#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
আজ দেশে ফিরছে সাজিদ। বৃষ্টির বাবা ও সাজিদের বাবা মা গেলো তাকে রিসিভ করতে। সকালেই বাড়ি চলে আসবে তারা। সারা রাত ঘুম হয়নি বৃষ্টির। মাথায় দুশ্চিন্তার ভার। কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো রাত, কিন্তু বৃষ্টি ফোন ধরেনি। ফোন সাইরেন থাকে সব সময়। বারান্দায় থাকায় বুঝতে পারেনি যে রাত বার বার ফোন দিচ্ছে।
রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাতের ২২ টা মিস কল। প্রথমে টানা করেকটা পরে ১০-১৫ মিনিট পর দুইটা আবার ১৫-২০ মিনিট পর দুইটা এমন করে।
বৃষ্টি ফোন দিতেই ওপাস থেকে রিসিভ করে রাত। যেনো সে বৃষ্টির ফোন করার অপেক্ষায় বসে ছিলো।
– ফোন ধরছিলেনা কেনো?
– কাছে ছিলোনা তাই বুঝতে পারিনি।
– তুমি কি কোনো কারণে রাগ করে আছো আমার উপর?
– না তেমন কিছুনা। এমনি ভালো লাগছিলোনা তাই।
– কিছুতো একটা হয়েছে তাইনা? আর তুমি আমার থেকে কথা লুকাতে পারবেনা তা ভালো করেই জানো।
– সাজিদ ভাইয়া আসছে আজ। লোকটার আচার আচরন আমার একধম ভালো লাগেনা। আগেও কেমন লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে। বাবা মায়ের অঙ্গি ভঙ্গিও ভালো মনে হচ্ছেনা আমার। তার সাথেই বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে। মনে হচ্ছে দেশে পা রাখতেই, কবুল বলিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দিবে আমায়।
– তুমি কি চাও?
– আমি মুক্তি চাই এসব থেকে। আর তোমাকে ছারাও আমি বাচতে পারবো না।
– আচ্ছা দেখা করতে পারবে?
– কখন?
– এখন,,
– আচ্ছা।
,
,
সাজিদ আসায় আজ বাড়িতে একটা পার্টির আয়োজন করলো তার বাবা। একমাত্র ছেলে পড়াশুনা শেষ করে বাড়িতে আসছে বলে কথা।
বিকেলে বৃষ্টি, রিদ, তার মা, সাথে রিদের বন্ধু সামি। সবাই চলে গেলো মামার বাড়িতে। মামার বাড়ি গেলেও কারো সাথে তেমন একটা কথা বলেনি বৃষ্টি। বিষন্ন মনে দাড়িয়ে আছে বারান্দায়। সন্ধা নেমে এলো, প্রকৃতিতে চোখ বুলাচ্ছে সে। পেছন থেকে কেও একজন এসে কোমরে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় বৃষ্টিকে। তার স্পর্শ ঘৃনা তৈরি করলো বৃষ্টির মনে। এক ধাক্কায় তার কাছ থেকে সরে আসে বৃষ্টি।
– এটা কেমন অসভ্যতা সাজিদ ভাই?
– তুই এখনো সেই ছোট্টই রয়ে গেলি, ভালোবাসাকে অসভ্যতামির সাথে তুলনা করছিস?
– প্লিজ ভাইয়া এমন করবেন না আমার সাথে।আপনি কাছে আসলেও আমার অসস্থি বোধ হয়।
একটা বাকা হাসি দেয় সাজিদ,
– অসস্থি হবে, আরো বেশি অসস্থি হবে, অসস্থির সাগরে ভাসিয়ে দিবো তোকে একবার শুধু বিয়েটা হোক।
হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে যায় সাজিদ।
বিষন্ন মনে ওখানেই দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল। সাজিদ এভাবে শরিরে হাত দিলো তা ভাবতেই কান্না চলে আসে তার। রাত ছারা কেও এই শরির স্পর্শ করার অধিকার সে কাওকে দিতে চায় না। অন্য কেও এই শরিরে অধিকার খাটানোর আগেই যেনো তার মৃত্যু হয় এই কামনাই করে সে।
কিছুক্ষন পর রুমে আসে বৃষ্টির মা। বৃষ্টিকে ডাক দিতেই রুমে চলে যায় বৃষ্টি।
– কিরে তুই এখনো রেডি হোস নি? মেহমানরা তো চলে আসার সময় হয়ে গেছে।
– আমি রেডিই আছি মা। আর সাজুগুজু করে সবার সামনে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা আমি।
– চুপ একধম চুপ। নে ফ্রেশ হয়ে এসে এই শাড়িটা পরে নে। সাজিদ নিজে পছন্দ করে এনেছে তোর জন্য।
– দেখো মা, প্রথমতো আমি এই শাড়ি পরবো না আর আমি শাড়ি পরতেও জানিনা। আর আমার শাড়ি পরার তেমন অভ্যাসও নেই।
– তাতে কি হয়েছে? আমি শিখেয়ে দিবো তোকে।
– আমি শাড়ি পরবোনা মা।
– দেখ বৃষ্টি আমি এক কথা দুবার বলা পছন্দ করিনা।
পার্টি প্রায় শুরু হয়ে গেছে। শাড়ি পরে মায়ের সাথে শিড়ি দিয়ে নেমে আসছে বৃষ্টি। সাজিদের চোখ পরে বৃষ্টির দিকে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাজিদ। সত্যি তার পিচ্চি ফুফাতো বোনটি অনেক বড় হয়ে গেছে আজ। আর শাড়িতে যেনো সুন্দর্যটা ফুটে উঠছে দ্বিগুন। চোখ যেনো ফিরাতেই পারছেনা সাজিদ। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় চোখ আটকে গেছে তার।
পার্টিতে দুজন নতুন মেয়ে দেখতে পারছে রিদ ও সামি। এরা সাজিদের খালাতো বোন। তাদেরই বয়সি। এর মাঝে একজন একটু বেশিই সুন্দরি। সামি হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে ধরে ফেললো রিদ।
– এই কই যাস? লজ্জা করেনা গার্লফ্রন্ড থাকতে অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে?
