মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২৪ ( প্রথমাংশ )

0
744

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৪ ( প্রথমাংশ )

হৃদির অবনত মুখশ্রীতে লাজুকতার আভাস। সমতল আরশির মধ্য দিয়ে মুগ্ধ নয়নে তা অবলোকন করে চলেছে ইরহাম। বিগত কিছুদিনের দুশ্চিন্তা, গ্লানি, অস্থিরতা সব যেন এক লহমায় পলায়ন করেছে। এ মুহূর্তে ঘরজুড়ে শুধু অফুরন্ত প্রশান্তির বসবাস। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল মানুষটি। মুচকি হেসে বললো,

” চুপ হয়ে গেলে যে? বললে না তো.. ”

অসম্পূর্ণ রইলো বাক্য। কেননা প্রসঙ্গ বদলাতে দ্রুততার সহিত হৃদি প্রশ্ন করে বসলো,

” আপনি কি ডিনার করে এসেছেন? নাকি খাবার রেডি করবো? ”

বলে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে নেমে যেতে উদ্যত হলো মেয়েটি। তখনই গম্ভীর স্বরে এক ধমক,

” একদম নামবে না। ”

হকচকিয়ে গেল হৃদি। দু চোখে বিস্ময়! তাকিয়ে স্বামীর পানে। মানুষটি হঠাৎ গম্ভীর রূপ ধারণ করলো কেন? সে কি কোনো অন্যায় করে ফেলেছে! ধীরপায়ে ইরহাম সন্নিকটে এলো। বিছানা ছেড়ে স্বল্প নেমে আসা কোমল দু’টো পা ধরে বিছানায় উঠিয়ে দিলো। দেহে জড়িয়ে দিলো পাতলা কাঁথা। আদেশের সুরে বললো,

” ইয়্যু নিড রেস্ট। চুপটি করে বিশ্রাম নাও। আমি খেয়ে এসেছি। তিড়িংবিড়িং করতে হবে না। ”

তৎক্ষণাৎ মৃদু স্বরে আপত্তি জানালো হৃদি,

” আমি তিড়িংবিড়িং করি? ”

” তা নয়তো কি? বাড়িতে আসতে না আসতেই ফুল ফর্মে ফিরে এসেছো। ডক্টর কি বলেছে আর তুমি কি করছো? ”

আদুরে গলায় বললো হৃদি,

” আমি রেস্ট নিয়েছি। বেশি কিছু করিনি। বিশ্বাস করুন। ”

” করতে পারলাম না বলে স্যরি। ” ত্যাড়া জবাব।

হৃদি মুখ বাঁকালো। শুরু হয়েছে ‘ মাস্টার দ্য ইরু বেপ্পি ‘ এর মাস্টারি! হুহ্! ইরহাম ঠিক লক্ষ্য করলো বউ তার ক্ষে’পেছে। তবুও ভ্রুক্ষেপ করলো না। বরং কড়া স্বরে বললো,

” আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এক পা-ও যেন নিচে না নামে। ”

