#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#part_4_5_6
“তুই খুব ভালো করেই জানিস,, সমস্যা টা কোথায়। তারপরেও যখন যেতে চাইছিস তখন যা,, আমি তো তোর কোনো কাজেই বাধা দেই না, আজও দিবো না।
গাড়ি থেকে নেমেই চোখ পড়লো নিবিড়ের ঘরের জানালাটার দিকে। ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস এলো,,সেটা সুখের না দুঃখের পূন্য বুঝতে পারলো না। ভেতর থেকে আয়েশা আক্তার আর তার স্বামী আশরাফ আহমেদ বেরিয়ে এলেন। পূন্য, তিয়ান, আর তৃপ্তি কে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
রূপন্ত সোফায় বসেছিলো। পূন্যকে বেশ অবাক হলো, তার থেকেও বেশি খুশি হলো। কারন তার ভাইয়া আজকে থেকে আবার নরমাল বিহেভ করবে সবার সাথে। পূন্য আপুর কাছে যাদুর লাঠি আছে।
হাতে খাবার নিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে পূন্য নিবিড়ের ঘরের দিকে যাচ্ছে। তার খুব ভয় করছে। তৃপ্তি আর রূপন্ত তিয়ানকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে,, এলাকা একটু ঘোরে দেখানোর নাম করে নিয়ে গেছে। নিবিড়ের ঘরের সামনে এসে দাড়ালো পূন্য। ঘরের ভিতর থেকে গিটারের টুং টাং আওয়াজ আসছে। পূন্য দরজায় ধাক্কা দিলো। গিটারের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো।
–” কতোবার বলবো,, আমি একটু একা থাকতে চায়। আর আমাকে আলগা পিরিত না দেখালেও চলবে।”
–“নিবিড় ”
পূন্য নিবিড়কে ডাকলো। ভিতরে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর দরজা খুলার শব্দ হলো। পূন্য দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। রুমটা এতো অন্ধকার যে কোথায় কি আছে বলা মুশকিল৷ তারপরেও হাতড়াতে হাতড়াতে একটা টেবিলের উপর খাবার প্লেট টা রাখলো পূন্য। তারপর এগিয়ে গেলো জানলাটার দিকে।
–” খোলো না,,, আলো বিরক্ত লাগে, সহ্য হয় না”
পূন্যকে জানালার কাছে যেতে দেখে বললো নিবিড়
–“আলো ছাড়া যে সব অন্ধকার,, আলোতেই বাঁচতে হয়। অন্ধকারে বাচা যায় না।”
কথাটা বলতে বলতে জানালা টা খুলে দিলো পূন্য। দুতলা বাড়ির উপর থেকে দেখা যাচ্ছে তিয়ানদের,, তবে অনেক দূরে। পূন্য নিবিড়ের দিকে ঘোরে দাড়ালো। নিবিড়ের গায়ে কোনো শার্ট নেই,, শুধু প্যান্ট পড়ে আছে। শার্ট নেই বিধায় পূন্যর চোখ প্রথমেই তার বডির উপর পড়লো,, জিম করা বডি,, চওড়া কাঁধ, লোমশ বুক, নিবিড় যার চেহারার দিকে তাকালে মন প্রসন্ন হয়।মাথা ভর্তি চুল, তার তৃষ্নার্ত চোখের দিকে যে কেউ তার তার মধ্যে হারানোর জন্য প্রস্তুত থাকবে। তার ঠোঁটের লেগে থাকা হাসি,, আশি বছরের বুড়িকেও তার প্রেমে ফেলতে বাধ্য করবে।
নিবিড় শার্ট পড়তে লাগলো।
–” অন্ধকারে থেকে তুমি ফর্সা হয়ে গেছো।”
পূন্য মৃদু হেসে বলল।
–“আমি কালো ছিলাম কবে??”
–“মাথার চুলটা এলোমেলো করে রেখেছো,,ঠিক করো।”
–“তুমি ঠিক করে দাও।”
পূন্য দুপা এগিয়ে এলো,,নিবিড়ের পায়ের ভর দিয়ে দাড়িয়ে ওর মাথার চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো। নিবিড় পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে পূন্যকে আরেকটু উপরে তুললো। নিবিড় অনেক লম্বা। তাই এই ব্যবস্থা। মাথার চুল ঠিক করে পূন্য নিবিড়ের পা থেকে নামতেই নিবিড় ওকে জড়িয়ে ধরলো। চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো পূন্য।
–“কেনো এসেছো??”