সামি একটু হেসে বলে উঠে,
– আরে লামিয়া আছে তো কি হয়েছে? এটাও ভালো লেগেছে আমার।
রিদও এবার তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
– তাহলে তো ভালোই। আমার শুভ্রতা আছে কি হয়েছে, এটাও ভালো লেগেছে আমার।
– দেখ রিদ ফাজলামি করিস না। লামিয়ার সাথে আমার পরিচয় মাত্র কয়েক মাসের। আর শুভ্রতাকে তুই ক্লাস ফোর থেকে ভালোবাসিস। আট বছরের রিলেশন তোদের। একটা মেয়ের জন্য তুই তাকে দুরে ঠেলে দিবি?
– ধুর বেটা, দুরে ঠেলে দিবো কেনো? শুভ্রতা হলো আমার গোটা একটা দেশ। আর বাকিরা হলো থানা, জেলা, উপজেলা। এদিক দিয়ে আসবে ওদিক দিয়ে চলে যাবে। পট পট না করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখ আমি কি করি।
সামি দাড়িয়ে আছে ওখানে আর রিদ এগিয়ে গেলো মেয়েটার দিকে।
পকেট থেকে মানি ব্যগটা বের করলো রিদ। কয়েকটা হাজার টাকার নোট দিয়ে পাখার মতো বাতাস করতে করতে গিয়ে বসলো মেয়েটার কাছে। টাকাগুলো দিয়ে বাতাস করতে করতে বলে উঠে,
– ওফ কি গরম, এই দেশটা এমন কেনো বুঝলাম না। সুইজারল্যন্ড, লন্ডন, আমেরিকা এগুলোতে মাসে দু,একবার যাই ঘুরতে। কি সুন্দর ঠান্ডা পরিবেশ আসতেই মন চয় না। তাছারা আমি বেশিরভাগ সময় সুইজারল্যান্ডেই কাটাই।
পাশ থেকে মেয়েটা বলে উঠে,
– ওয়াও আপনি সুইজারল্যান্ড থাকেন?
– হ্যা ট্রাবলিং আমার অনেক প্রিয়। কিন্তু ইদানিং সাথে নিয়ে যাওয়ার মতো এমন কেও নেই তো, তাই একটু বোরিং ফিল হয়।
– আপনি সিংগেল?
– হ্যা আমি ফিউর সিংগেল।
– আমিও সিংগেল।
– আমি আসলে আপনার মতোই একটা মেয়ে খুজছিলাম। যে আপনার মতো লাল জামা পরে আমার সামনে এসে দাড়াবে, হাতে থাকবে লাল চুড়ি। মানে আমার সাথেই আপনার যায়। আমার মতো আপনার মাঝেও একটা হাইপাই ব্যাপার আছে। বাই দ্যা ওয়ে ইউ আর সো ভেরি বিউটিফুল।
– ও থ্যাংক ইউ।
– আমাকে আসলে অনেক সুন্দরি মেয়েরাই ফোন নাম্বার দিতে চায়। কিন্তু তাদের কারো মাঝেই সেই ব্যাপারটা নেই যা আপনার মধ্যে আছে। আপনি আমার দেখা সেরা সুন্দরি, ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে?
– কেনো নয় সিওর।
নাম্বারটা বলার আগেই পাশ থেকে একটা মেয়ে এসে সুন্দরি মেয়েটাকে বলে উঠে,
– কিরে সিমরান তুই এখানে। আর কখন থেকে তোর হাসবেন্ট ফোন দিয়ে যাচ্ছে।
কথাটা শুনেই রিদের দিকে তাকিয়ে জ্বিবে ছোট্ট একটা কামর দেয় সিমরান।
– ইয়ে মানে আসলে আমি সিংগেল না আমার হাসবেন্ট ফোন দিয়েছে আমি একটু উঠি?