কাবার্ড থেকে পোশাক নিয়ে ইরহাম ওয়াশরুমে গেল। ঘরে রইলো একাকী হৃদি। বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আঁখিপল্লবেরা আদরে বুজে যেতে চাইছে। ডান হাতের উল্টো পিঠে ওষ্ঠাধর আড়াল করে হাই তুললো। আধশোয়া অবস্থা হতে সোজা হয়ে শুলো মেয়েটি। বালিশে এলিয়ে মাথা। ব্যস্ত দিনের শেষে জড়িয়ে আসছে অক্ষিপল্লব। বাঁ কাত হয়ে শুয়ে হৃদি। ধীরে ধীরে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব ঘিরে ফেললো তাকে। অতিবাহিত হলো কিছু মুহূর্ত। কিয়ৎক্ষণ বাদে অকস্মাৎ শিউরে উঠলো কায়া। শিহরিত তনুমন। পেশিবহুল দু হাতের অভেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ সে। তন্দ্রা ভাব লহমায় হারিয়ে গেল। ভালোলাগার সাত রঙা প্রজাপতি উড়াল দিলো মনের অরণ্যে। অতি সন্নিকটে মানুষটি। তার উদোম বক্ষপটে মিশে ওর কোমল কায়া। শক্তপোক্ত দু’টো হাত আবদ্ধ করে নিয়েছে কটিদেশ। কয়েক সহস্র মিনিট বাদে সে-ই চিরচেনা সান্নিধ্য। নাসিকা গ্ৰন্থিতে পৌঁছাচ্ছে মানুষটির নিজস্ব সুবাস। গাত্রে ছুঁয়ে তার শিহরণ জাগানো উষ্ণতা। আবেগী হৃদির চোখে অশ্রু জমলো। ভিজে গেল দু কপোল। অতি সন্নিকটে থাকায় প্রিয়তমার মনোভাব বুঝতে অসুবিধা হলো না ইরহামের। তার মনেও যে একই অনুভূতি খেলে বেড়াচ্ছে। প্রায় দশ-বারো দিন বাদে অর্ধাঙ্গীকে নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করা। এই কোমল, পবিত্র অনুভূতিটুকু অবর্ণনীয়। অত্যন্ত মধুময়, পবিত্র। হৃদয়ের অন্তরীক্ষে আজ কালো মেঘ সরে ঝলমলে রৌদ্র হেসে চলেছে। বুকের ভেতর চলমান অস্থিরতা-ভয় পালিয়েছে দূর দিগন্তে। আরেকটু শক্ত বাঁধনে নিজের সনে জড়িয়ে নিলো ইরহাম। মুখ লুকালো প্রিয়তমার ডান কাঁধে। সহসা ঘুরে শুলো হৃদি। পেলব দু হাতে আলিঙ্গন করলো তার একান্ত পুরুষ। স্বামীকে। প্রশস্ত উদোম বক্ষে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দ ক্রন্দনে ভেঙে পড়লো মেয়েটি। বাঁ হাতে খামচে ধরলো একান্ত পুরুষের বুকের ডান পাশ। লৌহ কঠিন হৃদয়ের অধিকারী মানুষটিও আজ আবেগতাড়িত। কালবিলম্ব না করে সঙ্গিনীকে জড়িয়ে নিলো নিজের সনে। দু’জনের চোখে অবিরাম শ্রাবণ ধারা। হৃদয়ে বিচ্ছেদ শেষে মিলনের সুরধ্বনি। একে অপরকে প্রগাঢ় রূপে আঁকড়ে ধরলো হৃ’হাম। যেন ঝড়ের শেষে এ-ই বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এক চিলতে আশার আলো। আবেগী দু’জন প্রিয়জনের সান্নিধ্যে সুখময় অশ্রু বিসর্জন দিলো। উষ্ণ পরশ ছুঁয়ে গেল একটুআধটু। একসময় তারা পাড়ি জমালো ঘুমের রাজ্যে।
.

মধ্যরাত তখন। ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে উঠলো ইনায়া। বিনা কারণে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। একসময় নিদ্রা ভঙ্গ হলো। বিরক্তিতে কুঁচকে গেল চোখমুখ। হাই তুলে সোজা হয়ে শুলো। অবেলায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন করবে টা কি? রাতদুপুরে নৃত্য করবে! বিরক্তিকর দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বামে। স্বামীর পানে। সহসা চাহনিতে পরিবর্তন এলো। রাহিদ সজাগ! এত রাতে মানুষটি জাগ্রত কেন? স্বামীর পানে কাত হয়ে শুলো ইনায়া। আঁধার মাঝেও দেখতে পেল স্বামীর চোখে অশ্রুজল। বিচলিত ইনায়া ডেকে উঠলো তাকে,

” অ্যাই তোমার কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? শুনছো? ”

