#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৭]
____________________
৯০.
ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে ঈশান দুই চোখ ঘুম আজ আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে।একটু পর হাতটাকে বিছানার সাথে আছাড় দিয়ে উঠে বসে সে।নিজের প্রতি নিজের জেদ কাজ করছে।বিছানার ফুল গুলো পরিষ্কার করা ছাড়া আপাতত তার কোন কাজ নেই ঠিক তাই করলো সে।পুরোটা ঘর ঝেড়ে চুপচাপ বসে রইলো বিছানায়।বাইরে পরিপূর্ণ আলো দেখা যাচ্ছে।চোখের পলকে সকাল হয়ে গেল!ঈশা রুম ছেড়েছে ফজরের আযানের সময়।যাওয়ার আগে ঈশানকে দু’চারটা কথা শুনিয়ে দিতেও আপোষ করেনি।কথা তো ছিল একটুখানি আদর করবে আর ঈশান কি করলো।রাগের মাঝে আনমনে হেসে ফেললো ঈশান।কক্ষের জানলা খুলে তাকিয়ে রইলো বাইরে।সকালের মৃদুমন্দ হাওয়া কায়া শীতল করছে।
.
ঈশা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।তাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে রুমা।সকাল নয়টা বেজে গেছে ঈশার ঘুম মনে হয় না বারোটার আগে ভাঙবে।
” রুমা এদিকে আয় ওখানে বসে হাসছিস কেন?”
মাহমুদার ডাকে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রুমা।চটপট পায়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো কক্ষ ছেড়ে মাহমুদার হাতে একটি কাগজ আর কলম সেদিকে তাকিয়ে রুমা শুধায়।
” এসব কেন?”
“বলছি আয় ডাইনিং এ বস।ঈশা উঠে যাবে মেয়েটা ঘুমাক।”
” হ্যাঁ চলো।”
মাহমুদা বসলেন কলম আর খাতাটা এগিয়ে দিলেন রুমার কাছে।
” বলেছিলাম বউ তুলে আনবো না তাই বৌভাতের আয়োজন করার প্রস্তুতি আমাদের ছিল না।এবার যখন এনেছি তখন আয়োজনটা করা যায় কি বলিস?”
” হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।এবার আমার কাজ কি?”
” মেন্যু লিস্ট কর।আমি চাই না কোন দিক দিয়ে ত্রুটি হোক।রেদোয়ান উঠেছে?”
” মনে হয় তো না।”
” ঠিক আছে থাকুক দশটায় ঈশাকে উঠিয়ে দেব আর রেদোয়ানকেও পরিবারের সবাই আজ একসাথে নাস্তা করবো।”
.
ঈশান গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিল নিচে নামবে বলে হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজে কিছুটা সন্দিহান হয়।এ ঘরের কেউ এমন সল্প আওয়াজে তো করাঘাত করে না।তবে কী ঈশা এসেছে?আচমকা মনটা পুলকিত হলো লজ্জায় মাখা হাসি নিয়ে দরজা খুলতে ছিদ্র হওয়া বেলুনের মতো মুখটা চুপসে গেল ঈশানের।
” রুদবা!”
” আমার ঈশামনি কই?তোমার কাছে নাই ঈশামনি?”
ঈশান টেনে নিলো রুদবাকে।বিছানায় বসিয়ে গাল টেনে বলে,
“তুমি ভূতের গল্প পড়েছো?
“হ্যা পড়েছি।”
” তোমার ঈশা মনিকে একটা ভূত নিয়ে গেছে দেখছো না মামার কাছে ঈশা মনি নেই।”
” তুমি মিথ্যা বলছো বাস্তবে ভূত বলে কিছু হয় না।”
” হয় রে হয়।তুমি তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করবে দেখবে বলবে ভূত নিয়ে গেছে ঈশামনিকে।”
রুদবা পিটপিট চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।যে কিছুতেই ঈশানের কথা বিশ্বাস করবে না ভূত বলে আদৌ কিছু হয়?ঈশান বুঝতে পেরে রুদবার হাতে টেনে ধরে বলে,
“চলো আমার সাথে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে সত্যিটা জানা যাবে।”
রুদবাও চললো সত্যি উদঘাটনে।রাসেল ফ্রেশ হয়ে এসে মাত্র নিচে নেমেছে।রেদোয়ান এখনো ফ্রেশ হয়নি অথচ সে বসার ঘরে এসে টিভি অন করে চুপচাপ সোফায় বসে আছে আর তা দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে রুমা।রেদোয়ান আর রুমার তর্কবির্তক দেখছিলো রাসেল।এরা কি সত্যি সত্যি ঝগড়া করছে?মোটেও না বরং এরা খুনশুটি করছে।বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যথার অনুভব করলো রাসেল।এই মুহূর্তে অনু পাশে থাকলে কী হতো?
