প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-২ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
304

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

ইরা অনুভব করছে কেউ যত্ন সহকারে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইরা ধীর গতিতে আখিজোড়া খুলে, পিটপিট করে তাকায় কিন্তু স্পষ্ট কিছু দেখতে পায় না, সবকিছু তার কাছে ঝাপ্সা লাগছে। ইরার সামনে থাকা যুবক যখন টের পায়, ইরার জ্ঞান ফিরেছে, সে নিশব্দে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। ইরা মাথায় হাত দিয়ে বেড থেকে উঠে বসে। তার কাছে ধীরে ধীরে সবকিছু স্পষ্ট হচ্ছে। নিজেকে সে কেবিনে আবিষ্কার করে। একজন নার্স ফাইল দেখছিলো, সে ইরাকে উঠতে দেখে বলে, ‘ম্যাম, অবশেষে আপনার জ্ঞান ফিরলো, তবে। আমি এখুনি গিয়ে আমার পরিবারের লোকদের জানিয়ে দিচ্ছি।’

‘ আচ্ছা আমার কি হয়েছিলো? আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। ‘

‘ একটা গাড়ি আপনাকে ধাক্কা দেয়ায় আপনি আঘাত পান যার কারণে আপনি তিন ঘন্টা যাবত অজ্ঞান ছিলেন তবে ভাগ্য ভালো আপনার, সমস্ত টেস্ট করানো হয়েছে তেমন গভীর ক্ষত হয়নি। তিন- চার দিন রেস্ট নিলেই আপনি সুস্হ হয়ে যাবেন। ‘

ইরা স্বস্হির নি:শ্বাস ফেলে, পুনরায় প্রশ্ন করলো,

‘ কিন্তু আমাকে এখানে কারা বা কে নিয়ে এসেছে?’

‘ আপনার কাজিন ভাই-বোন।’

‘ আমার কাজিন?’

‘জ্বী। আপনার ফ্যামেলি কেও তারা খবর দিয়েছে। সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে। আমি তাদের ভিতরে আসতে বলছি। ‘

নার্স বাইরে চলে গেলো। ইরা বুঝতে পারছে না, নার্স তার কোন কাজিন ভাই-বোন দের কথা বলছে? কিছুক্ষনের মাঝেই, স্নেহা এবং স্নেহার স্বামী অর্নব ভিতরে প্রবেশ করে। তাদের সাথে ইরার বাবা- মাও প্রবেশ করে। ইরার বাবা আফজাল হোসেন এবং মা কবিতা ইরার কাছে গিয়ে দ্রুত বসেন। আফজাল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘ মারে? তুই এখন ভালো আছিস তো? তুই এখনো বড় হলি না, এইভাবে কেউ রাস্তায় চলাফেরা করে? আজ যদি তোর বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতো তখন কি হতো আমাদের?’

‘ সত্যিই, এতো বড় হয়েও মেয়ে তার বাবা- মায়ের কষ্টটা বুঝেনা। বুঝলে কি এইভাবে বেপরোয়াভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতো?’

কবিতা ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। আফজাল হোসেনের চোখেও জল, মেয়েটা তার বড় আদরের! আজ মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে তিনি কি করতেন?কীভাবে বেঁচে থাকতেন? ইরা মায়ের অস্রু মুছিয়ে দিলো, স্নেহা মামার কাধে হাত রেখে বললো,

‘ মামা প্লিজ তোমরা এইভাবে ইরার সামনে ইমোশনাল হয়ে পরো না, নাহলে ওর উপর চাপ পডবে, যা ওর শরীরের জন্যে মোটেও ভালো নয়। ‘

আফজাল হোসেন ভাগ্নির কথা শুনে নিজেকে সামলে নিলেন। ইরার মুখস্রীতে অজস্র বিস্ময়ের ছাপ উপলব্ধি করতে পেরে, অর্নব হেসে বলে,

‘ কিগো শালিকা? আমাদের দেখে বুঝি চমকে গেলে? আসলে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম বুঝলে? কিন্তু দেশে ফিরে যে হঠাৎ এমন সারপ্রাইজ পাবো নি। ‘

স্নেহাও অর্নবের সাথে তাল মিলিয়ে বলে, ‘ আমরা তোদের সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে না বলে দেশে ফিরেছি, ভেবেছিলাম চমকে দিবো কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে ফিরার পথে, দেখলাম তুই এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরে আছিস। ভাগ্যিস দূর থেকে তোকে দেখে মাহির চিনে ফেলেছিলো। নাহলে..কি যে হতো!’