–“প্রেম করতে!!! না,, তোমাকে বুঝানোর জন্য এসেছি। তুমি যা করছো তা ভূল করছো। আবেগে বশীভূত হয়ে করছো। তুমি বাস্তবে ফিরে এসো।”
–“আমি বাস্তবেই আছি।”
নিবিড় আরো শক্ত করে পূন্যকে জড়িয়ে ধরলো,, তারপর দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরলো। পূন্যর কপালে কপাল লাগিয়ে,, নাকের সাথে নাক লাগিয়ে দাড়িয়ে রইলো খানিকক্ষণ। আস্তে আস্তে নিবিড়ের ঠোঁট এগিয়ে যাচ্ছে। পূন্য ওর মুখ ঘুরিয়ে নিতেই নিবিড় গালে চুমু দিলো। পূন্যর গালে ঠোঁট রেখেই নিবিড় হাসলো।
–” মুখ ঘুরিয়ে নিলে যে।”
–“কারন তুমি যেটা করতে যাচ্ছিলে সেটা অন্যায়।”
নিবিড় পূন্যকে ছেড়ে দিলো। তারপর একটা সিগারেট জ্বলালো।
–“নিবিড়, একটা কথা বলবো রাখবে??”
–“হুম,, বলো।”
–“আগে বলো রাখবে।”
নিবিড় পূন্যকে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলো।
— “এই তোমার মাথায় হাত রেখে বললাম। আর তুৃমি যা বলো আমি সব পালন করি।”
–” ফুপা- ফুপু যে মেয়েকে পছন্দ করেছে, তাকে বিয়ে করে নাও প্লিজ। রাজি হয়ে যাও। আর আগের মতো জীবন কাটাও। এই অন্ধকার ঘরে বসে থাকা তোমার কাজ নয়”
— “সরি পাখি,, আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না।ভালোবাসা একবারেই হয়, আমি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবো না, সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। তার চেয়ে ভালো আমি তোমার শেষ কথাটা মেনে নিলাম,,আগের মতো জীবন কাটাবো।
নিবিড় পূন্যকে ছেড়ে দিয়ে দিয়ে চেয়ারে বসে গিটার টা হাতে নিলো। পূন্য নিবিড়কে চেয়ার থেকে টেনে তুললো,,নিবিড় পূন্যর দিকে তাকালো।
তারপর বললো,
” দেখো,, পূন্য তোমার এই আবদার আমি রাখতে পারবো না।”
“তোমাকে রাখতেই হবে। তুমি যে আমার মাথায় হাত রেখে বলেছো।দেখো, এই বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে।তোমার জীবন এভাবে কাটতে পারে না।”
“আমি বিয়ে করলে আমার বিয়ে আসবে তুমি??”
পূন্য নিবিড় দুজনেই হাসলো। খাবারের প্লেট টা নিবিড়ের হাতে তুলে দিলো পূন্য। নিবিড় খাবারটা টেবিলের উপর রেখে দিলো। পূন্যর দিকে তাকালো,,
–” আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না তো, আসবে তো আমার বিয়েতে??”
— ” তুমি যদি চাও, তাহলে অবশ্যই আসবো। ”
–” Great,,, ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। চলো নিচে যায়,, তোমার হাজবেন্ডের সাথে দেখা করি!
নিবিড় পূন্য নিচে নেমে এলো।।
আয়েশা আক্তার প্রায় তিনদিন পর ছেলেকে দেখলো। খুশিতে তার চোখে পানি এসে গেছে।ওনি এগিয়ে গেলেন নিবিড়ের সাথে কথা বলতে, কিন্তু নিবিড় ওনাকে দেখে বাইরে চলে গেলো। নিবিড়ের আচরণে আয়েশা আক্তার কষ্ট পেলেন, কিন্তু খুশি হয়েছে এটা ভেবে যে নিবিড় পূন্যকে ভূলে যাবে,।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে তিয়ান রা বিদায় নিলো। গাড়ি চলছে,,পূন্য বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, রাস্তার পাশের প্রকৃতি দেখছে। তিয়ান পূন্যকে দেখছে। আজকে অনেক সুন্দর লাগছে পূন্যকে,, যাওয়ার সময় ওকে এতো বেশি সুন্দর লাগে নি। কিন্তু এখন ওকে খুব সুন্দর লাগছে।
সূর্যের আলো এসে পড়ছে ওর মুখে,, বাতাসে ওর চুলগুলো ওর মুখে এসে পড়ছে,, কখনো পূন্য সরিয়ে দিচ্ছে,,আবার কখনো বা এভাবেই বসে আছে। তিয়ান এই কদিনে ওকে একটু একটু বুঝতে পারছে, চিনতে পাচ্ছে পূন্যকে।
তিয়ান পূন্যকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তৃপ্তি বললো তুমি নাকি বেশ ভালো গান গাও। তো আমাকেও শুনাও একটু তোমার গান।”
“অন্যকোনো দিন”
পূন্য মুচকি হেসে বললো। লুকিং গ্লাসে পূন্যকে দেখে তিয়ান ও হাসলো।