ইনুর কণ্ঠে হুঁশ ফিরলো। দ্রুত হস্তে চোখের পানি মুছে নিলো রাহিদ। মুখে মিথ্যা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো। তাকালো স্ত্রীর পানে। দুষ্টুমির ছলে বললো,

” রাতদুপুরে বিল্লি হয়ে আউলাঝাউলা দেখছিস? কোন সুখে কাঁদবো রে? একদম উল্টোপাল্টা অভিযোগ করবি না। জানিস না পুরুষ মানুষের কাঁদতে মানা? ”

দুষ্টুমিতে মোটেও প্রসঙ্গ বদল হলো না। বরং আধশোয়া হয়ে বসলো ইনায়া। স্বামীর গালে লেপ্টে থাকা সরু অশ্রুরেখা আলতো স্পর্শে মুছে দিলো। শিউরে উঠলো রাহিদ। মুখ ফিরিয়ে নিলো। চোখের জল দেখাতে অনিচ্ছুক সে। তবুও ধরা পড়ে গেল। ইনায়া স্বামীর দু গালে হাত রেখে মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। কোমল স্বরে শুধালো,

” মায়ের জন্য মন কেমন করছে? ”

অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আকস্মিক কেমন শিশুর ন্যায় ক্রন্দনে ভেঙে পড়লো ছেলেটা। বিচলিত ইনায়ার বুক কেঁপে উঠলো। এ কি দৃশ্য দেখছে সে! তার রাহি কাঁদছে! দু’চোখে বর্ষণ। কেঁপে কেঁপে উঠছে ওষ্ঠাধর। আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে মুখে। কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী কন্যা আর সইতে পারলো না। কোনোরূপ ভাবনা বিহীন স্বামীকে কাছে টেনে নিলো ইনু। অর্ধাঙ্গীর বুকে মিললো ঠাঁই। পুরুষালি দু হাতের আলিঙ্গনে আবদ্ধ কটিদেশ। ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে রাহিদ। ইনায়া স্বামীর মাথায় এক হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরেক হাত আদর করে চলেছে পৃষ্ঠদেশে। নিজের চোখেও অশ্রু কণা। তার স্বামী কাঁদছে কেন? বুকের ভেতর খুব বেশিই জ্বা’লাপো’ড়া করছে? কষ্ট হচ্ছে! কেন কাঁদছে সে! এ মানুষটির আবেগী রূপ যে অভাবনীয়। অকল্পনীয়। তেমনভাবে কখনো দেখেনি সে। আজ প্রথমবারের মতো এই রূপ দর্শন। কিছুক্ষণ আবেগতাড়িত মুহূর্ত অতিবাহিত হলো। একটুখানি ধাতস্থ হয়ে সরে গেল রাহিদ। মাথা এলিয়ে দিলো বালিশে। ইনায়া আরেকটু সন্নিকটে এলো। পেলব দু হাতে মুছে দিলো চোখের পানি। প্রথমবারের মতো অভাবনীয় এক কাণ্ড করে বসলো। স্বামীর ললাটে চুমু এঁকে দিলো মেয়েটি। অপ্রত্যাশিত আদুরে পরশে কম্পিত হলো চিত্ত। রাহিদ তাকালো স্ত্রীর পানে। নয়নে মিলিত হলো নয়ন। স্বামীকে শান্ত হবার জন্য সময় দিলো ইনু। আস্তে ধীরে শান্ত হলো রাহিদ। স্ত্রীর হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। স্বামীর চওড়া বুকে মিললো ঠাঁই। চুপটি করে শুয়ে ইনায়া। শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাচ্ছে হৃদস্পন্দনের ধুকপুক ধুকপুক ধ্বনি। আনমনে বলে চলেছে রাহিদ,

