#বেনেবউ
#পর্ব_১৫
#তানজিলা_খাতুন_তানু
– ‘এই আপনার সাথে রিয়ার কি সম্পর্ক?’
নিভ্র এমনিতেই রিয়ার উপরে একটু ক্ষে’পে ছিল, ইপ্সিতার কথা শুনে রাগটা আরো একটু বেড়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– ‘বিয়ে করা বউ জানো না তুমি।’
ইপ্সিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। নিভ্র এই কথাটা বলবে কখনোই আশা করেনি।
– ‘এইরকম বলছেন কেন?’
– ‘তো কি বলবো? তুমি এমন করে জিজ্ঞেস করছো যেন আমাদের মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে।’ (রাগ নিয়ে)
– ‘রিয়াদির কথা শুনে তো সেটাই মনে হচ্ছিল।’
– ‘ওই মেয়ের কথা বন্ধ করবে তুমি।’
– ‘হু।’
নিভ্র নিজেকে শান্ত করে বলল,
– ‘রিয়া আমার জুনিয়র। অনেকবার প্রোপজ করেছে আমাকে।’
– ‘কি!’
– ‘জ্বি ম্যাডাম।’
রিয়ার কথা শুনে ইপ্সিতা আগেই বুঝছিল ওহ নিভ্রকে চাই। তবে জিনিসটা যে এতটা দূর আগিয়ে গেছে সেটা বুঝতে পারেনি। ইপ্সিতা কি রিয়াকশন দেবে বুঝল না, ওর কি করা উচিত রেগে যাওয়া উচিত নাকি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকা উচিত!
ইপ্সিতা কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, নিভ্র ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল
– ‘অদ্ভুত আনরোমান্টিক মেয়ে একটা, দূর।’
**
রিয়া গোটা ঘর ল’ন্ডব’ন্ড করে চলেছে। রিয়ার মা ওকে কিছুতেই থামাতে পারছে না।
– ‘আরে কি হয়েছে টা কি? এইভাবে সবকিছু এলোমেলো করছিস কেন?’
– ‘সব শে’ষ করে দেবো আমি সব।’
– ‘কি হয়েছে বল।’.
– ‘কি হয়নি সেটা বলো। তোমার আদরের ভাতিজা আমার ভালোবাসার মানুষটিকে কে’ড়ে নিয়েছে।’ (রাগে চেঁচিয়ে উঠে)
– ‘মানে?’
– ‘মা ইপ্সিতার সাথে নিভ্রের বিয়ে হয়েছে। নিভ্র কে আমি ভালোবাসি মা।’
আসমিনা আহমেদ বিষয়টা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, হয়তো তার কাজের জন্যই তাকে কথাটা জানানো হয়নি।
– ‘মা আমি ইপ্সিতাকে ছাড়ব না। শেষ করে ….
কথাটা শেষ করার আগেই রিয়ার গালে একটা থাপ্পর পড়ল। রিয়া চমকে উঠল,
– ‘মা তুমি আমাকে মা’রলে!’
– ‘হ্যাঁ মা’রলাম। যেটা অনেক আগেই আমার করা উচিত ছিল, তোর প্র’রো’চনায় আমি অনেক ভুল করেছি কিন্তু আর নয়। এখন থেকে না আমি ভুল করব আর না তোকে করতে দেব।’
– ‘কি ভূল করেছি আমি। মা আমি নিভ্রকে ভালোবাসি।’
– ‘আর ইপ্সিতা ওর স্ত্রী। বৈবাহিক সম্পর্কের জোড় তুই জানিস না, চাইলেও ওদেরকে আলাদা করতে পারবি না।’
– ‘আমি আলাদা করবোই।’
রিয়া রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে যায়। আসমিনা আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, নিজের ভুলেই মেয়েটা এইরকম হয়ে উঠেছে। আর যাইহোক ইপ্সিতার জীবনে আর কোনো বিপদ আস্তে দেবেন না উনি, সবসময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।
**
২দিন পর,
নিভ্র এখন পুরোপুরি সুস্থ। আজকে থেকে আবারো অফিস যেতে শুরু করেছে। ইপ্সিতা নিভ্রের মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। মনটা ভীষন রকমের ভা’রাক্রান্ত হয়ে উঠেছে, কেন জানো নিভ্রকে হারিয়ে ফেলার ভ’য় সৃষ্টি হচ্ছে মনের ভেতরে।
– ‘কিরে কি হয়েছে? এইভাবে চুপ করে শুয়ে আছিস কেন?’
– ‘মা আমার কিছু ভালো লাগছে না।’
– ‘কেন!’
ইপ্সিতা চুপ করে আছে। নিভ্রের মা ইপ্সিতার মাথাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘মায়ের কাছে এতটা ইতস্তত কেন, বল কি হয়েছে।’
ইপ্সিতা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নিজের এলোমেলো কথাগুলোকে সাজিয়ে নিয়ে বলল,
– ‘মা আমি কিছুতেই ওনার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছি না। একটা অদৃশ্য প্রাচীর আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে আছে। নিজের অতীত মনে পড়ে যায় বারবার, কি করবো আমি!’
