#”মালিনী”পর্ব ১০+১১
#(নূর নাফিসা)
.
.
– এই শুনছো? বাড়িতে পুলিশ আইছে!
মুহিত আর মলি দুজনেই আশ্চর্য হয়ে তাকালো! মুহিত বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে পিছু পিছু মলিও বাইরে এসে দেখলো দুজন লোক এসেছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ আর সাথে ফরহাদ! পুলিশকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়েও শতগুণে ফরহাদকে দেখে চমকে উঠেছে মলি। সে এখানে কিভাবে! আর বাড়ির ঠিকানাই বা জানে কিভাবে! মলির মা ও বেরিয়ে এসেছে বাইরে। মুহিত জিজ্ঞেস করলো,
– আপনারা?
পুলিশ জবাব দিলো,
– আসামী ধরতে এসেছি।
সকলেই ঘাবড়ে যায়। মলির মনে ভয় এসে উকি দিয়েছে। কিসের আসামী ধরতে এসেছে! তাছাড়া ফরহাদ সাথে এসেছে কেন! তাকে তো ফরহাদ চেনে, তাহলে আবার মিথ্যে মামলা দিতে চাচ্ছে না তো তার নামে! মুহিত জিজ্ঞেস করলো,
– কিসের আসামী ধরতে এসেছেন?
– ধর্ষণের অপরাধে আপনাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।
– মানে!
পুলিশের কথা শুনে সবাই চমকে উঠে মুহিতের দিকে তাকায় তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের বাড়িতে ছেলে একজনই, সেটা মুহিত। শেষ পর্যন্ত কি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেললো তাদের ছেলে! মুহিত নিজেও ভয়ে আতঙ্কিত! কে তাকে এভাবে ফাসাতে চাইছে! পুলিশকে বললো,
– আপনি কি বলছেন এসব!
মলির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,
– স্যার, আপনের কোনো ভুল অইছে। আমার পোলা কোনোদিন এইসব কাম করতো না। আপনি ভুল বাড়িতে আইছেন।
– আমার কোনো ভুল হয়নি এবং আমি কোনো ভুল বাড়িতে আসিনি। আর আপনার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। অপরাধ করেছে আপনার মেয়ে মলি। আমার পাশে যিনি দাড়িয়ে আছে, উনাকে ধর্ষণ করেছে আপনার মেয়ে! আর সেই অপরাধে আপনাদের সবাইকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।
পুলিশের মুখে এমন কথা শুনে যেন মলির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো! আর বাকিরা সবাই হতবাক! একটা মেয়ে একটা ছেলেকে কিভাবে ধর্ষণ করতে পারে! মুহিত একটু ধমকের সুরেই বললো,
– কি যা তা বলছেন এসব!
– কোনো যা তা বলছি না মিস্টার মুহিত! আপনার বোন উনাকে ধর্ষণ করেছে। আর উপযুক্ত শাস্তিসরূপ আপনাদের নামে মামলা দিয়েছে। আমরা আমাদের কাজ করতে বাধ্য। আপনাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।
মলির মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে শুরু করে দিলো কান্না! এমনিতেই সংসারে নানান ঝামেলা তার উপর এসব কান্ড! মলি খুব তেড়ে ফরহাদের সামনে এসে দাড়ালো।
– এসব কি ড্রামা শুরু করেছেন আমার পরিবারের কাছে! কি চাইছেন আপনি?
ফরহাদ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
– আমার ইজ্জত।
– মানে!
– মানে আবার কি! আমার ইজ্জত লুট করেছো সেটা ফিরিয়ে দাও আর না হলে সারাজীবন জেলের ঘানি টানো।
মলিকে এভাবে কথা বলতে দেখে মুহিত বললো,
– মলি, উনাকে চিনছ কিভাবে?
– ভাইয়া, আমি উনাদের বাড়িতে বাগানে কাজ করি।
হুট করেই নীলিমা বললো,
– জানতাম, জানতাম আমি। যে কাজেই যায়, কোনো না কোনো অঘটন ঠিক ঘটায় আসবে! শেষ করে দিলো সম্মান যা আছে। সব শেষ করে দিলো। নিজে তো মরেই, সাথে ঘরের লোকজন সব লইয়া মরে!
– নীলিমা, চুপ করো! একটা কথাও বলবে না।
মুহিত মলির কাছে এগিয়ে এসে বললো,
– কার কাছে বলে গেছোস, অন্যের বাড়ি কাজ করতে?
মলি চুপ করে দাড়িয়ে আছে। মুহিত ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
– কে বলেছে তোকে বাড়ি বাড়ি কাজ করে খেতে? আমি কি উপার্জন করছিলাম না? অভাব ছিলো বলে কি না খেয়ে আছোছ? আমি খাবার না যোগাতে পারলে না খেয়ে মরে যেতি! অন্যের বাড়িতে গেলি কেন?
