#গভীর_গোপন
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
জেবা কম তর্কের লোক না! সহজে সবকিছু স্বীকার করার লোকও সে না। সে বললো,’ এখানে যা যা হয়েছে এইসব কিছুই তোমার করা ষ*ড়যন্ত্র । তুমি আমাকে সহ্য করতে পারোনি তাই এরকম করছো। এই যে চায়ে ঘুমের ওষুধ মেশাবার কথা, আমার বিছানায় এনে পিল রাখা, এর সব তোমার বানানো ষ*ড়যন্ত্র। আমি আমার মেয়ের কসম করে বলছি আমি নিষ্পাপ।আমি এরকম কিছুই করিনি । তুমি আমায় আর মিথ্যে অপবাদ দিও না।’
মেয়েকে নিয়ে কসম কাটার পর আমার মনে একটু হলেও নাড়া দিলো।ভয় পেয়ে গেলাম আমি। ভাবলাম ভুল কিছু করছি কি না! আমি চুপ হয়ে গেলাম হঠাৎ করে। আমার চুপ থাকার সুযোগটা নিলো আশফাক। সে বললো,’ তুমি একটা নি*ষ্ঠুর মেয়ে।নি*র্দয় তুমি।মনে দয়া মায়া বলতে কিছুই নাই তোমার। একটা মানুষ বার বার বলতেছে সে নির্দোষ। সে এরকম কিছু করেনি। আমিও বলেছি আমাকে ভুল বুঝো না। আমাদের সম্পর্কটা ভাই -বোনের মতো।এটা সবাই জানে। এমনকি জুঁইও জানে। ওকে জিজ্ঞেস করতে পারো। জুঁই তোমার কাছের লোক। আমাদের বিশ্বাস না করলেও ওকে তো তুমি বিশ্বাস করবে তাই না? নাকি ওকেও বিশ্বাস করবে না তুমি? ‘
আমি আর এ নিয়ে কোনো তর্কে গেলাম না।চুপ মেরে রইলাম।চুপ হবার যথেষ্ট কারণ আছে। বিষয়টা কেমন ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে। তাছাড়া আমার ভয় ভয় করছে।যদি আমি এ নিয়ে এখন বেশি বাড়াবাড়ি করি, তবে যদি ওরা আমার কোন ক্ষতি করে বসে! মানুষের দোষ প্রকাশ হতে শুরু করলে তা ঢাকবার জন্য তারা সবকিছুই করতে পারে। এমনকি খু*ন পর্যন্ত করে ফেলে।আমি নির্বোধের মতো তর্কাতর্কি করলাম না। দিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। জুঁইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। জুঁই এলে আমার শক্তি হবে।সাহস হবে। এখানে একা আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। কিন্তু জুঁই এলে আমি অনেক কিছুই করতে পারবো। অন্তত জুঁইকে আমি অতোটা বিশ্বাস করি যে, সত্যের বিপক্ষে যাবে না কখনোই!
‘
অবশ্য আমার নিরবতার সুযোগ নিয়ে জেবা কেঁদে কেটে দুনিয়া ভাসালো তার চোখের জলে।আশফাককে বললো,’ কেন তুই আমায় এখানে জায়গা দিয়েছিলি? অপমান করাতে তাই না? তোর বউ আমাকে খারাপ প্রমাণ করতে আমার বিছানায় এনে পিল পর্যন্ত রেখেছে। মানুষ এরকম হয় কি করে রে আশফাক? এখানে থাকতে আমার ভয় করছে রে ভাই! তোর বউ যেরকম হিংস্র, কখন জানি আবার আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে বি*ষ খাইয়ে মে*রে ফেলে আল্লাহ জানে!’
আশফাক বললো,’ তুলি তার ভুল এখন বুঝতে পারছে নিশ্চয়। সন্তানের কসম করে কেউ কখনো মিথ্যে কথা বলে না। তাছাড়া তার যদি এখনও অবিশ্বাস হয় তবে তাকে বলাই হয়েছে, জুঁইকে জিজ্ঞেস করুক। কোন কিছু না জেনে, না শোনে কাউকে এভাবে অপবাদ দেয়া ঘৃণ্য কাজ। নোংরা কাজ!’
