#বেনেবউ
#পর্ব_১৪
#তানজিলা_খাতুন_তানু
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি মানুষটিকে ইপ্সিতা খুব ভালো করেই চেনে। মানুষটির সাথে কখনোই ওর বনিবনা হয় নি, ছোট থাকতে কয়েকবার এই বাড়িতে আসলেও বড়ো হবার পর আর আসেনি।
– ‘রিয়া’দি তুমি?’
কারোর মুখে নিজের নাম শুনে রিয়া সামনে তাকিয়ে ইপ্সিতাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
– ‘আমার ওহ তো একই প্রশ্ন, তোরা তো নীচে তলায় থাকিস উপরে কি করছিস?’
– ‘আমি এইখানেই থাকি।’ (শান্ত কন্ঠে)
– ‘তাহলে নিভ্র?’
রিয়ার মুখে নিভ্র নামটা শুনে ইপ্সিতা নিজের কানটা আর একটু খাড়া করে বলল,
– ‘কি নাম বললে!’
– ‘নিভ্র রায়হান। অফিস থেকে তো এই ঠিকানাটাই দিলো, নীচে যেহেতূ তোরা থাকিস তাই আমি ভাবলাম উপরে নিভ্র থাকে। আমি নীচে যাচ্ছি।’
ইপ্সিতা একবার ভাবল রিয়াকে আটকাবে কিন্তু পরক্ষনেই মাথাতে শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল। তাই কিছু না বলে চুপচাপ রিয়াকে যেতে দিলো। ছোট থেকেই রিয়া কোনো এক কারনে ইপ্সিতাকে অপছন্দ করত। সুযোগ পেলেই ইপ্সিতাকে অপ’দস্থ করত। ইপ্সিতা দরজা বন্ধ করে নিভ্রের ঘরের দিকে পা বাড়াল।
রিয়া তাড়াতাড়ি করে নীচের তলায় কলিং বেল বাজালো। ইপ্সিতার মা রান্না করায় ব্যস্ত ছিলেন, এই সময়ে কলিং বেলের শব্দ পেয়ে একটু বিরক্ত হলেন। রান্নাটা ফেলে রেখেই দরজা খুলে দিলেন। দুজন দুজনকে দেখে চমকে উঠল। রিয়া বিষয়টা কিছুই বুঝতে পারছে না আর ইপ্সিতার মা বিরক্ত হলেন রিয়াকে দেখে।
– ‘কি ব্যাপার তুমি এখানে?’
– ‘নিভ্র কোথায় থাকে?’ (পাল্টা প্রশ্ন)
– ‘উপরের তলাতে। কিন্তু তোমার কি দরকার?’
রিয়া উত্তর না দিয়ে উপরের তলাতে চলে গেল, ইপ্সিতার মা কি করবেন বুঝতে পারলেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
রিয়া কলিং বেল বাজাতে লাগল, প্রচন্ড অধৈর্য হয়ে পড়েছে। এইবার দরজা নিভ্রের মা খুলে দিলো।
– ‘কে মা তুমি?’
– ‘আন্টি আমি রিয়া। নিভ্রের কলিগ। আসলে ওনার শরীর খারাপ শুনলাম তো তাই এসেছি।’
– ‘ভেতরে আসো।’
রিয়া ভেতরে গিয়ে সারাবাড়ি চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না।
– ‘আন্টি নিভ্র কোথায়?’
– ‘ভেতরে আছে, তুমি বসো আমি ডেকে দিচ্ছি।’
– ‘না আন্টি সেসবের প্রয়োজন নেই। কোথায় রুমটা বলে দিন আমি চলে যাচ্ছি।’
নিভ্রের মা ঘরটা বলে দিতে রিয়া ঘরের দিকে পা বাড়াল। নিভ্রের মা রিয়াদ দিকে তাকিয়ে রইলেন, মেয়েটা ঠিক সুবিধার লাগছে না।
অন্যদিকে…
– ‘আপনি রিয়া বলে কাউকে চেনেন?’
ইপ্সিতার মুখে রিয়ার নাম শুনে নিভ্র একটু অবাক হলো।
– ‘হুমম কেন?’
– ‘মেয়েটা আপনার খোঁজ করতে এসেছিল।’
– ‘ওহ। তা কোথায় গেল?’
– ‘আপাতত বাড়ি খুঁজে চলেছে।’ (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
– ‘মানে?’
– ‘আপনাকে এত কিছু বুঝতে হবে না। আপনি বসুন আমি আপনার খাবার নিয়ে আসছি।’
ইপ্সিতা চলে যেতে যাবে তখনি নিভ্র ওর হাত ধরে আটকে দিলো।
– ‘কি হলো।’
– ‘খিদে নেই।’
– ‘সেটা বললে তো হবে না। কিছু না খেলে ওষুধ খেতে পারবেন না।’
– ‘খেতে পারি যদি তুমি..
– ‘কি?’
নিভ্র নিজের একটা আঙুল গালে দিয়ে বলল,
– ‘এইখানে একটা কিস করো তাহলে খাবো।’
ইপ্সিতা পড়লো ফ্যাসাদে এই ছেলে দিনকে দিন বজ্জা’ত হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই সামলাতে পারছে না।
– ‘এইটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।’
– ‘ঠিক আছে আমিও খাবো না। আর মাকে বলবো, তার আদরের বউমা আমাকে খেতে দেয়নি।’
– ‘আচ্ছা আপনি চোখ বন্ধ করুন।’
– ‘ওকে।’
নিভ্র চোখ বন্ধ করে নিলো, ইপ্সিতা ঢোক গিলে নিভ্রের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। ইপ্সিতার ঠোঁট নিভ্রের গাল স্পর্শ করবে তখনি,
– ‘নিভ্র…
ইপ্সিতা তাড়াতাড়ি নিভ্রের কাছ থেকে দূরে গিয়ে দাড়ায়। নিভ্র চোখ খুলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
– ‘দিলো সব শেষ করে।
রিয়া হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কেমন আছো নিভ্র?’
নিভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলল,
– ‘আর ভালো থাকা। ভুল সময়েই সকলের এন্ট্রি হতে হয়, দূর।’
কথাটা রিয়ার কান অব্দি না পৌঁছালেও ইপ্সিতার কানে যায়, ওহ মুখ টিপে হাসে।
– ‘কিছু বললে? (নিভ্রের কথাটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো)
– ‘না কিছু বলিনি। দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।’
রিয়ার চোখ পড়ে ইপ্সিতার দিকে। মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠে, এই মেয়ের কারনে সকাল সকাল হ্যা’রাস হতে হয়েছে একে কিভাবে ছেড়ে দেয়।
– ‘এই তুই তখন আমাকে বললি না কেন এটাতেই নিভ্র থাকে?’
– ‘আমাকে কিছু বলারই সুযোগ দাও নি তুমি মনে করে দ্যাখো।’
– ‘বাই দ্যা ওয়ে। তুই এখানে কি করছিস? নিভ্রের দেখাশোনার কাজ নিয়েছিস নাকি?’ (ব্যঙ্গ করে)
নিভ্র চুপ করে থাকল, দুজনের কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছে একে অপরের পরিচিত। তাই তাদের কথা তারাই বলুক। রিয়ার কথা শুনে ইপ্সিতা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ সেইরকমই কিছু।’
– ‘শেষমেশ মামা তোকে এইটা করতে দিলো! তা কত করে মাইনে নিস?’
– ‘তোমার মামা আই মিন আমার বাবা নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। আর মাইনে নেবার প্রয়োজন পড়ে না।’
– ‘কেন?’
– ‘যেখানে গোটা মানুষটাই আমার সেখানে তার দেখাশোনার জন্য টাকা নিতে হবে কেন।’
ইপ্সিতার প্যাচানো কথা রিয়ার বোধগম্য হলো না।
– ‘মানে?’
– ‘সেটা না হয় ওনার কাছেই জেনে নেবে। আমি আসছি।’
ইপ্সিতা বেড়িয়ে যেতে রিয়া কিছুটা রাগ ও অধিকার বোধ নিয়ে নিভ্রকে বলল,
– ‘এই মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে এলাও করেছো কেন? জানো না নাকি কিছু।’
নিভ্রের প্রচন্ড বিরক্ত লাগে। তার পার্সোনাল লাইফে কেউ নাক গলাক সেটা ওর পছন্দ নয়। আর সেখানে ওর স্ত্রীকে নিয়ে বলছে, তাকে কিভাবে এত সহজে ছেড়ে দেয়।
– ‘দ্যাখো রিয়া তুমি আমার কলিগ, আমার জুনিয়র আমার বাড়িতে এসেছে ঠিক আছে কিন্তু আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার অধিকার তোমার নেই। তাই নিজের লিমিট ক্রস করো না।’
– ‘তোমার ভালোর জন্যই বললাম, মেয়েটা কিন্তু সুবিধার নয়।’
– ‘জাস্ট স্যাট আপ। তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রীর নামে উল্টোপাল্টা কথা বলার।’
– ‘স্ত্রী মানে!’
– ‘ইয়েস ইপ্সিতা ইজ মাই ওয়াইফ।’
রিয়া চমকে উঠল। পায়ের তলা থেকে মাটি স’রে দাঁড়ায়। এতগুলো দিন নিভ্রকে নিয়ে নিজের মনে অনেক আশা বুনেছিল ভাবেনি সেটা এইভাবে শেষ হয়ে যাবে। রিয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। নিভ্রকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে আসতে যাবে তখনি ইপ্সিতা পেছন থেকে বলল,
– ‘কি আমার পরিচয় জানা হলো।’
দুজন দুজনের মুখোমুখি। রিয়ার মুখে হি*স্র’তা আর ইপ্সিতার মুখে মুচকি হাঁসি।
– ‘কি হলো এত লাল হয়ে যাচ্ছো কেন?’ (ইপ্সিতা)
– ‘তোকে আমি ছা’ড়ব না। নিভ্র শুধু আমার।’ (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল)
– ‘ভুল বললে। নিভ্র শুধুমাত্র ইপ্সিতার। আমার জন্যই নিভ্রের জ’ন্ম, তাই আমাদের কেউই আলা’দা করতে পারবে না। ‘
– ‘চ্যালেঞ্জ রইলো। নিভ্র আমার হবেই।’
রিয়া হি*স্র হয়ে বেড়িয়ে গেল। ইপ্সিতা মনে সাহস নিয়ে রিয়ার মুখোমুখি হলেও ভয় লাগছে। নিভ্রকে হা’রিয়ে ফেলার ভয় লাগছে। কি হবে ওদের জিবনে?
–
#চলবে…
শরীর ক্লান্ত। বাড়ি ফিরে একটু রেস্ট নিয়েই লিখতে বসেছি। সকলের রেসপন্স চাই।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।