সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ৭

0
779

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ৭

.

মালতী আর ওর মা বিদ্যাকে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। কারন এটা কোন স্বাভাবিক বিদ্যা ছিলনা। যার রূপই অন্যরকম ছিল…….।

বিদ্যার চারপাশে আগুন জ্বলছে আর বিদ্যা সেই আগুনের মধ্য চুপ করে বসে আছে। কালো কোকড়ানো লম্বা লম্বা চুল মাটি ছেয়ে গেছে। অদ্ভুদ এক লাবন্যময় চেহারা।

এদিকে তান্ত্রিক বিদ্যাকে দেখে আরো জোড়ে জোড়ে মন্ত্র পড়া শুরু করে দিল। তান্ত্রিক প্রচন্ড খুশি হল। মনে হয় সাত রাজার ধন সে হাতে পেয়েছে।

মালতী আর ওর মা বিশ্ময়ের সাথে বিদ্যার দিকে চেয়ে আছে। এমন সময় দুরে একটা মহিলা এসে দাড়ালো।

” বিদ্যা,,,, মা আমার, আমার কাছে আসো বলে মহিলাটি বিদ্যাকে ডাকলো।”

এমন সময় বিদ্যা চোখ খুলতেই এক আলোর ঝলকানি এসে তান্ত্রিককে আঘাত করলো। তান্ত্রিক ছিটকে গিয়ে একটা গাছের সাথে বারি খেয়ে নিচে পড়ে যেতেই ঐ মহিলাটি এসে তান্ত্রিকের গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে রক্ত চুষে খেতে লাগলো। মহিলাটির মুখ আর তান্ত্রিকের ঘাড় দিয়ে গলগল করে রক্তের ঢেউ খেলছে। কেউ প্রান মনের সুখে আহার করছে আর কেউ নিজের জিবন বাঁচানোর জন্য হাত-পা ছুড়িয়ে দাপাদাপি করছে।

এমন দৃশ্য দেখে মালতী আর ওর মা প্রান পনে দৌড়াতে লাগল। আজ তারা কি দেখলো! আজ যদি তারা বেঁচে যায় তাহলে, জিবন থাকতেও আর বিদ্যার পিছনে লাগতে যাবেনা।

অপুর রুম ঘেঁষে বড় লম্বা কদম গাছটি সমস্ত ইতিহাসের কালজয়ী হয়ে দাড়িয়ে আছে। পূর্নিমা চাঁদের আলোয় পুরো গাছটি ঝলমল করছে। কদমফুল গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাছের ডালে একটা খুব অপরূপ সুন্দরী নারী বসে আছে। তার খানিকটা দুরে ঠিক বিদ্যার মত অবিকল দেখতে একটা ছোট মেয়ে তার মায়ের চুল দিয়ে দোলনা বানিয়ে দোল খাচ্ছে।

” মা, বিদ্যা দিদি আমাদের সাথে কেন থাকেনা?”

” ও খুব স্পেশাল বাবা, ওকে আমাদের সাথে মানায় না।”

” দিদি আমাকে ভালোবাসে?”

” নিশ্চয় ভালোবাসে।”

” তাহলে দিদি আমাদের কাছে নেই কেন?”

” তুমি তোমার দিদির সত্ত্বা মা। এক সত্ত্বা মানুষের মাঝে থাকে অন্য সত্ত্বা আমার কাছে রেখেছি।”

” মা, আমার নামও বিদ্যা, দিদির নামও বিদ্যা কেন?”

” কারন তোমরা যে এক। বললাম না তোমরা একই কিন্তু তোমাদের সত্ত্বা দুইটা।”

” আমরা যদি এক হই তাহলে আমরা রক্ত পান করি আর দিদি ওগুলো খায় কেন? ওগুলো দেখলেই গা গুলায়।”

” ওগুলো পবিত্র খাবার। এভাবে কোন বস্তুকে অপমান করতে নেই মা….।”

মেয়েটি আবার দোল খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তার এই পিচাশ মাকে সে বড্ড ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে একমুহুত্ত্বও থাকতে পারবেনা।