পুলিশ তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– আপনি আপনার বোনের গায়ে হাত তুলে অপরাধ আরও বাড়াচ্ছেন মিস্টার মুহিত। এর ফলে আপনার শাস্তি আরও বেশি হতে পারে।
– গ্রেফতার তো করবেনই। একজনের অপরাধে সবাইকে শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাই তো আপনাদের আইনের নীতি। সেখানে কম আর বেশি কি! সম্মান কি আর পরিমাপ করা যায়?
মলির মা এসে পুলিশ আর ফরহাদের সামনে হাত জোর করে বললো,
– স্যার, আমাগো এতো বড় শাস্তি দিয়েন না। গরিব লোক আমরা। আপনেরা অন্য জরিমানা করেন, তাও সুদ কইরা দিমু। থানায় নিয়েন না।
– আচ্ছা, তাহলে উনার সম্মান ফিরিয়ে দেন।
– হেইডা কেমনে?
– মেয়েরা ধর্ষিত হলে তো আইনের আশ্রয় ছাড়া মিমাংসা করলে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্মান ফিরে পায়। তাহলে উনার ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। আপনার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে উনার সম্মান ফিরিয়ে দেন। না হলে জেলে যেতে হবে আপনাদের।
মুহিত কি বলবে বুঝতে পারছে না, আর মলি তো মুহিতের হাতে থাপ্পড় খেয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে! ফরহাদের আচরণ কিছুই বুঝতে পারছে না। কি চাইছে ফরহাদ! মলির মা বললো,
– এমন কলঙ্কিনী মাইয়া দরকার নাই। জাহান্নামে পাঠায় দেন।
– এমন হলে আপনাদের কাছ থেকে মামলা উঠিয়ে নেওয়া যাবে না। সসম্মানে ফরহাদ হোসাইনকে মেয়ের জামাই হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং আপনাদের মেয়ের সাথেও স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। কোনোরকম নির্যাতন চলবে না। এখন বলুন, আপনারা রাজি আছেন কিনা?
– আইচ্ছা। বিয়া দিমু।
মলি চমকে উঠে বললো,
– মা! কি বলছো তুমি!
– তুই চুপ থাক! একটা কথাও কইবি না! সব শেষ কইরা দিতে চাছ! স্যার বলেন, কবে দিমু বিয়া? আর আমরা গরিব মানুষ, কোনো যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য নাই আমাগো।
– যৌতুক দিতে হবে না। যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। এসব করলে আরও আগে থানায় যেতে হবে। মিস্টার ফরহাদ, আপনি কিছু বলুন।
– এখন এবং এই মুহুর্তে বিয়ে করতে হবে আমাকে। আপনাদের কোনো খরচ লাগবে না। কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করবো আমি। শুধু দোয়া করুন। বিয়ের সময় তো সবাই এটাই চায়, তাই না! আপনি অনুমতি দিলে এবার আপনার মেয়েকে নিয়ে যাই। বলুন আন্টি?
– আইচ্ছা, লইয়া যান।
– মিস মলি সালাম করো মাকে।
মলির চোখে ছলছল করছে পানি! অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফরহাদের দিকে। এদিকে মলিকে বলে ফরহাদ সালাম করেও ফেলেছে মলির মাকে। মলি আগের জায়গায়ই দাড়িয়ে আছে। ফরহাদ বললো,
– কি হলো? সালাম করে মায়ের দোয়া নিবে না? না নিলে আর কি করার! এমনিতেই চলো। আসি আন্টি।
ফরহাদ মলির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। কেউই কিছু বলার মতো খুজে পেলো না। মলির মা শুধু আচলে মুখ ঢেকে কান্না করছে। মলি যে বেশে ছিলো সে বেশেই ফরহাদ টানতে টানতে নিয়ে গেছে। স্তব্ধ হয়ে আছে মলি, শুধু শ্বাস আর পা দুটো চলছে। পুলিশ ও ফরহাদ মলিকে সাথে নিয়ে গলি থেকে বেরিয়ে এলো। রাস্তায় ফরহাদের গাড়ি থামানো আছে। মলিকে এক প্রকার ঠেলেই গাড়িতে তুললো ফরহাদ। পুলিশসহ তারা সোজা কাজী অফিস চলে এলো। কাজী পাত্র আর পাত্রীকে দেখে বুঝতে পেরেছিলো এরা পালিয়ে বিয়ে করতে এসেছে। জিজ্ঞাসাও করেছিলো, ফরহাদ জবাব দিয়েছে “আপনার কাজ বিয়ে পড়ানো। সুতরাং তদন্ত না করে বিয়ে পড়ান চুপচাপ।” পরে পুলিশকে সাথে দেখে কাজীর মাথায় প্যাচ লেগে গেছে! পুলিশ পাত্রপাত্রী নিয়ে এসেছে বিয়ের জন্য! এটা আবার কোন মামলা!
