সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #রাজনীতি +রোমান্টিক #পর্ব:৪

0
719

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি +রোমান্টিক
#পর্ব:৪
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

—-মানুষের সমাগম ধীরে ধীরে কমে আসছে, প্রত্যেকটি মানুষের মুখে হাসি।মানুষের পদচারণার আওয়াজ আনজারার কর্ণগোচর হলেও তার আপাতত সেদিকে কোন ধ্যান নেই।

স্বর্ণভা বারবার তার ছোট্ট কোমল হাত দিয়ে আনজারার আঙুল ঝাঁকিয়ে বলছে,
~আন্টি বসো বাবাই খুব সুন্দর করে তোমার চুলে বিনুনি গেঁথে দিবে। তোমাকে দেখতে একদম আমার মতো পরী লাগবে।বাবাই বলে, আমাকে বিনুনি করলে একদম পরীর মতো সুন্দর লাগে।তোমাকেও পরীর মতো সুন্দর লাগবে।

আনজারার কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। তার, সম্মুখে দন্ডায়মান গম্ভীর পুরুষটি নির্লিপ্ত। আনজারা আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোন মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে কিনা।এত এত মানুষ কে তাকিয়ে আছে, তা কি সহজে বুঝা যায় ।তেমনি,আনজারাও বুঝতে পারছেনা।আর মানুষ তাকিয়ে থাকলেই বা কি সে কি এখানে নাদমানের উপর ঢলে পড়ছে। আনজারা মনে মনে ভাবছে এরকম পরিস্থিতিতে পড়বে জানলে, সে কস্মিনকালেও স্বর্ণভাকে বলত না বিনুনির কথা।স্বর্ণভারি-ই বা কি দোষ এতটুকু বাচ্চা কি আর এতকিছু বুঝতে পারে।তাকে,যা বলা হয়েছে সে-তো তাই করছে।আনজারাকে বারবার ডাকার পরেও যখন স্বর্ণভা তার কোন সাড়া পেলনা।

তখন,সে দৌড়ে নাদমানের নিকট গেল,
~বাবাই,দাওনা আন্টিকে আমার মতো বিনুনি করে।

নাদমান মেয়েকে কোলে তোলে নিল।

স্বর্ণভার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
~মামুনি তোমার আন্টির চুল দিয়ে বিনুনি কেন,ঝুঁটিও করা যাবে না।তোমার আন্টির চুল অনেক ছোট। আন্টি তার বড় বড় চুল গুলো কে**টে একদম ছোট করে ফেলেছে।

নাদমান তার কথা শেষ করার সাথে সাথেই স্বর্ণভা, আনজারার দিকে তাকাল।কিন্তু, আনজারার মাথায় হিজাব থাকার কারণে স্বর্ণভা তার চুল দেখতে ব্যর্থ হল।
আনজারা হত*ভম্ব। নাদমানের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল,তার চুল নিয়ে লোকটি কি তাকে অপমান করল?
না,স্বর্ণভাকে শান্ত করার জন্য এরকমটা বলল?কিন্তু, সে-তো সত্যিই বড় বড় চুলগুলো কেটে ছোট করে ফেলে।

চোখের চশমা টি-শার্ট দিয়ে মুছতে মুছতে তামিম এসে নাদমানের নিকট দাঁড়িয়ে বলল,
~ভাই, আপনাকে কবির আংকেল ডাকছেন।

নাদমান, স্বর্ণভাকে, তামিমের কোলে দিয়ে বলল,
~আমি আসছি তুমি মামনিকে নিয়ে যাও।

তামিম আর কোন বাক্য ব্যয় না করে স্থান ত্যাগ করল।যাওয়ার সময় ঠিকই আনজারাকে আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করতে ভুলল না।

আনজারার চুলকে নিয়ে নাদমানের এহেন মন্তব্য তার পছন্দ হলো না।

স্থান, কাল ভুলে নাদমানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
~আমার চুল নিয়ে কটু কথা বলার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে?আপনি জানেন আমার চুল ছোট?

নাদমান পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করে। ভ্রু উপর, নিচ করে বলল,
~সন্দেহ আছে?

নাদমানের মুখে এই দুই শব্দের কথা শুনে,সে আবারও নাদমানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে, তার আগেই নাদমান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
~আপনার ল*জ্জা হওয়া উচিত আনজারা মাহমুদ। এক বাচ্চার বাবার দিকে বারবার ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছেন।আপনার ঐ কু*দৃষ্টিতে আমার মতো অ*সহায় এমপির নিঃশ্বা*স ব*ন্ধ হয়ে আসছে।

