#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আহরার ইরার হাত ধরে সযত্নে ইরাকে রুমে নিয়ে এসেছে। ইরাকে বিছানায় বসিয়ে, আহরার প্রেস্ক্রিপশন গুলো ভালোভাবে দেখে নিলো। ইরা বিছানায় পা তুলে বসে আছে। আহরার ইরাকে এক গ্লাস পানি এবং একটা ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ চট করে ওষুধ টা খেয়ে নাও ইরা। তারপর রাতের পরে আরেকটা ওষুধ আছে, সেগুলোও লক্ষ্মি মেয়ের মতো খেয়ে নিবে কিন্তু। ‘
ইরা ঠোট উল্টে বাচ্চাদের মতো নাখোচ করে দিয়ে বলে, ‘ আমি তো এখন সুস্হ বলো, আমি এখন ওষুধ খাবো কেন? এতো ওষুধ খেতে আমার মোটেই ভালো লাগেনা। ‘
‘ কে বললো তুমি সুস্হ? সবেমাত্র হসপিটাল থেকে ফিরেছো, টাইম মতো ওষুধ খেতে হবে বুঝলে? আমি কথাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, কথা তোমাকে টাইমমতো ওষুধ দিয়ে দিবে। আমি তো আর সারাদিন থাকবো না তাও আমি ফোন দিয়ে খবর নিবো। ‘
ইরা আহরারের গলা জড়িয়ে ধরে আবদারের সুরে বলে, ‘ তাহলে মি: এমন ব্যাবস্হা করুন,যাতে আপনি সবসময় আমার কাছে থাকতে পারেন। তাহলে নিজ হাতে আমাকে টাইমমতো ওষুধআও খাওয়াতে পারবেন ‘
আহরার আলতো হেসে, ইরার গাল টেনে বলে,
‘ আমার রুপকথার রাণী, আরেকটু অপেক্ষা করো, তোমার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হলেই,তোমাকে পারমানেন্টলি আমার করে নিয়ে আসবো। ‘
ইরা হেসে ফেলে, ইরার সাথে তাল মিলিয়ে আহরারও হাসে প্রানখুলে। ইরার পাশের রুমেই মাহির ছিলো। সে সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে, কালো টি-শার্ট গাঁয়ে জড়িয়েছে। হাত দিয়ে সিল্কি চুলগুলো ঝাঁকিয়ে, বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে। পাশের রুম থেকে ইরা এবং মাহিরের হাসাহাসির শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। মাহির দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো সে বিরক্তিতে চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আহরার তাকে দেখে ফেলায় তাকে হাক ছেড়ে ডাক দেয়। আহরারের ডাকে মাহির দাঁড়িয়ে পরে। আহরার বসে থেকেই বলে, ‘ ভিতরে এসো, মাহির। আমরা গল্প করি। ‘
মাহির ভিতরে প্রবেশ করলো না। বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই বললো, ‘ সরি মি: আহরার। আজকে নয় অন্য একদিন গল্প করবো। আমাকে একটু বেড়োতে হবে এখন। তাছাড়া আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না, গল্প করার সময় অনেক পাবেন। আপাতত আপনারা কনটিনিউ করুন। ‘
মাহিরের কথায় ইরা হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠে, ‘ এতো রাতে কোথায় বের হচ্ছিস তুই?’
মাহির বিরক্তি হয়ে গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, ‘ তা জেনে আপনি কী করবেন? আমি আপনাকে কৈফিয়ত দিতে মোটেও বাধ্য নই। ‘
মাহির কোনপ্রকার উত্তরের অপেক্ষা না করে, বেড়িয়ে গেলো। ইরার মন খারাপ হয়ে গেলো, ছোটবেলার বন্ধু ছিলো মাহির তার। সেই মাহির এতোটা বদলে গেলো কেন? তাকে যেনো সহ্যই করতে পারেনা। ইরার আখিজোড়া ছলছল করছে। আহরার ইরার হাত ধরে তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
‘ আমি বুঝতে পারছি মাহির একটু অন্যরকম টাইপের, তুমি মন খারাপ করো না। ‘
‘ মাহির ছোটবেলার থেকেও বেশি একরোখা টাইপের হয়ে গেছে, আমি বুঝতে পারছি না কিছু। এতোবছর পর দেখা অথচ পাশে বসে একটু গল্প ও করলো না।’
‘আহ, ইরা! বললাম না মন খারাপ করিও না। সবেমাত্র লন্ডন থেকে ফিরেছে। এতোবছর পর তোমাদের সাথে দেখা মাহিরের। আমার মনে হয় মাহিরের সবকিছুর সাথে খাপ খায়িয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। তাই মাহিরকে সময় দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘
ইরা ছোট্ট করে ‘হুম ‘ বললো। মাহির বাগানে হাটতে হাটতে একটা সিগারেট ধরায়। অসহ্য লাগছে সবকিছু! অসম্ভব কষ্ট অনুভব হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে সবকিছু ফেলে পুনরায় লন্ডনে চলে যেতে কিন্তু সে চাইলেও পারবে না। এমন এক কঠিন পরিস্হিতিতে পরে গিয়েছে সে। না পারছে সইতে, না পারছে থাকতে। কি বিচ্ছিরি অবস্হা! মাহিরের সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে যেনো নিজের ভিতরের কষ্টগুলোকে আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। মাহির আকাশের পানে চেয়ে বলে, ‘ হে ধরনী শুনছো? আচ্ছা দিনশেষে আমার প্রিয় মানুষগুলো সবসময় হারিয়ে যায় কেন? ‘