পুলিশকে সাথে দেখে কাজী বিয়ের রেজিস্ট্রি করে ফেললো চুপচাপ। মলি মাথায় কাপড়টা পর্যন্ত দেয়নি স্তব্ধ হয়ে শুধু বসে আছে ফরহাদের পাশে। ফরহাদ নিজেই ওড়নার আচল তুলে মলির মাথায় দিলো। সিগনেচার করতে দিলে ফরহাদ সাথে সাথেই করে দিলো কিন্তু মলি কলম ধরছে না। ফরহাদ বললো,
– মলি, কলম ধরো। সিগনেচার করো। কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? মলি, সিগনেচার করতে বলেছি!
কয়েকবার বলার পর মলি কলম হাতে নিয়েছে। কোথায় সিগনেচার করবে, চোখে তো কিছু দেখতেই পারছে না! বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে! কোনো মতো কলম ঠেকিয়ে নিজের নামটা লিখে দিলো। আবদ্ধ হয়ে গেলো নতুন এক বন্ধনে। সাক্ষী হলেন পুলিশ নিজে। বিয়ের কার্যক্রম শেষ করে তিনতলার কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে তারা নিচে গাড়ির পাশে এলো। পুলিশ বললো,
– শেষ পর্যন্ত বন্ধুকে বাপ বানিয়ে দিলি ব্যাটা! যাই হোক, অভিনন্দন তোদের নতুন জীবনে। এহেম! এবার তোদের মা কে খুঁজে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস। মিষ্টি কিন্তু বাসায় পাঠিয়ে দিস, থানায় পাঠালে আবার আমি ভাগ পাবো না!
– কোথাও পাঠাতে পারবো না। সময় করে একদিন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে চলে আসিস, খেয়ে যাস যত ইচ্ছে।
পুলিশ হাসতে হাসতে ফরহাদের সাথে কোলাকুলি করে বললো,
– আচ্ছা, বাসায় যা। আমার কাজ শেষ, এখন আসি আমি। যাই মাইয়া, জামাইকে নিয়ে বেড়াতে যেও বাসায়।
পুলিশ চলে গেলো। মলি এতোক্ষণে বুঝতে পারলো ফরহাদের কর্মকাণ্ড! বিয়ে করার জন্য বাধ্য করতে তাহলে তার পুলিশ বন্ধুকে নিয়ে গেছে আর এতো নাটক সাজিয়েছে! কিন্তু এসব কেন করলো মাথায় ধরছে না! ফরহাদ মলিকে বললো,
– গাড়িতে উঠো।
মলি একজায়গায়ই দাড়িয়ে আছে। ফরহাদ আবার বললো,
– কি হলো, গাড়িতে উঠো!
– উঠবো না।
– মাত্র বিয়ে হয়েছে আর এখনই অমান্য করা শুরু করেছো!
– কিসের বিয়ে! মানি না এই বিয়ে।
– এতোক্ষণে মুখে খই ফুটেছে! এতোক্ষণ কি পুলিশ দেখে চুপসে গিয়েছিলে নাকি! বিয়ে হয়েছে যেহেতু মানতে হবেই। তোমার হাতের সিগনেচার তো আর আমি করিনি।
– বাধ্য করা হয়েছে আমাকে। এটা কোনো বিয়েই না।
– হুম, অস্বীকার করবো না। বাধ্য করেছি তোমাকে। কিন্তু এটা বিয়ে না কেন?
– বিয়ে কি করে হলো? এভাবে কি বিয়ে হয়? বিয়ে হয় দুটি মানুষের ইচ্ছাতে, দুটি পরিবারের সম্মতিতে। হুট করে কাজী অফিসে এসে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলাম আর বিয়ে হয়ে গেলো!
– না। দুটি মানুষের ইচ্ছাতেই হয়েছে বিয়ে। এবং দুটি পরিবারের সম্মতিতেই হয়েছে। তুমি তো সিগনেচার করার আগে একবারও বলোনি যে বিয়ে করবে না। তারমানে তোমার ইচ্ছে ছিলো। মিয়া বিবি রাজি তো বিয়ে পড়াবে কাজী। আর বাকি রইলো পরিবারের সম্মতির কথা! পরিবারের সব সদস্যদের কাছ থেকে তো আর সম্মতি নিতে হয় না। তোমার পরিবার থেকে তুমি আর আমার পরিবার থেকে আমি। দু পরিবারের থেকেই তো দুজনের আসা। তাহলে তোমার আমার সম্মতি মিলেই দু পরিবারের সম্মতি হয়ে গেছে। তাছাড়া তোমার মায়ের কাছেও দোয়া নিয়ে এসেছি। এবার স্বামীর কথা মানো আর গাড়িতে উঠো। বেলা অনেক হয়ে গেছে। তোমার কাজে যাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অন্যের বাড়িতে নয়, নিজের শ্বশুর বাড়ি যাবে কাজ করতে। এবার নিশ্চয়ই আর কোনো সমস্যা নেই! নিজের অধিকার নিয়ে পদার্পণ করো বাড়িতে। আর এখন থেকে আমি কাছে আসলেও নিশ্চয়ই আর কোনো সমস্যা থাকবে না তোমার।
শেষের কথাটা একটু আস্তে বলতে বলতেই ফরহাদ অন্যপাশে এসে গাড়িতে উঠলো। মলি জবাব দেওয়ার মতো আর কিছু খুজে পেলো না। ফরহাদ ভেতরে এসে এপাশের দরজা খুলে দিলো মলিকে উঠার জন্য। মলি বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠলো। ফরহাদ নিজেই সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো। মলির চোখ থেকে একফোঁটা দুফোঁটা করে টুপটাপ পানি পড়ছে। সিটে হেলান দিয়ে পলকহীন তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। ফরহাদ ড্রাইভ করতে করতে বললো,
– অতি প্রয়োজন ছাড়া কাজে মিস করবে না কখনো। বাগানের কোনো ক্ষতি হলে খবর আছে তোমার। আর কোন কোন দিন যেতে না পারলে মাকে আগেই জানিয়ে দিবে তাহলে মা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিবে কাজ। আর কখনো মায়ের কাজ ছাড়া অন্য কারো কাজ করবে না। কখনো টাকার প্রয়োজন হলে বলো আমাকে। ফোন ইউজ করো?
