প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-৬ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
235

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের ভালোবাসার মানুষটির পাশে অন্য রমনীকে দেখে একমুহুর্তের জন্যে বুকটা কেঁপে উঠে ইরার। আহরার ইরার ভার্সিটির সামনে এসেছিলো, সাথে মেহরুনও ছিলো। ইরা এবং আনিকাকে দেখে, আহরার মেহরুনকে সাথে নিয়ে, ইরার সামনে এসে বলে, ‘ ইরা, ও মেহরুন, আমার মায়ের বান্ধুবির মেয়ে, ইডেন কলেজে চান্স পেয়েছে, ঢাকায় তেমন কেউ নেই, তাই আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন থেকে পড়াশোনা করবে। ‘
‘ ওহ নাইস টু মিট ইউ মেহরুন। ‘

‘ নাইস টু মিট ইউ ইরা আপু। তুমি আহরার ভাইয়ের কি রুপকথার রানী তাইনা?’
মেহরুনের কথা শুনে ইরা ভ্রু কুচকে আহরারের দিকে তাকায়। আহরার ভরাট মুখখানা লজ্জায় ছেঁয়ে আছে। সে বিনয়ের সাথে, ইরার পাশে দাঁড়িয়ে, ইরার হাত ধরে বলে, ‘ ইরা আমার হবু স্ত্রী, আর মাত্র কয়েকটাদিন পরেই আমাদের বিয়ে। ‘

মেহরুন এক গাল হেসে জবাব দেয়, ‘ বাহ, আপনাদের তো বেশ মানিয়েছে, ইরা আপু তোমার ছবি দেখেছিলাম, আন্টিকে যখন গ্রামে এসেছিলাম তখন দেখেছিলাম, ছবির থেকে বাস্তবেও বেশ সুন্দর আপু তুমি। ‘

মেহরুনের কথা শুনে আহরার তৎক্ষনাৎ বলে উঠে, ‘ দেখতে হবে না? কার হবু বউ?’

আহরারের দিকে চোখ গরম করে তাকায় ইরা। আহরার দমে যায়। ইরা ভারি গলায় বলে উঠে, ‘ আহরার তুমি ওকে তো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলে, তাহলে ওকে ড্রপ করে দিয়ে আসো। আলাপ তো হলোই। ‘

‘ কিন্তু…’

‘ আমার ক্লাসের সময় হচ্ছে, আমি বরং যাই, এখন। চল আনিকা। ‘

ইরা আনিকার সাথে ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে গেলো। আহরার নিশ্চিত ইরা তার উপর বেশ রেগে আছে। সে আর না দাঁড়িয়ে, মেহরুনকে পৌঁছে দিয়ে আসলো।

______
ক্যাম্পাসে ক্লাস করে, বাইরে বের হতেই ইরা দেখতে পেলো আহরার দাঁড়িয়ে একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে কিন্তু তাতে কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই ইরার। সে হাটতে থাকে। আহরার ইরার পিছনে পিছনে এসে বলে, ‘ শাহাবাগে গিয়ে নিজে বেছে বেছে আপনার জন্যে গোলাপ ফুলগুলো নিয়ে এসেছি, দয়া করে গ্রহণ করুন।’

‘ আমি মোটেও গ্রহণ করবো না।’

আহরার লাজুক হেসে বলে,
‘আপনার প্রেমিকের দেয়া গোলাপ ফুলগুলো গ্রহণ না করে, অবহেলা করবেন না। এতে আপনার প্রেমিক কষ্ট পাবে, ভিষন কষ্ট হবে। ‘

‘ ওহ আচ্ছা তাই নাকি? ‘

‘ জ্বী, তাই। আপনি কি বুঝতে পারছেন প্রেমিকা সাহেবা? প্রতিটি ফুলে আমার আপনার প্রতি সুপ্ত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। ‘

ইরা হেসে ফেলে। অত:পর ফুলগুলো নেয়। আহরার বুকে হাত দিয়ে বলে, ‘ এইযে ম্যাডাম আপনি একফালি হাসি দিলেন, মনে হলো দুনিয়ার একরাশ সুখ এসে ধরা দিচ্ছে। ‘

ইরা মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ এইসব সাহিত্যিক কথা বলে আমাকে গলানোর মোটেও চেষ্টা করবে না। ‘

‘কিন্তু কিসের জন্যে রাগ করেছো, সেটা তে বলবে?’

