#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]
___________________
১৬.
সন্ধ্যার পর মুজাহিদ হাসান আজ বাইরে গেলেন না তিনি ঘরে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেন।হাসিন এবং ঈশার ফুফু আতিয়া এসেছেন তাদের সাথে টুকটাক আলোচনা সারছেন মুজাহিদ।ঈশার মা সুলতানা ঈশার হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিচ্ছেন।মেয়েটা গরম গরম ডিম চপ ভেজে বড় একটি প্লেটে পরিবেশন করে। ছোট পিরিচ নামিয়ে টম্যাটো সস ঢালতে ঈশানের কথা মাথায় আসে ঈশার।মেয়েটা ঠোঁট চেপে হেসে নিজেকে সংযত করে নেয়।ঈশার হঠাৎ লুকিয়ে হাসার কারণটা বুঝে এলো না সুলতানার।আড়চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
” কি রে আম্মু হাসছিস কেন?”
মায়ের প্রশ্নে থতমত চোখে তাকায় ঈশা।এখন সে মাকে কি বলবে?সে কী বলবে ঈশানকে চরম অপদস্ত করেছে?না থাক কথাটা বরং এড়িয়ে যাক।
” অনুর কথা মনে পড়ে হাসছি আম্মু মেয়েটা ডিপ চপ পছন্দ করে এই ডিম চপ নিয়ে একবার হাস্যকর কান্ড ঘটেছিল।”
” তাহলে তুই আরো কয়েকটা ভেজে অনুর জন্য নিয়ে যা আমি এইদিকটা দেখছি।”
বারণ করলো না ঈশা।ফ্রিজ থেকে ফ্রোজেন করা কয়েকটি চপ নিয়ে ভাজতে শুরু করলো।অনেকদিন পর বাসার বাইরে বের হবে সে।রাসেলের সতর্কতা অনুযায়ী ঈশান তার উপর বড্ড রেগে আছে তাই তো ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছে না বেশ কয়েকদিন। ঈশান যদি একবার তাকে ধরতে পারে তবে ইহজন্মের শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে।
ঈশাদের ফ্লাটের পাশের ফ্লাটে থাকে অনু তাই আসা যাওয়া চিন্তায় পড়তে হয়নি তাকে।অনুদের বাসায় গিয়ে দুজনে একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তাদের আজকের পরিকল্পনা ঈশা অনুদের বাসায় থাকবে সারারাত তারা মুভি দেখবে।তাদের আলোচনার মাঝে ঈশার ফোনে রুমার কল আসে।রুমার নামটা ভেসে উঠতে খানিকটা ঘাবড়ে গেল ঈশা।ঈশান আর রুমা কাজিন সেই দিক থেকে নিশ্চয়ই ঈশান রুমাকে তার নামে অভিযোগ জানিয়েছে।ভেবে চিনতে ফোন তুললো না ঈশা এভাবে একবার দুইবার তিনবার ফোন কেটে গেল।ঈশার ঘাবড়ানো চেহারা দেখে বড্ড বিরক্ত হলো অনু।
” ফোনটা তোল ঈশু।তোর বর্ননা মতে রুমা আপু বড্ড ভালো তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন?”
” ঈশান যদি কোন প্যাঁচ লাগায়?”
” এত অগ্রীম ভাবিস কেন?ফোন তোল।”
বুকে পাথর নিয়ে ফোন তুললো ঈশা।অপরপাশ থেকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো রুমা একটা মানুষকে এতবার ফোন করতেও বিরক্তি আসে।ধরা গলায় রুমাকে সালাম করলো ঈশা দুজনের কুশল বিনিময় শেষে মূল কথায় ফিরলো রুমা।
” তুমি ঠিক আছো ঈশা।”
” হ্যাঁ আমি ঠিক আছি আপু।”
” কাল আমার বাসায় আসবে ঈশা?”
বাসায় যাওয়ার কথা শুনে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো ঈশার।এটা কী কোন ফাঁদ?ঈশান শাহরিয়ারের ফাঁদ এঁটেছে নাকি?ঈশাকে নিয়ে কি প্রতিশোধ তুলবে?ভয়ে হাঁসফাঁস বেড়ে গেল মেয়েটার।তার দিক থেকে কোন সম্মতি না পেয়ে ভ্রু কুচকালো রুমার।
” ঈশা শুনতে পাচ্ছো?”
” হ্যাঁ আপু বলুন।”
” আসবে কাল?”
ঈশা কী বলবে ভেবে পেল না অনুটাও ডিমের চপে মন দিয়েছে সে যেন দুনিয়ার কোন কথাই কানে তুলছে না।
” কাল কেন যেতে হবে আপু?”
” সেদিনের ঘটনার জন্য আমি ভীষণ লজ্জিত আমি চাইছি আগামীকাল সারাটা দিন তোমার সাথে কাটাবো আসবে ঈশা?”
রুমার আবদারে ফোড়ন কা/টতে পারলো না ঈশা না চাইতেও সে সম্মতি দিয়ে দিলো সে কাল যাবে।
.