” মায়ের জীবনটা এত কষ্টের হলো কেন? একটুখানি সুখ কি আমার মা ডিজার্ভ করে না? হ্যাঁ রে ইনু? ওই লোকটা আমার মায়ের জীবনে কেন এলো? কেন ভালোবাসা নামক সর্বগ্রাসী জালে আমার মা’কে ফাঁ:সালো? আমার মা তো ভালো ছিল। সুখে ছিল। ওই লোকটার আগমনে সব শেষ হয়ে গেল। সব। আপনজন হারালো মা। সবাইকে ছেড়ে ওই নির্দয় লোকটার হাত বেছে নিলো। বিনিময়ে পেল কি? দুঃখ কষ্ট আর বিশ্বাসঘা:তকতা। মায়ের জীবনটা পুরো শেষ হয়ে গেল। এক নারীর জীবনে তার স্বামীর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আপন জানিস? সেই স্বামী যখন হৃদয়ের কাঠগড়ায় আসামি হয়… সেই কষ্টটা! বলার মতো নয়। বড় যন্ত্রণাদায়ক! ”

ইনায়া নিঃশব্দে স্বামীর বুকে শুয়ে। শুনে চলেছে তার দুঃখ ভারাক্রান্ত শব্দমালা,

” মা’কে আমি কতবার বলেছি। ইরু ভাইয়া বলেছে। মা শুনলো না। অন্ধবিশ্বাস করে গেল। একবার না দুইবার না শতবার ওই লোকটাকে বিশ্বাস করলো। শুধরে যাওয়ার সুযোগ দিল। কি পেল বিনিময়ে? র-ক্তাক্ত প্রতিদান। হাহ্! অনেক হয়েছে আর না। চোখের সামনে আমি আমার জন্মদাত্রী মা’কে র-ক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় দেখেছি। তাকে এই দুই হাতে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছি। প্রথমবারের মতো মা’কে হারানোর ভয়ে বুক কেঁপেছে। ফালাফালা হয়েছে ভেতরটা। আর না। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছি ওই লোকটার কাছে। মা সাইন করে দিয়েছে। অশ্রুসজল চোখে একদিন সাইন করে ওই লোকটার সাথে জড়িয়েছিল। জীবনের এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে আরেকটি সাইন করে তার থেকে মুক্তি চাইছে। জীবনটা বড় বৈচিত্র্যময় তাই না রে? মা কখনো ভেবেছিল একদিন এমন কষ্টদায়ক মুহূর্ত দেখতে হবে? সইতে হবে? ভাবেনি। তাকদীরে ছিল রে। তাই তো আজ মায়ের এই দুর্দশা। আমি ছেলে হয়েও ব্যর্থ। কিচ্ছুটি করতে পারলাম না। কিচ্ছু না। ”

শেষের কথাটিতে সহমত পোষণ করতে পারলো না ইনায়া। স্বামীর বুকে হাত বুলাতে বুলাতে কোমল কণ্ঠে বললো,

” তুমি ভুল ভাবছো। মামীর গর্ব তুমি। তুমি একা নও। তোমরা দুই ভাই-বোন ই তার গর্ব। সুখের ফোয়ারা। তোমাদের মুখ চেয়েই মামী অনেকসময় অনেক কিছু সহ্য করেছে। কাউকে জানতে দেয়নি। বুঝতে দেয়নি। কাকেই বা বলবে? আপনজন তো থেকেও নেই। তারা যে ত্যাজ্য করেছে। কোথায় যাবে সে? তার স্ত্রী সত্তা তাকে বাঁধা দিয়েছে বারবার। মাতৃ সত্তা শাসন করেছে। ফলস্বরূপ আজ এই দিন দেখতে হচ্ছে। দুঃখ পেয়ো না গো। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার আমাদের আগামী নিয়ে ভাবতে হবে। অনেক তো হলো। ইনশাআল্লাহ্ এখন থেকে মা আর কাঁদবে না। দুঃখের অশ্রু নয় সুখের অশ্রু বিসর্জন দেবে সে। বলো আমরা সেটা নিশ্চিত করতে পারবো না? পারবো না মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে? বলো? ”