তৃপ্তি খুব ছটফটে টাইপের, কথা ছাড়া দু মিনিট ও বসে থাকতে পারে না। তাই সে বকবক শুরু করে দিলো। নতুন কেউ আসলে সে তাকে ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত যত কথা আছে সব বলবে,, পারসোনাল বলে আর কিছু থাকে না। এতো মিষ্টি চেহারার মেয়ের বকবক শুনে তৃপ্তির বাবা ও বিরক্ত হন। তবে আজ তৃপ্তি অনেক চুপচাপ আছে। ও ওর বোনের উপর রেগে আছে। পূন্যকে বারবার করে না করেছিলো নিবিড় ভাইয়াদের বাসায় যেতে, তৃপ্তি চায় না তার বোনের জীবনে আবার কষ্ট নেমে আসুক, আয়েশা আক্তারের নিচু চিন্তা ভাবনায় তার বোনের স্বপ্নগুলো আবার রক্তাক্ত হোক।
রাত বারোটা,,, বেলকুনিতে বসে আছে পূন্য। ঘুম আসছে না তার,, নিবিড়ের কথা বারবার মনে পড়ছে,, নিবিড় কি বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে??
তিয়ান এসে পূন্যর পিছনে দাড়ালো। এই মেয়েটা কিছুতো একটা লুকাচ্ছে তার কাছে, কিন্তু সেটা কি?? তিয়ান পূন্যকে ডাকলো,
–পূন্য
— জ্বি,, বলুন,
–তোমাকে একটা প্রশ্ন করি??
–হুম,
— দেখো আমার প্রশ্নটা করা উচিত না, কারন আমি প্রথম দিনেই বলেছিলাম আমি তোমার অতীত সম্পর্কে জানতে চাইবো না, কিন্তু আজ জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না, তোমার কি কোনো অতীত আছে?? যার জন্য তুমি…
না থাক বলতে হবে না। তোমার যেদিন ইচ্ছা হবে সেদিন বলো। আমি কিছু জানতে চাই না।
তিয়ান কথাটা বলতে গিয়েও বললো না, হয়তো মেয়েটায় এমন গম্ভীর হয়ে থাকে, কথা কম বলে,, ওর সেইরকম কোনো অতীত নেই। সে অযথাই হয়তো ওকে সন্দেহ করছে। তিয়ান চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো।
পূন্য বেলকুনির গ্রিল শক্তকরে ধরে দাড়িয়ে রইলো। আজ তিয়ান ওর অতীত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলো। যদি জানতে চাইতো তাহলে পূন্য কি বলতো?? সত্যিটা বললে কি তিয়ান ভূল বুঝবে তাকে!!!
চলবে,,,,,
#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_5
পূন্য চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লো তিয়ান পাশে।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন তিয়ানের বুকে শুয়ে আছে পূন্য। পূন্য তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো। নিজের কাপড় ঠিক করতে লাগলো। তিয়ান ও উঠে বসলো। সে বুঝতে পারছে পূন্য বিব্রতবোধ করছে৷
— I’m sorry punno… actually,,,
পূন্য তিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে, তারপর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই তিয়ান পূন্যকে বললো,,
” পূন্য,, কফি পাওয়া যাবে? ”
পূন্য গিয়ে কফি নিয়ে আসলো।
তিয়ান কফিতে চুমুক দিতে দিতে পূন্যর দিকে তাকালো। আজ পূন্য একটু বেশিই করে ফেললো না। ঘুমের মধ্যে সেই তো এসেছে, তাহলে,, আর আমার মতো কেইবা এতো সময় দিয়েছে। আমি এত কিছু করছি আর পূন্য কি করছে, আমার সাথে হেসে কথা পর্যন্ত বলে না। কেনো?? এত চুপচাপ কেনো থাকে এই মেয়ে।
প্রায় তিনদিন পর নিবিড় আজ অফিসে যাচ্ছে। ছেলের হঠাৎ অফিস যাওয়া বন্ধের কারন টা আশরাফ হাসেব আজও জানেন না। তিনি আজকে আরোও খুশি হয়েছে কারন নিবিড় তার পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করবে বলেছে।
নিবিড় গাড়ি ড্রাইভ করছে। হাতের দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট, একটু পর পর টান দিচ্ছে। পূন্য কতোবার না করেছে সিগারেট খেতে, কিন্তু নিবিড় ছাড়তে পারে নি।না ছেড়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে। নইলে এখন নিবিড়ের কি হতো কে জানে?? অফিসে ঢুকে সোজা নিজের কেবিনে চলে গেলো। কাজে মন বসাতে পারছে না,কারন সে বিয়েটা মন থেকে করতে পারবে না। কিন্তু কি আর করা বাবার মান সম্মান রাখতে নিবিড়কে করতে হবে এই বিয়েটা। তার জীবন তো নষ্ট হয়েই গেছে, শুধু শুধু আরো একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর তিয়ান আর পূন্য সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিয়ানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অরু দাড়িয়ে থেকে তার বান্ধবীকে বিদায় দেয়। গাড়িটা বাসার গেইট পার হতেই অনন্যা ছোটে আসলো। পূন্য গাড়ি থেকে নামতেই ওকে জড়িয়ে ধরলো।