মলি কোনো প্রতিক্রিয়াই জানালো না তার কথায়। ফরহাদও আর কোনো কিছু বললো না। কিছু পথ এসে ফরহাদ গাড়ি থামালো। মলিকে নামতে বললে মলি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ফরহাদের বাড়ি থেকে এখনো একটু পথ বাকি আছে। এখানে কেন থামিয়েছে! মলি কিছু বুঝতে না পেরে ফরহাদের দিকে তাকালো, ফরহাদ নিজ হাতেই সিট বেল্ট খুলে দরজা খুলে দিলো। তারপর আবার বললো নামতে। এবার মলি নেমে দাড়াতেই বললো,
– চুপচাপ এইটুকু পথ হেটে বাসায় যাও। বাগানে পানি দেইনি আমি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটেছি তোমার কাছে। আমি ফিরে যেনো বাসায় দেখি তোমাকে। চালাকি করে পালানোর চেষ্টা করেছো তো ফরহাদ কি জিনিস হারে হারে টের পাবে।
.https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318
.
“মালিনী”
পর্ব- ১১
(নূর নাফিসা)
.
.
– চুপচাপ এইটুকু পথ হেটে বাসায় যাও। বাগানে পানি দেইনি আমি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটেছি তোমার কাছে। আমি ফিরে যেনো বাসায় দেখি তোমাকে। চালাকি করে পালানোর চেষ্টা করেছো তো ফরহাদ কি জিনিস হারে হারে টের পাবে।
মলি চুপচাপ হেটে বাড়িতে এলো। ফরহাদ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেছে। মলি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেনি। আনমনে হাটতে হাটতে বাগানে এলো। আজ আর ফুলের সাথে কথা বলেনি, আর না স্পর্শ করেছে ফুলগুলো। হাতে পাইপ নিয়ে পানি দিতে লাগলো। পুরো বাগান ভাসিয়ে দিয়েছে। হাতমুখ ধুয়ে এসে পা তুলে দোলনায় বসে রইলো। হাটুতে মাথা রেখে আনমনে ভাবছে।
“কি থেকে কি হয়ে গেলো! যেখানে না আছে জানা আর না আছে কোনো পরিচয়, সেখানে হঠাৎ করেই হয়ে গেছে বিয়ে! এটাই কি জীবন! এটা কেমন জীবন যেখানে, একজন মানুষের মন নিয়ে খেলে অন্যজন! এটা কেমন পৃথিবী, যেখানে ইচ্ছে না থাকলেও জবরদস্তি করা হয় অন্যের উপর! মানুষ কেন অন্যের মন বুঝে না, কেন অন্যের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয় না! সকালটা কি এমনই হওয়ার কথা ছিলো! একটা মুহুর্ত এসে পুরো জীবনটাই পাল্টে দিলো! মালিনী, তোর ভাগ্য খুব চমৎকার! কখন কি হয় সব কল্পনার বাইরে!”
হঠাৎ দেখলো ফরহাদ গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো গাড়ি নিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে মলির দিকে তাকিয়েছে একবার পরে আবার ভেতরে চলে গেলো। মলি চোখের পানি মুছে সোজা হয়ে দোলনায় দুলছে। এতোক্ষণে মলির খেয়াল হলো, শুক্রবার হওয়ায় নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিন বাড়িতে তাই ফরহাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে।
একটু পরেই ফাহিমা বেরিয়ে এলো। ফরহাদই বলেছে হয়তো মলি আজ কাজে এসেছে। ফাহিমা তার কাছে এলে মলি সালাম দিলো।
– আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ। তোর কি খবর? সেদিন তারাহুরো করে চলে গেলি, দুদিন পর আজ এলি। ফরহাদ বললো তুই এসেছিস তাই এলাম দেখা করতে। কোনো সমস্যা হয়েছে বাড়িতে?