ইদানীং অনুর এড়িয়ে যাওয়াটা সহ্য হচ্ছে না রাসেলের।যেদিন থেকে ঈশান আর ঈশার ঝগড়া শুরু হয়েছে সেদিন থেকে অনু রাসেল নামক মানুষটাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করছে।ফেসবুকে প্রায় সাত আট মাসের পরিচিত অনু এবং রাসেলের।দুজনে বন্ধুর মতো বেশ ভালো সম্পর্কে ছিল এই ব্যপারে অবশ্য ঈশা জানতো না।ঈশা শুধু জানতো অনু তার ক্রাশের সাথে নিয়মিত চ্যাটিং করছে সেই ক্রাশটা যে রাসেল তা ঘুনাক্ষরেও টের পেল না ঈশা।
হাতের কাজ শেষ করে অনুকে একের পর ফোন করেই যাচ্ছে রাসেল অথচ মেয়েটা এড়িয়ে আচ্ছে।কেউ ইগ্নোর করলে এতটা কষ্ট হয়!এতটা হাঁসফাঁস লাগে আগে জানা ছিল না রাসেলের।মেয়েটা তাকে পা\গল করে ছাড়বে।রাসেলের অস্থিরতা কমিয়ে ফোন তুললো অনু।
” অনু ফোন তুলছো না কেন?”
” কেন ফোন করেছেন?”
” বিরক্ত হচ্ছো?”
” বুঝতে পারছেন না?”
” আগে তো বিরক্ত হতে না।”
গলা ধরে এলো রাসেলের।অপরদিকে অনু নিশ্চুপ রাসেলের অনুভূতি বুঝতে পেরেও না বোঝার ভাবে সে।
” শুনুন আমাদের অতীত আর বর্তমান সম্পূর্ণ আলাদা।”
” তুমি ঈশানের কারণে আমায় ইগ্নোর করছো তাই না?”
” যে আমার ফ্রেন্ডকে কষ্ট দেয় আমি তাকে আমার জীবনে রাখিনা রাসেল।”
” আমি ঈশাকে কষ্ট কখন দিলাম?”
” তোমার বন্ধু দিয়েছে।”
” আমি সবসময় ঈশানকে চোখে চোখে রাখি ঈশার ক্ষতি হওয়ার আগেই তোমাদের সতর্ক করি তার পরেও এমনটা বলবে?”
” আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না রাসেল।ফোন রাখলাম।”
মুখের উপর ফোন রেখে দিল অনু।রাগে জেদে ফোনটা ছুড়ে ফেললো রাসেল।তখন দরজা দিয়ে আসতে দ্রুত হাতে ফোনটা ক্যাচ করে ঈশান।
” এই এই এই কিডনি ছুড়ে ফেলেছিস কেন?”
ঈশানের প্রশ্নে সন্দিহান চোখে তাকায় রাসেল।
” কিডনি মানে?”
” এটা আইফোন।”
১৭.
দরজা খুলতে ঈশাকে দেখে ঈদের চাঁদ দেখার মতো আনন্দ আত্মহারা রুদবা।মেয়েটার খুশি দেখে চাপা হাসলো ঈশা।মেয়েটার হাত ধরে এগিয়ে গেলো রুমার কাছে।আজকে ঈশা একা আসেনি তার সঙ্গ দিয়েছে অনু।রুমার সাজানো ছোট্ট সংসারটা অবাক চোখে পরখ করছিল অনু।ঈশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বিস্মিত স্বরে বলে,
” এরা কি শৌখিনরে ঈশু।সব টাকা টাকা, টাকা থাকলে সব সম্ভব তাই না রে!”
” তো তুই বিয়ে কর টাকা ওয়ালা ছেলে।”
” একটারে পেলে তো হতোই, গলায় ঝুলে যেতাম।”
অনুর কথায় ঠোঁট টিপে হাসলো ঈশা।রুমাকে আসতে দেখে দ্রুত নিজেকে সংযত করে নেয় অনু।রুমার পেছন পেছন দৌঁড়ে কক্ষে ফিরলো রুদবা মেয়েটার হাতে একটি ট্যাব দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে সে ভিডিও কলে কথা বলছে।রুদবা হঠাৎ ফোনটা নিয়ে ধরলো ঈশার কাছে।ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে,
” নানুমনি দেখো এটা আমার ঈশামনি।ঈশামনিকে হাই বলো।”
ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তিটি ঈশানের মা মাহমুদা।রুমার মেয়েটাকে তিনি ভীষণ আদর করেন অবসরে সবসময় রুদবার সাথে ভিডিও কলে সময় কাটান।
মনে মনে কল্পনায় রেখেছেন ঈশানের একটা টুকটুকে মেয়ে হবে বৃদ্ধ বয়সে তাকে আর অলস সময় পার করতে হবে না।ঈশা মাহমুদার দিকে তাকিয়ে সালাম জানালো টুকটাক কথা বলে মাহমুদা ফোন রেখে দিলেন।মাহমুদা
গুরুত্বপূর্ণ কথার উদ্দেশ্যে অডিও কলে রুমাকে পুণরায় ফোন করলেন।
” রুমা ঈশান রাসেল কোথায়?সারাদিন ফোন করলাম কেউ ধরলো না।”
” তোমার ছেলে কী এ শহরে আছে?তিনদিন আগে চট্রাগ্রাম গেছে অফিসের কাজে।তাদের নাকি নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে।”
” ঈশান রাসেল কেউ আমায় বলেনি সে কথা।”
” তোমার ছেলেরা কখনো কিছু জানিয়ে করে?”