অন্যদিকে তার মা গাছের ডালে বসে চাঁদের পানে চেয়ে অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে। আমি কি আমার কন্যাকে ঐ অঘোরী তান্ত্রিকদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো? তারা যে সকাম ও নিষ্কাম দুই পদ্ধতিতেই মন্ত্র প্রয়োগ করে। তারা কোন কিছুরই বাঁচ-বিচার আর করবেনা। কারন তারা জেনে গেছে বিদ্যা আমার মেয়ে।

এখন প্রশ্ন হল, এই মহিলাটি কে?
মহিলাটির নাম “বৃন্দা”। সে একজন চুরেল/ ডায়েন। আর সেই বিদ্যার আসল মা। বিদ্যাকে শ্যামল আর সাধনার কাছে দিয়ে চলে আসে বৃন্দা। শ্যামলের ছোট ভাই সাজিতের সাথে বৃন্দার বিয়ে হয়েছিল। তারা খুব সুখেই ছিল। কিন্তু সমস্যা বাধে, সাজিতদের বাসায় ওর এক বন্ধু এসে। ওর বন্ধুটি ছিল তন্ত্র এ মান্ত্রিক শক্তিসাধক। সে বৃন্দার আসল পরিচয় সাজিদের সামনে তুলে ধরে। তারপর থেকে সব শেষ। সাজিত কিছুতেই আর বৃন্দাকে মেনে নেয়নি। এমনকি বৃন্দাকে ডির্ভোস দেওয়ার আগেই সে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে। বৃন্দা লজ্জা আর অপমানিত হয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

সে ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারতো এবং তার শক্তির দিয়ে সব কিছু শেষ করে ফেলতে পারতো কিন্তু কিছু না করে ও চুপচাপ চলে আসে। তখন বৃন্দা প্রেগন্যান্ট ছিল। তারপর সে বিদ্যার জন্ম দেয়। বিদ্যার জন্মের সাথে সাথে বিদ্যার শরীর থেকে সমস্ত শক্তি কেড়ে নিয়ে সেই শক্তিকে একটা অবয়ক রুপ দেয় বৃন্দা। যে বিদ্যার ২য় সত্ত্বা। শ্যামলের কোন কন্যা সন্তান ছিলনা। তাই বৃন্দা গিয়ে শ্যামল আর সাধনার কাছে তার মেয়েকে অর্পন করে আর আশ্বাস দেয়, বিদ্যা সাধারন মানুষের মতই জিবন যাপন করবে। ওদের কাছে বিদ্যাকে রেখে এসে দুর দেশে বিদ্যার ২য় সত্ত্বাকে নিয়ে বৃন্দা বসবাস করতে শুরু করে।

বিদ্যাকে যখন সাধনা এদেশে রেখে যায় তখন ওখানে গিয়ে বৃন্দাকে সে আহ্ববান করে। তারপর বৃন্দাকে সব কথা খুলে বলে। তারপর থেকে বৃন্দা এখানে বিদ্যার পাশাপাশি অবস্থান করছে। তার একমাত্র কলিজার টুকরো কন্যাসন্তান যে বড়ই বিপদের মধ্য রয়েছে।

পরদিন সকালে সবাই খেতে বসেছে। অপু বিদ্যাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এমন সময় ঝড় ঝড় করে আকাশ হতে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। বিদ্যা বৃষ্টিতে ভিজবে বলে ঐ অবস্থায় ভোঁ দৌড় দিল উঠানে। বাধ্য হয়ে ভাতের প্লেট নিয়ে অপুও ওর পিছন পিছন গেল।

” বিদ্যা, এতটুকু খাবার শেষ কর! আর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”

” আমি এখানে খাবো অপুদা।”

” পাগলামো করিস না, বৃষ্টির মধ্য কেউ খায় নাকি?”

