#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৫
হঠাৎ করেই শীলা জোড়ে হেঁসে উঠে,সেটা দেখে সাদাফ কটমট চোখে শীলার দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,
“এত হাসার কী হল!একদম হাসবি না,হাসলে তোর দাঁতগুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব বজ্জাত মাইয়া।”
“আমার দাঁত পড়ে ভাঙ্গিস কিন্তু এখন বল তোর এই অবস্থা কেন?”
“হ্যাঁ সাদাফ সত্যিই ত তোমার এ অবস্থা কেন?আর এমন একটা আওয়াজ হয়েছে আমরা ভাবলাম কী না কী পড়ল?কিন্তু এসে দেখি তুমি।”
সাদাফ শীলা আর মনির সাহেবের কথা শুনে একবার ছাদের দিকে তাকায় কিন্তু সাবিহা সেখানে নেই।সাদাফ আবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সাবিহাকে খুঁজে আর দেখতে পায় সাবিহা তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিল মুডে চকলেট খাচ্ছে অর দিকে তাকিয়ে।সেটা দেখে সাদাফের মেজাজ বিগড়ে যায়,ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এখন এমন ভাব ধরছে যেন কিছুই হয় নি।সাদাফ জোর পূর্বক হেঁসে বলে উঠে,,,
“খুব গরম লাগছে তাই গোসল করছি আঙ্কেল আর লাফ দিয়ে পানিতে নেমেছি তাই একটু আওয়াজ হয়েছে।”
“গোসল করছিস তাও এত রাতে আর সুইমিং পুলে!আর গোসলই যখন করবি তখন নাকে কালির মাখামাখি কেন করলি?”
সন্দেহ করে শীলা বলে উঠে আর শীলার কথাশুনে সাদাফ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে শীলার দিকে তাকায়।শীলা সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠে,,,
“নাকের মধ্যে কালি কেন?”
সাদাফ শীলার কথায় নাকে হাত দিয়ে হাত সামনে এনে দেখে সত্যি সত্যি কালি,তার মানে সাবিহা তখন নাকে কালি দিয়েছিল ঘুসি দিয়ে।কথাটা ভেবেই সাদাফের রাগ উঠে যায়,সে চুপচাপ পানি থেকে উঠে দাঁড়ায় আর মনির সাহেবকে বলে উঠে,,,
“আঙ্কেল কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি!”
“হ্যাঁ বলো না কী বলবে।”
“আমার জামা গুলো ত ভিজে গেছে ত যদি,,,
” হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ভিতরে যাও আমি জামা কাপড় নিয়ে আসছি।”
মিসেস হেনার কথায় সাদাফ মুচকি হেঁসে হনহনিয়ে সাবিহার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে ভিতরে চলে আসে।
_____________________________________
আমার সামনে ভিজা অবস্থায় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ ভাইয়া,আর আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চকলেট খাচ্ছি।আমার এমন ভাব দেখে সাদাফ ভাইয়ের গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে,তাই তিনি হনহনিয়ে আমার কাছে গিয়ে আমার হাত থেকে চকলেটটা নিয়ে নেয়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই সাদাফ ভাইয়ের দিকে।সাদাফ ভাইয়া সেটা দেখে বলে উঠে,,,
“তোমার সামনে যে কেউ রেগে দাড়িয়ে আছে সেটা কী দেখেছো!”
আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে উঠে বারান্দায় আসার জন্য পা বাড়াই। আর উনি আমার হাত চেপে ধরে উনার সামনে দাঁড় করায় আর আমার দুই কাঁধে হাত দিয়ে রেগে ধমকে বলে উঠে,,,
“এই আমার কথা কী তোমার কানে যাচ্ছে না!আমি কিছু বলছি তোমাকে আর তুমি এমন ভাব নিচ্ছো কেন?”
সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,
কতবড় সাহস আমাকে ধমক দেয়!শালা পঁচা কুমড়ো আজ খালি কথা বলতে পারছি না বলে নয়ত কয়টা কড়া কথা শুনিয়ে দিতাম।কিন্তু সেটা ত হওয়ার নয় এখন কিন্তু বেটাকে শিক্ষা দিতে না পারলেও শান্তি পাব না।তাই উনার হাত আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে উনার বুকের উপর ক্রস আকারের মত করে উনার হাতটা পিছনে চেপে ধরে উনার পিছনে দাঁড়াই আমি।আমার কাজে সাদাফ ভাই হাতে ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ছুটার জন্য ছটফট শুরু করে,আমি সেটা দেখে আরো জোড়ে চেপে ধরি।উনি এবার নরম গলায় বলে উঠে,,,
“সাবিহা কী করছো!ছাড়ো আমাকে লাগছে ত।”
লাগার জন্য ত তরে ধরছিই এইভাবে,আমাকে ধমক দেয়া তাই না এবার বুঝ কেমন লাগে।কথাগুলো নিজের মনে ভেবেই শয়তানি হাসি দিলাম।সাদাফ ভাই আবারও রেগে বলে উঠল,,,,
“সাবিহা আমার হাতটা ছাড়ো নয়ত আমি আঙ্কেলকে ডাকব,আর আঙ্কেল আসলে কিন্তু আমি উনাকে বলে দিব তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলেছো।”
উনার কথাশুনে আমার হাওয়া ফুস হয়ে যায়,কারন বাবা এটা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।সারা পৃথিবীর সাথে লড়তে পারব কিন্তু বাবার সামনে আমি কিছুই না।কথাগুলো ভেবেই উনার হাতের বাঁধন আলগা করতেই উনি পিছন ফিরে আমার গাল হালকা চেপে ধরে বলে উঠে,,,
“এবার কী করবে হুম!তখন আমি মজা করে বলেছি শুধু ফেলে দিব আর তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে দিলে।নিচে যদি সুইমিং পুল না থাকত তবে ত আল্লার পেয়ারা বান্দা হয়ে যেতাম।তখন তোমাকে বিয়ে করার শখটা কীভাবে পূরন করতাম হুম!”
শালা হাতির নাতি তোর বিয়ের কাঁথায় আগুন,তোর মত গরুকে কে বিয়ে করব!আর তোরে ত সুইমিং পুল দেখেই নিচে ফালাইছি,আমার কী মাথা খারাপ নাকি যে মানুষ খুন করব হুহ।আমাকে থ্রেট করার শাস্তি এটা,কথায় কথায় থ্রেট মারো চান্দু এবার থেকে যতবার থ্রেট করবা ততবার এভাবেই শাস্তি দিব।একটু আগেও বাবাকে বলে দিবে বলে থ্রেট দিলি না এর শাস্তিও তকে দিব,একটু অপেক্ষা কর তারপর দেখিস।আমাকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ ভাইয়া আবারও বলে উঠল,,,
“কানে ধরো।”
আমি উনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে,,,
“এত ভ্রু কুঁচকাও কেন হে!আমার সামনে এত ভ্রু কুঁচকাবা না,এমন করলে ইচ্ছে করে টুপ করে একটা মিষ্টি খাইতে।তাই সাবধান,নয়ত অঘটন ঘটে যাবে যেকোন সময়।আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি কানে ধরো,আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার জন্য।”
আমি উনার শেষের কথাটা ছাড়া একটা কথাও বুঝতে পারি নি তাই আবারও ভ্রু কুঁচকাই,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার কাছে টেনে গালে একটা কামড় বসিয়ে দেয়,আমি ছোটার জন্য চেষ্টা করলে আমার দুই হাত চেপে ধরে।আর কামড় দেয়া জায়গায় চুমু দেয়।আমি উনার কাজে এবার রেগে যাই,কী পেয়েছে সে আমাকে এভাবে একটা মেয়েকে যখন তখন চুমু দিবে।তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য এবার মাথা দিয়ে উনার মাথায় বারি দেই।আর উনি ব্যাথা পেয়ে দূরে সরে য়ায়,আমি উনার থেকে ছাড়া পেয়ে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে যাই ঘর থেকে।আর সাদাফ ভাই উনার মাথায় আর গালে হাত ডলতে ডলতে গাল ফুলিয়ে বলে উঠে,,,
“এই মেয়েরে বিয়ে করলে আমার আর বাবা ডাক শুনতে হবে না।শান্তিতে একটু রোমান্সও করতে দেয় না,রোমান্স করতে গেলে ফাইট শুরু করে দেয়।এখন মনে হচ্ছে তায়কোয়ন্দো শেখানোটাই ভুল হয়েছে।আনরোমান্টিক,নিরামিষ,রোমান্সের বাধাঁ দেয়ার ভিলেন মার্কা মেয়ে একটা,দেৎ ভাল্লাগে না।”
____________________________________
মনির সাহেব আর উনার স্ত্রী তাদের রুমে বসে হাসছে,এমন ভাবে হাসছে যে হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।মনির সাহেব এবার মিসেস হেনাকে বলে উঠে,,,
“তোমার মেয়েটা কিন্তু অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।”
“তা আর বলতে,কী কাজটা করল দেখেছো তুমি।”
“সাদাফের অবস্থা নাজেহাল করে ছাড়বে সাবিহা আজ যা বুঝলাম আমি।”
কথাটা বলেই মনির সাহেব শব্দ করে হেঁসে উঠল,মিসেস হেনাও উনার হাসির সাথে তাল মেলালো আর বলে উঠল,,,
“সে তুমি যাই বলো,সাদাফ কিন্তু সাবিহাকে খুব ভালবাসে আর আমাদের মেয়েকে আগলেও রাখবে।”
“হুম।”
কথাটা বলে মনির সাহেব আবারও হেঁসে উঠল,আর তখন তাদের ঘরে আসে সাবিহা।সাবিহা এসেই গাল ফুলিয়ে তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।সেটা দেখে মনির সাহেব হাসি থামিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“আমার প্রিন্সেসের কী শরীর খারাপ লাগছে!”