জেবা বললো,’ তোর অনেক ধৈর্য্য রে ভাই! অন্য কেউ হলে দেখতে এতোক্ষণে কি করতো। ‘
আশফাক বললো,’ রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।তুলি ভুল করেছে বলে আমিও ওর মতো ভুল করতে পারি না।এটা নিয়ে আমিও যদি খুব উচ্চবাচ্য করতাম তবে বাইরের লোকেরা এটা শুনতো।আর এসব কথা বাইরে গেলে কেমন হতো তুই-ই বল? তুই, আমি, তুলি আমাদের তিনজনের কেউই কি মানুষেকে আর মুখ দেখাতে পারতাম? মানুষ আমাদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দিতো না? তাছাড়া রাগারাগী করে কি হবে? এখন আমি রাগ করে ওকে বললাম, তোকে আমি ডিভোর্স দিবো।তোর মতো নোংরা মনের মেয়ের সঙ্গে আমি ঘর সংসার করবো না। কিন্তু দিন শেষে এটা কি আমি করতে পারতাম? এটা মুখেই বলা হতো শুধু।ঘুরে ফিরে তার সঙ্গেই আমার ঘর সংসার করতে হতো।কারণ তাকে আমি ভালোবাসি। তাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।’
আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে এসব শুনে। আশফাকের কথা শুনেই বুঝতে পারছি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা সে করছে।সে ইতিমধ্যে এইটুকু বুঝে গেছে যে আমি আর যাই হই দূর্বল কোন মেয়ে নই। সে বুঝে গেছে, আমাকে ধমক দিয়ে কিংবা ভয় দেখিয়ে সে শান্ত করতে পারবে না। এই জন্য হয়তো নতুন কসরত করছে। ইমোশনালি ব্লা*কমেইল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি জানি এইসব কিছু আমার মাথায় নেয়া যাবে না। আজ ওদের সব বকবকানি,অভিশাপ, অপবাদ শুনে আমাকে চুপ থাকতে হবে।এই রাতটা আমার নয়। ওদের।একটা রাত ওদের মতো করে যা ইচ্ছে তাই বলুক ওরা।কাল সকালটা আমার হবে নিশ্চয়। দিনের ফকফকা পরিষ্কার আলোতে আমি প্রমাণ করে দিবো, আমি নোংরা মনের মেয়ে নয়, নোংরা ওরা। ওদের মন মগজ সবকিছুই নোংরা!
রাতেই আমি মেসেজ করে রাখলাম জুঁইকে। জানিয়ে রাখলাম আমি খারাপ পরিস্থিতিতে আছি। এখানে যা যা ঘটেছে যতোটুকু পেরেছি তা বলেছি। জুঁই বললো সকাল হলেই সে আসছে। এবং মজার বিষয় হলো সে এমন একজনকে সকাল বেলা এখানে নিয়ে আসবে যে আসার পর অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আমি সেই আশায় রইলাম। কিন্তু সারা রাত এক ফোটাও ঘুমাতে পারলাম না। চোখে কিছুতেই ঘুম এলো না।ঘুম আসবে কি করে? আমি ভয়ে সবটুকু সময় আড়ষ্ট হয়ে রইলাম।ওরা যদি আমার ক্ষতি করতে চায়! আমি একা হলে অতোটাও টেনশন করতাম না। টেনশন হলো পেটের বাচ্চাটার জন্য। তাছাড়া ওরা ষড়যন্ত্রও করতে পারে।জেবা সাধারণ কোন মেয়ে না। ওকে দেখেই আমার ভয় হয়।ও পারবে না এমন কিছু নেই। নিজের মেয়েকে ছুঁয়ে কসম কেটে যে পাপ ডাকার চেষ্টা করে, সে নিজের মেয়ের ক্ষতি করেও আমায় ফাঁ*সিয়ে দিতে পারে!