” আমি খাই বলেই বিদ্যা ওখান থেকেই দৌড়।”

অপু খাবার প্লেটটা ওখানে রেখেই বিদ্যার পিছনে দৌড়। অপুর পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। এই অবস্থায় অপুকে দেখতে আরো ভালো লাগছে। সেই রুপ অনুরাধা বারান্দায় দাড়িয়ে থেকে ভক্ষন করছে। অপুকে দেখলেই ওর বুকের ভিতর একটা নেশা ধরে যায়।

বিদ্যা আর অপু দু’জনেই ভিজছে। বিদ্যা ভিজতে ভিজতে বাসার বাহিরে চলে গেল। অপু কেবল পা বাড়াতে যাবে এমন সময় অনুরাধা অপুকে টান দিয়ে গাছের আড়ালে নিয়ে গেল।

” অনুরাধা তুই!”

“হুম আমি বলেই অপুকে জড়িয়ে ধরল অনুরাধা।”

” অনুরাধা ছাড়, আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করিসনা।”

“অপুদা, তুমিতো আমায় ভালোবাসতে! তাহলে কি এমন হল যে, আজ ঐ বিদ্যাকে পেয়ে সব ভুলে গেলে?”

ভালবাসি বলে এই না যে, তোর সাথে নোংরামিতে লিপ্ত হতে হবে। আমাকে আগেও যেমন দেখেছিস এখনো তেমন দেখবি বলে অপু অনুরাধার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।

কিন্তু অনুরাধা আজ প্লান করেই মাঠে নেমেছে। হয় আজ সবাইকে জানিয়ে ছাড়বে না হয় অপুকে আপন করে নিবে। অপু, আজ যদি তুমি আমায় পত্যাখান করো তাহলে সবাইকে আজ জানিয়েই ছাড়বো। দেখি তোমার সম্মান বড় না অন্যকিছু।

” আমাকে ব্লাকমেইল করছিস?”

” ব্লাকমেইল করবো কেন! তোমার থেকে জাষ্ট ভালোবাসা আদায় করতে চাই। এখন ডিসিশন নাও, তুমি কি চাও?”

” অপু এভাবে ফেঁসে যাবে সেটা কল্পনায়ও আনেনি। তোর যা ইচ্ছা তাই কর। আমাকে কোন কিছুতেই ভয় নামক ছলনার আশ্রয় নিয়ে আটকাতে পারবিনা। অপু বিদ্যাকে খোঁজার জন্য সেখান হতে পা বাড়ালো।”

” ওকে বলে অনুরাধা ওর শাড়ীর আঁচল বুক থেকে খুলেই অপুকে জড়িয়ে ধরল। দেখ, এখন আমি কি কি করি।”

দুর থেকে বৃন্দা অনুরাধার সব কাজ দেখছিল। এবার বৃন্দা বিদ্যা নামক অবয়ক কে বলল,” মা, ঐ নারী তোমার প্রিয় জিনিস তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছে। তাকে শায়েস্তা করে আসো তো?”

“অপু দাদা কি আমায় চিনে মা? ওটাতো দিদির খেলার সাথী।”

” ও তোমারও খেলার সাথী। দিদি আর তুমি বলতে আলাদা কিছু নেই। আজই তোমার দাদা তোমার সাথে খেলা করবে, কথা বলবে, আদর করবে। যাও, ঝটপট করে কাজ করে এখানে চলে আসতো মা!”

” ঠিক আছে মা বলে মায়ের কথা শুনেই বিদ্যার ২য় সত্ত্বা অবয়কটি এক দৌড়ে গিয়ে ওর হাতটা লম্বা করেই পিছন হতে অনুরাধার চুল ধরেই অপুর সামনে টেনে হিচড়ে কাঁদায় ছুড়ে ফেলল।

অপু নিজেও চমকে উঠলো। অনুরাধাকে কেউ যেন টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছেনা।

অনুরাধাকে কাদার ভিতরই পা ধরে হিচড়ে নিয়ে গেল উঠানে। অনুরাধার চিৎকারে বাসার সবাই এসে দেখে ওর শরীরে শাড়ী নেই। মালতী দৌড়ে একটা কাপড় নিয়ে এসে অনুরাধাকে ঢেকে দিল। বাসায় হৈচৈ বেধে গেল। অনুরাধাকে দেখার মত ছিল। পুরো শরীরে কাঁদায় মাখামাখি। অনুরাধা নিজেও বুঝতে পারছেনা ওর সাথে এতক্ষন ধরে এসব কি হল।

শেষে অঞ্জনা আর মালতী মিলে ধীরে সুস্থে ওকে তুলে রুমে নিয়ে গেল।

মালতী কাঁদছে আর অনুরাধার শরীর মুছে দিচ্ছে। মালতী কাঁদতে কাঁদতে বলল,” কি হয়েছিল তোর?”

