তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৩২

0
715

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩২

.
🍁
বইটি উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে নিতেই চোখে পড়ল খুবই চমৎকার একটা সাদা ডাইরি যার ওপর থেকে হাতে ডিজাইন করে অ্যাঁট করা, আর সেই সাথে তার ওপর বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে পৃপ্তীলয়…
আমি ডাইরিটা ওপর থেকে নিজের হাতটা বুলিয়ে নেয় একবার কারণ ডাইরিটা ওপরে ডিজাইনটা একদমই আমার মনের মতো যেমনটা আমার পছন্দ মনে হচ্ছে ডাইরিটা আমার পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে বা এটা আমারি ডাইরি হবে এমন কিছু। আমি বেশ আগ্রহের সহিত মন্ত হয়ে বসে থেকে ডাইরিটা প্রথম কভারটা উল্টায়, আর সেটা উল্টাতেই চোখে পড়ল সেখানে থাকা বেশ কিছু লেখা, আমি লেখা গুলো দেখে মূহুর্তে চমকে উঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সেদিকে, কৌতুহলী নিয়ে লেখা গুলো পড়তে ভেষে আসলো কোনো একটা মেয়ের পরিচয়, খুব সম্ভব এটা যার ডাইরি সেই মেয়েটি পরিচয় এখানে লেখা। আমি নড়েচড়ে বসি আরও মনোযোগে সহিত গোল গোল চোখ করে তাকায়। কারণ আজ যা কিছু হয়ে যাক না কেন আজকে সম্পূণ ডাইরিটা শেষ করেই উঠবো এখান থেকে নয়তো তার আগে নয়। এমন প্রতিক্ষার সাথে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার তাগিত নিয়ে পড়া শুরু করি। আর সেখানে প্রথম পাতায় প্রথম লেখা ছিল…..

.

— ” হাই আমি পৃপ্তী, বয়সটা ষোল বা সতেরো হবে ঠিক করে কিছু বলতে পারছি না তার জন্য সরি হুম। আসলে আমার মা বাবা নেই তো, তাই ঠিক করে নিজের বয়সটা বলতে পারছি না, ওহ বাবা মা সম্পর্কে তো বলতে ভুলে গেছি, আমার পরিবার বলতে কেউ নেই, আমি একা বাবা -মা, ভাই -বোন, দাদা-দাদি, আত্মীয় স্বজনরা কেউ নেই আমার, আমি একজন এতিম মেয়ের। আমি সিলেটর একটা এতিমখায় থাকি সেটার নাম হচ্ছে তিয়ামতি এতিমখানা ও আশ্রয়কেন্দ্র, আর এটাই হচ্ছে মূলত আমার আসল বাসস্থান। দেখতে মোটামুটি ঠিক ঠাকই আছি সবার মতো করে।

.

এতটুকু লেখায় ছিল পৃপ্তী মেয়েটির পরিচয় পত্র। আমি পৃপ্তী মেয়েটির পরিচয়টা পড়েই মনের মধ্যে আরও কৌতুহল জেগে ওঠে। তাই সেই তাগিদে নিয়ে আমি ডাইরিটা দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি উল্টাতেই চোখ পড়লো পৃপ্তী লেখা আরও বেশ কিছু কথা যেমনটা হলো…..

.

