বসন্তের_একদিন (সিজনঃ০২) #পর্বঃ১১

0
225

#বসন্তের_একদিন (সিজনঃ০২)
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে তৃধাকে দেখতে না পেয়ে তেজবীন চিন্তায় পড়ে গেলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই। জামা-কাপড় পরিবর্তন করে রান্নাঘরে উঁকি মেরে দেখলো সেখানেও ফাঁকা। পাতিলের ঢাকনা উঠিয়ে দেখলো রান্না করা আছে এবং তা একদম গরম। তারমানে তৃধা অফিস থেকে ফিরেছে এবং এটা স্বাভাবিক।

” কিরে বাবু তুই রান্নাঘরে কি করছিস?”

” তৃধা কোথায় মা? সব রান্না করা আছে, তার মানে তো সে ফিরেছে। তাহলে দেখছিনা কেন? একটু আগে দেখলাম দরজা চাপানো ছিলে আর ঘরে বাচ্চাও নেই। কোথায় গিয়েছে দু’জন?”

” কোথায় আর যাবে? তোমার বউয়ের তো আবার পাড়া বেড়ানোর স্বভাব আছে। তিনি তো মুঘল সম্রাটের মেয়ে। আমার তো মানুষের কথা তো আর তিনি শুনবেন না। দেখো কার বাসায় ঘুরতে গিয়েছে। সারাদিন তো বাড়ির বাইরেই থাকে। যদি বাড়িতে আসে তখন জিজ্ঞেস করে নিও, এতোরাতে আবার কোথায় টাকা কামাই করতে গিয়েছেন। ” ব্যঙ্গ করে বললেন তিনি।

এরইমাঝে কলিংবেল বেজে উঠলো। তেজবীন দ্রুত দরজা খুলে দেখলো তন্বীকে কোলে নিয়ে তৃধা দাঁড়িয়ে আছে।

” এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলে?”

তেজবীনের প্রশ্নের উওর না দিয়ে তৃধা ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের বাসায় থাকালো। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তেজবীন দেখলো পাশের বাসার ভাবী দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন। তৃধা হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে একপ্রকার তেজবীনকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়লো।

” কিছু বলার আগে আশেপাশে তাকিয়ে বলো। তোমার মানসম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে।”

” এসব কথা বাদ দিয়ে আগে এটা বলো দরজা চাপিয়ে রেখে কোথায় গিয়েছিলে তুমি? ঘরেও তো কাউকে বলে যাওনি দেখছি।”

” সবসময় কিছু করার আগে তোমাদের বলাটা কি বাধ্যতামূলক? আমার কি হাঁটার জন্যও তোমাদের অনুমতি নিয়ে হাঁটতে হবে?”

” দেখো তৃধা কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি উওর দাও।”

” পাশের বাসা থেকে বাবুকে আনতে গিয়েছিলাম।”

” বাবু আনতে গিয়েছিলে মানে? ওদের বাসায় বাবু কি করছিলো?”

তন্বীকে শুয়ে তেজবীনের চোখে চোখ রেখে বললো,

” তোমার মা-বোন কেউই তো আমার মেয়েকে দেখতে রাখতে পারবেনা। অন্যদিকে ম’রে বেঁচে হলেও ঘরের কাজগুলো আমাকেই করতে হবে। এতো ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তো আর এই গরমে ঘন্টার পর ঘন্টার রান্নাঘরে চুলোর সাথে থাকা যাই না। তাই উপায় না পেয়ে মেয়েকে অন্যের বাসায় রেখে কাজ করতে হয়েছে। কি করবো বলো? আমার কপালটাই এতো সুন্দর যে ঘরে মানুষ থাকতেও বাচ্চাকে দেখাশোনার জন্য মায়ের কাছে, পাশের বাসার ভাবীর কাছে রাখতে হয়। অবশ্য তোমাকেই বা এসব কেন বলছি? তুমি আবার এসব কথা বুঝবে না।”

চুপচাপ ফাতেমা বেগম এবং তেজবীনকে খাবার পরিবেশন করে তৃধা যখন খেতে বসবে তখন কলিংবেল বেজে উঠলো৷ রাত ১১ টা বাজছে, এই সময়ে বেলের শব্দে তৃধা ভীষণ অবাক হলো। প্লেট রেখেই এগিয়ে গেলো দরজা খোলার জন্য।

অপরপ্রান্তে নন্দিনী এবং রুদ্রকে দেখে কিছুটা অবাক এবং বিরক্ত হলো সে৷

” এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে সরবে? তুমি সারাদিন বাড়িতে বসে ফ্যানের বাতাস খেয়েছো, আমরা তো বাইরে থেকে এসেছি৷ সর তাড়াতাড়ি, যত্তসব।”

দরজা থেকে সরে খেতে বসে পড়লো তৃধা। মনে মনে বললো,

” আমি তো আরো ভেবেছিলাম আপদ বুঝি বিদেয় হলো, এবার হয়তো কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারবো। কিন্তু আমার কি আর সে কপাল আছে? বলতে গেলে সারাবছরই বাপের বাড়িতে পড়ে থাকে। সারাবছর যদি এখানেই থাকতে হতো তাহলে বিয়েটা না করলেই পারতো। এতো জ’ঘন্য মানুষও হয় এই পরিবারে না এলে স্বচক্ষে দেখতে পেতাম না। না জানি শশুরবাড়ির লোকজন কিভাবে এটাকে সহ্য করে।”

চুপচাপ নিজের খাবার শেষ করে থালাবাসন ধুঁয়ে শুয়ে পড়লো তৃধা। তন্বী আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই তৃধার আজ ঘুমাতে কোন সমস্যা হয়নি।

