একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_38 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
232

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_38
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী নিজের ঘরে মন খারাপ করে বসে ছিল। তার মন মানসিকতা এখন একদম ভালো নেই। ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে। এইরকমই সময় রায়ান প্রবেশ করলেন নিজের মেয়ের রুমে। এসেই প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”তুমি নাকি সকাল থেকে কিছু খাও নি? এসব কি নাটক শুরু করেছ?”

প্রণালী কোন কথাই বলে না। রায়ান প্রণালীর পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”আমি তোমার বাবা প্রণালী। আমি কি কখনো তোমার খারাপ চাইতে পারি?”

প্রণালী কাদো কাদো গলায় বলে,”আমি শান্তকে খুব ভালোবাসি বাবা। ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারব না।”

“শান্ত ভালো ছেলে নয় মা। তুমি বুঝতে পারছ না কেন? শান্তর বাবা কে তুমি জানো?”

“না, জানি না। আর জানতেও চাইনা। আমি বিয়েটা তো শান্তকে করব। তাহলে ওর বাবার ব্যাপারে জেনে কি করবো?”

“বিয়ে শুধু দুজনের মধ্যে হয়না মা। দুটো পরিবারের মধ্যেও হয়। শান্তর বাবা একজন মারাত্মক অপরাধী। যে অতীতে বারংবার আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।”

প্রণালী কিছুটা অবাক হয়। তবে শান্তর প্রেমে সে বেশ ভালো ভাবেই ডুবে গেছে। তাই তো সবকিছু কে অবজ্ঞা করে বলে ওঠে,”শান্তর বাবা যেমনই হোক শান্ত খারাপ ছেলে নয়। আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ওকে চিনি। ওর মতো ভালো ছেলে আর দুটো হয়না। জানো, ও কোনদিন আমার অনুমতি ব্যতীত আমায় স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। সব সময় আমার ভালো মন্দের খেয়াল রেখেছে। সেই ছেলে কিভাবে খারাপ হয়?”

“তুমি ওর বাবার সম্পর্কে কিছু জানো না জন্যই এমন বলছ।”

“আমি ওর বাবার সম্পর্কে জানি না আর জানতেও চাই না। শান্ত আমাকে আগেই বলেছে ওর বাবা একজন অপরাধী, যিনি জেলের ঘানি টানছেন। ও আমার থেকে কিছু লুকায় নি বাবা। ও নিজেও ওর বাবাকে ঘৃণা করে। আমি সবকিছু জেনে ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। আমি জানি ও কোনদিন আমায় ঠকাবে না। তুমি শুধু একবার রাজি হয়ে যাও বাবা।”

রায়ান রাগী স্বরে বলে,”আমি মরে যাব তবুও তোমার সাথে ঐ শান্তর সম্পর্ক মেনে নেবো না। আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি ঐ শান্ত কিভাবে তোমার ব্রেনওয়াশ করেছে।”

“তুমি ভুল বুঝছ। শান্ত এমন ছেলেই নয়।”

” আমাকে তুমি ঠিক ভুল শেখাতে আসবে না প্রণালী। পৃথিবীটা আমি তোমার থেকে বেশি দেখেছি। আমি যেটা বলেছি সেটাই শেষ কথা, শান্তর সাথে তুমি আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।”

“শান্তকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না বাবা।”

“প্রণালী! তোমার অনেক স্পর্ধা আমি সহ্য করেছি আর নয়! এবার আমি তোমাকে আর কোন সুযোগ দেব না। অনেক অবাধ্যতা করেছ তুমি আর না। আমি খুব শীঘ্রই আমার পছন্দ করা ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেব। আর এটাই আমার শেষ কথা।”

বলেই হনহন করে প্রণালীর রুম থেকে বেরিয়ে যান রায়ান। তিনি যাওয়ার পর প্রণালী নিজের ফোন বের করে। শান্তকে কল দিয়ে বলে,”তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে শান্ত।”

প্রণালীর এমন কথায় শান্ত বলে,”রিলাক্স প্রণালী। যা বলার বলো, আমি শুনছি।”

“আমার মনে হয় বাবা আমাদের সম্পর্কটা কোনদিনও মানবে না। উনি তো আমার সাথে অন্য কারো বিয়ে দিতে চাইছেন।”

শান্ত বলে,”আমার মনে হয় তোমার বাবার কথাই তোমার শোনা উচিৎ।”

“এসব তুমি কি বলছ শান্ত? তোমায় আমি কতটা ভালোবাসি তুমি জানো না?”

“আমি জানি প্রণালী। কিন্তু তোমার বাবাকে দুঃখ দিয়ে তুমি কিছু করো এটা আমি চাই না। তাই আমার মনে হয়, তুমি ওনার কথা শুনলেই ভালো করবে।”

“শান্ত, বাবা তোমাকে ভুল বুঝছে। তোমার বাবার অপরাধের কারণে তোমাকেও খারাপ ভাবছে। এই ধারণা তো ঠিক নয়। তাইনা? বাবার এই ভুল ধারণা বদলানোও সম্ভব না। তাই আমি বলছি কি আমরা বিয়ে করে নেই। বিয়ের পর বাবা যখন আমাদের সুখী দেখবে তখন এমনিতেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে। তখন তিনি এমনিতেই আমাদের এই সম্পর্ক টা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেবেন। প্রেমের সম্পর্ক গুলোতে এমনই তো হয় বলো?”