আমি মাথা নেড়ে না জানাই যার অর্থ শরীর খারাপ লাগছে না।তখন মা বলে উঠল,,,
“এবার বল সাদাফকে পানিতে ফেলেছিলি কেন?”
মায়ের কথা শুনে আমি শোয়া থেকে উঠে বসি,মানে কী?সাদাফ ভাইয়া কী বলে ফেলল নাকি যে আমি উনাকে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছি।কথাটা ভেবেই ভয়ে গুটিয়ে গেলাম,বাবা জানতে পারলে খুব রাগ দেখাবে।মা আবারও বলে উঠল,,,
“অবাক হয়ে লাভ নেই সব জানি আমরা।”
আমি মার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালে মা মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“সাদাফ আর তুই যখন কথা বলছিলি তখনই শুনেছি।আমি সাদাফের জন্য পোশাক নিয়ে গেছিলাম,বেচারা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে।ত গিয়ে দেখি আপনি অর হাত চেপে ধরে আছেন,তখন আমি কিছু বলব তার আগেই সাদাফ বলে উঠে যে আপনি সাদাফকে নিচে ফেলেছেন।আর বেচারা তকে বাঁচানোর জন্য তখন মিথ্যা কথা বলেছে যে তার নাকি গরম লাগছে তাই গোসল করছে।”
আমি মার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকাই, তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে আছে।সেটা দেখে আমার প্রানপাখি যায় যায় অবস্থা,আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে বাবার থেকে সরে এসে ভো দোড় দেই আর এক দৌড়ে আপুর রুমে।আমার কান্ড দেখে বাবা আর মা দুজনেই হেঁসে উঠে।
______________________________________
হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে দুজন,আর তাদের সামনেই একজন হুডি ওয়ালা লোক বসে আছে।হুডি ওয়ালা লোকটা এবার ফোন বের করে কাউকে কল দেয় আর রেগে ধমকে বলে উঠে,,,
“ছোট একটা কাজ দিয়েছিলাম সেটা করতে এতক্ষণ লাগে!তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো নয়ত পাখি আরো ছটফট করবে।তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে এদের ছটফটানিটা কমাতে হবে,সো তাড়াতাড়ি এসো।”
#চলবে…
(আমার শরীর ভালো না তাই কাল গল্প দেই নি,আর আজও দিতাম না কিন্তু সবাই অপেক্ষা করবে ভেবে দিয়ে দিলাম।
আর গতপর্বে শুধু বলেছি মেরে দিলে কেমন হয়! তাতে ত সবাই আমাকেই মেরে গুম করে দিতাছিল কী ভয়টাই না পাইছি গো😅।
আর কালকে একটা বিয়ে আছে কিন্তু কার বিয়ে দিব সেটা সিক্রেট(কেউ জানলে বলে যাও কার বিয়ে দিব)।সবার বিয়েতে দাওয়াত রইল,তাই সবাই আমার জন্য ফুচকা আর চকলেট নিয়ে আসবা,অবশ্যই সেটা ইফতারের পর😋।নয়ত সবার প্রানপ্রিয় সাদাফ আর কাব্যকে মেরে গুম করে দিব😤)