” এই রুমা তোমার মেয়েকে বোঝাও গতকাল তার ঈশামনি কে যে ভূতে নিয়ে গেছে তা সে বিশ্বাস করতে চাইছে না।”
ঈশানের কথায় রেদোয়ান আর রাসেল দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।মাহমুদা এখানে উপস্থিত নেই আর সেই সুযোগটা কাযে লাগালো রেদোয়ান।
“রুদবা মামুনি তোমার মামা সত্যি বলেছে।গতকাল তোমার ঈশা মামনিকে একটা ভ্যাম্পায়ার কোলে করে
ওই যে হাতের ডান দিকের একটা ঘরে নিয়ে গেছে।”
ঈশান নড়ে চড়ে উঠলো আড় চোখে তাকালো রেদোয়ানের দিকে।মানুষটার ভাব ভঙ্গিমায় মনে হচ্ছে না তিনি ঈশানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলছে।তবুও কেমন সন্দেহ হচ্ছে ঈশানের রাসেলের চোখে চোখ পড়তে দেখতে পেলো রাসেলের মিটিমিটি হাসি।গলা ঝারলো ঈশান।রুদবা আগ্রহ নিয়ে বলে,
” ভ্যাম্পায়ার রক্ত খায় তাই না বাবা।”
” হ্যাঁ মা তবে এটা বিশেষ ভ্যাম্পায়ার।এটা তোমার ঈশামনির রক্ত চুষে তারপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”
শেষোক্ত কথাটি বলে হেসে ফেললো রেদোয়ান।ঈশানের বুঝতে বাকি নেই রেদোয়ান তাকে উদ্দেশ্য করে এসব বলছে।তারা কি তবে দেখে ফেলেছে?হায় আল্লাহ!ঈশান টেনে নিল রুদবাকে রেদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” বাচ্চা মেয়েটাকে এসব কি বলছো”
” আমার মেয়েকে আমি খারাপ কি বললাম?আমার মেয়ে সব এনিমেলসের নাম জানে।তাই না মামনি?”
” এই রুদবা যাও একটু রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসো।”
রুদবা দাঁড়ালো না এক দৌড়ে চলে গেল রান্নাঘরে।ঈশান বসলো রাসেলের পাশে।রাসেল তাকে টিপ্পনী কাটতে বলে,
” গতকাল ফুলগুলো তোকে খুব পীড়া দিয়েছে তাই না?আহারে তোর থেকেও বেশি কষ্টে ছিলাম আমি কত কি করলাম সব ভেস্তে গেল।”
” একদম নাটক করিস না।তোর আন্টি কাল রাতে যা করেছে তা কী ঠিক করেছে?”
