গোধূলি লগ্ন – পর্ব ১-৩

0
622

#গোধূলি_লগ্ন
writer: Tabassum Tajnim
Part: 1+2+3

— তোমার পা টা কি ধরতে পারি????

সামনে বসে থাকা লোকটার কথা শুনে আমি চমকে গেলাম। শুধু চমকে গেলাম বললে ভূল হবে,ভয় ও পেয়েছি একটু। বাসর রাতে স্বামী স্ত্রীর পা ধরবে!! স্বামী হয়ে স্ত্রীর পা ধরবে। যতই মর্ডাণ হই না কেনো,, তবুও স্বামী হয়ে স্ত্রীর পা ধরাটা মানায় না। আমি পাগুলো শাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে নিলাম। কি বলে এই লোকটা,, আমার পা ধরবে মানে??

—কি হলো? ধরতে পারবো না??

তিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হুম, লোকটার নাম তিয়ান। আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শাড়ির ভিতর থেকে পা গুলো বের করলাম।
তিয়ান আমার পায়ের পাতায় হাত রাখতেই আমি শিহরিত পা সরিয়ে নিতে চাইলে ও শক্ত করে ধরলো। ওর পান্জাবীর পকেট থেকে নুপূর বের করলো। একটা নুপূর আমার পায়ে পড়িয়ে দিলো। তারপর পায়ে আলতো করে একটা চুমু খেলো। আমি ওর প্রত্যেক স্পর্শে শিহরিত হচ্ছি। আরেকটা পা তুলে নিলো।

— পূন্য,,, তোমার পা কিন্তু অনেক সুন্দর। আলতা পরলে আরো বেশি সুন্দর লাগবে। তোমার পা দেখে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।
আমি ওর প্রত্যেকটা কার্যকলাপেই বিস্মিত হচ্ছি।। বান্ধবীদের কাছে ওদের বাসর রাতের গল্প শুনেছি,ওদের বর রা কিন্তু পায়ের প্রসংশা করে নি। তবে এই প্রথম কেউ আমার পায়ের প্রসংশা করলো। ভালোই লাগলো তবে,,, আমার চেহারা কি দেখতে এতোটাই খারাপ যে ওনাকে আমার পায়ের প্রসংশা করতে হলো।

— কি হলো,, আমি একাই তো কথা বলে যাচ্ছি। তুমি কিছু বলো?

কিছুক্ষণ ভেবে আবার তিয়ান বলা শুরু করলো।
— আমার তিনটা শর্ত আছে? সেগুলো আগে বলি??
১. আমাকে তুমি করে ডাকবে, আপনি ডাকবে না, কোনো জীবনেও না
২. আমি কোনোদিন তোমার অতীত নিয়ে মাথা ঘামাবো না। তুমিও কোনোদিন আমার অতীত জানতে চাইবে না। অবশ্য আমার অতীত বলতে কিছুই নেই।

৩. খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে অনীহা করা যাবে না। রান্না করতে হবে,, কারন আমি খেতে খুব ভালোবাসি।

অনুরোধ করছি আরেকটা,, আমার মা আর ছোট ভাইটাকে একটু দেখে রাখবে।

অবাক হলাম লোকটার কথা শুনে। যেটা আমাকে আদেশ করবে সেটা আমাকে অনুরোধ করে বললো!!!

— কি হলো,, বলো দেখবে তো??

— আপ,,,,

তিয়ান আমার মুখ চেপে ধরলো। হঠাৎ করে এইভাবে কাছে আসাতে আমি বিছানায় পড়ে গেলাম। ও আমার উপর পড়ে গেলো।

— শর্ত ভাঙ্গছো। আপনি নয় তুমি,,,,

আমি মাথা নাড়ালাম। ঐ দিকে ওনি আমার এত কাছে এসে গেছেন যে আমার হৃদস্পন্দন বেরে গেলো।
মনে হচ্ছে বুকের ভিতর কেউ হাতুরি পিটাচ্ছে,,

ওনি হাতটা সরিয়ে নিলেন। আবার বলতে বললেন।

— আমি খেয়াল রাখবো ওনাদের।

তিয়ান মুচকি হাসলো। ওর হাসিটা সুন্দর,,যে কোনো মেয়ের মনে দাগ কাটবে সেই রকম। কিন্তু আমার মনে সেইরকম কোনো দাগ কেনো এখনো কাটা হলো না। আমি তো চায়ছি নিবিড়কে ভূলে যেতে। সবাই তো তাই চায়। আমার মা, নিবিড়ের আম্মু মানে ফুপু, তৃপ্তি, অরু, সবাই চায় আমি নিবিড়কে ভূলে যাই। এই জন্যেই তো এই বিয়ে,,এই বাসর রাত, এই তিয়ান। যাতে নিবিড় আমাকে ভূলে মিতু কে বিয়ে করে। ওর সাথে সুখে থাকে। হুম, আমাকে এই তিয়ান নামক ছেলেটার সাথেই থাকতে হবে। চাইলেও আর আমি না চাইলেও। আমার গলায় তিয়ানের ঠোঁট লাগালো। গলায় একের পর এক চুমু দিচ্ছে। আস্তে আস্তে ও উপরে উঠতে লাগলো। আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হঠাৎ আমি আমার শাড়ির আচলে হালকা টান অনুভব করলাম। আমি আচলটা শক্ত করে মুঠো মেরে ধরলাম।
“নিবিড়”
মুখ থেকে অস্পষ্ট ভাবে ওর নাম টা বেরিয়ে গেলো। নাহ্, আমি পারবো না, এই ছেলেটার হতে। আমি নিবিড়ের, শুধু নিবিড়ের। তিয়ান আমার কপালে একটা চুমু দিলো, ওর গরম নিশ্বাস গুলো আমার মুখ পড়ছে। আঁচল টা অনেক শক্ত করে ধরে রাখলাম। চোখগুলো বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলাম। কাঁপতে লাগলাম,, ও যদি এখন জোর করে তাহলে আমি কি করবো???
—পূন্য,,, এই পূন্য,,,
তিয়ান ডাকছে,, আমি শুনতে পাচ্ছি। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
—হুম