– না মানে, বাবা অসুস্থ তো। তাই আসতে পারিনি কাজে।
– অহ, এখন কেমন আছে তোর বাবা?
– আছে মোটামুটি।
– এসেও আমার সাথে দেখা করলি না কেন! মুখটা কেমন শুকনো লাগছে। অসুস্থ তুই?
– না, আন্টি আমি ঠিক আছি।
– তাহলে মন খারাপ।
মলি জোর করেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– না। ভালোই আছে।
– নাস্তা করেছিস?
– হ্যাঁ।
– কি খেয়েছিস?
– কি আর খাবো! ভাত।
– তরকারি কি ছিলো?
– তরকারি! মনে নেই আন্টি।
– তুই নাস্তাই করিস নি মনে থাকবে কিভাবে! আবার মিথ্যা বলছিস আমার কাছে।
– সরি আন্টি।
– দেখেছিস, কেমন তদন্ত করতে জানি! ইচ্ছে ছিল উকিল হওয়ার, তোর আংকেল দিলো না। নাস্তা করিসনি কেন?
– এমনি, ভালো লাগছিলো না।
– চেহারা তো বলছে না যে এমনি! ঝগড়া হয়েছে কারো সাথে? মায়ের সাথে রাগারাগি করেছিস নাকি?
– নাহ! এমনি নাস্তা করিনি।
– খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে তুই। কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে চাস না। চল আমার সাথে। নাস্তা করবি।
– না আন্টি, আমি খাবো না কিছু।
– একটা মাইর দিবো, চল আমার সাথে। আর তোর কাথা কোথায়?
– আনিনি আজ।
ফাহিমা জোর করেই মলিকে বাড়িতে নিয়ে গেলো। কিচেনে বসিয়েই খাওয়ালো। জিহানের সাথে খেলা করলো মলি।
বাড়ির পুরুষরা সব জুমার নামাজ পড়তে গেছে। ফাহিমাও নামাজ পড়তে গেছে। মলি সোফায় বসে ছিলো পাশে বসে জিহান কার্টুন দেখছে আবার খেলনা নিয়ে খেলছে। জেরিন প্লেটে খাবার নিয়ে এসে বললো,
– জিহান, এসো। খাবে।
– আম্মু, এখন খাবো না। আমার পেট ভরা।
– একটা পিটুনি দিবো চলো! আমার আরও কাজ আছে। আর তোমাকে না বলেছি একা একা খেলবে! মালিনীর সাথে কি করছো, উঠো!
– আম্মু, আন্টির নামতো মলি। তুমি মালিনী বলো কেন?
– যে বাগানে কাজ করে তাকে মালিনী বলা হয়। এবার চুপচাপ চলো।
– না, আমি কার্টুন দেখছি তো।
– ওফ! কার্টুন পরে দেখতে পারবে না! বললাম না আমার আরও কাজ আছে! মালিনী তুই যা তো। এখনে বসেই আমি জিহানকে খাওয়াবো। আর তোর তো কোনো কাজ নেই সারাদিন এখানে থাকোস কেন?
– ম্যাডাম, আন্টি বলেছে থাকতে তাই আর যাই নি।
– মা, তোকে কাজ করার জন্য থাকতে বলে। কিন্তু তোকে তো কিছুই করতে দেখি না! সারাক্ষণ শুধু বসেই থাকোস! বসে বসে উপার্জন করা হারাম। এখন তো ফ্রী ই আছোস। বাথরুমে জিহানের কিছু জামাকাপড় রেখেছি। ওগুলো কেচে দে।
– আচ্ছা।
জেরিন তো ঠিকই বলেছে। সারাদিন বসে থেকেই তো বেতন পাচ্ছে। কাজ তো শুধু সকাল আর বিকেল করে। বাকি সময় তো গল্প করেই কাটে! এটা তো আর তার উপার্জন হলো না! তাই জেরিনের কাজেও রাজি হয়ে গেলো। মলি জেরিনের রুমের দিকে যেতে নিলে জেরিন বললো,
– এই দাড়া। আমি এনে দিচ্ছি। এই বাথরুমে কেচে দে।
জেরিন প্লেট রেখে তার রুমে গেলো। কাপড়ের বালতি এনে মলির কাছে দিলো। মলি সেগুলো কেচে দিলো। জেরিন বললো ছাদে শুকাতে দিতে। সোফায় দেখলো আবার ফারদিন বসে আছে। তার মানে নামাজ শেষ! ফরহাদও তো তাহলে বাসায় ফিরবে! আগেই বলে দিয়েছিলো অন্য কারো কাজ না করতে। সে আসার আগে আগেই কাজ সেড়ে ফেলা যাক! মলি বালতি নিয়ে দ্রুত সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়! দোতলায় পা রাখতেই দেখলো ফরহাদ রুম থেকে বেরিয়েছে নিচে আসার জন্য। তাহলে সে বড় সাহেবের সাথেই এসে পড়েছে! মলির হাতে বালতি দেখতেই ব্রু কুচকে তাকালো! মলি দেখেও না দেখার ভান করে দ্রুত ছাদের সিড়িতে পা রাখছে। ফরহাদ সিড়ির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– এগুলো কার কাপড়?