মাঝরাতে ভেজা কিছু অনুভব হতে তৃধার ঘুম ভেঙে গেলো। শোয়া থেকে উঠে দেখলো তন্বীর ডাইপার লিক হয়ে গিয়েছে, ফলে বিছানা ভিজে গিয়েছে। তৃধা দ্রুত ভেজা কাঁথাটা সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে তন্বীকে আবারো ঠিকঠাক করে শুয়ে দিলো। নিজেও কাপড় পরিবর্তন করে শোয়ার প্রস্তুতি নেবে তখন অনুভব করলো তার পিপাসা পেয়েছে। আস্তে করে দরজাটা খুলে পানি পান করে যখন সে ফিরে আসবে তখন কারো ফিসফিস শব্দ শুনে থেমে গেলো।

শব্দটা বারান্দা থেকে আসছে। কান খাড়া করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তৃধা।

” আরে বলছি তো জিনিস পেয়ে যাবো। এতো তাড়াহুড়ো কিসের?”

” উফ… বাবা বললাম তো আমি ম্যানেজ করে ডেলিভার করে দেবো। এতো তাড়াহুড়ো করলে পরে ভেজালে পড়ে যাবো। ধৈর্য ধরো কাজ হয়ে যাবে৷ আমি কি তোমাদের সাথে নতুন কাজ করছি?”

” তাহলে? এখন ফোন রাখো, আমি কিছুদিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেবো। চিন্তা করো না, সাবধানেই কাজ করবো।”

তৃধা দ্রুত রুমে এসে শুয়ে পড়লো৷ তার কানে এখনো রুদ্রের কথাগুলো বেজে চলেছে।

” কিসব জিনিসের কথা বলছিলেন তিনি? অফিসের কোন কিছু? কিন্তু এতোরাতে কোন অফিসের বস ফোন করে কিছু চাইবে? যেভাবে লুকিয়ে নিচুস্বরে কথা বলছিলো আমার কেন জানি সুবিধার লাগছেনা৷ আমি কি কাউকে বলবো নাকি সরাসরি জিজ্ঞেস করবো?”

এসব কথা ভাবতে ভাবতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো তৃধা।

আগের কল কেটে রুদ্র আবারো কাউকে ফোন করলো।

” কিসের কাজ কতদূর?”

” আরো কিছুদিন সময় লাগবে।” অপর পাশ থেকে উওর দিলো কেউ।

” যা করার তাড়াতাড়ি কর। আমার জিনিস এই সপ্তাহের মধ্যেই লাগবে।”

” আচ্ছা, জিনিস রেডি হলে আমি ফোন দেবো।”
.
.

নাস্তা করার সময় তৃধা লক্ষ্য করে দেখলো রুদ্র অন্যদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড়েছে। তার হাবভাব তৃধার আগে থেকেই সুবিধার লাগতোনা এখন তো আরো সন্দেহ লাগছে। তবে তার অফিসে যেতে হবে বলে বেশিক্ষণ এই বিষয়ে চিন্তা করলো না।

অফিস থেকে ফিরে তৃধা খেয়াল করলো তেজবীনের জুতো বাইরে আছে। সে আবারো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাকালো, না আজ তো তার ফিরতে দেরি হয়নি। বেল দেওয়ার পর তিথি এসে দরজা খুলে দিয়ে চলে গেলো।

অসময়ে তেজবীনকে শুয়ে থাকতে দেখে তৃধা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ তন্বীকে একপাশে শুয়ে দিয়ে তেজবীনের কাছে গিয়ে থাকে ডাকলো।

” তেজবীন, এই তেজবীন। তুমি ঠিক আছো? আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলে যে? শরীর খারাপ লাগছে?” এমনিতে বলার পর যখন তার কোন সারা পেলো না তখন তৃধা হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো। আচমকা তেজবীন তাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো এবং চিৎকার করে বললো,

” দেখতে পাচ্ছিস না কিছু বলছি না। তারপরও কানের কাছে এসে চিৎকার করছিস কেন? প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দে। আমার মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে৷ দয়া করে আর কোন নাটক করিস না।” বলেই আবারো উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো সে। খিদের কারণে তন্বী কেঁদে উঠলো। যা শুয়ে তেজবীন খুবই রেগে গেলো। সে এমনভাবে তাকালো যেন এই বুঝি তন্বীকে মারবে। তৃধা দ্রুত তন্বীকে নিয়ে তিথির ঘরে চলে এলো। তাকে খাইয়ে দিয়ে সেখানেই রেখে প্রথমে কাপড় পরিবর্তন করলো। এরপর চা বানিয়ে তেজবীনের কাছে এলো।

” তেজবীন উঠো৷ চা’ টা খেয়ে নাও, ভালো লাগবে। এই উঠো, চা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও। না হলে মাথাব্যথা কমবে না।”

তৃধার অনেক ডাকাডাকিতে তেজবীন উঠে চা এবং ওষুধটা খেয়ে চুপচাপ আবারো শুয়ে পড়লো৷ তেজবীনের আচরণে তৃধার ভীষণ চিন্তা হতে লাগলো। তার চোখটাও কেমন যেন লাল হয়ে গিয়েছে। তৃধা এখন কি করবে তাই চিন্তা করতে লাগলো।

চলবে……..

( আমি আগেই থেকেই দুঃখিত। আমার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা থাকার কারণে পরবর্তী পর্ব সোমবারে দেওয়া হবে। আশা করবো আপনারা আমার সমস্যা বুঝতে পারবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here