— তুমি বোধহয় কমফোর্ট ফিল করছো না। ভয় পাচ্ছিলে এটা বলতে??? ভয় নেই,, হঠাৎ কারো সাথে এডজাস্ট করতে সময় তো লাগবেই। আমারি বুঝার দরকার ছিলো। তুমি শুয়ে পড়ো।

আমার কপালে আলতো করে একটা তিয়ান শুয়ে পড়লো। আমি অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লাম।।

পূন্য মেয়েটা দেখতে মন্দ না। কিন্তু আমি একটু বেশিই করে ফেলছিলাম। ওর না জানি আমার সম্বন্ধে কি ধারণা হয়েছে। আমার ওর দিকটা বুঝা দরকার ছিলো। যাই হোক নিজেকে আগেই সামলে নিয়েছি। এই যা আমি তো ওর পায়ের প্রসংশায় করেছি। ও যে দেখতে সুন্দর,, শুধু সুন্দর না অনেক অনেক অনেক সুন্দর।।

— পূন্য,,, ঘুমিয়ে পড়েছো?

শুয়ে আছি ঠিকই কিন্তু ঘুম আসছে না। তিয়ানের ডাক শুনে ওর দিকে ঘুরলাম। মাথার নিচে হাত টা রেখে। শুয়ে আছি ঠিকই কিন্তু ঘুম আসছে না। তিয়ানের ডাক শুনে ওর দিকে ঘুরলাম মাথার নিচে হাত টা রেখে।তিয়ানও আমার মতো মাথার নিচে একহাত দিয়ে শুয়ে আছে।
—না,, ঘুমাইনি,,
—একটা কথা মনে পড়ে গেলো,, তাই ডাকলাম আর কি।
—কি কথা,,,
—শুধু তোমার পা না,,, তুমিও অনেক সুন্দর।

একটা হাসি নিজের অজান্তেই চলে এলো।
“পাগল” বিড়বিড় করে বললাম।
পূন্য হাসলো,,, ওকে হাসলে আরোও সুন্দর লাগে। একদিনেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু তখন ও বিড়বিড় করে একটা শব্দ উচ্চারণ করেছিলো,, নিবিড় বলেছিলো মনে হয়। নাহ্ আমি বোধহয় ভূল শুনেছি। অন্য কিছু বলেছিলো মনে হয়। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গলো,, বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হওয়ায়। চোখ মেলে দেখি পূন্য আমার বুকে শুয়ে আছে। আমি ওকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ওর চুলের গন্ধ টা আমায় পাগল করে দিচ্ছে। আমি বালিশে শুইয়ে দিলাম। চোখটা ওর ঘুমন্ত মুখের উপর পড়ে গেলো। এতো মায়াবী কারো মুখ হতে পারে জানতাম না। একটু এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।

কারো নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়তেই চোখটা খুলে ফেললাম। তিয়ানের ঠোঁট তখনও আমার কপাল স্পর্শ করে আছে। আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। তিয়ানের নিশ্বাস আমার গলা বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামছে। আমার ভয় হচ্ছে। আমার পায়ের উপর ওর স্পর্শ পেলাম। পায়ে চুমু দিলো। আমি পা টা সরিয়ে নিলাম। আর কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না। আমি চোখ খুললাম। চমকে উঠলাম,, তিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তিয়ান তরিঘরি করে শুয়ে পড়লো। তিয়ান আমাকে দেখছিলো?? কিন্তু এভাবে শুয়ে পড়লো কেনো।

