মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১৬)

0
277

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১৬)
সায়লা সুলতানা লাকী

সারারাত আর ঘুম হলো না। চোখ বুঝে পড়ে থাকল কিছু সময় যদি আজও আম্মু আসে সেই আসায়। কিন্তু না আজ আর আম্মুর দেখা মিলল না। রুশকে জড়িয়ে ধরে আছে লাবন্য । ভাইটা খুব বেশি ভেঙে পড়েছে। মনে হচ্ছে ও কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। কেমন জানি বোনের গা ঘেঁষে ঘেঁষে আশ্রয় প্রত্যাশা করছিল। লাবন্য ওর মনের অবস্থাটা খুব ভালোই বুঝতে পারছিলো তাই আজ নিজের কাছেই রাখল। রুশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“তুই ভয় পাইস না, আম্মু নাই তাতে কি আমিতো আছি! তোর জন্য যা যা করতে হয় তোর এই আপু তা সব করবে। এই ব্যাপারে যত কঠিন হতে হয় তাই হবে। তোকে একটুও কষ্ট করতে দিবে না।এটা তোর আপুর প্রমিজ তার নিজের কাছে করা ।” কথাটা বলে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে আবার চোখ বুঝল। কিন্তু তাতেও ঘুম আসল না। আবার বিরবির করতে লাগল “আম্মু ভাইয়ের দায়িত্বতো আমি নিলাম কিন্তু আমাকে কে দেখবে? আমার ভুলগুলো কে শুধরে দিবে, কার কোলে শুয়ে আমি আমার সব ক্লান্তি দূর করব, তাতো তুমি বলে গেলে না। তুমি কি দেখতে পাচ্ছো তোমার মা, তোমার বোন তোমার জন্য কাঁদছে, তারা আজ অনুতপ্ত। তুমি কি তাতে খুশি?” বলতে বলতে নিজের চোখ ভিজে উঠল একটা সময়। হিমেল কে এখন খুব দরকার ছিল ওর কাঁধে মাথা রেখে কিছুক্ষণ মন খুলে কাঁদতে পারলে হয়তে মনটায় একটু শান্তি পেতো। কিন্তু তাতো আর সম্ভব না। ওর মতো সুখী খুব কমই আছে দুনিয়ায়। পৃথিবীর এত এত কুৎসিত দিকগুলো ওর অজানাই রয়ে গেছে। কত কি প্ল্যান করেছিলাম, হোমা আপু আসার পর এই সেই আনন্দে মাতবে দুই পরিবার। প্ল্যান ছিলো যেকোন ভাবে দুইবোনকে এক করা হবে। জীবনের রঙিন স্বপ্নগুলো মনে হয় এই যাত্রায় শুধু স্বপ্নই হয়ে রইবে। এই সব ভাবতে ভাবতে ভোর রাতের দিকে চোখ বুঁজে এল ওর ঘুমে।

সকালে উঠে দেখতে পেলো বাসার সবার থমথমে চেহারা। ইচ্ছে করেই লাবন্য কারউ সাথে আগ বাড়িয়ে কোন কথা বলল না। নাস্তা করে খালা বুয়াকে দুপুরে কি রান্না হবে তা জানিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। আর তখনই হিমেল এসে উপস্থিত হল ওদের বাসায়।
অসময়ে হিমেলকে দেখে লিখন জিজ্ঞেস করল আসার কারনটা কি? তখন হিমেল জানালো যে ও জানতে এসেছে ওর খালামনির জন্য দোয়া-দরুদের ব্যবস্থা কি করেছে। এরই মধ্যে দেখল লাবন্যের দাদি ফুপুরা সব গুছিয়ে কারউ সাথে কোন কথা না বলেই বের হয়ে গেল। লিখন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল ওর সামনে। একটু এগিয়ে মায়ের হাতে কিছু টাকা দিতে চাইল কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর আকার ধারন করল। লিখনকে চাপাস্বরে গালাগালি করে তারা চলে গেলেন।
এতসব ঘটলো কিন্তু লাবন্য একটু সময়ের জন্যও রুম থেকে বের হলো না।

বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে লিখনও বাসা থেকে বের হয়ে গেল ইমার্জেন্সি কাজের বাহানায়। বাসাটাকে তখন বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগতে লাগল হিমেলের কাছে। বুকটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো। এ বাসায় যতবার এসেছে ততবারই খালামনির সাথে জম্পেশ আড্ডা দিয়েছে। আজ খালামনির অভাবে বাসাটা কেমন খা খা করছে। হঠাৎ করেই মনে হল, ওর কাছে যদি এমন লাগে তবে লাবন্য আর রুশের ভিতরটা না জানি কেমন লাগছে! আর তা ভাবতেই চোখ ভিজে এল ওর।

“কি করছো তুমি? কখন এলে? ” হঠাৎ করেই লাবন্য বের হয়ে ওকে প্রশ্নটা করল।

“দাদিকে যেতে দেওয়াটা তোর উচিৎ হয়নি, এখন বড় একা একা লাগবে দেখিস।”

“লাগুক, একা লাগাটাও এক সময় সহ্য হবে। আল্লাহর চাওয়ার উপরতো আর কারউ কোন হাত নাই। আমরাতো একাই। তবে আর একা থাকতে খারাপ লাগবে কেন?”

“দাদি এতদিন ছিল…..”

“এই তুমি এত বেশি কথা বলবা নাতো! তুমি কিছু জানো? তুমি জানো আম্মু এদের দ্বারা কতটা নির্যাতিত ছিলো? তুমি জানো এদের চেহারা দেখলে এখন আমার মাথা গরম হয়ে যায়? চোখে শুধু ভাসে আম্মুর অসহায় ফেইসটা। জানো তখন আমার হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরণ হয়? জানো? তুমি তা কিছু জানো? উপলব্ধি করতে পারো আমার হৃদয়? পারো না। তোমরা সবাই এক। পাশাপাশি থাকলেও তোমাদের সাথে থাকে আমাদের যোজন যোজন দূরত্ব। পাশাপাশি শুয়েও কেউ কারও হৃৎস্পন্দন টের পাই না। এটা চরম সত্য। কঠিন বাস্তবতা। শুধু মুখে মুখে ভালোবাসাবাসির ছড়াছড়ি । আসলে জীবনে এসবের কোন মূল্য নেই। মূল্যহীন সব, সব মায়ার খেলা মাত্র ।”

“আস্তে আস্তে, রিল্যাক্স। এত বেশি টেম্পার হয়ে যাচ্ছিস কেন? ওওও মাই গড! তুইতো পুরাই হট হয়ে গেলি। আমি এত কিছু মিন করে বলেনি। আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম আগামীকাল মিলাদ, বাসায় শতশত মানুষ আসবে। তারা না থাকলে গেস্টরা কি ভাববে? তাই…..”

“কে কি ভাবলো, তাতে আই ডোন্ট কেয়ার। আর যারা আমার আম্মুকে বেঁচে থাকতে ভালোবাসে নাই। যাদের হৃদয় আম্মুর জন্য একবারের জন্যও কাঁদে না।তাদের এই মিলাদে থাকার দরকার কি? তারা কি আমার আম্মুর জন্য মন ভরে দোয়া করবে? বরং বলবে, মিলাদে বিরিয়ানি দিলো কেন? এখানে ছানা, সিঙ্গারা, সমুচা, আপেল এগুলো দিতে পারতো ? আবার এগুলা দিলে বলবে, ছি ছি ছি এসব কি মিলাদে শিন্নী বিরিয়ানি দিতে পারলো না? ”

“অসুবিধা কি আমরা না হয় দুইটাই দিব যাতে সবার মুখ বন্ধ থাকে!”