একপাশ থেকে রুমার কথা শুনে ঈশা অনু দুজন দুজনকে চোখ ইশারা করলো এর মানে ঈশান নেই তারা জানতো না।মনে মনে সন্তুষ্ট হলো দুজনে।রুমা কথা বলার মাঝে চলে গেল অন্য রুমে সে কথা নিশ্চিন্ত হয়ে ফোড়ন কাটলেন মাহমুদা।
” ঈশার বাড়ি কোথায় রে?”
” এই শহরে আমার বাসা থেকে আধা ঘন্টার দূরত্ব।”
” ওর বাবা কী করে?”
” আঙ্কেল জব করেন।ব্যাংকে আছেন।”
” ঈশানের বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু এই ছেলেকে বিয়ের নাম নিলে মুখের উপর ফোন কেটে দেয়।তার যা ইচ্ছে সে করুক রাসেলটাকে তো বিয়ে দিতে হবে।”
” তুমি কি রাসেলের জন্য ঈশাকে পছন্দ করেছো?”
” হ্যাঁ,কেন তোর পছন্দ হয়নি?”
” হবে না কেন?অবশ্যই হয়েছে ঈশা খুব ভালো মেয়ে আন্টি।”
রুমার সাড়া পেয়ে সন্তুষ্ট হলেন মাহমুদা।খুশিতে গদগদ গলায় বলেন,
” তুই আমাকে ঈশার ছবি পাঠা আমি রাসেলকে পাঠাচ্ছি।”
” রাসেল ঈশাকে চিনবে আন্টি, রুদবার জন্মদিনে পরিচয় হয়েছিল তাও ছবি পাঠাচ্ছি তবে এখন রাসেলকে কিছু বলার দরকার নেই আরো কয়েক দিন যাক।”
” ঠিক আছে তুই যা বলছিস তাই হবে।”
১৮.
রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল।এমন সময় ডোর বেল বেজে উঠতে অবাক হলো ঈশা।সুলতানা তখন রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত।মুজাহিদ হাসান বসার ঘরে টিভি দেখছিলেন।ঈশা এগিয়ে এসে দরজাদ ছিদ্র দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে এসেছে।বেশ কয়েকজন মাক্স পড়া লোক দেখে ঘাবড়ে যায় সে তার পরেও অনেকবার বেল বাজায় দ্রুত হাতে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলে ঈশানকে দেখে দু-চোখে আপনাআপনি বড় হয়ে গেল ঈশার।মুখটা হা করতে ঈশান বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে ঘরের ভেতর ঈশাকে উদ্দেশ্য করে স্বগতোক্তিতে বলে,
” মুখ বন্ধ করুন মিস।মুখে হাতি ডুকবে।”
ঈশানের বিদ্রুপ মন্তব্যে দাঁত চাপলো ঈশা।ঈশানের পিছু পিছু প্রবেশ করে রাসেল ছেলেটা ঈশার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসছে।বাদ বাকি গার্ডরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের সাথে উপস্থিত ছিল ঈশার বাবাকে অপমান করা সেই ইসমাইল।
ঈশানকে দেখে বুকটা ভারী হয়ে এলো মুজাহিদ হাসানের।ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার অবস্থা তার তবুও বাইরে থেকে তিনি নিরব।
” স্যার আপনি!”
ঈশান কিঞ্চিৎ হাসলো মুজাহিদ হাসানকে সালাম দিয়ে বসে পড়লো সোফায় তার পাশাপাশি বসলো রাসেল।
” আঙ্কেল ঘাবড়ে যাবেন না এখানে আমরা সমস্যা করতে নয় বরং সমাধান করতে এসেছি।”
ঈশা দাঁড়িয়ে ছিল দরজার পাশে তখন তিন চারজন গার্ড হাতে মিষ্টি,ফল নিয়ে প্রবেশ করে।এত এত খাওয়ার দেখে অবাক হয় ঈশা।বসার ঘরে মেঝে অর্ধেকটা পূর্ণ হয় ঈশানের উপহার সামগ্রীতে।ঈশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল সেদিকে অপর দিকে ঈশান তাকিয়ে আছে তার দিকে।
#চলবে___
“ঈশান আর রাসেল কেন এসেছে মুজাহিদ হাসানের কাছে?কার কী মনে হয়?সবাই কমেন্ট করুন, দেখিতো কার ভাবনা সত্যি হয়।🙆♀️