ফোন হাতে নিয়ে মেয়েটা উঠে দৌড়ে চলে যায় রিদের কাছ থেকে।
একটু দুরেই হাসতে হাসতে ফ্লোড়ে লুটিয়ে পরছে সামি। রিদ নিচের ঠোট টা দাত দিয়ে কামরে ধরে তাকিয়ে আছে সামির দিকে। এতেও যেনো হাসি থামছেনা সামির।
,
,
পার্টি শেষে সিড়ি দিয়ে উঠার সময় শাড়ির কুচিতে পা পরে হচোট খায় বৃষ্টি। পেছন দিকে পরে যেতেই কেও একজন ধরে কোলে তুলে নেয় তাকে। কুচিগুলো খুলে যাওয়ায় হাত দিয়ে সেগুলো ধরে রেখেছে বৃষ্টি। লোকটা কোলে করে বৃষ্টিকে নিয়ে যাচ্ছে রুমের দিকে। বৃষ্টি চোখ বুজে আছে।
সাজিদ রুমে গিয়ে ধপাস করে নামিয়ে দেয় বৃষ্টিকে।
– আপনি এমন অসভ্যের মতো আচরণ করেন কেনো সাজিদ ভাই? তখন কি করলেন? আর এখন সবার সামনে কোলে তুলে নিলেন। সমস্যা কি আপনার?
– কারণ আমি অসভ্যই, শুধু তোর জন্য অসভ্য। আর আমিতো তোকে হেল্পই করলাম তাইনা?
– কাওকে হেল্প করার আগেও পার্মিশন নিতে হয় জানেন না?
সাজিদ হুট করে বৃষ্টির মুখের কাছে মুখ এনে বলে উঠে,
– সুইঠার্ট এখন থেকে সব তোমার পার্মিশন ছারাই হবে।
কিছুক্ষন পর,
– আপনি এখনো যাচ্ছেন না কেনো? দেখছেন না আমি কাপর চেন্জ করতে দাড়িয়ে আছি।
সাজিদ খাটের এক কোনে বসে দুই পা ফ্লোড়ে রেখে বলে উঠে,
– তো চেন্জ করনা, আমি ধরে রেখেছি নাকি? তাছারা দু,দিন পরতো এমনিতেই,,,,
– চুপ করেন সাজিদ ভাই, আর একটাও বারতি কথা বলবেন না আপনি। আপনি তো দেখছই ভারি ক্যারেক্টারলেস। আপনি এই মুহুর্তে জদি রুম থেকে বের না হন তাহলে আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাক দিবো।
– দে চিৎকার, কে মানা করছে। সবাই যখন তোর এই অবস্থা দেখবে তখন কি ভাববে? তাতে আমার জন্যই ভালো হবে, হয়তো আজই বিয়েটা পরিয়ে দিতে পারে সবাই মিলে।
বৃষ্টি এবার কিছু বলতে পারছে না। শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিতে। বৃষ্টির চোখ লাল হয়ে আছে রাগে ও ঘৃনায়। কয়েক ফোটা জল গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পরলো। সাজিদ একটা হাসি দেয়ে বলে উঠে,
– বিয়ের পর এভাবে কান্নাকাটি একধম চলবেনা। তখন আমি নিজেই কাপর চেন্জ করে দিবো।
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সাজিদ।
,
,
আজ দু,দিন হলো রাজিব কলেজে আসেনি। সেইদিন শুভ্রতাকে পপ্রোজ করার কারনে রিদ দুই পায়ের মাঝ বরাবর যেই লাথিটা দিয়েছে, তাতে অজ্ঞান হয়ে দু,দিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনি রাজিব।
শুভ্রতা আজ কলেজে আসেনি।বাড়িতে নাকি মেহমান এসেছে তাই। ওদিকে সামিও লামিয়ার সাথে। নতুন রিলেশন বলে কথা। একা একা বসে আছে রিদ। কিন্তু লামিয়াকেও কেনো জানি রিদের সন্দেহ হয়, কেমন একটা ছলনাময়ি ভাব লামিয়ার মুখে। তবুও সব সময় সব অনুমান ঠিক হয়না। তাই সামিকেও এই ব্যপারে কিছু বললোনা রিদ।
কলেজ শেষে বাড়ি ফিরছে রাত ও বৃষ্টি। একজনের আঙুলের ফাকে আরেরজন আঙুল দিয়ে ধরে আছে একে অপরের হাত। হেটে যাচ্ছে রাস্তার পাশ ধরে। সামনে একটা পুচকার দোকান দেখে বৃষ্টি বায়না ধরলো পুচকা খাওয়ার।
রাত একটা একটা পুচকা তুলে দিচ্ছে বৃষ্টির মুখে। হাসি মুখে আরাম করে খাচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির খাওয়া দেখে অজান্তেই হেসে দিলো রাত। এর মাঝেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা। বৃষ্টিও রাতের মুখে তুলে দিচ্ছে পুচকা, মুখে একটা প্রশারিত হাসি।
একটু দুরেই গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সাজিদ। চোখে মুখে যেনো বের হচ্ছে আগুনের শিখা। সেখানে আর এম মুহুর্তও না দাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সাজিদ। মনে হচ্ছে রাতে সাথে তার অনেক দিনের শত্রতা। আর তা আজ পুনরায় জেগে উঠেছে।
To be continue…………….