#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৭
বিভাবরীর কৃষ্ণাবরণে আচ্ছাদিত ধরিত্রী। বালিশে মাথা ঠেকে মেয়েটির। নোনাজল জমায়েত অক্ষিকোলে। চোখের পর্দায় বারংবার ভেসে উঠছে স্বামীর ক্ষতস্থান। ইশ্! শুভ্র ব্যান্ডেজের অন্তরালে ক্ষত। না জানি কতখানি আঘাত লেগেছে! খুব বেশি র-ক্তক্ষরণ হয়েছিল কি! এ আঘাত কবে পেলেন উনি! ও কি করে দেখলো না! ও বোকা নয় যে এমন একটা ঘটনা দেখেও অদেখা করে যাবে। তবে কবে আঘাতপ্রাপ্ত হলেন উনি! কাল, পরশু, কবে! আজ আনন্দঘন এই মুহূর্তে সকল আনন্দ যেন এক লহমায় ভেস্তে গেল। ভীতির সৃষ্টি হলো অন্তঃপুরে। যাতনায় ছিন্নভিন্ন অন্তর। অঝোর ধারায় বর্ষণ হতে লাগলো অক্ষি বেয়ে। শঙ্কিত হৃদয় এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবেগঘন এই মুহূর্ত খুব কাছ থেকে অবলোকন করলো ইরহাম। দাঁড়িয়ে সে বিছানা সংলগ্ন। নিদ্রা ও ক্লান্তির মিশ্রণে বুজে আসছে আঁখি যুগল। তবুও তৃপ্তির আভা ছড়িয়ে মুখশ্রীতে। সঙ্গিনীর এ যন্ত্রণা, ক্রন্দন সব যে শুধু তারই জন্যে! এর চেয়ে মধুর, তৃপ্তিময় মুহূর্ত আর কি হতে পারে? কক্ষের আলো নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো। অধর প্রসারিত করে বিছানায় বসলো মানুষটি। পিঠে টান লেগে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলো। এ ব্যথা সয়ে ঘুমানো কিছুটা কষ্টসাধ্য হতে চলেছে। আড়চোখে হৃদিকে দেখে ইরহাম ইচ্ছাকৃতভাবে বেদনা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,
” ব্যথা হচ্ছে খুব! ”
আবেগী রমণী অভিমানের পাহাড় গুঁড়িয়ে মুহুর্তের মধ্যে উঠে বসলো। ছুটে এলো স্বামীর পানে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে স্বামীর বাহুতে হাত রেখে শুধোতে লাগলো,
” খুব ব্যথা হচ্ছে? কোথায় হচ্ছে? ”
উদগ্রীব হয়ে পিঠে ক্ষতস্থান নিরীক্ষা করে দেখতে লাগলো হৃদি। বাহ্যিক ভাবে সব ই তো ঠিকঠাক। তবে! ইরহাম বিমোহিত নয়নে স্ত্রীর যত্নশীল অবতার উপভোগ করতে ব্যস্ত। হৃদি কিছুটা শাসনের ভঙ্গিতে বললো,
” আপনি না বড্ড একরোখা। পিঠে এভাবে আঘাত পেয়েছেন। তবুও কোনো বিশ্রাম নেই। দিনরাত ছোটাছুটি করেই চলেছেন। ঠিকমতো চিকিৎসা নিয়েছেন তো? নাকি তা-ও হয়নি? হুঁ? ওষুধের ধারেকাছে গিয়েছেন? ”
ইরহাম পুলকিত চিত্তে স্ত্রীর পানে তাকিয়ে! তার থেকে কোনোরূপ জবাব না পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো হৃদি। স্বামীর মুখপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভেজা কণ্ঠে বললো,
