#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২২

0
496

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২২
#Lamyea_Chowdhury

বাবার কথায় নক্ষত্র ম্লান হাসলো। সামজিদ হোসেন আবার বললেন, “কি হলো বললে না যে?”
নক্ষত্র কৌতুকমাখা হাসি হেসে বলল, “তোমার কি মনে হয়?”
সামজিদ হোসেন খানিক ভেবে বললেন, “দুটো হবার সম্ভাবনাই সমান সমান।”
নক্ষত্র ভ্রুকুটি করে বলল, “বৃত্তান্ত বলো তো বাবা।”
সামজিদ হোসেন ছেলের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে ছেলের পাশের চেয়ারে বসলেন। তারপর আরাম করে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, “প্রথমত খালি চোখে দেখলে সবাই একবাক্যে বলবে তোমরা তোমাদের মাকে বেশি ভয় পাও।”
নক্ষত্র কৌতূহলী হয়ে বলল, “আর পূর্ণদৃষ্টিতে দেখলে কি বলবে?”
“তোমার কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে আব্বু।”
নক্ষত্র কফিতে চুমুক দিয়ে আগ্রহী হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। সামজিদ হোসেন অনেকটা সময় চুপ করে থাকার পর বললেন, “আমার থেকে তোমরা যেভাবে দূরে সরে থাকো আমার তো মনে হয় তোমরা আমাকে তোমাদের মায়ের চেয়েও বেশি ভয় পাও।”
নক্ষত্র এ কথার কোনো জুতসই জবাব খুঁজে পেল না। সে সময় নিয়ে আরাম করে কফি শেষ করল। তারপর ধীরে সুস্হে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “প্রশ্নটা এমনও হতে পারতো তোমরা তোমাদের মাকে বেশি ভালোবাসো নাকি আমাকে?”
নক্ষত্র কেমন অভিমানী চোখে তাকালো বাবার দিকে। পরক্ষণেই আবার আসছি বাবা বলে হন্তদন্ত হয়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
….
শায়েরী রেস্টুরেন্টে ফিরে গিয়ে মৌনকে আর পেল না। সেখানে দাঁড়িয়েই বেশ কয়েকবার কল করল মৌনকে। কিন্তু, মৌন বারংবার ফোন কেটে দিলো। শায়েরীর মাথা কাজ করা একদম বন্ধ করে দিলো। হতবুদ্ধি, দ্বিধাগ্রস্ত সে তড়িঘড়ি করে সিএনজিতে উঠল। বাসায় ফিরে গিয়ে আদুরী থেকে একটা বুদ্ধি নিতে হবে তার। এই মুহূর্তে সে পুরোপুরি দিশেহারা অবস্হায়। ভাগ্যিস আদুরীর আজ অফ ডে। নয়তো এই রোদে আদুরীর মেডিকেলে আবার যেতে হতো তাকে। শায়েরীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলে রাস্তায় জ্যাম পড়ল না। বিশ মিনিটের মাঝেই সে বাসায় পৌঁছে গেল। ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে চাবি খুলল। তাদের তিনজনের কাছেই অতিরিক্ত চাবি থাকে। কেউ একজন এলে এতে করে অন্যদের নিজেদের কাজ ফেলে ছুটে এসে দরজা খুলতে হয় না। শায়েরী তাড়াতাড়ি করে লক খুলতে গিয়ে হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ ফেলে দিলো। বিরক্ত মুখে ব্যাগ তুলে লক খুলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে। তারপর নিজেদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু আদুরীকে ঘরে পেল না। এমনকি ওয়াশরুমেও না। আদুরী কখনো রান্নাঘরে পা মাড়ায় না তবুও শায়েরী রান্নাঘরেও উঁকি দিয়ে আদুরী আছে কিনা পরখ করে নিলো। অবশেষে বিরক্ত হয়ে আদুরীকে গলা ছেড়ে ডাকতে যাবে ঠিক তখনই আদুরীর কণ্ঠ শুনতে পেল। শায়েরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেই কণ্ঠকে অনুসরণ করে গেস্টরুমের দিকে গেল। গেস্টরুমের দরজা ভেজানো ছিল। শায়েরী বিনাসংকোচে দরজা ঠেলে ঘরে উঁকি দিলো। পরক্ষণেই সে আবিষ্কার করলো তার পা দুটো কাঁপছে। আশপাশ কেমন দুলে উঠছে বারবার। নিজের চোখজোড়াকে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ঘরের ভিতরের অন্য মানুষ দুটোর তখন কোনো হুঁশ জ্ঞান নেই। তারা হিতাহিত জ্ঞান ভুলে নিজেদের মাঝে আদিম খেলায় মত্য, পাগলপারা, দিগ্বিদিক! শায়েরী ত্রস্ত পায়ে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। তার পা দুটো কেমন অসাঢ় লাগছে। সে ভেঙে পরা মানুষের মতন বিধ্বস্ত হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় ঢলে পড়ল। এতক্ষণ সে কি দেখলো! চোখ বন্ধ করে দু’হাতে মাথা চেপে ধরল তার। ঘৃণায়, তিক্ততায় গা রি রি করছে। অনবরত মাথাও ঘুরছে তার। সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ অসার হয়ে পড়ে রইল সে। ঠিক কতটা সময় এভাবে সে বসে রইল তার কোনো হিসেব নেই শায়েরীর। তৈমুর যখন সন্তুষ্ট চিত্তে বিজয়ীরূপে মধুচাখা ভ্রমরের মতন খোশমেজাজে ঘর থেকে বের হলো তখনও শায়েরী বিধ্বস্ত অবস্হায় ঠায় বসেছিল। ড্রয়িংরুমের সোফায় শায়েরীকে দেখে তৈমুর আঁতকে উঠে বলল, “শায়েরী তুমি এখন এখানে?”
শায়েরীর চোখ মেলতে ইচ্ছে করল না। তাছাড়া চোখ মেলে তৈমুরের দিকে তাকাতে তার লজ্জা এবং একইসাথে অসহনীয় বিরক্ত লাগছে। তাই চোখ মুদেই বসে রইল। তৈমুর খানিক ইতঃস্তত করে কথা না বাড়িয়ে বাইরে যেতে উদ্ধত হলো। আদুরীও তখন গুনগুন করতে করতে ঘর থেকে বের হলো।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here