নাদমান তার কথা শেষ করে, স্থান ত্যাগ করল।আনজারা বিস্ময়কর দৃ*ষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্থান ত্যাগকারী ব্যাক্তিটির দিকে। আনজারা ফুঁ*সে উঠে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,অ*সভ্য এমপি তার বলা কথা তাকেই চারবছর পরে ফেরত দিল। একদিনে এত অপ*মানিত সে আর কখনোই হয়নি।দূর থেকে লোক সমাগমের মাঝেই, একজোড়া চোখ তাদের পর্যবেক্ষণ করল।ক্রোধানলে কম্পিত হল পুরো শ*রীর। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কোথাও একটা কল দিয়ে স্থান ত্যাগ করল লোকটি।
****
—সরকারের পক্ষ থেকে বেশ মোটা অংকের একটা এমাউন্ট ট্রান্সফার হয়েছে, নাদমান সাইক তালুকদার এর একাউন্টে।জনগণের সকল সমস্যা দুরিকরণ,তাদের সকল সমস্যা মাথায় রেখে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেসব কাজ করা হবে।রাস্তাঘাট,সরকারি হসপিটাল,স্বাস্থ্যকেন্দ্র সকল প্রকল্পে উন্নয়নের ছোঁয়া কিভাবে করবে সেটা নিয়েই মিটিং করছে দলের লোকদের সাথে নাদমান। মিটিং শেষ করে ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে চেয়ারে বসতেই, তামিম দরজায় নক করে ভেতরে প্রবেশ করল,
~ভাই, সুয়ারেজ সিকদার এসেছে।

~নাদমান কিছু একটা ভেবে তামিমকে বলল।

সুয়ারেজকে ভেতরে পাঠাতে।
মুখোমুখি বসে আছে সুয়ারেজ আর নাদমান। সুয়ারেজ পায়ের উপর পা তুলল।

নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~এমপি সাহেবের একাউন্টের এত টাকা কি ব্যাংকের সৌন্দর্যই বর্ধন করবে?নাকি জনগণের সাহায্যের কাজে লাগবে?

নাদমান হাসল।এই,এক ব্যাক্তির সম্মুখে গুরুগম্ভীর নাদমান না হেসে থাকতে পারে না।নাদমান টেবিলের উপর থেকে পেপারওয়েট হাতে নিয়ে ঐটার দিকে এক চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে রইল।সুয়ারেজ এর কথার উত্তর দেওয়ার তার কোন তাড়া নেই।
সুয়ারেজ সিকদার অপমান বোধ করল।রাগা*ন্বিত চেহারায় চেয়ারের হাতল চেপে ধরল।

নাদমান,, সুয়ারেজের রাগ বুঝতে পেরে বলল,
~তোকে আমি ঐ টাকা থেকে একটা কটনক্যান্ডি কিনে দিব, তবুও কান্নাকাটি করিস না।ঐটা জনগণের হক,
ঐটার দিকে নজর দিস না।আর,তোর যদি একান্তই ঐ টাকার প্রতি লোভ হয় তাহলে, চিন্তা করিস না আমার মেয়ের মাটির ব্যাংকে বেশ কয়েকটা কয়েন জমা হয়েছে। সেখান থেকে লুকিয়ে কিছু টাকা দিব।এখন, বিদায় হ বিরক্ত করিস না।

সুয়ারেজ রাগান্বিত স্বরে বলল,
~মুখ সামলে কথা বল। আমাকে তোর ভিখারি মনে হয়?যে তোর টাকার দিকে নজর দিব।

~তাহলে,টাকা দিয়ে কি করব?সেটা জানার তোর এত আগ্রহ কেন?

সুয়ারেজ চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়াল। নাদমানের দিকে তাকিয়ে চেয়ারে একটা লা*থি দিয়ে হুড়মুড় করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল। নাদমান মুখ গোল করে নিঃশ্বাস নিল।
*******
রাতের খাবার শেষ করে নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আনজারা। বারান্দা থেকে রাতের আকাশ দেখতে তার বেশ ভালো লাগে।মৃদু বাতাসে আনজারার ছোট ছোট চুলগুলো বারবার মুখের উপর এসে পড়ছে।চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিতেই, হুট করে আনজারার, চুল নিয়ে নাদমানের ঐ দিনের কথাগুলো মনে পড়ল।আনজারা ধীরপায়ে বারান্দা থেকে রুমে আসল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল নাদমানের সাথে দীর্ঘ চারবছর পর তার দেখা হয়েছে। ঐদিন সরাসরি দেখা হলেও তার মাথায় হিজাব ছিল। তাহলে,তার মাথার চুল ছোট নাদমান জানল কিভাবে?