মলি জবাব না দিয়ে সিড়ি দিয়ে দ্রুত উঠে ছাদে এসে দরজা আটকে দিলো! এবার যেন সে হাফ ছেড়ে বাচলো! খুব বড় শ্বাস টেনে আবার ছেড়ে দিলো। বালতি নিয়ে কাপড় গুলো শুকাতে দিলো। রেলিংয়ের পাশে নিচের দিকে তাকিয়ে বাগান দেখতে লাগলো। উপর থেকে খুব সুন্দর লাগে দেখতে। সারা বাগান জুড়ে শুধু ফুল আর ফুলই দেখা যায়। ফরহাদকে এড়িয়ে তো চলে এলো, এখন ভাবছে নিচে যাবে কিভাবে! সে কি এখনো দোতলায় আছে! ফরহাদ যদি আবার সামনে পড়ে! দরজা লাগানোর পর তো তার কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। হয়তো কিছু বলবে না! তবে কে জানে! দূর বললে বলবে। এক কান দিয়ে যাবে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে আসবে। যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে, চিৎকার করে ফাহিমা আন্টিকে ডাক দিবে! তাহলেই তার মুক্তি! এখন তো ফরহাদ খাওয়ার জন্য নিচে গেছে হয়তো, তাহলে এটাই সুযোগ। ফাহিমা আন্টির কাছে চলে যাবে আর না হয় বেরিয়ে বাগানে চলে যাবে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এসে মলি ছাদের দরজা খুললো। দরজা তো টানছে, কিন্তু আসছে না কেন! এটা কি হলো! কোথায় আটকে গেলো! মলি শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে টানতে লাগলো। দরজা তো খুলছে না! তাহলে কি ফরহাদ বিপরীত দিক থেকে আটকে দিয়েছে! মলি হতাশ হয়ে আবার রেলিংয়ের পাশে চলে এলো। “এবার ভালো হয়েছে মলি! থাক এবার সারাদিন এখানে পড়ে! ওফ্ফ!”
মলি এক কোনে এসে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বইছে মৃদু ঠান্ডা হাওয়া। সাদা কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে নীল আকাশে। সূর্যের তাপ আছে কিন্তু বাতাসের কারণে সেটা গায়ে লাগছে না। নীল আকাশের নিচে ডানা মেলে নিশ্চিন্তে ঈগল পাখি ভাসছে। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মলি বাকি সব ভুলে হারিয়ে গেছে সৌখিন জগতে।
” ইশ! যদি ঈগল হতাম তাহলে সারাদিন স্বাধীনভাবে খোলা আকাশের নিচে ও ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে এভাবে ডানা মেলে ভাসতে পারতাম! যদি মেঘ হতে পারতাম তাহলে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আকাশের বুকে ভেসে বেড়াতাম! যদি বাতাস হতে পারতাম, তাহলে সারা দুনিয়ায় মিশে থাকতাম! সবাইকে স্পর্শ করে শীতল করে দিতাম! মন জুড়িয়ে দিতাম সকলের! একদম সবার ধরা ছোয়ার বাইরে! থাকতো না কোনো কষ্ট! সবকিছু নিজের ইচ্ছাতেই করতে পারতাম!”
এটাই মলির ভাবনা। হঠাৎ মাথাটা একটু হালকা মনে হতেই মলি বেরিয়ে এলো সেই ভাবনার জগৎ থেকে। চুলগুলো তার খুলে গেছে এবং বাতাসে উড়ছে! চুল তো কাটায় আটকানো ছিলো তাহলে খুলে গেলো কিভাবে! মলি পেছনে ঘুরতে যাওয়ার আগেই কেউ তাকে বাধা দিয়েছে! পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে কেউ! কে এমনটা করতে পারে! মলি ভয়ে আৎকে উঠেছে!
– কে! ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি!
ছুটানোর জন্য জোরাজোরি করতে লাগলে কেউ তার চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– জানো না তুমি কে হতে পারে! আমি ছাড়া কার সাহস হবে তোমাকে স্পর্শ করার!
এবার মলি নিশ্চিত হয়েছে ফরহাদ। কিন্তু অসস্তি লাগছে খুব! কি করে ছাড়াবে! তার শক্তির কাছে কি পারবে সে! তাছাড়া ফরহাদ কাছে এলেই তার জবান বন্ধ হয়ে যায়! মলির নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে! ফরহাদ কেমন যেন করছে! কিন্তু কিছুই করতে পারছে না মলি! ঘাড়ে মাতাল স্পর্শ দিতে দিতে বললো,
– নিষেধ করেছিলাম না কারো কাজ করতে! জিহানের কাপড়চোপড় ধোয়ার জন্য তার মা আছে। তাহলে তার চাচী কেন যাবে!