” নিজেকে কেন এত অবহেলা করছেন ইরহাম? কেন বুঝতে পারছেন না আপনার শরীরে বিন্দুমাত্র আঁচ পড়লে তা কারো হৃদয় ভ”স্মীভূত করে! অসহনীয় যাতনা হয় বুকের ভেতর। অন্যের তরে বাঁচতে গিয়ে দয়া করে নিজেকে শেষ করে দেবেন না ইরহাম। একটু যত্ন নিন। প্লিজ! ”
সহধর্মিণীর এমন আকুলতা মানুষটির হৃদয়ের কুঠুরিতে সরাসরি প্রভাব ফেললো। অবাক নেত্রে তাকিয়ে রইল ইরহাম! ক্রন্দনের ফলে অর্ধাঙ্গিনীর লালাভ মুখশ্রী, ভেজা আঁখি পল্লব, কম্পিত ওষ্ঠাধর তার হৃদয়ে যেন শূ’লের ন্যায় বি দ্ধ হতে লাগলো। অন্তর্দাহ বেড়ে চলেছে। পিঠের যন্ত্রণা ছাপিয়ে এখন যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মধ্যিখানে। হৃদি তখনো ক্রন্দনে লিপ্ত। দিশেহারা অবস্থা দু’জনের। ভিন্ন ভিন্ন কারণে। তবে মূল সূত্র একই। দুঃখের রেশ কাটিয়ে যথাসম্ভব দ্রুততার সহিত হৃদির হাত ধরে কাছে টেনে নিলো মানুষটি। আবদ্ধ করলো সবচেয়ে সুরক্ষিত, আবেগময় বাহুডোরে। বাঁ হাতটি পিঠের মসৃণ ত্বকে চেপে বসেছে। ডান হাত আলতো করে বুলিয়ে চলেছে চুলের ভাঁজে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কোমল স্বরে জানালো আপত্তি,
” হুশশ! কাঁদে না মেয়ে। শান্ত হও। এত কাঁদে না তো। আমি এখনো জীবিত। তোমার স্বামী ম রে যায়নি। একটু শান্ত হও হৃদি। ”
হিতে বিপরীত হলো। বুকের মাঝে লুকানো আদুরে পাখিটা মৃ ত্যু নামক ভয়ঙ্ক”র ক্ষুদ্র শব্দে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। পেলব দু হাতে আঁকড়ে ধরলো স্বামীকে। ছাড়বে না। কাছছাড়া করবে না নিজ হতে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। ব্যথিত বদনে সঙ্গিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ইরহাম। ছোট ছোট কিছু উষ্ণ পরশ অঙ্কন করলো ললাট কার্নিশে। কতটা সময় পেরিয়ে গেল হুঁশ রইলো না। আস্তে ধীরে শান্ত হয়ে এলো মেয়েটি। স্বামীর বাহুডোর হতে মুক্ত হয়ে ডান হাতের উল্টো পিঠে অশ্রুবিন্দু মুছে নিলো। লালিমা লেপে মুখের সর্বত্র। ভাঙা স্বরে সে বললো,
” শেষ রাত প্রায়। একটু ঘুমিয়ে নেবেন। আসুন। ”
অবশেষে শান্ত হলো মেয়েটি। বেদনাগ্ৰস্থ চাহনিতে তাকিয়ে ইরহাম। অবলোকন করে চলেছে চঞ্চল, দুষ্টুমির সম্রাজ্ঞী তার সহধর্মিণীর এক ভিন্ন রূপ। অতি আবেগী সত্ত্বা। স্বামীর বালিশটি ঠিকঠাক করে তাকে শুয়ে পড়ার আহ্বান জানালো হৃদি। ইরহাম বালিশে একপলক তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
” পিঠে ব্যাথা। ”
