#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৭
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
সালমা বেগম চেঁচাতে চেঁচাতে ড্রয়িংরুমে এলেন। অভিককে ফোনের ভেতর মুখ গুঁজে বসে থাকতে দেখে বললেন
আহা আমার ছেলেটার বোধবুদ্ধি কখন হবে? হ্যা? দেখছিস তো ওখানে মেয়েটার সাথে মুরব্বির সাথে কথা বলছে। তারমধ্যেই ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছিস?
অভিক মাথা না তুলেই জিজ্ঞেস করলো
আমি কখন ডাকলাম মা?
তুই তো ডাকিস নি। কিন্তু বজ্জাত দুটোকে পাঠিয়েছিস। ওই মেয়েটাকে সেখানে দাঁড়াতে দিচ্ছে?
সরি মা।
আজীম সাহেব এসে সোফায় বসলেন।
মা ছেলে কি নিয়ে কথা হচ্ছে?
আহনাফ হেসে উঠে বলল
কাকি অনা আর আবিদের রাগ অভির উপর ঝাড়ছে কাকাই।
আহ সালমা তুমি না ছেলেকে বিয়ে করাতে যাচ্ছ? এবার একটু মিষ্টি করে কথা বলতে তো শেখো। সবাই আমাদের আনিকার মতো হবে? ও তো বিয়ের আগে থেকে জানতো চিনতো সবাইকে তাই মানিয়ে নিতে পেরেছে । কিন্তু হুট করে একজন নতুন মেয়ে এসব সহজভাবে নিতে পারবে?
সালমা বেগম ক্ষিপ্ত চোখে তাকালেন। আজীম সাহেব বললেন
আচ্ছা বাবা তুমি তোমার কাজে যাও। আমরা কিছু কথা বলি। অভিক তোমার হাতে সময় থাকলে বিজনেস ডিলটার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই।
সালমা বেগম তেড়ে এলেন।
এই এই শোনো তোমরা বাপ জেঠা তো সারাক্ষণ অফিস আর অফিস। ব্যবসা আর ব্যবসা। ওসবে আমার ছেলেকে একদম জড়াবেনা বলে দিলাম। ও কতদিকে মাথা দেবে বলতে পারো? ও পড়ায় বুঝলে? পড়াতে কত মেধা খাটাতে হয় জানো? কত বড় বড় ছেলেপেলেদের পড়ায় সেটা জানো? খোঁজ রাখো? আহনাফ তোকে বলে দিচ্ছি বাবা এই লোকের কথা একদম কানে তুলবি না। অতিরিক্ত কাজ করার কোনো দরকার নেই। না তুই, না অভি।
অভিক মায়ের মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো। উনি ছেলেকে অমন করে তাকাতে কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
তোর বাপের কথা একদম শুনবি না অভি। আমি তোর বউয়ের সাথে কখনো খিটখিটে মেজাজে কথা বলব তোর মনে হয়? আমি তোর সাথে ওভাবে কথা বলি?
অভিক হাসলো।
এমা ছেলে হাসে। হাসিস কেন? আমি হাসার কথা বললাম? তোর বাপকে কিছু বল।
অভিক আবারও হাসলো।
আজীম সাহেব এবার হেসে উঠলেন নিজেই। গা এলিয়ে বসে বললেন
আচ্ছা তুমি ভালো শ্বাশুড়ি হবে সালমা। এবার নিজের কাজে যাও।
সালমা বেগম যাবে যাবে করেও কিছুদূরে গিয়ে থেমে গেলেন । আবারও নিশ্চয়ই অফিসের কথা বলবে এই লোকটা।
আজীম সাহেব পায়ের উপর পা ছড়িয়ে ডাকলেন।
অভিক ফারদিন।
ইয়েস বাবা।
তোমার রুমে গিয়ে আইরন টেবলটা ওপেন দেখলাম। ফোল্ড করা ছিল না।
ওহ সরি। ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি ওখানে একটা ছবি রেখেছি। দেখে জানিও তোমার মাকে।
সালমা বেগম গালে হাত দিলেন। ছুটে এসে বললেন
হায় হায় তুমি আগে আমাকে বলবেনা। কেমন মানুষ গো তুমি? আমার অভির বউ আমি দেখব না?