_____________
সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসেই, ইরা বায়না ধরে তার মায়ের কাছে, সে আজকে ভার্সিটি যাবে, তার জরুরী ক্লাস আছে আজকে। কবিতা খুন্তি উচু করে বলে, ‘ খবরদার না! কয়েকটা দিন শুধু বেড রেস্টে থাকবি। কোন ভার্সিটিতে যাওয়া হবেনা। ‘
‘ আহ, আম্মু বুঝার চেষ্টা করো, অনেক ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস! সামনে এক্সাম, মিস দিলে চলবে না। ‘
‘ কিন্তু তোকে একা কী করে ছাড়বো এমন অবস্হায়। আমাদের ড্রাইভার তো ছুটিতে, তার মধ্যে তোর বাবা, অর্নবকে নিয়ে কারখানা ভিজিটিং এ গিয়েছেন। ‘
স্নেহা এবং মাহির সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলো। স্নেহা কবিতার কথা শুনে হঠাৎ প্রস্তাব দেয়,
‘ আচ্ছা মাহির তো ইরাকে ড্রাইভ করে দিয়ে আসতে পারে। মাহির তুই গিয়ে বরং ইরাকে পৌঁছে দিয়ে আয়। ‘
মাহির তৎক্ষনাৎ কর্কষ গলায় জবাব দিলো, ‘ আমি পারবো না। আমার কিছু পুরনো ফ্রেন্ডদের সাথে আজকে আমার মিট করার প্ল্যান আছে। ‘
মাহিরের এমন কথা শুনে ক্ষোভে তেতিয়ে উঠে ইরা। এই ছেলের এতো কিসের ভাব? তাকে ভার্সিটি নিয়ে যাওয়ার সময়টুকুও নেই। অথচ এই ছেলেটা একসময় তার সবথেকে বেশি ভালো বন্ধু ছিলো। ইরা ভেবে রেখেছে আজ তাকে ভার্সিটিতে মাহিরকেই ড্রপ করে দিতে হবে। ইরা স্নেহার কাছে এসে বলে, ‘ আপা আজ আমার খুবই জরুরী ক্লাস যেতেই হবে, এখন মাহির যদি না যায়, তাহলে আমাকে নিজেই হেটে হেটে চলে যাবো। ‘
স্নেহা তৎক্ষনাৎ বলে উঠে, ‘ এই শরীর নিয়ে তুই একা যাবি? কিছুতেই না। মাহির আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা, তুই ইরাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিয়ে আসবি।’
‘ কিন্তু আপু? ‘
‘কোন কিন্তু আমি শুনবো না। এমন করিস না ভাই আমার। দিয়ে আয় ইরাকে। ‘
বড় আপার অনুরোধ ফেলতে পারলো না মাহির। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরাকে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। গাড়ির রেডিতেও গান বেজে চলেছে,
‘ ওহে কি করিলে বলো.পাইবো তোমারে..’
ইরা মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ এইসব কি ছাতার বিরহের গান বাজাচ্ছিস। দে একটা ঝাকানাকা গান দে তো। ‘
মাহির বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ আমার জীবনের ত্যাজপাতা বানিয়ে, উনি আসছে ঝাকানাকা গান শুনতে। ‘
‘ কিরে কি এতো বিড়বিড়ি করছিস?’
‘ কিচ্ছু না, কোন ঝাকানাকা গান বাজাতে পারবো না। ভার্সিটি কেউ ঝাকানাকা গান বাজাতে বাজাতে যায়? আজব আপনি! ‘
‘ করলা তুই!’
মাহির চোখ গরম করে প্রশ্ন করলো,
‘ কি আমি?’
মাহিরের চোখ রাঙ্গানি দেখে ভয়ে ঢুগ গিললো ইরা। সে হঠাৎ আবারোও মাহিরকে ভয় পাচ্ছে কেন? ভয় পাওয়া স্বাভাবিক, তার ধারণামতে ছোটবেলার মতোই আছে বদমাশ ছেলেটা। ইচ্ছেমতো থাপড়ানো গেলে শান্তি পেতো ইরা, কিন্তু সে জানে তার এই আশা কখনো পূরণ হবেনা।
______
মাহির গাড়ি পার্ক করে ভার্সিটির পার্ক জোনে। ইরা বেড়িয়ে আসে গাড়ি থেকে। ইরার পিছন পিছনে মাহির ও বেড়িয়ে আসে। ইরা বলে, ‘ তুই বের হলি কেন?’
‘ আপনি ক্লাস করে আসুন, আপনাকে নিয়েই আমি ফিরবো।’
‘ তোর না বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা? তুই বরং যা। আমি আহরারকে ফোন করে ডেকে নিবো। ‘
ইরার কথা শুনে মাহির ত্যাড়া করে উত্তর দেয়,
‘ আমাকে যখন একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই দায়িত্বটুকু অন্তত আমাকে পালন করতে দিন। আপনি যান। আমি অপেক্ষা করছি। ‘
ইরা মাহিরের কথার পাছে কোন জবাব না দিয়ে এগিয়ে যায়। ক্লাস শেষ করার পর, ইরা এসে অবাক হয়ে যায়, কারণ ক্যাম্পাসে মাহিরকে ঘিড়ে কয়েকজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু জুনিয়ররাই নয় এমনকি ইরার ক্লাসমেটরাও। ইরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ শাকচুন্নি গুলো শেষমেষ এই পিচ্চি মাহিরের দিকেও নজর দিচ্ছে! কি সর্বনাশ! ”
চলবে…
[ রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যাই, তাই প্রতিদিন গল্প দেয়া কষ্টকর। আশা করি আপনারা বুঝবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন]