#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_৩৭
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রণালী আজ এসেছে শান্তর সাথে দেখা করতে। খুব শীঘ্রই প্রণালীর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। তাই প্রণালী চাইছে তার আগেই শান্তর সাথে রায়ানের দেখা করাতে।
শান্তর সাথে পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে প্রণালী। হঠাৎ করে সে বলে ওঠে,”শান্ত, অনেক লুকোচুরি হয়েছে। আর নয়। আমি চাই তুমি এবার বাবার সাথে দেখা করো।”
প্রণালীর মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে ভড়কে ওঠে শান্ত। আমতাআমতা করে বলে,”এত তাড়াহুড়ো না করলেই কি নয়?”
প্রণালী কোন বাঁধাই শুনতে রাজি নয়। এদিকে শান্ত বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করেই বেশ বিভ্রান্ত লাগছে তাকে। অনেক ভেবে চিন্তে শান্ত বলে,”আমি এখনো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই প্রণালী। আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও।”
প্রণালীর রাগ হয় ভীষণ। চাপা কন্ঠে বলে,”আর কতদিন সময় নেমে তুমি? আচ্ছা, যত খুশি টাইম নাও৷ আমি আর কিছু বলবো না।”
বলেই প্রণালী উঠে দাঁড়ায়। শান্তর উপর তার বেশ অভিমান হয়। এইজন্য সে হাটতে শুরু করে দেয় সামনের দিকে। আর শান্ত আসতে থাকে তার পিছন পিছন। এমন সময় হঠাৎ করে তার সামনে এসে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রণালী ভ্রুযুগল কুচকে ফেলে।
সে কিছু বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন রায়ান। এসেই অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে তাকান প্রণালীর দিকে। প্রণালী রায়ানকে দেখে ভীষণ চমকে যায়। রায়ান হুংকার করে বলেন,”তুমি এখানে কি করছ? আর তোমার সাথে এই ছেলেটা কেন?”
প্রণালী হঠাৎ করে তব্দা খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো। ভাবল অনেক তো অপেক্ষা করল। আজ যখন সুযোগ এসেই গেছে তখন আর সুযোগটা যেতে দিলে চলবে না। এজন্য সে সিদ্ধান্ত নিলো রায়ানকে শান্তর ব্যাপারে সবটা খুলে বলবে। এদিকে রায়ান রাগ ভড়া দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকাচ্ছিলেন। ছেলেটাকে দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না। কিন্তু এ হলো আবিরের মতো একটা শয়তানের ছেলে। এ ছেলে যে মোটেই ভালো নয় সেটা সহজেই অনুমেয়। তাই রায়ান প্রণালীকে বললেন,”তুমি তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ো।”
“বাবা…”
“বেশি কথা না বলে যা করছি তাই করো। আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না।”
প্রণালী আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ করে গাড়িতে উঠে বসে। রায়ান শান্তর কাছে গিয়ে বলেন,”তোমার আসল পরিচয় আমি জানতে পেরে গেছি। আর কোনদিন যেন আমি তোমাকে আমার মেয়ে বা আমার পরিবারের কারো পাশে না দেখি। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
এই বলে শান্তকে হুমকি দিয়ে তিনি চলে যান। শান্ত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রায়ান প্রণালীকে নিয়ে চলে যান। প্রণালী চুপ করে বসে ছিল গাড়ির মধ্যে। সে ভেবে নিয়েছে এরপর বাড়িতে গিয়ে যা বলার বলবে। তাই সারা রাস্তায় সে আর কোন কথাই বলল না।
বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে রায়ান প্রণালীকে বললেন,”তোমাকে যেন ঐ শান্ত নামের ছেলেটার পাশে আর কোনদিন না দেখি।”
“কেন বাবা?”
“আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আমি যা একবার বলেছি সেটাই আমার শেষ কথা।”
“আমার পক্ষে তোমার কথা শোনা সম্ভব নয় বাবা। কারণ….কারণ আমি শান্তকে ভালোবাসি।”
“প্রণালী!!!”
প্রণালী একটুও দমে না গিয়ে বলতে থাকে,”তুমি এমন করছ কেন বাবা? কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়?”
রায়ান উত্তেজিত হয়ে যান। বলেন,”কাউকে ভালোবাসা অন্যায় না। কিন্তু শান্তর মতো ছেলেকে ভালোবাসা অন্যায়।”
“কেন অন্যায় বাবা? শান্ত মধ্যবিত্ত বলে? ওর সাথে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড মেলে না জন্য? তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি। ছোট থেকে তো তুমি আমাকে শিখিয়েছ মানুষের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী এসব নিয়ে বৈষম্য না করার জন্য। তুমিই তো শিখিয়েছ, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। তাহলে আজ কেন তুমি আমাকে বলছ শান্তর থেকে দূরে থাকতে? তাহলে সবই কি ছিল তোমার লোক দেখানো কথা?”