‘ মেহরুন এসেছে তার কথা তো কিছুই বলো নি আমাকে। আগে তো ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে কল দিতে, ছোট্ট ঘটনা নিয়ে, অথচ মেহরুনের কথা বললে না কেন?’

‘ কীভাবে বলতাম? ভালো করে দেখো, তোমার ফোন কালকে থেকে সুইচঅফ! মিনিমাম ১০০ মিসড কল ঝুলে আছে, খেয়াল করে দেখো। ‘

আহরারের কথা শুনে, ইরা দ্রুত ফোন চালু করে দেখে সত্যিই ১০০ এর উপরে মিসড কল ঝুলে আছে। ইরা জিহবায় কামড় দিয়ে বলে, ‘ ইস! অনেক বড় মিস্টেক হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। ‘

ইরা কেমন যেন বেবিফেস করে কথাগুলো বলছে। কি দারুন মিষ্টি লাগছে। আহরার উচ্চস্বরে ‘পাগলি ‘ বলে, এক হাত দিয়ে ইরাকে জড়িয়ে ধরে, ইরাও হেসে ফেলে।

গাড়িতে বসে রাস্তার ওপার থেকে সব কিছু দেখছে মাহির। ইরার সাথে আহরার এতো ঘনিষ্ঠতা নিজের চোখে সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। মাহির ঘাড়ি ঘুড়িয়ে,নদীর পাড়ে চলে যায়। সেখানে গিয়ে, একপাশে ধপ করে বসে পরে। মাহির থুত্নিতে আঙ্গুল ঠেকিয়ে আখিজোড়া বন্ধ করে, কান্নার সুরে আওড়াতে থাকে, ‘ ইরাবতী, আমার অনেক যন্ত্রনা হচ্ছে, কেমন যেন অসহ্য লাগছে সবকিছু। আপনাকে হারানোর বিরহে বুকটা হাহাকারে ভরে উঠেছে, তিক্ততায় পরিপূর্ণ আজ জীবন, তা কি আপনি কখনো উপলব্ধি করতে পারবেন ইরাবতী?’

মাহিরের ভাবনার মাঝেই, ইরার ফোন আসে। মাহির ননিজেকে সামলে নিয়ে, ফোনটা রিসিভ করতেই, অপাশ থেকে ইরা বলে উঠে, ‘ মাহির, আজকে তোকে আমায় নিয়ে যেতে হবেনা, আমার ভার্সিটিতে একটা অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ আছে, তা শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। ‘

‘ তাহলে আমি সন্ধ্যায় আসি?’

ফোনটা লাউড স্পিকারে ছিলো, তাই আনিকা আগ বাড়িয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘ মাহির শুনো, আজকে উনার আহরার ভাই এর সাথে সন্ধ্যায় ডেট আছে, দুজন আজ আলাদা টাইম স্পিন্ড করবে, তাই তোমার এসে কাজ নেই, আহরার ভাই এসেই নিয়ে যাবে। ‘

আনিকার কথা শুনে, মাহিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সে দ্রুত ফোনটা কেটে দেয়। তা দেখে ইরা ভরকে যায়,
ইরা চোখ গরম করে তাকায় আনিকার দিকে, অত:পর বলে, ‘ তুই ও না পারিস! এতো কথা কে বলতে বলেছে তোকে?’

