খুব করে চাই তোকে – সূচনা পর্ব – লিজা

0
1115

পা টিপে আলতো করে থপথপিয়ে হাঁটছি আমি। এক হাতে শাড়ির কুচি মুঠোয় নিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি।আর বিরবির করে বেসুরা কন্ঠে বলে চলেছি শাড়ি আর পরবো না আমি।কিছুতেই না।আচমকা হৃদ ভাইয়ার আগমন।লজ্জায় আমি শেষ।এই অবস্থায় আমাকে দেখলে বলবে একটা শাড়িও ঠিক ভাবে পরতে পারি না।আসে পাশে সুন্দরী কোনো মেয়ে থাকলে তাদের দেখিয়ে বলবে কিছু শিঁখতে।আমি চোখদুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।এক পা দু পা করে পেছনে সরতে লাগলাম।হঠাৎ আমার মনে হলো কারও সাথে ধাক্কা খেয়েছি।চোখ খুলতেই মায়ের বকুনি শুরু।আমার সাথে ধাক্কা লেগে গায়ের হলুদের বাটিটা নিচে পরে গিয়েছে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি এখন আমার দিকে।দু’চোখের দৃষ্টি থেকে বাঁচতে চেয়েছিলাম।এখন কত্ত কত্ত চোখ আমাকে দেখছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।হৃদ ভাইয়া তো বেশ মজা পাচ্ছে মনে হচ্ছে।আমার এখন কান্না পাচ্ছে। মুখটিপে ছুটে রুমে চলে আসলাম।একটানে শাড়িটা খুলে ফেলে আলমারি থেকে একটা লেহেঙ্গা বের করলাম। বিছানার উপরে লেহেঙ্গাটা এলিয়ে দিয়ে বসে রইলাম আমি।

হৃদ ভাইয়ার কন্ঠ স্বর।কত্ত মিস্টি করে আদুরে গলায় ডাকে আমাকে।অথচ সামনে আসলেই মুখ থেকে যেন বোমা ফাটে।আমার নাম ধরে ডেকে উঠে মুহূর্তের মধ্যে যেন রুমের মধ্যে চলে আসলো।তার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম।আমার দিকে এক অপলক চোখে তাকিয়ে আছে হৃদ ভাইয়া।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলো,

—“ব্লাউজ আর পেটিকোট পরেই বসে থাকবি নাকি? ওদিকে যে গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।সেই খবর আছে?”

আমি মনে মনে বলছি,

—“ছিঃ একটুও লজ্জা নেই এই মানুষটার।মেয়েদের যে প্রাইভেসি থাকতে হয় সেটুকুও জানে না।দুম করে যখন তখন রুমের মধ্যে ঢুকে পরে।”

আমি মুখে কিছু না বলেই মুখটা গোমড়া করে উল্টো ঘুরে বসে রইলাম।আচমকা আমাকে টেনে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

—“তুই কি আমাকে পাত্তা দিচ্ছিস না? আমি তোকে ডাকতে এসেছি আর তুই আমাকে ইগনোর করছিস?”

আমি মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে না অর্থ বোঝালাম।হৃদ ভাইয়া মৃদু হেসে বলল আমাকে,

—“নূরের বিয়েটা হতে দে তারপর তোর পালা।আচ্ছা ফুল তুই আমাকে বিয়ে করবি?”

কথাটা শুনে মনের মধ্যে এক অজানা অনুভুতি এসে দোল খেয়ে গেলো। বুকের ভেতরে অস্থিরতা এসে হানা দিলো। কিছু মুহূর্ত অতিক্রম হতেই উচ্চ স্বরে হেসে উঠে বলল,

—“তোকে বিয়ে করলে আমার জীবন শেষ। যে তোকে বিয়ে করবে সারা জীবন ছোট্ট বাচ্চার মতো তোকে পালবে সে।না জানি বেচারার কপালে কি আছে।”

আমি একরাশ অভিমান নিয়ে হৃদ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“হৃদ ভাইয়া, আমাকে কি তুমি এতোটাই ছোট মনে করো?”

হৃদ ভাইয়া আড় চোখে আমার দিকে তাকালো।ঠোঁট কামড়ে, ভ্রু কুঁচকে আমার তাকানোর ভঙ্গি দেখছে।আমি নিজের চোখদুটো নিচে নামিয়ে নিলাম। হৃদ ভাইয়া ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

—“যেই বিয়ের কথা শুনেছিস সেই নিজেকে খুব বড় মনে হচ্ছে? রান্না করতে জানিস তুই? কাপড় কাচতে জানিস? আর বাসন মাজতে?”

