#মায়া পরি
#পর্বঃ ০৭
# জুনায়েত
আমি খেয়াল করলাম ওই পাথরের গোল আকৃতির চিহ্ন টাতে হাতে খোদাই করে লিখা নাগরাজ। আর তার উল্টো পাশে আরো একটা সাপের ছবি আকাঁ আর তাতে লিখা নাগরানি। আমার এটা বুঝতে কোন কষ্ট হলো না যে আমি নাগ পরিবারের কোন সদস্য। কিন্তু এখনো আমার খটকা লাগছে আমি নিজেই কী নাগরাজ। কিন্তু আমি যে নাগরাজ এটা কী করে বুঝবো আর এটার প্রমান কী? আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা মা এই বস্তুটা ছাড়া তুমি কী আর কিছু পেয়েছিলো আমার সাথে। মা দাড়িয়ে কিছু ক্ষন ভাবলো আর তার মাথা নারালো।
!
!
!
আর মা বললো হ্যা আরো একটা জিনিস আমি তোর সাথে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। আমি মার এর কথা শুনে খুবই অবাক হলাম। আর বললাম মা জিনিস টা কী? আর ওটা তুমি কোথায় রেখেছো। মা বললো ওটা একটা পুরনো মাথার মুকুট। পুরনো ছিলো বলে আমি আমাদের স্টোর রুমে রেখে দিয়েছিলাম। আমি মাকে বললাম মা তুমি কী আমাকে ওই মুকুট টা একটু এনে দিতে পারবে? মা বললো তুই দাঁড়া আমি স্টোর রুম থেকে নিয়ে আসছি। এই কথা বলে মা স্টোর রুমের দিকে যেতে শুরু করলো।
!
!
!
বাইরে শুধু আমি আর আমার বোন রুহি দাড়িয়ে আছি। আমি রুহিকে বললাম এ দিকে আয় বোন। রুহি আমার দিকে আসছিলো না। আমাকে দেখে ও খুব ভয় পাচ্ছিলো। আমি রুহিকে বললাম আরে পাগলি আমি সাপ হই আর যাই হই না কেন? তুই আমার আপন বোন ই থাকবি। রুহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে থাকলো আর বললো দাদা তুই আমার আপন ভাই হলি না কেনো? রুহি আমাকে আরো জিজ্ঞেস করলো দাদা তুই কী আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?আমি পাগলিটার কথা শুনে আমার কান্না আটকাতে পারছিলাম না।
!
!
!
আমি কান্না করেই দিলাম আর বললাম জানি না রে বোন! আমার কপালে কী আছে? তবে আমি যেখানেই থাকি না কেনো তুই আর মা দুজনেই সব সময় আমার মনের ভিতরেই থাকবি। বোন টাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষন কাঁদলাম। কারন আমি বুঝে গেছি আমি এখন আর মানুষ নয়। আমি হলাম সাপ। আর একটা সাপ কখনো মানুষ দের সাথে থাকতে পারে না । তাই এই কথা গুলো ভেবে মা আর বোনটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিলো। মা হাতে মুকুট এর মতো কিছু একটা নিয়ে এসে আমাকে পিছন থেকে ডাকলো।
!
!
!
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি মা মুকুট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বললো এই নে তোর মুকুট। এই মুকুটাই আমি তোর সাথে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। আমি মা এর হাত থেকে মুকুট টা নিলাম।মুকুটটা দেখতে কী সুন্দর !আর কী উদ্ভুত! কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগের মুকুট এটা। অথচ এটা যেমন ছিলো ঠিক তেমন ই আছে। আমি খেয়াল করলাম মুকুট এর সামনের অংশে ছোট একটা বোতাম এর মতো কিছু একটা লাগানো আছে। আর ওটার রং লাল।
!
!
!
মুকুটটা আমি হাতে নিতেই আমার মনে পরলো এটা তো ওই মুকুটটা যেটা আমি আমার সপ্নে দেখেছিলাম। আমি সপ্নে দেখেছিলাম এই মুকুট টা পরে আমি বড় একটা সিংহাসন এ বসে আছি। আর আমার সামনে শত শত মানুষ রুপি সাপেরা উপস্থিত আছে আর তারা আমাকে রাজা মানছে। আমি মুকুট টা নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম আর ওটাকে যত্নে এক জায়গায় সাজিয়ে রাখলাম। আর আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কাল ওই জঙ্গলের লোকটার কাছে আবার যাবো।
!
!
!