“উঁহু, তাতে কি? তখন বলবে, বিরিয়ানিতে মাংস কম। লবনটা ঠিক মতো হয়নি। কোন বাবুর্চি দিয়ে রাঁধছো? পাকতো ভালো হয় নাই।”

“উফফ কি শুরু করলি? এতসব নেগেটিভিটি তোর ভিতর ঢুকল কখন? কি সাংঘাতিক অবস্থা হয়েছে তোর!”

“শোনো এত সব ঝামেলার দরকার নাই। আম্মু বিয়ের পর এতিমের মতো জীবন কাটায়ছে।তাই দোয়া দরুদ তাদের নিয়েই করার ব্যবস্থা করো। খোঁজ খবর নিয়ে কয়েকটা এতিমখানা ঠিক কর আর সেখানেই মিলাদের ব্যবস্থা কর। কোন আত্মীয় স্বজনের দরকার নাই। ”

“কি বলছিস? ভেবে বলছিসতো?”

“হুমম ভেবেই বলছি, যে আত্মীয় স্বজন আমার মনে শান্তি দিতে পারবে না, টাকা খরচ করে তাদের জন্য আয়োজন করারও দরকার নাই। এমনেই জীবনে বড় কষ্ট, অযথা দাওয়াত দিয়ে আরও বেশি কষ্ট বাড়ানোর কোনো দরকার অন্তত আমার নাই। ”

হিমেলের মোবাইলটা বেজে উঠল। হিমেল একবার দেখে রিসিভ না করে কেটে দিয়ে আবার কথা বলতে লাগল।
“ডিসিশনটা তুই একা নিস না খালুজিকে জিজ্ঞেস করে দেখ খালুজি কি বলেন?”
কথাটা শেষ করতেই আবার মোবাইলটা বেজে উঠল। এবারও ও কলটা কেটে দিল।

“আব্বু এসব ব্যাপারে কখনই কোন দায়িত্ব নিতো না সব আম্মু দেখতো। এখন অবশ্য আব্বুকে একবার বলব, বিষয়টা নিয়ে একটু খোলাসা করে আলাপ করব। তেলা মাথায় তেল না দিয়ে কিছু অভাবী মানুষের মাঝে দান সাদাকা করতে বলবো বলে ঠিক করেছি।”

লাবন্যের কথাটা শেষ হতেই আবার মোবাইলটা বেজে উঠল। এবারও হিমেল কলটা রিসিভ না করে সুইচ অফ করে দিল।

“কলটা রিসিভ করছো না কেন? বারবার কাটছো কেন? সমস্যা কি?”

“সমস্যাতো থাকবেই, সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে?”

“পড়ে থাকবে না তবে মুখোমুখিতো হতে হবে! কলটা কার? রিসিভ কর?”

“লাবন্য তোকে একটা কথা বলব?”

“না আমাকে কেউ কোন কথা বলবা না। আমি কারউ কোন কথা শুনতে এখন প্রস্তুত না।”

“আমি জানি কথাটা বলার জন্য এটা কোন উপযুক্ত সময় না। কিন্তু…. ”

“প্লিজ তুমি এসব কিন্তু ফিন্তুর মধ্যে আমাকে টেনো না আমার এসব এখন একটুও ভালো লাগছে না আমি কারউ কোন কথা শুনতে পারবো না।” বলেই লাবন্য উঠে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিল। রুমে ঢুকেই বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠল
“কত স্বপ্ন ছিল এই সময়টা নিয়ে, আমরা আমাদের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করব সবার সামনে এভাবে সেভাবে। আজ সব স্বপ্ন কেমন ধূসর হয়ে যাচ্ছে চোখে। আজ এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে কীভাবে কেউ সেসব স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে পারে? ওকি একবারও আমার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছে না? ওকি এখন আমার কি প্রয়োজন তা বুঝতে পারছে না? ” আর ভাবতে পারল না। চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।