অর্ধাঙ্গীকে বুকে মিশিয়ে নিলো রাহিদ। চুলে মুখ গুঁজে অস্ফুট স্বরে ইতিবাচক সম্মতি জানালো,

” পারবো। পারতেই হবে। আবার হাসবে মা। ”

অশ্রুভেজা কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস। ইনায়াও তার রাহিকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো। দু’জনের অন্তরে বিশ্বাস,

‘ আবার হাসবে মা। ইনশাআল্লাহ্। ‘

সময়ের চক্রাকার ঘূর্ণিতে অতিবাহিত হলো বেশ কিছুদিন। বন্দী জীবন হতে মিললো মুক্তি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো হৃদি। তা সহজ ছিল না বটে। শত্রুদের প্ররোচনায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল মিথ্যে গুজব ‘হৃদি পালিয়েছে তার দেহরক্ষীর সঙ্গে। ‘ আমাদের সমাজে আজও কিছু মানুষ বসবাস করে। যারা সত্য মিথ্যা বাছবিচার বিনা মিথ্যা শব্দমালা বিশ্বাস করে নেয়। ভুলভাল অপবাদ দেয়। তেমনই কিছু মানুষের বাক্যবাণে বি দ্ধ হতে হয়েছে হৃদি’কে। তাকে মানসিকভাবে বিধ্ব-স্ত করতে লেগে পড়েছিল লোকগুলো। তন্মধ্যে পাড়া প্রতিবেশী, ভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থী অন্যতম। জমিলা বানুও বাদ যাননি। অবিরাম কটূক্তি করে যাচ্ছিলেন। যার ফলাফল পেলেন এক সন্ধ্যায়…
_

সান্ধ্যকালীন প্রহর। মাগরিবের সালাত আদায় করে লিভিংরুমে একত্রিত হয়েছে পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার বিধায় এজাজ সাহেব বাড়িতে। ইরহাম কিয়ৎক্ষণ পূর্বে ফিরেছে। লিভিংরুমে নারী সদস্যরা উপস্থিত। হৃদি মা ও দাদির হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলো। ওনারা বিনিময়ে মুচকি হাসি উপহার দিলেন। হৃদিও মুচকি হাসলো। চায়ের কাপ হাতে তাকালো জমিলা বানুর পানে। মনটা কেমন করে উঠলো। এই বৃদ্ধা নারী ওকে মোটেও পছন্দ করে না। সুযোগ পেলেই কটুবাক্য শুনিয়ে দেয়। সম্মান প্রদর্শনের জন্য হৃদি চুপ থাকে। কয়েকদিনের অতিথি। সময় হলে চলে যাবেন। অহেতুক সম্পর্কে বিরূপতা আনার প্রয়োজন নেই। তবুও অবাধ্য মনে কালো মেঘ জমে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হৃদি এগিয়ে গেল। চায়ের কাপ বাড়িয়ে বললো,

” দাদি আপনার চা। ”

সোফায় বসে সুপারি কাটছিলেন জমিলা বানু। অপছন্দের মেয়েটার কণ্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকালেন। এমন দৃষ্টিতে তাকালেন যেন চোখের চাহনিতেই ভ’স্ম করে দেবেন। হৃদি দ্বিধান্বিত চোখে তাকিয়ে। ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না। কাপ কি ফিরিয়ে নেবে!

” বেশরম মাইয়া! লজ্জা শরম নাই তোমার? কোন সাহসে ওই অপবিত্র হাত দিয়া আমারে চা দাও? হুঁ? আমি তোমার থে চা চাইছি? চুপ কইরা আছো ক্যা? চা চাইছি আমি? ”

মালিহা ও রাজেদা খানম হতবাক! ইনি আবার শুরু করেছে! এমনিতেই বাড়িতে ইরহাম উপস্থিত। হৃদি আমতা আমতা করে কিছু বলার পূর্বেই বদলে গেল পরিবেশ। কর্ণপাত হলো ভারিক্কি গম্ভীর কণ্ঠস্বর,