আর তাকে এই মুকুট আর ওই গোল আকৃতির বস্তু গুলো দেখাবো আর জিজ্ঞেস করবো এ গুলো কী? আর এ গুলো থেকে কী ভাবে আমার পরিচয় জানা যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারিনি। পরের দিন সকাল বেলা আমি জঙ্গলের দিকে যেতে থাকলাম ওই মুকুট টা এবং গোলআকৃতির বস্তুটা সাথে নিয়ে। আজ আমার মনে হলো জঙ্গল টা একটু হাস্যউজ্জল আর তারা যেন আমাকে হাততালি দিয়ে শুভআগমন জানাচ্ছে।
!
!
আমি ওই লোকটার ডেরায় পৌঁছে গেলাম। আর আমাকে দেখেই লোকটা জিজ্ঞেস করলো তুমি? তুমি এখানে কেনো এসছো? তোমাকে না আমি এখানে আসতে নিষেধ করেছি।আমি লোকটাকে বললাম আপনাকে আমার খুব দরকার। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। উনি আমাকে বললো কী কথা তারা তারি বলো। আমার সময় নেই। আমি প্রথমে আমার হাতে থাকা ওই গোল আকৃতির বস্তুটা ওই লোকটাকে দেখালাম আর জিজ্ঞেস করলাম কী এটা?
!
!
!
ওই লোকটা ওই বস্তু টা দেখে খুবই অবাক হলো আর বললো এটাতো নাগরাজ এর গলার লকেট। এটা তোমার কাছে এলো কী ভাবে? এবার আমার হাতে থাকা ওই মুকুটটা বের করে ওই লেকটার সামনে রাখলাম আর জিজ্ঞেস করলো কী এটা? ওই লোকটা আরো অবাক হলো। আর আমাকে জানালো এটা নাগরাজ এর মাথার মুকুট। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো এসব বস্তু আমি কোথা থেকে পেলাম। আমি বললাম আমার পালিত মা যখন আমাকে জঙ্গলে কুড়িয়ে পেয়েছিলো তখন এগুলো তিনি আমার সাথে পেয়েছেন।
!
!
!
লোকটা আমাকে বললো এর মানে কী জানো? তুমি হলে নাগরাজ আর নাগ রানির একমাত্র বংশধর। তাই এগুলো তোমার কাছে। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কে আমার বাবা মা? আমি কী ভাবে তাদের ফিরে পাবো। ওই লোকটা আমাকে জানালো এ সম্পর্কে উনি কিছু জানে না। এই বিষয়ে একমাত্র নাগলোকেরাই ভালো জানে। আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। সারা রাস্তা আসতে আসতে শুধু ভেবেছি কে আমার বাবা মা? তারা এখন কোথায় আছে? কী অবস্থায় আছে?
!
!
!
আমি বাড়ি এসেই আমার রুমে চলে গেলাম আর রুমে গিয়ে অবাক হলাম। রুমে গিয়ে দেখি ওই অবনি নামের মেয়েটা আমার রুমে বসে আছে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। অবনি বললো তোমার বাবা মা তোমার সাথে দেখা করবে। আমি ওর কথা শুনে খুবই খুশি হলাম। বললাম কে আমার বাবা মা? ওনারা কোথায় আছে? কেমন আছে? অবনি মানে মায়া পরি বললো আমি এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারবো না।
!
!
!
সময় হলে তোমার মা বাবা তোমার সাথে দেখা করবে। এই কথাটা শেষ করেই অবনি আমার রুম থেকে চলে গেলো। আমি শুধু ভাবছিলাম কখন আমি আমার বাপ মাকে দেখতে পাবো। যাই হউক আমি রেস্ট নেওয়ার জন্যে বিছানায় একটু শুলাম। আর ঘুমিয়ে ও পরলাম। ঠিক মধ্যে রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। আর আমি দেখতে পেলাম আর তল পেট তারপর ওই গোল আকৃতির বস্তু এবং ওই মুকুটটার সামনের অংশ থেকে আলো বেরুচ্ছে। তিন বস্তু থেকে ৩ ধরনের আলো বেরুচ্ছে।
!
!
!
আর একটু পর তিন বস্তুর আলোটা একত্রিত হলো আর আমি খেয়াল করলাম ওই আলোটা আস্তে আস্তে বড় হলো। আর ওর ভেতরে দুজন মানুষ দাড়িয়ে আছে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আলোর ভিতর থেকে একজন মানুষ আমাকে বললো নাহিয়ান তুই না তোর বাপ মা কে দেখতে চাস? এই দেখ আমি তোর বাবা। আর আমার পাশে যিনি দাঁড়িয়ে আছে তিনি হলো তোর মা। আমি কোন কথা বলছি না। শুধু আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।
!
!
!
চলবে তো?
!
!
!
কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। বানান ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারো কাছ থেকে নেক্সট কথাটা শুনতে চায় না। সবার একটা করে গঠন মূলক মন্তব্য দেখতে চায়। সবাই কমেন্ট করবেন তবেই নেক্সট পর্ব তারা তারি দেওয়া হবে।