অনন্যা বলতে লাগলো,
” ভাবিইই,,, তুমি জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি। উফফফফ,,, তোমাকে ছাড়া একদম ভালো লাগে না,,, খালাম্মারও ভালো লাগে না। ”
পূন্য হাসলো,,
“এই তো আমি এসে গেছি, এখন ভালে লাগবে। চলো, ভিতরে যাই”
পূন্য আর অনন্যা ভিতরে চলে গেলো।
তিয়ান দাড়িয়ে থেকে পূন্য আর অনন্যার কথা শুনছিলো। পূন্য সবার সাথে হেসে কথা বলে শুধু তার সাথেই গম্ভীর হয়ে কথা বলে। তিয়ান তার মায়ের সাথে দেখা করে অফিসে চলে গেলো। কারন বাড়িতে বসে থেকে সে আর সময় নষ্ট করতে চায় না। আর না পূন্যের মোহে পড়তে চায়।
অনন্যা বকবক করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে তৃপ্তির মতো। থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। পূন্যর হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে। হঠাৎ অনন্যা মুখ কালো করে বলল
” ভাবি, আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি, আজও ও করছি তুমি আমাকে মাফ করে দিও।”
কথাটা বলে অনন্যা উঠে চলে গেলো।পূন্য কিছুই বুঝতে পারলো না। অনন্যা তো ওর সাথে কিছুই করে নি। তাহলে যে বললো অন্যায় করেছে। হয়তো মেয়েটা দুষ্টুমি করছে, পূন্য উঠে মোর্শেদা বেগমের কাছে গেলো।
মোর্শেদা বেগম পূন্যকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলেন৷ মেয়টার মধ্যে একটা অদ্ভুত রকমের মায়া কাজ করে। তিনি পূন্যকে ইশারা করে তার পাশে বসতে বললেন। পূন্য তার পাশে বসে পড়লো।
মোর্শেদা বেগম চাইছেন সংসারের দ্বায়িত্ব পূন্যর হাতে তুলে দিতে। এখন তো পূন্যই এই বাড়ির বউ। মোর্শেদা বেগম বললেন,,
“দেখো বউমা,, আমি আর পাঁচজনের মতো মুখে এক মনে আরেক এটা করতে পারি না। আমার মুখে যা মনে, ও তা। আমি চাই আমার এই সংসারের দ্বায়িত্ব এখন তুমি নাও। কারন তুমি বাড়ির বড় বউ। ভয় পেয়ো না,, তুমি একা কোনে কাজ করবে না, চাকর- বাকরাই করবে তুমি শুধু দেখবে। আমার এখন বয়স হয়েছে, এখন আমি শুয়ে বসে,, আল্লার নাম জপতে জপতে মরতে পারলেই হলো।”
পূন্য কিছু বললো না, শুধু মাথা নাড়লো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পূন্য ওর রুমে ঢুকে মোবাইল টা হাতে নিতেই দেখলো তৃপ্তি কল দিয়েছে। পূন্য কল দিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করা হলো। মনে হয় এই কলটার জন্য অপক্ষা করেছিলো। ওপাশ থেকে শুধু বললো,
— বুবুন,, নিবিড় ভাইয়া বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে।
তৃপ্তির কথা শুনার পর পূন্য কিছুক্ষন বসে থাকলো। তার খুশি হওয়া উচিত না কষ্ট পাওয়া উচিত সে বুঝতে পারছে না। তবে এটা জানে নিবিড় আর তার থাকবে না। তাতে কি সেও তো আর নিবিড়ের নেই। তার খুশি হওয়ারই কথা, নিবিড় যে আবার নতুন করে জীবন করবে। সেতো এটাই চেয়েছিলো যে নিবিড় আবার নতুন করে বাঁচুক। মোবাইল টা বালিশের উপর রেখে দিলো।
পূন্য অনন্যার রুমে গেলো। কিন্তু অনন্যাকে রুমে পেলো না। হয়তো সে বেলকুনিতে আছে। এক পা বাড়াতেই তার চোখ আটকে গেলো টেবিলের উপর রাখা কালো রংয়ের একটা ডায়েরির উপর। পূন্য এগিয়ে গেলো ডায়েরি টা নিতে,, এই ডায়েরি টা তাকে অদ্ভুত ভাবে টানছে, কেনো মনে হচ্ছে এই ডায়েরি টা তে কিছু একটা আছে। হাত বাড়িয়ে যখন ডায়েরি টা নিবে ঠিক তখনি অনন্যার গলা শুনলো পূন্য।
অনন্যা একটু ঘাবড়ে গেছে। পূন্য যে তার রুমে আসবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি। আর একটু দেরি করে আসলে তো ভাবি,,,
অনন্যা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
–ভাবি,, তুমি এইখানে??