অনুরাথা থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সব কিছু খুলে বলল ওর মাকে।

এবার মালতী ক্ষেপে গিয়ে অনুরাধাকে একটা ধমক দিয়ে বলল, ” তুই আবার অপুর পিছে লেগেছিস? বিদ্যা বেঁচে থাকতে তুই অপুর গায়ে হাত দিতে পারবিনা। আমি যা দেখেছি তা যদি তুই দেখতি তাহলে আর অপু অপু করতিস না। তোর মুখে যেন অপুর নাম আর শুনতে না পাই।”

অনুরাধা আর কোন কথা বলতে পারলোনা। শুধু থরথর করে কেঁপেই গেল।

বৃষ্টির মধ্য অপু বিদ্যাকে একপ্রকার জোড় করেই ধরে আনলো। বিদ্যা হাঁচি ফেলতে ফেলতে ওর অবস্থা শেষ।

তোকে কতবার বললাম, বৃষ্টিতে ভিজিসনা, ভিজিসনা ভিজিসনা! তবুও তুই কেন ভিজতে গেলি? এখন অসুখে কে ভুগবে! আমি ভুগবো না তুই ভুগবি বলে অপু ওকে রুমে এনে জামাটা পাল্টিয়ে দিয়ে বলল,” এখানে একদম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবি, আমি আসছি।”

অপু নিচে চলে গেল। অনুরাধারার তখন কি হল বুঝা গেলনা। অপু অনুরাধার রুমে গিয়ে দেখে রুম ভর্তি মানুষ। সবাই একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ বলছে অনুকে ভুতে ধরেছে কেউ বলছে প্রেত্নী ধরেছে।

এদের ড্রামা অপুর দেখতে ভালো লাগছেনা। সেখান থেকে কেবল অপু পা বাড়াবে এমন সময় অঞ্জনা অপুকে ডাকলো।

অপুকে দেখেই অনুরাধা ভয়ে কুকড়ে গেল। অনুর ভাব দেখে মনে হয় সব অপু নিজে করিয়েছে।

“অপু দেখতো, অনুধারার কি হয়েছে?”

সবাই তো বলছে ভুতে ধরেছে। দেখ গিয়ে, সত্যি সত্যিই ভুতে না ধরে। অপু আর এক মুহুত্ত্বও দেরী করলোনা। গোসল করার জন্য চলে গেল।

অপু গোসল সেরে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যার দিকে তাকাতেই ওর পিলে চমকে গেল। অপু দেখল, বিদ্যার পাশে এক অপরুপ সুন্দরী মহিলা বসে আছে। বিদ্যা এর মধ্য ঘুমিয়ে পড়েছে আর মহিলাটি বিদ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর চোখের জল ফেলছে।

এই আপনি কে বলেই দৌড়ে আসতেই মহিলাটি ওর লম্বা চুলের বেনী দিয়ে অপুকে পেঁচিয়ে ফেলল। তারপর মুখে আঙ্গুল পুরে বলল,”” শশশচুপ,,,, আমার মেয়ে জেগে যাবে।”

অপু এবার নিজেকে সংযত করে আস্তে আস্তে বলে উঠলো,” আপনি কে বলেন তো! দেখে তো মনে হচ্ছেনা আপনি সাধারন কোন মানুষ।”

বৃন্দা হেঁসে বলল,” আমি এবং বিদ্যা দু’জনেই অসাধারন।”

বৃন্দা কিছু একটা মন্ত্র পড়তে শুরু করলো আর বিদ্যার চারদিকে একটা সুরুক্ষা কবজ তৈরি হল। মনে হচ্ছে বিদ্যাকে স্বচ্ছ কাচের বিশাল ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
বৃন্দা আবার মন্ত্র পড়তেই ওর হাতে একটা কাঁচের জার এসে গেল।

” বিদ্যা, বের হও মা! আজ তোমাকে নতুন কিছু দেখাব।”