স্নেহার কথা শুনে ইরা চমকে যায়! মাহির তাকে চিনে, উদ্বার করেছে? এতোবছর ইরাকে সচক্ষে না দেখেও এতো দ্রুত কীভাবে চিনে গেলো মাহির? তাও দূর থেকে দেখে। এতোকিছুর মাঝে ইরার জানতে ইচ্ছে হলো, মাহির কোথায়? সে নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে, প্রশ্ন করে ফেললো,

‘ আচ্ছা মাহির কোথায়? ‘

‘ মাহির ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছে। এতোক্ষন তো কেবিনেই ছিলো। তোর জ্ঞান ফিরে আসার পর, বেড়িয়েছে। তুই হয়তো খেয়াল করিস নি।’

ইরা ছোট্ট করে ‘ওহ ‘ বললো। কথা বাইরে গিয়েছিলো, সে ভিতরে এসে, ইরার পাশে বসে বললো, ‘ আপা, মাহির ভাই ডাক্তারের সাথে কথা বলেছে।ডাক্তার তোমাকে রিলেজ করে দিয়েছে, আমরা তোমাকে নিয়ে বাসায় ফিরবো কিছুক্ষনের মাঝেই, তুমি কি উঠতে পারবে, নাকি আমি তোমাকে উঠতে সাহায্য করবো। ‘

‘ না, আমি পারবো। আমি কি রুগী নাকি? এইসব ছোট খাটো এক্সিডেন্টে ইরাবতীর কিচ্ছুটি হয়না বুঝলি? আম স্ট্রং গার্ল!’

ইরা বিছানা থেকে নামতে গেলেই, হঠাৎ তার মাথা ঘুড়ে যায় তখনি কোন পুর‍ুষালী শক্ত হাত তাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে। ইরা মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখে মাহিরকে। মাহিরকে এতোবছর সচক্ষে দেখে অবাক হয় সে! লম্বা চওড়া সুঠোম দেহীর অধিকারী এক যুবক! বয়স বিশ প্লাস! ছোটবেলায় মাহির তার কোমড়ের সমানও ছিলো না, অথচ সে এখন মাহিরের বুক অবধি! মাহির বিরক্তিতে বলে উঠে,

‘ এইভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার কি বাচ্চামি কখনো শেষ হবেনা? জানেন দূর্বল শরীর তবুও আগ বাড়িয়ে নিজে নিজে উঠতে গেলেন কেন?’

মাহির তাকে আস্তে করে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ইরা মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ তুই আমাকে একদম জ্ঞান দিবি না! আমি বাচ্চামি করি মানে? তুই বড় নাকি আমি বড়? ‘

মাহির গম্ভীর কন্ঠে ভ্রু কুচকে বলে,
‘ আপনি বয়সে বড় হয়েছেন ঠিকই কিন্তু আপনি এখনো বুদ্ধির দিক থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চা।’

মাহির কথা শুনে উপস্হিত সকলে হেসে ফেলে। ইরা মুখ কালো করে বসে থাকে।

,______________

ইরাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আহরার ইরার এক্সিডেন্ট এর বিষয়টা জানতো না। তাকে বাসায় আসার পরে জানানো হয়েছে। বর্তমানে সকলে ড্রইং রুমে রয়েছে। আহরার ইরার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বললো, ‘ ইস! কত বাজে ভাবে চট পেয়েছো! তোমার কি এখনো কষ্ট হচ্ছে ইরা?’