“না, মানে তোমাকে খুজতে আসছিলাম আর কি।”
পূন্য কথাটা বলতে বলতে অনন্যার রুমের বেলকুনিতে গেলো। বেলকুনি থেকে দূরে একটা অনেক বড় গাছ দেখা যাচ্ছে । গাছের নিচটা ইট দিয়ে বাধানো। ঐখানে একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটা এইদিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে। অনন্যাও পূন্যর পাশে এসে দাড়ালো। ওর দৃষ্টি ও সেই ছেলেটার উপরে। অনন্যা পূন্যকে একবার দেখলো,,পূন্য খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে ছেলেটা কে,
— “বলছিলাম কি ভাবি,, চলো আমরা রুমে গিয়ে বসি। এখানে দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।”
অনন্যার কথা শুনে পূন্য অনন্যাকে দেখলো,, তারপর দু পা এগিয়ে এলো।আবার পিছনে ঘুরে দেখলো,ছেলেটা এই দিকেই তাকিয়ে আছে, পূন্য রুমে চলে এলো। অনন্যার রুমটা খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কিন্তু চোখটা বারবার ঐ ডায়েরিটার উপরে যাচ্ছে।
পূন্য অনন্যা কে বললো,,
–“অনন্যা, তুমি তখন আমাকে কিছু একটা বলেছিলে??সেটার মানে কি??
–“কি বলেছিলাম?”
–“এই যে তুমি আমার সাথে অন্যায় করছো??”
পূন্যর কথা শুনে অনন্যা হো হো করে হেসে উঠলো।
–” ভাবি, তুমিও না, আমি তো এমনিতেই বলেছিলাম। মজা করেছি।”
অনন্যার সাথে তাল মিলয়ে পূন্য হাসলো। কিন্তু কেনো জানি মনে অনন্যা একটা গভীর রহস্যের উৎস, কখনো তার কথাবার্তা স্বাভাবিক, আবার কখনো অস্বাভাবিক।অনন্যাকে কেনো যেনো মনে হয় রহস্যময়ী নারী, না রহস্যময়ী মেয়ে।
পূন্য রুমে এলো। এখনো মাথায় অনন্যা, ওর ডায়েরি, আর সেই ছেলেটার কথা ঘুরছে। অনন্যা কিছু তো একটা লুকাতে চেষ্টা করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। পূন্য মোবাইল টা হাতে নিলো। অপরিচিত একটা নাম্বার। তাই সে মোবাইলটা বালিশের উপরে রেখে দিলো। পূন্য অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলে রিসিভ করে না। কিন্তু সেই নাম্বার থেকে তিনবার কল দেওয়া হয় তারপর একটা মেসেজ করা হয়, তারপর আবার তিনবার কল দেওয়া হয়। পূন্য আর দেরি করলো না। এই নাম্বার যে নিবিড়ের। নিবিড় তাকে কল দিচ্ছে। কারন যদি পূন্য কোনো কারনে কল রিসিভ না করতো তাহলে নিবিড় তিনবার কল দেওয়ার পর একটা মেসেজ করতো,এটা নাকি ওর স্টাইল।
নিবিড় মৃদু হাসলো, স্ক্রিনে পূন্যর নাম্বার টা দেখে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিলে পূন্য কেনো যে রিসিভ করে না, সে বুঝে না। তবে মাঝে মাঝে রিসিভ করে সেই লেভেলের ঝাড়ি দেয়, ভালোই লাগে তখন শুনতে। রিসিভ করলো নিবিড়,
কেউ কোনো কথায় বলছে না, দু পাশেই নিরবতা। সকল নিরবতা ভেঙে নিবিড়েই প্রথম কথা বললো,,
— “পুন,, ”
নিবিড়ের যখন মন ভালো থাকে আর যখন রেগে থাকে তখন পুন্য কে পুন বলে ডাকে। আজ নিবিড় রেগে আছে। রাগের কারন পূন্য।
ওপাশ থেকে পূন্যর গলা পেলো,,,
— ” হুম,”
–“আমি তো বিয়ে করছি। তুমি আসবে না”
–” আসবো না কেনো, অবশ্যই আসবো।”
–“সহ্য করতে পারবে তো?”
