#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৩
নিকষ কৃষ্ণ রজনী। ঘরোয়া পোশাক পরিহিত ইরহাম সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। হাতে মোবাইল। মোবাইল স্ক্রল করতে করতে ডাইনিং এরিয়ায় উপস্থিত হলো। সেথায় পূর্ব হতেই উপস্থিত ছিল হৃদি। স্বামীর জন্য খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত মেয়েটি। ইরহাম চেয়ার টেনে বসলো। মোবাইল রাখলো টেবিলের ওপর। হৃদি মুচকি হেসে ওর প্লেট সোজা করে দিলো। ভাত বেড়ে দিলো প্লেটে। ইরহাম নিজেই ফিশ কারি নিয়ে নিলো। হৃদি গ্লাসে পানি ঢেলে পাশের চেয়ারে বসলো। দেখতে লাগলো স্বামীর ভোজন। নিঃশব্দে আহার সম্পন্ন করে উঠে দাঁড়ালো মানুষটি। হৃদি এঁটো থালা-বাসন নিয়ে কিচেনে অগ্রসর হলো। বেসিনে হাত ধৌত করে কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল ইরহাম। কাজকর্ম সেরে হৃদিও নিজেদের কক্ষের দিকে ধাবিত হলো।
.
বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে ইরহাম। চোখে রিমলেস চশমা। হাতে একটি রাজনৈতিক বই। ইংরেজি ভাষায় লিখিত। হৃদি ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে বসে। হাতেপায়ে নাইট ক্রিম মেখে চুল আঁচড়ে নিলো মেয়েটি। টুল হতে উঠে বিছানার ধারে এলো। বসলো স্বামীর পাশে। তাকে বই পড়তে দেখে উঁকি দিলো বইয়ের নাম দেখতে। ইংরেজি ভাষার বই তাও আবার রাজনীতি বিষয়ক। কি রষকষহীন রে বাবা! হৃদি বিরক্তিসূচক শব্দ করে বললো,
” আপনার মধ্যে রষকষের ‘র’ও নেই তাই না? ”
বই পড়া থেমে গেল। অর্ধাঙ্গীর পানে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকালো ইরহাম। হৃদি তর্জনী দিয়ে বইটি দেখিয়ে বললো,
” দিনভর রাজনীতি রাজনীতি। এখন রাতেও বিদেশি রাজনীতি! আপনি পারেনও বটে। ”
তর্জনী সরিয়ে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে একাকী বলতে লাগলো,
” আমরা আসলেই দুই মেরুর পাবলিক। ওপর ওয়ালা এমন জুটি বানালো! আমাদের মধ্যে ক্যামনে কি ভাই? ”
ইরহাম বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,
” রাতদুপুরে চিন্তা করে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বানানোর দরকার নেই। সময় হলে সবই হবে। ”
হৃদি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালো,
” কি হবে? কিসের কথা বলছেন? ”
ওর পানে তাকালো মানুষটি। চোখের ভাষায় অদ্ভুত মা-দকতা। ছুঁয়ে যাচ্ছে অন্তঃস্থল। বুঝিয়ে দিচ্ছে সুগভীর কিছু ভাবনা। শিউরে উঠলো মেয়েটি। লালিমা লেপে গেল দু কপোলের ত্বকে। ত্বরিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি। লাজুক স্বরে থেমে থেমে বললো,
” এমন করে তাকাবেন না ইরহাম। লাজে ম র ণ নিশ্চিত আমার। ”
অধর কা’মড়ে হাসলো মানুষটি। ইচ্ছে সত্ত্বেও আর দুষ্টুমি করলো না। মনোযোগ নিবদ্ধ করলো বইয়ে। লাজুকতার ন্যায় মিইয়ে মেয়েটি। মন্থর গতিতে শয্যা গ্রহণ করলো। দেহে জড়িয়ে নিলো পাতলা কাঁথা। ওপাশ ফিরে শুয়ে সে। ইরহাম আড়চোখে দেখে মৃদু হাসলো। শব্দহীন আকর্ষণীয় সে হাসি!