” একদমি না।অবশ্য মন্দ কিছু করেনি তুই আন্টিকে প্রতিটা কাজে কাজে থ্রে ট দিয়ে উসুল করেছিস।আন্টিও ঝোঁক বুঝে কো প মেরেছে।”
রাসেলের কথায় গা দুলিয়ে হাসলো ঈশান।পায়ের উপর পা তুলে আয়েশী ভঙ্গিমায় বসে বলে,
” ভুলে যাবি না আমি কার ছেলে।আবিদ শাহরিয়ারের ছেলে আমি।ঈশান শাহরিয়ারের পাঁকা ধানে দেওয়া এত সহজ নয়।”
” তার মানে…”
” চুপ কর কিছুই করিনি।মুখে তালা লাগা।”
রাসেল চুপ হয়ে গেলো এখন মুখ খুললে ঈশানের চোখ রাঙানো দেখতে হবে তাই চুপচাপ কেটে পড়া ভালো।বেশ কিছুক্ষণ পর ঈশা ডাইনিং এ আসলো।ঈশানের পাশের চেয়ারটি খালি ছিল ঈশান ভেবেছিল ঈশা এসে তার পাশে বসবে।মনে মনে একটু ব্লাশিং হচ্ছিলো ঈশান।তার হাভ ভাব বুঝতে পারলো রুমা এবং রাসেল।ঈশা যখনি গিয়ে রুদবার পাশে বসলো সঙ্গে সঙ্গে ঈশানের চাহনি পালটে গেলো।মুখে ধারণ করলো গম্ভীরতা।বেচারার মনটা পদে পদে ভেঙ্গে যাচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে ঈশান আঙুলের সাহায্যে চুলে ব্রাশ করছে সে তার রাগ দমনে ব্যস্ত।
” ঈশা উঠো।”
রুমার কথায় হকচকালো ঈশা।প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকাতে রুমা বলে,
” ঈশানের পাশে বসো যাও।”
ঈশা উঠলো তবে ভাঙা মনে জোড়া লাগলো না ঈশানের।ক্রুদ্ধ গলায় বলে,
” ওটা আমার বউ নাকি যে আমার পাশে বসবে?”
” তাহলে কার বউ ঈশান?”
ফোড়ন কাটলেন মাহমুদা।মায়ের প্রশ্নে ঈশান বলে,
” আমি কি জানি কার বউ?কবুল বলেছি বিয়ে করেছি শেষ।উনি হলেন আমাদের অতিথি নাকি ভাড়াটিয়া?নাকি আমি ভাড়াটিয়া?নাকি শৌপিস এনেছি ঘরে সাজিয়ে রাখতে!”
ছেলের অভিমান বুঝতে পারলেন মাহমুদা।মুচকি হেসে ঈশাকে ইশারা করে ছেলের পাশে বসতে।ঈশা চুপচাপ বসে পড়ে ঈশানের পাশে।ঈশান আড় চোখে একবার তাকালো ঈশার দিকে পরনে খয়েরি রঙের শাড়ি, হাতে স্বর্ণের বালা।ঈশান ঠোঁট বাঁকালো মনে মনে বলল,”বাহ সুন্দর লাগছে!তবে সুন্দর লাগলে আমার কী?এটা তো আমার বউ না এটা হলো আমাদের ঘরের শৌপিস।তিনি সেজেগুজে থাকবেন আর আমি তাকে দেখবো।”
রুমা সবাইকে খাবার এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।মাহমুদা একের পর এক ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত প্রায়।মায়ের কান্ড ঈশান ভ্রু কুচকে দেখছিলো হঠাৎ মায়ের আজ এত ব্যস্ততার কারণ কী?”
” ঈশান তোমায় তো বলা হয়নি আজ ঈশাদের বাড়ি থেকে সকলে আসবে।বৌভাতের আয়োজন রাখা হয়েছে রাত নয়টা থেকে।”
” এত বড় কথা তুমি আমায় বলনি কেন?”
” এখন তো বললাম।”
” গতকালের পর থেকে তুমি আমার সাথে ত্যাড়া ত্যাড়া আচরণ কেন করছো আম্মু?”
” তুমি কাল যা করেছো আমার মান সম্মান আর কিছু আছে?সবাই বললো এই ছেলে নির্ঘাত বউ পাগল হবে,কেউ কেউ তো এটাও বলেছে এই অবাধ্য ছেলের সংসার করবে কি করে ঈশা?এসব শোনার পর আমার কেমন লেগেছে তা তুমি বুঝবে না।”
” আমি জানি তো এসব অনুর আম্মু বলেছে।আমি সবার সব কথা শুনেছি।অবশ্য খারাপ কিছু বলেনি তারা।এগুলো হলো প্রশংসা শুনতে একটু কটু শোনা যায় এই আর কি।”
” ঈশান তুমি বড্ড ত্যাঁদড় স্বভাবের।”
” এই কথাও আমি জানি আম্মু।”
” সব জানো ভালো কথা অনুষ্ঠান তো আমাদের ঘরোয়া তাই হালকা কিছুর আয়োজন করেছি।এখন ঈশার আর তোমার জন্য ড্রেস কিনতে যাও মনে রাখবে যেন দুজনের কালার কম্বিনেশন এক থাকে।”
” তা তো অবশ্যই।অবশ্যই মনে রাখবো।”
ছেলের এতটা তোড় জোড় দেখে কুটিক হাসলেন মাহমুদা।ঈশানকে রাগিয়ে দিতে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” আর ঈশা আজ কি ও বাড়ি যাবে তোমার বাবা মায়ের সাথে নাকি থাকবে।”
” মা আমি আজকে ও বাড়ি যাব।”
মুহূর্তে ভাব ভঙ্গিমা পালটে গেলো ঈশানের।হাত থেকে গ্লাসটা বিকট শব্দে রাখলো টেবিলে যার ফলে ঈশা সহ কেঁপে উঠলো অনন্যরা।ঈশান রেগে ঈশাকে বলে,
” ও বাড়ি যাবে মানে?”