“প্রণালী! তোমাকে এখন আমি এত কিছু বলতে পারব না। তুমি শুধু এটাই জেনে রেখো ঐ ছেলের পাশে যেন তোমায় আর না দেখি। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
প্রণালী তবুও অদম্য! জেদ দেখিয়ে বলে,”আমি একশোবার শান্তর সাথে গিয়ে দেখা করব। দেখি তুমি কিভাবে আটকাও।”
রায়ান রেগে গিয়ে প্রথমবারের মতো প্রণালীর গায়ে হাত তুলতে যান। যদিও তিনি থেমে যান। তবুও প্রণালী খুব আঘাত পায় এই ঘটনায়। কারণ রায়ান জন্মের পর থেকে আজ অব্দি কখনো তার গায়ে হাত তুলতে চায়নি। এমনকি তার উকিল হওয়া নিয়ে এত বাকবিতণ্ডা হলেও কখনো এমন পরিস্থিতি আসে নি। অথচ আজ! প্রণালী এটা সহ্য করতে পারল না। অশ্রুসিক্ত চোখে দৌড়ে চলে গেল।
রায়ান অসহায় সুরে বলল,”আমার চিন্তাটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এমন করতে না মা। আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। তুমি আর প্রত্যুষ ছাড়া যে আমার কেউ নেই। তাই আমি চাই না। তোমাদের উপর কোন বিপদের ছায়া পড়ুক।”
~~~~~~~~~~~~~~`~~~~~~~~~~~
প্রণালী চুপ করে নিজের রুমে বসে আছে। এমন সময় শান্ত তাকে কল করে। শান্ত ফোন রিসিভ করতেই প্রণালী কাদো কাদো গলায় বলে,”তোমার সন্দেহই ঠিক হয়েছে শান্ত। বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।”
শান্ত বেশ নরম গলায় বলে,”তুমি এত চিন্তা করো না। আঙ্কেল যা করছেন তোমার ভালোর জন্যই করছেন। আমি তোমার যোগ্য নই। তোমাকে তো সেটা আগেই বলেছিলাম। তুমি জোর করে সম্পর্কটা করলে।”
“আমি কোন ভুল করিনি শান্ত। তোমার থেকে আমার যোগ্য আর কেউ নেই। আমি যদি বিয়ে করি তাহলে তোমাকেই করব।”
শান্ত মৃদু হেসে বলে,”তাহলে তো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যে আমার আর তোমার পরিবারের মধ্যে তোমায় যেকোন একজনকে বেছে নিতে হবে। তখন তুমি কাকে বেছে নেবে? আমাকে না তোমার পরিবারকে?”
প্রণালী ধন্দে পড়ে যায়। সত্যিই সে তো ভেবে দেখেনি এমন পরিস্থিতিতে কাকে বেছে নেবে। শান্ত বলে,”তুমি তোমার ফ্যামিলিকেই বেছে নিও। কারণ আমি তোমায় সুখী জীবন দিতে পারব না।”
“আমি তোমার সাথে সুখী হতে চাই শান্ত।”
“তাহলে পারবে নিজের পরিবারকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে? কি হলো বলো পারবে?”
প্রণালী একটু ভেবে বলে,”পারবো।”
শান্তর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে ফোনটা রেখে দেয়।
~~~~~~~~~~~““““~~~~~~~~~
রায়ান সৌভিকের সাথে আজকের ঘটনাটা নিয়ে কথা বলে। সব শুনে সৌভিক হতবাক হয়ে বলে,”আমি ভাবতেই পারছি না প্রণালীর মতো এত বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে ঐ আবিরের ছেলের ফাদে কিভাবে পড়লো। আমার মনে হয় ছেলেটা প্রণালীর মগজ বেশ ভালো ভাবেই ধোলাই করেছে।”
“কি বলছিস টা কি তুই?”
“আমি তো ভয় পাচ্ছি ঐ ছেলের কথায় প্রভাবিত হয়ে প্রণালী যদি কোন ভুল করে বসে..”
“না। আমি আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হতে দেব না। তুই আমায় কোন উপায় বলতে পারবি?”
“একটাই উপায় আছে। ঐ ছেলের কথায় প্রভাবিত হয়ে প্রণালী কোন ভুল করার আগেই প্রণালীর বিয়ে দিতে হবে। তাহলে প্রণালীর দিকে আর ও নজর দিতে পারবে না। আর বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে হবে।”
“কিন্তু এখন এভাবে হঠাৎ করে কিভাবে বিয়ে দেব? একটা ভালো ছেলের খোঁজ তো করতে হবে।”
“আমার কাছে একটা ভালো ছেলের খোঁজ আছে।”
“কে সে?”
“সমুদ্র।”
“মানে? সোহেলের ছেলে?”
“হ্যাঁ। সোহেল বলছিল ওর ছেলের বিয়ে দিতে চায়।”
“আমাকে একটু ভাবার সময় দে।”
“ঠিক আছে। তুই সময় নিয়ে ভাব। সবদিক চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিস।”
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)