তোমার পছন্দ হলো না, কিন্তু তোমার ছেলের পছন্দ হয়ে গেল তখন তুমি কি করবে সালমা?
সালমা বেগম চুপ করে ম্লানমুখে তাকালেন। যেন ভারী অসন্তুষ্ট হলেন তিনি।
আমার ছেলে ও। আমার আর ওর পছন্দের মিল থাকবে না?
অভিক মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
মা আগে তুমি দেখো। ঠিক আছে?
সালমা বেগম খুশি হয়ে গেলেন পাঁচ আঙুলের মাথায় চুমু খেয়ে ছেলের মুখে ছোঁয়ালেন। বললেন
আমার সোহাগা ছেলে।
ওকে। এখন সুজানাকে ডেকে দাও। উনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আবারও সুজানা? ওই মেয়ে কথা বলছে বলছিলাম না।
তোমার মেয়েকে তুমি এতক্ষণ বাড়ির বাইরে রাখতে মা?
সালমা বেগম হকচকিয়ে গেলেন।
ওই মেয়ের বাবা মা ছেড়েছে কেন? আমি তো ছাড়তাম না।
মা এরকম বলতে নেই।
আচ্ছা বাপু আর বলব না। ডেকে দিচ্ছি।
সুজানা ছাড়া পেয়ে তার কিছুপরেই ছুটে এল। বাবারে বাবা যেন চাকরির ইন্টারভিউ নিচ্ছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
সে আসতেই অভিক বলল
গাড়ি রাখা আছে। গিয়ে বসুন।
সুজানা বেরিয়ে গেল। সে রিকশা করে যাবে। সবসময় সাহায্য নিতে ভালো লাগেনা।
অভিক ফোন ঢুকিয়ে বেরুলো বাড়ি থেকে। সদর দরজা পার হতেই দেখলো সুজানা গেইটের কাছে। গলা বাড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।
অভিক গাড়িতে বসে গাড়ি ছেড়ে দিল। সুজানা পিছু ফিরে সটান হয়ে দাঁড়ালো। অভিক গাড়ি তার সামনে দাঁড় করিয়ে বলল
বসুন।
সুজানা পান্ডুরমুখে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসলো।
অভিক গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বলল
আপনি সবসময় দ্রুত বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবেন সুজানা। আপনি পড়েন কখন? এখান থেকে গিয়ে নিশ্চয়ই আপনার ক্লান্ত লাগবে অন্য কাজও থাকতে পারে। তাহলে পড়বেন কখন?
সুজানা চুপ করে বসে রইলো। কিছু পরেই বলে উঠলো..
স্যার একটা রিকশা দেখেছি। ওটার সামনে দাঁড়ালে ভালো হতো।
অভিক গাড়ি দ্রুত টেনে নিয়ে রিকশাটি পার করে গেল । সরিষাবাড়ির সেই বাড়িটার কাছাকাছি আসতেই গাড়ি থামালো। সুজানা গাড়ি থেকে নেমে ধন্যবাদ জানাতে যাবে তার আগেই অভিক গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল। সুজানা নিজের বোকামির জন্য নিজেকে বকলো কিছুক্ষণ। মাঝেমাঝে সে এমন কাজ করেনা। স্যার নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ভেবে নিয়েছে।
গেইট ঠেলে বাসার দিকে যেতে যেতেই দক্ষিণে বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে একজন মহিলা উঁকি দিল।
কি গো সুজানা আজকাল গাড়িতে চড়া চড়ি চলছে।
সুজানা হেসে এড়িয়ে গেল।
বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই সাজিয়া বেগম বললেন
গাড়ি দেখলাম। আজকেও ওদের বাড়ির করে গাড়ি করে এলি? ওদিকে রিকশা পাওয়া যায় না?
আম্মা এতসব দেখে তো টিউশনি পড়াতে পারব না। ঘরের ভেতর বসে থাকতে হবে।
সাজিয়া বেগম মেয়ের পিছু পিছু ছুটলেন। বললেন
রাগ করছিস কেন? মানুষের তো আমাদের কথা শোনাতে বাঁধেনা। তুই সাবালিকা তাই আমার চিন্তা হয়। টিউশনি বাদ দে এটা বলার ক্ষমতা থাকলে তখনই বলে দিতাম। তোর বাপ তো আমার হাতে দুটোকে দিয়ে চলে গেল। একা কতদিক সামলাবো?