না চাইতেও শক্তপোক্ত সামর্থবান মানুষটি আজ বারবার দুর্বলতা প্রকাশ করছে। অবচেতন মনে কি চাইছে সে! সঙ্গিনীর আরো বেশি উষ্ণতা, একটুখানি যত্নের প্রলেপ! হয়তো তা-ই। চিন্তায় পড়ে গেল হৃদি। ভাবনায় শুধু একটাই বিষয়। তার স্বামীর যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রায় দু রাত নির্ঘুম সে। একটু আরামের নিদ্রা আবশ্যক। কি করে আরামের ব্যবস্থা করবে সে! কি করে! ইরহাম অনিমেষ নেত্রে স্ত্রীর পানে তাকিয়ে। সে-ও জানতে ইচ্ছুক কি করবে তার হালাল সঙ্গিনী! কি করে যন্ত্রণা বিহীন নিদ্রার আয়োজন করবে। সহসা চমকালো মানুষটি! বালিশে মাথা এলিয়ে শুয়ে পড়েছে হৃদি। দুর্বোধ্য এক চাহনিতে তাকিয়ে তার পানে। কি করতে চাইছে মেয়েটি? এমনতর চাহনির অর্থ কি? তার যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করে শুয়ে পড়লো! পারলো এমন নির্দয় আচরণ করতে! হঠাৎ চরম আশ্চর্যান্বিত হয়ে স্ত্রীর মুখপানে তাকালো ইরহাম! নরম-কোমল দু হাত দু’দিকে প্রসারিত করে শুয়ে হৃদি। অন্তরস্পর্শী কণ্ঠে বিস্ময়কর আহ্বান জানালো তার সঙ্গিনী,
” আপনার সেবায় নিয়োজিত জনাব। আসুন। আরামের শয্যা গ্রহণ করুন এমপি সাহেব। ”
প্রাণোচ্ছল হাসি অধরে লেপ্টে মেয়েটির। ইরহাম নিঃশব্দ চোখের ভাষায় শুধালো সত্যিই কি তাই! আলতো করে মাথা নাড়লো সঙ্গিনী। অপ্রত্যাশিত চমকে ঝলমলে হাসলো ইরহাম। বড় হৃদয়কাঁড়া সে হাসি! মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়লো হৃদির অন্তরে। রাত্রির শেষভাগে আরো একবার স্বামীর হাস্যরত রূপে বড্ড বিমোহিত হলো! স্রষ্টার নিকটে প্রার্থনা করলো সে, সদা অটুট থাক তার স্বামীর এ প্রাণবন্ত আভা। ধীরস্থির ভঙ্গিতে শয্যা সঙ্গিনীর পানে অগ্রসর হতে লাগলো ইরহাম। তা লক্ষ্য করে ছড়িয়ে রাখা দু’টো হাত কি একটু হলেও শিউরে উঠলো! সন্নিকটে পৌঁছে হৃদির নয়নে নয়ন স্থির করে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে রইল মানুষটি। অতঃপর ক্লান্তির নিকটে হার মানলো। আস্তে করে মাথা এলিয়ে দিলো অর্ধাঙ্গীর বক্ষদেশে। শিরশির করে উঠলো কোমল কায়া। কল্লোল আছড়ে পড়লো হৃদয়ের উপকূলে। নিমীলিত হলো অক্ষি জোড়া। আরামদায়ক শয্যাস্থানে ভালোমতো মাথা এলিয়ে দিলো মানুষটি। দু হাতে আলতো করে বেষ্টিত করলো নির্মেদ কটি। বদ্ধ হলো চোখ। স্বল্প সময়ের মধ্যেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল ইরহাম। আর তার বউপাখি! শিহরণে আবিষ্ট মেয়েটি নিদ্রা ভুলে জাগ্রত। স্বামীর স্বল্প ভেজা চুল ছুঁয়ে তার থুতনি। পেশিবহুল দু’টো হাত আঁকড়ে ধরেছে কটি। এমনতর ঘনিষ্ঠতা এ প্রথমবার! নিদ্রা হবে কি করে! হুঁ! জাগ্রত মেয়েটি পেলব হাতে স্বামীর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নিশ্চিত করতে লাগলো সর্বোচ্চ আরাম। এবার একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে নিক মানুষটি। তার যেন কোনোরূপ যন্ত্রণা-সমস্যা না হয় সেজন্য নাহয় একরাত বিনিদ্র কাটলো। অসুবিধা কি!