ওরাও ঘুমায়নি। আশফাক আমার পাশেই ছিল।জেবা দেখলাম একটু পর পর পায়চারি করছে আর আমাকে অপবাদ দিচ্ছে।
‘
জুঁই এলো পরদিন সকাল বেলা। সে আসার পর ওর হাত ধরে কেঁদে ফেললো জেবা।বললো,’ জুঁই, তুমি তো আমাকে চিনো। আমার সম্পর্কে জানো। আশফাকের সঙ্গে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল তাও জানো।দেখো,তুলি আমায় আর আশফাককে নিয়ে কি রকম নোংরা নোংরা কথা বলছে! তুমি বলো, আমার চরিত্র কি খা*রাপ জুঁই? যদি খারাপ হয় তবে তুমি তোমার পায়ের জুতো দিয়ে আমায় মারো।আমি তোমার বড় বোন। কিন্তু সব আমি মেনে নিবো। ‘
জুঁই ওকে কিছু বললো না। সে আশফাককে ডাকলো।বললো,’ ভাইজান, এইদিকে আসো।’
আশফাক এলো। এসে মুখ গুমড়া করে বললো,’ বল।’
জুঁই বললো,’ তুমি কি জেবা আপুর মতো নিজেকে নির্দোষ দাবি করো?’
আশফাক রাগের গলায় বললো,’ তুই কি এখানে বিচার করতে এসেছিস নাকি আমাকে ইচ্ছে করে অপবাদ দিয়ে দোষী বানাতে এসেছিস?’
জুঁই বললো,’ আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। আমার জানামতে জেবা আপুর সঙ্গে তোমার এমন কিছু দেখিনি যা দেখে আমি বলবো তোমরা দোষী। তোমাদের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক আছে।’
জেবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো এই কথা শুনে। আশফাকেরও। আমার শরীর কেমন ঘামতে শুরু করলো। জুঁই কি তবে আমার সঙ্গে বেঈমানি করলো? শেষমেষ ওর ভাইকেই জিতিয়ে দিলো?
জেতাবেই তো।সৎ ভাই হলেও তো এক বাবার সন্তান। রক্তে এদের বেঈমানি মিশে আছে যে!
কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে জুঁই কাকে যেন ফোন করলো।বললো,’ আপনি এখন আসুন। বাড়ির গেট খোলাই আছে।’
ফোন করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই লোকটি এলো।বয়স আশফাকের চেয়ে বেশি হবে না। তবে মাথার চুল নেই।পড়ে গেছে হয়তো।
ওকে দেখেই জেবা ভয়ে মুষড়ে উঠলো।আশফাকের চেহারাও পরিবর্তন হয়ে গেল মুহুর্তে। একটু আগের যে বিজয়ী চেহারা ছিল,ওটা বিবর্ণ হয়ে গেছে এখন।
জুঁই বললো,’ আপনি বসুন।’
জেবা এক রকম হুং*কার দিয়েই বললো,’ ওকে আনলে কেন এখানে? আর ও কেমন নির্লজ্জ যে এখানে এসে পড়েছে? কোন সাহসে এসেছে এখানে?’
জুঁই বললো,’ জেবা আপু, আপনি চুপ করুন।মনির ভাই, আমার বাড়িতে এসেছে।আমিই এনেছি খবর দিয়ে।এতে তো আপনার এরকম চিৎকার চেঁচামেচি করার কিছু নেই। আপনার বাড়িতে এলে আপনি বা*হাদুরি দেখাতে পারতেন। কিন্তু বাড়িটা তো আমার!’
আশফাক বললো,’ তোর না। আমার।এই বাড়ি আমার একার। শুধু আমার।তুই কার অনুমতি নিয়ে ওকে এখানে এনেছিস? আমায় জিজ্ঞেস করে এনেছিস?’
জুঁই বললো,’ বাড়ির মালিক কে এই হিসেবটা একটু পরে করবো।এর আগে এই হিসেবটা শেষ করি।মনির ভাই, আপনি বলুন তো আপনি কেন জেবা আপুকে বিয়ে করেননি? জেবা আপু তো ওর বাড়ির সবাইকেই রাজি করিয়েছিল। কিন্তু আপনি হঠাৎ উল্টে গিয়েছিলেন কেন? বিয়ে করতে না করেছিলেন কেন? ‘
মনির বললো —
‘
#চলবে
‘
৬ষ্ঠ পর্বের লিংক-
https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/808524524202655/?mibextid=Nif5oz