•
নিশুতি রাত। চিন্তিত বদনে কক্ষে বসে পল্লবী। রাহিদের মা। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা ওনার। দুরুদুরু করছে বুক। চিন্তার পাহাড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছেন উনি। আচমকা ওনার ধ্যান ভঙ্গ হলো। আঁতকে উঠলেন উনি। কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসছে। সে এসেছে! এসেছে। বিছানার চাদর মুঠোবন্দী করে আতঙ্কিত ভঙ্গিতে বসে রইলেন উনি। অনুভব করতে পারলেন এই কক্ষের দিকেই এগিয়ে আসছে মানুষটি। প্রতিটি পদচারণায় ওনার বুকের ভেতর কাঁপন সৃষ্টি হলো। বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ছে কপোল ছুঁয়ে। অতিরিক্ত ভয়ে কেঁপে উঠলেন উনি যখন কক্ষে প্রবেশ করলো মানুষটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন হতে চুলের একাংশ শক্ত মুঠি করে ধরলো মানুষটি। পল্লবী পিছু ঘোরা মাত্রই শক্তপোক্ত পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ অঙ্কিত হলো ওনার কপোলের ত্বকে। হতভম্ব চাহনিতে স্বামীর পানে তাকালেন পল্লবী। বাঁ হাতে চুলের মুঠি ধরে ডান হাতে স্ত্রীর চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলেন জহির সাহেব। রাগে র’ক্তিম ওনার মুখশ্রী। হিসহিসিয়ে বলে উঠলেন উনি,
” মা* ! তোর কলিজা অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না? ভয়ের থলি ছোট হয়ে গেছে? বহুদিন খাতির করি না, তাই কি ভাবছিস? জহির নেতিয়ে পড়ছে? হাতে চুড়ি পড়ে ঘোরে? ”
ক্রন্দনরত পল্লবী ভেজা কণ্ঠে বলতে লাগলেন,
” বি বিশ্বাস করো। আমি মারিয়াকে সেরকম কিছু বলিনি। ও ও-ই.. ”
আরো শক্ত করে চোয়াল চেপে ধরলেন জহির সাহেব। দন্ত আঘাত করছে পল্লবীর মুখের ভেতর। র*ক্তক্ষরণ হবার উপক্রম। যন্ত্রণায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলেন উনি। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে জহির সাহেব
ক্ষি প্ত স্বরে বলতে লাগলেন,
” একদম চুপ। তোর এই ব্লা!ডি মুখে আমার মারুর নাম নিবি না। তোর কি যোগ্যতা আছে ওর নাম মুখে নেয়ার? হাঁ? ফকি* একটা। ”
পল্লবী আহত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” বউ হই তোমার। ”
জহির সাহেব বিদ্রুপের হাসি অধরে এনে স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। ভারসাম্য হারিয়ে পড়তে গিয়েও পড়লেন না পল্লবী। ওনার দিকে তাকিয়ে মানুষটি বলতে লাগলো,
” বউ নস। তুই হলি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিস্টেক। তোর মতো অপদার্থ, আনকালচারাল ভূতকে বিয়ে করে আমার জীবনটা জাস্ট শেষ হয়ে গেল। ইয়্যু আর গুড ফর নাথিং। ”
তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে ওনার চেহারায়। স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে পড়লেন পল্লবী। ওনার ভালোবাসার মানুষটির চোখে আজ উনি এতটাই নিচ! হেয়! হাহ্! এরেই বলে নিয়তি! বি-ষাক্ত পরিণতি! জহির সাহেব স্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলে শাসনের সুরে বললেন,
” আজ হয়েছে। হয়েছে। দ্বিতীয়বার আমার ফোন ধরার মতো দুঃসাহস দেখাবি না। আর যদি মারুর সঙ্গে মিসবিহেভ করেছিস তো দেয়ালে পুঁ তে দেবো। জাস্ট
পুঁ তে দেবো। মনে রাখিস। ”
গায়ে থাকা কোট খুলে বিছানায় স্ত্রীর মুখে ছুঁড়ে ফেললেন উনি। বড়বড় কদম ফেলে বেরিয়ে গেলেন কক্ষ হতে। বেদনাদায়ক চাহনিতে স্বামীর গমন পথে তাকিয়ে পল্লবী। আরো একজন এ দৃশ্য দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলো। নামেমাত্র বাবার রাজকন্যা! রায়না! আবেগপ্রবণ হয়ে মেয়েটা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল। পেছনে রয়ে গেল শোকে পাথর এক নারী।
•
দিবাকরের আলোয় উজ্জ্বল বসুন্ধরা। কিচেনে ব্যস্ত সময় পাড় করছে মেয়েটি। চিড়া খুব ভালোমতো ধৌত করে একটু শক্ত অবস্থায় ঝাঁঝড়ির মধ্যে তুলে পানি নিংড়ে নিলো। রাখলো একটি থালায়।
” এবার লবণ ও চিনি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। ”