আমি চুপ হয়ে আছি।আমাকে বিছানা থেকে নেমে দাড়াতে বলল।আমি মাথা নাড়িয়ে না অর্থ বোঝালে আমাকে ধমক দিয়ে বলল,

—“বড়দের কথাও শুনিস না।একদম অভদ্র হয়ে জাচ্ছিস।”

কথাটা শুনেই আমি দুম করে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম। বুকে দু হাত আকড়ে ধরে মুখটা ডান কাঁধের দিকটায় ঘুরিয়ে রেখেছি।আড় চোখে দেখছি হৃদ ভাইয়া শাড়িটা উঠালো।খুব যত্ন করে আর্ট করে শাড়িটা পড়িয়ে দিলো।আয়নার সামনে ঘুরিয়ে নিয়ে আমাকে বলল,

—“দেখ ফুল, আমি ছেলে হয়েও শাড়ি পড়াতে পারি।তুই মেয়ে হয়েও যেটা পারিস না।তবে চিন্তা করিস না তোর বিয়ের আগে কিছু না পারি এটা অবশ্য শিখিয়ে দেবো।”

_________

নূর আপুর হবু বরের বাড়ি থেকে একদল লোকজন এসেছে। মেঘ স্যারের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ নিয়ে। আপুর পাশে এসে বসলাম আমি।দেখতে পেলাম হৃদ ভাইয়া মেহমান আপ্পায়ন করছে।মেঘ স্যারের দুই কাজিন মিনি আর নিশি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।হৃদ ভাইয়ের উপর ওরা সেই লেভেলের ক্রাশ।হৃদ ভাইয়াকে আড়ালে ওরা ডাক্তার মহাশয় বলেই ডাকে।ক্লাসে যখন হৃদ ভাইয়া একজনকে বকে অন্যজন সেই লেভেলের খুশি হয়।কারণ যে বকা খাই সেইদিন সে ট্রিট দেয়।আমি সবদিক থেকেই ট্রিট পাই।তবে বকা একটু বেশি আমিই খাই।আমাকে বকা দেওয়ার, শাসন করার কোনো অজুহাত ছাড়ে না হৃদ ভাইয়া।

মিনি আর নিশির চোখের পলক যেন সরছে না হৃদ ভাইয়ার উপর থেকে।এখানে উপস্থিত এতো সুদর্শণ ছেলে থাকতে হৃদ ভাইয়াকে দেখেই ওদের আঁখিদ্বয়ের পিপাসা মেটাতে হচ্ছে? ওদেরকে ভীর ঠেলে কোণায় টেনে নিয়ে বললাম আমি,

—“এখানে আমার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেক সুদর্শণ ছেলে আছে।কাকে চাই বল? এই যাবো আর তুরি বাজিয়ে তোদের সামনে এনে দাড় করাবো।এমন যাদু করবো না, তোদের প্রেমে হাবুডুবু হাবুডুবু খাবে।”

ওরা আমাকে একটা চেয়ারে বসালো।দু’জন দু’কাঁধে এক হাতের ভার দিয়ে একটু নিচু হয়ে কানের কাছে এসে বলল,

—“তোর কাজিন।ওই ডাক্তার মহাশয়।”

উঠে দাড়ালাম আমি।ওদের দিকে মুখটা মলিন করে বললাম,

—“জানিস তো আমি হৃদ ভাইয়াকে কত ভয় পাই।আচ্ছা একটা কাজ কর তোরা।আজ সুযোগ নে।ইচ্ছা মতো মজা নে।বিয়ে বাড়ি বলে কথা।আর তোরা ছেলেপক্ষের কাজিন।হৃদ ভাইয়া নূর আপুর কাজিন।তাহলে সম্পর্ক কি দাড়লো তোদের মধ্যে বেয়াই, বিয়ান তাই তো? তোরা গিয়ে আজ হৃদ ভাইয়াকে হলুদ, রং, আবির, কিসও দিতে পারিস কোনো বাঁধা নেই।ভীরের মধ্যে কেউ দেখবে না।দেখলেও তোদের কিছু বলবে না।”

আমার কথা শুনে ওরা রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে কান থেকে ধোঁয়া বের হবে।আমি একটু নাড়া দিতেই বলে উঠলো,

—“তুই কর গিয়ে।দেখলেই হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যায়। আর কিনা রং, আবির, কিস? আমরা কত ভালো।ডা. হৃদ স্যারকে কত্ত সম্মান করি।এসব কি শিখাচ্ছিস আমাদের।আমরা কি খারাপ?”

কথা শেষ করে চোখের ইশারায় ওরা আমাকে পেছনে ঘুরতে বললো।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরলে হৃদ ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম।ভয়ে চিৎকারও দিতে পারছি না আমি।হাত দুটো খুব শক্ত করে শাড়ির আঁচলে খামচে ধরে রাখলাম।চোখদুটো বড়সড় করে আবার ছোট্ট করে নিচে নামিয়ে নিলাম।

চলবে,

– গল্পঃ খুব করে চাই তোকে
– সূচনা পর্ব
– লিজা

পরবর্তী পর্বের জন্য সবাই লাইক/কমেন্ট আর ফলো দিয়ে একটিভ থাকুন 🔥❤️

পেইজ – নিবেদিতা ❤️

পর্ব – ২য়
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=998318084909690&id=100041945238687&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here