“এ..এটাই নিয়ম।”
“এই নিয়ম না মানলে কী হবে?তোমার শ্রেয়া আপু গিয়েছিল বৌভাতে?যায়নি আমি জানি তো।”
” নিয়ম..”
” আবার নিয়ম।আমি না যেতে দিলে তুমি যাবে কি করে?”
ঈশানের রাগ দেখে মিটিমিটি হাসছে সকলে।তারা আজ ঈশাকে কিছুতেই ছাড়বে না তবুও ঈশানকে রাগিয়ে দিতে মাহমুদা একটু আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন।
” ঈশান তর্ক করছো কেন ঈশার সাথে?আমি কি বলেছিলাম আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে তারপর ঘর সংসারের কথা ভাববে।তুমি তো নিজেকে একটুও পালটাওনি আমার সামনে ঈশাকে ধমকাও তুমি।কত বড় সাহস তোমার।”
” সরি আম্মু।”
” খবরদার ওর সাথে ধমকাধমকি করবে না আমি কিন্তু এসব সহ্য করবো না।”
” আমিও সহ্য করবো না তোমাদের এসব।আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিলাম দিন আমারো আসবে।”
৯১.
ঈশানের সাথে শপিং এ গিয়ে পুরো বেকুব বনে গেছে ঈশা।এই ছেলে বড্ড বেসামাল স্বভাবের।শুধুই কি ঈশার বিষয়ে বেসামাল নাকি বাকি সব বিষয়েও একই অবস্থা?ছেলেটা শেষ পর্যন্ত নিজে পছন্দ করে ঈশার জন্য অ্যাশ কালার একটি শাড়ি এবং নিজের জন্য স্যুট কিনেছে।
অ্যাশ কালার শাড়ি পরাহিত ঈশা, ভারী মেকাপে মেয়েটা চেনা বড় দায়।অনু দূর থেকে ভ্রু নাচিয়ে দেখলো ঈশাকে এক ছুটে গিয়ে থামলো ঈশার কাছে।দুজন দুজনকে দেখতে পেয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়।
” ঈশুরে মিস করেছি তোকে অনেক অনেক অনেক।”
” আমিও।”
” মিথ্যুক তুই আমাকে মিস করার সময় পেয়েছিস?ভাইয়া তোকে রেহাই দিয়েছে নাকি?আগে বল দম ফেলার সময় পেয়েছিস।”
” অসভ্য মেয়ে চুপ কর।”
অনু মুখ কুচকালো।মিটিমিটি হাসছে ঈশা অনু কত কি ভেবে নিলো অথচ সে কি জানতো যে বেচারা ঈশান কতগুলো রেস্ট্রিকশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।ঈশার পরিবারের সবাই একে একে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে ঈশান এবং রেদোয়ান।সবার শেষে প্রবেশ করেন মুজাহিদ হাসান তাকে দেখে ঝটপট জড়িয়ে ধরে ঈশান।
” ফাদার ইন ল আই মিস ইউ।”
ঈশানের কান্ডে সকলে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।রেদোয়ান ভাবতে পারেনি ঈশান এমন কিছু করবে।বড্ড বিব্রতবোধ করছেন মুজাহিদ হাসান তিনি ঈশানের পিঠ চাপড়ে বলেন,
” মেয়ে দিয়ে দিলাম তোমাকে এখন এত তামাশা করছো কেন?”
” আমার ভালোবাসা আপনার তামাশা মনে হয়?এমন জামাই আর পাবেন?আপনার ভাগ্যের প্রতি আমার হিংসা হচ্ছে এত ভালো ভাগ্য কেন আপনার?”