কাল রাতে না হয় ও আমাকে সময় দিয়েছিলো। কিন্তু আজ???? ও তো আজ আমার কাছে??? কি করবো,,,
আল্লাহ,,,
ওয়াশরুমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। শাওয়ার টা ছেড়ে, নিচে বসে পড়লাম। আমি কি করবো?? আজ নয়তো কাল আমাকে তিয়ানের কাছে ধরা দিতেই হবে।
আবার পায়ের দিকে তাকালাম। সেদিন নিবিড় দ্বিতীয় বারের মতো আমার পা ধরে কেঁদেছিলো যেদিন আমি বলেছিলাম আমি তিয়ানকে বিয়ে বিয়ে করবো। ওর প্রত্যেকটা চোখের পানি আমার পায়ে এসে পড়ছিলো। আমার পা ভিজে গিয়েছিলো ওর চোখের পানিতে। আমার কোনো উপায় ছিলো না সেদিন। আমাকে যে এই বিয়ে টা করতেই হতো। আম্মু, তৃপ্তি, আর অরুর কথাগুলো যে আজও আমার কানে বাজে। অনেক পাত্র এসেছে আমাকে দেখতে। প্রথমে ওদের পছন্দ হলেও পড়ে না করে দিতো। এসবের পিছনে অবশ্য নিবিড় ছিলো। ও যে কি করতো যে পাত্র পক্ষ এক পা এগুলে দুইপা পিছিয়ে যেতো, আজও জানি না। সবাই রাজি ছিলো,, কিন্তু শুধু ওর মা রাজি ছিলো না। সমস্যা একটাই ছিলো,, কারন আমার আব্বু আমার আম্মুকে বিয়ে করেছিলো সবার অমতে। যখন আমি পৃথিবী তে এলাম। আমার মা আমার দাদা, দাদু আর ফুপিদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, বিয়ে করেছিলো অন্য কাউকে। আমার দাদা দাদু বাধ্য হয়েছিলো আমাকে ওদের সাথে রাখতে। আব্বুর আরেকটা বিয়ে দিলো। ভাগ্য ভালো ছিলো নতুন মা আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্নে বড় করেছে। আমি তো আগে জানতামি না যে ওনি আমার আম্মু না। যেদিন জানলাম চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরছিলো। আম্মু বলেছিলো, তুই আমার মেয়ে। আমি তোকে লালন পালন করে বড় করেছি। তুই আমার মেয়ে। ওদের কথা শুনিস না।
আজকাল এমন মা পাওয়া যাই না। আমার ছোট বোন টাও আমায় অনেক ভালোবাসে। সবাই ভালোবাসে,,কিন্তু ফুপি চায় না আমি নিবিড়ের বউ হয়।
হলুদ শাড়িটা পড়ে আছি, হলুদ রংয়ের কাচের চুড়ি,, কপালের ছোট্ট একটা কালো টিপ,, চোখে কাজল এলোকেশে বসে আছি। আর আমার পা ধরে বসে আছে নিবিড়,, চোখ থেকে ফোটা ফোটা পানি আমার পায়ে পড়ছে,, আর পা থেকে গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে, নিবিড়ের চোখের জলে আমার পা ধুয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছি, ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। আমারও তো কষ্ট হচ্ছে,, ভেতরে কি হচ্ছে শুধু আমি বুঝতে পারছি,,
নিবিড়— একবার বলো,, শুধু একবার বলো,, তুমি ঐ তিয়ানকে বিয়ে করবে না।
পূন্য— না,, নিবিড় আমি তিয়ানকে বিয়ে করবো।
— কেনো করছো এমন?? তোমাকে ছাড়া আমি মারা যাবো,,,
— বাস্তবতা যে বড় কঠিন, আর নির্মম,, তুমি চাইলেও মরতে পারবে না।
—তুমি শুধু আমার। তুমি ঐ তিয়ানকে বিয়ে করবে না।

আমি দাড়িয়ে পড়লাম। কয়েকপা এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে নিবিড় আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে কেদে,, আমি ও কাঁদছি,, তবে সেটা মনের ভিতরে,, আমি যে বাহিরে প্রকাশ করতে পারবো না। নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। নিবিড়ের চোখ মুছে দিলাম। নিবিড় দু হাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করতে চাইলে আমি ওর হাত আমার দু হাতের মুঠোয় নিয়ে এলাম।
— কাঁদছো কেনো??
— তুমি বিয়েটা করবে না,, আমি আর তুমি দূরে কোথাও চলে যাবো। তুমি শুধু আমার।
— আমি শুধু তোমার,,ছিলাম,, আছি,

থাকবো বলতে চেয়েও বললাম না। পর্দার আড়ালে একজন মহিলা দাড়িয়ে আছে। নিবিড়ের আম্মু।
— আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো??

নিবিড়ের কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম।
— খুউউব শক্ত করে,,,,
নিবিড় আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওর শার্ট খামচে ধরলাম। আমি আর কখনো ওর শরীরের গন্ধ পাবো,, ওর গান কখনো শুনতে পাবো না,,ওর গিটারের শব্দ, ওর হাসি,,, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
— নিবিড় ছাড়ো,,
চোখ মুছে ফেললাম,, ওর মাথার চুল গুলো পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে ঠিক করে দিলাম। ওর এলোমেলো মাথার চুলগুলো তো আমিই সবসময় ঠিক করে দিতাম।
— মাথার চুল সব সময় ঠিক করে রাখবে। শার্টের কলার ঠিক করে রাখবা,, কতোবার বলছি না ঐ শার্টের টপ দুইটা বোতাম খুলে রাখবা,, একদম কাঁদবা না,, আমার বিয়ের দিন তুমি আসবা না, খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করবা,, হুম।
নিবিড়ের শার্টের কলারটা ঠিক করতে কথাগুলো বললাম। নিবিড় শুধু মাথা ঝাকালো।
— তাহলে এখন যাও।
কথাটা বলে আমি বেলকুনিতে চলে গেলাম। আজ ফুপি নিশ্চয়ই খুশি হয়েছে।

দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে,, আমি কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে এলাম। তিয়ান ডাকছে। শাওয়ার টা বন্ধ করার জন্য হাত বাড়ালাম।

চলবে,,
#গোধূলি_লগ্ন
#writer_Tabassum_Tajnim
#Part_2

তিয়ান ডাকছে। শাওয়ার টা বন্ধ করার জন্য হাত বাড়ালাম।
ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে এলাম।

লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া,, ভেজা চুলে তিয়ানের সামনে দাড়িয়ে আছে,, স্বর্গের কোনো অপ্সরা । তিয়ানের যে সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে ওকে দেখার পর। টানা টানা হরিনী চোখ,, কোমর পর্যন্ত একরাশ চুল, গোলাপের পাঁপড়ির মতো ঠোঁট। সব মিলিয়ে এ যে স্বয়ংসম্পূর্ণা।
পূন্য ক্ষীণ গলায় বললো,,
— কিছু বলবেন??