–“রাখছি এখন,”
পূন্য কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলো পূন্য। কষ্ট হচ্ছে যে তার।
নিবিড় ফোনটা দেখে একটু মলিনভাবে হাসলো। সে জানে পূন্য কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না।নিবিড় নিজেও মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু ওর বাবার সম্মানের জন্য এই বিয়েটা যে করতেই হবে।
সারাদিনে অফিসের কাজ সামলে তিয়ান একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছে। রুমে এসেই ধপ করে শুয়ে পড়লো। কিছু শুয়ে থাকার পর উঠে বসলো, এক গ্লাস পানি খেয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে পূন্য সোফায় বসে আছে,সেই আগের মতো মলিন চেহারা। তিয়ান পূন্যকে ডাকলো। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। এখন তিয়ানের রাগ পঞ্চমে উঠে গেছে।
–“পূন্য, তোমার মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো? আরে বাবা সকালে যা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। আর এক বিছানায় থাকলে এটা হতেই পারে, এর থেকেও বড় কিছু হতে পারে। আর সব সময় এমন মনমরা হয়ে বসে থাকো কেনো? কেউ দেখলে ভাববে আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করেছি,,”
তিয়ান কিছুক্ষণ থামলো। পূন্য ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা তো কিছুই বলে না। মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।
–” পূন্য, কিছু তো বলো?? এভাবে চুপ থাকা আমার একদম ভালো লাগে না। ”
–“আপনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।”
পূন্য কথাটা বলে বেলকুনিতে চলে গেলো। তিয়ান বুঝতে পারছে না, এই মেয়েটা কোন ধাতু দিয়ে গড়া। সে তো জোরে জোরে কথা বললো আর পূন্য ঠান্ডা গলায় একটা কথা বলে চলে গেলো।
তিয়ান পূন্যর পিছু পিছু বেলকুনিতে গেলো। বেলকুনিটা রুমের তুলনায় অনেক অন্ধকার। তিয়ান পূন্যকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
–“পূন্য, বর্তমানে ফিরে এসো। অতীতে কি ছিলো, তা নিয়ে আর ভেবে না। আর স্বাভাবিক আচরণ করো। আমি এরকম আচরণ একদম নিতে পারছি না।
চলবে,,,
#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_6
তিয়ানের মুখে পূন্যর নিশ্বাস পড়ছে। তিয়ান পূন্যর অনেক কাছে এসে পড়েছে। ওর ঠোঁট পূন্যর ঠোঁটের কাছাকাছি। হঠাৎ পূন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তিয়ান ঘোর কাটিয়ে উঠলো।
–সরি পূন্য,, সরি। আমি একদম এটা করতে চাই নি। প্লিজ,, বুঝার চেষ্টা করো।
পূন্য কিছু বললো না। সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। তিয়ান কিছুক্ষণ বেলকুনিতে দাড়িয়ে থাকলো, সে যেটা করতে চাইছে না, বারবার কেনো সেটাই করছে,, সে তো পূন্যকে কষ্ট দেওয়ার কথা জীবনেও ভাবতে পারে নি, কিন্তু আজ,,,
অনন্যা খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে দেখে পূন্য ঘুমিয়ে গেছে। অনন্যা পূন্যকে ডাকতে লাগলো, না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে। পিছন থেকে কে যেনো পূন্যকে ডাকতে নিষেধ করলো।
রুমে ঢুকলো তিয়ান।অনন্যাকে না করলো ডাকতে, অনন্যা চলে গেলো। তিয়ানেরও খেতে ইচ্ছে করছে না। পূন্যর দিকে একটু ঝুকে বসলো। কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে গেছে পূন্য।চোখের পানি শুকিয়ে দাগ হয়ে গেছে। তিয়ান শুকনো দাগগুলোই মুছে দিলো একবার। তারপর পূন্যর কপালে একটা চুমু খেলো। ঘুমের ঘোরেই তিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো পূন্য। তিয়ান আশায় আছে, কবে পূন্য তাকে জড়িয়ে ধরবে, তবে সেটা ঘুমের ঘোরে নয়। কবে আসবে সে দিন?