__________
মাহির আকাশের পানে একপলক তাকিয়ে বাকা হেসে, নিজের চোখের পানি বৃদ্ধআঙ্গুল দিয়ে মুছে উঠে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আহরার নিজের অফিসের সমস্ত কাজ গুছিয়ে ফেলে, আজকে অফিসে সে একাই রয়েছে, আজকে সকলের হাফ টাইম অফিসের সময় ছিলো কিন্তু আহরার যেহুতু কম্পানির এমডি, তাই সে আজ বেশিক্ষন থেকে কালকের মিটিং এ-র জন্যে কাজটা এগিয়ে রেখেছে, ঘড়িতে তখন প্রায় ৭টা বাজে, আহরার দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ‘ওহ শিট ‘ বলে। তার পৌঁছানোর কথা সাড়ে ছয়টা অথচ এখন ৭ টা বাজে, ইরা নিশ্চই তার জন্যে অপেক্ষা করছে, ভাবতে ভাবতে আহরার নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো, ইরাকে ফোন করিয়ে জানাতে হবে, সে কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে, কিন্ত তখনি তার টনক নড়লো, ফোনটা সে ভুলে গাড়িতেই ফেলে এসেছে। আহরার অত-শত না ভেবে, দ্রুত দরজা খুলে বের হতে যায় কিন্তু দরজা খুলছে না, মনে হচ্ছে ভিতর থেকে কেউ দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, আহরার ভেবে পাচ্ছে না কে তার দরজা এভাবে বন্ধ করে দিলো? আহরার অপেক্ষা না করে, দ্রুত টেলিফোন টা হাতে নিয়ে, দাড়োয়ান এর নাম্বারে ফোন দেয়, হয়তো সে ভুলে লক করে চলে গেছে কিন্তু দুভার্গ্যবশত, টেলিফোন এর লাইনটা কেটে আছে। সে চাইলেও যোগাযোগ করতে পারছে না। আহরার পরেছে মহাবিপদে! সব অঘটন একসাথে কিকরে ঘটছে? সে এখন অফিসে আটকে পরেছে, ওইদিকে ইরা তার জন্যে অপেক্ষা করছে। আহরার কিছু ভাবতে পারছে না। তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

_______
ইরা অনেক্ষন যাবত ভার্সিটির বাইরে, আহরার জন্যে অপেক্ষা করছে কিন্তু আহরারের আসার কোন নামগন্ধই নেই, ইরা অনেকবার ফোন ট্রাই করেছে কিন্তু আহরার ফোনটা ধরছে না। বাধ্য হয়ে ইরা হাটা ধরে, সে ভেবেছে সে সোজা আহরারের অফিসে গিয়ে, আহরারকে নিয়ে আসবে। ইরার ভাবনার মাঝেই, ইরার ফোনে ছোট্ট মেসেজ আসে, আহরারের নাম্বার থেকে। মেসেজ ভেসে উঠে, ‘ ইরা আমি অনেক জরুরী কাজে ব্যাস্ত আছি, আজকে আসতে পারছি না, তুমি অপেক্ষা করো না, বাসায় চলে যাও। আমাকে ফোন করতে হবেনা, আমি ব্যাস্ত আছি তাই ফোন রিসিভ করতে পারবো না।’

আহরারের মেসেজ পেয়ে ইরা তপ্ত নি:শ্বাস ফেলে, আজকে তবে তাদের প্ল্যানটা ক্যান্সাল?মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো ইরার, সে বাসার পথে রওনা দিলে, তখনি পিছন থেকে কেউ তার কাধে হাত রাখে, ইরা পিছনে তাকিয়ে দেখে মাহির, মাহিরকে দেখে ইরা প্রশ্ন করে ‘ তুই? এখানে?’

‘ আসলে, আমি বাসায় ফিরছিলাম, আপনাকে দেখে দাঁড়ালাম, আপনি এখনো এখানে কি করছেন? আপনার তো আজকে ডেটে যাওয়ার কথা। ‘

‘ তা আর যেতে পারলাম কই? আহরার যা ব্যাস্ত মানুষ, হঠাৎ জরুরী কাজে আটকা পরেছে, তাই প্ল্যান ক্যান্সাল হয়ে গেছে। ‘

ইরার মুখ বিষাদে ছেয়ে আছে, যা মোটেও ভালো লাগছে না মাহিরের। তাই সে বলে উঠে, ‘ আচ্ছা, আপনি তাহলে বাসায় উঠুন, একসাথেই যাই। ‘

‘ আচ্ছা চল। ‘

ইরা গাড়িতে উঠে বসে। মাহির গাড়ি চালানো শুরু করে, কিছুদূর যেতেই ইরা লক্ষ্য করে, গাড়ি তাদের বাড়ির রাস্তায় যাচ্ছে না, অন্য রাস্তায় যাচ্ছে। ইরা ভরকে গিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ মাহির, তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস? এইটা তো বাড়ির রাস্তা না। ‘

মাহির কোনপ্রকার জবাব দেয় না, শুধু বাঁকা হাসে।

চলবে

( আপনাদের কি মনে হয় ইরাকে মাহির কোথায় নিয়ে যাবে?)
তিনদিন গল্প না দেয়ার জন্য দু:খিত, আসলে ইদের ব্যাস্ততায় আমি রাইটিং ব্লকে ছিলাম, এখন থেকে নিয়মিত দিবো ইনশাআল্লাহ, সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থি।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here