শান্ত কিছুক্ষণ ভাবে। ভাবার পর বলে,”তুমি আরো ভালো করে ভেবে দেখো প্রণালী। আমি চাই না তুমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আজীবন পস্তাও।”

“আমি কোন ভুল করছি না শান্ত। আমি ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি রাজি থাকলে খুব শীঘ্রই আমি তোমার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে রাজি আছি।”

“ঠিক আছে। তুমি যা চাইছ তাই হবো। তুমি মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে নাও। কারণ নিজের পরিবারকে ছেড়ে আসা কিন্তু সহজ নয়।”

“আমি জানি কাজটা সহজ হবে না। কিন্তু কিছু পেতে হলে যে কিছু খোয়াতেই হয় শান্ত। আমি জানি আজ আমি তোমাকে বেছে নিলে একসময় নিজের পরিবারকেও মানাতে পারব। কিন্তু আজ যদি আমি নিজের পরিবারের কথায় তোমাকে ছেড়ে দেই তাহলে আর কখনো তোমায় ফিরে পাব না।”

“আচ্ছা। আমি রাখছি।”

বলেই শান্ত ফোনটা রেখে দেয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সজল চৌধুরীর মুখোমুখি বসে আছেন রায়ান ও সৌভিক। সৌভিকই মূলত প্রণালীর জেদের কথা শুনে রায়ানকে এখানে নিয়ে এসেছেন। এদিকে সজল চৌধুরীও দ্রুত নিজের ছেলের বিয়েটা দিতে চাইছেন।

রায়ান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,”শুনলাম আপনি নাকি নিজের ছেলের বিয়ে দিতে চাইছেন?”

সজল চৌধুরী বলেন,”হ্যাঁ, আসলে আমার ছেলেটা ভীষণ বিগড়ে গেছে যেটা আমি বুঝতে পারছি। এর পেছনে ওর মা মানে আমার স্ত্রী সানিয়ার হাত রয়েছে। ছেলেটাকে এত স্বাধীনতা দিয়েছে যে ছেলেটা গোল্লায় গেছে। এখন আমার মনে হয় ওর স্ত্রীই ওকে ভালো করতে পারবে। কারণ বিয়ে করলে সব ছেলের মধ্যেই একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী কিছুতেই এই বিয়েটা হতে দেবে না। কারণ সে তার বান্ধবীর মেয়ের সাথে সমুদ্রর বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু মেয়েটা একদম ভালো না। এখন সানিয়া কিছুদিনের জন্য লন্ডন ট্রিপে গেছে। আমি চাই এই সময়ের মধ্যে আমার ছেলের বিয়েটা দিয়ে দিতে। যাতে করে আর সমস্যা না হয়। এজন্য আমি বড় অনুষ্ঠান করব না। শুধুমাত্র কাবিনটা করাতে চাই।”

রায়ান বলেন,”আমিও খুব দ্রুততার সাথে আমার মেয়েটার বিয়ে দিতে চাইছি। আর এখন হাতের কাছে ভালো ছেলে পাওয়া মুশকিল। সমুদ্র আপনার মতো এত ভালো একজন মানুষের ছেলে। সে নিশ্চয়ই ভালোই হবে। তাই আমি চাই সমুদ্রের সাথেই প্রণালীর বিয়েটা দিতে। এখন যদি আপনি রাজি থাকেন তো আমি কথাবার্তা আগাবো।”

“আমি কেন রাজি থাকবো না? প্রণালীকে তো ছোট থেকেই দেখেছি ভীষণ ভালো একটা মেয়ে। আর আপনার সাথে আমার এতদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক এটা আত্নীয়ের সম্পর্কে পরিণত হলে তো আরো ভালো হবে।”

রায়ান ভীষণ খুশি হয়ে যান। অনেকটা নিশ্চিত বোধ করেন। সৌভিক বলেন,”তাহলে আমরা একটা কাজ করি ভালো দিনক্ষণ দেখে বিয়ের কথাটা পাকা করি।”

সজল চৌধুরী বলেন,”আমার স্ত্রী এক সপ্তাহ পর দেশে ফিরবে। তাই আমি চাইছি এক সপ্তাহের মধ্যেই কাবিনটা সেরে রাখতে। তারপর নাহয় সময় বুঝে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে কেউ তো আর মানা করতে পারবে না।”

সৌভিক রায়ানকে প্রশ্ন করেন,”তোর কি মত?”

“আমি মিস্টার চৌধুরীর সাথে একমত। আমিও চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক।”

সজল চৌধুরী বলেন,”আগামী পরশু একটা ভালো ডেট আছে। তাহলে এই দিনই বিয়েটা হয়ে যাক?”

রায়ান সায় সাজান। অত:পর দুজন কোলাকুলি করেন।

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here