বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ০৩+০৪

0
523

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ০৩+০৪
#ফাতেমা_জান্নাত

—“এই মাইয়া স্বামী ম’রে যাওয়ার ইদ্দত পালন করছো? নাকি ইদ্দত পালন না করেই দেবর কে বিয়ে করছো? ”

রাফিয়া কে কথা গুলো গ্রাম এর বাড়ি থেকে আসা রাফিয়ার দূর সম্পর্ক এর দাদু শাশুড়ি নাজমা বেগম বলছিলো।নাজমা বেগম সাফওয়ান এর দাদুর সৎ বোন।সাফওয়ান এর দাদু মা’রা গিয়েছে চার বছর খানেক হয়েছে।নাজমা বেগম সেকেল এর মানুষ। তাই সব জিনিস -ই পরিপূরণ দেখা চায় তার।কোনো কিছু তে খুত পেলে তার দিজ থেকে তিনি নাক ছিটকায়।এই একটা অন্যতম বদ অভ্যাস নাজমা বেগম এর।আর নাজমা বেগম এর এই অভ্যাস এর জন্য- ই সাফওয়ান তাকে সহ্য করতে পারে না।সাফওয়ান এর এক কথা, চলার পথে সবার-ই ভুল হয়।ধরেই তো কেউ গাছের আগায় উঠে যেতে পারে না।ভুল হলে তাকে বুঝিয়ে বলে দিবে।সে শুধরে নিবে।তা না প্রথম এ এসেই ভুল ধরে তাকে এত কথা কেন শুনাবে? নাজমা বেগম এর মনোভাব হচ্ছে।নতুন হোক বা পুরাতন ভুল কেন হবে?

আজকে সকাল এই নাজমা বেগম গ্রাম এর বাড়ি থেকে এসেছে।শুনেছে সাফওয়ান বিয়ে করেছে।তাই বউ দেখতে এসেছে।বউ দেখতে এসেছে ঠিক এটা বলা যায় না।বরং বলা যায় নতুন বউ এর খুঁত ধরতে এসেছে।কিন্তু এসেই যখন জানতে পারলো সাফওয়ান সাইফ এর বউ মানে তার-ই বড় ভাবি কে বিয়ে করেছে এতে যেন তার ভেজায় রা’গ হলো।কাজের মেয়ে চম্পা কে বললো, “রাফিয়া কে ডেকে নিয়ে আয়”।

নাজমা বেগম এর কথা মানতে চম্পা গিয়ে রাফিয়া কে ডেকে নিয়ে আসে।রাফিয়া এসে মাথার আচঁল টা আরো সামনে টেনে দিয়ে নাজমা বেগম কে সালাম দেন।নাজমা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে রাফিয়া কে দেখে- ই উক্ত কথা টা মুখোচ্চরিত করে।রাফিয়া কিয়তক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—“জি করেছি “।

নাজমা বেগম মুখশ্রী কঠিন করে গলার স্বর গম্ভীর করে বলে,

—“কয় দিন করেছো?”

রাফিয়া ও বিনা দ্বিধায় স্বগতোক্তি করে বলে,

—“জি,চার মাস দশ দিন”।

রাফিয়ার মুখে যথাযথ ভাবে ইদ্দত পালন এর কথা শুনে তিনি আর কিছু বললেন না।সাবিনা এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—“বউ মা,আমাকে ঘরে দিয়ে এসো”।

সাবিনা ও বিনা বাক্যে নাজমা বেগম কে নিয়ে তার ঘরে দিয়ে আসে।বলা বাহুল্য তিনি নিজে ও নাজমা বেগম কে ভয় পান।