” আট কপালে বুঝতে হবে।”
” ধিক্কার দিচ্ছেন নাকি?”
” না প্রশংসা করছি।”
” যাই বলেন সব মেনে নিব আসুন আসুন এই লাল ফুলে গালিচাটা আপনার জন্য করেছি ফাদার ইন ল।কিন্তু আপনি সবার শেষে এলেন।”
মুজাহিদ হাসান হেটে গেলেন বাড়ির ভেতর তার পিছু পিছু গেলো ঈশান।বাড়ির বাইরে কিছু লাইটিং করা হয়েছে এক কোনে স্টেজ।
সুলতানা মেয়েকে দেখে কান্না ধরে রাখতে পারলেন না।মেয়ের গলা জড়িয়ে তিনি নিরবে কাঁদলেন।মায়ের কান্না শূলের ন্যায় বিদছে ঈশার বুকে ঝাপসা হয়ে এলো তার চোখ যুগল।পাশ থেকে অনু তার দিকে কেমন কড়া নজরে তাকিয়ে আছে।বার বার ইশারা করে বোঝাচ্ছে। “একদম কাঁদবি না।মেকাপ চলে যাবে।”
সুলতানা মেয়ের চোখে চোখ রাখলেন আড়ালে হাত টেনে এনে বলেন,
” ঈশা মা তুমি ভালো আছো?এরা তোমায় কষ্টে দিচ্ছে না তো?”
” এই বাড়ির সকলে অনেক ভালো আম্মু।তোমরা একদম চিন্তা করবে না।”
” যদি কোনদিন আঘাত দেয় আমাকে বলবে।জোর খাটিয়ে মেয়ে নিয়েছে মেয়ে ভালো রাখার দায়িত্ব তাদের।”
” আমরা খারাপ রাখবো ভাবলেন কি করে বেয়াইন?”
মাহমুদার কণ্ঠে চমকে গেলেন সুলতানা।ঈশা দ্বিধাদ্বন্দে তাকালেন মাহমুদার দিকে এবার উনি নিশ্চয়ই ভাববেন ঈশা তাদের নামে কিছু বলছে।হঠাৎ তিনজনের মাঝে উপস্থিত হলো ঈশান।নতুন জামাই সুলতানাকে সালাম জানাতে তিনি সালামের উত্তর দিলেন না।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলেন অন্যদিকে মায়ের এমন আচরণে লজ্জায় পড়লো ঈশা।ঈশার দিকে তাকিয়ে কথা ঘুরালো ঈশান।
” ঈশা শুনছো মাদার ইন ল রেগে আছে বুঝতে পারছি।ঈশা উনাকে বেশিদিন রাগিয়ে রাখা যাবে না নতুন অতিথি এনে শীঘ্রই খুশি করতে হবে।”
কানটা ঝাঁঝাঁ করে উঠলো ঈশার।ঈশান এতটা বেল্লিক কবে থেকে হলো?ঈশান বুঝতে পারলো এখানে থাকা মানে তর্ক বাড়া সে দ্রুত ঈশার হাত টেনে নিয়ে গেলো নাজিমের মায়ের কাছে।ঈশাকে দেখে আলেয়া ভীষণ খুশি মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন মন ভরে। সবার ভীড়ে হাসিনকে দেখে দু’চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো ঈশার।হাসিন এগিয়ে এসে আলতো হাতে বুকে জড়ালো ঈশাকে।
” বোন কেমন আছিস?”
” বেশ ভালো তুমি কেমন আছো?”
” তোকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।তোর শ্রেয়া আপু এসেছে দেখা করেছিস?”
” হ্যাঁ।”
ঈশাকে পেয়ে এক ছুটে দৌড়ে এলো নাদিম।ঈশাকে আগাগোড়া একবার জহুরি চোখে পরখ করলো সে।পাশে দাঁড়িয়ে ঈশান নাদিমের কার্যকলাপ পরখ করছে।
” তোমাকে সুন্দর লাগছে ঈশা বউ।আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলে না?আমি চাকরিটা নিয়ে নিলে তোমাকে আর হারাতে হতো না।”
ছোট্ট ছেলে নাদিমের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ঈশা।ঈশান এই বাচ্চা ছেলেটাকেও হিংসা করতে আপোষ করেনি।এই ছেলেকে একদিন ঈশা গাল টেনে দিয়েছিল আর সেই একই আবদার ঈশান করতে বেচারার গালের রফাদফা করে দিয়েছিল ঈশা।
” আমার ছোট্ট বর তোমায় এই কথা কে বলেছে?”