সুজানা মায়ের দিকে ফিরে তাকালো। উনি মেয়েকে পিছু করে দাঁড়িয়ে চোখের জল আড়াল করলেন। সুজানা মাকে পেছনে জড়িয়ে ধরলো। বলল
ও আম্মা তোমার মেয়ে এমন কোনো কাজ করবেনা যাতে তোমাকে কথা শোনা লাগে। উনারা খুব ভালো মানুষ জানো? আমাকে একা ছাড়তে চায় না। তারউপর আজ সন্ধ্যে নেমে গেল।
আচ্ছা ঠিক আছে।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব আম্মা। বকোনা কেমন?
বল।
আব্বা তোমাকে কত তাড়াতাড়ি একা করে চলে গেল না? তোমাকে কেউ আর বিয়ে করতে বলেনি?
সাজিয়া বেগম মেয়েকে সরিয়ে দিলেন। বললেন
তোমার বাপ আমাকে দুটো সম্পত্তি দিয়ে গেল না। ওগুলোর দেখাশোনা তো করতে হবে আমাকে। আবার বিয়ে। মুখ ধুঁয়ে চা খেতে আয়।
তোমাকে নানা বিয়ে দিতে চেয়েছিল না আম্মা। দাদুও চেয়েছিল। তাই তুমি সব ছেড়ে ছুঁড়ে এখানে চলে এসেছ।
সাজিয়া বেগম কঠোর চোখে তাকালেন। সুজানা একটুও ভড়কালো না। বলল
আমি তোমাকে আর ভাইকে রেখে কখনো একা কোথাও যাব না আম্মা। যেখানে যাব সেখানে তোমাকে আর ভাইকে নিয়ে যাব।
আকাশকুসুম কল্পনা বাদ দে। জীবন এত সহজ নয়। ফাইনালের পরপরই তোকে বিয়ে দিয়ে দেব আমি। জায়গা বেঁচার কথা চলছে। তারপর বাকি জীবনটা তোর উপর। আমি শুধু আমার কর্তব্যটুকু শেষ করব। লেখাপড়া করানোর দরকার তাই করাচ্ছি। বিয়ে দেওয়াও কর্তব্য সেটাও করব।
আম্মা কেন এসব বলো?
মেয়ে হয়েছ তাই শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে। আমি তোর মামা আর চাচাদের বলে রেখেছি। ভালো ছেলের খোঁজ পেলে যেন বলে। তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে আমি আর সায়েমের দিন কোনোমতে চলে যাবে।
আমি চাকরি নেব আম্মা। জীবন এভাবে চলতে পারেনা।
বিয়ের পর সেটা তোমার আর তোমার বরের ব্যাপার। বিয়ের পর আমার কোনো কথা তোমার শ্বশুরবাড়িতে চলবেনা। অত আশা রেখোনা নিজের ভেতর। আবারও বলছি জীবন অতটা সহজ নয়।
আমি টিউশনি সেড়ে এসেছি আর তুমি আমাকে এসব কথা শোনাচ্ছ।
কথাটা তুই নিজেই তুলেছিস সুজানা। কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও এগুলোই সত্যি।
সুজানার চোখে নোনাজলের ডুবডুবানি।
আমি তাকেই বিয়ে করব যে আমাকে আমার মতো করে চলতে দেবে। একটা ছেলে তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারলে মেয়েটা কেন পারবেনা?