পূন্যর ঠোঁট নড়ছে,, কিছু বলছে??তিয়ান দু পা এগিয়ে পূন্যর কোমরে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। তারপর বললো,,
— শর্ত টা মনে নেই?? দেখো,, তুমি কিন্তু শর্ত ভাঙ্গছো। আমি কিন্তু প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম,, আপনি চলবে না।

তিয়ান হঠাৎ করে এভাবে টান দিবে ভাবতে পারে নি পূন্য। ওর কাছে আসলে সব এলোমেলো হয়ে যায় পূন্যর। না পারে ওর থেকে দূরে যেতে, না পারে কাছে আসতে।
— আমাকে একটু সময় দিতে হবে। এভাবে প্রথমেই আপনি থেকে প্রথমেই তুমি টা আসবে না।
কথাটা শেষ করে তিয়ানের দিকে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পড়তেই পূন্য নিচের দিকে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।

— হুম,,সেতো সময় দিয়েইছি।
তিয়ানের কথা শুনে আঁতকে উঠে তিয়ানকে দেখলো পূন্য।।সত্যিই তো সে তো আমাকে সময় দিয়েছে। পূন্য মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে,, দু পা এগিয়ে এলো। পায়ের নূপুর গুলো বেশ শব্দ করছে। এগুলো এখন খুলে ফেলায় ভালো। ভালো লাগছে না। বিছানার উপর পা তুলে নূপুরে হাত বাড়াতেই, কেউ হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। পূন্য মাথা ঘুরিয়ে তিয়ানকে দেখলো। তিয়ান মৃদু হাসলো।
— থাক না নুপূর গুলো। দেখতে ভালোই লাগছে। আর নুপূরের শব্দটাও বেশ লাগছে। তোমার পায়ে মানিয়েছে।

পূন্য এক পলক ওর দিকে তাকালো। তারপর পা নামিয়ে ফেললো। এমন করে বললো যে খুলতে পারলো না। তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো বিছানটার দিকে,, একটু গুছিয়ে নেওয়া দরকার।
— ও মা,,, নতুন বউ কাজ করবে নাকি,, ছাড়ো ছাড়ো,, কাজের লোক এসে করে দিবে।

বেশ ফর্সা গায়ের রং, চোখ গুলে বড়, ছলছল করছে। নাকটা হালকা চাপা, মাথা ভর্তি কুকরানো,, বয়স ২০ কি ১৯। কিন্তু ওর চেহারায় একটা বাচ্চা লুক আছে, যার জন্য তাকে ১৭-১৮ বছরের মেয়েদের মতোই লাগছে, দাড়িয়ে আছে অনন্যা। মুখে হাসি,, যেনো এই হাসির কোনো শেষ নেই।
— আমাকে চিনতে পারলে না বুঝি। আমি অনন্যা। তিয়ান ভাইয়ার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
কথাটা বলে অনন্যা পূন্যর কাছে এগিয়ে গেলো।
— বাহ্,,, তোমার মতো তোমার নামটাও অনেক সুন্দর।
কথাটা বলার সাথে পূন্য একটু হাসার চেষ্টা করলো।

—তোমার মতো হতে পারলে সার্থক হতো। এখন চলো তো খালাম্মা মানে তোমার শাশুড়ি মা তোমাকে ডাকছে।

পূন্য আর কোনো কথা বাড়ালো না। অনন্যার পিছু পিছু নিচে নেমে গেলো। বাড়িটা অনেক বড়, দুতলা বাড়ি, নিচে হল হলরুম। সেখানেই বসে আছে পূন্যর শাশুড়ি।

মোর্শেদা আক্তার,, বিধবা মানুষ, পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ফেলেছেন। ওনার স্বামী মারা যাবার পর ওনিই একা হাতে এই সংসার, ব্যবসা বাণিজ্য সামলিয়েছেন। তিয়ান পড়ালেখা শেষ করার পর ওর হাতে ব্যবসা তুলে দিয়েছেন।
ওনি চেয়ারে বসে আছেন। পূন্য কঠিন চোখে দেখে মৃদু হাসলেন। পূন্য গিয়ে ওনাকে সালাম করলো। আশে পাশে আরও অনেক মহিলা বসে ছিলো তাদেরকেও সালাম করলো।।
একজন মহিলা বলে উঠলেন
— বাহ্,, মেয়ে তো দেখতে ভারী মিষ্টি। আমাদের তিয়ানের সাথে বেশ মানিয়ে। মনে হচ্ছে তিয়ানের জন্যই আল্লাহ ওকে সৃষ্টি করেছে।

মোর্শেদা বেগম মৃদু হাসলেন।বৌমার প্রসংশা অন্যদের মুখে শুনতে বেশ ভালোই লাগছে। সত্যিই আমার ছেলের বৌয়ের কোনো দিকে কেউ খুঁত বের করতে পারবে না। তবে ওর মায়ের বিষয় টা,,,,,,

তিয়ান ফ্রেশ হয়ে,,বেলকুনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো, হাতে পত্রিকা । অনেকদিন যাবৎ সে একটা বিষয় খেয়াল করছে। ঐ বড় গাছটার নিচে ইট দিয়ে বাধানো সিড়ি টাতে একটা ছেলে বসে থাকে। কি চায় এই ছেলে টা। কেনো এইখানে বসে থাকে। আজকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। খবরের কাগজ টা সোফায় রেখে নিচে নেমে গেলো। নিচে নেমে তো ওর চোখ ছানাবড়া,, এত মানুষ বাসায়!! মোর্শেদা বেগমের ডাকে ওনাদের কাছে গেলো।
—কোথাও যাচ্ছিস??