” নাজিম ভাইয়া বলেছে।”
” তোমার নাজিম ভাইয়া ভুল বলেছে তুমি তো আমার ছোট বর।”
” সত্যি বলছো?”
” হ্যা সত্যি।”
নাদিম এক গাল হাসলো।ঈশানের দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকালো।ঈশানের দিকে।
” ঈশান ভাইয়ার সাথে মেচিং করে পড়েছো তোমাদের সুন্দর লাগছে।তবে ঈশা বউ মনে রেখো তোমাকে আমার সাথে বেশি মানায়।”
নাদিম ভাব দেখিয়ে কথাটা বলে এক ছুটে পালালো।নাদিমের কথায় ঈশান মনে মনে হাসে।
” বাচ্চা ছেলে বেশি পাকা হয়েছিস দুইদিন পর নির্ঘাত মেয়েদে পিছনে লাইন মা র বি।”
.
” তুমি আমাকে কাল কল দাওনি কেন?বিয়ে বাড়িতে নিশ্চয়ই নতুন কাউকে পেয়েছো?”
অনুর সন্দিহান প্রশ্নে বিরক্তবোধ করলো রাসেল।এই মেয়েটাকে আড়ালে ডেকেছে দুই চারটা ভালো কথা বলবে বলে অথচ শুরু করেছে অযথা বকবক।
” ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন দিতে পারিনি।”
” ওহ এখন ব্যস্ততা শেখাচ্ছো।”
” এমন এক চড় লাগাবো মুখের মেকাপ উঠে হাতে চলে আসবে।”
রাসেলের ধমকে নাক ফুলালো অনু।বড় বড় পা ফেলে চলে যেতে উদ্যত হতে হাত মুচড়ে ধরে রাসেল,
” বলেছিলাম শাড়ি পরে আসতে পরলে না কেন?”
” আম্মু বকেছিলো।তাই তো গাউনটা পরলাম।সুন্দর লাগছে আমায়?”
” ভীষণ।”
” আপনাকেও সুন্দর লাগছে।”
কথাটি বলেই মিটিমিটি হাসলো অনু।তার হাসিতে ঠোঁট বাঁকালো রাসেল।আশেপাশে পরখ করে স্বল্প স্বরে বলে,
” তুমি প্রশংসা করছো!তুমি প্রশংসা করার মেয়ে না।কি চাই সেটা সরাসরি বলো।”
” এই তো আমার বুদ্ধিমান বফটা।আগামী দুই মাসের মধ্যে বিয়েটা ঠিক করুন রাসেল।প্লিজ প্লিজ প্লিজ বলুন আমার কথাটা রাখবেন।”
” দুইমাস পর তিন মাসের মাথায় তোমাদের এক্সাম তাই বিয়ের ঝোঁক উঠেছে।কি ভেবেছো আমি বুঝি না?তোমার সবকিছুর পইপই হিসাব রাখছি আমি,এক্সাম শেষে যা হবার হবে।”
অনু ভীষণ রেগে গেলো।রাসেলের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” মিস্টার রাসেল আপনাকে বিয়ে করার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। সরি আপনাকে রিজেক্ট করা হলো।”
অনু গটগট পায়ে চলে গেলো সামনের দিকে।রাসেল কোন প্রতিক্রিয়া করলো না।সে জানে এই মেয়েটা একটুপর এসে আবার অন্য বায়না ধরবে।
.
রাতের অতিথিরা বিদায় জানিয়েছে।মাহমুদা শ্রেয়া,নাজিম,অনুকে ভীষণ কষ্টে সবাইকে মানিয়ে রেখে দিয়েছে।তারা আজ এই বাড়িতে থাকবে পরেরদিন ঈশান আর ঈশাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবে।আয়োজন শেষ করে ঈশান অবসর হলো ঠিক রাত একটায়।এখন তাকে ব্লেজার পালটে পুনরায় নিচে নামতে হবে।এখনো কিছু কাজ বাকি।নিজের কক্ষের কাছে আসতে থমকে গেল তার দু’চরণ।শ্রেয়া, নাজিম,অনু,রাসেল,রেদোয়ান,রুমা সবাই দরজায় ভীড় করেছে কিন্তু এই দল চাইছে কী?