সাজিয়া বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে টেনে বুকে জড়ালেন।
মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললেন
অনেক বড় হ। তেঁতো কথা হয়ত বলি কিন্তু ওগুলোই সত্য মা। বেশি আশাবাদী হবিনা। কারো কাছে কোনো এক্সপেক্টেশন রাখবি না। আমিও কত আশা রেখেছিলাম তোর বাবার উপর।
তোর আব্বার ছাত্রী ছিলাম ছিলাম আমি । হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় কতটা ভয়ে ছিলাম জানিস। খুব শান্তশিষ্ট ছিল এবং কম কথা বলতো তো। খুব ভয় পেতাম। পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম তোর আব্বার মতো মানুষই হয় না। আমি মাস্টারমশাই ডাকলে তোর বাবা হেসে উঠতো। অনেকদিন ওই ডাক মুখ থেকে ফেলতে পারিনি। পরে উনি নিজেই ওই ডাকের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন। কোনোদিন চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারিনি। কত আগলে আগলে রাখতো আমায়। তোকে পেয়ে তো খুশির শেষ ছিল না উনার। তারপর বাবু এল। তারপর সব হঠাৎ করে কি যেন হয়ে গেল। আমি তো একটা অভিযোগ ও শোনাতে পারিনি উনাকে। সেই সুযোগটাও পেলাম না।
সুজানার গাল বেয়ে তরতরিয়ে জল গড়ালো। কেঁপে কেঁপে উঠলো সে। ডুকরে উঠে বলল…
এমন মাস্টারমশাই কারো জীবনে না আসুক আম্মা। আমি কখনো কাউকে তোমার মতো করে ভালোবাসব না। তুমি কিচ্ছু পাওনি আম্মা। কিচ্ছু না।
কিছু পাওয়ার আশায় কেউ কাউকে ভালোবাসেনা পাগল। ওটা এমনি এমনি আপনাআপনি হয়ে যায়। একদিন বুঝবি।
__________________
সোনা রঙা রোদের দেখা মিলেছে কিছু আগে। ফাঁকা রেলওয়ে স্টেশন কিছুক্ষণের ব্যবধানে রমরমা হয়ে উঠেছে। পিঠে ব্যাগ চেপে ঘুমঘুম ফোলা চোখমুখে অপেক্ষারত সবাইকে চমকে দিয়ে প্রতিবারের মতে ঝকাঝক শব্দ করে এসে থেমে গেল রঙিন শাটল। জনকোলাহল বেড়ে গেল আরও।
দলে দলে হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়লো ট্রেনে। সুজানা মেহুল আহির আর নিখিল ইতোমধ্যে বগি দখল করে বসেছে। শান্তা এখনো পৌঁছুইনি।
নির্দিষ্ট সময় হয়ে আসতেই শাটল ছেড়ে দেয়ার পূর্বাভাস জানান দিতেই সবাই হাতের ফোন চেপে শান্তার ফোনের পর ফোন দিতে দিতে শাটল ছেড়ে দিল ঝকাঝক শব্দসুর তুলে।
সুজানার ফোনে ফিরতি ফোনটা আসতেই সে তুলে কানে দিল।
কোথায় তুই?
আমাকে তোল। আরেহ আরেহ ছেড়ে দিল।
সবাই গলা বের করে উঁকি দিয়ে তাকে দেখে হৈচৈ করে উঠলো। আহির পিঠের ব্যাগ মেহুলের কোলে দিয়ে ট্রেন দরজার সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ডাকলো
গাধী আরো তাড়াতাড়ি। তাড়াতাড়ি আয়।
শান্তা দৌড়াতে দৌড়াতে বলল
থামাতে বল না। আর দৌড়াতে পারছিনা।
আরও জোরে। আরেকটু আরেকটু। হাতটা ধর।
সবার চোখেমুখে উত্তেজনা। শান্তা প্রাণপণে ছুটলো ব্যাগটা এক হাতে বুকে চেপে ধরে।
হাতটা বাড়িয়ে দিতেই অকস্মাৎ নিজেকে হালকা মনে হলো হাতটা যেন শরীর থেকে আলাদা হয়ে এল। ঝিমঝিম করে উঠলো সারা দেহ।
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা। তারপর হৈহৈ করে উঠলো সবাই মিলে। বয়ে গেল হাসির ফোয়ারা। এই একরকম ঘটনা কতবার যে ঘটেছে তাদের সাথে।
আহিরের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল শান্তা। পড়নে হাঁটুর নিচ অব্দি সবুজ রঙা কূর্তি আর মিশেল রঙা ওড়নাটা দিয়ে মুখে বাতাস করতে করতে হাঁপাচ্ছে সে। ঘেমে উঠেছে পুরো মুখটা। আহির হাতটা ঝাড়তে ঝাড়তে নিখিলের পাশ ঘেঁষে বসলো।
বলল
হাতটা শেষ আমার।
শান্তা ধপাস করে সিটে বসে পড়লো। বলল
তোর হাত বেডির মতো কেন? কিছু হলেই তোর হাত শেষ হয়ে যায়।
এর পরের বার থেকে তোকে আর তুলবো না। তোর নাম শান্তি দিছে কোন হারামি? তুই গোটা গোটা একটা অশান্তি।
শান্তা মুখ মোঁচড়ালো।
সুজানা হেসে বলল
ওকে আর তুলবি না কথাটা এর আগে অনেক বলেছ বন্ধু। তারপরও তো তুলতে যান আপনি।
সবার ঠোঁটে হাসি। শান্তা ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সবার মুখের দিকে তাকালো। আহির চোখ ফিরিয়ে জানালার বাইরে রাখলো। শান্তা বলল
সবাই হাসছিস কেন?