” বিদ্যার মায়া শক্তির অবয়ক টি এক নিমিষেই জার থেকে বের হয়েই বিদ্যার শরীরে যাওয়ার জন্য বিদ্যার রক্ষা কবচের উপর আছড়ে পড়ল। কবচের শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে অবয়কটি ছিটকে দুরে গিয়ে পড়ল। মা বলে ডেকে উঠলো অবয়কটি।

বাবা, আমি বলিনি তোমার দিদির শরীরে তোমার প্রবেশ করা নিষেধ! কেন আবার ওর শরীরে প্রবেশ করতে গেলে?

মা, আমার কষ্ট হয় দিদিকে ছেড়ে থাকতে বলেই অবয়কটি সম্পূর্ন ভাবে বিদ্যার রুপ ধারন করলো। কিন্তু ওর পা দু’টি পিছন দিকে রইল। যাকে বলে উল্টা পা।
একদম বিদ্যা কিন্তু পা দু’টো সম্পূর্ন উল্টা।

বৃন্দা অপুকে ছেড়ে দিয়ে ইশারা করে খাটে বসতে বলল। অপুতো ঘেমে একদম একাকার। এমন দৃশ্য সে কোনদিনও দেখেনি।

এবার বৃন্দা মুখ খুলল, বিদ্যা যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ওর অবয়কটি বিদ্যার আসল রুপ ধরতে পারে। বিদ্যা জাগ্রত অবস্থায় ওর অবয়ক কখনো বিদ্যার শরীর পাবেনা। বিদ্যার শরীর মহিনী বশীকরণ কবজ, ধনদা কবজ এবং বাগলামুখী কবজ দ্বারা বন্ধ করা আছে। তাই বিদ্যার ২য় সত্ত্বা বিদ্যাকে ছুতে অবদি পারবেনা।

বৃন্দার কথা বলার ফাঁকে অবয়করূপী বিদ্যা তখন ওর মায়ের কাছে এসে মায়ের শাড়ীর আঁচল ধরে দাড়ালো।

আমি বিদ্যার আসল মা বলে বৃন্দা অপুকে সব কিছু খুলে বলল। সবকিছু শুনে অপু ওর কপালের ঘাম মুছতে লাগলো। অপুর এমন অবস্থা দেখে বৃন্দা হেঁসে বলল,” অপু চিন্তা করোনা, বিদ্যা সম্পূর্ন একজন মানুষ। ওর ভিতর থেকে সমস্ত শক্তি আমি তুলে নিয়েছি। বিদ্যার সমস্ত শক্তি কে, তুমি কি তা জানো? তোমার সামনে যে বিদ্যা দাড়িয়ে আছে সেই বিদ্যার আসল শক্তি।”

বিদ্যা ওর মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টা পায়েই পুরো রুমে হাটতে লাগলো। বৃন্দা অপুর সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে এমন সময়, বিদ্যা গিয়ে রুমের এক কোন থেকে একটা মহিলাকে টেনে হিচড়ে বের করে আনলো। মা, এ আমাদের খাবার। আজ আমি খাবার সংগ্রহ করেছি। কি মজা আমি আজ খাবার সংগ্রহ করেছি।

বিদ্যার মা মহিলাকে দেখেই চুপ হয়ে গেল। এটা আর কেউ না, অপুর বাবা বিদ্যাকে যার নামে বলি দিতে চেয়েছে এ সেই লালপ্রভা নারী। যার পুরো শরীর রক্তের মত টকটকে লাল।

” এই তুই আমায় ছাড়বি! ছাড় বলছি? এতটুকু মেয়ের সাহস কি করে হল লালপ্রভার গায়ে হাত দেওয়া!”

” না ছাড়বোনা, আজ আমি প্রথম মা আর আমার জন্য আহার খুঁজে পেয়েছি। আর তুই বলছিস, আমি তোকে ছেড়ে দিব?”