আনজারা মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~এই লোক কি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ল?
পরক্ষণে, আনজারা নিজেকে নিজেই শাঁসাল। সে কেন অবুঝ বাচ্চাদের মতো এই সামান্য বিষয় নিয়ে ভাবছে।

*******
সুয়ারেজ সিকদার এর পার্টি অফিস থেকে কিছুটা দূরে,এক চায়ের দোকানের সামনে দলের ছেলেদের নিয়ে রাফান আড্ডা দিচ্ছে। রোগা, পাতলা, কৃষ্ণবর্ণের পুরুষটি কালচে ঠোঁ*টে সিগা*রেট রেখে একের পর এক টান দিয়ে মুখ গোল করে নাক,মুখ দিয়ে গলগল করে ধোঁ*য়া বের করছে। দূর থেকে যে, কেউ দেখলে ভাববে ছেলেটি বেশকিছুদিন যাবৎ অর্ধ অনাহারে আছে।কেউ-তো আর এটা জানেনা সকাল থেকে এই পর্যন্ত তার পেটে কত খাবার প্রবেশ করেছে। আশেপাশের ছেলেরা এই বিকালের সময়টাকে পুঁজি করে চা,সিগারেট খাচ্ছে।পুরো বেঞ্চ দখল করে তারা বসে আছে। নাদমান সাইক তালুকদার এর পার্টি অফিস এই জায়গা থেকে বেশি দূরে না।অফিস থেকে তামিম বের হয়েছে বিকালের হাওয়া গায়ে লাগানোর জন্য। চোখের চশমাটা শার্টের কোণায় মুছে চোখে পড়বে,সেই সময়টাই রাফান সিগা*রেটের শেষ অংশটুকু ছুঁড়ে ফেলল।আর,যা গিয়ে পড়ল তামিমের গুপ্ত*স্থানের উপর। বেচারা ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেল,যদিও পরনে জিন্স প্যান্ট ছিল।আর সিগা*রেট এ আগু*নের ফুলকিও ছিল না।আর রাফান না দেখেই সিগারে*ট এর টুকরো ফেলেছিল।আর, এটা যে কাকতালীয় ভাবে তামিম এর ঐ স্থানে পড়বে কে জানত?
রাফান ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।

তামিম রা*গান্বিত মুখশ্রীতে রাফানের দিকে তেড়ে গেল।
~রাফাইন্না তুই এটা কি করলি?তোর গালে কা*মড় দিয়েছিলাম সেই কবে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার ইম্পর্ট্যান্ট সম্পদ জ্বা*লিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছিস।

আশেপাশের ছেলেগুলো তাকিয়ে আছে।আজ যে এখানে তৃতীয় বিশ্ব যু*দ্ধ হবে তারা সকলেই টের পেয়েছে ইতিমধ্যে। রাফান বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়াল।

শার্টের কলার ঠিক করে,হাতা ফোল্ড করে বলল,
~ভটকা চুপ কর।

~বেশ করেছি জ্বা*লিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছি।প্রয়োজনে তোকেও জ্বা*লিয়ে দেব।

রাফানের মুখে ভ*টকা সম্বোধন শোনে তামিম নিজের শরীরের দিকে তাকাল।সে একটু গুলুমুলু কিন্তু তাই বলে রাফান ওকে ভটকা বলবে এটাতো, একপ্রকার বডিশেমিং।
এক-তো
রাফান অ*ন্যায় করেছে। আবার, তাকে বটকা বলে সম্বোধন করার জন্য তামিম হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল।নিজের ছোট ছোট নখগুলো দিয়ে রাফানের গালে আঁ*চড় দিল।রাফান ও বা কম কিসে এই রোগা,পাতলা শরীর নিয়েই তামিমের উপর হাম*লে পড়ল।মারামারির একপর্যায়ে টাল সামলাতে না পেরে দুজনেই মাটিতে গড়াগড়ি করে মারা*মারি শুরু করল।
নাদমান, সুয়ারেজ উভয়কেই দলের একটি ছেলে ফোন করে ঘটনা খুলে বলল।কয়েক মিনিট সময় নিয়ে দু’জনেই আসল ঘটনা স্থলে।এসে দুজনের মারামারি থামাল।
******
নিস্তব্ধ রজনী নাদমানের কালো রংয়ের মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়িটির ব্রেক কষল, তালুকদার বাড়ির মেইন গেইটে সম্মুখে। দারোয়ান গেইট খুলে দিলে গাড়িটি ভেতরে প্রবেশ করল। গাড়ির ভেতর থেকে নাদমান সহ দুইজন বডিগার্ড নেমে আসল।ড্রাইভার এর পাশ থেকে তামিম নেমে এসে নাদমানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল।বডিগার্ড দুজন নাদমান থেকে বিদায় নিয়ে, গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হল।

তামিম হাসি হাসি মুখে নাদমানকে বলল,
~ভাই, নয়ন আংকেল কিছু বলবে না। আমি এখানে থাকলে?

নাদমান গম্ভীর চোখে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
`~আজ পর্যন্ত তুই উনার কোন কথা কানে প্রবেশ করিয়েছিস?
তামিম মাথা চুলকিয়ে বলল,
~না,ভাই।
চলবে——
( নোটবার্তা :সূচনা পর্বে ভুলে লিখেছিলাম সাভার ১৯ নং আসনের সংসদ সদস্য নাদমান। এডিট করে দিয়েছি ঢাকা ১৯ আসন হবে।
বেশি বেশি কমেন্ট, রিয়েক্ট করে আমাকে উৎসাহ দিবেন দয়া করে। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে মন্তব্য করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here