মেহুল বলল
না এমনি এমনি।
এই আহিরের বাচ্চা ওরা হাসতেছে কেন?
আহির ভুরু কুঞ্চন করে তাকালো।
আমি কি জানি? লাতি দিয়া বের ফালায় দিমু এখন। একদম চুপ থাক। ফটরফটর করবি তো খবর আছে।
শান্তা নাক ফুলিয়ে তাকালো। আহির হাত ঝেড়ে আবারও জানালার বাইরে চোখ রাখলো। নিখিল ইশারায় হাতের তালু দেখিয়ে বুঝালো হাতে ব্যাথা পেয়েছে।
শান্তা ফিসফিস করলো
কি বলিস। বেশি?
নিখিল মাথা নেড়ে হাসলো।
আহিরের দিকে তাকিয়ে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বসে রইলো শান্তা। মেহুল আর সুজানাকে বলল
এখন কি করব?
মলম লাগাতে হবে হয়ত। আগে ক্যাম্পাসে যাই।
_________________
শাটল থেমে গেল সেই চিরচেনা সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এসে। ধুপধাপ হৈ হৈ করে নেমে পড়লো সবাই। সুজানা আর মেহুল যেতে যেতে থেমে গেল নিহাতকে দেখে।
আরেহ নিহাত কোথায় বসেছিলে? আজ দেখিনি তো।
গোমড়ামুখো মেয়েটা একটা জবাব দিল শুধু।
অন্য বগিতে।
তারপরেই চুপচাপ হেঁটে চলে গেল একা একা। মেহুল বলল
ভাব দেখালো নাকি?
সুজানা ঠোঁট উল্টে বলল
ও কম কথা বলে খুব।
পেছন থেকে নিখিল এসে বলল
কথা যখন বলেনা তখন যেচে কথা বলতে যাস কেন?
মেহুল বলল
তোর কারণে হয়ত। তোর তো ওর সাথে যুদ্ধ চলে। তুই আমাদের বন্ধু তাই আমাদের সাথে কথা বলতে চায় না।
তাতে কি যায় আসে? কেন কথা বলতে হচ্ছে? বুঝা আমাকে।
সুজানা বলল
আচ্ছা বাবা আর বলতে যাব না। টম জেরি গেল কই?
নিখিল আঙুল দিয়ে শান্তাকে দেখিয়ে দিল।
আহিরের পেছন ছুটতে ছুটতে শান্তা বলল
দোস্ত দাঁড়া। হাতটা দেখা। আমি সরি।
আহির যেতে যেতে বলল
কিছু হয়নি।
হাতটা দেখা না। বাসা থেকে বেরুতে দেরী হয়ে গেল। দেরী করে ঘুমিয়েছিলাম তো ঘুম ভাঙতে দেরী হলো বুঝলি। তাই এদিকে দেরী হয়ে গেল।
আমি সরি রে। হাতটা দেখা । ধুরর দেখা তো।
আহিরের হাতটা টেনে ধরলো সে। হাতের তালু মেলতেই দেখলে তালুতে লাল ছোপ ছোপ। শান্তা জিভ কামড়ালো। বলল
আল্লাহ! চাপ লেগেছে না?
আচ্ছা তোর এসাইনমেন্ট গুলা আমি করে দেব। ঠিক আছে?
আহির মৃদু হাসলো।
শান্তা তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল
দোস্ত আমি সত্যি সরি। তোর মা দেখলে তো আমার একটা চুলও আস্ত রাখবে না।
আহির থেমে গেল। ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল
একদম কথা বলতে আসবি না আমার সাথে। দূর হ।
চলবে.……….
ভীষণ ব্যস্ততা যাচ্ছে। রিচেক করা হবে