— হুম,,, বাইরে ঐ বড় গাছটার নিচে একটা ছেলে বসে থাকে প্রায়ই। ওর কাছেই যাচ্ছি।
খুব গম্ভীর গলায় মায়ের কথার উত্তর দিলো তিয়ান, বেরিয়ে গেলো।
পূন্যর চোখ হঠাৎ অনন্যার উপর পড়লো, ও একটা রুম থেকে বেরুচ্ছে। একি ও তো এইখানেই দাড়িয়ে ছিলো তাহলে রুমে ঢুকলো কখন। হয়তো বা এর মাঝেই ডুকে গেছিলো।

একটু পর তিয়ান ও ফিরে এলো। তিয়ান যাওয়ার আগেই ছেলেটা চলে গেছে,, তাই আর ঐখানে দাড়িয়ে থাকার প্রয়োজন বোধ করে নি।
— কিরে ফিরে এলি যে,,
তিয়ানকে দেখে প্রশ্ন করলো মোর্শেদা বেগম।
— ছেলেটা চলে গেছে, তাই।
— ওহ,,, তা বসে পর নাস্তা করে নে।

তিয়ান চেয়ারে বসে পড়লো,
অনন্যা ও বসলো। পূন্য বসতে চাইলো না, তারপরেও মোর্শেদা বেগম জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।

নাস্তা করে রুমে এসে বসলো পূন্য,, তার মন যে নিবিড়ের জন্য পাগল হয়ে আছে, ।
তিয়ান রুমে এসেই রেডি হয়ে নিলো। ব্লাক শার্ট ব্লু জিন্স পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে পূন্যকে দেখলো একবার। ও পূন্যর সামনে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে বললো,

— তোমার কি মন খারাপ??

— না,, আপনি কোথায় যাচ্ছেন??

— কাজ আছে। তুমাকে কি বলেছি??? আপনি ডাকতে না করেছি তো।

— আমাকে একটু সময় দিন।

— হুম,, দিয়েছি তো। একটু নয় তোমার যতটুকু সময় দরকার তার সব টাই দিবো।

তিয়ান উঠে দাড়ালো। তার ওয়ালেট টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পূন্য কিছুক্ষণ তিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মোবাইল টা হাতে নিলো। তৃপ্তি কে কল দিলো। দু বার কেটে গেলো। তৃতীয় বার আবার দিলো। ওপাশ থেকে বললো

—হ্যালো,,

— তৃপ্তি!!
তৃপ্তির কন্ঠস্বর টা শুনে পূন্যর চোখে পানি চলে এলো।

— বুবুন,, কেমন আছিস??

— ভালো। তুই কেমন আছিস??

— ভালো।

— আর নিবিড় কেমন আছে??

ও পাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনা গেলো, কিছু বলছে না। পূন্য আবার বললো
— কি হলো,, বল??

— ভালো না। শুনেছি তোর বিয়ে আগের দিন রাতে যে রুমে ঢুকেছিলো,, এখোনো পর্যন্ত বের হয় নি। আজকে সকালে নাকি জোর করে খাওয়ানো হয়েছে কয়েক লোকমা।

পূন্য আর কিছুই বলতে পারলো না। কথা আসছিলো না মুখ থেকে। পূন্যকে চুপপ থাকতে দেখে তৃপ্তিই আবার বলতে লাগলো
— আমরা আর একটু পর রেডি হয়ে তোদের বাড়িতে আসবো। আম্মু তো তোর জন্য কান্না করতে করতে শেষ৷ কথা বলবি আম্মুর সাথে??
— নাহ্,,, এখন কথা বলবে আম্মু আরও কান্না কাটি করবে। এখন রাখি।

পূন্য ফোনটা রেখে দিলো, বিছানার উপর। আস্তে আস্তে ফ্লোরে বসে পড়লো।
“নিবিড়, নিবিড়” বলেই কাঁদতে লাগলো। আমি যে আমার নিবিড় কে খুব ভালোবাসি। আমার নিবিড়ের কষ্ট সহ্য করবো কিভাবে। আমি যে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমি খুব ভূল একটা ডিসিশন নিয়ে নিলাম। চোখ মুছে ভাবতে লাগলো পূন্য।

— ভাবি, ভিতরে আসবো??
অনন্যা দরজায় নক করলো। পূন্য চোখ মুখ মুছে বললো
—হ্যা,, অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
অনন্যা রুমে ঢুকলো,, আরও দুজন মহিলা ঢুকলো।
— ভাবি আজ তো রিসিপশন,, তাই এরা তোমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে।