মলি কোনো জবাব দিচ্ছে না, শুধু চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ভেতরটা খুব অশান্ত! ফরহাদ আবার বললো,
– আকাশটা খুব সুন্দর, তাই না? নিচে জমিনের বাগিচাও খুব সুন্দর। শুধু সুন্দর না মাঝখানে বসবাসরত মানুষের মনগুলো! খুবই ময়লা মানুষের মনে।
এর বেশি আর কোনো কথা বললো না ফরহাদ। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই রইলো। এক পর্যায়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– পেটে কিছু নেই নাকি! নিচে যাও, খাবার যেন বারবার সাধতে না হয়। পেট ভরে খাবে। যাও।
ফরহাদ খোলা চুলে কাটা আটকে দিলো। মলি খোপা করে খোলা চুল আটকে নিলো। অত:পর বালতি নিয়ে নেমে এলো ছাদ থেকে। ফরহাদ ছাদেই আছে। ফাহিমা তাকে খেতে বললে কথামতো খেয়ে নিলো কিন্তু অল্প খাবার! সারাদিন মলি এখানেই কাটালো। বিকেলে পানি দেওয়া শেষ হতেই মলি ফাহিমার কাছে বিদায় নিতে গেলে ফরহাদ সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো,
– মা, রুমে একটু কাজ করেছিলাম। ধুলো দিয়ে ভরে গেছে। মলিকে বলো তো ঝাড়ু দিয়ে দিতে।
– মলি তো এখন চলে যাবে। আগে বললি না!
– আগে মনে ছিলো না। তাছাড়া ঝাড়ু দিতে আর কতোক্ষন!
– আসছি, আমিই দিচ্ছি।
– তোমার সিড়ি বেয়ে আসতে হবে না। থাকুক।
ফরহাদ চলে গেলো রুমে। মলি তার ইঙ্গিত ঠিকই বুঝতে পেরেছে তবুও বললো,
– আন্টি, আমি ঝাড়ু দিয়েই বাসায় যাবো।
মলি চলে গেলো রুম ঝাড়ু দিতে। ফরহাদ রুমেই আছে, মলি চুপচাপ রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। রুমে কোনো অতিরিক্ত ময়লা নেই। রুম ঝাড়ু দিয়ে বারান্দা পর্যন্ত যেতেই ফরহাদ বললো,
– তুমি আজ বাসায় যাবে না। চুপচাপ রুমে থেকো, বের হওয়ার চেষ্টা করবে না।
কথাটা বলেই ফরহাদ আর নেই রুমে। বাইরে থেকে দরজা আটকে বেরিয়ে গেছে! এ কোন মহা জ্বালায় পড়লো সে! এমন করছে কেন তার সাথে! বিয়ে পর্যন্ত সেড়ে ফেলেছে এখন আবার ঘরে আটকে রেখেছে!
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। মলির খুব ভয় লাগছে! ফরহাদ তাকে আটকে রেখে কোথায় চলে গেলো! যদি কেউ রুমে এসে তাকে এখানে দেখে ফেলে, তখন কি হবে!
রাতে ফরহাদ রুমে এলো। তার হাতে কিছু প্যাকেট। একটা মলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
– শাড়ি পড়তে পারো?
মলি কিছু বলছে না! একবার প্যাকেটের দিকে তাকাচ্ছে আবার ফরহাদের দিকে। ফরহাদ আগের চেয়ে একটু উঁচু গলায় একই প্রশ্ন করলে মলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। ফরহাদ শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
– গোসল ছাড়া আমার রুমে জায়গা হবে না। এটা নিয়ে বাথরুমে যাও। গোসল করে পড়ে এসো।
মলি ঠেই দাড়িয়ে আছে!
– কি হলো যাচ্ছো না কেন?
মলি কোনো জবাব না দিয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে। ভালো লাগছে না কিছু। তার চোখে পানি টলমল করছে। চোখে পানি দেখে ফরহাদ বললো,
– এই, তোমার সমস্যা কি? সারাজীবন কি কুমারী থাকার ইচ্ছে ছিলো? বিয়ে হতো না একদিন না একদিন, কারো সাথে? সেই কারো জায়গায় আমি থাকলে সমস্যা কি!
মলি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,
– কেন করছেন এসব? আপনার সাথে আমাকে মানায় না। ভুলে যান বিয়ে হয়েছিলো আজ। আমিও ভুলে যাবো।
ফরহাদের চরম রাগ উঠে গেলো। দরজা খুলে দিয়ে বললো,
– বের হ। যা, বের হয়ে যা রুম থেকে। ভুলে যাবো সব। যাস না কেন?