” আমার স্ত্রীকে অপবিত্র বলছেন কোন সাহসে? ওর পিউরিটি সার্টিফিকেট দেয়ার আপনি কে? ”

থমকে গেল পরিবেশ। সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো সিঁড়ি বরাবর। সিঁড়ির ধারে দাঁড়িয়ে গোমড়ামুখো মানুষটি। থমথমে মুখশ্রী। পড়নে ঘরের পোশাক। ধূসর রঙা টি-শার্ট ও ট্রাউজার। মালিহা ও রাজেদা খানম সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। হৃদি দ্রুত টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রেখে দিলো। স্বামীকে কিছু বলার পূর্বেই শুনতে পেল জমিলা বানু ব্যাঙ্গ করে বলে উঠেছেন,

” বাহ্! তোমার বউ অপবিত্র হইতে পারে আর মাইনষে হেইডা কইতে পারবে না? ”

বৃদ্ধা মহিলা খোঁচা মে রে বললেন। একেবারে জায়গামতো আঘাত করেছেন উনি। এবার কি বলবে ইরহাম? মিটিমিটি হেসে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন জমিলা বানু। বক্র হাসি ফুটে উঠলো মানুষটির অধরকোণে। ধীরপায়ে এগিয়ে গেল। মুখোমুখি দাদি-নাতি। তার পানে স্বল্প ঝুঁকে গেল ইরহাম। চোখে চোখ রেখে বক্র হেসে টেনে টেনে বললো,

” আমার বউ পবিত্র আছে না অপবিত্র সেটা আমার চেয়ে ভালো কে জানবে দাদিজি? ”

চরমভাবে বোকাবনে গেলেন বৃদ্ধা নারী। বেশরমের মতো এসব কি বলছে ছেলেটা!

” ছিঃ ছিঃ ছিঃ! লাজ শরমের মাথা খাইছো নি? নির্লজ্জ পোলা কোথাকার। ”

সোজা হয়ে দাঁড়ালো ইরহাম। গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো,

” এ বাড়িতে কম তো কটূক্তি করলেন না। এবার ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। বিপদের সময় এসেছেন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের অনে-ক উপকার করেছেন। আশা করি এরকম উপকার দ্বিতীয়বার আর দরকার পড়বে না। টিকিট কেটেছি। আগামীকাল রাতের বাস। তৈরি হয়ে থাকবেন। ”

কাট-কাট কণ্ঠে বলা প্রতিটি শব্দ ওনার কর্ণ গহ্বরে ধাক্কা দিলো। বাকশূন্য হয়ে পড়লেন জমিলা বানু। আজ অবধি কোনো আত্মীয় ওনায় মুখের ওপর এভাবে অপমান করেনি। শেষে দু’দিনের এই ছোকড়া কিনা..! ইরহাম স্মরণ করিয়ে দিলো,

” আগামীকালের টিকিট। সময়মতো ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে ফেলবেন। ”

আর দাঁড়ালো না ইরহাম। অসন্তুষ্ট চাহনিতে তাকালো স্ত্রীর পানে। হৃদি করুণ চোখে তাকিয়ে। কিইবা করতো সে! বয়স্কা নারীর পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতো! স্বামী নামক মানুষটি তা বুঝলে তো। সিঁড়িতে দণ্ডায়মান বাবার পাশ কাটিয়ে দোতলায় চলে গেল ইরহাম। জমিলা বানু খিটখিটে মেজাজের সহিত অতিথি কক্ষের দিকে অগ্রসর হলেন। আর থাকবেন না এই বাড়িতে। অনেক অপমান সহ্য করেছেন। আর না। কালই চলে যাবেন।

চলবে.

[ কেমন লাগলো পর্বটি? দুই জুটির আবেগী মুহূর্ত একই পর্বে 💘 ]

♣️ আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা….

তাহিরাহ্ ইরাজ এর লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে পোস্ট করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে।

গ্রুপ লিংক 🍁

https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here