ওরা পূন্য সাজানোর কাজে লেগে পড়লো। প্রায় অনেকক্ষণ পর পূন্যকে ছাড়া হলো। পূন্য আয়নাতে নিজেকে দেখলো এই সাজে তো ও নিবিড়ের সাথে বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থাকে,, তা কোনোদিনও পূরণ হয় না।

অনন্যা আর ওরা চলে গেলো। পূন্য বসে আছে।
তিয়ান আসলে পূন্য দাড়িয়ে যায়। ওর হাতে তিনটা শপিং ব্যাগ।

—আজকে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেবারে ভয়ংকর সুন্দর।
তিয়ানের কথা শুনে পূন্য হাসলো।
—সুন্দর আবার ভয়ংকর হয় নাকি
— হয়,, হয়।
তিয়ান একটু এগিয়ে পূন্যর কাছে এলো। তারপর ব্যাগগুলো পূন্যর দিকে এগিয়ে দিলো।
— এগুলোতে কি আছে??
পূন্য ব্যাগগুলো হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো।

— খুলে দেখো।
পূন্য ব্যাগ গুলো নিয়ে খুললো। সবকটাতেই কালো রংয়ের শাড়ি। পূন্য হাসলো অবাক ও হলো। বললো,
— এত শাড়ি,, আমার তো এখন শাড়ির দরকার ছিলো না।

— দরকার ছিলো না,, কোনো একদিন তো দরকার পড়বেই। শাড়িগুলো আলমারিতে তুলে রাখো।
তিয়ান কথাটা শেষ করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
তিয়ান ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে নিলো। ওকে এতো সুন্দর লাগছে এই কালার টা তে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।

অনন্যা এসে আমাকে নিচে নিয়ে গেলো।

মোর্শেদা বেগম পূন্য কে পা থেকে একবার দেখলেন। তার ছেলের বউ যে অনেক সুন্দর। একেবারে পরির মতোন লাগছে।
— বৌ মা,,, এখানে এসে বসো।
ওনার পাশে এসে বসলো পূন্য।

পূন্যর বাসার সবাই এলো,শুধু ওর মা বাদে ।অরু আর তৃপ্তি আমাকে নিবিড়ের কথা বললো। আমি চুপচাপ শুনলাম।
অরু এসে পূন্যর কাঁধে হাত রাখলো,,,
— তুই তিয়ান কে মেনে নিতে পেরেছিস তো,,
পূন্য মৃদু হাসলো। অরু পূন্যর হাসি দেখে থেমে গেলো।
— এত সহজে কি মেনে নেওয়া যায়,,,
পূন্য কথাটা বলে একটু দম নিলো।
অরু বুঝতে পারছে,, ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের দুঃখ। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। ওকে যে তিয়ানকেই মেনে নিতে হবে।

— তুই এটা ঠিক করছিস না। ঐ ছেলেকে কেনো কষ্ট দিবি। তোর উপর ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তুই চাইলেও ওকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবি না। তোর জন্য ঐ ছেলেটা কষ্ট পাবে। নিবিড় আর তোর জন্য ও কেনো কষ্ট পাবে???
অরু একদমে কথাগুলো বলে কোথায় চলে গেলো।

অরুর কথাগুলো পূন্যর কানে বড্ড বেশি লাগলো। অরু তো ঠিকি বলেছে। ওদের জন্য তিয়ান কেনো কষ্ট পাবে।
সবাই চলে গেলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিয়ান বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছে। পূন্য দরজাটা নক করে দিলো। তিয়ান তিয়ান পূন্যকে দেখে উঠে বসলো।
পূন্য আস্তে আস্তে তিয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর বলতে লাগলো,,
— আপনার আমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আপনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। আমি আপনাকে কেনো কষ্ট দিতে চাই না।
কথাটা বলে শাড়ির আঁচল টা নিচে ফেলে দিলো পূন্য।

চলবে,,,
#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#part_3

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিয়ান বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছে। আমি দরজাটা নক করে দিলাম। তিয়ান আমাকে দেখে উঠে বসলো। আস্তে আস্তে আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
— আপনার আমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আপনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। আমার জন্য আপনি কেনো কষ্ট পাবেন।
কথাটা বলে শাড়ির আঁচল টা নিচে ফেলে দিলাম। তিয়ান আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো।তারপর দু হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ওর কাছে টেনে নিলো। ওর ঠোঁট স্পর্শ করলো আমার পেটে। তিয়ান আস্তে আস্তে উপরের দিকে আসছে। আমি হাত পা শক্ত করে দাড়িয়ে রইলাম।
— “বিয়ে মানে শুধু শারীরিক সম্পর্ক না,,, বিয়ে মানে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা,, মানে মানসিক ভাবেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। আজও তুমি প্রস্তুত না,, না মানসিক ভাবে, আর না শারীরিক ভাবে। কারন তুমি ভয় পাচ্ছো, দেখো কেমন হাত পা শক্ত করে দাড়িয়ে আছো। আমি চাই আগে আমাদের মধ্যে মানসিক সম্পর্ক গড়ে উঠুক। তাই সময় নেয়া ভালো। যেদিন সময় হবে,, সেদিন আমিই তোমাকে কাছে টেনে নিবো।”
পূন্যর কানের কাছে এসে তিয়ান আস্তে আস্তে কথাগুলো বললো। তারপর শাড়ির আঁচলটা পূন্যর গায়ে জড়িয়ে দিলো ।

পূন্য মৃদু হাসলো, মানুষ টা সত্যিই খুব ভালো। রুমের লাইট টা অফ করে শুয়ে পড়লো।।সারাদিন মাথায় শুধু নিবিড় ঘোরে,,, যদি আমাকে সারাজীবন সময়ও দেওয়া হয়, তবুও আমি নিবিড়কে ভূলতে পারবো না। পূন্য আবার নিজেকে বুঝালো,, এটা সিনেমার ডায়লগ। যদি ইচ্ছা করে তাহলে অবশ্যই ভূলতে পারবে। কিন্তু প্রথম ভালোবাসাকে কি কোনোদিনও ভুলে যাওয়া যায়। পৃথিবীর কেউই আজ পর্যন্ত তার প্রথম ভালোবাসাকে পুরোপুরি ভুলতে পারে নি,, তাহলে কি পূন্যও পারবে না?