আমজাদ সাহেব এবং সাফওয়ান দুই জনেই বাড়ির বাইরে কাজে আছে এখন।বাড়ি তে এখন শুধু তারা মেয়ে রাই আছে।চম্পা রান্না ঘরে দুপুর এর খাবার এর আয়োজন করছে।বয়সে চম্পার বয়স উনিশ এর ঘরে।এখনো বিয়ে হয় নি।
রাফিয়া রান্না ঘরের দিকে এগোয় চম্পা কে হাতে হাতে কিছু সাহায্য করে দেওয়ার। রাফিয়া রান্না ঘরে ঢুকে গ’রুর গোস্ত গুলো ধোয়ার জন্য পাত্র সহ হাতে নিতে- ই চম্পা বাঁধা দিয়ে বলে,

—“আরে আরে..ভাবি কি করতাছেন আপনি?আপনে এগুলা করা লাগবে না।আমি করে নিতে পারবো।

রাফিয়া চম্পার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

—আমি সহ করি চম্পা। কিছু হবে না।দুই জনে হাতে হাতে করলে তাড়াতাড়ি শেষ হবে।আর ভালো ও লাগবে।

রাফিয়ার কথায় এবার আর বাধা দেয় না চম্পা। রাফিয়া গোস্ত ধুতে চলে সিনে।চম্পা ও নিজের মতো কাজ করতে থাকে।হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তে- ই চম্পা রাফিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

—ভাবি ইদ্দত কি?দাদি যে আপনারে জিজ্ঞেস করলো ইদ্দত পালন করছে কিনা?

চম্পা এর রাফিয়া দুই ওষ্ঠ দ্বয় কিঞ্চিত ফাঁক করে ভিতরে থেকে চলে আসে তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে।চম্পা এর মুখের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দেয়।চম্পা তার দিকে উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে রাফিয়া কে করা তার প্রশ্ন এর উত্তর জানতে। রাফিয়া কিছুক্ষণ আনমনা থাকে।তারপরে -ই চম্পার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“ইদ্দত মানে হচ্ছে গণনা করা।মহিলাদের ইদ্দত হলো- ঐ সকল দিন, যেগুলো অতিবাহিত হলে তার জন্য বিবাহ করা হালাল হয়ে যায়। ইদ্দত পালন করা ফরজ।ইদ্দত পালন না করে দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেটি সহীহ হবেনা। সুতরাং, কেউ বিবাহ বসলে সেই বিবাহ বাতিল হবে।পবিত্র আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

নির্দিষ্ট কাল ইদ্দত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় কর এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। (সূরা বাকারাহ্; ২/২৩৬)।

চম্পার উদ্দেশ্যে রাফিয়া বলে,

—“আমার জানা মতে ইদ্দত কয়েক প্রকার এর আছে।যেমন, তালাক দিলে,স্বামী মা’রা গেলে,স্বামী নিখোঁজ হলে ও ইদ্দত পালন করতে হয়।আমার ক্ষেত্রে স্বামী মা’রা গেছে সেই ইদ্দত পালন করতে হবে চম্পা। তোর বড় ভাইয়া সাইফ তো দুনিয়া তে তাই স্বামী মৃ’ত ইদ্দত -ই পালন করতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে যে ভাবে ইদ্দত পালন করতে হয় তা নিয়ে কোরআনে বলা আছে যে,

“স্বামী মারা গেলে স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। (সূরা বাকারাহ; ২/২৩৪ সহীহ বুখারী, হা/৫৩৪২)”।
“স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী মূলতঃ স্বামীর গৃহে অবস্থান করেই ইদ্দত পালন করবে। বাধ্যগত কারণ ব্যতীত এসময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। (সূরা তালাক; ৬৫/১, আবু দাউদ হা/২৩০০; মিশকাত হা/৩৩৩২ ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৪০)”।
“ফুরাই‘আহ বিনতে মালেক (রাযিয়াল্লাহ আনহা) তার স্বামীর মৃত্যুর পর পিতার বাড়ী চলে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার বাড়িতেই অবস্থান কর।’ (আবু দাঊদ, হা/২৩০০; তিরমিযী, হা/১২০৪, সনদ সহীহ)”।