” কি হলো?এখানে কেন তোমরা।”
দল থেকে ঈশানকে পালটা প্রশ্ন করলো রাসেল,
” রুমে যাবি নাকি?”
” হ্যাঁ কেন?”
” যেতে দেওয়া হবে না।অবশেষে তোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে।”
” মাহেন্দ্রক্ষণ!মানে?”
” ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বউ কোলে..আর কিছু বলা লাগবে?”
বিচক্ষণ ঈশান রাসেলের কথা কয়েক সেকেন্ডে বুঝে ফেললো।আচমকা মনটা করে উঠলো উরু উরু। ঠোঁটের কোনে লেপ্টে গেলো লজ্জার হাসি।
” তার মানে তোরা টাকা আদায় করতে দাঁড়িয়ে আছিস?”
” অবশ্যই দুলাভাই।এবার কিন্তু পঞ্চাশ হাজার চাই কত্ত শখ ছিল ঈশার বিয়েতে গেট ধরবো তবে কিছুই হলো না।এবার ধরেছি, গেট নয় তবে দরজা।”
” ও হ্যালো এসব গেট দরজা ধরাধরি বাদ দিয়ে রাসেলের গলা ধরে বসে থাকো।”
ঈশানের কথায় ভীষণ লজ্জা পেলো অনু।সবাই শব্দহীন হাসছে লজ্জায় এক দৌড়ে পালাতে মন চাইলো অনুর।এই সময়ে লজ্জা দেওয়া কি ঈশানের খুব জরুরি ছিল।
” যতই কথা ঘুরাস টাকা দিতে হবেই।পঞ্চাশ হাজারের এক টাকা কমেও তোকে প্রবেশ করতে দিব না।”
নাজিম কথাটি বলতে সবাই একসাথে সহমত জানালো।ঈশান হাসলো ঠোঁট বাকিয়ে।
” টাকা দিতে আমি রাজি আগে বল আমার বউ কোথায়?”
” আমার রুমে যাও গিয়ে নিয়ে আসো।আর এই নাও ফুলের তোড়া আগে কিন্তু হাটু ভেঙে প্রপোজ করবে।”
শেষোক্ত বাক্যটি বললো রুমা।সবাই তার কথায় সহমত জানালো।ঈশান হাতে তুলে নিলো সাদা গোলাপ ফুলের দৃষ্টি নন্দন সুন্দর তোড়াটি।
” তোমাদের না টাকার প্রয়োজন?চেক হলে চলবে?”
” হ্যাঁ চলবে।”
“আমি এমনি এমনি টাকা দেব না আর বউ নিয়ে প্রয়োজনে ১ মাস পর বাসর করবো আমার সমস্যা নাই।কিন্তু তোমাদের মতো একদল ফাজিলকে টাকা দিতে আমার বড্ড গায়ে লাগছে।যারা কি না বিনা পরিশ্রমে আমার টাকা মেরে খাবে।”
” এভাবে বলছেন কেন দুলাভাই?আমরা তো আপনারি লোক।”
” হ্যাঁ তাই তো ভেবে দেখিনি।অনু তুমি তো ভীষণ এক্সাইটেড তাই না?”
” তা আর বলতে।”
” আমাকে একটা শব্দের বানান বলবে যদি পারো আমি তোমাদের হাতে দ্বিধাহীন পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দিব।”
” আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি দুলাভাই পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ যা জানতে চাইবেন ঝটপট বলুন।”
” incomprehensible বানানটা বলো।’
ধপাস করে আকাশ থেকে পড়লো অনু।তার মতো ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট কি না এই কঠিন বানান বলবে!তার তো উচ্চারণেই আসছে না।
” দ..দুলাভাই একটু ভেঙে ভেঙে বলেন।”
“কোন ভাঙাভাঙি নাই বলো incomprehensible বানান।”
দলের মাঝে সবার মুখে আধার নামলো।ঈশান এই শব্দ কোথা থেকে বের করেছে?
” কি পারবে না?”