•
আলো ঝলমলে সন্ধ্যা। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ প্রাঙ্গনে আজ বসেছে আনন্দ মেলা। একত্রিত হয়েছে পরিবার-পরিজন। ঘনিষ্ঠ স্বজন কেউ বাদ নেই। সকলেই উপস্থিত হয়েছে। কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল প্রাঙ্গন। সেখানেই আয়োজিত ঘরোয়া এই পার্টি। এমপি সাহেবের বিজয় উদযাপন করতে তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ। বলাবাহুল্য এসবের মূল কাণ্ডারি অন্য কেউ নয় বরং এমপি পত্নী মিসেস হৃদি শেখ। প্রাঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে হলদে আভা ছড়িয়ে রেখেছে কৃত্রিম আলোকসজ্জা। একাংশে অবস্থিত ডিনার টেবিল। টেবিলের ওপর খাবারের সমারোহ। সাথে বেশকিছু ক্যান্ডেলস্টিক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। তাতে বহ্নি শিখা ছড়িয়ে মোমবাতি। কিছু বোটানিক্যাল কাগজের গোলাকার লণ্ঠন শোভা পাচ্ছে মাথার উপরিভাগে। সবমিলিয়ে এক নজরকাড়া আয়োজন!
হৃদির বাবার বাড়ি থেকে সকলেই উপস্থিত হয়েছে। মালিহার একান্ত অনুরোধ ফেলতে পারেনি তারা। জহির সাহেবও সপরিবারে উপস্থিত হয়েছেন। ঘরোয়া এ পার্টিতে সকলেই ব্যস্ত। কেউ আলাপচারিতায়, কেউবা ফটোসেশনে।
নীলাভ সিকোয়েন্সের এমব্রয়ডারি করা লেহেঙ্গা পড়নে মেয়েটির। অপ্রত্যাশিত ভাবে কৃষ্ণবর্ণ কেশ আজ লুকিয়ে হিজাবের অন্তরালে। লেহেঙ্গার দোপাট্টা শালীনতার সহিত দেহে জড়িয়ে। মুখে মানানসই প্রসাধনীর ছোঁয়া। এমন নয়া অবতারে চমৎকার লাগছে! দাদির হাত ধরে হাসিমুখে কথা বলতে বলতে পার্টি প্রাঙ্গনে উপস্থিত হলো হৃদি। পথিমধ্যে দেখা হলো রায়নার সঙ্গে।
” ভাবী ওয়ান ফটো! ”
রায়নার অনুরোধ রক্ষার্থে দাদিকে সাবধানে একপাশে দাঁড় করিয়ে হৃদি গেল রায়নার কাছে। ননদ ভাবী যুগল মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে সেলফি তুললো। হাসিমুখে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো রায়না। হৃদি ওর কপোল টিপে দিয়ে আলতো হাসলো। বিদায় নিয়ে হাজির হলো রাজেদা খানমের নিকট। উনি তখন ফারহানা’র সঙ্গে কথা বলছিলেন। এক সপ্তাহ বাদে মা’কে দেখে আপ্লুত হলো হৃদি!
” আম্মু! ”
মা’কে শক্ত করে আলিঙ্গন করলো হৃদি। ফারহানাও আবেগী হয়ে পড়লেন মেয়েকে দেখে। কতদিন পর মেয়েটাকে দেখলেন! পুরো সাত সাতটা দিন! উনিও মাতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে নিলেন। চোখে জমলো অশ্রু কণা। রাজেদা খানম মুচকি হাসলেন এ দৃশ্য দেখে। মা মেয়ের এমন আবেগের আলোড়ন যুগ যুগ ধরে চলমান। কভু মিইয়ে যাবার নয়।
.
রাহিদ, ফাহিম, তাঈফ এবং ইরহাম একত্রে দাঁড়িয়ে। আজকের পার্টির মূল আকর্ষণ এমপি সাহেব। পড়নে তার শ্বেত শুভ্র পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপরে নীলাভ স্লিভলেস নেহরু জ্যাকেট। বরাবরের মতই পরিপাটি, সুদর্শন রূপে দাঁড়িয়ে। রাহিদ দুঃখ প্রকাশ করে বললো,
” কি দিন এলো ভাইয়া! জিতলে তুমি। কোথায় আমাদের ট্রিট দিয়ে খাওয়াবে তা না। আমরা খাবার ভর্তি ডেকচি নিয়ে ছোটাছুটি করছি। ইজ ইট ফেয়্যার?”
ইরহাম ভাইয়ের কথার পৃষ্ঠে গম্ভীর স্বরে বললো,
” আমি কিছু ভাবার আগেই কেউ যদি ভাবীর কথায় নৃত্য শুরু করে আমি কি করতে পারি? ”
চরম আশ্চর্যান্বিত হয়ে আকাশ থেকে ছিটকে পড়লো রাহিদ!