” তবে কোন ক্ষতি বা শত্রুর ভয়ের আশঙ্কা থাকলে অন্য স্থানেও অবস্থান করা যায়। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৩)”।
“পাশাপাশি এই সময় রঙ্গিন বা অধিক সৌন্দর্য প্রকাশক কোন পোষাক পরিধান করবে না। অলঙ্কার ব্যবহার করবে না। বিশেষ কারণ ব্যতীত সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদীও ব্যবহার করা যাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,‘(স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী) রঙিন কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। তবে সূতাগুলো একত্রে বেঁধে হালকা রং লাগিয়ে তা দিয়ে কাপড় বুনলে তা ব্যবহার করা যাবে।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৩৪২, সহীহ মুসলিম ৯৩৮, মিশকাত হা/৩৩৩১)”।

“আহালুল আলেমগণ বলেন, এমন কাপড়, যা সুন্দর নয় বা যার মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। শারঈ বিধান হলো, বিধবা স্ত্রী এমন পোশাক পরিধান করবে, যা সুন্দর নয়। কেননা অসুন্দর পোশাক ফেতনাকে উপেক্ষা করে। এ কারণে সাধারণ পোশাক (যা রঙিন না) ব্যবহার করবে। এমননিভাবে ইদ্দতকালীন সুগন্ধী, স্বর্ণ, রৌপ্য, হিরা, মণি-মুক্তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে। (শাইখ বিন বায, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃ. ২১২)। তবে নিরাপত্তার আশংকা থাকলে অন্য কোন নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারে। যেমন; রাসূল (আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন মহিলাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করতে বলেছিলেন। (সহীহ মুসলিম ১৪৮০, আবু দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, মিশকাত হা/৩৩২৪)”।

এতক্ষণে কথা গুলো বলে থামে রাফিয়া। চম্পা মন্ত্র মুগ্ধ এর ন্যায় রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে রাফিয়ার কথা গুলো শুনছে।রাফিয়া এর কথা গুলো শুনে সে বুঝতে পারছে ইদ্দত কি.?কিন্তু তাদের গ্রাম এর বাড়ি তে মহিলা দের স্বামী মা’রা গেলে তারা এমন ইদ্দত পালন করে না।তারা তো বলে, “স্বামী মা’রা যাওয়ার পঁয়তাল্লিশ দিন ঘরে থাকলে- ই হলো।আর কানে নাক এর জিনিস খুললে- ই হলো।আর কিছু লাগে না।কিন্তু ইসলামে তো বলা আছে অন্য কথা।চম্পা তার ভাবুক মন কে ধাতস্থ করে রাফিয়া কে আরো কিছু প্রশ্ন করার উদ্যত হবে এমন সময় রাফিয়া মৃদু চেঁচিয়ে উঠে বলে,

—“ইন্না – লিল্লাহ!!

রাফিয়া এর মুখোচ্চরিত “ইন্না -লিল্লাহ” শুনে
চম্পা বলে উঠে,

—“কি হয়েছে ভাবি?কে ম’রে গেছে?”

চম্পার মুখে,”ম’রে যাওয়ার” কথা জিজ্ঞেস করতে দেখে রাফিয়া আহাম্মক এর তাকিয়ে আছে তার পানে।চম্পা সেটা দেখে বলে,

—“ভাবি আপনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় আছেন কেন?আমার শরম করে তো”।

বলেই চম্পা ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢেকে পেলে।রাফিয়া চম্পার কান্ড কারখানা দেখে রীতিমত রিয়েকশন দেওয়ার কথা ভুলে গেছে।সাধারণ তাকিয়ে থাকাতে কিনা মেয়ে টা লজ্জা পাচ্ছে?একটা মেয়ে অন্য একটা মেয়ে এর দিকে তাকালে বুঝি লজ্জা পায় এটা আজকে জানতে পেরেছে রাফিয়া।

রাফিয়া নিজে কে ধাতস্থ করে।সটান হয়ে দাঁড়ায়। চোখ মুখে গাম্ভীর্য তা প্রকাশ করে গম্ভীর কণ্ঠে চম্পা কে বলে,

