার নাম এমন আনকমন হলে আমি তো গর্ব করে বলতাম।
-তোমার নামও সুন্দর। মিষ্টি!
.
দুজনে কথার ফুলঝুরি খুলে ফেললো। তাদের দেখে মনেই হবেনা মাত্রই পরিচিত হয়েছে তারা।
.
.
.
নুসাইবার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো তাকে রানবী।
রানবীর বন্ধুরা দূরে দাঁড়িয়ে রইলো।
রানবী তাকে কি বলছে তারা শুনতে পাচ্ছেনা।
একটু পরেই নুসাইবা চলে গেলে, রানবী বন্ধুমহলের দিকে এগিয়ে আসলে বাদশা বললো-
নুসাইবা যদি পুনম কে তোর সম্পর্কে সবটা বলে দেয় তবে তোর লাভ স্টোরি শুরু হবার আগেই তো শেষ হয়ে যাবে।
.
রনি সহমত পোষণ করে বললো-
হ্যাঁ রে। কারণ পুনম মেয়েটা এমনি। সবটা জেনে গেলে তোর দিকে ফিরেও তাকাবেনা।
.
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে রানবী বললো-
এতো চিন্তা করিস না। ঘায়েল যখন হয়েছি ঘায়েল করেও ছাড়বো।
.
এতক্ষণ আকিব চুপচাপ থাকলেও এপর্যায়ে বলে উঠলো-
পুনমের যদি বফ থাকে?
.
রানবী কোনো কিছু না ভেবেই বললো-
আরে থাকবেনা।
-কি করে বুঝলি? চিনিসই বা কতোদিন হলো?
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে রানবী বললো-
মনের টান বন্ধু! মনের টান এটা। ওকে দেখেই তো বুঝেছি। ও কেবলই আমার!
-থাকতেও পারে বফ। খবর নিয়ে দেখ। অন্য কাউকে ভালোবাসলে কোনো চান্স নেই বন্ধু।
.
.
.
সুইটির সাথে কলেজ থেকে বের হচ্ছে পুনম।
সুইটির ফোন আসলে সে রিসিভ না করে কেটে দিলো কলটা।
পুনম বললো-
কে?
-প্যারা ফোন দিয়েছে।
-প্যারা কে?
-আরে বফ।
.
সুইটির কথা শুনে পুনম হাসতে হাসতেই বললো-
বফ প্যারা হয় বুঝি?
-হু। কেনো তুমি প্রেম করোনা।
-উহু।
-মিথ্যে কথা। এই যুগের মেয়ে হয়ে প্রেম করোনা মানা যায়!
-আমি তো আগেও মহিলা স্কুল আর কলেজে পড়েছি। তাই এসবে ইন্টারেস্ট কম হয়তো।
-তোমার ফ্রেন্ডরাও বুঝি প্রেম করতো না?
-করতো অনেকেই।
-তবে?
-আমাকে দিয়ে এসব হবেনা।
.
কলেজ থেকে বেরিয়েই সুইটি দেখা পেলো রনির। রনির পাশে রানবী, বাদশা ও আকিবকেও দেখতে পেলো।
এদিকে সুইটির পাশে পুনমকে দেখে অবাক হয়ে গেলো রানবী ও তার বন্ধুরা।
সুইটি রনির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।
তা দেখে পুনম ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
তুমি ওকে দেখে হাসছো কেনো?
-আরে এটাই তো আমার প্যারা টা।
.
অবাক চোখে তাকিয়ে পুনম বললো-
তোমার বফ?
-হু।
-মাত্রই তো এডমিশন নিলে। বফ কখন হলো সে?
-আগে থেকেই ছিলো। এখন পাশাপাশি কলেজ!
.
মুখটা ফ্যাকাসে করে পুনম বললো-
ওহ!
.
রানবী রনির উদ্দেশ্যে বললো-
এই ব্যাটা ডাক দে তোর গফ রে।
.
রানবীর কথামতো রনি ইশারা দিয়ে সুইটি কে ডাকতেই, সে পুনমের উদ্দেশ্যে বললো-
চলো আমার সাথে।
-কোথায়?