মালিহার নির্দেশনা পালন করলো হৃদি। মায়ের কথামতো আলু, পেঁয়াজ ও আদা ঝিরঝির করে কাটলো। বেশ ভোগান্তি পোহাতে হলো বৈকি। রান্নায় অনভিজ্ঞ হলে যা হয়। কাঁচালঙ্কা কাটার সময় বারবার অসুবিধা হচ্ছিল। মালিহা তা লক্ষ্য করে বললেন,
” দেখি আমাকে দে। ”
হৃদি আপত্তি জানিয়ে বললো,
” নো বঙ্গ মাদার। আমাকেই করতে দাও। তুমি করলে আমি শিখবো কি করে বলো তো? ”
মালিহা মুচকি হেসে বললেন,
” ঠিক আছে। কর। কিন্তু সাবধানে। ”
হৃদি মিষ্টি হেসে সম্মতি জানালো। মালিহার নির্দেশনা মোতাবেক কর্ম সম্পাদন করতে লাগলো। একসময় চিড়া সম্পূর্ণ ভাবে ভাজা সবজির সঙ্গে মিশে গেল। গ্যাস বার্নার হতে নামিয়ে নিলো হৃদি। মায়ের কথামতো পরিমাণ মতো ঘি এবং গরম মশলা দিয়ে চিড়া হালকা করে নাড়তে লাগলো। অতঃপর সম্পন্ন হলো ‘ চিঁড়ের পোলাও ‘ রেসিপি। প্রথমবারের মতো লাঞ্চ আইটেম রান্না। উচ্ছ্বসিত হৃদি টুপ করে চুমু এঁকে দিলো মায়ের কপোলে। হেসে উঠলেন মালিহা। যত্ন সহকারে হৃদির কানের পিঠে গুঁজে দিলেন কিছু চুল। উত্তেজনা বিরাজ করছে মেয়েটির অন্তঃপুরে।
.
শুক্রবার আজ। ছুটির দিন। পরিবারের সদস্যরা সকলেই বাড়িতে। ইরহাম সকাল সকাল বাহিরে গিয়েছিল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে ফিরেছে। লাঞ্চ সেরে আবার বের হবে। দুপুরবেলা এখন। লাঞ্চের সময় হয়ে গেল। একে একে ডাইনিংয়ে উপস্থিত হলো পরিবারের সদস্যরা। বসলো চেয়ারে। হৃদি এবং মালিহা খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে। হৃদির ঝলমলে মুখশ্রী দেখে ইরহাম কিছুটা অবাক হলো! তবে সকলের উপস্থিতিতে কিছু বললো না। তবে রাজেদা খানম ঠিক প্রশ্ন করে বসলেন,
” কি রে বুইন? মুখ এত চকচক করতাছে ক্যান? বহুত খুশি মনে হইতাছে। কোনো সুখবর আছে নি? ”
হতবিহ্বল হলো ইরহাম! খুকখুক করে কেশে উঠলেন এজাজ সাহেব। মালিহা লজ্জায় পড়ে গেলেন শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। হৃদি প্রথমে বুঝতে পারেনি। তবে স্বামীর হতবিহ্বল চেহারায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই বিষয়টা বোধগম্য হলো। লাজে আর’ক্ত হলো মুখশ্রী। মিনমিনে কণ্ঠে বললো,
” দাদি কিসব বলছো? অমন কিছুই নয়। ”
রাজেদা খানম বেজার মুখে বললেন,
” তাইলে কি? ”
হৃদি হাসিমুখে বললো,
” আছে কিছু। সময়মতো বলবো নে। এখন সবাই খেতে বসো তো। ”
কথা না বাড়িয়ে হৃদি খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। সঙ্গে মালিহা। চিঁড়ের পোলাও দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হলো উপস্থিত সকলে। ইনায়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললো,
” ওয়াও! চিঁড়ের পোলাও! কতদিন পর। উফ্! কি দারুণ! থ্যাংকস আম্মু। ”
মালিহা মুচকি হেসে পুত্রবধূর দিকে তাকালেন। হৃদি প্রসন্ন চোখে তাকিয়ে। সবাইকে খাবার পরিবেশন করে শাশুড়ি, বৌমা খেতে বসলো। হৃদি প্লেটে চামচ নড়াচড়া করছে। উত্তেজনায় ভুগছে বেশ। প্রথমবারের মতো এমন রান্না। ভালো হয়েছে তো? সবাই খেয়ে সন্তুষ্ট হবে নাকি অসন্তুষ্ট? স্বামী, শ্বশুর, দাদি শাশুড়ির দিকে তাকাতে লাগলো মেয়েটা। কারোর প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না। খানিক বাদেই শোনা গেল ইনায়ার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ,
” আম্মু অসাম হয়েছে পোলাওটা! হাত দাও তো। চুমু দেবো। এমন ফাটাফাটি রান্নার জন্য একখান চুমু দিতেই হবে। ”
মালিহা হাসিমুখে বললেন,
” চুমু দিতে হলে আমাকে নয় বরং তোর ভাবীকে দে। ”
” কেন? ভাবীকে কেন? ” অবুঝের মতো প্রশ্ন করে বসলো ইনায়া।
” কারণ রান্নাটা আমি নই বরং তোর ভাবী করেছে। ”
হৃদি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,
” তবে অল ক্রেডিট গৌ’জ টু মা। মায়ের হেল্প ছাড়া এতটা করতে পারতাম না। থ্যাংকস মা। ”
মালিহা মুচকি হেসে ধন্যবাদ গ্রহণ করলেন। অবাক নেত্রে তাকিয়ে বাকিরা! হৃদি রান্না করেছে? অভাবনীয় কাণ্ড বটে! ইরহাম প্লেটে থাকা চিঁড়ের পোলাও এর দিকে একপলক তাকিয়ে সহধর্মিণীর পানে তাকালো। চোখেমুখে তার তৃপ্তির আভা। মুচকি হেসে খেতে লাগলো সে। এজাজ সাহেব এবং তার গুণধর পুত্র ব্যতিত সবাই বেশ প্রশংসা করলো। খুশিমনে সে প্রশংসায় ভেসে গেল হৃদি।
.
সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে ইরহাম। পরিহিত সফেদ পাঞ্জাবির বোতাম আটকে নিচ্ছে সে। হঠাৎ চমকে গেল!
” গিফট কোথায়? ”
বাম পাশে তাকালো ইরহাম। হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে হৃদি।
” কি হলো? গিফট দিন। ”
” কিসের? ” গম্ভীর স্বরে শুধালো মানুষটি।
হৃদি হাত নামিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” মানে কি? বাড়ির বউ প্রথমবার রান্না করলে কিছু দিতে হয় জানেন না? সবাই কম-বেশি কিছু দিয়েছে। তো আপনি বাদ যাবেন কেন? আফটার অল স্বামী মহাশয় হোন। ”
তাড়া দেখিয়ে, ” দিন দিন। বিলম্ব না করে গিফট দিন। কি দেবেন? ”
ইরহাম এসবে পাত্তা না দিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। মসৃণ কেশে হেয়ারব্রাশ চালনা করে চোখে পড়ে নিলো চশমা। কব্জিতে গলিয়ে নিলো রিস্ট ওয়াচ। পকেটে কার রিং এবং ওয়ালেট পুরে স্ত্রীর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। অসন্তুষ্ট বদনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। উপহারের জন্য অধীর অপেক্ষায়। বক্র হেসে এগিয়ে এলো মানুষটি। হৃদির সন্নিকটে দাঁড়িয়ে মৃদু কণ্ঠে শুধালো,
” উপহার চাই? ”
ঝলমলে হাসিতে ইতিবাচক মাথা নাড়ল হৃদি। উপহার চাই তার। চোখের ইশারায় হাত বাড়িয়ে দিতে বললো ইরহাম। খুশি খুশি দ্রুত হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়েটি। ওর উচ্ছ্বসিত নয়নে নয়ন স্থির রেখে কোমল হাতটি স্পর্শ করলো স্বামী নামক মানুষটি। হালকা শিউরে উঠলো হৃদি। ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতটি আস্তে ধীরে উল্টে ধরলো ইরহাম। চমকিত নেত্রে তাকিয়ে মেয়েটি। কি করতে চাইছেন উনি! হাতের উল্টো পিঠে ওনার কি কাজ! হাতটি উল্টে ধরলেন কেন! সহসা ভাবনায় ছেদ পড়লো। শিহরণে আবিষ্ট হয়ে কম্পিত হলো চিত্ত। ইরহামের হাতের মুঠোয় পেলব হাতটি। তর্জনীতে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো উষ্ণ পরশ। আবেশে মুদিত হয়ে আসছে নেত্র জোড়া। ওর নয়নে স্থির নভোনীল চক্ষুদ্বয়। চশমার অন্তরাল হতে নে”শালো চাহনিতে তাকিয়ে। সে নে”শা মন্থর গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে মেয়েটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে মানসপটে। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে বাকি চার আঙ্গুলেও ওষ্ঠের ছোঁয়া এঁকে দিলো মানুষটি। নে’শাতুর স্পর্শের মাধ্যমে একান্ত সঙ্গিনীকে উপহার প্রদান করলো। অভাবনীয় মা-দকতাময় স্পর্শে বিহ্বল হৃদি! স্বামীর নে’শাতুর চাহনি আর সইতে পারলো না। দ্রুততার সহিত হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ হতে। পেছনে রয়ে গেল অর্ধাঙ্গ। যার অধরে লেপ্টে প্রসন্ন ছাপ।
চলবে.
[ রোমান্টিক ইরু’কে কেমন লাগছে পাঠকবৃন্দ? সুন্দর সুন্দর মন্তব্য আশা করছি। ]