মোর্শেদা বেগম বেলকুনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পান চিবুচ্ছেন। অবাক করা বিষয়,, কয়েকবছর আগেও তিনি এভাবে পান খেতেন না। কিন্তু এখন প্রতি আধঘন্টায় তার একটা করে পান চাই। পান না পেলে মাথাটা কেমন জানি করে। নেশা হয়ে গেছে পানের। ছোট ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর থেকেই তিনি এই পানের নেশায় পড়ে যান। আচ্ছা তার ছোট ছেলের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সাথে পান খাওয়ার কি কোনো সম্পর্ক আছে??? কি জানি,, হয়তো থাকতে পারে। আমার ছেলেটা কি আর কোনোদিনও ফিরে আসবে না??

খাবার টেবিলে বসে আছে তিয়ান,, আজ নাকি পূন্য রান্না করেছে,, দেখা যাক কেমন রান্না করেছে মেয়েটা!! কিন্তু এখনো নিয়ে আসছে না কেনো?? অনেকক্ষণ পর পূন্য রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে শুধু মুরগীর গোশত টায় রান্না করতে দেওয়া হয়েছে। মোর্শেদা বেগম ইচ্ছা করেই পূন্যকে রান্না করতে দিয়েছে। কারন তার ধারনা বাড়ির বউদের আদর করলে ওরা মাথায় উঠে যাবে। তাই এখন থেকেই অল্প অল্প করে সব কিছু করাতে হবে। বিয়ের আগেতো বলেছিলো সব পারে। মোর্শেদা বেগম পূন্যকে দেখলো,, এই শীতের মধ্যেও মেয়েটার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। হয়তো ভয় পাচ্ছে।

টেবিলে অনেক আইটেম সাজানো থাকতেও,, মোর্শেদা বেগম তিয়ানের প্লেটে মুরগির গোশত তুলে দিলেন। তিয়ান খাবার মুখে তুললো। কিন্তু কিছু বললো না। খাওয়া শেষ করে তিয়ান উঠে দাড়ালো। পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো,

— এতো ঝাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ঝালটা আর একটু কম দিয়ো।

পূন্য কিছুই বুঝলো না। ওর কাছে একটু ও ঝাল লাগলো না,, কিন্তু বাকি সবার কাছেই ঝাল লাগলো। হয়তো ওরা ঝাল কম খায়।

আজ পূন্যর বাবার বাড়ি নেত্রকোনা, কিন্তু বাবার চাকরি সুবাদে তাদের ঢাকায় থাকতে হয়। অনেক বছর ধরেই ঢাকাতেই থাকে।পূন্য আর তিয়ান পূন্যর বাসায় আসলো। তিনটে রুম,,হলরুম আর রান্না ঘর। এই হলো পূন্যদের বাসা। এটা তিয়ানের বাসার তুলনায় অনেক ছোট,,
তিয়ানের মনে হচ্ছে সে একটা জেলখানায় বন্দী হয়ে গেছে। এতো ছোট্ট বাসায় থাকে কিভাবে এরা। তিয়ান পূন্যর রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। পাশের বালিশটা নিয়ে তিয়ান জড়িয়ে ধরতেই চোখে পড়লো,, বালিশের নিচে কয়েকটা তাবিজ, একটা পাথর। বুঝতে পারলো না এগুলো কি, কিংবা কেনো রাখা হয়েছে এখানে??

পূন্য রুমে ঢুকতেই পূন্যকে জিজ্ঞেস করলো তিয়ান,,
— এগুলো কি??? এইসব তাবিজ, পাথর..

তিয়ানের কথা শুনে হাসলো পূন্য,,
—এগুলো কিছু না। আপনি এগুলো আমাকে দিয়ে দিন।
তিয়ানের হাত থেকে তাবিজ আর পাথর নিয়ে বেলকুনিতে চলে এলো।

— বুবুন,,,
তৃপ্তি পিছন থেকে ডাকলো।

— হুম,, বল
পূন্য পিছনে না ঘুরেই বললো,, কারন পূন্য জানে তৃপ্তি এসেছে।

— ঐ তিয়ান,, যে আজকে তোকে দেখতে এসেছিলো,, তুই ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা।

তৃপ্তির কথা শুনে পূন্য আবাক হলো। এই তৃপ্তিই কাল রাতে বলেছে নিবিড় ভাইয়া কে ছাড়া অন্য কাউকে তুই বিয়ে করবি না। আজ বিকালের মধ্যে এখন এই কথা বলছে। পূন্য একটু মজা করার জন্য বললো,,
— কেনো রে,,, নিবিড়ের থেকে এই ছেলে দেখতে বেশি সুন্দর,, হ্যান্ডসাম??
— আমি মজা করছি না,,, তুই জানিস ফুপি কবিরাজ ধরেছে যাতে তুই নিবিড় ভাইকে ভূলে ঐ তিয়ানকে বিয়ে করিস।