তিয়ান পূন্যর মাথাটা বালিশে রেখে, লাইট টা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।
আজ নিবিড়ের বিয়ে। বিষয়টা নিবিড়ের জন্য কতোটা পীড়াদায়ক সেটা নিবিড় এখন টের পাচ্ছে। পূন্যর উপর রাগ করে বিয়ে করবে বলে দিয়েছে,, কিন্তু এখন তো আর বিয়ে করতে মন চাচ্ছে না। কারন সে পূন্যকে চায়। তার জীবনে শুধু পূন্য আছে, অন্য কারো তো কোনো জায়গা হবে না। তাহলে সে কেনো বিয়ে করছে? একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার অধিকার তার নেই। কিন্তু এখন তো বিয়ে না করে তার উপায়ও নেই।
দরজায় নক করলো কেউ। নিবিড় দরজা খুলে দিলো। রুপন্ত দাড়িয়ে আছে।
নিবিড় বিরক্ত নিয়ে বললো,,
—” কিছু বলবি??”
—“হুম,, সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। আব্বু গিয়ে পূন্য আপুকে ওর শশুরবাড়ি থেকে নিয়ে এসে পড়েছে, আর তুমি রেডি হও নি এখনো। তারতারি করো।”
—“কিহ্??? পূন্যকে নিয়ে এসেছে মানে??”
— “মানে নিয়ে এসেছে। তুই জানিস তো আব্বু পূন্য আপুকে কতোটা ভালোবাসে,, পূন্য আপু বিয়েতে আসবে সেটা ওনি মানতে পারেন নি। তাই নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে।”
নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
তৃপ্তি আর অরুর মাঝে দাড়িয়ে আছে পূন্য। তৃপ্তি পূন্যকে একবার দেখলো। তারপর বললো,,
—” তুই ঠিক আছিস তো?বুবুন”
— “কি জানি,, মনে হয় ঠিক আছি। আবার মনে হচ্ছে ঠিক নেই। শরীরটা কেমন জানি করছে। আসতে চাই নি আমি,, আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। ”
অরু পূন্যর কাঁধে হাত রাখলো। কানে কানে বললো,,
—” এসে তো গেছিস । কিন্তু সহ্য করতে পারবি তো সব?? আর তোর হাজবেন্ড কোথায়? ”
—-” পারবো। আর ওনি অফিসে গেছেন।”
—“পারলে ভালো। ঠিক আছে চল”
পূন্যর মাথাটা কেমন জানি হালকা হয়ে গেছে,, আশেপাশের এত হইচই,কিন্তু ওর কাছে মনে হচ্ছে চারপাশ খুব নিরব,, চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে,, শরীরে কোনো শক্তিই পাচ্ছে না, পড়ে যাবে মনে হচ্ছে।
নিবিড় এখন রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করবে,, কিছুতেই সেটা দেখতে পারবো না সে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তৃপ্তির হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। তৃপ্তি ধরার আগেই অরু ধরে ফেললো পূন্য কে। অরু পূন্যকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,
— খারাপ লাগছে??? বাসায় চলে যাবি??
পূন্য মাথা নেড়ে হ্যা বললো। পূন্যর চোখ ছলছল করে উঠলো। অরু পূন্যকে শক্ত ধরে বললো,
—“তৃপ্তি, যাও আঙ্কেল কে বলো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে।”
সব জায়গা খুজে ফেলেছে তৃপ্তি । কিন্তু ফুপাকে কোথাও পায় নি, না রূপন্তকে পেয়েছে।
“এখন নিবিড় ভাইয়া যেখানে বসে আছে সেখানে যাই,, যদি ঐ খানে না পাই তাহলে হারানো বিজ্ঞাপ্তি দিতে হবে ওদের জন্য।”
বিড়বিড় করে বলতে বলতে ঐ খানে গেলো তৃপ্তি । অনেক মানুষ দাড়িয়ে আছে। ওদের কে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো তৃপ্তি । ঐ তো রুপন্ত বসে আছে নিবিড় ভাইয়ার সাথে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে আজ ওর বিয়ে হচ্ছে।
—” আরে রুপন্ত,, চল একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দে,, ববুন বাড়িতে যাবে,, ওর নাকি শরীরটা ভালো লাগছে না।”
কথাটা বলে তৃপ্তি নিজের মুখ চেপে ধরলো।
তৃপ্তির কথা শুনে নিবিড়ের হাত থেমে গেলো,, রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে যাচ্ছিলো,, কিন্তু এখন কলম টা আর পেপার স্পর্শ করে নি।
রুপন্ত কিছু বলার আগে নিবিড় প্রশ্ন করে বসলো।
— “তৃপ্তি,,, কি হয়েছে পূন্যর??”