” আ আমি নৃত্য করছি? ”
তাঈফ দাঁত কেলিয়ে হাসলো,
” ইয়েস। গিন গিন গিন নাগিন ড্যান্স। ”
রাহিদ অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো,
” এই জন্য। এই জন্য কারোর ভালো করতে নেই। ”
চারপাশে চোখ বুলিয়ে আহাজারি করে,
” ভাবী গো! কোথায় তুমি? দ্যাখো তোমার দেওরকে কি বলে ওরা! ”
রাহিদ ন্যা কা ভঙ্গিতে হৃদির খোঁজে যাচ্ছিল। তবে এমপি সাহেব স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে তা কি করে সম্ভব! আচানক পেছন হতে রাহিদের ঘাড়ের দিকে শার্টের কলার চেপে ধরলো ইরহাম। থেমে যেতে বাধ্য হলো ছেলেটা। পিছু ঘুরে তাকাতেই মুখোমুখি হলো নভোনীল রূঢ় চোখ জোড়ার। শুকনো ঢোক গিলে বোকা হাসি উপহার দিয়ে পূর্বের জায়গায় ফিরে এলো রাহিদ। আস্তে করে ওর কলার ছেড়ে হাত ঝাড়ল মানুষটা। তাঈফ ও ফাহিম তা লক্ষ্য করে মিটিমিটি হাসছে। রাহিদ সরু চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। ইশ্! সে-ও না। এমপি সাহেবের উপস্থিতিতে তারই একমাত্র বউকে নিয়ে মশকরা করতে যাচ্ছিল! সর্বনাশ! সে যে এখনো ভ*স্মীভূত হয়নি এ-ই আজকের সেরা চমক! উফ্! বড় করে শ্বাস ফেললো রাহিদ। তাঈফ দুষ্টু হেসে বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ালো। বাঁ হাতে গলা জড়িয়ে অসম্ভব বেসুরো গলায় আওড়ালো জনপ্রিয় গানের কয়েক লাইন,
” আহা কেমনে রাখি বাঁ”ন্ধিয়া
এই মনের পাখি বাঁ”ন্ধিয়া
তুমি কাছে তব যে দূরে
কতো যে দূরে ওরে বঁধূয়া
পরান যায় জ্বলিয়া রে ”
গম্ভীর মানুষটা মুহুর্তের মধ্যেই অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করলো। তা লক্ষ্য করে নিরাপদ দূরত্বে জায়গা করে নিলো তাঈফ। সমস্বরে সে ও রাহিদ সুরে বেসুরে গাইতে লাগলো,
” পরাণ যায় জ্বলিয়া রে! ”
ফাহিম না চাইতেও ফিক করে হেসে উঠলো। আর না। এমপি সাহেব এমন ধৃষ্টতা আর সইতে পারলেন না। পাঞ্জাবির গুটানো স্লিভে হাত রাখতেই দু’জন দৌড়ে দুই প্রান্তে উড় গায়া। বোকা বনে গেল বেচারা ফাহিম। সে এভাবে একলা ফেঁসে গেল! দূর হতে এই অস্বাভাবিক-অদ্ভুদ দৃশ্য দেখতে পেল হৃদি। দূরত্বের জন্য বুঝলো না কিছুই। হচ্ছেটা কি ওখানে?
.
রাহিদ একাকী হাসতে হাসতে হেঁটে চলেছে। ইরু ভাইয়া পারেও বটে। ভালোবাসা সত্যিই বদলে দেয় একজনকে। নাহলে সামান্য কারণে ইরু ভাইয়া ঈর্ষান্বিত হয়ে সাপের মতো ফোঁস করবে! এটা তো তার স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ। হা হা হা। হেসে পকেট হতে মোবাইল বের করে স্ক্রল করতে লাগলো রাহিদ। তখনই..
চলবে.
[ এমপি সাহেবের রোমান্টিক অবতারে পাঠকদের ডায়াবেটিকস না হয়ে যায়। ইশ্! কি লজ্জা! ]