তৃপ্তির কথাটা শুনে পূন্য ঘুরে দাড়ালো। চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। আজকালকার যুগে কেউ কবিরাজ বিশ্বাস করে নাকি। এসব যে ভাওতা বাজি তা সবাই জানে।

— বিশ্বাস হলো না বুঝি,, যা না বালিশের নিচে রাখা আছে এতো গুলে তাবিজ। যা,,,

তৃপ্তির কথা শুনে পূন্য রুমে গেলো। তারপর বালিশ তুললো। সে মনে প্রানে বলছে বালিশের নিচে কিছু নেই। বালিশ তুললো,, তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সত্যিই বালিশের নিচে তাবিজ, পাথর রাখা আছে। পূন্য হাসলো,, ফুপির এগুলো করার বাকি ছিলো। ওনি যখন চাইছেন না আমি নিবিড়ের বউ হয়,, তাহলে আর কি। পূন্য ধরা গলায় বললো,,
— তৃপ্তি,, যাও সবাইকে বলে দাও, আমি তিয়ান কে বিয়ে করতে রাজি।

এই ছিলো পূন্যর তিয়ানকে বিয়ে করার কাহিনি। পিছন থেকে কারো ডাকে পূন্য অতীত থেকে ফিরে এলো।

–“পূন্য মা”

পূন্য পিছনে ঘুরতেই দেখলো তার ফুপি দাড়িয়ে আছে, নিবিড়ের মা।আয়েশা আক্তার দাড়িয়ে আছে।
–” হুম, বলেন”
–“কেমন আছিস? জামাই কেমন আছে?”
–” ভালো। ”
–” পূন্য,, তুই আমাদের বাসায় একটু যাবি??”
পূন্য তার ফুপিকে ভালো করে একবার দেখলো, এই মহিলা আবার তাকে বাসায় যেতে বলছে। হয়তো কোনো স্বার্থ আছে। স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ ইনি করেন না। পূন্য গম্ভীরমুখে বললো,,
–” কেনো”
— “নিবিড়,, ওকে কোনোভাবেই মানাতে পারছি না, বিয়ের জন্য। খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছে। সারাদিন রুমে বসে থাকে।এভাবে থাকলে তে ও পাগল হয়ে যাবে। তুই পারবি ওকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে। তোর কথা ও ফেলবে না”

–“আমাকে কেনো এসব বলছেন??আপনি বরং একটা কবিরাজ ধরেন। কবিরাজ তাবিজ আর পাথর দিলেই কাজ হয়ে যাবে। যেভাবে আমার বিয়েটা হয়েছে।”

কথাটা বলে পূন্য তার ফুপির হাতে তাবিজ আর পাথরগুলো দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।
–“পূন্য,, দোহাই মা,, নিবিড়কে শুধু তুই বুঝাতে পারবি”
” আপনার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই।এতো কিছু করার পর আপনি আবার এই কথা বলতে এসেছেন। আমার নিবিড়ের সামনে যাওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি পারবো না,, আর তাছাড়া আমার স্বামী রয়েছে, তাকে আমি কি বলে আপনার বাসায় যাবো?”

“আমি সব ব্যবস্থা করবো। শুধু তুই একবার বল যাবি।নিবিড়ের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। এখন বলছে বিয়ে করবে না। মা দোহাই লাগে,, তুই একবার চল।”

–“ঠিক আছে,, আমি যাবো। ”

আয়েশা আক্তারের কথা শুনে পূন্য কঠিন হতে গিয়েও কঠিন হতে পারলো না। ওনিই যখন লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এভাবে বলছেন,,আর সবচেয়ে বড় কথা হলো নিবিড়, ওকে ভালো করে বুঝাতে হবে, তাই রাজি হয়ে গেলো পূন্য। বুঝতে পারছে না যাওয়া ঠিক হবে কি না??

শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে শিউলি বেগম পূন্যকে দেখলেন। তার মেয়েটা যে এতোটা কষ্ট পাবে কোনোদিনও ভাবতে পারে নি তিনি। ছোটবেলা থেকে ওকে আগলে রেখেছে।কোনোদিনও বুঝতে দেয় নি যে ও তার মেয়ে নয়। আজ সেই মেয়ের কি না এই অবস্থা। পূন্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“আয়েশা আপা আমাকে বললো, কালকে ওনাদের বাড়িতে তোদের যেতে। জামাইকে নাকি ওনি রান্না করে খাওয়াবে। আমি না করতে চেয়েছিলাম,, কিন্তু তোর বাবা সম্মতি দিয়ে দিলেন। নতুন জামাই,, সে কি না,,,,”

” আম্মু, আব্বু যখন বলে দিয়েছে,, ওনি ও হ্যা বলেছেন। তাহলে আর সমস্যাটা কোথায়??”

“তুই খুব ভালো করেই জানিস,, সমস্যা টা কোথায়। তারপরেও যখন যেতে চাইছিস তখন যা,, আমি তো তোর কোনো কাজেই বাধা দেই না, আজও দিবো না।

গাড়ি থেকে নেমেই চোখ পড়লো নিবিড়ের ঘরের জানালাটার দিকে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here