” বিদ্যা, আমার মেয়ে ; তাকে ছেড়ে দাও। আমরা সবাইকে ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দেই। তুইও ভালো হয়ে যা আর অপু আর ওর পরিবারকে মুক্তি দিয়ে নিজের পথ ধর।”
বৃন্দা এবার বিদ্যা রুপী অবয়ককে বলল,
“বিদ্যা, লালপ্রভা কে ছেড়ে দাও মা! আমরা সবাইকে একটা সুযোগ দেই তাই না?”

” না মা, এ দিদিকে খুব অত্যাচার করে। একে খেলেই সব সমস্যা সমাধান। আজ তো একে খেয়েই ছাড়বো।”

এমন সময় লালপ্রভা ওর রুপ সাপে পরিনিত করেই বিদ্যারুপী অবয়ককে শূন্য তুলে ফ্লোরে একটা আছাড় মারতেই বৃন্দার বৃদ্ধ আঙ্গুল থেকে কালো ধোয়া গিয়ে বিদ্যাকে ধরল আর বৃন্দার লম্বা চুল গিয়ে লালপ্রভার পুরো শরীর পেঁচিয়ে শূন্যতে তুলে ধরেই একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠল, “তুই আমার বাছা, এই বৃন্দার বাছাকে হত্যা করবি? আর আমি বেঁচে থাকতে তুই সফল হবি সেটা কি করে ভাবলি লালপ্রভা! তোকে সুযোগ দিব কিন্তু অন্যভাবে।”
বৃন্দা লালপ্রভার দু’পা ওর মায়া শক্তি দিয়ে কেটে ফেলে। লালপ্রভা যন্ত্রনায়, লজ্জা,অপমানে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে চলে যায়।

এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে অপুর ভিষন ভয় পেয়ে গেল। এরা মা-মেয়ে অপুকে একের পর এক ভেলকি দেখিয়েই চলছে।

বৃন্দা অপুকে অনেক অজানা তথ্য জানিয়ে বিদ্যার ২য় সত্ত্বাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে চলে যেতেই বিদ্যার উপর থেকে সেই কাচের কবজটি ভ্যানিস হয়ে গেল। কিন্তু বিদ্যা ঘুম থেকে আর জাগলোনা। বিদ্যা আর জাগবেওনা। কারন বিদ্যা জেগে উঠলে বৃন্দা অবয়করূপী বিদ্যাকে দিয়ে কোন শক্তিশালী কাজই করতে পারবেনা। যতক্ষন না সমস্ত সমস্যা সমাধান না হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত বিদ্যা এই অবস্থায় পড়ে থাকবে।

পরদিন খুব ভোরে বাসায় পুরো অঘোরীর দল প্রবেশ করলো। বৃন্দা সব প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে। বিন্দা লম্বার একটা আয়না ঐ সব অঘোরীদের উপর ফেলে দিল। অসাবধান বশতে এক অঘোরী সেই আয়নার দিকে তাকাতেই সাথে সাথে ভষ্ম হয়ে গেল।

বাঁকি অঘোরীগুলো একসাথে দো’তলায় দাড়িয়ে থাকা বৃন্দার দিকে চাইলো। সাথে সাথে প্রচন্ড রাগ আর ক্ষোভের শিকার হল বৃন্দা। একসাথে সবার চোখ দিয়ে পানির ফোয়ার ছুটল এবং সেই স্বচ্ছ পানি বৃন্দাকে ধাওয়া করলো। এই অমূল্য পানি থেকে বৃন্দার বাঁচা একদম অসম্ভব।

[] চলবে……….[]

বিদ্রঃ আমার শরীর এখনো সুস্থ হয়নি। আগে একটু লেখা ছিল তাই কষ্ট করে খানিকটা শব্দের জোয়ার বাড়ালাম। অসুস্থ শরীর নিয়ে লেখা খুব কষ্টকর।
এই কটা দিন গল্প পোষ্ট করা কিছুটা অনিয়মিত হবে। কবে দিব জানিনা, তবে চেষ্টা করবো দ্রুত গল্প দিতে। সবাই ভাল থাকেন এবং পরিবার পরিজনদের নিয়ে সহিসালামতে সময়গুলো অতিবাহিত করেন। এটাই সবার জন্য রইল আমার পক্ষ থেকে দোয়া।
আমীন

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/09/sidur-suddhi-07/

………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha.73

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here