‘ উফ, আহরার! আসার পর থেকে প্রায় ১০বার একি কথা জিজ্ঞেস করছো। আমি একদম ফিট আছি বুঝলে? ‘

আহরার আজফাল হোসেন এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ আংকেল, এতো বড় ঘটনা ঘটলো আর আপনারা আমাকে কেন জানালেন না?’

‘ আমাদের ভুল বুঝবে না বাবা! আসলে সবকিছু এতো তাড়াহুড়োতে হয়ে গেলো যে তোমাকে বলার সময় পাইনি তবে ভেবেছি যখন রিলিজ আজ করেই দিবে, তাহলে তোমাকে শুধু শুধু হসপিটালে ডেকে কি লাভ? তাই ভাবলাম বাসায় ফিরেই তোমাকে সব বলবো। ‘

মাহির এককোণে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আহরার মাহিরকে দেখে বলে, ‘ তাহলে তুমিই সেই মাহির? এসো, কাছে এসো। তোমার সাথে আলাপ করা বাকি। দুলাভাই এবং আপুর সাথে তো আলাপ হয়ে গেলো। ‘

মাহির এগিয়ে গিয়ে, আহরারের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, ‘ আমি আহনাফ শেখ মাহির। নাইস টু মিট ইউ মি: আহরার আহসান। ‘

আহরার কিছুটা ভ্যাবাচ্যাখা খেয়ে, বিনয়ের সাথে হাত মিলিয়ে বললো, ‘ নাইস টু মিট ইউ!’

মাহিরের কথা শুনে কবিতা জোড় পূর্বক হেসে, স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললো , ‘ মাহির দেখি আগের মতোই আছে। শুনলাম ভার্সিটিতে উঠেছে! বাংলাদেশে পড়লে বোধহয় ইন্টারের পরীক্ষা দিতো।’

‘ না, মামি। বাংলাদেশে থাকলেও মাহির অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকতো! তোমাদের মনে নেই? মাহির তো দুই ক্লাস ডপ দিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে। ‘

‘ তা, ঠিক কিন্তু তোমরা আসবে আমাদের বলবে না? কত বছর পর এলে! কোন আয়োজন করার সুযোগই পেলাম না। ‘

অর্নব হেসে বলে, ‘ আহ মামি! আমাদের নিয়ে ব্যাস্ত হবেন না। বললাম না? আমাদের সারপ্রাইজ প্ল্যান ছিলো। তাছাড়া কয়েকদিন পর ইরার বিয়েতে তো আমাদের আসার কথাই ছিলো, আমরা তার আগেই চলে এলাম আর কি! এবার অনেকদিনের ছুটি নিয়েছে। একবারে বিয়ে খেয়ে তারপর যাবো।’

অর্নবের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মাহির। অত:পর কপাল কুচকে উপরে চলে যায়। ইরা মাহিরের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। মাহির হঠাৎ এইভাবে উপরে চলে গেলো কেন?

চলবে…..
আপনারা অনেকে ছোট বেলায় করা মাহিরের আচরণ নিয়ে কথা বলছেন, আচ্ছা এখানে অস্বাভাবিক এর কি আছে? দশ বছরের বাচ্চা তার বন্ধু ইরাকে নিয়ে জেলাস, কারণ সে অন্যদের সাথে খেলে, তার সাথে নয়। এখানে কোন ভালোবাসার ফিলিংস দেখানো হয়নি। আমি বুঝিনা সাধারণ জিনিসটাকে এমন প্যাচানোর কি দরকার? আর বর্তমানে বাচ্চারা অনেকটা পাকামি করে কথা বলে সেটা আমরা সবাই জানি এবং আমি অনেক কাজিন সার্কেলে দেখেছি যে বয়সে বড় কাজিন তার থেকে ছোট কাজিনদের ভয় পায়। এখানে হাসাহাসি করার কি আছে আজব? গল্পকে গল্পের মতো নিন, নাহলে পড়িয়েন না অনুরোধ রইলো। ভুল- ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here