” কোন শর্ত টর্ত নাই বউ নিয়ে রুমে যা আর টাকা দে।ঈশান তুই এসব চালাকি ছাড়।”
রাসেলের কথায় এক গাল হাসে ঈশান।মাথায় তার অন্য বুদ্ধি এসেছে।
” ঠিক আছে আমি রাজি।আমি রুমে যাব আর চেক আনবো।সন্দেহ থাকলে অনু আমার সাথে রুমে আসো।”
ঈশান কক্ষে গিয়ে চেক বইটা থেকে একটা চেক ছিড়লো।এবং সেখানে টাকার পরিমাণ বসিয়ে বাইরে ফিরলো।সবাই খুশিতে গদগদ হয়ে আছে।সাদা গোলাপের তোড়া হাতে ঈশার কাছে পৌছালো ঈশান ফুলটা বাড়িয়ে দিল ঈশার হাতে।ঈশা ফুল হাতে নিতে ঈশান তাকে ঝটপট কোলে তুলে নেয় লজ্জায় নিংড়ে যায় ঈশা।ঈশান কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
” এবার চলো তুমি আর আমি মিলে বিয়েতে কত টাকা উঠেছে কি কি উপহার উঠেছে সেই হিসেবে বসবো।”
সবার মাঝে দেখা যায় উচ্ছ্বাস।এই উচ্ছ্বাস কতক্ষণ রইবে কে জানে।
সবার মাঝে হৈ চৈ বেড়েছে।ঈশান ঈশাকে নিয়ে পৌছালো নিজের কক্ষে।তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো বাকিরাও।পকেট থেকে চেক নিয়ে ঈশান দিয়ে দিলো অনুর হাতে।বাকিদের সবাইকে বের করে দরজা রুদ্ধ করলো ঈশান।
” কি সুন্দর লাগছে তোমায়।আসো কাছে আসো আদর করি।”
” শুরু হয়েছে আপনার।”
” শুরু তো গত রাত হয়েছে শেষ কবে হবে জানি না।”
ঈশান জড়িয়ে ধরলো ঈশাকে।পরপর বার বার চুমু খেলো ঈশার গালে।হাতে হাত ঠোঁট ছুঁইয়ে ঈশান বলে,
” কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।সত্যি কি তুমি আমার!”
.
খুশিতে আত্মহারা দলের সকলে। অবশেষে ঈশানকে তারা জব্দ করতে পেরেছে।ছেলেটার মন নিশ্চয়ই আজ ভালো তাই তো দশ হাজার টাকা বাড়তি দিয়েছে।চেয়েছে পঞ্চাশ আর দিয়েছে ষাট হাজার এই নিয়ে সবার আনন্দের শেষ নেই।অনুর হাত থেকে চেক নিয়ে বাকরুদ্ধ রাসেল।একি এখানে তো তার সাইন!ভালো ভাবে চেকটা উলটে পালটে বেকুব বনে যায় সে।চেকে লেখা ষাট হাজার টাকা।এখানে তার চেক এলো কি করে?একটু মাথা খাটাতে বুঝতে পারলো রাসেল।এটা তার চেক বইয়ের একটি পাতায় যেই পাতায় সব লেখা ছিল শুধুমাত্র ঈশান টাকার পরিমানটা বসিয়ে টাকা তোলার কথা ছিল।এই টাকা তাদের বিজনেসের জন্য ঈশান পরবর্তীতে টাকা নেয়নি আর চেকটাও পড়ে রইলো ঈশানের কাছে।বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে চেক পড়ে আছে এতে চিন্তার কি আছে?কিন্তু আজ বিশ্বস্ত বন্ধু তাকে বাশ দিয়ে দিল।রাসেলের মাথা ঘুরছে দ্রুত বিছানায় বসে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে,
” মানে বাসর করবে ও আর টাকা যাবে আমার একাউন্ট থেকে!এ হতে পারে না এই চেক বাতিল।”
রেদোয়ান দ্রুত পকেটে চেক পুরে বলে,
” এতকিছু জেনে আমাদের কাজ নেই আমরা আমাদের চেক পেয়েছি।কাজ না থাকলে গিয়ে খৈ ভাজো যাও।”
#চলবে___
এত রাতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।কারেন্টের অপেক্ষা করতে করতে দেরি হয়ে গেছে।