—“লজ্জা পাওয়া বন্ধ করো চম্পা।তরকারি টা পু’ড়ে যাচ্ছিলো সেই খেয়াল ছিলো তোমার? তুমি এখানে আমার তাকানো তে মুখ ঢেকে লজ্জা লজ্জা ভাব করছো। একবার যদি দাদু বুঝতো তুমি আজ কের তরকারি পু’ড়িয়ে ফেল ছিলো তাহলে তোমার গুষ্ঠি শুদ্ধ থেকে নাক ছিটকাতো।

চম্পা তাড়াতাড়ি গ্যাস এর আ’গুন নিভানোর জন্য তাকাতে -ই দেখে রাফিয়া আগেই আ’গুন নিভিয়ে দিয়ে ছিলো। চম্প স্বস্তিকর নিশ্বাস ফেলে।
নাজমা বেগম কে সে একটু পছন্দ করে না।মুখ কালো করে রাফিয়া কে বলে,

—এই বুড়ির এক পা কবরে আরেক পা দুনিয়া তে পড়ে আছে।তার পর হেতির দেমাগ যায় না।এই বুড়াতি বয়সে ও মানুষ এর খুঁত খুঁজতে থাকে।অথচ আপনার আপন দাদি শাশুড়ি কত্ত ভালা মানুষ ছিলো। আমাকে অনেক আদর করতো। সেই ছোট বেলা থেকে- ই তাও কাজ করি এই বাড়িতে। আমাকে সব সময় বলতো, “চম্পা কখনো নিজে কে এতিম ভাববি না।তুই এই পরিবার – ই একজন “।মানুষ টা চলে গেলো। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক। আর তার এই সৎ বোন নাম কি জানি এ্যাজমা নাকি নাজমা। উনি এখনো মানুষ এর পিছনে লেগে আছে।বলে না ভালো মানুষ গুলো দুনিয়া থেকে তাড়াতাড়ি যায়।

রাফিয়া চম্পার কথার শুনে সাবধান এর সুরে বলে,

—“চম্পা, এখানে -ই চুপ।দাদু তোমার গুরুজন হয়।তিনি যেমনি হোক না কেন।তাকে এভাবে বলা তোমার উচিত না”।

রাফিয়া এর গম্ভীর কথা চম্পা চুপ করে যায়।আর কিছু বলে না।দুই জনে দুই জনের মতো করে রান্না করতে থাকে।কথার ফাঁকে ফাঁকে
চম্পা ও ভুলে গেছে রাফিয়া কে তার একটা প্রশ্ন করার আছে ইদ্দত সম্পর্কে। কিন্ত এখন তো ভুলে গেছে।তাই আর জিজ্ঞেস ও করা হলো না।