হিমেলও আর বসল না উঠে চলে গেল। ও যাওয়ার পর দরজাটা আটকানোর শব্দ পেয়েই লাবন্য নিজের রুমের দরজাটা খুলে সাথে সাথে বের হয়ে এল। এখন আর ইচ্ছে মতো দরজা আটকিয়ে রুমে বসে থাকা যাবে না তা বুঝতে পারে। বাহিরে রুশ একা হয়ে যাবে তাহলে। রুশকে কখনও একা হতে দেওয়া যাবে না। রুশের জন্য ও সব করতে পারবে সব। একটুও পিছপা হবে না কখনও। ও যে নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে বিষয়ে।

লাবন্য রুশকে কাছে টেনে নিয়ে ওকে ওর জগতে ফেরত পাঠাতে টুকিটাকি কাজ দিয়ে ব্যস্ত করে তুলতে লাগল। মা’কে ছাড়াই জীবন চালিয়ে নিতে একটু একটু করে অভ্যস্ত করতে ওর নিজের কাজগুলো নিজে করার প্রাকটিসে নেমে পড়ল।
দুই ভাইবোন বাকিটা সময় ব্যস্ত থাকল কখন কী করবে কীভাবে করবে তা নিয়ে ডিসকাশনে।

সন্ধ্যার দিকে দু’জন বসে চা নাস্তা করছিল ডাইনিংএ বসে হঠাৎ করেই ল্যান্ড ফোন বেজে উঠল। ওটা ইদানীং অনেকটা অকেজো হয়েই পড়ে আছে। সাধারণত কেউ ওই নাম্বারে কল দেয় না। রিং বাজতেই রুশ উঠে কলটা রিসিভ করল। ওর পাশেই লাবন্য বসে ছিল।

“হ্যালে, আসসালামু আলাইকুম ”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। রুশ ভাই কেমন আছো?”
“জি আপু ভালো আছি।”
“রুশ হিমেল কি ওখানে?”
“না আপু।”
“দুপুরে কি তোমাদের ওখানে খেয়েছে?”
“না আপু।”
“ওও, আচ্ছা। ঠিক আছে রুশ। ভালো থেকো ভাই।”
“হোমা আপু,তুমি কি আপুর সাথে কথা বলবে?”
“না থাক পরে বলব। এখন একটু বিজিরে ভাই। রাখি ও কে।” বলে কলটা কেটে দিল।
পাশে বসে লাবন্য সবটাই শুনলো। মনে মনে ভাবলো , “আমার সাথে কথা বলতে চাইলেতো আমার নাম্বারেই কল দিত। আম্মুর নাম্বারেও কল দেয়নি। আসলে হোমাপু চায়নি আমার সাথে কথা হোক। সে আসলে বুয়াখালা বা রুশের সাথেই কথা বলতে চেয়েছিল। আসলে তাদের বাসার সমস্যা কী? হিমেলের খোঁজ করছে কেন? ও কোথায় গেছে? কি নতুন সমস্যা করলো? ”
আর ভাবতে চাইলো না। মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসল। আর নিজেকে বলল যার যা খুশি করুক। এখন এগুলোতে নজর দেওয়ার মতো সময় নাই। এখন ভাইকে নিয়ে একটা স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হতে হবে আগে। জীবনকে আবার সচল করে তুলতে হবে, থামিয়ে রাখা যাবে না। যেটা যেমন ভাবে চলছিল ঠিক তেমন করেই চালিয়ে নিতে হবে।

রেশমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া দরুদের আয়োজন করা হল গাজীপুরের এক এতিমখানায়। সেদিনটা লাবন্য আর রুশও সেই এতিমখানার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটালো।

আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে আসতে লাগল লাবন্য আর রুশের জীবন মান। অনেকদিন স্কুলে না যাওয়ায় পড়ার চাপ পড়ে গেল বেশি। লাবন্য নিজের পড়া আপাতত বন্ধ রেখে সারাক্ষণ রুশের সাথে সাথে থাকতে লাগল। সকালে স্কুল, বিকেলে কোচিং, রাতে বাসায় নিজে পাশে বসিয়ে পড়ানো এগুলো সব খুব যত্নের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে। লাবন্য পাশে থাকায় রৌশনের মনের জোরটাও বেড়েছে। আম্মুর মৃত্যুতে যতটা ভেঙে পড়েছিল যতটা অসহায়ত্ব পেয়ে বসেছিল মনে এখন যেন তা একটু একটু করে কাটতে শুরু করেছে ওর।