-আমার বফ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই তোমাকে।
-আমি আসি। তুমি যাও।
.
সুইটি পুনমের হাত ধরে টানতে টানতে বললো-
আরে চলো চলো।
.
রানবীদের পাশে এসেই সুইটি বললো-
ও আমার নতুন বান্ধবী পুনম।
.
রানবীরা সকলে একইসাথে বলে উঠলো –
হ্যালো পুনম!
.
পুনম দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
হ্যালো ভাইয়ারা! আপনাদের তো আমি চিনি।
.
সুইটি বললো-
তাই নাকি?
-সেই কলেজ দিন থেকেই তারা আমার বড় ভাই হয়েছে। আর ওদের লিডার হলো উনি।
.
রানবীর দিকে দেখিয়ে কথাটি বলেছে পুনম।
রানবী হালকা কেশে বললো-
আমার একটা নাম আছে। রানবী।
-ওহ হ্যাঁ! রানবী ভাইয়া।
-হুম।
-আচ্ছা আমি আসি। বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি।
.
পুনম চলে যেতেই রনি সুইটির উদ্দেশ্যে বললো-
কতোটুক জানো ওর সম্পর্কে?
-কার?
-পুনমের?
-ওহ! চট্রগ্রাম থেকে এসেছে সে এখানে ফুফুর বাসায়।
.
কথাটি শুনেই রানবী বললো-
চট্রগ্রাম?
-হু।
-ওখান থেকে ঢাকা কেনো?
-পড়তে এসেছে।
.
আকিব বললো-
ওর কোনো বফ আছে কিনা জিজ্ঞাসা করিও আপু।
-নেই তো।
-সিউর?
-হু। একটু আগেই জানলাম। কিন্তু কেনো?
-আমাদের রানবী প্রেমে পড়েছে ওর।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে সুইটি বললো-
ও রানবী ভাইয়ার টাইপের নয়।
-আরে রানবী সত্যিই এবার প্রেমে পড়েছে। এখন তো তুমি ওর বান্ধবী। তোমার হেল্প লাগবে।
.
সুইটি বললো-
নো নো নো! ইটস ইম্পসিবল ফর মি।
.
রনি বললো-
সুইটি আমার জন্য তুমি…
.
রানবী গম্ভীরমুখে বললো-
আমার ভালোবাসা আমি জয় করতে জানি। সুইটিকে বিরক্ত করিস না।
.
কথাটি শুনে সুইটি বললো-
মারহাবা! কথাটির মাঝে আলাদা একটি ভাষা আছে। যেটা সত্যিকারের ভালোবাসার উক্তি। কোনো সাহায্য লাগলে বলবেন ভাইয়া।
.
.
.
রেস্টুরেন্টে বসে আছে মাহিম ও ইপশিতা।
ইপশিতার উদ্দেশ্যে মাহিম বললো-
কি খাবে বলো?
-কিছু খাবার ইচ্ছে নেই।
-কিছু না খেলে এখানে বসে থাকাও যাবেনা।
-তুমি খাও!
-বেশ, তাই খাবো।
.
গম্ভীর গলায় ইপশিতা বললো-
হুম তোর কাজ তো এগুলাই! এখন আমাকে দেখিয়ে আমার সামনে বসে বসে গিলবি।
.
মৃদু হেসে মাহিম বললো-
তোমাকে তো খেতেই বললাম।
-বলতে কেনো হবে! অর্ডার করতে পারছিস না?
-আচ্ছা করবো।
.
চুপ হয়ে গেলো ইপশিতা।
মাহিম খেয়াল করলো তার নাক, কাল লাল হয়ে আছে।
অতিরিক্ত রাগ উঠলে এমনি হয় ইপশিতার।
কিন্তু মেয়েটা আজকাল কারণে অকারণে রাগে।
এই যেমন এখন রাগলো কোন কারণ ছাড়াই!
.
.
.
রানবীরা সামনে দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো, ইপশিতা কথা বলছে পুনমের সাথে।
পুনম বাসায় না গিয়ে ইপশিতার সাথে কথা বলছে!
.
আকিব হতাশ কণ্ঠে বললো-
আজ শেষ সব!
.
(চলবে)