🌸🌸

রাত আট টা বাজে।সাফওয়ান মাত্র- ই বাসায় এসেছে।
আমজাদ সাহেব আরো বেশ কিছুক্ষণ আগে- ই বাসায় এসে ছিলো। সাফওয়ান কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে যায়।
রুমে এসে- ই দেখে রাফিয়া জায় নামাজে বসে বসে কুরআন তেলাওয়াত করছে।বোধহয় কিছুক্ষণ আগে- ই নামাজ পড়েছে।সাফওয়ান আর কিছু না বলে কার্বাড থেকে নিজের এ্যাশ কালার এর একটা টি শার্ট আর ব্ল্যাক টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।মসজিদ থেকে এশার সালাত আদায় করে এসেছে সাফওয়ান। ওয়াশরুম এ যাওয়ার আগে রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে একবার স্মিত হাসে।সে সহজ স্বাভাবিক হতে চায় রাফিয়ার সাথে।স্বামীর অধিকার এখনি ফলাতে না চাইলে ও একজন স্বামী স্ত্রীর মতো আর পাচঁ টা স্বাভাবিক সংসার এর মতো সংসার করতে চায় সাফওয়ান। যদি ও তা একটু ট্রাফ।তবুও আস্তে আস্তে নিজে দের স্বাভাবিক করার চেষ্টা তো করতে হবে।এভাবে তো আর হয় না।রাফিয়া ও তার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না।সে ও পারছে না স্বাভাবিক হতে।এমন ভাবে সম্পর্ক চলতে থাকলে তো তাদের মাঝে বাংলাদেশ ভারত এর মাঝে যেমন বর্ডার তেমনি বর্ডার এর সৃষ্টি হবে।তাছাড়া হালাল সম্পর্ক এর মাঝে বর্ডার রাখা শয়’তান কে প্রশ্রয় দেওয়া। অন্য দিকে অন্য বেগানা নারী/পুরুষ এর মাঝে শ’য়তান মন কে ধাবিত করবে।আর যাই হোক শ’য়তান এর প্ররোচনায় সে পড়তে চায় না।আর না রাফিয়া কে পড়তে দিবে।তাই আত্ম প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তার দিক থেকে সে স্বাভাবিক ভাবে একজন স্বামীর মতো করে- ই রাফিয়া এর সাথে আচরণ করবে।স্বামীর মতোই ট্রিক করবে।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সাফওয়ান দেখে রাফিয়া চুলে বেনি করছে।সাফওয়ান এর ইচ্ছা জাগলো সে তার নিজের হাতে রাফিয়ার চুলে বেনি করে দেওয়ার। কিন্তু ওই যে ইতস্তত বোধ এর জন্য আর পারলো কই?চট করে মাথায় কিছু আসতে- ই রাফিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে রাফিয়ার কাঁধে কাঁপা কাঁপা হাত টা রাখে।রাফিয়া ঈশৎ কেঁপে উঠে।মন কুঠিরে রাখা ঘর টা হালকা কম্পিত হলো বলে ঠাওর করলো রাফিয়া। নিজে কে ধাতস্থ করে।জোর পূর্বক মুখে মেকি হাসির রেখা টানে।আর যাই হোক সাফওয়ান এখন শরীয়ত মোতাবেক তার স্বামী। তাকে অবজ্ঞা করার কোনো অধিকার তার নেই।তাই রাফিয়া আয়নার মাঝে সাফওয়ান কে দেখে বলে,

—কিছু বলবেন?

সাফওয়ান রাফিয়ার মুখোচ্চরিত বাক্যে অভয় পায়।সাহস নিয়ে বলে,

—জি।কিছু কথা আছে।আর আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকে একটা জিনিস হাদিয়া দিতে চাই।

রাফিয়া ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বলে,

—হাদিয়া? কি দিবেন?

—সব থেকে উত্তম হাদিয়া।

—আচ্ছা।

সাফওয়ান তার অফিস এর ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করতে যাচ্ছিলো। এমন সময় রুম এর বাইরে থেকে চম্পা রাফিয়া কে ডেকে উঠে রাফিয়া সেই দিকে খেয়াল করে সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে বলে,

—“আচ্ছা আমি একটু শুনে আসি।হয়তো দাদু ডাকছে।

বলেই রাফিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়া বলে,

—“এই আমি সব কিছু করতে চাইলে কি হবে?এসব এলাচি গুলোর জন্য কিছুই করতে পারবো না।সুন্দর মুহূর্তে -ই এসে এলাচি দ্বারা সব বিষাদ ময় করে দেয়।এই চম্পা কে তো মনে হচ্ছে এই বাড়ি থেকে আউট করতে হবে।যতদিন না আমার আর রাফিয়ার মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।”

বলেই সাফওয়ান চোখ মুখ কুঁচকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করার জন্য।

🌸🌸

চম্পা রাফিয়া কে নিজের রুমে এনে বসিয়ে বলে,

—“আচ্ছা ভাবি শুনেন না? আমাদের গ্রামে যে মহিলারা স্বামী মা’রা গেলে নাক ফুল গহনা খুলে ফেলে।এটা ও কি ইদ্দত এর মধ্যে পড়ে?