—” আমি একজন এতিমখানার বাসিন্দা। আর আমি এই এতিম খানায় কতদিন যাবত আছি, সেটা আমি নিজেও বলতে পারছি না। কারণ আমার ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি সময়টা আমার কিছুই মনে নেই, গত এক বছরের কথা গুলো ছাড়া পুরোনো দিনের কোনো কথা মনে নেই আমার। এর আগে আমার লাইফে কি হয়েছে সেটা থেকে আমি আজও অবগত। কারণ গতএক বছর আগে আমার একটা ভয়ানক রোড এক্সিডেন্ট হওয়ায় তারপর থেকেই আগের কথা গুলো কিছুতেই কিছু মনে নেই আমার। জ্ঞান ফেরার পর প্রথম প্রথম কাউকেই চিন্ততে পারছিলাম না আমি। পরে এখানকার সবাই বললো যে আমি নাকি ছোট থেকেই এখানে থাকছি। প্রথমে তাদের কথা গুলো আমার মেনে নিতে সমস্যা হলেও পরে ঠিকই মেনে নেই কারণ কেউ কখনোই আমার পরিবার থেকে আমাকে দেখতে আসেনি এই এতিমখালায় তখন থেকেই মেনে নেই যে আমি একজন এতিম মেয়ে… ডাইরি লেখার তেমন একটা শখ কখনই ছিল না আমার। হঠাৎ করেই ইচ্ছা হলো ডাইরিটা লিখতে, তারও কারণটা সিম্পল, আমি আগের কথা গুলো বারবার ভুলে যায় বলে মনে রাখার জন্য এই ডাইরিটাতে লিখে রাখি, যাতে পরে আমি মনে করে নিতে পারি খুব সহজই। আর সাদা রংটা আমার পছন্দের তাই ডাইরিটা ও আমি সাদা রং এর রেখেছি, আঁকতে ভালো লাগে আমার তাই ডাইরি ওপরেরও কিছু মনের মতো ডিজাইন করে নিলাম পছন্দ অনুযায়ী । আর এই ডাইরিটার নামটাও আমার নামে রেখেছি পৃপ্তী আর লয়ে নামের অর্থ হলো বাসস্হান, এর মানে হলো পৃপ্তী বাসস্থান, হুমমম এটা আমার বাসস্থান এই ডাইরিটা।

.

এই এতিম খানায় আমার মতো করে আরও অনেক ছেলে মেয়ে থাকে, বৃদ্ধ মানুষও থাকে এখানের একপাশের বিল্ডিংয়ে। এতো কিছু মাঝে আমার তো বলায় হয়নি আমার দুটো বান্ধবী আছে একজন কেয়া অন্য জন্য হলো বর্ষা আর আমি পৃপ্তী। আমাদের এই তিন কন্যার বন্ধুত হলো চড়ুই পাখির ঝাঁকদের মতো খুবই চঞ্চল আর দলবদ্ধ গোষ্ঠী। যেখানে যায় সেখানটার গরম হয়ে যায় মূহুর্তেই, আমাদের জন্য পুরো এতিম খানায় খুশিতে আনন্দীত হয়ে থাকে । আশা এতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা একজন খ্রিষ্ঠান ধর্মের থেকে কিন্তু তিনি খুবই সচ্ছ মনে মানুষ তিনি। কারণ তিনি সকল ধর্মের মানুষকে এখানে আশ্রয় দিয়েছেন কোনো রকম ভেদাভেদ করেনি কখনো, আর উনার নাম হচ্ছে ঝাংজেক ও ওয়াইফ অফ নাকিয়াং, আর আমার মূলত উনাকে ফাদার মাদার বলেই সম্মোধন করে থাকি,, ফাদার ব্যাসায়িক কাজে বেশি বাগ সময়টাই বাহিরেই থাকে।

কিন্তু মাদার সবসময় আমাদের সাথেই থাকার চেষ্টা করে। মাদার আমাকে সবার থেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে আর তার কারণটা হলো আমি নাকি উনার মৃত্যু মেয়ের মতো দেখতে তাই আমার মধ্যে উনি উনার মেয়েকে খুজে পান, আর তার জন্যই মাদার সবসময় আমাকে উনার সাথে সাথে রাখে এমনকি রাতেও আমাকে মাদারের সাথে ঘুমাতে হয়। ফাদার দেশে আসলে তখন আমি আমার বান্ধবীদের সাথে ঘুমাতে হয়। এতে করে আমার বা অন্য কারও কোনো রকম মতোবেধ নেই। সবকিছু ঠিক ঠাকই চলছে লাইফে…

.