নিভ্রের মা ইপ্সিতার মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– ‘মারে বিবাহ সৃষ্টিকর্তার তৈরি বন্ধন। তিনি যার সাথে যার জুটি ঠিক করেছেন তার সাথেই তার বিয়ে হবে। তুই আর নিভ্র তোরা দুজন দুজনের জন্য তৈরি। আগে কি হয়েছে সবকিছু ভূলে যা অতীত মনে কষ্ট পাওয়ার থেকে সেটা থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অতীত পেছনে ফেলে নিজের বর্তমান নিয়ে ভাব, ভবিষ্যতটাকে কিভাবে আরো উজ্জ্বল করবি সেটা নিয়ে ভাব। আর আমার ছেলেটাকে আর কষ্ট নিস না, ছেলেটা বড্ড বেশি ভালোবাসে তোকে।’
ইপ্সিতা কথাগুলো মন দিয়ে শুনল। সত্যি তো অতীত তো আমাদের কোনো কাজেই লাগে না, শুধুমাত্র আমাদের ভালো থাকাটাকে কেড়ে নেই। না আর নিজের অতীত মনে করে বর্তমান ও ভবিষ্যতকে নষ্ট করবে না, বরং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কে আরো উজ্জ্বল করে তুলবে।
অফিসের লাঞ্চ টাইম,
নিভ্র বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গিয়েছিল তাই আলাদা করে ক্যান্টিনে যাবার প্রয়োজন পড়েনি। নিজের কেবিনে বসেই লাঞ্চটা সেরে নেবে বলে ঠিক করল, অন্যদিন সবার সাথে করলেও আজকে ইচ্ছা করছে না। ইপ্সিতাকে বড্ড মিস করছে, এই কয়েকদিনে মেয়েটাকে কম জ্বালাতন করেনি তবুও কিছু বলেনি চুপচাপ সবটা মেনে নিয়েছে। ইপ্সিতার সাথে দুষ্টুমি করতে করতে কখন যে আরো অনেকখানি ভালোবেসে ফেলেছে নিজেই বুঝতে পারেনি।
নিভ্র খাবারটা মুখে তুলেছে কি তোলেনি তখনি কেবিনের দরজায় টোকা পড়ল। নিভ্র ভ্রু কুঁচকে আগত ব্যক্তিটিকে ভেতরে আসতে বলল। সাধারণ লাঞ্চ টাইমে কেউ আসেনি হয়তো কোনো দরকারী কিছু কিংবা ওর খোঁজ করতে এসেছে।
– ‘তুমি।’
– ‘হুমম। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’ (রিয়া)
– ‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা নেই, আসতে পারো।’ (বিরক্ত হয়ে)
– ‘কথা তো তোমাকে শুনতেই হবে।’
– ‘দ্যাখো রিয়া নিজের লিমিট ক্রস করো না। বের হয়ে যাও আমার কেবিন থেকে।’
– ‘বের হবার জন্য আসিনি। তোমাকে আজকে বলতেই হবে ওই ইপ্সিতার মাঝে কি আছে যেটা আমার মাঝে নেই? কেন তুমি আমাকে ছেড়ে ওই মেয়ের কাছে গিয়েছো।’
– ‘রিয়া ভুল কথা বলো না। আমি কখনোই তোমার কাছে ছিলাম না, যে তোমাকে ছেড়ে যাবো।’
– ‘কিন্তু এটা তো অস্বীকার করতে পারবে না। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি, তোমাকে চাই।’
– ‘কিন্তু আমি তোমাকে চাই না।আমি শুধুমাত্র ইপ্সিতাকে ভালোবাসি।’
– ‘ইপ্সিতা আর ইপ্সিতা। ওই মেয়েটা আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে, ওকে আমি ছাড়বো না।’
– ‘চেষ্টাও করো না। ইপ্সিতার দিকে হাত বাড়ালে হাতটা আমি আস্ত রাখব না।’
– ‘প্রয়োজন পড়লে ইপ্সিতাকে প্রা’নে মে’রে দেব প্রমিস।’
রিয়া উম্মাদের মতো হেসে উঠল। নিভ্র রিয়ার আচরন দেখে অবাক।
– ‘রিয়া তুমি মানসিক ভাবে অসু’স্থ। ডক্টর দেখাও।’
– ‘ডক্টর তো তোমাকে দেখাতে হবে। তুমি আমরা না হলে ইপ্সিতার ওহ হবে না মাইন্ড ইট।’
রিয়া বেরিয়ে যায়। নিভ্র ধপ করে বসে পড়ে, রিয়ার চোখে মুখে অন্যরকম হি*স্রতা দেখেছে, জানা নেই মেয়েটা কি করবে!
নিভ্র খাবারটা শেষ করতে পারল না। অস্থির হয়ে উঠছে। ইপ্সিতাকে ফোন লাগল কিন্তু কল রিসিভ হলো না। নিভ্রের টেনশান বাড়তে লাগল, মাকে ফোন লাগল কিন্তু কল রিসিভ হলো না। নিভ্র আর বসে থাকতে পারল না, অধৈর্য হয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
#চলবে…
কেমন লাগল আজকের পর্বটা জানাতে ভুলবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।