—নাহ!এটা ইদ্দত না।বা এরকম কিছু ইসলামে বলেনি।এটা সম্পূর্ণ মানুষ এর তৈরি করা প্রথা ব্যতিত কিছুই না।ইসলামে বলা আছে যে,
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত পালন শুরু করতে হবে। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/৮১৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)।
উল্লেখ যে, স্বামী মারা গেলে শোক পালন করতে গিয়েৎউচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি করা যাবে না। কেননা এটা জাহেলী প্রথা এবং তাওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন তাকে দুর্গন্ধযুক্ত পায়জামা ও শরীরে পাঁচড়া সৃষ্টিকারী পোশাক পরিধান করানো হবে। (সহীহ মুসলিম হা/৯৩৪; মিশকাত হা/১৭২৭)

রাফিয়ার কথা শেষ হতেই সাফওয়ান বলে,

—ও আচ্ছা।এবার বুঝেছি ভাবি।

চম্পার কথায় রাফিয়া হেসে দিয়ে নিজে দের রুমে চলে আসে।রুমে আসতেই দেখে সাফওয়ান এখনো ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—“আপনি সে সময় কিছু দিতে চেয়ে ছিলেন আমায়।”

রাফিয়ার কথায় সাফওয়ান উঠে এসে ড্রেসিং টেবিল এর উপর থেকে একটা হাসনাহেনা ফুলের মালা এনে রাফিয়ার সামনে দাঁড়ায়। রাফিয়ার দিকে অনুমতি এর স্বরে বলে,

—“আপনি যদি অনুমতি দেন।তাহলে আমি কি একটু মালা টা আপনাকে পরিয়ে দিতে পারি?এটা আমি নিজের হাতে গেঁথেছি। অফিস এর পাশে হাসনাহেনা ফুল গাছের নিছে ফুল গুলো ঝরে পড়েছিলো।এখনো কড়া ঘ্রাণ দেখে তুলে নিয়ে ছিলাম। গাড়িতে বসেই মালা টা গেঁথেছি। রাস্তার পাশের দোকান থেকে সুই সুতা কিনে নিয়েছিলাম আগে।এখন আপনি যদি একটু…

কথা টা পুরোপুরি ভাবে শেষ করার আগেই রাফিয়া হাত টা এগিয়ে দেয় সাফওয়ান এর দিকে।তার অতীত সাইফ এর সাথে জড়ানো সময় গুলো কে মনে রেখে সে তার বর্তমান ভবিষ্যৎ কে এড়িয়ে যেতে পারে না তাই বর্তমান কে সে ও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।সাফওয়ান কে স্মিত হেসে বলে,

—“পরিয়ে দিন”।

“পরিয়ে দিন” এই কথা টা যেন সাফওয়ান এর কাছে অধিক মূল্যবান শব্দের মধ্যে দুটো শব্দ মনে হলো।সে ভাবেনি রাফিয়া রাজি হবে।সাফওয়ান “আলহামদুলিল্লাহ ” বলেই রাফিয়ার হাতে মালা টা পরিয়ে দেয়।রাফিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।এখনো পর্যন্ত সে সাফওয়ান দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলায় নি।পারছে না মিলাতে।চেষ্টা করছে তো।একদিন এমনেই আল্লাহ মিলিয়ে দিবে তাদের দুই জনের দৃষ্টি।

সাফওয়ান মালা পরানোর সময় রাফিয়া কে বলে,

—“❝ফুল হাদিয়া দেওয়া সুন্নত❞____
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ-

❝কারও কাছে ফুল উপহার হিসাবে
পেশ করা হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা, তা বহনে হালকা ও ঘ্রাণযুক্ত।❞
(সহিহ মুসলিম:- ৬০২০)

রাফিয়া স্মিত হাসে সাফওয়ান এর কথায়।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক করার সময় পায়নি।আসসালামু আলাইকুম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here