মলি দাড়িয়েই আছে আর ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ফরহাদের দিকে। ফরহাদ এগিয়ে এসে মলির হাত ধরে টেনে দরজার বাইরে এনে বললো,
– যা। আর কখনো আসবি না।
ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো ফরহাদ! মলির খুব ভয় লাগছে, এখন যদি কেউ দোতলায় এসে পড়ে! এতো রাতে তাকে এবাড়িতে দেখলে কি ভাববে তারা! সে নিচু স্বরে ডাকতে লাগলো। “ছোট সাহেব! দরজা খুলুন। ছোট সাহেব কেউ চলে আসবে, দরজা খুলুন!” ফরহাদ দরজা খুলছে না। মলি এবার দরজায় আস্তে আস্তে থাপ্পড় দিয়ে ডাকতে লাগলো। একটু ধাক্কা লাগতেই দেখলো দরজা ফাক হয়ে গেছে! তার মানে কি দরজা খুলা ই ছিলো! শুধু চাপিয়ে রেখেছে! মলি দরজা ঠেলে দ্রুত ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। রুমে ফরহাদকে দেখতে না পেয়ে বারান্দার দিকে তাকাতেই দেখলো সে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। একটা নিশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো ফরহাদ যা চায় তা-ই হবে। মলি সেই প্যাকেটটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। গোসল সেড়ে শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো। ফরহাদ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে একদম দরজা বরাবর। তাও আবার এদিকে ঘুরেই! শার্ট খুলে একটা সেন্টু গেঞ্জিও রাখেনি গায়ে! দুহাত ভাজ করে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে অপলক তাকিয়ে আছে মলির দিকেই! মলির অসস্তি লাগছে ফরহাদের দৃষ্টি! হাতে ভেজা কাপড়। কোথায় শুকাতে দিবে এসব! সে ধীর পায়ে বারান্দার দিকেই এলো। সেখানেই মেলে দিলো কাপড়চোপড়। আবার রুমের দিকে যেতে নিলে শাড়ির আঁচলে টান পড়লো! কলিজা এমনিতেই কাপছিলো এখন শুকিয়ে যাচ্ছে! পেটে স্পর্শ পড়তেই টান পড়লো পেছনের দিকে। ফরহাদ এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে চুলে পেচানো ওড়না খুলে ভেজা চুল উন্মুক্ত করে দিলো। সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে মলির নয়নজোড়া আর ভেজা চুলে ডুবে গেছে ফরহাদ! একটু পরই মলির কানে শব্দ এলো,
– দুপুরে পেট ভরে খেতে বলেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে চারদিন ধরে না খেয়ে আছো! বেড সাইড টেবিলে দেখো একটা প্যাকেট রাখা আছে। খাবার বের করে সবটুকু খেয়ে নাও। যাও।
মলি ছাড়া পেয়ে দ্রুত রুমে চলে এলো। ইচ্ছে না থাকলেও প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখলো দুই প্যাকেট বিরিয়ানি। একটা খেয়েছে আর একটা রেখে দিয়েছে। ফরহাদ বারান্দা থেকেই বললো, “আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। দু প্যাকেট পুরো শেষ করো।”
বললেই কি খাওয়া যায়! রুচি থাকতে হবে, সাথে থাকতে হবে পেটে জায়গা। বাকিটা মলি একটা টেবিলের ড্রয়ারে তুলে রাখলো। মলি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চিরুনি খুজছিলো। ফরহাদ রুমে এসে হঠাৎ করেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
– বিয়ে করেছি বাসর করবো না তা কি করে হয়, মিসেস মলি ফরহাদ! প্রথম দিনই যদি দুজন দু বাড়িতে কাটাই তাহলে বাকি দিন কিভাবে কাটবে!
মলি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ফরহাদের দিকে। ফরহাদ তাকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বললো,
– উঠবে না একদম!
ফরহাদকে এতো কাছে দেখে এবার চোখ বন্ধ করে রেখেছে মলি। ফরহাদ তার কপালে আলতো চুমু একে দিলো। সাথে সাথেই মলি চোখ খুলে তাকালো! এটা তো সেই স্পর্শ, যেটা সেদিন জিহানকে কোলে নেওয়ার সময় পেয়েছিলো! তাহলে সেটা ফরহাদের ঠোঁটের ছোয়া! মলির হার্টবিট পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে! ফরহাদ আলমারি খুলে নকশিকাঁথা বের করে আনলো। মলির উপর ছড়িয়ে দিয়ে বললো, ” কাথার ভাজ এখনো ভাঙ্গিনী বউকে নিয়ে থাকবো বলে!” ফরহাদ মলির কাছে আসতেই মলির শরীরে কম্পন ধরে গেছে! সে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে! মলির এ অবস্থা দেখে ফরহাদ বিষ্ময়করভাবে বললো, “মলি!” মলি চোখ বন্ধ রেখেই হাত বাড়িয়ে ফরহাদের গায়ে স্পর্শ করে ইতিবাচক সাড়া দিলো!