তবে মাঝে মাঝে একটু কষ্ট লাগে যখন কারও কাছ থেকে এতিম বলে কিছু শুনতে হয়। তখন নিজেকে খুব একা একা লাগে। আসলে এতিমকে এতিম বলতে নেই নাকি যার কেউ নেই তার নাকি আল্লাহ আছে। আমারও আমার আল্লাহ আছে তিনি সবসময় আমার খেয়াল রাখেন সবকিছুতেই। আর আমাকে যখন কেউ আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে তখন আমি খুবই পাউন্ডলির সাথে বলি আমি হলাম গড গ্রিপ্টেড। তখন কেউ আমাকে নিয়ে মজা করে আবার কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া ও করে যায়। একেক জন্যের একেক ধরণের চিন্তা ভাবনায় আমাদের মতো অনাথ ছেলে মেয়েদের নিয়ে, আমাদের সমাজের অনেক মানুষ জন্যের মনে করে আমরা কারও পাপের ফসল হয়ে তাকি, আর আমাদের মা বাবা নিজেদের পাপ ডাকার জন্য আমাদের রাস্তায় ফেলে যায় আর সেখান থেকে কোনো দয়াবান ব্যাক্তি আমাদের উঠিয়ে এনে এই রকম এতিমখানায় রেখে যায় নাকি তাই না। হুমম সেটাই অনেকই ভেবে থাকে আসলে তেমনটা কিন্তু মোটেও নয়, আমরা যারা এতিম, আমরা নাকি আমাদের বাবা মার পাপের ফসল হয়ে তাকি না। সেটা কিন্তু সত্য নয় এখানের অনেকই আছে যার পরিবারের কেউ নেই। পরিবারের সবাই রোড এক্সিডেন্ট বা অন্যন্যা কারণে মারা যায়, কিন্তু এই সমাজের বেশ মানুষ জন্য আমাদের নাজায়েজ বলে গালি দিয়ে থাকে। কষ্টটা তখন আমাদেরও খুব লাগে।

.

ডাইরি ৩য় পাতা….

.

শীতের সকাল চারপাশে কুয়াশায় ভরপুর ঠিক করে কিছু দেখা যাচ্ছে না চারপাশের, আর সেই শীতের সকাল উপভোগ করার জন্য আমি একা একাই বেড় হয়ে পরেছি রাস্তায় বাঁধ হয়ে। কারণ আমি আমার দুই ফাজিল বান্ধবী গুলোকে অনেক বলেও রাজি করাতে পারিনি আমার সাথে এই শীতের সকালটা উপভোগ করার জন্য। ওরা সবাই পড়ে পড়ে আশ্রমে ঘুমচ্ছে আর আমি নীরর্বে গায়ে মধ্যে সাদা চাদর জরিয়ে চলে এসেছি জন্য শূন্যহীন রাস্তা, আমার গায়ে পড়ানো সাদা সেলোয়ার-কামিজ সেই সাথে চুল গুলো ছাড়া অবস্থায়। কনকনে ঠান্ডায় হালকা হালকা মিষ্টি সুরে বাতাস ভয়ছে এমন নিস্তব্ধত পরিবেশ আমি মিষ্টি হেসে রাস্তা ধরে চারপাশটা তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে হাঁটছি আপন মনে যেন প্রকৃতির রূপে নিজেকে সাজাচ্ছিলাম।

.

আমার এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে হঠাৎ করে ব্যাঘাত ঘটালো বিকট শব্দে। কানের মধ্যে হঠাৎ করে ঠাস ঠাস গুলির শব্দ কানে আসতেই আমি চমকে উঠে পিছন ফিরতে যাবো তার আগেই কেউ একজন পিছন থেকে আমার একহাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে আমার গলায় নিজের হাতের চুরিটা চেপে ধরে সামনের মানুষ গুলোকে ভয় দেখিয়ে ধমকি শুরুপ বলে উঠে…..

.

—“আমাকে যেতে দে নয়তো এই মেয়েকে মেরে দিব তোর….

.

বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই সামনের গুন্ডা গুলোর মধ্যে থেকে একজন গুন্ডা আমাকে ধরে রাখা লোকটি মাথা বরাবর একটি লাটি ছুড়ে মারতেই লোকটি আমাকে ছেড়ে দেয় সাথে সাথে কপালে আঘাত পেয়ে। আমি চোখের সামনে এতো গুলো মানুষকে বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড হারে ভয় পেয়ে যায়। এরা সবাই গুন্ডা নয় খুব সম্ভবত বডিগার্ড টাইপ কিছু পোশাক দারি মানুষ হবে আর এই বডিগার্ড গুলোর সাথে হয়তো এই লোকটি কোনো শত্রুতা রয়েছে যার কারণে মারতে এসেছে আজ, আর তাদের এমন শত্রুতার মধ্যে আমি তৃতীয় পক্ষ হয়ে শুধু শুধু নিজের জানটা দিতে চলেছি। এই কথাটা ভাবতেই আমার সারা শরীর মূহুর্তেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল। সাথে ভয়টাও প্রচুর লাগেছিল কি যে করবো, তাই নিয়ে ভয়ের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ। তখন এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছেল এই বুঝি আজ আমার শেষ দিন আর কখনোই আমি আমার এতিম খানায় পৌঁছাতে পারবো না। এতো ঠান্ডা মধ্যেও ভয়ে আমি ঘামতে লাগলাম সাথে সাথে, ভয়ের কারণে আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে লোকটির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়া পেতেই আমার গায়ের সাদা চাদরটা ফেলে দিয়ে সামনে দিকে প্রাণপূণ দৌড় লাগায় নিজেকে বাঁচানো জন্য ।

.

আমার সাথে সাথে আঘাত পাওয়া লোকটিও আমার পিছন পিছন ছুটছে থাকে নিজেকে বাঁচারনো জন্য। আর সেই সাথে আরও ছুটছে এই লোকটিকে মারার জন্য বডিগার্ড গুলোও। আমি হয়তো উল্টো দিকে দৌড়ালে বা থেমে গেলে নিজেকে বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু তখন এক মূহুর্তে জন্য আমি জ্ঞান শূন্য হয়ে পরি চোখের সামনে এতজনকে বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাই তাদের সামনে সামনে আমিও দৌড়াছিলাম মরার জন্য তাদের হাতে। আসলে কপালে শুনি থাকলে যেটা হয় আরকি… আমি ওদের সামনে দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে চোখে পড়লো মাঝ রাস্তায় একটা লোক পিছন ফিরে স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা দেখে আমি নিজেকে বাঁচানো জন্য সেই অজানা লোকটি পিছন থেকে দু’হাতে জরিয়ে ধরে নিজের মাথাটা তার পিঠের উপর চেপে ধরি ফুপাতে ফুপাতে ভয়ে….

.

আমার অজানা লোকটিকে জরিয়ে ধরার সাথে সাথে লোকটি চমকে উঠে নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত জোড়া দেখে নিয়ে কপাল কুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে এক পলক দেখে নিয়ে আমাকে নিয়েই সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় স্টং হয়ে। কারণ আমাকে ঠিক করে দেখতে পারনি অজানা লোকটি আমার মুখ উনার পিঠের উপর চেপে ধরে রাখার জন্য।অজানা লোকটি আমার দিকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে সামনের দিকে তাকায়, পরে আমার সাথে দৌড়ে আসা লোক গুলো একে একে সবাই দাড়িয়ে পরে অজানা লোকটি সামনে। আর এই অজানা লোকটিকে দেখতেই বডিগার্ড গুলো চারপাশে ছড়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে আদশ ভাবে, আর তাদের মধ্যে থেকে একজন বডিগার্ড বলে উঠে……

.

—” ভাই এই শিরাজই আমাদের সব তথ্য শত্রুর পক্ষকে আদান প্রদান করতো……

.

—” তোর কি দিন তারিখ করতে হবে একে মারার জন্য আসিফ….
.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here