ইদানীং হিমেল খুব একটা সময় পায় না লাবন্যদের বাড়িতে আসার জন্য। হোমায়রা আসার পর ওকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হল কয়েকদিন। মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল কিন্তু কোথায় যেন একটু তার ছিড়া ছিড়া লাগছিল সম্পর্কের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হিমেল কিছু বলতে চাইলেই লাবন্য বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে কল কেটে দিত। মনে মনে খুব বিরক্ত হত হিমেলের এমন কান্ড দেখে। ওর মায়ের মৃত্যুর পর পরই ও কীভাবে বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চায়। ও কি জানে না নাকি বুঝে না এখনই এসবের জন্য কেন উপযুক্ত সময় না। যখন ওরা ঠিক করেছিল এখনই সব গোছাবে তখনতো ওর আম্মু ছিল ওর জীবন জুড়ে। হঠাৎ করেই হিমেলকে ওর বড় স্বার্থপর বলে মনে হতে লাগে। তাই হিমেল কি বলতে চায় তা বলতেই দেয় না।

এদিকে হিমেলের উপর চলছে চাপের উপর চাপ হোমার ননদকে দেখার জন্য। কিন্তু হিমেল তা দেখবে না বলাতেই যত সমস্যা হচ্ছে বাসায়। সবার ধারনা হিমেলের কোন রিলেশন আছে। হিমেলও চায় সবাই তাই ভাবুক এবং ওকে জিজ্ঞেস করুক।কিন্তু কেউ কেন যে জিজ্ঞেস করছে না তাই বুঝতেছে না।

এদিকে লিখন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত সময় পার করলেও বাসায় ফিরে হয়ে যায় একা। ছেলেমেয়ে দুজনই কিছু সময় পাশে থাকলেও বাকিটা সময় ওকে একটু একটু করে গ্রাস করতে থাকে একাকিত্ব।

শুধু মাত্র খাওয়ার সময়তেই টেবিলে বসে কিছু ভালো সময় কাটে ওদের তিনজনের।
আজও বসে খাচ্ছে আর সারাদিনে কে কি করেছে তা বলছে এরই মধ্যে লিখনের মোবাইলে রিং বেজে উঠল। বড় আপা লেখা দেখে কলটা রিসিভ করল। কারন ওর মা এখন বড় আপার বাসায় আছেন।
” হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম আপা। ”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। লিখন তুই ফ্রী আছিস?”
” জি আপা কেন?”
” আরে আম্মাতো গা পুড়িয়ে ফেলছে। বার্নল লাগায়ছিলাম। কিন্তু এখন দেখি ঠোসা পড়ছে।”
” গা পুড়ছে মানে? কীভাবে? কখন? তুমি কোথায় ছিলে?”
“আর বলিস না, গোসলের জন্য গরম পানি রেখে এসেছিল বাথরুমে। আর আম্মা তা চেক না করেই গায়ে ঢেলে দিয়েছে। আম্মা কি দিনদিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে না কি? গায়ে দেওয়ার আগে একটু চেক করে দেখবে না? এখন আমি আম্মাকে নিয়ে কী করি বলতো? ”
” কি করবে মানে? ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কি সাংঘাতিক কান্ড! মাত্র এই কয়টা দিনের মধ্যেই অঘটন ঘটিয়ে ফেললা? কেমন মেয়ে তোমরা? রেশমার কাছে বিশ বছর থাকলো কই তখনতো কিছু ঘটল না। আজব মানুষ তোমরা! কল কাটো, আমি আসছি।” বলে কলটা কেটে দিল।
লিখন রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগল।
লাবন্য একবার আড়চোখে ওর আব্বুকে দেখে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আর মনে মনে বলল “রেশমা একজনই হয়, সবাই আর রেশমা হয় না।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here