তৃপ্তি জ্বিভে কামড় দিলো। হায় আল্লাহ, আমি কার সামনে কি বলে ফেলেছি। এখন কেউ নিবিড় ভাইয়াকে এখানে আটকে রাখতে পারবে না। এখন কি হবে,,,
নিবিড়— আমি গিয়ে দেখবো কি হয়েছে?
নিবিড় তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
—“নিবিড়, কি হচ্ছে এসব,, এখানে চুপপ করে বসো।”
কথাটা বলে আশরাফ আহমেদ তার ছেলেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার দেখলেন। মাঝে মাঝে তার ছেলেটা বোকার মতো কিছু কাজ করে। সবাই বলে বাড়ির বড় সন্তান নাকি একটু বোকাটে টাইপের হয়। অবশ্য কথাটা মিথ্যে নয়,, সেটা নিবিড় কে দেখলেই বুঝা যায়। তবে ওর মন ভীষন উদার। সবার জন্য বড় বেশি দুশ্চিন্তা করে, কারো বিপদ হলে সবার আগে ও চলে যায়,, এই এখন যেমন পূন্যর জন্য করছে।
তবে ওনিও এখন পূন্যর জন্য চিন্তা করছেন,,ওর কিছু হলে পূন্যর শাশুড়িকে কি জবাব দিবে। ওনি তৃপ্তির কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলেন।
তারপর বললেন,,
—“কি হয়েছে পূন্যর??”
— “কি জানি আঙ্কেল,, হঠাৎ করে বললো ওর নাকি ভালো লাগছে না,,খারাপ লাগছে,, আর বারবার বলছে বাড়ি যাবে।”
—“ও আচ্ছা,, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি,, তুমি ওর কাছে যাও।”
বেশ চিন্তিত গলায় বললেন আশরাফ আহমেদ ।
–“কি হলো নিবিড়,, এখনো বসে আছো কেনো? সাইন টা করো।” নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে একটু কঠোর গলায় বললেন আশরাফ আহমেদ।
বাবার কথা শুনে নিবিড় ওর ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো। পূন্য এই বিয়ে টা সহ্য করতে পারছে না,,ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাই এখান থেকে যেতে চাইছে। কলমটা হাতে তুললো নিবিড়, সাইন করছে, এই একটা সাইন ওর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে অবশ্য সে অনেক আগেই দূরে সরে গেছে শুধু তার মায়ের জন্য।কিন্তু তার প্রিয় মানুষটার জায়গায় আজ অন্য কেউ চলে আসবে ভাবতেই চোখটা ছলছল করে উঠলো।
অরু পূন্যকে বাসায় নিয়ে এলো।অরু পূন্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনন্যা একটুক্ষন বসে ছিলো ওদের কাছে, তারপর চলে গেলো।
অরু কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বললো,
—“পূন্য,, তোর জীবনে না এখন শুধু তিয়ানকে রাখ, এই তিয়ানেই তোর জীবনের সব, নিবিড় নয়। তাই নিবিড় কি করলো, কি করলো না তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। আমাকে এখন যেতে হবে। ”
অরু চলে গেলো। পূন্য উঠে বেলকুনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসলো। কিছুক্ষণ পর একটা গাড়ি এসে ঢুকলো গেইট দিয়ে। তিয়ান এসেছে মনে হয়।
তিয়ান রুমে ঢুকে পূন্যকে দেখলো না। ভাবলো হয়তো এখনো আসে নি বিয়ে বাড়ি থেকে। হঠাৎ কান্নার আওয়াজ পেয়ে তিয়ান আওয়াজের উৎস খুঁজতে খুঁজতে বেলকুনিতে পৌঁছে গেলো। তিয়ান কিছুই বুঝতে পারলো না। শুধু পূন্যর কাঁধে হাত রাখলো। পূন্য ঘাড় ঘুরিয়ে তিয়ানকে একবার দেখলো। তিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। তিয়ান বুঝতে পারছে না কি করবে? কেনো কাঁদছে পূন্য?? কিসের জন্য কাঁদছে?? তিয়ান পূন্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইলো।
চলবে,,